নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের বাড়ির পেছনে প্রকান্ড এক আমড়া গাছ ছিল।তার পাশে আরেকটা যেন কি গাছ ছিল।সেই গাছে অজস্র গোল গোল ফল।ঝড়ে পড়ত যখন তখন।টিনের চালে টুংটাং আওয়াজ হতো।যখন আমড়ার সিজন থাকত তখন বেশ শব্দ করে ঝড়ে পড়ত পাকা আমড়া।সেই আমড়া যেমন স্বাদের ছিল তেমনি ছিল আকারে বড়।বেশি ছোট বলে পেছনে একা যেতে পারতাম না।একটু বড় হলে যেতাম আমড়া কুড়াতে।
কোনো একটা সিজনে সেই আমড়াগাছ হয়ে উঠত শুঁয়োপোকার বাসা।গাছের গুড়িতে দুই চার ফিট লম্বা আর ফুটখানেক চওড়া বেল্টের মত গায়ে গায়ে লেগে থাকত অসংখ্য পোকা।কিলবিলে কালো শরীরে শতশত রোয়া।কারো কারো গায়ে অন্যরঙের ফুটকি।কেন এরা এমন একসাথে গাছের গায়ে লেগে থাকত কে জানে?
সেই শুঁয়োপোকা ছিল আমার মায়ের কাছে যম সমতুল্য। গাছের গা থেকে নেমে কিছুদিনের মধ্যেই তাদের বাড়ির এখানে সেখানে দেখা যেত।বিছানা কাপড়চোপড় বা মেঝেতে তারা মহানন্দে ঘুরে বেড়াতো।সেই দেখে মা চিৎকার, ছুটাছুটি শুরু করত।লোকমুখে শুনেছি আমিও নাকি তখন লাফালাফি শুরু করতাম।যদিও শুঁয়োপোকাকে আমার ভয় নেই।বেশি ছোটবেলায় হয়ত মায়ের আতঙ্ক দেখে শিশুও আতঙ্কিত হয়।তবে শুঁয়োপোকার হুল লেগে গা হাতপা ফুলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে অনেকবার।কি যে জ্বলুনি আর চুল্কানি!উফ! সেকথা এখনো মনে আছে।
রাত নামলে কি যেন রাত জাগা পাখি আমড়ার ডালে বসে পিলে চমকানো ডাক দিত।তখন তো,আর এটাচড বাথরুম ছিলনা।অনেক রাতে প্রয়োজন হলে বাবা বা মায়ের সাথে যখন বাইরে যেতাম তখন অনেকবার আমড়া গাছের ডালের মাথায় চাঁদ দেখেছি।সেই ডালে বসা নিশাচর পাখিগুলো আর ব্যাকগ্রাউন্ডের চাঁদ যে কি গা শিরশিরানো একটা অনুভুতি তৈরি করত তা কথায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
একবার খুব ঝড় হলো।ঝড়ের দাপটে প্রকান্ড গাছটি একদিকে হেলে পড়েছিল।তখন আমি স্কুলে পড়ি। বাবা বড় বড় ডালগুলো কেটে গাছটিকে হালকা করে মোটা দড়ি বেঁধে টেনে তোলার ব্যবস্থা করেছিলেন।দুদিকে দড়ির টান দিয়ে বেঁধে সেভাবেই গাছটিকে সোজা করে রাখা হয়েছিল তবুও কেটে ফেলা হয়নি।গাছটি তারপরও বছর দুই তিন বেঁচে ছিল।দিব্বি আমড়া ধরত তাতে।প্রকান্ড গুড়িতে পোকা ধরে গুড়িটা দূর্বল হয়ে গেলে দাদি প্রায়ই বাবাকে বলত ওটা কেটে ফেলতে।কারন ঝড় হলে ওটা যদি আমাদের ঘরের উপর পড়ে তবে জীবন চলে যেতে পারে।শেষ পর্যন্ত একদিন গাছটি কেটে ফেলা হলো।পেছনের গাছ দুটি কেটে ফেলা হলে টিনের চালের ঘর অত্যন্ত গরম হয়ে উঠত।কাঠফাটা দুপুরে গরমে অস্থির হয়ে পাটি নিয়ে বাবা মা পুকুর ঘাটে ফলগাছের ছায়ায় শুয়ে বসে থাকত।আমিও থাকতাম সাথে,অন্য চাচা ফুফুরাও যেত।ঝকঝকে পরিস্কার পুকুরের ধারে মাটিতে পাতা পাটিতে ঘুমিয়ে কত দুপুর আর বিকেল কাটিয়েছি তার হিসাব নেই।সেসব এখন কেমন যেন অবাস্তব লাগে।
একদম ছোটবেলায় রাতে যখন ঝুম বৃষ্টি নামত তখন টিনের চালে বৃষ্টির শব্দের মধুর ধ্বনি শুনতে শুনতে বাবা মায়ের মাঝে শুয়ে ঘুমাতাম।তাদের আলিঙ্গনে, তাদের গায়ের উষ্ণতা আর বর্ষার ভেজা শীতলতা মিলিয়ে কি নিরাপদ আর মধুর অনুভূতি হতো তা কথায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।স্বর্গ মনেহয় নেমে আসত সেই রাতগুলোতে আমাদের ছোট্ট টিনের ঘরে।
০৩ রা জুন, ২০২১ রাত ১১:০৩
সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: বিভাগের নাম খুলনা--অবস্থান উত্তর আর দক্ষিণবঙ্গের মাঝামাঝি।
২| ০৩ রা জুন, ২০২১ রাত ১১:০২
তাজেরুল ইসলাম স্বাধীন বলেছেন: হস হা হা... জনাব কিছু মনে করবেন না। চাঁদগাজী সাহেব জানতে চাচ্ছেন দেশের কোন জায়গায় এই সুন্দর প্রকৃতির গ্রাম?
০৩ রা জুন, ২০২১ রাত ১১:০৪
সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: জানিয়ে দিলাম তো--
৩| ০৩ রা জুন, ২০২১ রাত ১১:০৯
তাজেরুল ইসলাম স্বাধীন বলেছেন: হাম্ম.. দারুণ! যাব ঐদিকে, সুন্দর বন দেখতে।
০৩ রা জুন, ২০২১ রাত ১১:১২
সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: সুন্দরবন পাবেন না--
৪| ০৩ রা জুন, ২০২১ রাত ১১:১৬
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: বোন অনেক দিন পরে দেখলাম।" বুকের ভেতর মৃত নদী " র সাথে সাথে কোথায় হারিয়ে গেলেন ভেবে পাইনি। আবার দেখে ভাল লাগলো। নিয়মিত লিখতে চেষ্টা করেন। কম এবং ছোট করে হলেও। ৷৷ আবহমান গ্রাম বাংলার চিরন্তন এবং বাস্তবতা।
০৩ রা জুন, ২০২১ রাত ১১:৩৬
সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: মাঝে মাঝে ব্যাস্ততা বেড়ে যায়---মাঝে মাঝে মন বিক্ষিপ্ত থাকলে লেখা হয়ে ওঠে না।
ভাবছি ছোট ছোট করে হলেও লিখব কিছু কিছু।
মনে রেখেছেন দেখে খুবই ভাল লাগছে--
৫| ০৪ ঠা জুন, ২০২১ রাত ১:০৫
রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর লেখা।
০৪ ঠা জুন, ২০২১ রাত ১:৪৭
সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: সহজ করে চেষ্টা করছি।
৬| ০৪ ঠা জুন, ২০২১ সকাল ৭:৫৫
শেরজা তপন বলেছেন: দারুন অনুভুতির প্রকাশ - কল্পনায় আমিও চলে গেলাম সেইসময়ে , সেখানে
০৪ ঠা জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩৯
সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: ধন্যবাদ
ব্লগে আমন্ত্রণ রইলো সবসময় --
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা জুন, ২০২১ রাত ১১:০০
চাঁদগাজী বলেছেন:
দেশের কোন এলাকায়?