নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সন্ধ্যা প্রদীপ

আমার সমস্ত চেতনা যদি শব্দে তুলে ধরতে পারতাম

সন্ধ্যা প্রদীপ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ মায়াবতী

২৭ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৫৯


এই যে ভাই আপনাকেই বলছি!যারা বউয়ের পেছনে পেছনে বাধ্য ছেলের মত ঘুরে বেড়ায় তাদের কে বলে অবশ্য লাভ নেই।তবুও সবাই-ই শুনে রাখতে পারেন।আখেরে কাজে দেবে।

মেয়ে মানুষ মানেই ঝামেলা।বিশ্বাস হয়না?বুঝিয়ে বলছি।আমরা ছেলেরা দিব্বি একটা জিন্স টি-শার্ট পড়ে গটগটিয়ে রেডি হয়ে যেতে পারি মাত্র সাড়ে তিন মিনিটে।কিন্ত একটা মেয়েকে সাথে নাও সাড়ে তিন ঘন্টাও লেগে যেতে পারে।দূরে কোথাও ঘুরতে গেলে একটা ব্যাকপেক নিলেই হয় কিন্ত সাথে কোনো মেয়ে থাকলে সাতশ রকমের ব্যাগ বোঁচকা। সেই সাথে তাদের আবার বাথরুমের প্রাইভেসি লাগবে,রুমে সিকিউরিটি থাকা লাগবে হাজার রকমের ঝামেলা।এইসব করতে গিয়ে বেড়ানোর মজাটাই নষ্ট হয়ে যায়।ছেলেরা ছেলেরা থাকলে ঘরে আর কয়টা জিনিস লাগে?একটা বালিশ আর শোয়ার জন্য একটা বিছানা হলেই চলে তবে সেই সাথে পানি খাওয়ার একটা কোকের বোতল থাকলে আর কিছু দরকার হয়না।যদি একটা মেয়েকে ঘরে তোলো তাহলেই সর্বনাশ।তাদের জন্য জানালায় পর্দা লাগবে, আলনা লাগবে,ড্রেসিং টেবিল লাগবে,আলমারি লাগবে।শুধু তাই না সবকিছু হতে হবে চকচকে পরিষ্কার!


এ তো গেল বাইরের ব্যাপার,তাদের নিজের ঝামেলাও কি কম নাকি!এই মন খারাপ,এই শরীর খারাপ আবার এই সব ভাল।এক মুহূর্তেই মুখে হাসি আবার অল্পতেই মুখ গোমড়া। সেই সাথে আছে হাজার রকমের ভয়- তেলাপোকার ভয়, টিকটিকির ভয়,ভুতের ভয়,চোর ডাকাত খারাপ লোকের ভয়।ডায়েটিং,রূপচর্চা,মেকাপ,পিরিয়ড, প্রেগন্যান্সি সব মিলিয়ে একেবারে যা তা অবস্থা।সত্যি কথা বলতে মেয়েদের ব্যাপারে সরল বলতে কিছু নেই,সবই জটিল আর প্যাঁচালো।

আমি বরাবরই এদেরকে তেমন একটা আমলে আনতাম না।অবশ্য কথাটার মধ্যে কিছুটা মিথ্যা মিশ্রিত আছে।মেয়েদের যে বিষয়গুলো আমলে না এনে ছেলেদের পক্ষে বেঁচে থাকাটাই অসম্ভব সেগুলো ছাড়া কিছু আমলে নিতাম না।টিনএজ বয়েসেই সমাজের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বুঝে গিয়েছিলাম মেয়েদের কথায় বেশি পাত্তা না দিলেও চলে।আর কবি সাহিত্যিকরা বলে মেয়েদের মন বোঝা দায়,তাদের মন অধরা সোনার হরিনের মত।তাই সেসব অধরা বস্তুর দিকে নজর না দিয়ে যা স্পর্শ করা যায় সেসব জিনিসের দিকেই মনোযোগ দিয়েছি বেশি।

যারা আমার কথা শুনছেন তার মধ্যে অনেকে আবার বলবেন মহিলা মানুষ সব শয়তানের দাস,এদের চব্বিশ ঘণ্টা ধরে ধরে জুতানো উচিৎ, পায়ের নিচে পিষে রাখা উচিৎ। ভাই আমার মনে হয় এইটা একটু বেশি হয়ে যায়।আমার মা আছে,বোন আছে তাদেরকে কখনো ঠিক শয়তানের চেলা বলে মনে হয়নি।তবে মেয়েদের বেশি মাথায় ওঠানোর ব্যাপারটাও আমি পছন্দ করিনি।ভাবতাম মেয়েরা থাকবে মেয়েদের মত। সত্যি করে বলতে মেয়েদের নিয়ে খুব গভীর করে আমি কখনো ভাবিনি।মেয়েরা জীবনের অংশ, জীবনের সাথেই জড়িয়ে থাকে এ নিয়ে আর ভাবার কি আছে।তবে আজকাল এসব নিয়ে খুব ভাবি।কেন এমন ভাবনা আসে সেটাও বলব কিন্ত আগে নিজের নাম পরিচয় আপনাদের জানিয়ে নিই।


আমি শাহেদ।আসল বয়স একত্রিশ আর সার্টিফিকেট অনুযায়ী ঊনত্রিশ। স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে অনার্স মাস্টার্স করেছি তাই অশিক্ষিত বা অযোগ্য কেও বলতে পারবে না।দেখতে স্মার্ট, সুন্দর কথা বলতে পারি তাই খুব ভাল আড্ডার আসর জমাতে পারি।কিন্ত এই আমিই একসময় প্রচন্ড হীনমন্যতায় ভুগেছি,নিজেকে অপদার্থ আর অযোগ্য মনে হয়েছে।মনকষ্ট, অর্থকষ্টে জর্জরিত হয়ে এমনকি আত্মহত্যার কথাও ভাবতে হয়েছে।আমাকে যে এই দুরবস্থা থেকে টেনে তুলেছে সে হচ্ছে অনু- আমার স্ত্রী।

এমনিতে আমার নাম শাহেদ হলেও বাড়িতে মা ডাকতেন বাবু।আসলেই বাবুর মত যত্ন করে মানুষ করেছিলেন।প্রথম দুসন্তানের ক্ষেত্রে যে অর্থকষ্ট নিয়ে তাদের মানুষ করতে হয়েছিল তা যেন এক আমাকে দিয়েই পুষিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।খুব রমরমা ধরনের অবস্থা ছিল না আমাদের বাড়িতে কখনোই তবুও আমাকে ছাত্র জীবনে টিউশনি করাতে হয়নি।বাবার চাকরি শেষের দিকে থাকলেও তিনি নিয়মিত টাকা দিতেন।বড় ভাইয়াও চাকরি শুরু করার পর কিছু কিছু করে দিতেন।সব মিলিয়ে বেশ রাজার হালেই আমার চলে যেত।

ঢাকা শহরে হোস্টেলে থাকতাম।ঘুরতাম, ফিরতাম আড্ডাবাজি করতাম।অনুর সাথেও পরিচয় সেই ছাত্রজীবন থেকেই।মেলামেশা ভালই করেছি তার সাথে কিন্ত খুব সিরিয়াসভাবে ভেবে দেখিনি তাকে নিয়ে।অনার্স শেষ হতে না হতেই কিছু বন্ধুবান্ধব যখন চাকরির জন্য পড়াশোনা শুরু করল তখন তাদের খুব হাসাহাসি করতাম।মাস্টার্স শেষে সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল যার যার জীবিকার সন্ধানে। আমিও তখনও নিশ্চিন্ত- নির্বিকার। একদল নতুন বন্ধু জুটলো। তাদের সাথে কক্সবাজার, জাফলং, রাঙামাটি ঘুরতে যাই। নতুন নতুন জায়গা দেখি চায়ের দোকানে আড্ডা দেই এইসব করেই আরো এক বছর কেটে গেল।

সেই সময় থেকেই অনুর সাথেও বাঁধনটা কেমন করে যেন আলগা হয়ে গেল।সে বরাবর জীবন নিয়ে সিরিয়াস। খুব জোর দিয়ে পড়াশোনা করে একটা ভাল চাকরি করবে,আমাকে বিয়ে করে সুন্দর একটা সংসার পাতবে এই ইচ্ছেগুলোর কথা আমাকে জানাতো।আমি শুনতাম,শুনতে খারাপ লাগত না কিন্ত সেই সময় সংসারের বাঁধনে জড়িয়ে পড়ার কোনো ইচ্ছা ছিলনা।অনু অবশ্য অনেক অনুনয়-বিনয় করত আমি যাতে জীবিকার জন্য কিছু একটা করি।তবে আমি তার কথায় তেমন একটা পাত্তা দিতাম না।শেষের দিকে বেশ রাগারাগি করত অনু।আমাকে পথে আনতে না পেরে বেশ কান্নাকাটিও করত।সত্যি বলতে এই সবকিছুই তখন আমার খুব বাড়াবাড়ি বলে মনে হতো।ভীষণ বিরক্ত হয়ে যেতাম তখন।একদিন বিকেলে পার্কে বসে অনুর বানিয়ে আনা নাস্তা খেতে খেতে গল্প করছিলাম।কথা বলতে বলতেই কথা উত্তপ্ত হয়ে উঠল এবং দেখতে দেখতে ঝগড়াঝাটি চরমে উঠলো। সেদিন মেজাজ খারাপ করে অনুকে বেশ কিছু অন্যায্য কথা শুনিয়ে দিলাম। কেঁদেকেটে সবকিছু ছড়িয়ে একাকার করে সে হোস্টেলে চলে গেল।আমিও সন্ধ্যার বাসে দুই বন্ধুকে সাথে নিয়ে সিলেট ঘুরতে রওনা দিলাম।তারপর অনুকে একবারও ফোন দিইনি।অনু ভীষণ অভিমানী মেয়ে।যেসব কথা সেদিন বলেছিলাম তারপর কোনো মেয়েরই অবশ্য যেচে যোগাযোগ করার কথা নয়।


যারা শুনছেন তারা হয়ত ভাববেন কেমন জঘন্য চরিত্রের মানুষ আমি!ভাই, কথা একেবারে অন্যায্য নয়।আমি আসলেও সে সময় বেশ বেপরোয়া হয়ে গিয়ে ছিলাম।যাদের সাথে তখন মিশতাম তাদের বেশিরভাগই ছিল বড়লোকের বখে যাওয়া পোলাপান। আমি নিজে যে বড়লোক নই এবং আমার যে কিছু দায়িত্ব নিতে হবে তা ভুলেই গিয়েছিলাম। বাবা তত দিনে রিটায়ার্ড মানুষ। তবুও টাকা পয়সা ঠিকঠাক পেতাম।ভাইয়া মাঝেমধ্যে জিগাসা করতেন কোনো চাকরির ব্যবস্থা হলো কিনা।আমি এটাওটা বলে কাটিয়ে যেতাম।

তবে এসময়ে আমার মধ্যেও কিছুটা টেনশন ঢুকেছিল।আমার যেসব সহপাঠী আর বন্ধুদের কে পাগলের মত চাকরির পড়া পড়তে দেখে হাসাহাসি করতাম তারা তখন প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করেছে। কেউ ম্যাজিস্ট্রেট, কেউ ব্যাংকার, কেউ সরকারি শিক্ষক হয়ে গেছে।অন্যরাও বেসরকারি চাকরি বা ব্যবসা কিছুনা কিছু করছে,অনেকে চাকরি পাওয়ার পথে রয়েছে।অনেকে আবার বিয়েও করে ফেলেছে।আড্ডা বা দাওয়াতে গেলে নিজেকে বেশ ছোট লাগতে লাগলো। ভয় লাগত কখন আবার কেউ জিজ্ঞাসা করে ফেলে -আমি কি করি?এসব ভয়েই সবাইকে এড়িয়ে চলতে লাগলাম।এসময় আমিও খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা শুরু করব ভাবলাম।কিন্ত দীর্ঘদিনের অনভ্যাস! কিছুই ঠিকমত আগায় না।নিজের উপর যে অলীক কনফিডেন্স ছিল তাতে চিড় ধরল।একটা পরীক্ষাতেও টিকলাম না।হতাশ হয়ে আবার আড্ডাবাজি শুরু করলাম।ছাত্রজীবনের পুরোনো বন্ধুদের এড়াতেই ফোন নম্বরটা বদলে ফেললাম।

দুই
ভাই, মানুষের জীবন সব সময় একরকম যায় না।টাকাপয়সা নিয়ে টানাটানি আমার কখনো ছিল না কিন্ত এইবার শুরু হলো।বাবার রিটায়ারমেন্ট এর টাকা তুলে সেটা দিয়ে বাড়ি বানানো হচ্ছে তাই আমাকে প্রতিমাসে পর্যাপ্ত টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিল।ভাইয়া তো আগেই বিয়ে করেছে তার বাচ্চাও আছে।বাবা মা সহ আমার খরচ সে চালাতে পারার কথা না।মা বলে কয়ে,কখনো বা লুকিয়ে বাড়তি কিছু টাকা পাঠাতো।মেসে একা একটা রুমে থাকতাম সেটা ছেড়ে দিয়ে সস্তার ছয়বেডের রুমে উঠলাম।চাকরি খুজতে লাগলাম কিন্ত সুবিধা করতে পারলাম না।সব জায়গায় লবিং আর টাকার খেলা!আমার জন্য সুপারিশ করার মত কেউ নেই।আমারও ইচ্ছা ছিল ফার্স্ট ক্লাস চাকরি করার তাই চেষ্টা করতে লাগলাম।

এর মধ্যে হঠাৎ করেই আমার মা মারা গেল।মায়ের মৃত্যুতে বড় একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম কিন্ত ভাবিনি এর চেয়েও বড় ধাক্কা অপেক্ষা করছে।মায়ের মৃত্যুর পর বাবা যেন কেমন হয়ে গেলেন।কারো বিষয়ে কোনো খোঁজ নেই,কথাও তেমন বলেন না সারাক্ষণ আপন মনে থাকেন।এসময় বাড়ি থেকে আমার অর্থনৈতিক সাপোর্ট একদম বন্ধ হয়ে গেল।আমার জীবনটা একেবারে এলোমেলো হয়ে গেল।ভালো স্মার্টফোনেটা একদিন ছিনতাই হয়ে গেল।তারপর টাকার অভাবে একটা সেকেন্ডহ্যান্ড সাধারণ ফোন কিনে নিলাম।অনেক মানুষের সাথে সাথে অনুর নাম্বারটাও হারিয়ে ফেললাম। বন্ধুদের চাকরি,বউ, ঘরসংসার দেখলে বড় কষ্ট লাগত তখন তাই সোস্যাল মিডিয়া থেকে দূরে চলে গেলাম।অনুর কথা মাঝেমাঝে মনে হতো।মা মারা যাওয়ার পর একবার ওর হোস্টেলে গিয়েছিলাম। শুনেছি সে চাকরি নিয়ে হোস্টেল ছেড়ে চলে গেছে।ফেসবুকে খুঁজেও তাকে পাইনি হয়ত সে ব্লক করে রেখেছে,হয়ত আমায় ভুলে অন্য কাওকে বেছে নিয়েছে।নেবেই বা না কেন,সেই ঝগড়ার পর একবছরের বেশি পেরিয়ে গেছে কিন্ত একবারও তার খোঁজ নিইনি আমি!


নিজের টাকা নেই তাই দিনদিন পরগাছার মত হয়ে গেলাম।ধারদেনা করে চলতাম।সেইসব বড়লোক বন্ধুদের আড্ডাটাও আগের মত জমজমাট নেই।কেউ কেউ বিদেশগামী হয়েছে,কেউ আবার বাবার ব্যবসা ধরেছে।এখন তো তাদের সাথে ঘুরতে যেতেও পারিনা।আড্ডাতে যেতাম ফ্রী তে খাওয়ার লোভে কিন্ত মন খুলে হেসে গল্প বলে আড্ডা জমিয়ে তুলতে পারিনা।মাথায় থাকে রাজ্যের টেনশন।এবার ছোটখাটো চাকরি খোঁজ করতে থাকলাম কিন্ত সেখানেও আর এক সমস্যা।এত কোয়ালিফাইড কাওকে তারা নিতে চায় না।আসলেই তো মাস্টার্স পাশ কেউ পিওন বা এমন পদে থাকলে কি মানায়?


আপনারা যারা শুনছেন তারা হয়ত বিশ্বাস করবেন না টাকার অভাবে শেষ পর্যন্ত মেস ছাড়তে হলো।মাস দুয়েক বাড়িতে গিয়ে ছিলাম কিন্ত টিকতে পারলাম না।ভাইয়ের সংসারে আমি ভয়ানক বোঝা স্বরুপ। বাবা-মা সবচেয়ে যত্নে আমাকে মানুষ করেছেন,তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে আমাকেই সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত আর যোগ্য করে গড়ে তুলেছেন।সেই আমিই কিনা সংসারের কোনো দায়িত্ব কাঁধে নিইনি! পাশ করে বের হওয়ার পর তিনটি বছর হেলায় হারিয়ে দিয়েছি।ভাইয়া আমার সাথে কোনো কথাই বলতো না।ভাবি আবার সন্তানসম্ভবা। বেশিরভাগ সময় শরীর খারাপ থাকে তবুও তাই নিয়েই সব কাজ কর্ম করে বেড়ান।বাবা মনে হয় মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন। বেশিরভাগ সময় চুপচাপ থাকেন।মাঝেমধ্যে আমাকে উদ্দেশ্য করে কুলাঙ্গার বা জানোয়ার বলে চেঁচিয়ে উঠেন!এমন মানসিক চাপের মধ্যে আর কতদিন থাকা যায়?

ভাবির কাছ থেকে চেয়ে তার জমানো
ছয়শ টাকা সম্বল করে আবার পথে বের হলাম।এক বন্ধু দয়া করে তার বাসায় কিছুদিন থাকতে দিল।এটাওটা খুচরা কাজ করে কিছু টাকা পেতাম,তা দিয়ে কোনোমতে চাকরির জন্য ফর্ম কিনতাম।খাওয়ার জন্য প্রতিবেলা টাকা থাকত না।নানা ফন্দি ফিকির করে,বন্ধুদের থেকে ধার করে চলছিলাম।দুইতিন মাস এমন চলেছিল কিন্ত যার সাথে থাকতাম সেই বন্ধু বিয়ে করবে ঠিক করল।বাধ্য হয়ে বাসা ছেড়ে দিতে হলো।

ভাই, জীবনে এমন সময় আসবে স্বপ্নেও ভাবিনি।মাথা গোঁজার জন্য বস্তির ভেতরে খুব অল্প টাকায় একটা ঘর নিলাম।কাছে দামী জিনিস বলতে কিছুই ছিলনা।ল্যাপটপ তো আগেই বিক্রি করে দিয়েছি,অন্য অনেক কিছুই বিক্রি করেছি।আসবাব বলতে শুধু একটা চৌকি ছিল আর ছিল কিছু জামা কাপড় আর চাকরির বই।খুব অল্প টাকার দু একটা টিউশনি জোগাড় করেছিলাম।তা দিয়ে কোনমতে খেয়ে না খেয়ে চলত মাসের অর্ধেক। শেষের দিকে অবস্থা অবর্ননীয় হয়ে যেত।লজ্জার মাথা খেয়ে কখনো কখনো বাড়ি যেয়ে বসে থাকতাম।দু এক বেলার খাওয়া জুটে যেত।ভাইয়ার বরফ শীতল দৃষ্টির সামনে নিজেকে এতটাই ছোট লাগত যে মুখ ফুটে দুটো টাকার কথা বলতে পারতাম না।ভাইয়ার অফিসে বা চেনাজানা কোথাও কোনো চাকরি জুটবে কিনা সেটাও জিজ্ঞাসা করতে পারতাম না।এসময় মায়ের অভাব খুব বেশি বোধ হতো।একটা কোমল আশ্রয়ের জন্য খুব মন কেমন করত।

খুব বেশি অভাবে পড়লে বিনা টিকিটে দু'ঘন্টা ট্রেন জার্নি করে বড় আপার বাসায় যেতাম।আপা গৃহিণী, দুলাভাই স্কুল মাস্টার।তাদের সামর্থ্য আর কতটুকু?তবুও আপা যত্ন করে খাইয়ে ফিরে আসার পথে হাতে কিছু টাকা গুজে দিতেন।বড্ড অসহায় মনে হতো নিজেকে।চারিদিকে সবাই তাদের জীবন গুছিয়ে নিয়েছে।যাদের সাথে আড্ডা দিয়ে এতগুলো বছর নষ্ট করেছি তাদের সাথে বোকার মত নিজের তুলনা করে কোনো লাভ নেই তখন খুব বুঝতে পারতাম।তাদের হয়ত বাবার অঢেল অর্থ আছে,তাদের হয়ত কারো দায়িত্ব নেয়ার তাড়া নেই।কিন্ত এক নিন্ম মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান এই আমি কিভাবে নিজের অবস্থান ভুলে গেলাম?


আমাদের এক স্যার বলতেন সবকিছুই একটা সুনির্দিষ্ট সময় থাকে,সেই সময় পেরিয়ে গেলে কাজটা হতে খুব সমস্যা হয়।আমি তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলাম।প্রচন্ড হতাশায় ডুবে যেতে লাগলাম।কি খাব? কিভাবে উপার্জন করব? সে চিন্তায় পড়ালেখা করতে পারতাম না।পরীক্ষার পর পরীক্ষা দিয়ে যেতাম কিন্ত কোনো ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছিলাম না।আসলে আমি শুরুই করেছিলাম দেরি করে।নিজের যোগ্যতার উপর এক ধরনের অন্ধ আস্থা ছিল।ভাবতাম সহজেই প্রথম শ্রেণীর চাকরি পেয়ে যাব এবং এধরণের চাকরি ছাড়া কোনো চাকরিই করবো না।শুরুতে যদি একটা সাধারণ চাকরিতেও ঢুকে পড়তাম তবে আজ আর এই অবস্থা হতো না।ড্রাগস কিনতে যদি টাকা না লাগত তাহলে সেসময় হতাশা ভুলতে ডাগস নিতাম।তখন বেশ বুঝতে পারতাম মানুষ আত্মহত্যা কেন করে।


রাতে একলা ঘরে শুয়ে অনুর কথা ভাবতাম মাঝেমাঝে ।বলা যায় তার সাথে বেশ অন্যায়ই করেছি।সম্পর্ক করেছি, সঙ্গ উপভোগ করেছি কিন্ত বিয়ে করিনি,দায়িত্ব নেয়া থেকে পিছিয়ে গেছি।অনুকে আমি হারিয়ে ফেলেছি, নাহলে হয়ত ক্ষমা চাইতাম তখন।


আরে ভাই কই যাচ্ছেন?আমার জীবনের গল্পের এতটা যখন শুনলেন তখন বাকিটাও শুনে যান!
একটা চাকরির রিটেন পরীক্ষা দিতে গিয়ে অনুর সাথে হঠাৎ করেই দেখা হলো।খুব খারাপ পরীক্ষা দিয়ে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম এক কোনে।ভীড় কমার অপেক্ষা করছিলাম।হঠাৎ করেই কেউ পিঠে স্পর্শ করল।ঘুরে তাকিয়ে দেখি অনু দাঁড়িয়ে আছে!হাতের জিনিস দেখে বুঝলাম সেও পরীক্ষা দিতে এসেছে।সে আগের চেয়ে একটু স্থুল হয়েছে। তাতে অবশ্য আগের চেয়েও সুন্দরী লাগছে তাকে।আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সে আদেশের সুরে বলল-'চল তোমার বাসায় যাব'

আমার হয়ত মাথা কাজ করছিল না তাই সেদিন ওর কথা শুনেছিলাম।নয়ত মাথা স্বাভাবিক থাকলে আমার দুরবস্থা তাকে দেখতে দিতে চাইতাম না কিছুতেই। সেদিনের কথা কেমন ধোঁয়া ধোঁয়া আবছা মনে হয়।মনে হয় যেন সত্যি ছিলনা ব্যাপারটা। শুধু মনে আছে পথে তেমন কোনো কথাই হয়নি সেদিন।আমার ঘরে এসে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে মেয়েটির আমাকে জড়িয়ে ধরে সে কি যে কান্না!বলছিল আমার মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে সব রাগ ভুলে সে নাকি আমার খোঁজ করেছিল কিন্ত পায়নি।ফোন নাম্বার বদলে ফেলেছিলাম বলে ফোনেও পায়নি।আমি যে দুরবস্থায় পড়েছি তাও নাকি সে কিছুটা শুনেছে।তবে অবস্থা এতটা করুন তা নাকি সে কল্পনাও করেনি।

হ্যাঁ সেদিন আমিও ধরে রাখিনি নিজেকে। নিজেকে উজার করে কেঁদেছিলাম আমিও।সে কান্না ছিল আত্মদহনের,আত্মসমর্পণের,অসহায়ত্বের।আমার একজন বন্ধু দরকার ছিল,যে পাশে থাকবে।একজন আত্মার আত্মীয় দরকার ছিল যে একটু দরদ দিয়ে আমার কথা ভাববে আনার কষ্ট টা বুঝবে।অনুকে পেয়ে মনে হয়েছিল সেই যেন আমার সেই বন্ধু,সেই আত্মীয়।মন খুলে সব কথা বলেছিলাম ওকে।

এইদিনের দুইসপ্তাহ পরেই আমাদের বিয়ে হয়।আমার মত চালচুলোহীন এক ছেলেকে বিয়ে করতে অনুর তার নিজ পরিবারের সাথে অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছিল।তবে সে খুব দৃঢ়তার সঙ্গে সব সমস্যার মোকাবেলা করেছে।

বিয়ের পরে আমি অনুর সাথে তার সিরাজগঞ্জের বাসায় চলে আসি।ছোট্ট ছিমছাম দুই রুমের বাসা আমাদের।সামনের দিকে একটুখানি বারান্দা যেখানে বসে আমরা চা খাই বা বৃষ্টি দেখি।ও যখন অফিসে যায় তখন আমি চাকরির প্রস্তুতি নিই।বুয়া এসে ঘরের কাজ করে যায়,আমি দুপুরের রান্না করি।যখন বস্তির ঘরটাতে ছিলাম তখন দুটো ডাল ভাত রান্না করতে হত পেটের দায়ে।এখন কিছু কিছু সত্যিকারের রান্না শিখেছি অনুর কাছে থেকে।বিকেলে অনুর ফিরে আসলে দুজনে চমৎকার সময় কাটাই।রাতের রান্না অনুই করে কিংবা দুজনে মিলে করি।

যে সব ভাইরা শুনছেন তারা নিশ্চয়ই তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলবেন---ধুর! শেষ পর্যন্ত বউয়ের বাসায় রাঁধুনি হতে হলো!কি লজ্জা! কি অপমান!

আপনারা ভুল ভাবছেন।সত্যি করে বললে বড় ভাল সময় যাচ্ছে আমার।বড্ড ভাল আছি আমি এখন।আমার লক্ষী বউটা আদরে, যত্নে, ভালোবাসায় ভরিয়ে তুলেছে আমার তুচ্ছ জীবন।বিয়ের পর ঠিক ছোট শিশুর মত করে যত্ন করেছে অনু আমাকে, আগলে রেখেছে সব না পাওয়ার যন্ত্রণা থেকে।আমার মনে সেইতো ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলেছে।একসময় যে জীবনটা অর্থহীন মনে হতো,সেই জীবনটা এখন আমার প্রচন্ডভাবে অর্থবহ মনে হয়।অনুর চাকরি বেশি বড় নয় তবে সংসারটা চলে যায়।এইটুকু নিয়েই আমরা প্রচন্ড সুখী। দুজনে মিলে একসাথে পড়াশোনা করি আরো ভাল একটা জীবিকার জন্য।আপনাদের দোয়ায় দুই জায়গাতে ভাইভা দিয়েছি।আশা রাখি কিছুনা কিছু একটা হবেই।চাকরি না হলেও সমস্যা নেই।আমাদের বাসার কাছাকাছিই একজন অনলাইনে হ্যান্ডিক্রাফটের ব্যাবসা করে।সেখানে আমারদেরও কিছু শেয়ার আছে।আমি সেখানেও কিছু সময় দিই নিয়মিত। ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে এই কাজটাকে আরো বড় পরিসরে করার।

অনু আমাকে পুরো একটা পৃথিবী সাজিয়ে দিয়েছে কিন্ত আমি তাকে কিছুই দিতে পারিনি।বিয়ের সময় নিজের টাকায় একটা সোনার নাকফুল ও দিতে পারিনি।পনেরশ টাকা দিয়ে একটা লাল জামদানী কিনেছিলাম নিউমার্কেট থেকে।সেই কমদামী শাড়িতে আর রজনীগন্ধা -গোলাপের গহনায় সে বউ সেজেছিল।তবুও তাকে কিযে সুন্দর লাগছিল!আমার চাকরি হয়ে গেলে একদিন সুন্দর আয়োজন করে একটা অনুষ্ঠান করবো। ইচ্ছা আছে তখন তাকে সমস্ত উপকরণ দিয়ে বউ সাজাবো।আপনাদেরও দাওয়াত থাকবে তখন।

নারে ভাই, বউয়ের বাসায় থাকি তার উপার্জনে খাই তা নিয়ে আমার মনে কোনো কমপ্লেক্স নেই।পুরুষত্ব নিয়ে কচকচানি আমাকে মানায় না।জীবনে অনেক ভুল করেছি, নিজের ভুলেই দুরবস্থায় পড়েছি।খারাপ সময় তো কম দেখিনি।বিপদে পড়লে কয়জন সাহায্য করতে এগিয়ে আসে?আপন পর সবাই যার যার জীবনে ব্যস্ত।অনু যদি রাস্তা থেকে তুলে নিজের হৃদয়ে স্থান না দিত হয়ত একদিন ঐ টিনের ঘরে মরে পড়ে থাকতাম।জানিনা মেয়েটা আমার মাঝে কি দেখেছিল!বিয়ের এক বছর পেরিয়ে গেছে কিন্ত ওর কোনো কথায় বা আচরণে কখনো আমার নিজেকে ছোট মনে হয়নি।সংসারটা দুজনের।দুজনে মিলে কাজ করি,সংসার গুছিয়ে রাখি।ইচ্ছে হলে ছুটির দিনে ছোটখাটো উপহার নিয়ে দুজনে মিলে বাবা আর ভাইয়াদের সাথে সময় কাটিয়ে আসি।

দেখুন না,সকালে অফিসে যাওয়ার এত তাড়া থাকে তবুও অনু ফ্লাক্সে করে আমার জন্য চা বানিয়ে রেখে যায়।আমার দিন শুরু হয় তার হাতের চমৎকার চা দিয়ে।এবার আপনারাই চিন্তা করুন , আমি কি এত ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য?

হ্যাঁ ভাই,মেয়েদের আসলেই অনেক সমস্যা।তবুও তারা অনন্য।আপনাদের কাছে মেয়েদের যা মনে হয় হোক।তবে আমার কাছে মনে হয় মেয়েরা আগাগোড়া মায়া দিয়ে তৈরি। তারা আসলেই মায়াবতী!



ছবিঃ ইন্টারনেট

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: ভয়ঙ্কর কষ্টের গল্প। আসলে গল্প না। বাস্তব।
অনু আর শাহেদ। এই সমাজে বহু অনু আর শাহেদ আছে।

২৭ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৫৯

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: হ্যাঁ। অনেক অনেক অনেক আছে।

২| ২৭ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:২৮

নেওয়াজ আলি বলেছেন: এই সমাজের বাস্তবতা । লেখায় সমাজের চিত্র ফুটে উঠেছে

২৭ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৫৯

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ২৭ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৩৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: খুব সুন্দর গল্প। + +

২৭ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:০০

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ২৭ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:২৯

করুণাধারা বলেছেন: খুব জমিয়ে গল্প বলতে পারেন আপনি। চরিত্রগুলো খুবই পরিচিত মনে হচ্ছিল, সবচাইতে ভালো লেগেছে গল্প মিলনান্তক বলে।

২৭ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:০৩

সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: আমার কেন জানি মিলনাত্মক গল্প ভাল লাগে---বাস্তবে সব গল্প মিলে না গেলেও কল্পনা একটু মিলিয়ে দিতে ইচ্ছা হয়।

৫| ২৮ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১:৩৭

ওমেরা বলেছেন: গল্পটা সুন্দর ।

৬| ২৮ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: প্রথম টুকু পড়ে যে রাগ লাগছিল ..
আস্তে আস্তে মিইয়ে যেতে থাকলো.. ধীরে ধীরে পানি হয়ে গেল
তারপর -
সেই পানিতে ফুল ফুটলো, মায়ার ফুল, করুনা, ফুল সব শেষে ভালবাসার ফুল :)

ভাল লাগলো
+++

৭| ২৮ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৪

অজ্ঞ বালক বলেছেন: লাইক করলাম, প্রিয়তে নিলাম। কমেন্টের দরকার নাই, সব জায়গায় কমেন্ট লাগে না।

৮| ২৮ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:০৬

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: গল্পটা বাস্তবধর্মী। সুন্দর। +++++++

৯| ২৮ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৩৪

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: জীবনের গল্প হলে আলাদা কথা অন্যথায় গল্প হলে বলবো ভালো লিখেছেন। তবে শুরুর চারটি প্যারাটা তেমন প্রয়োজন ছিল না।
পোস্টে চতুর্থ লাইক।
শুভকামনা জানবেন।

১০| ২৮ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:০৬

মিরোরডডল বলেছেন:



একটা কোমল আশ্রয়ের জন্য খুব মন কেমন করতো ।
এটাই সত্যি আর এখানেই সব শান্তি ।

সবকিছুইর একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে ।
হুম, সময়ের কাজ সময়ে করতে হয় ।

আসলেই শাহেদ এতো ভালোবাসা পাবার যোগ্য ছিলোনা , স্বার্থপর একটা !
কিন্তু ঐযে অনু, একজন মায়াবতী, মেয়েরা এমনই হয় ।

ছবির মেয়েটি অপূর্ব দেখতে ।

১১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:০২

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্য অনুর ভালবাসা।+++

জীবন সংগ্রামে এ সকল মধ্যবিওের জীবনের ছবি।
তবে সবার জীবনে এরকম মায়াবতীর আগমন ঘটেনা।এদিক দিয়ে শাহেদ সফল।সে একজন মায়াবতী পেয়েছে যে কিনা তার সকল ব্যর্থতাকে পাশ কাটিয়ে তাকে সফল করার চেষ্টা করছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.