নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Chernobyl(2019) রাশিয়ার ইউক্রেনের চেরনোবিল শহরে ঘটে যাওয়া পৃথিবীর ভয়ংকরতম নিউক্লিয়ার দূর্ঘটনা নিয়ে তৈরি একটি মিনিসিরিজ।
HBO and SKY UK এর প্রযোজনায় তৈরি এই সিরিজটিতে পর্ব আছে মোট পাঁচটি। পর্বগুলো সময় দৈর্ঘ্য প্রায় এক ঘন্টা।
Craig Mazin এবং Johan Renck পরিচালিত সিরিজটির নির্মাণ থেকে শুরু করে অভিনয় সবকিছুই অসাধারন।যারা ঐতিহাসিক সিনেমা বা ধারাবাহিক পছন্দ করেন তাদের কাছে এটি চমৎকার লাগবে।যারা পছন্দ করেন না তারাও বেশ ভালোভাবেই উপভোগ করবেন। বিষয়টি যেহেতু নিউক্লিয়ার দূর্ঘটনা তাই নিউক্লিয়ার বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনাই বেশি ফলে জানা অজানা অনেক তথ্য জেনে যাবেন সকলেই।
1986 সালের এপ্রিল মাসের 26 তারিখে ইউক্রেনে ঘটে যায় পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ নিউক্লিয়ার দূর্ঘটনা। চেরনোবিল নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের চতুর্থ রিএক্টরটি বিস্ফোরিত হয় যার ফলে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ তেজস্ক্রিয় বর্জ্য এবং তেজস্ক্রিয়তা।সমসাময়িক সময়ে অল্প কিছু মানুষ মারা গেলেও দিনে দিনে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে আরো অনেক মানুষ মৃত্যু বরন করে।তবে বিজ্ঞানী ও টেকনিশিয়ানদের মেধা,পরিশ্রম আর আত্মত্যাগের কারনেই বিপদের পরিমান তুলনামূলকভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল।এই সব কিছুই চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই মিনিসিরিজটিতে।এখানে দেখতে পাবেন দূর্ঘটনা কবলিত মানুষের কষ্ট, মানবকল্যানের জন্য আত্মত্যাগের চিত্র,দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া ও সত্যকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা।সবকিছুই কিন্ত সত্য ঘটনা কে অবলম্বন করে বানানো হয়েছে।
এবারে কিছু সায়েন্স।
ইউরেনিয়াম, প্লুটোনিয়াম এইসকল তেজস্ক্রিয় পদার্থকে একটি মৌলিক কনা নিউট্রন দিয়ে আঘাত করলে পদার্থগুলো ভেঙে তুলনামূলক কম ভরের দুটি পদার্থ তৈরি হয়।সেই সাথে আরো কিছু নিউট্রন তৈরি হয়।সেই নিউট্রনগুলো আরো কিছু ইউরেনিয়াম কে ভেঙে দেয়।ফলে আরো কিছু নিউট্রন তৈরি হয়।এভাবেই চলতে থাকে তাই একে বলে চেইন রিয়াকশন।বড় পরমাণুকে উচ্চগতি সম্পন্ন নিউট্রন দিয়ে আঘাত করে ভেঙে ফেলার এই প্রক্রিয়াকে বলে নিউক্লিয়ার ফিশান বিক্রিয়া।এই বিক্রিয়ার ফলে অনেক অনেক শক্তি উন্মুক্ত হয়।পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সেই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।(বিক্রিয়াতে তাপ উৎপন্ন হয়-সেই তাপে পানি বাষ্পীভূত করা হয়- সেই পানিএকটা টারবাইন ঘুরায়- সেখান থেকে বিদ্যুৎ তৈরি হয়)
পারমানবিক বোমাও কিন্ত এই একই বিক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে বানানো হয়।বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিক্রিয়া থাকে নিয়ন্ত্রিত, তেজক্রিয়তাও একটা নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে থাকে।পারমাণবিক বোমাতে অচিন্তনীয় অনিয়ন্ত্রিত শক্তি আচমকা উন্মুক্ত হয় বলে তার ফল হয় ভয়ানক।আমরা সবাই হিরোশিমা - নাগাসাকির কথা জানি।চেরনোবিলের দূর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রভাবও কিন্ত কম ছিলনা।তেজস্ক্রিয়তা কিন্ত ভাল কোনো জিনিস নয়।জীবদেহে তাৎক্ষণিক নানা সমস্যা সৃষ্টি ছাড়াও পরবর্তীতে ক্যান্সার এর কারন এই তেজষ্ক্রিয়তা।চেরনোবিলের দূর্ঘটনার ফলে শুধু ইউক্রেন না,ইউরোপের অনেক দেশ পর্যন্ত তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল।গাছপালা মাটি অন্যান্য জিনিসও তেজস্ক্রিয় পরমানু শোষন করে তেজস্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিল।সরকার তাই আসেপাশের 30 কিলোমিটার পর্যন্ত জায়গা ইভ্যাকুয়েশন করতে বাধ্য হয়েছিল।যাদের বাসা খালি করতে বলা হয়েছিল তারা কিন্ত আজও বসত ভিটায় ফিরে যাওয়ার অনুমতি পায়নি।ভাবুন একবার তেজস্ক্রিয়তা শোষন করা পানি,ফল,মাছ-মাংস খেলে আপনার শরীরেও তা প্রবেশ করবে!!
চেরনোবিলের দূর্ঘটনা ইচ্ছাকৃত ছিলনা।একটা টেস্ট করতে গিয়ে অজ্ঞতাবশত এই দূঘটনাটি ঘটে।এর ফলে শুধু মৃত্যুই না, মৃত ও বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম আর ক্যান্সার হয়েছে আসেপাশে উপস্থিত থাকা অনেকের।যে লোকগুলো সেদিন অগ্নিনির্বাপণ এর কাজ করেছিল তারা কিছুদিনের মধ্যে মারা গিয়েছিল।তাদের পরিত্যক্ত পোষাকগুলো আজও অনেক বেশি তেজস্ক্রিয়। ধ্বংস প্রাপ্ত রিয়াক্টরের ছাদে এতবেশি তেজস্ক্রিয়তা ছিল যে চন্দ্র অভিযানে ব্যবহার করা 'মুন রোভার' দিয়ে ছড়িয়ে থাকা জিনিস গুলোকে সরানো হয়েছিল।এতবছর ধরে এত ক্ষয়ক্ষতির পর 2065 সালে এই দূর্ঘটনার তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব পুরোপুরি কেটে যাবে বলে ধারণা করা হয়।
এই সিরিজ দেখার সময় মনে হয়েছিল চোখের সামনে ইতিহাস দেখছি।ভাবছিলাম আমাদের রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কথা।আমরা যতটা অসচেতন,দায়িত্বে অবহেলা এখানে নিত্যকার ঘটনা। যদি এমন কিছু এখানেও ঘটে তাহলে কি হবে!!!তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব এমন সুদূরপ্রসারি যে ভাবলেই আমার শুধু ভয় লাগে।
১৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১১:৪৮
সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: কেন কেন?
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:৫৭
রাজীব নুর বলেছেন: এই সিরিজ আমি দেখতে পারবো না। সম্ভব না।