নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার মতো নিরীহ শান্ত গোবেচারা টাইপের ছেলে যে কারো প্রেমে পড়তে পারে এটা বিশ্বাস করা কঠিন। কিন্তু সেই আমিই কিনা শেষ পর্যন্ত প্রেম নামক মরীচিকার পেছনে ছুটতে ছুটতে গলদঘর্ম। আর এর ফলস্বরুপ প্রেমসুধা আহরন। সময়টা ২০০০ সাল। আমি তখন কাস এইটে নতুন ভর্তি হলাম আমাদের গ্রামের স্কুলে। কাস ফাইভে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া একমাত্র ছাত্র হিসাবে আমার যথেষ্ট সুনাম। সেই সাথে শান্ত-শিষ্ট, ভদ্রতায় অনন্য। আগন্তুক হিসাবে সবার কাছে পাচ্ছিলাম এক্সট্রা খাতির। আমাদের কাসের মেয়েরাও যথেষ্ট আন্তরিকভাবে নিল আমাকে। কিন্তু আমি ওদেরকে মোটেও পাত্তা দিতাম না। সমবয়সী মেয়েদেরকে আমার কেমন পিচ্চি পিচ্চি মনে হত। আর মিষ্টি চেহারাও খুব একটা ছিল না। যাই হোক দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল বেশ আনন্দের সাথেই। আমাদের কাসে ছিল সাথী নামের একটা হিন্দু মেয়ে। চেহারা সুরত খুব একটা খারাপ নয়। গায়ের রং খুব উজ্জ্বল না হলেও যথেষ্ট গ্লামার ছিল মেয়েটার। কিন্তু আমি নির্বিকার। অতি উৎসাহীর দল পাজির পা ঝাড়া বিচ্ছুগুলো সবুজ-সাথীর প্রেম কাহিনী ছড়িয়ে বেশ মজাই পেল। কিন্তু আমি অন্যমনা। আমার তখন বৈরাগ্য দশা। উদাসী আনমনা ভঙ্গি। সারান মনমরা ভাব। কল্পলোকে বিচরন, তাও সবার নজরে। আমিও হতবাক! হায় একি হয়ে গেল। এও সম্ভব কি করে। সিনিয়র দিদির সাথে প্রেম!
আমি তখন কাস নাইনে। দিদি তখন কাস টেনে। বারন্দায়, রাস্তায় যখন যেখানেই দেখা মুচকি হাসি, ভেংচি কাটা চলতেই থাকে। বাগে পেলে কান মলা, কিল, চড় তাও চলে। সবকিছু মেনে নেই অম্লান বদনে। দিদি বলে কথা। প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা, সবার আগে কাসে আসা, টিফিন প্রিয়ডে বিজ্ঞানের কাসে চোখে চোখ রাখা নিয়ম হয়ে দাড়ালো। দিদি ছিলেন খুবই সুন্দরী। বডি ফিগার তাও চমৎকার। এককথায় অসাধারন। আমরা বিচ্ছুর দল মেয়ে বিষয়ক গবেষনায় যথেষ্ট পারঙ্গম ছিলাম। কোন মেয়েটা কেমন হাটে, কেমন হাসে, কিভাবে কথা বলে তা ছিল আমাদের নখদর্পনে। দিদির চেহারা, বডি ল্যাগুয়েজ যে সবার থেকে আলাদা এবং চমৎকার এ বিষয়ে কারও কোন সন্দেহ ছিল না। ইন্ডিয়ান নায়িকাদের চেয়ে দিদি যে কোন অংশে কম নয় তাও বেশ বুঝতে পারতাম। আমার আর গর্বের সীমা ছিল না। নিজেকে বেশ ভাগ্যবান মনে হতো। ইতিমধ্যে বেশ কিছু দিন কেটে গেল। শরীরে, মনে বেশ প্রেম প্রেম ভাব। দু চারটা কবিতাও লিখে ফেলেছি ইতোমধ্যে। প্রায়ই তাকে উৎসর্গ করে কবিতা লিখি। ম্যাসেঞ্জার মারফৎ তাকে পাঠাই। সে খুশি হয়। আমাকে আরো ভালো লেখার অনুপ্রেরনা দেয়। আমি যেন হাওয়ায় ভেসে চলি।
একদিন টিফিন প্রিয়ডে বিজ্ঞানের কাসে জরুরি তলব। বেশ ভয়ে ভয়েই গেলাম। দেখলাম দিদি ও তার চাচাতো বোন দাড়িয়ে আছে। বেশ থমথমে মুখাবয়াব। দোয়া দুরুদ পড়ে বুকে ফুক দিয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে রুমের মধ্যে ঢুকলাম। দিদি আমার সামনে এসে দাড়ালেন। চোখে চোখ রেখে নির্বাক তাকিয়ে রইলেন ঝাড়া এক মিনিট। আমার হৃদপিন্ড টিপ টিপ করছিল। না জানি কি শুনতে হয় আমাকে। আমার অবস্থা দেখে একটু হাসলেন তিনি। মুখ খুললেন অবশেষে। আমার চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি আমাকে ভালবাস? আমি হকচকিয়ে গেলাম তার প্রশ্ন শুনে। কি বলব খুজে পাচ্ছিলাম না। অবশেষে বুকে সাহস নিয়ে বললাম হ্যা! আমি আপনাকে ভালবাসি। কেন ভালবাস? তার প্রশ্ন। আপনাকে আমার ভাললাগে। আমার সহজ সরল জবাব। ভাললাগলেই যে ভালবাসতে হবে এটা কেমন কথা। হ্যা এটাই বাস্তব কথা। আমি অতো কিছু বুঝিনা। আমি আপনাকে ভালবাসি। আমার দৃঢ় জবাব। শোন পাগলামি করনা। তুমি কি জানো তোমার আমার মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার দুর্ভেদ্য দেয়াল, যা টপকানো আমাদের কারো পইে সম্ভব নয়। থামলেন তিনি। ভালাবাসা কোন আইন মানে না। ভালাবাসা তার নিজস্ব গতিতে চলে। ভালবাসাকে কোন সাম্প্রদায়িকতার গন্ডিতে বাধা যায়না। আমি বললাম। বাহ! কথা তো ভালই শিখেছো, তোমার সাহস তো কম নয়। আমি তোমার থেকে এক বছরে সিনিয়র একথা কি ভুলে গেছ। আরে এটা কোন ব্যাপারই না। আপনাকে আমার ভাললাগে। আমি আপনাকে ভালবাসি। ব্যাস আমি আর কিছু শুনতে চাই না। তুমি কি জানো তুমি অন্যায় করছ। তোমার নামে স্যারদের কাছে বিচার দিলে দোমার কি হবে তা একবার ভেবে দেখেছ। না আমি অন্যায় করছি না। ভালবাসা কোন অন্যায় নয়। আর হ্যা! আপনি ইচ্ছা করলে বিচার দিতে পারেন। তবে আমার মনে হয় আপনি তা করবেন না। কারন আ---আ----প---নিও আমি হঠাৎ থেমে গেলাম। প্রায় আতকে উঠলেন দিদি। কি ! কি বললে তুিম। কি কারনটা কি শুনি। কারন আপনিও আমাকে ভালবাসেন, আমার নির্লিপ্ত জবাব। না আমি তোমাকে ভালবসি না। তোমার ধারনা ভুল। একটু থামলেন তিনি। আমি তো--তো--মা----কে পূজা করি। তুমি আমার দেবতা। অশ্র“ ছল ছল চোখে বললেন তিনি। আমি হতবিহবল চোখে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। মুখে কোন কথা সরছিল না। যা ছিল আমার কল্পনারও অতীত। তাই আজ বাস্তব হয়ে আমার সামনে মূর্তিমান। আমি অপলক দেখছিলাম এই সেই অপূর্ব প্রেমময়ী নারীর চোখের করুন আকুতি। খুব দ্রুত সামলে নিলেন তিনি। অবশেষে বললেন, শোন। মন দিয়ে পড়ালেখা করবে। বাজে ছেলেদের সাথে মিশবে না। তোমাকে আরো ভালো রেজাল্ট করতে হবে। আমার জন্য কোন চিন্তা করবে না। আমি তোমারই আছি তোমারই থাকব। আমার দুষ্টু টিয়াপাখি আমার কথাগুলো স্মরনে রেখো। আমি সুবোধ বালকের মতো তার সব শর্ত মাথা পেতে নিলাম। সেদিনকার মতো সে বিদায় নিল। এভাবেই চলছিল সদ্য ফোটা গোলাপের প্রেম।
সপ্তাহে তিন থেকে চারটা চিঠি বিনিময় হতো আমাদের। মাঝে মাঝে দেখা হতো। এভাবেই চলছিল বেশ। ইতোমধে ও এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তি হল। আমি এসএসসি পরীার্থী। প্রায়ই ওর কলেজে চলে যেতাম আমি। নদীর পাড়ে, ভ্যানে চড়ে, রেষ্টুরেন্টে বসে চোখে চোখে রেখে ভালবাসা বিনিময় করতাম আমরা। ওর বাসষ্ট্যান্ডে প্রায়ই বসে থাকতাম। কলেজে যাওয়া আসার সময় দুর থেকে দেখতাম। কখনো বা একটু চোখের ইশারা, কখনো বা একটু মুচকি হাসি মন ভরে দিতো আমার। রাস্তায় তেমন কথা হতো না। পাছে কেউ দেখে ফেলে। ওর বাবার কাছে নালিশ দেয়। এই ভয় আমাদের সর্বদা তাড়া করত। তবুও পূজা-পার্বনে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেখা হতো ওর সাথে। এভাবে কেটে গেল প্রায় দেড় বছর। এরপরের ঘটনাগুলো ঘটল খুব দ্রুত। কখন যে দেড়টা বছর পেরিয়ে গেল তা টেরই পেলাম না। টের পাবই বা কি করে আমি যে তখন সুপারসনিক মিগ-২৯ বিমানের মতই দ্রুত গতিতে ভালবাসার সোপান বেয়ে উপরে উঠছি। আর ভালবাসার মহাশূন্যে কেবলই ভেসে চলছি। আর এদিকে কখন যে ফুয়েল ট্যাংকার শূন্য হয়ে গেছে, ব্যাটারীর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তা ঘূর্ণারেও জানতে পারিনি।
যখন বুঝতে পারলাম তখন আর সময় ছিল না। একেবার মুখ ত্থবরে পড়লাম। সম্পূর্ন রুপে বিধস্ত হলাম আমি। একদিন যে সাম্প্রদায়িকতাকে আমরা দুজনই অগ্রাহ্য করতাম আজ সেটাই সে বড় যতন করে আমাদের মাঝে দেয়ালরুপে দাড় করাল। তার যুক্তির কাছে হার মানলাম। কারন তার কপালে কালীর সিদুর পড়িয়ে দেয়া আমার পে কখনোই সম্ভব ছিল না। সে লিখলো, ” তোমাকে পেতে হলে আমাকে মা-বাবা, ভাই-বোন সব হারাতে হবে। অন্যদিকে তোমার কিছুই হারাতে হবে না। আচ্ছা যদি বলা হয় তুমি হিন্দু ধর্ম গ্রহন কর। তুমি কি তা করবে? জানি করবে না। কারন কেউই চায়না নিজ ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহন করতে। আমি তোমাকে ভালবাসি একজন ভালো মানুষ হিসাবে। কিন্তু আমি যখন এত ভয়াবহ পরিনতির কথা চিন্তা করি তখন আমি শিউরে উঠি”। তার অকাট্য যুক্তির কাছে হার মানলাম আমি। তাই সে আজ অনেক দুরে। অনেক দুরে আমার সীমানা থেকে। তাকে আজও ভুলতে পারিনি। এখনও নষ্টালজিয়ায় পেয়ে বসে আমাকে। তীব্র স্মৃতি কাতরতা আমাকে শোকাহত করে। তারপর কেটে গেছে প্রায় অর্ধযুগ। কত জল গড়িয়ে গেল। কত বর্ষা এলো, কত ফাগুন এলো আর গেল। আমার আর কবি হয়ে ওঠা হলো না। কেননা আমার চারপাশে আজও ধূ-ধূ বালুচর। কোথাও একফোটা সবুজ নেই!
পাঁচপাড়া বাজার, পিরোজপুর সদর থেকে
ংঁঢ়বৎহড়াধ৪১১১@ুধযড়ড়.পড়স
০১৭৩৬-৪৫২১৬৭
২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৩৬
আহেমদ ইউসুফ বলেছেন: Eta amar jiboner golpo. pathoker kemon lagbe janina.... pl comments asha korchi.
৩| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪৪
তোমার গল্পের মৃত রাজকন্যা বলেছেন:
৪| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৫৬
মামুinসামু বলেছেন: ...... আমার আর কবি হয়ে ওঠা হলো না.....
কে বলে আপনি কবি নন?
৫| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৭
ইখতামিন বলেছেন: ২য় +++++++++++
৬| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:০৮
আহেমদ ইউসুফ বলেছেন: সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার লেখা পড়া ও মন্তব্য করার জন্য।
৭| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৩৩
সুখোই-৩৫ বলেছেন: এজন্যই দেশে এসেছে আন্তধর্মীয় বিবাহ আইন। পাত্র-পাত্রী স্ব স্ব ধর্ম বজায় রেখে বিয়ে করতে পারবে এখন, কাউকে ধর্ম ত্যাগ করতে হবে না। কি আর করা, দেরী হয়ে গেছে। এখন বসে বসে মুড়ি খান। মুড়ি খান আর স্মৃতি রোমন্থন করতে থাকেন।
---------------------------------
---------------------------------
মিয়া প্রেম করার সময় মনে ছিল না এইগুলা হইব? প্রেম মারাইতে গেছিলেন কেন, বিয়াই যদি না করতে পারলেন? ব্যাটা মানুষ হইলে বিয়া কইরা দেখাইতেন, তাইলে বুঝতাম, এহন আইছেন পিরীতের কাহিনী মারাইতে। প্রেম ট্রেম কইরা টইরা ভাগা দিছেন। এইরকম লোক আমার না-পছন্দ।
৮| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৪৫
আহেমদ ইউসুফ বলেছেন: ধন্যবাদ ধৈর্য্য ধরে আমার লেখা পড়ার জন্য। টিনএজ বয়সী প্রেম তো ভাই । তখন কি আর এত কিছু বুঝতাম। আবারো ধন্যবাদ আপনাকে।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৩৪
কালোপরী বলেছেন: