নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রথম অধ্যায়ঃ উপনিবেশিকতার খুনে ঐতিহ্য – ১
আন্দ্রে ভিচেক – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিগত প্রায় ষাট বছরে সারা দুনিয়াতে প্রায় পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ মারা গেছে পশ্চিমা উপনিবেশবাদ আর নয়া উপনিবেশবাদী তৎপরতায়। তর্কসাপেক্ষে, এই অল্প সময়ের মধ্যেই মানব সভ্যতা ইতিহাসের সবচাইতে ভয়াবহ বেশ কিছু গনহত্যা দেখেছে। এই সকল ভয়াবহ মানব হত্যাকান্ডের বেশীর ভাগই সংগঠিত হয়েছে দুটি সস্তা শ্লোগানের উপর ভর করে – গনতন্ত্র ও স্বাধীনতা। হাতেগোনা কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ এবং ইউরোপীয় বংশোদ্ভূতদের দ্বারা শাসিত দেশ সমূহ তাদের স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, দুনিয়ার একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। এই সকল ভয়াবহ মানব হত্যাকান্ড গুলোকে প্রায়শই ব্যাখ্যা করা হয়েছে ইনেভিটেবল হিসাবে, কখনও বা এই সকল হত্যাকান্ডর স্বপক্ষে সাফাই গাওয়া হয়েছে। অথচ এই সকল ভয়াবহ হত্যাকান্ডগুলো সম্পর্কে পশ্চিমের জনগনের মাঝে দেখা যায় এক নিদারুন অজ্ঞতা আর ভুল তথ্যসমৃদ্ধ বোঝাপড়া।
প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ নিহত হয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলোর দ্বারা সুচিত যুদ্ধে, কিন্তু পরোক্ষ হিসাবে আরো কয়েক কোটি মানুষ নিহত হয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলোর সহায়তায় স্থানীয় ভাবে সৃষ্ট গৃহযুদ্ধ আর সামরিক অভ্যুত্থান গুলোর মাধ্যমে। এই হত্যাকান্ডগুলো ঘটেছে চরম নিষ্ঠুরতায় আর নীরবে। যুদ্ধ আর মানুষ হত্যার এই সকল পরিকল্পিত আয়োজনগুলোকে খুব কম সময়েই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে পশ্চিমা দুনিয়ায়। এমনকি দখলকৃত ভুমিতেও এই সকল হত্যাকান্ডকে মেনে নেয়া হয়েছে প্রায় বিনা প্রতিবাদে। দুনিয়া কি উন্মাদ হয়ে গেলো?
নোয়াম চমস্কি– দুর্ভাগ্যজনক সত্যি হচ্ছে, পশ্চিমের কোন অপরাধটি আসলে সবচাইতে ভয়াবহ? এটা প্রায় একটা প্রতিযোগিতার মতো। কলম্বাস যখন পশ্চিম গোলার্ধে পা রাখলো, তখন এই ভুমিতে প্রায় আট থেকে দশ কোটি মানুষের বসবাস ছিলো এখানে, যথেষ্ট উন্নত সভ্যতা, ব্যবসা – বানিজ্যের ইতিহাস ছিলো সেই জনগোষ্ঠীতে। খুব সময় লাগেনি সেই জনগোষ্ঠীর প্রায় পঁচানব্বুই শতাংশ কে ধ্বংস করে দিতে। সেই ভুমিটির নাম এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় এক কোটি আদিবাসীর বসবাস ছিলো এখানে, সরকারী হিসাব মতেই, ১৯০০ সালের মধ্যেই যা নেমে আসে দুই লাখে। কেউ জিজ্ঞাসা করেনি কেনো? মূল ভুমিপুত্রদের এই ধ্বংস হয়ে যাওয়া কে চেপে গেছে সবাই, প্রত্যাখ্যান করেছেন সবাই, নেতৃস্থানীয় বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ, গবেষক – গবেষণা প্রতিষ্ঠান – গবেষণা পত্রিকা, বামপন্থী – উদারনীতিবাদী প্রায় সকলেই ভুলে গেছেন সে ইতিহাস, সকলেই অস্বীকার করেছেন সে ইতিহাস। এই ভুলে যাওয়া, এই অস্বীকার করার ঘটনাগুলো ঘটেছে প্রায়শই কোনও রকমের ব্যাখ্যা – বিশ্লেষণ বা মন্তব্য ছাড়াই।
মেডিক্যাল জার্নাল দি ল্যানসেট এর এক গবেষণা অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় ষাট লক্ষ শিশু মারা যায় কেবলমাত্র প্রাথমিক স্বাস্থ্যসুবিধার অভাবে।অথচ নিতান্তই নগন্য পরিমান টাকার বিনিময়ে নিশ্চিত করা যায় এই স্বাস্থ্যসেবা। এই সংখ্যা গুলো আমাদের খুব পরিচিত। দক্ষিন আফ্রিকায় অপুস্টি আর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার অভাবে প্রতিন মারা যায় প্রায় আট হাজার শিশু। হ্যাঁ সংখ্যাটি আট হাজার। প্রতিদিন, প্রায় রোয়ান্ডার মতো, প্রতিদিন মারা যাচ্ছে এই শিশুরা, কত সহজেই।
এবং এছাড়াও আমরা এগিয়ে চলেছি আরেক ধরনের জেনোসাইড বা গনহত্যার দিকে। এটাও এক ধরনের জেনোসাইডই বলা যেতে পারে, নির্মম ভাবে পরিবেশের ধ্বংস সাধন করছি। এই সমস্যাটির কথা কেউ আমলেই নিচ্ছেনা এবং বাস্তবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ইস্যুতে বরং পেছনের দিকেই হাঁটছে। আমেরিকায় এখন এক ধরনের ইউফোরিয়া চলছে ফসিল ফুয়েল বা জীবাশ্ম জ্বালানী প্রসঙ্গে। তারা ভাবছে জীবাশ্ম জ্বালানী উত্তোলনের নয়া প্রযুক্তি দিয়ে আমেরিকা হয়তো আরো এক শতাব্দীর জন্যে তেল ও শক্তির স্বাধীনতা লাভ করবে, এরা বোধ হয় জ্বালানী তেলের এই সক্ষমতা দিয়ে দুনিয়া কে শাসন করবার ক্ষমতাকে আরো বিস্তৃত ও সংহত করবে। আমেরিকা হয়ত হয়ে উঠবে আগামী দিনের সৌদী আরব। এই বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামা বেশ উতসাহী হয়েই আলোচনা করেছিলেন তার ২০১২ সালের এক রাষ্ট্রীয় বক্তৃতায়। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রকাশনায়, প্রেস বিজ্ঞপ্তি তে বেশ ফলাও করেই এই ব্যাখ্যা ছাপা হয়েছিলো, যেকেউ তা পড়ে দেখতে পারেন। জীবাশ্ম জ্বালানী বিষয়ক তার সেই বক্তৃতায়, জীবাশ্ম জ্বালানী উত্তোলনে নেতা হয়ে ওঠার প্রসঙ্গে আমেরিকার স্থানীয় পরিবেশের উপরে এর প্রতিক্রিয়ার কিছু কথা ছিলো বটে কিন্তু এই প্রবনতা বিশ্ব পরিবেশের উপরে কি প্রতিক্রিয়া তৈরী করবে তার বিন্দুমাত্র আলচনা ছিলোনা। প্রশ্নটা হচ্ছে এইভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে গোটা বিশ্ব একশো বছর পরে কোথায় যাবে, সে বিষয়ে কারো কোনও মাথা ব্যাথা নেই। এই বিষয়ে কারো কোনও আলোচনা নেই অথচ এই প্রসঙ্গ গুলো আমাদের মৌলিক সমস্যাগুলোর সাথে যুক্ত। এটা একটা বিরাট সমস্যা, বাজার অর্থনীতিভিত্তিক সমাজে বর্তমান কাজের ভবিষ্যৎ পরিনতি নিয়ে কেউ চিন্তিত নয়। যা কিছুর বাজার মুল্য নেই, বিনিময় মুল্য নেই, যা কিছু আমাকে আক্রান্ত করেনা কিন্তু অন্যকে আক্রান্ত করে সে সকল বিষয় নিয়ে কোনও বিবেচনাবোধ কাজ করেনা এখন।
আন্দ্রে ভিচেক – আমি দেখছি ওশেনিয়া অঞ্চলে বেশ কিছু ভুমি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। আমি কিছু দিন সামোয়া দ্বীপে ছিলাম এবং কয়েক বছর সেই অঞ্চলে ব্যাপক ঘুরে বেড়িয়েছি। বেশ কয়েকটি দেশ যেমন টুভালু, কিরিবাতি কিম্বা মারশাল আইল্যান্ড এই সকল দেশ গুলো ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা করছে তাদের জনগোষ্ঠীর একটা বিরাট অংশ কে সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে।মালদ্বীপ সহ ওশেনিয়া অঞ্চলের কিছু দেশ ও দ্বীপ ইতিমধ্যেই নিরাপদ বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। সাগর গর্ভে তলিয়ে যাবার তালিকায় কিরিবাতিই সম্ভবত হবে প্রথম দেশ । মিডিয়া বলছে ঐ দেশগুলো ডুবে যাচ্ছে। কিন্তু আসল সত্য হচ্ছে দেশগুলো ডুবে যাচ্ছেনা, বরং স্রোতের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে, ফলে সমুদ্রের স্রোত দেশগুলোকে ভাসিয়ে নিচ্ছে, ধ্বংস করছে জনপদ, দূষিত করছে অবশিষ্ট খাবার পানির উৎস। ফলে এই দ্বীপ গুলো হয় বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে আর নয়তো খাবার সহ সকল কিছু বিদেশ থেকে আমদানী করতে বাধ্য হচ্ছে। সম্পূর্ণ বিদেশ নির্ভর হয়ে উঠছে।
বিস্ময়কর হলেও বলছি, যখন আমি টুভালু দ্বীপে কাজ করছিলাম, সেখানে আমি কোনও বিদেশী সাংবাদিক বা সংবাদ সংস্থাকে দেখিনি। কেবল একটা জাপানী চলচ্চিত্র নির্মাণ দল কি একটা সোপ-অপেরা ধরনের টিভি নাটকের শুটিং করছিলো। এই বিষয়টি অর্থাৎ মিডিয়া গুলোর এই নীরবতা আমাকে চিন্তিত করেছে। সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার কারণে একটি জনগোষ্ঠী যা অচিরেই দুনিয়ার মানচিত্র থেকে নাই হয়ে যাবে, অথচ তাঁকে নিয়ে আমাদের কোনও চিন্তা নেই, খবরও নেই।
নোয়াম চমস্কি- জর্জ অরওয়েল এর একটা শব্দ আছে এর জন্যে – “অজনতা” বা আন-পিপল (অনুবাদকের নোটঃ নোয়াম চমস্কি ইংরাজিতে এই শব্দটি উল্লেখ করেছেন “Unpeople” হিসাবে। অর্থাৎ এরা হচ্ছেন জনগনের সেই অংশ যাদের ক্ষতিবৃদ্ধি, চাওয়া-পাওয়া, না পাওয়া এসব দিয়ে রাষ্ট্রের কিচ্ছু যায় আসেনা।)। এই “অজনতা” শব্দটি আসলে সকল জনগন কে দুটি ভাগে ভাগ করে। যেমন ধরুন এই আমাদের মতো জনতা, যারা সমাজের উপর তলায় থাকে আর সুবিধাভোগী শ্রেনী আর অন্যভাগে সেই সকল মানুষ যাদের আশা আকাংখা, চাওয়া-পাওয়া বা না পাওয়া দিয়ে কারো কিচ্ছু আসে যায়না। জর্জ অরওয়েল হয়তো এই প্রসঙ্গটির উল্লেখ করেছিলেন এক দলীয়, সমগ্রতাবাদী শাসন ব্যবস্থার প্রসঙ্গে কিন্তু এই ধারণাটি আমাদের সময়ের পৃথিবীর বেলাতেও সমান ভাবে প্রযোজ্য। মার্ক কার্টিস হচ্ছেন একজন বিদগ্ধ ইতিহাসবিদ, রাজনৈতিক ও কুটনৈতিক ইতিহাস বিষয়ে পাণ্ডিত্যের জন্যে তিনি প্রশংসিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতনের উপরে তার যে গবেষণা রয়েছে, সেখানেও তিনি এই শব্দবন্ধ টি ব্যবহার করেছেন। “অজনতা” হচ্ছে জনগনের সেই অংশ যাদের বিষয়ে আমাদের কোনও দুশ্চিন্তা নেই, যাদের থাকা না থাকা দিয়ে আমাদের কিছু যায় আসেনা।
অ্যাংলো দুনিয়া অর্থাৎ আদি ইংল্যান্ডের ছানাপোনারা, যেমন আমেরিকা, ক্যানাডা ও অস্ট্রেলিয়াতেও ই “অজনতা”র বিষয়টি রয়েছে ইতিহাসে। এই অস্বাভাবিক সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো তাদের মূলভুমির আদিবাসীদের শুধু শাসনই করেনি, তাদের ঝাড়ে-বংশে শেষ করে দিয়েছে। এই অ্যাংলো সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, এই ভুমি গুলোর আদিবাসীদের জমি জমা, বসত-বাড়ী কেড়ে নিয়েছে এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তাদেরকে সম্পূর্ণ বিতাড়িত করেছে, হত্যা করেছে, নিশ্চিহ্ন করেছে। আমরা এসব কথা জিজ্ঞাসা করিনা। আমরা জিজ্ঞাসা করিনা এই সকল আদিবাসীদের প্রতি কি আচরণ করা হয়েছে ইতিহাসে। আমরা অস্বীকার করি, শ্রেফ অস্বীকার করি।
আন্দ্রে ভিচেক – ঐতিহাসিক ভাবে এই একই ঘটনা ঘটেছে প্রায় সকল ইউরোপীয় কলোনীতে। দুনিয়ার তাবৎ দেশগুলোতে যেখানে ইউরোপীয় শক্তির কলোনী ছিলো, সেসব দেশে এই একই ঘটনা ঘটেছে। ইতিহাস বলছে, প্রথম কনসেন্ট্রেসন ক্যাম্প কিন্তু জার্মান নাৎসি দের দ্বারা তৈরী হয়নি, বরং তা তৈরী হয়েছিলো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের হাতে কেনিয়া ও দক্ষিন আফ্রিকায়। আর জার্মানরা যে হলোকাস্ট বা ভয়াবহতম হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিলো ইহুদী এবং রোমা’দের উপরে, ঐতিহাসিক ভাবে সেটাই কিন্তু তাদের প্রথম গনহত্যা নয়, বরং জার্মানরা এর আগেও লাতিন আমেরিকায় এবং দুনিয়ার আরো অনেক আনাচে-কানাচে ভয়াবহতম সব হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। নামিবিয়াতে হেরেরো জনগোষ্ঠীর প্রায় পুরোটাই বিলীন হয়ে গেছে জার্মানদের হাতে। এই সব হত্যাকান্ডের ঘটনা, এই সব জনপদ ধ্বংসের ঘটনা কালেভদ্রেও আলোচিত হয়না জার্মানিতে কিম্বা ইউরোপে।
কিন্তু আমরা যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের ইউরোপীয়দের অনুতাপের কথা শুনি, তাহলে দেখা যাবে, ইউরোপীয়রা বলছে কিভাবে জার্মানদের মতো একটি আপাত শান্তিকামী জাতি এই ধরনের হিংস্র হয়ে উঠলো, কারণটা শুধুমাত্র প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অর্থনৈতিক ভাবে পরাস্ত হবার জন্যে। এটা সবারই বিস্ময়, কিভাবে জার্মানির মতো একটি দেশ হঠাত করেই এভাবে হিংস্র হয়ে উঠলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। হ্যাঁ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের ভুমিকাকে “হঠাত” কিম্বা “বিস্ময়কর” ঘটনা মনে হবে যদি আমরা ভুলে যাই তার আগের ইতিহাসের কথা। যদি আমরা ভুলে যাই নামিবিয়ার হেরেরো জনগোষ্ঠীর কথা, কিম্বা যদি আমরা ভুলে যাই যে সামোয়ানস কিম্বা মাপুসে জনগোষ্ঠীর মানুষেরাও মানুষ ছিলো। যদি আমরা ভুলে এঁদের উপরে জার্মানদের নিপীড়নের কথা। কিম্বা যদি আমরা ভুলে যাই আফ্রিকায় জার্মানদের উপনিবেশিক শাসনের কথা।
নোয়াম চমস্কি – এমন কি হলোকাস্ট বা গনহত্যা প্রসঙ্গে বলে যেতে পারে, রোমা সম্প্রদায়ের প্রতি যা করা হয়েছে তা প্রায় একই রকমের ভয়াবহ নিপীড়ন যা ইহুদিদের প্রতি করা হয়েছে। কিন্তু রোমা সম্প্রদায়ের উপর করা নিপীড়নের কথা কেউ ভুলেও উচ্চারন করেন না। এমন কি রোমা সম্প্রদায়ের উপরে করা এই নিপীড়ন কে আজকাল কেউ আর স্বীকারও করেন না। যেমন ধরা যাক, ২০১০ সালে ফরাসী সরকার সিদ্ধান্ত নিলো যে তারা ফ্রান্সের সকল রোমা সম্প্রদায়ের মানুষদের ফ্রান্স থেকে বিতাড়িত করবে রোমানিয়াতে যেখানে তাদের জীবন এখনও অনেক নিপীড়িত ও অনিরাপদ। এটা কি আমরা ভাবতে পারি যে ফ্রান্স তাদের দেশ থেকে হলোকাস্ট থেকে বেঁচে যাওয়া ইহুদিদেরকেও একই ভাবে তাড়িয়ে দিচ্ছে এমন কোনও দেশে যেখানে ইহুদিদের জীবন এখনও নিরাপদ নয়? এটা প্রশ্নাতীত, ইহুদিদের বিরুদ্ধে এই রকমের সিদ্ধান্তে পুরো দেশে আগুন জলে উঠবে।
আন্দ্রে ভিচেক – আজকের আধুনিক চেক রিপাবলিক বড় দেয়াল নির্মিত হয়েছে রোমা সম্প্রদায় কে আলাদা করে রাখার জন্যে। রোমাদের জন্যে কয়েক দশক আগে থেকেই চেক রিপাবলিক বিভিন্ন শহরের মাঝ খানে আক্ষরিক অর্থেই বস্তি বা ঘেট্টো তৈরি করছে। ইতিহাসের সেই ১৯৩০ – ৪০ সালের দিকের শীতল সময়ের মতোই ভয়াবহ যখন চেকরা নাৎসিদের সাথে মিলে রোমাদের কে প্রায় ঘিরে ফেলেছিলো। অবশ্য ১৯৯০ সালের মধ্যে চেক রিপাবলিক পশ্চিমের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু জাতিতে পরিনত হয়েছিলো, ফলে পশ্চিমা মিডিয়ার কাছে তারা প্রায় ধরাছোয়ার বাইরের একটি শক্তি হয়ে উঠেছিলো। রোমা সম্প্রদায়ের প্রতি চেক রিপাবলিক যেভাবে নিপীড়ন চালিয়েছে তা জিম্বাবুয়েতে রবার্ট মুগাবের শেতাঙ্গ কৃষক নিধনের ভয়াবহতাকেও হার মানায়।
কিন্তু আমরা যদি আবারো ইউরোপীয় উপনিবেশবাদ প্রসঙ্গে ফিরে আসি, তাহলে বোঝা যাবে যে ইউরোপীয় উপনিবেশবাদ আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়ে যায়নি, অথবা পঞ্চাশ বা ষাটের দশকই ইউরোপীয় উপনিবেশবাদের শেষ সময় নয়। আমি যতই সারা দুনিয়ার প্রান্তিক ও বঞ্চিত মানুষের মাঝে ঘুরে বেড়িয়েছি, ততই বুঝতে পেরেছি উপনিবেশবাদ শেষ হওয়াতো দূরের কথা তা আরো কত শক্ত ভাবে গেঁড়ে বসেছে আরো উন্নত প্রচার ব্যবস্থার মাধ্যমে, আরো উন্নত প্রযুক্তি ও জ্ঞান বিজ্ঞানের উপকরনের ব্যবহারের মাধ্যমে। উপনিবেশবাদীরা আরো ভালো করে শিখেছেন কি করে স্থানীয় জনগন কে আরো দক্ষতার সাথে শাসন করা যায়। আগেরকার যুগে উপনিবেশবাদী শাসকদের চেনাটা খুব সহজ ছিলো, উপনিবেশবাদী সেনাবাহিনী কে চেনাটা খুব সহজ ছিলো। এখনও উপনিবেশবাদ চলেছে, কিন্তু উপনিবেশবাদী শাসকদের চেনাটা এখন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। শত্রুকে চেনা ও তার দিকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দেয়াটা এখন আর আগের মতো সহজ নয়।
২১ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:২৫
শূন্য সারমর্ম বলেছেন: অদৃশ্য আধিপত্য ভাবার ব্যাপার।
২| ২১ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:৫৪
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: উপনিবেশ পদ্ধতি নতুন রূপ নিয়েছে মূলত। পশ্চিমের ইতিহাস ঘাঁটলে অনেক অন্ধকার জিনিস বের হয়। সুন্দর পোস্ট করেছেন।
২১ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:২৬
শূন্য সারমর্ম বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
৩| ২১ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:১৬
রাজীব নুর বলেছেন: ড্রোন যুদ্ধ।
আমি এই আধুনিক পৃথিবীতে কোনো প্রকার যুদ্ধ চাই না।
২১ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:৪১
শূন্য সারমর্ম বলেছেন: সহমত।
৪| ২১ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:১২
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: https://sarowar-blog.com/ কি আপনি?
ধন্যবাদ।
২১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৪১
শূন্য সারমর্ম বলেছেন: জি না... ধন্যবাদ
৫| ১৪ ই মে, ২০২১ ভোর ৫:২১
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: পৃথিবীতে যতগুলো মানুষকে তাদের ইন্টেলেকচুয়াল সক্ষমতার জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমি সম্মান করি নোয়াম চমস্কি তাদের একজন। তার লিখা পড়ছি ২০০০ এর দিক থেকে। ভীষণভালো লাগে তার কথাগুলো, জানার মতো হাজারো উপাদান পাওয়া যায় তার লিখা থেকে। এখন অবশ্য নরম্যান ফিনকেলস্টেইন এর লিখা বেশ পড়া হয়।
০৫ ই জুন, ২০২১ সকাল ৯:৫৬
শূন্য সারমর্ম বলেছেন: চমস্কিকে আমারও ভালো লাগে।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৩:১৬
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: ইউরোপীয় উপনিবেশবাদ আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়ে যায়নি,
..................................................................................................................
এখন অস্ত্র, মেধা আর যুদ্ধ বাধাঁয়ে অদৃশ্য ভাবে আধিপত্য বিস্তার করে ।