নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্যদের সেভাবেই দেখি, নিজেকে যেভাবে দেখতে চাই। যারা জীবনকে উপভোগ করতে চান, আমি তাঁদের একজন। সহজ-সরল চিন্তা-ভাবনা করার চেষ্টা করি। আর, খুব ভালো আইডিয়া দিতে পারি।

সত্যপথিক শাইয়্যান

আমি লেখালিখি করি, মনের মাধুরী মিশিয়ে

সত্যপথিক শাইয়্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হুয়ে মুলান: প্রাচীন চীনের এক নারী যোদ্ধার কাহিনী

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৪১



হুয়ে মুলান প্রাচীন চীনের কিংবদন্তী’র নারীদের মাঝে অন্যতম। তাঁর বীরত্বের কাহিনী সর্বপ্রথমে প্রাচীন পুঁথিগুলোতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিলো। এরপরে, ‘মুলানের চারণগীতি’-তে আবারো তা বর্ণিত হয় এবং শেষে ওয়াল্ট ডিজনী’র ‘মুলান’ ছায়াছবির মাধ্যমে সারা পৃথিবী’র মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পায়। এখন, তাঁর কাহিনী চীনের স্কুলগুলোতেও পড়ানো হচ্ছে।

চীনা ভাষায় ‘হুয়ে’ কথাটির অর্থ ‘ফুল’ এবং ‘মুলান’ কথার অর্থ ‘ম্যাগনোলিয়া’। প্রাচীন কাল থেকেই ম্যাগনোলিয়া ফুল চীনের একটি প্রতীক। তাই, মুলানের পারিবারিক নাম কি ছিলো সে সম্পর্কে কোন তথ্য ঠিক করে পাওয়া যায় না। মিং রাজবংশের ইতিহাস বইতে মুলানের পারিবারিক নাম ‘ঝু’ আর কিং রাজবংশের ইতিহাস বইতে তা ‘ওয়েই’ হিসেবে পাওয়া যায়। এখন শুধু এইটুকুই নিশ্চিত ভাবে জানা যায় যে, তার কাহিনীগুলো চীনের ৪র্থ অথবা ৫ম খ্রিস্টাব্দের ইতিহাসের সাথে সংযুক্ত।



চারণগীতি’র উৎস

মুলানের কাহিনী’র মূল উৎস উত্তরের ওয়েই রাজবংশের (৩৮৬ – ৫৫৭ খ্রিষ্টাব্দ) সময়কার একটি লোকসঙ্গীত থেকে। ‘মুলানের চারণগীতি’-এর সর্বপ্রথম লিখিত রূপ ষষ্ঠ শতাব্দীর দিকে প্রকাশিত হয়। যদিও, এই লিখিত রূপের আসল লিপিটি এখন আর পাওয়া যায় না। তবে এগারো বা বারো শতকের দিকে গুয়ো মাওকিয়ান নামের এক লেখক তার ‘মিউজিক ব্যুরো কালেকশন’-এ ‘মুলানের চারণগীতি’র পংক্তিগুলো ধরে রেখেছেন।

এরপরে যেখানে মুলানের কাহিনী পাওয়া যায় তা মিং রাজবংশের সময়কার। ১৫৯৩ সালে, নাট্যকার জু ওয়েই এই কিংবদন্তীর নারীকে নিয়ে ‘নারী মুলান’ অথবা ‘বীরাঙ্গনা মুলান তার বাবার জায়গায় যুদ্ধ করতে গেলো’ নামের একটি নাটক মঞ্চস্থ করেন। চারণগীতি’র সংস্করণগুলোর সর্বশেষটি ১৭শো শতকে চু রেনহুয়ো’র লেখা ‘সুই-টেং প্রেমকাহিনী’ নামের একটি ঐতিহাসিক উপন্যাসে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এভাবেই, নারী যোদ্ধা হুয়ে মুলানের লোকগাঁথা মানুষের মনে জীবিত রয়েছে।


মুলানের বীরত্বগাঁথাঃ

মুলানের কাহিনী যেভাবে বর্ণিত হয় সেইটা অনেকটা এই রকম- মুলান তার পূর্বপুরুষদের তরবারী নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে উদ্দেশ্যে বাড়ি ত্যাগ করে। সে দশ বা বারো বছর ধরে যুদ্ধ করা শেষে অবসর নিয়ে নিজের শহরে ফিরে আসে। যুদ্ধের সময় মুলান অনেক বড় পদে আসীন হয়েও কোন পুরস্কার নিতে অস্বীকার করেছিলো। যুদ্ধের সময়, তার সাথে চীনা এক অফিসারের পরিচয় হয়। পরবর্তীতে জিন ইয়ং নামের এই অফিসারের প্রেমে পড়ে মুলান।



কিংবদন্তী বলে, যুদ্ধক্ষেত্রে ১০ বছর থাকার পর মুলান জেনারেল পদে উন্নীত হয়। জিন ইয়ং যখন জানতে পারে যে মুলান একজন নারী, তখন সে তার প্রতি আরো অনুরক্ত হয়ে পড়ে। অনেক কাহিনীতে আছে, মুলান আর জিন ইয়ং বিয়ে করার স্বপ্ন দেখে। এই অবসরে, মুলান যে একজন নারী তা অন্যান্য সৈন্যরাও জেনে ফেলেছিলো।

একদিন, খুবই কঠিন এক যুদ্ধের আগে, মুলান যুদ্ধক্ষেত্রে নারীদের পোশাকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সৈন্যরা একজন নারীকে যুদ্ধক্ষেত্রে দেখে তাকে শ্রদ্ধা আর প্রশংসা করতে থাকে। তারা মুলানের সাহসিকতা, অনুগ্রহ আর বিজ্ঞতায় আবিষ্ট হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে দ্বিগুণ উদ্দমে ঝাপিয়ে পড়ে। আর এভাবেই সে আরেকটি যুদ্ধ জয়ে তার সেনাবাহিনীকে অনুপ্রাণিত করেছিলো।

এরকম আরেকটি বীরত্বপূর্ণ বিজয়ের পর, সম্রাট মুলানকে পুরস্কৃত করতে চাইলেন। তিনি খুবই আশ্চর্য হয়েছিলেন এটা জানতে পেরে যে, তার সকল সৈন্যদের মাঝে একজন নারীই সবচেয়ে সাহসী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করে। কিন্তু, মুলান কি করলো জানেন? সে সকল পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়ে সম্রাটের কাছে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার জন্যে একটি ঘোড়া চাইলো।

অনেক কাহিনীতে আছে, সে যখন তার বাড়িতে ফিরে আসে, সে দেখতে পায় তার বাবা মারা গিয়েছেন। এই ঘটনায় সে এতোটাই ব্যথিত হয় যে, সে নিজেকে একজন বীরাঙ্গনা হিসেবে আর চিন্তা করতে পারলো না। তার কাছে মনে হচ্ছিলো সে যেন পৃথিবী’র সকল ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছে। লোকগাঁথায় এমনও বলা হয় যে, যুদ্ধক্ষেত্রে নিজের অভিজ্ঞতা এরপর তাকে তাড়িয়ে ফেরে। একাকীত্বের অনুভুতি আর তার সম্পর্কে স্থানীয় মানুষের ভ্রান্ত ধারণা তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে।



আসলেই কি মুলান নামের কেউ ছিলেন?

ঐতিহ্যগতভাবে, মুলানের জীবনকে উত্তরের ওয়েই রাজবংশের আমলের সাথে যুক্ত করা হয়। কিন্তু, অনেক কাহিনীর খুঁটিনাটি বর্ণনা ৬২০ খ্রিস্টাব্দের টেং রাজবংশের সময় লেখা হয়েছিলো। ৬২১ সালে, টেং রাজবংশ প্রথম সম্রাট যখন ওয়েং শিচং আর ডউ জিয়ান্দের সাথে যুদ্ধে জয়লাভ করে, তখন একজন নারী যোদ্ধার কাহিনী সবার নজরে আসে। কিংবদন্তীর এই দুই নারী চরিত্র আসলে একই।

৪র্থ এবং ৫ম শতাব্দীর দিকে, একদল যাযাবর নৃগোষ্ঠী চীন আক্রমন করে। সেই ‘হিংস্র’ গোত্রের আক্রমণে চীনের কেন্দ্রিয় শাসকরা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। যুদ্ধটা এতোটাই ভয়ংকর ছিলো যে তা তিনশো বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে চীনের বিভিন্ন অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সে জন্যে এমন একজন যোদ্ধার কাহিনী দরকার ছিলো যা তাদের অনুপ্রাণিত করবে। মুলানের কাহিনী আক্ষরিক অর্থে তা-ই করেছে।


ছবিঃ জিনজিয়াং-এ মুলানের প্রতিকৃতি

আধুনিক যুগে মুলান

হুয়ে মুলানের কিংবদন্তী তখনই জীবিত হয়ে উঠে যখন চীনের আশা এবং অনুপ্রেরণার দরকার হয়। শিল্প এবং সাহিত্যে মুলান একটি অনবদ্য নাম। তার নামে ১০টিরও বেশি ছায়াছবি ও মঞ্চ নাটক বের হয়েছে। আধুনিক উপন্যাস আর গবেষণায় মুলান এখনো খুবই জনপ্রিয়। তার মূর্তি পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় স্থাপন করা রয়েছে। এমনকি তার নামে শুক্রগ্রহের একটি জ্বালামুখের নামকরণ করা হয়েছে। চীনের মানুষের কাছে আজও হুয়ে মুলান সাহসিকতা আর সম্মানের অপর নাম।




তথ্যসূত্রঃ

১) S. Kwa, W.L. Idema, Mulan: Five Versions of a Classic Chinese Legend with Related Texts, 2010
২) M. H. Kingston, The Woman Warrior, 1975
৩) W. Jiang, Ch. Jiang,The Legend of Mu Lan: A Heroine of Ancient China,1992
৪) Natalia Klimczak, The Dramatic True Story Behind Disney's Mulan, ২০২০

====
২য় প্রকাশ
=======



মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১২

চাঁদগাজী বলেছেন:



প্রাচীন চীনের সাহিত্যে, রাজাদের কাহিনীর সাথে সাধারণ মানুষের কথাও আছে।

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৮

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:


জী, ঠিক বলেছেন।

ছোটবেলায় পড়েছি কিভাবে জাপানীদের আগ্রাসন ঠেকাতে চীনের সাধারণ মানুষ লড়ে গিয়েছেন।

শুভেচ্ছা নিরন্তর।

২| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: হুয়ে মুলান সাহসী নারী। এই নারীকে নিয়ে কি কোনো সিনেমা হয়েছে?

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৫৫

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:

জী, হয়েছে। ডিজনি বানিয়েছে।

শুভেচ্ছা নিরন্তর।

৩| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৪২

বিটপি বলেছেন: পিতার মৃত্যুর খবরে যে নারী আত্মহত্যা করতে পারে, তাকে আবার মোটেও বীর বলে মনে হয়না।

৪| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:০৬

সাসুম বলেছেন: মুলান যতটা না হিস্টোরিকাল স্টোরি তারচেয়ে বেশি লিজেন্ডারি মিথ।

চীনের নর্দান এলাকার ওয়েই ডাইনেস্টি মূলত একটা প্রাচীন নোমাডিক ও পশুপালক সমাজ থেকে আসা যারা ছিল মঙ্গোলিয়ার অধিবাসী এবং তারা এক যায়গায় বেশি দিন থাকত না, এই কারনে তারা যেখানেই গিয়েছে তাদের মুলান লিজেন্ড ও সেখানে ছড়িয়ে পড়েছে হাজার হাজার বছর ধরে।

এই ওয়েই ডাইনেস্টি Tuoba নামক সিয়ানবি প্রভিন্সের একটা লোকাল গ্রুপ থেকে উদ্ভুত হয়েছে যারা টার্ক মঙ্গোল ভাষায় কথা বলত ( এটা এখনো উজবেক ও মংগোলিয়ার কিছু আদিবাসীরা বলে )

তো এই ভাষায় তারা আসলে মুলান বলেনা বরং বলে হুয়াংডি নামের একটা রাজা বা নেতার চাইনিজ নাম। এটাকে অনেকে “Khan,” “Kehan” অথবা “Kaghan নামে ও চিনত , যেখান থেকে চেংগিস খান তার নাম পেয়েছে ( সেইম মঙ্গোল অরিজিন )

এখানে আরো একটা বিষয় দেখার হলো- এই নামের রুট খুজতে গিয়ে দেখা যায় এটা একটা ম্যাস্কুলিন নাম যেটা আসলে পুরুষ দের নাম। মুলান কে চায়নিজে ট্রান্সেলশান করলে আসে ম্যাগ্নোলিয়া যেটা সেই আদি তুর্ক মঙ্গোল ভাষায় অর্থ দাঁড়ায় নেতা বা ইম্পরট্যান্ট পারসন। এটাকে হিসাবে ধরে চায়নিজ গবেষক রা দাবি করে, মুলান আসলে মেয়ে ছিল না বরং একটা পুরুষ ছিল নাহলে ১২ বছর মিলিটারি তে মেয়ে হিসেবে লিড করা ইম্পসিবল ছিল।

মুলানের কাহিনী ছিল মূলত যখন চায়নিজ দের একজন লিজেন্ড দরকার ছিল সেটাকে তারা খুজে বের করেছে সাহসী একজন হিসাবে যেটা তাদের কে সাহস জোগাবে।


বিঃদ্রঃ যদিও ওয়েই ডাইনেস্টি থেকে চালু হয়েছে এই গল্প তবে গত কয়েকশ বছর ধরে এই মুলান কে নিজেদের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে হান ডাইনেস্টি। হান কালচারে এটা একটা লিজেন্ডারি মিথ এবং হান লোকেরা মুলান মিথ কে অনেক সম্মান জানায়। আমার হান কলিগ রা প্রতি বছর মন্দিরে গেলে মুলান এর কাছে শক্তি ও সাহস প্রার্থনা করে বলে জানিয়েছে আমাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.