নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্যদের সেভাবেই দেখি, নিজেকে যেভাবে দেখতে চাই। যারা জীবনকে উপভোগ করতে চান, আমি তাঁদের একজন। সহজ-সরল চিন্তা-ভাবনা করার চেষ্টা করি। আর, খুব ভালো আইডিয়া দিতে পারি।

সত্যপথিক শাইয়্যান

আমি লেখালিখি করি, মনের মাধুরী মিশিয়ে

সত্যপথিক শাইয়্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিমু যখন সিলেটে

১৩ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:৫৫



নিজের মেসে ঘুমিয়ে ছিলো হিমু। ঘরে নড়া-চড়ার আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। বিছানার কাছে তার ইজি চেয়ারটায় কে যেন বসে আছে। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে মটকা মেরে পড়ে থেকে বুঝার চেষ্টা করে কে হতে পারে।

পুরো ঘর জুড়ে মিষ্টি একটা সুগন্ধ ছেয়ে আছে। অপরিচিত একটি মেয়ে তার মেসে কি করছে! একটু ভাবার চেষ্টা করে হিমু। মেয়েটি কতক্ষণ হলো এসেছে? কি চায় তার কাছে? মেয়েটি কি পড়ে আছে? শাড়ি না সেলোয়ার কামিজ? নাকি প্যান্ট-শার্ট? অনেকগুলো ভাবনা একসাথে খেলে যায় তার মাথায়।
.
আচ্ছা, বিছানার পাশের চেয়ারে যে মেয়েটি বসে আছে, তাকে মেয়ে ভাবছে কেন সে! মহিলাও তো হতে পারে।

'হিমু সাহেব, আপনি কতক্ষণ এভাবে চোখ বন্ধ করে বিছানায় পড়ে থাকবেন?' মেয়েটি হঠাৎ কথা বলে উঠলো।
.
চমকে উঠে হিমু। তার যে ঘুম ভেঙ্গেছে তা বুঝলো কি করে মেয়েটি! চমকে উঠলেও মনে মনে একটু নিশ্চিন্ত হয় যে তার আন্দাজ ভুল নয়। একটা মেয়েই তার সাথে কথা বলছে, কোন মহিলা নয়। এমন চীকন আর মোলায়েম সুর কোন মহিলার হওয়ার কথা নয়।
.
ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকায় হিমু। এবারে শুধু চমকে যাওয়া নয়, বলা যায় বিষম খেলো। চেয়ারে বসে আছে কাঁচা-পাকা-চুলের এক মধ্যবয়সী মহিলা!
.
'চট-জলদি উঠে চোখে-মুখে একটু পানি দিয়ে নিন। অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি আপনার জন্যে। আপনাকে নিয়ে বাইরে কোথাও ব্রেকফাস্ট করবো।'
.
হিমু একটা হাই তুললো। সকাল বেলা মেজাজ খারাপ করতে চাচ্ছে না। তার এই মহিলার সাথে বেরুনোর কোন ইচ্ছে নেই। কিভাবে এর হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যায় ভাবতে ভাবতে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায় সে।
.
হিমু যে ঘরে থাকে, তার ডান দিকে টয়লেত, আর বাম দিক দিয়ে বেরুনোর রাস্তা। তাই, যদি পালাতে হয় মহিলার সামনে দিয়েই যেতে হবে।
.
আরেকটা রাস্তা অবশ্য আছে। বাথরুমের পাশ দিয়ে সিড়ি। ওটা দিয়ে ছাদে গিয়ে পাশের বাড়িতে চলে যেতে পারে। তার মেস থেকে পাশের বাড়ির ছাদ ৪-৫ ফুট দূরে হবে। একটা লং জাম্প দিলেই ওপাশে চলে যাওয়া যাবে। একবার যেতে পারলে নিচে নেমে মহিলার চোখকে ফাঁকি দেওয়া কোন ব্যাপারই নয়।
.
যেই ভাবা সেই কাজ। সে বাথরুমের কাছে এসে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠলো। বাইরে তখন বেশ রোদ করেছে। ছাদে গিয়ে এক লাফে পার হয়ে গেলো মাঝের ফাঁকা জায়গা।
.
এরপর পাশের বাড়ির সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে যেই না একতালার দরজা দিয়ে বাইরে বেড়িয়েছে, সামনে তাকিয়ে দেখে সেই মাঝবয়সী মহিলাটি দাঁড়িয়ে আছে। তার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।
.
'আমি বাঘিনী না ভল্লুক যে আমার কাছ থেকে পালাচ্ছেন! আমি তো রূপাও না যে আমার কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। কি ব্যাপার বলুন তো?'
.
মহিলাটি আবারো অল্পবয়সী মেয়ের গলায় তার সাথে কথা বলে উঠলেন। কন্ঠে কৌতুকের আভাস। হিমু কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। তারপর বললো- 'আপনার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। তিনি আর কক্ষনো আপনার কাছে ফিরে আসবেন না।'

এই বলে সে রহমত মিয়াঁর হোটেলের দিকে হাঁটা দিলো। ওখানেই আজ সকালের খাবার খাবে। সে জানে মহিলাটি তার কথার ধাক্কা সামলাতে সময় নিবে। এই ফাঁকে হোটেলে ঢুকে হাত-মুখ ধুয়ে নিতে পারবে সে।

পিছনে আবারো সেই রিনিঝিনি কন্ঠের হাঁসি শুনতে পেলো হিমু।

'আপনার সম্পর্কে যে রকম শুনেছিলাম, আপনার মাঝে সে রকম আধ্যাত্মিক কিছু দেখতে পাচ্ছি না। আমার স্বামী গাড়ির ভিতরে ড্রাইভিং সিটে বসে আছেন। ঐ যে দেখুন, মেরুন রঙের মার্সিডিজে উৎকণ্ঠিত হয়ে এদিকেই তিনি চেয়ে আছেন।'

সত্যিই তাই। সৌম্য দর্শন এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক গাড়িটায় বসে আছেন। মেজাজটা ঠিক রাখতে অনেক কষ্ট করতে হলো হিমুকে। সকালবেলাতে রাগ করতে নেই। বাবা'র নির্দেশ। মহাপুরুষরা ঘুম থেকে উঠে কখনোই মেজাজ খারাপ করেন না।

একদিনে তিন তিনবার তার আন্দাজ ভুল প্রমাণিত হলো। এমনটা তো কখনো আগে হয়নি। সে কি বুড়ো হয়ে যাচ্ছে? কিন্তু, মহাপুরুষদের যত বয়স হয়, তাঁদের মস্তিস্কের ক্ষমতা তো আরো তীক্ষ্ণ হতে থাকে। তার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হচ্ছে কি?

নাকি সে সিলেটে চলে এসেছে বলেই এই অবস্থা! এক মহাপুরুষ আরেক মহাপুরুষের এলাকায় গেলে আধ্যাত্মিক ক্ষমতা অনেক সময় কাজ করে না। সিলেট সাধু পূরুষদের চারণভূমি। তাঁদের শরীরের ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক শক্তি মনে হয় হিমু'র ক্ষমতাকে আটকে দিয়েছে!

হবে হয়তো! সব ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে হোটেলের দরজা দিয়ে ঢুকে পড়ে। মুখে পানির ঝাপটা দিতে হবে।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: আজ হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন।

লেখা ভালো হয়েছে।

১৩ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:২১

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:


হিমু আমার প্রিয় চরিত্র।

প্রিয় লেখকের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

ধন্যবাদ নিরন্তর।

২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:২০

চাঁদগাজী বলেছেন:


হিমু শেষে করিমগন্জ হয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাবে না'তো?


হুমায়ুন আহমেদ বাংলার মানুষের কাছে আরো বড় হবেন দিনে দিনে।

১৩ ই নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:২৭

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:


বাংলাদেশ থেকে পালালে কি সে ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক শক্তির প্রভাব থেকে মুক্তি পাবে?

সে মহাপুরুষ হতে চায়। সেজন্যে যেখানে যাওয়া প্রয়োজন, সেখানেই তাকে যেতে হবে যে!!!

আশা করি ভালো আছেন।

শুভেচ্ছা নিরন্তর।

৩| ১৩ ই নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৮

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: হিমু চরিত্র টা অতটা ভালো লাগে না। মিসির আলি ভালো লাগে। শুভ্রকেও ভালো লাগে।

১৩ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:০০

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:

হিমু অসাধারণ। মিসির আলি অনুপম। শুভ্র বেশ।

ধন্যবাদ।

৪| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ২:০১

মেহেদি_হাসান. বলেছেন: প্রিয় চরিত্রের কাহিনি অনেকদিন বাদে পড়লাম ভালো লিখেছেন। আরো লিখুন

১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:১৯

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:


পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।

লিখতে চেষ্টা করবো।

শুভেচ্ছা নিরন্তর।

৫| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন:
হিমু আমার প্রিয় চরিত্র। প্রিয় লেখকের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
ধন্যবাদ নিরন্তর।

হুমায়ূন আহমেদের সব চরিত্রই আমার ভালো লাগে। হিমু, মিসির আলি, শুভ্র।
''শুভ্র গেছে বনে'' বইটা পড়েছেন?

১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:২০

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:



আমার ঠিক মনে নেই। আবারও এসে মন্তব্য করার জন্যে ধন্যবাদ নিরন্তর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.