নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি লেখালিখি করি, মনের মাধুরী মিশিয়ে
স্বস্তিকা এমন একটি প্রতীক যা দেখে মানুষ এখন ভয় পায়। এই ভয় পাওয়ার পিছনে কারণও আছে। বিংশ শতাব্দীতে এই চিহ্নটি এমন এক ঘৃণিত মানুষ ব্যবহার করেছিলো যার হাতে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। শুধু তা-ই নয়, এই মানুষটি'র কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এডলফ হিটলারের এসব কাজের কারণেই আজ স্বস্তিকা প্রতীকটি মানুষের মনে ভয় জাগায়। অথচ, হিটলারের আগেও এই চিহ্নটি হাজার হাজার বছর ধরে বিভিন্ন জাতিসত্বা একটি শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলো।
যেভাবে স্বস্তিকা প্রতীকের আধ্যাত্মিক চর্চার শুরু হলো
ভারত ও অন্যান্য দেশের হিন্দু এবং বৌদ্ধরা হাজার হাজার বছর ধরে স্বস্তিকা ব্যবহার করে আসছে। এমনকি আজও এই প্রতীকটি মন্দির, বাস, ট্যাক্সি এবং বইয়ের মলাটে দেখা যায়। এটি প্রাচীন গ্রীস আর রোমের অধিবাসীরাও ব্যবহার করতো। ধ্বংস হয়ে যাওয়া প্রাচীন শহর ট্রয়ের ধ্বংসাবশেষের মধ্যেও এই চিহ্নটি ছিলো। প্রাচীন ড্রুইড আর সেল্টস জাতিও এই স্বস্তিকা চিহ্ন ব্যবহার করতো বলে তাদের ব্যবহার্য দ্রব্যগুলোতে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। স্ক্যাণ্ডিনেভিয়ার ফিনল্যাণ্ডের অধিবাসী নরডিক গোত্রও এটি ব্যবহার করতো। শুধু
তা-ই নয়, প্রথম দিকের খ্রিস্টানরাদের মাঝেও স্বস্তিকা চিহ্ন ব্যবহারের প্রমাণ আছে। মধ্যযুগের ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সামরিক দল টিউটনিক নাইটরাও স্বস্তিকা প্রতীকটি ব্যবহার করতো। কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এই চিহটি এতো গুরুত্বপূর্ণ আর কেনইবা এডলফ হিটলার তা ব্যবহার করলেন?
যে সময়ে স্বস্তিকাকে ভালো চোখে দেখা হতো
স্বস্তিকা একটি সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ 'এইটি', 'ভালো হওয়া', 'ভালো অস্তিত্ব', এবং 'সৌভাগ্য'। যদিও বিভিন্ন দেশে এই প্রতীকটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন- চীনে এটি 'ওয়ান', জাপানে 'মাঞ্জি', ইংল্যান্ডে 'ফিলফেট', জার্মানীতে 'হেকেংক্রোইয়েয', গ্রীসে 'টেট্রাস্কেলিয়ন' বা 'ঠেট্রাগামাডিওন'।
১৯৭৯ সালে, সংস্কৃত পন্ডিত পি,আর, সরকার স্বস্তিকার গূর অর্থ 'স্থায়ী বিজয়' বলে মত ব্যক্ত করেন। তিনি এও বলেছিলেন যে, প্রত্যেকটি প্রতীকের মতোই স্বস্তিকারও ইতিবাচক এবং নেতিবাচক অর্থ রয়েছে। আর, তা নির্ভর করে কিভাবে তা আঁকা হয়। উপরের ছবিটির ডান দিকে স্বস্তিকা চিহ্নটি ভগবান বিশসূ ও সূর্যের প্রতীক। আর, বামেরটি কালী ও যাদু'র প্রতীক।
যে কোন প্রতীকের এই দ্বৈত অর্থ প্রাচীন কালেও ছিলো। যেমন- প্যান্টাগ্রাম প্রতীকটি যদি নিচের দিকে হয়, তাহলে তা নেতিবাচক হিসেবে ধরা হতো। আর, উপরের দিকে হলে ইতিবাচক অর্থ বোঝাতো।
স্বস্তিকা'র ১২০০০ বছরের ইতিহাস
ইউক্রেনের মেজিনে আইভরি দিয়ে বানানো ১২০০০ বছরের পুরোনো একটি ক্ষুদ্র প্রস্তরমূর্তি পাওয়া গিয়েছে যাতে স্বস্তিকা চিহ্নটি খোদাই করা। আজ থেকে ৮০০০ বছর আগে নবপ্রস্তরযুগের দক্ষিণ ইউরোপ, আজ যা সার্বিয়া, ক্রোশিয়া, বসনিয়া ও হারজগভিনা নামে পরিচিত, সেই অঞ্চলে ভিংকা নামে একটি সংস্কৃতি ছিলো যেখানে স্বস্তিকা ব্যবহৃত হতো।
বৌদ্ধ ধর্মে স্বস্তিকা সৌভাগ্য, সমৃদ্ধি, প্রাচুর্য এবং অনন্তকালের প্রতীক। এই চিহ্নটি সরাসরি বুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত। বুদ্ধ মূর্তির বুকে এবং পায়ের পাতায় এই প্রতীকটি দেখা যায়। বৌদ্ধরা মনে করে, এই চিহ্নটি হচ্ছে 'বুদ্ধের মন'।
রোমের অবস্থিত খৃষ্টান ক্যাটাকম্বসে স্বস্তিকা চিহ্নটি 'যোটিকো যোটিকো' শব্দের পাশে অংকিত আছে। এই শব্দ দুটোর মানে- 'প্রাণের প্রাণ'। স্বস্তিকা প্রতীকটি ইথিওপিয়ার রহস্যময় 'লেলিবেলা চার্চ'-সহ পৃথিবী'র বিভিন্ন চার্চে দেখা যায়।
ফিনল্যাণ্ডের অধিবাসী নরডিক গোত্রে স্বস্তিকাকে 'ওডিন' নামে পরিচিত ছিলো যার অর্থ 'ঘুরন্ত চাকতি হয়ে শূণ্য স্থা্নে গমন' বা 'স্বস্তিকা সকল বিশ্বের মাধ্যমে নিচে দেখছে'। উত্তর আমেরিকার নাভাজো রেড ইন্ডিয়ানরাও স্বস্তিকা চিহ্ন ব্যবহার করতো। প্রাচীন গ্রীসে, পন্ডিত পিথাগোরাস স্বস্তিকাকে 'টেট্স্তিকাকেনামে অভিহিত করে এর অর্থ করেন - 'যে প্রতীক আকাশ এবং মাটিকে এক করে'। তার স্বস্তিকার ডান বাহু আকাশকে নির্দেশ করে আর বাম বাহু মাটিকে।
ফিনিশীয়রা স্বস্তিকার অর্থ 'সূর্য' বলে মনে করতো। তাদের পূজারিণীরা এই প্রতীককে পবিত্র হিসেবে জানতো।
তাই, প্রশ্ন আসতেই পারে, পৃথিবী'র এতোগুলো জাতি-ধর্মে কেন স্বস্তিকা প্রতীকের প্রায় একই অর্থ প্রচলন ছিলো? আর, একজন মানুষ বা একটি দলের অকাজের কারণে কেন এতোগুলো মানুষের বিশ্বাসকে অবহেলা বা উপেক্ষা করা হচ্ছে!
তথ্যসূত্রঃ
১) Jennifer Rosenberg - Learn the History of the Swastika
২) Bruce M. Sullivan (2001). The A to Z of Hinduism. Scarecrow Press. p. 216. ISBN 978-1-4616-7189-3.
৩) Adrian Snodgrass (1992). The Symbolism of the Stupa. Motilal Banarsidass. pp. 82–83. ISBN 978-81-208-0781-5.
৪) Cort, John E. (2001). Jains in the World: Religious Values and Ideology in India. Oxford University Press. p. 17. ISBN 978-0195132342 – via Google Books.
৫) Beer, Robert (2003). The Handbook of Tibetan Buddhist Symbols. Serindia Publications, Inc. ISBN 978-1932476033 – via Google Books.
৬) "History of the Swastika". Holocaust Encyclopedia. United States Holocaust Memorial Museum. 2009.
২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৪৭
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
মন্তব্যের জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
শুভেচ্ছা নিরন্তর।
২| ২২ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:০৭
স্থিতধী বলেছেন: স্বস্তিকাকে শিক্ষিতরা ও একাডেমিক রা মোটেও একজন বা একটি দলের অকাজের জন্য অবহেলা বা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেনা, ওটাকে মানব ইতিহাসের একটি চমকপ্রদ বিষয় হিসেবেই দেখে। কোন কিছু কে যদি মানবতা বিরোধী কোন কাজের অস্ত্র/ প্রতীক রূপে কোন অঞ্চলে ব্যাবহার করা হয় তবে সে অঞ্চলের মানুষরা বেশ কয়েক প্রজন্ম ধরে সেটাকে একটু ভয় বা ঘৃণার চোখে দেখবে তা স্বাভাবিক।হিটলারের গণহত্যার পর ইউরোপিয়ান বংশধরদের মাঝে সেটাই হয় স্বস্তিকাকে ঘিরে। এখন যেমন কিছুটা চলছে ইসলামকে ঘিরে ইসলামোফোবিয়া । কিন্তু ভারতে আবার ঠিক ই স্বস্তিকা অনেক মূল্যবান প্রতীক।
ইউক্রেন ও তাঁর আশপাশের বেশীরভাগ দেশ স্লাভিক ভাষার অন্তর্ভুক্ত। আর এই স্লাভিক ভাষার সাথে ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃত ভাষার প্রচণ্ডরকম মিল রয়েছে। ১২০০০ বছর আগের ইউক্রেনের ঐ স্বস্তিকা প্রতীক আর স্লাভিক ভাষার সাথে সংস্কৃতর গভীর অন্তমিল এর আরেকটি প্রমান যে, ভারতে আর্য রা বহিরাগত ছিলো , ভারতের আদি অধিবাসী নয়। যদিও ভারতের বহু ব্রাহ্মন্যবাদীরা সে কথা আজও মানতে নারাজ।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:২৪
রাজীব নুর বলেছেন: 'মঙ্গলের প্রতীক' ।
স্বস্তিকা চিহ্ন মা কালী ও জাদুর প্রতীক। ভারতীয় সংস্কৃতিতে সুখ শান্তি আর সম্বৃদ্ধির প্রতীক এই চিহ্ন। সংস্কৃতি শব্দ 'স্বস্তিকা' শব্দটির আভিধানিক অর্থ শুভ লক্ষণ' অথবা সৌভাগ্য।
যে কোনো চিহ্ন বিশ্বাস করা কুংস্কার।