নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি লেখালিখি করি, মনের মাধুরী মিশিয়ে
চীনের ইনার কোর্টের নিষিদ্ধ নগরীটি ছিলো সম্রাটের ব্যক্তিগত এলাকা যেখানে অন্য কোন পুরুষকে খুব বেশি সময়ের জন্যে থাকতে দেওয়া হতো না। এমনকি, উচ্চ-পদস্থ প্রশাসন বা সামরিক কর্মকর্তা কিংবা সম্রাটের পুরুষ আত্মীয়দেরও সেখানে রাতে থাকার অনুমতি ছিলো না। সত্যি বলতে কি, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে খোজা করে দেওয়া পুরুষরাই শুধুমাত্র সেখানে থাকার অনুমতি পেতো। এরাই ছিলো 'চীনের খোজা'।
নিষিদ্ধ নগরীটি পনেরোশো শতকের দিকে মিং রাজবংশের সময়ে বানানো হলেও, চীনে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে খোজা করে দেওয়ার প্রচলনটি অনেক আরো অনেক আগের। প্রাচীন চীনে (সুই রাজবংশ থেকে) যে পাঁচটি শাস্তি দেওয়ার বিধান ছিলো, খোজা করে দেওয়া সেগুলোর একটি। সরকারী চাকরী পাওয়ার জন্যে সেসময় অনেকে নিজ থেকে খোজা হয়ে যেতো। হ্যান রাজবংশের সময়, খোজারাই রাজকীয় আদালতের দৈনন্দিন কাজ-কর্মগুলো করতো। খোজারা যেহেতু সম্রাটের সাথেই বেশির ভাগ সময় কাটাতো, সম্রাটের উপর তাদের প্রভাব ছিলো, সেই সাথে সমাজে ছিলো রাজনৈতিক প্রতিপত্তি। এই খোজারা সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম ছিলো না বলে শাসক সাম্রাজ্যের কাছে তারা কোনরূপ হুমকি হিসেবে দেখা দেয়নি। শক্তিশালী সম্রাটরা হাজার হাজার উপপত্নী রাখতেন। এই খোজাদের পক্ষে সেই কঙ্কুবাইনদের গর্ভবতী করা সম্ভব ছিলো না বলেও তাদেরকে নিজেদের জন্যে হুমকি হিসেবে রাজারা দেখতেন না।
এই খোজা্দের যদিও সাম্রাজ্যগুলোর জন্যে কোন হুমকি হিসেবে দেখা হতো না, কিন্তু, তারা কিন্তু একটি পুরো সাম্রাজ্যকে ধসিয়ে দিতে পারতো। তারা যেরুপ ক্ষমতা ভোগ করতো, তা তাদেরকে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে লোভী, নির্মম এবং ষড়যন্ত্রকারী ব্যক্তিতে পরিণত কতেছিলো।
সেজন্যেই, চীনের নাটক আর চলচ্চিত্রগুলোতে খোজাদেরকে মাঝে মাঝে খলনায়কদের উপস্থাপন করা হয়। চীনের সাম্রাজ্যগুলোতে অনেক খারাপ খোঁজার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। যেমন- কিং সাম্রাজ্যের পতনের পিছনে খোজা ঝাও গাও-এর হাত ছিলো বলে ধারণা করা হয়।
ছবিঃ নিষিদ্ধ নগরী
ঝাও গাও-এর কাহিনীঃ
ইতিহাস বইতে দেখা যায়, ঝাও গাও ছিলো ঝাও রাজ্যের শাসক পরিবারের সন্তান। এই ঝাও রাজ্যটি চীনের চারদিকে যখন যুদ্ধের দামামা বাজছিলো সেই সময়ের সাতটি রাজ্যের একটি। ঝাও গাওয়ের অভিভাবকরা একটি অপরাধ করেছিলো বলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে তাদের ছেলেদের খোজা করে দেওয়া হয়। ঐতিহ্যগতভাবে ধরা হয়, ঝাও গাওকেও একই শাস্তি বরণ করতে হয়েছিলো। ঝাও গাও আইনজ্ঞ কিন শি হুয়ানের সেবায় নিয়োজিত হয়। এরফলে, সে সম্রাটের সবচেয়ে কাছের একজন উজির হতে পেরেছিলো। কিন শি হুয়ানের মৃত্যুর পরে ঝাও গাও আর চ্যান্সেলর বা প্রধানমন্ত্রী- লি সি মিলে একটি ক্যু করে কিন শি হুয়ানের উত্তরাধিকারী ফুসু এবং তার দুই সমর্থক- মেং টিয়ান ও মেং ইয়ি-কে মেরে ফেলে। এরপরে, কিন শি হুয়ানের সবচেয়ে ছোট ছেলে হুহাই-কে তারা সম্রাট বানিয়ে নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। তিন বছর পরে, ঝাও গাও একটি বিদ্রোহের মাধ্যমে হুহাইকে ক্ষমতাচ্যুত করে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে। তারপর, ফুসু-এর ছেলে অথবা চাচা জিয়িং-কে ঝাও গাও সম্রাট বানায়।
বুদ্ধিমান জিয়িং যখন বুঝতে পারে ঝাও গাও তাকে ব্যবহার করছে, ক্ষমতার পালাবদলে ঝাও গাও তাকেও ছুঁড়ে ফেলে দিবে, তখন, জিয়িং ঝাও গাও-কে পাকড়াও করে হত্যা করে। অবশেষে, রাজবিদ্রোহ আর সফল হয়নি। জিয়িং হ্যান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা লিউ ব্যাং-এর কাছে আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। তাই, এটা বলা যায় যে, খোজা ঝাও গাও-ই কিং সাম্রাজ্যের পতনের কারণ ছিলো।
ছবিঃ কিং সাম্রাজ্যের খোজাগণ
খোজাদের মধ্যে ভালো লোকও ছিলোঃ
চীনা খোজাদের এতো দূর্নামের পরেও, চীনের ইতিহাসে অনেক ভালো খোজা'র খোঁজ পাওয়া যায়। তাদের মাঝে কয়েকজন আবার চীনের সংস্কৃতিতে অবদানও রেখেছেন। কাগজের আবিস্কার হয়েছিলো একজন খোজার হাত ধরেই। পূর্ব হ্যান সাম্রাজ্যের সময়ে কাই লুন কাগজ আবিস্কার করেন বলে কথিত আছে। শুধু তাই নয়, চীনের ইতিহাসে ঝেং হি নামের একজন খোজার নাম পাওয়া যায় যিনি মিং রাজবংশের সম্রাট ইয়ঙ্গল-এর আমলে দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়া, ভারত, আরব, পারস্য এবং পূর্ব আফ্রিকাতে বাণিজ্য জাহাজ পাঠিয়ে চীন এবং বাকি পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন। সেই সাথে, চীনা খোজারা চীনের আদালত সঙ্গীতেও অবদান রাখেন। মিং সাম্রাজ্যের সময়ে, খোজারাই প্রথম চীনে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের প্রচলন করে। মিং সম্রাট কিয়ানলং তার দরবারে একটি অরকেস্ট্রা দলের সূচনা করেন যারা পশ্চিমাদের অনুকরণে পোশাক-আশাক পড়তো।
ছবিঃ মিং সাম্রাজ্যের দরবারে খোজা
চীনের শেষ খোজাঃ
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে কিং সাম্রাজ্যের পতনের ফলে চীনে রাজকীয় সাম্রাজ্য-ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে, সেই সাথে খোজাদের ব্যবহারের প্রয়োজনও শেষ হয়ে যায়। ১৯২৪ সালে, শেষ ১৫০০ খোজাকে নিষিদ্ধ নগরী থেকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। শেষ রাজকীয় খোজা, শান ইয়াওটিং, ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে মারা যায়। এরফলে শেষ হয়ে যায় হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা এক প্রাচীন প্রচলন।
সূত্রঃ
Anderson, M. M., 1990. Hidden Power: The Palace Eunuchs of Imperial China. [Online]
Available at: Click This Link
Graham-Harrison, E., 2009. China's last eunuch spills sex secrets. [Online]
Available at: Click This Link
Hays, J., 2013. Eunuchs in China. [Online]
Available at: Click This Link
Peter, 2013. Top 10 notorious eunuchs in ancient China. [Online]
Available at: Click This Link
Wikipedia, 2014. Eunuch. [Online]
Available at: http://en.wikipedia.org/wiki/Eunuch
Wikipedia, 2014. Zhao Gao. [Online]
Available at: http://en.wikipedia.org/wiki/Zhao_Gao
www.beijingmadeeasy.com, 2014. Chinese Eunuchs. [Online]
Available at: Click This Link
www.china.org.cn, 2007. Top 10 eunuchs in ancient China. [Online]
Available at: Click This Link
১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:১৮
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন: বিষয়টা বেশ মজার, তাই না?
মন্তব্যে ধন্যবাদ নিরন্তর।
২| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: নিষিদ্ধ নগরীটি কি আজও আছে??
১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৩
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন: জী, আছে।
শুভেচ্ছা নিরন্তর।
৩| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:৪৩
শের শায়রী বলেছেন: পোষ্টে ভালো লাগা।
++++
১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৪
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন: এত্তোগুলো প্লাস!!! ওয়াও!
অনেক ধন্যবাদ।
৪| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ২:০৪
কনফুসিয়াস বলেছেন: অনেক ভাল লাগল। ধন্যবাদ।
৫| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ২:১৬
স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: রাজীব নুর বলেছেন: নিষিদ্ধ নগরীটি কি আজও আছে??
এখনো নিষিদ্ধ নগরী বা ফরবিডেন সিটিতে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেন | বেইজিং গেলে ফরবিডেন সিটি আর তিয়েনমেন স্কয়ার না দেখা আসবেন না |
৬| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ভোর ৫:২০
এপোলো বলেছেন: আইডিয়াটা ভাল ছিল। শারীরিক হুমকিবিহীন অন্দরমহলের সাথী! ভাল তো, ভাল না?
৭| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:০৭
নেওয়াজ আলি বলেছেন: একরাশ ভালোগালা
৮| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:২৩
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
অজানা কাহিনী জানা হলো।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:২২
চাঁদগাজী বলেছেন:
আজগুবি সব বিষয় নিয়ে পিএইচডি করছেন?