নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্যদের সেভাবেই দেখি, নিজেকে যেভাবে দেখতে চাই। যারা জীবনকে উপভোগ করতে চান, আমি তাঁদের একজন। সহজ-সরল চিন্তা-ভাবনা করার চেষ্টা করি। আর, খুব ভালো আইডিয়া দিতে পারি।

সত্যপথিক শাইয়্যান

আমি লেখালিখি করি, মনের মাধুরী মিশিয়ে

সত্যপথিক শাইয়্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের সাথে নীবির সম্পর্ক গড়তে হলে ভারতীয় উচ্চ বর্ণের হিন্দু-শাসিত সরকারকে ধর্মীয় গন্ডির বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে হবে

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৫



বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, বর্তমান ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এখনকার চেয়ে ভালো এর আগে কখনোই ছিলো না। ইতিহাস ঘাটলে কথাটির সত্যতা বেশ অনুধাবন করা যায়। ভারত ঐতিহাসিক ভাবে উচ্চ বর্ণের আর্য হিন্দুদের দ্বারা শাসিত। সেই ধারাবাহিকতায়, বর্তমান বিজেপি সরকারের শাসক-মহল উচ্চ বর্ণের হিন্দু পরিবার থেকে উঠে আসা।

অন্য দিকে, বাংলাদেশের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, অবিভক্ত বাংলা'র এই অংশে এক সময় অনার্যরা বাস করতো। প্রাচীন ভারত বিজয়ী আর্যরা অনেক চেষ্টা করেও প্রাচীন বঙ্গ দেশটি জয় করতে পারেনি প্রথমে। তাই তো, আর্য-হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থগুলোতে উঠে এসেছে এই অঞ্চলের মানুষদের স্বতন্ত্রতার কথা-

ক) বঙ্গ শব্দটির সবচেয়ে পুরোনো ব্যবহার দেখা যায় 'ঐতরেয় আরণ্যকে'। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ও মানবধর্মশাস্ত্রে পুণ্ড্র জাতি পুণ্ড্রবর্ধন বা বর্তমান বগুড়া-রংপুর-দিনাজপুর স্থানে বাস করতো।

খ) মনুসংহিতায় আছেঃ

অঙ্গবঙ্গকলিঙ্গেষু সৌরাষ্ট্রমগ্ধেষু চ।
তীর্থযাত্রাং বিনা গচ্ছন পুনঃ সংস্কারমর্হতি।


শ্লোকটির অর্থ করলে যা দাঁড়ায়- তীর্থ যাত্রা ছাড়া অন্য কোন কারণে অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, সৌরাষ্ট্র, মগধ প্রভৃতি রাষ্ট্রে গেলে (তাঁকে) অবশ্যই সংস্কার (প্রায়শ্চিত্তের মাধ্যমে নিজেকে সুদ্ধ) করতে হবে (নতুবা সমাজচ্যুত হবে)।

গ) শতপথব্রম্মণে আছে যে, অগ্নি সরস্বতী করতোয়া নদী'র তীর পর্যন্ত এলেও মগধ বা বঙ্গদেশে আসেননি।

এভাবে, ধর্মমতের দিক থেকেই আর্য-শাসিত ভারত থেকে আমাদের বঙ্গ বা বাংলাদেশকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। হয়েছে অন্য চোখে দেখা। যদিও, টলেমী লিখেছেন, ''গঙ্গা মোহনার সব অঞ্চল জুড়েই গঙ্গারিড়ী (জাতি) বাস করে।'' যুদ্ধে, ব্যবসায় কি সামগ্রিক সমৃদ্ধিতে- এই এলাকার মানুষেরা যে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের চেয়ে এগিয়ে ছিলো তা সম-সাময়িক অনেক গ্রীক ঐতিহাসিক তাঁদের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। এসব সাক্ষ্য থেকে এইটি প্রমাণিত হয় যে, খ্রিস্টিয় তৃতীয় শতকেও বাংলাদেশের স্থানীয় অধিবাসীরা ছিলো স্বাধীন, সভ্য এবং উন্নত এক জাতি।

তা-ই, প্রশ্ন জাগতেই পারে, এতো সমৃদ্ধ একটি জাতির ইতিহাস পৃথিবীর বুক থেকে কিভাবে লুপ্ত হয়ে গেলো! অথচ, এরো বহু আগের আর্য ইতিহাস এখনো রয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ ভারতের আদিবাসীদেরও কিছু ইতিহাস পাওয়া গিয়েছে। শুধু সেই সময়কার বাঙালী জাতি ও তাঁদের রাষ্ট্রের কোন চিহ্ন এ যাবত আবিষ্কৃত হয়নি! কাজেই, এ সন্দেহ অমূলক নয় যে, আর্য রাজশক্তি গুপ্ত শাসকগণ ও শশাংকের সময়ে ব্রাহ্মণদের আগ্রাসনের সময় সেই ইতিহাস মুছে ফেলা হয়েছে।

আর্যরা বঙ্গদেশে কবে আগ্রাসন চালায়, তার সঠিক কোন সময় পাওয়া যায়নি এখনো। তবে, এটুকু জানা যায় যে, উত্তর ও মধ্য ভারতে তারা নিজেদের আসন পাকাপোক্ত করার অনেক পরে বাংলায় প্রবেশ করে। আর্য হিন্দুরা আসার আগে, বাংলায় জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার ঘটে।

বাংলায় প্রবেশের অনেক আগেই আর্যরা অনার্য ভারতীয়দের উপর জুলুম-নিপীরণ চালায়। ইন্দ্রের প্রতি আদেশ করা হয়েছিলো-

'হে ইন্দ্র! তোমার শুভ্র বর্ণের বন্ধু-দিগের সহায় হও এবং কৃষ্ণবর্নত্বককে নিঃশেষ করো।'

এভাবে, পরবর্তীতে, নিম্নবর্ণের শুদ্রদের প্রতিও বিদ্বেষ তৈরী করা হয়েছিলো এই বলে যে, কোন ব্রাহ্মণ যদি শুদ্রের হাতে রান্না করা খাবার খান, পরজন্মে তাঁকে শূকর হয়ে জন্ম নিতে হবে অথবা শুদ্রের ঘরে জন্মাতে হবে।

আর, বাংলার মসনদ যখন আর্যরা কুক্ষিগত করে, তখন এইসব আইনের মাধ্যমেই বঙ্গবাসীদের উপর অবর্ণনীয় অত্যাচার চালানো হয়। এই দেশের মানুষদের জোর করে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয় যার বর্ণনা গুপ্তযুগের শিলালিপি-তাম্রলিপিতে পাওয়া গিয়েছে। এই দেশের মানুষদের ধর্মান্তরিত করে 'নিম্নশ্রেনীর হিন্দু' তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। আর, এভাবেই বাংলায় শুরু হয় সাম্প্রদায়িকতা।

শশাংক ছিলেন চরম বৌদ্ধ-বিদ্বেষী। তাহার একটি আদেশে তিনি বলেনঃ

''সেতুবন্ধ হতে হিমালয় পর্যন্ত যেখানে যত বৌদ্ধ আছে, তাঁদের বৃদ্ধ ও বালকদের পর্যন্ত যে না হত্যা করবে, সে প্রাণদন্ডের দন্ডিত হবে- রাজভৃত্যদের প্রতি এই আদেশ।''

এই ধর্মান্তরিত নিম্নশ্রেণীর হিন্দুদের উপর ব্রাহ্মণদের যৌন নির্যাতনের প্রমাণও পাওয়া যায়। অন্ত্যজ শ্রেণীর মানূষদের সাথে মেশা নিষিদ্ধ হলেও, এই শ্রেণীর মেয়েদের শয্যাসংগী করা যাবে বলে হিন্দু ধর্মের বিধানে উল্লেখ ছিলো যা ঐতিহাসিক বেঞ্জামিন ওয়াকার তাঁর 'হিন্দু ওয়ার্ল্ড' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।

বাংলার এই নিম্নবর্ণের হিন্দু আর বৌদ্ধরাই ছিলো আদি বাঙ্গালী যাদের অনেকে পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে গিয়েছিলেন। আর, এই মুসলমানদেরই ম্লেচ্ছ বা অচ্ছুৎ ঘোষনা করেছিলো হিন্দু ব্রাম্মনরা।

এই যখন আর্যদের ইতিহাস, পারবে কি বর্তমান ভারতীয় সরকার বাংলাদেশকে মন থেকে বন্ধু হিসেবে বেছে নিতে? হতে পারবে কি সত প্রতিবেশী? অনেকের মতো প্রশ্নটা আমারও।

সময়ই তা বলে দিবে।


মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৫০

হাবিব বলেছেন: আপনার পোস্টের শিরোনামেই মুগ্ধ আমি। চমৎকার বলেছেন

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:০৯

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন: রাষ্ট্রযন্ত্রকে সব সময় সাম্প্রদায়িকতার উর্ধে চিন্তা করতে হবে। নাহলে, দেশ ও জাতির অমঙ্গল নিয়ে আসে।

অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা।

২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি আমার মনের কথা গুলোই বলেছেন।

২২ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৫

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন: আপনি ফিরে এসেছেন দেখে ভালো লাগছে। সহমত পোষণ করায় ধন্যবাদ নিরন্তর।

ভালো থাকুন সব সময়।

৩| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৭:৩৮

ইমরান আশফাক বলেছেন: বড় ও শক্তিশালী রাষ্ট্র কখনো ছোট রাষ্ট্রের বন্ধু হতে পারে না। নিজ স্বার্থে ব্যবহারের পর টিস্যু পেপারের মত ছুড়ে ফেলে দেয়। ভারত ১৯৭১ সালে আমাদের সহায়তা করেছিল নিজ স্বার্থে, নিজ স্বার্থেই আমাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের পক্ষে অবষ্হান নিয়েছে। হায়, এই বোধটুকু আমরা এখনো উপলদ্ধি করতে পারলাম না।

চীনও কখনই আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র নয়, কেবল নিজ স্বার্থেই আমাদের সাথে দহরম মহরম। তাদের সাম্প্রতিক আচারনই তার প্রমান (রোহিংগ্যা ইস্যুতে), বরং বর্তমান চীনা প্রশাসন চরমভাবে মুসলিমবিদ্বেষী (উইঘুর ইস্যুতে)।

আর ভারতের বর্তমান বিজেপি সরকারের লক্ষ্য যে অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠা করা এই ধারনাটিও ভূল। কারন অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠা হলে বাংলা ও বাংলাভাষীদের সংখ্যা অনেক গুন বেড়ে যাবে। তাতে করে হিন্দি বলয়ের হাত থেকে ক্ষমতা ছুটে বাংগালীদের হাতে ক্ষমতা চলে যাবে নিরংকুশভাবে, রাজধানীও সম্ভবত এই দিকে চলে আসবে। এই ঝুকিটা ওরা কোনভাবেই নেবে না। এমনিতেই এক মমতার দাপটেই ওরা অস্হির।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৩২

সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন: আমার মতে, আপনি ধারণা করছেন এগুলো। ধারণা ভুলও হতে পারে।

ভুল হওয়াই মঙ্গল।

ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.