নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি লেখালিখি করি, মনের মাধুরী মিশিয়ে
চীনের তিন রাজ্যের সময়ে জুজে লিয়াং একাধারে একজন রাজনীতিবীদ, সামরিক কৌশলবীদ এবং উদ্ভাবক ছিলেন। তিনি কিভাবে একজন স্ত্রী খুঁজে পেয়েছিলেন তার অনেক রকম বর্ণনা আছে। তবে, তিনি কিভাবে শারীরিক সৌন্দর্যের চেয়ে বুদ্ধিমত্তাকে বেশি মূল্য দিয়েছিলেন তা নিচের গল্পটিতে বর্ণনা করা হয়েছে।
বিয়ের প্রস্তাব
জুজে লিয়াং-এর যখন ১৭-১৮ বছর বয়স, তিনি হেনান প্রদেশের উলং-এর নানইয়াং শহরে চলে গেলেন। সেখানে নিজের থাকার জন্যে একটি খড়ের কুটির বানিয়ে একদিকে জমি চাষ করে, অন্যদিকে পড়া-শোনায় করতে করতে জীবন কাটাতে লাগলেন।
সেই এলাকায় হুয়াং চেঙিয়ান নামের এক গণ্যমান্য ব্যক্তি ছিলেন। তিনি যখন বুঝতে পারলেন জুজে একজন বিজ্ঞ এবং সৎ ব্যক্তি, তখন তিনি তাকে পছন্দ করা শুরু করলেন। প্রায়ই তিনি জুজে-কে দেখতে তার বাসায় যেতেন। হুয়াং-ও খুব জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। সেজন্যে জুজে ও তার সঙ্গ পছন্দ করতেন। সেই পছন্দ করাটা এমনই ছিলো যে তিনি হুয়াং-কে তার লেখাগুলো দেখে দিতে বলতেন।
এভাবে কিছু কাল কাটানোর পর, হুয়াং ঠিক করলেন তিনি ঝিউইজের হাতেই নিজের মেয়েকে সমপর্ন করবেন। যেই ভাবা সেই কাজ। একদিন তিনি জুজের কাছে মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব পাড়লেন। কিন্তু, জুজে যখন জানতে পারলেন হুয়াং-এর মেয়ে দেখতে কুৎসিত, তখন তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করলেন না। আবার, তাই বলে হুয়াং-কে ফিরিয়েও দিলেন না। ব্যাপারটা শেষ পর্যন্ত এভাবেই ঝুলে থাকলো।
সেইদিন থেকে, হুয়াং আর জুজে নিজেদের মাঝে কথা-বার্তা চালিয়ে গেলেও বিয়ের প্রস্তাবের ব্যাপারে একটি বাক্যও উচ্চারণ করতেন না।
একদিন, হুয়াং জুজে-কে বললেন, ‘’আমি প্রায়ই তোমাকে দেখতে আসি। অথচ, তুমি আমার বাসায় কখনো যাওনি।‘’
উত্তরে জুজে বললেন, ‘’অভদ্রতার জন্যে আমাকে মাপ করবেন। খুব শীঘ্রই আমি আপনাকে দেখতে যাবো।‘’
সাদর আপ্যায়ন!
জুজে কিছুদিন পরেই হুয়াং-এর বাড়ি গেলেন। তিনি যখন বাড়ির গার্ডকে নিজের পরিচয় দিলেন, সে উত্তর দিলোঃ ‘’বাড়ির মালিক আমাকে বলেছেন যে, যদি মাস্টার জুজে আসেন, তাহলে আমি যেন তাঁকে সরাসরি বাসার ভিতরে নিয়ে যাই। দয়া করে আপনি ভিতরে আসুন।‘’
জুজে ভিতরে ঢুকে কিছু দূর এগুতেই দেখতে পেলেন বাড়ির দ্বিতীয় দরজাটা বন্ধ। তিনি ভদ্রতার সঙ্গে দরজাতে দু’বার আঘাত করতেই তা খুলে গেলো। তিনি ভিতরে ঢুকলেন। দরজাটা পিছনে আপনা-আপনি আবার বন্ধহয়ে হলো। জুজে এতে খুবই অবাক হলেন।
জুজে এরপর চারদিকে তাকাতে লাগলেন যদিবা কাউকে দেখা যায়। সবেমাত্র তিনি খোঁজা শুরু করেছেন, ওমনি কোথা থেকে যেন একটা আওয়াজ হতেই দু’টি কুকুর তাঁর দিকে দৌড়ে এলো। কুকুর দুটোর একটি গারো কালো, আরেকটি তুষারের মতো সাদা রঙের। কুকুর দুটো তাঁর উপর এক রকম প্রায় ঝাপিয়ে পড়লো। জুজে পিছু ফিরে পালাতে চাইলেন, কিন্তু, দরজাটা খুললো না। তিনি আতংকিত হয়ে কুকুরগুলোকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগলেন।
ঠিক সেই মূহুর্তে, একজন কাজের মেয়ে দৌড়ে এসে কুকুরগুলোর মাথায় হাত বুলাতেই সেগুলো শান্ত হয়ে বসে পড়লো। মেয়েটি সেগুলোর কান ধরে মুচড়ে দিয়ে দৌড়ে ফুলের টবগুলোর ওপাশে চলে গেলো। জুজে এবারে একটু ধাতস্থ হয়ে কুকুরগুলোর দিকে আবার তাকালেন। তিনি এবারে অবাক হয়ে বুঝতে পারলেন, সেগুলো কাঠ দিয়ে তৈরী! কাঠের উপর কুকুরের চামড়া বসানো! তিনি কাজের মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করলেন কে এই যান্ত্রিক কুকুরগুলো তৈরী করেছে। উত্তরে মেয়েটি শুধু একটি হাসি দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো।
জুজে এবারে বাড়ির আরো ভিতরে ঢুকে হাঁটতে থাকলেন। হাঁটতে হাঁটতে তিনি যখন তৃতীয় দরজার কাছে এলেন, দুটি বাঘ দৌড়ে এসে তাঁর ইপর ঝাপিয়ে পড়লো। ঝিউজ ভাবলেন ‘এগুলোও হয়তো কুকুরগুলোর মতোই কৃত্রিম।‘’ তিনি তাই তাচ্ছিল্যের সাথে বাঘগুলোর মাথায় হাত বুলা্তে লাগলেন। আরে! বাঘ দুটো শান্ত হবে কি, উল্টো তাঁর দিকে দাঁত বের করে হুংকার দিচ্ছে!
বাঘগুলো জুজে কে মাটির সাথে আরো জোরে চেপে ধরলো। ঠিক তখন সেই কাজের মেয়েটি কোথা থেকে যেন উদয় হয়ে বললোঃ ‘’তুমি ওভার স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা করছো। তুমি কুকুরের সাথে যেভাবে ব্যবহার করো কিভাবে বাঘের সাথেও সেই একই রকম ব্যবহার করার চিন্তা করছো?’’
তারপর, মেয়েটি বাঘগুলোর সাথে শান্ত স্বরে কথা বলতে বলতে তাদের পেটে হাত বুলাতে লাগলো।
জুজের চিন্তিত হয়ে পড়া
এবারে জুজে কিছুটা অপ্রস্তুত বোধ করে স্বীকার করলেন, ‘’এই বাড়ির উঠোনটা বিশাল। এইখানে ঢুকাটা খুব কঠিন। তুমি দয়া করে আমাকে পথ দেখিয়ে দাও।‘’
কাজের মেয়েটি বললো, ‘’আমি এখন নুডলস বানাতে ব্যস্ত।‘’
জুজে তাকিয়ে দেখতে পেলেন সত্যি সত্যিই সেখানে একটা নুডলস বানানোর কারখানা রয়েছে আর পেষার যন্ত্রটিকে একটা কাঠের গাধা ঘুরাচ্ছে। এবারে জুজে হতবাক হয়ে গেলেন। বিস্ময় প্রকাশ করে বললেনঃ ‘’আহ! আমি শুধু জানতাম মাস্টার হুয়াং একজন জ্ঞানী ব্যক্তি। তিনি এগুলোও বানাতে জানেন তা তো জানতাম না!’’
মেয়েটি তার কথা শুনে হেসে দিলো। বললঃ ‘’মাস্টারের এগুলো নিয়ে কোন ভাবনা নেই!’’
জুজে এবারে উত্তেজিত ভাবে জিজ্ঞাসা করলেনঃ ‘’তাহলে কে এগুলো তৈরী করেছে যদি বাড়ির কর্তা এগুলো বানিয়ে না থাকেন?’’
কাজের মেয়েটি বললো, ‘’দয়া করে বাড়ির ভিতরে ঢুকো। তুমি জানতে পারবে।‘’
জুজে মনে মনে ভাবলেন ‘’প্রত্যেকবার দরজা খোলার সাথে সাথে, আমাকে নতুন নতুন যন্ত্রের মুখোমুখি হতে হয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আমি এখন কি করবো?’’
তিনি যখন দ্বিধা করছিলেন, তখন সামনের দরজা হঠাৎ খুলে গেলো, আর তা দিয়ে একজন লম্বা গড়নের মহিলা বেরিয়ে এলেন। মহিলাটিকে হাব-ভাবে খুব শান্ত এবং সম্ভ্রমশালী মনে হলো। যদিও তার মুখটা কিছুটা কালো আর ফোঁটা ফোটা দাগে ভর্তি।
মহিলাটি উঠোনে বের হয়ে কাজের মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘’এই মেহমানটি কে?’’
কাজের মেয়েটি কিছু বলে উঠার পূর্বেই, জুজে উত্তর দিলেনঃ ‘’আমি জুজে কংমিং। উলং গ্যাং থেকে এসেছি। মাস্টার হুয়াং-এর সাথে দেখা করতে চাই।‘’
‘দয়া করে ভিতরে আসো!’’ মহিলাটি কথাগুলো বলে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেলো।
কাজের মেয়েটি দেখতে পেলো জুজে এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন। সে তাঁকে বললোঃ ‘তাঁর পিছু পিছু যাও। দরজা খুলে গিয়েছে। ভদ্রমহিলা এখন সব কিছু বন্ধ করে দিবেন। আর কিছুই তোমাকে ভয় দেখাতে বেরিয়ে আসবে না।‘’
জুজে তবু সতর্কতার সঙ্গে এগুতে থাকলেন। আরো কিছু দরজা পেরুনোর পর একটি বিল্ডিং চোখে পড়লো। সেখানেই তাঁর সাথে হুয়াং-এর দেখা হলো।
প্রতিভাধর উদ্ভাবকের মুখোমুখি
হুয়াং তাঁকে উপরে নিয়ে গেলেন। সেখানে বসার পর, জুজে প্রথমেই বললেন, ‘’মাস্টারের সাথে দেখা করাটা খুব একটা সহজ নয়!’’ তিনি এরপর হুয়াংকে এখন পর্যন্ত যা যা ঘটেছে তা বললেন।
হুয়াং হেঁসে ফেললেন। উচ্চ স্বরে হাসতে হাসতে বললেনঃ ‘’আমার কুৎসিত মেয়েটি সারাদিন এগুলো নিয়েই থাকে। সে তোমাকে ভয় পাইয়ে দিয়ে খুবই লজ্জার কাজ করেছে।‘’
হুয়াং-এর কথা শুনে জুজেও হাসতে থাকলেন আর নিজের প্রতি বিরক্ত হয়ে মনে মনে বললেনঃ ‘’জুজে লিয়াং! তোমার মাথায় সত্যিই গোবর ভর্তি। মাস্টার তাঁর মেয়ের সাথে তোমাকে বিয়ে দিতে চাইলেন, আর তুমি কিনা মেয়েটি কুৎসিত হওয়ায় তাঁকে অবজ্ঞা করলে! তুমি এরচেয়ে প্রতিভাসম্পন্ন মেয়ে কোথায় পাবে? কদর্যতা তোমার মনের নাকি
সেই মেয়েটির মধ্যে?’’
ঠিক সেই মূহুর্তে, নিজের মনের কথা ফাঁস করে দিয়ে জুজে বললেন, ‘’আপনার মেয়ের বিজ্ঞতা আর সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। আমি তাঁকে খুব সম্মান করি।‘’
হুয়াং বললেন, ‘’আমার মেয়েটি খুবই কুৎসিত। আমি তাকে অন্য একজনের সাথে বিয়ে দিয়ে চেয়েছিলাম। কিন্তু...’’
হুয়াং তাঁর কথা শেষ করার আগেই জুজে বললেন, ‘’আমি মূলতঃ এখানে এসেছি আমার শ্বশুরের সাথে দেখা করতে।।‘’
এই কথা বলেই জুজে মাটিতে বসে পড়ে লিউইংকে ষাষ্টাঙ্গে প্রণাম জানালেন। হুয়াং আবার হেঁসে দিয়ে তাঁকে উঠে দাঁড় করালেন দুই হাত ধরে।
জুজে লিয়াং এবং হুয়াং-এর মেয়ের বিয়ে
আর এভাবেই জুজে হুয়াং-এর মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলো। তাঁরা দু’জন দু’জনের কাছ থেকে শিক্ষা নিলেন। অনেকে বলে থাকেন, ঝিউইজের অনেক আইডিয়া তাঁর স্ত্রী’র সাথে আলোচনা করার মাধ্যমে এসেছে। জুজের একটি আবিস্কার ছিলো এরকম- একটি কাঠের ষাঁড়কে গিয়ার চালানোর মাধ্যমে হাটানো যেতো। এই আবিস্কারটি প্রাচীন চীনে কৃষি কাজে ব্যবহৃত হতো।
[কাহিনীটি আমার এক চায়নিজ বান্ধবীর মুখে শোনা]
২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪৮
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন: একদম ভালো হয়নি। নতুন করে আবারো লিখতে হয়েছে আপনার পড়ার পর।
ধন্যবাদ।
২| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:০২
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার চীন বিষয়ক পোষ্ট গুলো পড়ে পড়ে চীন যাবার বাসনা হচ্ছে।
২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১০:২৭
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন: চীনে কয়েক বছর থেকে আসুন। ভালো লাগবে। আপনার অভিজ্ঞতা আমরা পড়তে পারবো।
ধন্যবাদ নিরন্তর।
৩| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১০:৪৮
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: ভালো লেগেছে শাইয়্যান ভাই।
২৫ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ১০:৫৪
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন: পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা নিরন্তর।
৪| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১০:৪৯
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
প্রাচীন চীনের রাজনীতিবীদ জুজে লিয়াং-এর বিয়ের মজার কাহিনী সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন ।
তিনি সে সময়কার একজন বড় উদ্ভাবক ও ছিলেন । তাঁর উদ্ভাবিত একটি কাঠের ঘোড়া চীনের জিবুতে অবস্থিত প্রাচীন চেরিয়ট যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে বলে জনা যায় ।
তাঁর জীর্ণ কুটিরে তিন বার গিয়ে লিউ তাকে কিভাবে রিক্রুট করেছিল দা্ই জিং কতৃক আঁকা একটি ছবি এখানে গ্রতিথ করে গেলাম ।
ছবি সুত্র : গুগল অন্তর্জাল
শুভেচ্ছা রইল
২৫ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ১০:৫৭
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন: জুজে প্রাচীন চীনে অনেক অবদান রেখে গিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী এ ব্যাপারে তাঁকে মন্ত্রন দিতেন বলে জানা যায়।
ছবি এবং নতুন তথ্যের জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
শুভেচ্ছা নিরন্তর।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৫:০৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
মোটামুটি চলে