নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি লেখালিখি করি, মনের মাধুরী মিশিয়ে
প্রাচীন চীনা জ্যোতির্বিদ্যা অনুযায়ী, সূর্য তার পরিভ্রমন কালে আকাশের যে সব জায়গা ছুয়ে যায় সেগুলো চার ভাগে বিভক্ত। এই চার ভাগের প্রতিটিতে সাতটি সুবৃহৎ অট্টালিকা বা ম্যানশন আছে, এভাবে আকাশে সর্বমোট ২৮টি ম্যানশন অবস্থান করে। এই ২৮টি ম্যানশন পশ্চিমা জ্যোতির্বিদ্যার রাশিচক্রের সাথে সংযুক্ত যে নক্ষত্রমন্ডল রয়েছে সেগুলোর সমতুল্য বলে মনে করা হয়, যদিও তা আসলে কোন চান্দ্রিক মাসে চাঁদের চলার পথের সাথে সম্পর্কযুক্ত, সূর্যের ক্রান্তীয় বছরের সাথে নয়। আর এভাবেই প্রাচীন চীনবাসীরা সময় আর ঋতু নির্ধারণ করার সাথে সাথে সূর্য ও চন্দ্রের চলার পথের অবস্থান নির্ণয় করতে সক্ষম হতেন।
সেই সময়ের চীনের পণ্ডিতরা আকাশের প্রতিটি অংশকে একটি পৌরাণিক জীবের সাথে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, এই পৌরাণিক জীবগুলো 'চার প্রতীক' নামে পরিচিত। এই জীবগুলো হচ্ছে- পূর্ব দিকের নভোনীল ড্রাগন, পশ্চিমের সাদা বাঘ, উত্তরের কালো কচ্ছপ এবং দক্ষিণের ভার্মিলিয়ন পাখী। এই জীবগুলো চীনের জ্যোতিষশাস্ত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করা ছাড়াও এগুলোর অনেক পৌরাণিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ অনুযায়ী, আজ থেকে ৬০০০ বছর আগে, চীনের নিওথিলিক যুগেও এই 'চার প্রতীক' ছিলো। একটি সমাধি'র ভিতরে ঝিনুকের খোসা আর হাড় দিয়ে বানানো নভোনীল ড্রাগন ও সাদা বাঘের ছবি প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এটাও দাবী করা হয় যে,
জেং-এর মারকুইস ই'র সমাধীতে যে শিল্পকর্মটি পাওয়া যায় তা আসলে এমন এক বার্নিশ করা আলমারি যা ঐ চার প্রতীক এবং ২৮টি ম্যানশনের ছাঁচে বানানো হয়েছিলো।
নভোনীল ড্রাগনঃ
নভোনীল ড্রাগন পূর্ব দিকের পৌরাণিক জীব। যখন সেই দিকের সাতটি ম্যানশন একসাথে জোড়া লাগে, তখন সেইগুলো এই নভোনীল ড্রাগনের রূপ ধরে। এই ম্যানশনগুলো হচ্ছে - শিং, কাঁধ, পাদদেশ, প্রকোষ্ঠ, হৃৎপিণ্ড, লেজ এবং জঞ্জালের ঝুড়ি। এই ড্রাগন বসন্তের প্রতিনিধি। যেহেতু, ড্রাগনকে চীনে সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত জীব হিসেবে মনে করা হয়, সেহেতু, নভোনীল ড্রাগনই 'চার প্রতীক'-এর প্রধান। চীনে ড্রাগনকে যদিও পানির সাথে সংযুক্ত করা হয়ে থাকে, নভোনীল ড্রাগন কিন্তু আলাদা। নভোনীল ড্রাগনের উপাদান হচ্ছে কাঠ। চীনা পৌরাণিক কাহিনীগুলোতে ড্রাগনকে এক ভয়ংকর ও শক্তিশালী জীব হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। তারপরো, চীনের ড্রাগনগুলো পশ্চিমের মতো নয়। এই দেশের ড্রাগনগুলো সম্ভ্রান্ত, হিতৈষী, আর সম্পদ ও সৌভাগ্যের বাহক।
সাদা বাঘঃ
পশ্চিমের পৌরাণিক জীব হচ্ছে সাদা বাঘ। সাদা বাঘের সাথে সম্পর্কযুক্ত সাতটি ম্যানশন হচ্ছে - পা, বন্ধন, পাকস্থলী, লোমশ মাথা, জাল, কচ্ছপের বিচি এবং তিনটি তারা। সাদা বাঘ শরতের প্রতিনিধি। এই বাঘের উপাদান হচ্ছে ধাতু। সাদা বাঘকে যুদ্ধের দেবতা হিসেবে ধরা হয়। এই শক্তিতে বলীয়ান হয়ে সাদা বাঘকে এমন একটি পশু হিসেবে মনে করা হয় যে মানুষকে মারাত্মক শত্রু আর মন্দ আত্মা থেকে বাঁচায় এবং রক্ষা করে।
কালো কচ্ছপঃ
পৌরাণিক জীবের তৃতীয়টি- কালো কচ্ছপের অবস্থান উত্তর দিকে। এর সাতটি ম্যানশনগুলো হচ্ছে- ঋক্ষমণ্ডল, ষাঁড়, মেয়ে, শূন্যতা, ছাদের উপরিভাগ, ঘাঁটি এবং দেয়াল। কালো কচ্ছপ শীতের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত। এই কচ্ছপের উপদান- পানি। কালো কচ্ছপের অর্থ হচ্ছে দীর্ঘায়ু আর বিজ্ঞতা। চীনে সাধারণ কচ্ছপের গুণ বলতে ঐ একই বিশেষণ বুঝানো হয়।
ভার্মিলিয়ন পাখীঃ
দক্ষিণের পৌরাণিক জীব হচ্ছে ভার্মিলিয়ন পাখী। এর সাতটি ম্যানশন হচ্ছে- ভালো, অশুভ আত্মা, উইলো গাছ, তারা, তারা'র বর্ধিতাংশ, পাখা ও রথ। ভার্মিলিয়ন পাখী গ্রীষ্মের প্রতিনিধি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ভার্মিলিয়ন পাখী'র সাথে ফিনিক্সের হুবুহু মিল রয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে, ফিনিক্স পাখী'র সাথে আগুনের সাথে সম্পর্কযুক্ত, ভার্মিলিয়ন পাখীও ঠিক তা-ই। পৌরাণিক পাখী হিসেবে ফিনিক্সকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।
প্রাচীন চীনের এই চার পৌরাণিক জীবের মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞান আর পৌরাণিকশাস্ত্র যেভাবে পাশাপাশি অবস্থান করে তা বিজ্ঞান এবং শিল্পের সহাবস্থানের বিরল এক দৃষ্টান্ত। এই 'চার প্রতীক'-এর মাধ্যমে প্রাচীন চীনের অধিবাসীদের বিশ্বাস কি রকম ছিলো তা-ও বুঝা যায়।
তথ্যসূত্রঃ
cultural-china.com, 2010. The Azure Dragon. [Online]
Available at: Click This Link
cultural-china.com, 2010. The Black Tortoise. [Online]
Available at: Click This Link
cultural-china.com, 2010. The Four Symbols and Twenty-Eight Mansions. [Online]
Available at: Click This Link
cultural-china.com, 2010. The Vermilion Bird. [Online]
Available at: Click This Link
cultural-china.com, 2010. The White Tiger. [Online]
Available at: Click This Link
Schumacher, M., 2014. Shijin (Shishin) - Four Legendary Chinese Creatures Protecting the Four Compass Directions. [Online]
Available at: Click This Link
Wikipedia, 2014. Four Symbols (China). [Online]
Available at: Click This Link)
Wikipedia, 2014. Twenty-Eight Mansions. [Online]
Available at: Click This Link
১২ ই আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৪
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন: আমি মাত্র জানা শুরু করেছি। আপনি হয়তো অনেক দিন আগেই এর রহস্য ভেদ করে ফেলেছেন।
ধন্যবাদ। ঈদ মুবারক।
২| ১১ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:৪৭
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: পৌরাণিক মিথ এবং জোর্তিবিদ্যা তৎকালীন যাদুবিদ্যার বহিঃপ্রকাশ মাত্র,
পৌরাণিক মিথ কেন বা কোথায় সুত্রপাত তা নির্ণয় বা বিশ্বাস করা কঠিন ।
তারপরও আমরা তা নিয়ে ভাবি বা সময়ে সময়ে ভয় পাই ।
...........................................................................................
১২ ই আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৫
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন: যাদুবিদ্যা! সবগুলো? নাহ!
ঈদ মুবারক।
৩| ১১ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ১০:০৩
শায়মা বলেছেন: কত কষ্ট করতো আগের মানুষেরা! কাজ নাই জ্যোতির্বিদ্যা করে করে জীবন পাত করতো!
আমার কাছেও ভাওতাবাজী মনে হয় রাজীবভাইয়ার মত।
১২ ই আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৭
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন: তুমি হয়তো উনার মতো ভিতরের খবর জেনে ফেলেছো। আমি দরজার কড়ায় নাড়া দিচ্ছি মাত্র।
ঈদ মুবারক।
৪| ১২ ই আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১:০৫
স্রাঞ্জি সে বলেছেন:
পৌরাণিক মিথ কিম্বা জ্যোতির্বিদ্যার আমার খুব আগ্রহ। মাঝে মধ্যে ভাবি, সেইকালে কেন জন্মালাম না। ধীরে ধীরে বিজ্ঞান প্রযুক্তি ব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে। আর মিথ গুলো মানুষের কাছে ভাওতাবাজি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
শাইয়্যান ভাই ঈদ মোবারক।
১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:০৭
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন: ঈদ মোবারক, ভাইটি।
যতদিন না পুরোপুরি মিথ্যা প্রমাণিত হয়, আমি এখনো আসল ঈদ মোবারক পক্ষে।
ধন্যবাদ নিরন্তর।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:২১
রাজীব নুর বলেছেন: জোর্তিবিদ্যা আসলে কোনো বিদ্যাই না।
গ্রহ নক্ষত্রের সাথে মানূষের জীবন যাপনের কোনো মিল নেই।