নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কখনো নিজের নাম লুকোই না। আকাইমা শব্দ দিয়ে বানানো ছন্ম নাম আমার পছন্দ নয়। মা-বাবা\'র দেয়া নাম দিয়েই প্রোফাইল খুলেছি।

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন

আমি কেউ না।একদা পথ শিশু ছিলাম। বড় হয়ে এখন পথ মানব হয়েছি। বাবা এক দিন স্বপ্ন দেখানোর সুরে বলেছিলেনঃ দেখিস, এক দিন আমাদেরও....! আমার দেখা হয়নি কিছুই । এখনো অপেক্ষায় আছি কিছু একটা হবো, কিছু একটা দেখবো।

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প- একটি সেতুর জন্য

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫৪



------------------------- (ছবিঃ নেট থেকে গৃহীত) -------------------------

গ্রামের কুল ঘেঁষে বয়ে যাওয়া এই ছোট নদীটাকে নদী না বলে খাল বললেই বেশী মানায়। তারপরও গাঁয়ের সবাই এটাকে নদী নামে ডাকে। তবে নদীকে তারা নদী বলে না। বলে গাঙ। তবে বেশীর লোক খাল বলে। খাল বলেই তারা আরাম পায়।
বছরের ৭ কি ৮ মাস গাঙে ভরা পানি থাকে। তবে বর্ষায় বেশী পরিমাণে পানি থাকে। তখন বেশ স্রোতের চাপ দেখা যায়। বছরের বাকি সময় কোমর পানি হাঁটু পানি। বর্ষার সময় এই খালে অনেক নৌকা চলে। এক সময় পালতোলা নৌকাও চলত। এখন চলে ইঞ্জিনের নৌকা। যখন বেশী পানি থাকে তখন নৌকা চলে বলে দুইপাড়ের মানুষের পারাপারের জন্য নৌকা ছাড়া উপায় নেই। তাই দরকার হলো খেয়া বা গোদারার। অনেক বছর আগে কানাই এর খেয়া ছিল এ অঞ্চলের মানুষে পারারপারের এক মাত্র উপায়।
কানাই বিগত হয়েছেন অনেক কাল আগে। গ্রামের অনেক জায়গায় পুল হয়েছে। মানুষের ঘরে ঘরে আজকাল টাকা। সবাই চায় রিক্সা নিয়ে বাড়িতে যেতে। তরুণ যুবারা হোন্ডা নিয়ে বাড়িতে যেতে না পারলে অস্বস্তিতে ভোগে। মানুষের হাতে নগদ টাকা আসার সাথে সাথে তাদের প্রয়োজনের মাত্রাও গেছে বেড়ে। আজকাল ঘরে ঘরে মুঠোফোন। কোন কোন বাড়ি আছে যাদের ৫/৬ টি মুঠোফোন। চিঠিপত্র যে কি জিনিস গাঁয়ের লোক জন তা অনেক আগেই ভুলে গেছে।
সোলেমান মিয়ার মনে আছে তার ছেলে বেলায় এক বার খালের মাঝপথে একবার পাটের বেচা কেনা হয়েছিল। কারণ হঠাৎ করেই পাটের দাম বেড়ে গেল। যাতে বিক্রেতারা বুঝতে না পারে তাই মহাজনেরা মাঝপথে কম দামে পাট কিনে নিয়েছিলো।
নদীর এই জায়গার খেয়া নৌকাটি শুরু করেছিলেন সোলেমান মিয়ার বাপ কালা মিয়া। তখন মানুষের হাতে এতো নগদ টাকা ছিলো না। তার বাপ দিন-রাত খেটে মানুষ পারাপার করতো। মানুষের ঘরে ঘরে নতুন ধান উঠলে বাপ নৌকা নিয়ে বের হতো। যে যা পারত কেউ ১০ সের, কেউ বা ২০ সের আবার কেউ কেউ দেড় দ্ইু মন ধান দিয়ে দিত। সেই ধান শুকিয়ে গোলায় ভরত তারা। সারা বছরের খোরাকী হয়ে যেত। কিছুটা ধান বেঁচে দিয়ে সংসারের সই-সদাই করতে পারত।

সেই সময় গত হয়ে গেছে অনেক কাল আগে। এখন আর কেউ আগের মতো নেই। সবাই কেমন যেন ফাঁকি দিয়ে চলতে চায় । মানুষ পারাপার করতে তার যে কষ্ট হয় এটা কেউ মানে না। ছোট বেলায় সে আরো দেখেছে তাদের পাশের গাঁয়ে কানাইয়ের খেয়া নামে একটি খেয়া ছিল। সব চেয়ে বেশী মানুষ পার হতো সেই খেয়া দিয়ে। ধানের মৌসুমে কয়েক দিন ব্যস্ত সময় যেত কানাইয়ের। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান সংগ্রহ, এগুলো শুকানো, গোলায় ভরা, বিক্রি করা। কত কাজ করতে হতো।
এলাকার যিনি বড় নেতা তিনি আবার বলে রেখেছেন এ বছর তিনি খেয়া ঘাটটির ইজারা নিয়ে আসবেন। তিনি জেলার বড় কর্তার কাছে কথা বলে এসেছেন। তখন খেয়া চালাতে হলে তাকে টাকা দিয়ে তারপর পানিতে নৌকা ভাসাতে হবে।

অক্টোবর মাসে খালে পানি শুকিয়ে কোমর কি গলা পানি হয়ে যায়। তখন আর বড় বড় নৌকা আসতে পারে না। খাল থাকে নৌকা মুক্ত। এই খেয়া নৌকা না দিয়ে সাকো আর চার দেয়াই উত্তম। সাকে দিতে খরচ কম নয়। এই খরচ তুলতে হয় বদ্ধি করে। এলাকায় যাদের যাদের বাড়িতে বাঁশ ঝাড় আছে তাদের কাছে গিয়ে বাশ চেয়ে চেয়ে আনতে হয়।
এলাকার ছামাদ শেখ বাশের চাষ করেন। বাড়ির পাশের সব জায়গায় বাশ আর বাশ। তার বাঁশ চাষের মূল কারণ তার জায়গার মাটি ভালো নয়। ফসল ফলে না। কিন্তু বাঁশ লাগানোর পর দেখা গেল বাশ ভালোই হচ্ছে।
ছামেদ ভাই, বাড়িতে আছেন নি?
সলেমান মিয়া হাঁক দিল।
ছামেদ শেখ দাওয়ায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। কথার শব্দ শুনে বের হলেন।
আওে, সলেমান যে। তা কেমন আছ ভাই।
আছি আর কি। গরীবের আর থাকা।
তুমি এসেছ আমার খুব ভালো লাগছে। ঘরেরর ভেতর এসো। বসো।
একটা জরুরী দরকারে এসেছিলাম। চার বানাবো। বাঁশ নিতে হবে। এবার কিন্তু আপনি কম করে হলেও ১০ টি বাঁশ দেবেন।
ঠিক আছে বাঁশ নিও। কিন্তু ১০ টি বাঁশ তো খুব বেশী হয়ে যায় । তুমি বরং ৫ টি বাঁশ নিয়ে যাও। ৫ টি বাঁশের বাজার দাম জান তো।
তা তো জানি ভাই। ঠিক আছে। ৫ টিই নিব। আপনার বড় কলিজা। সবাই যদি আপনার মতো দিত তাহলে কি আর নড়বড়ে চার বানাই। লোহার মতো মজবুত চার বানাতাম। হা হা হা ।
ঠিক আছে আজ বাঁশ কাটা যাবে না। মানা আছে। কাল সকালে এসো। আমি বাঁশ দেখিযে দেব। তুমি কেটে নিয়ে যেও।
ঠিক আছে ভাই জান। আপনি অনেক বড় মাপের মানুষ । আপনার তারিফ না কওে পারি না। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করবেন।
যাদের বাঁশঝাড় আছে তাদের থেকে বাঁশ নেয়। আর যাদেও বাঁশ ঝাড় নেই তাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা চেয়ে নিয়ে সলেমান মিয়া তার চার বানিয়ে ফেলে।
করিম চাচার বাড়ি থেকে পাটের দড়ি নেয়া হলো অনেক গুলো। বলতে গেলে তাকে নিজে খরচ করতে হয়নি কিছুই। কেবল মুখের কথা। মুখের কথা দিয়ে অনেক কিছু যে অর্জন করা যেতে পারে সেটা সে জানে এবং করেও দেখেছে।
শুক্রবার সকাল থেকেই খালের দুই পাড়ে[ দারুণ ভিড়। ৫/৬ জন যুবককে ডেকে এনে সাঁকো তৈরীর মহা আয়োজনে নেমে পড়েছে সোলেমান মিয়া। তার আন্তরিক অআহ্বান উপেক্ষা করতে না পেরে চলে এসেছে কয়েকজন স্কুল পড়–য়া ছেলে। তারা দ্রুত চার তৈরী করতে চায়। কেননা, সকালে স্কুলে যেতে তাদেরও সাঁকোটি বড় প্রয়োজন।
চার তৈরীর সময় যে আড্ডা আর খানা পিনা হলো তার তুলনা নেই। গাঁয়ের বুড়োরা বেশ মজা পেলেন। তারা দীর্ঘক্ষণ ধওে বসে বসে চার বানানো দেখলেন। যুবকদের কাজ দেখতে বুড়োরা বেশ মজা পায়। তারা উপদেশদেয়। মুরুব্বীদেও উপদেশ অনেক কাজ দেয়। তার চেয়ে বেশী তার আলাপনের সময় পেলেন। এক সাথে এতোগুলো মানুষ জোগাড় করা তো আর সহজ কাজ নয়।
সকলের সমবেত প্রচেষ্টায় সোলেমান মিয়ার চার তৈরী হয়ে গেল। মানুষ জন যাতায়াতও করতে লাগলো। প্রথম দিন বলে কোন টাকা নেয়া হয়নি। মানুষ জন তাতে মহাখুশী।
বাঁশের সাকো পাড় হতে সোলেমান মিয়া নেবে ২ টাকা। পরিচিত যারা তাদের জন্য সপ্তাহে এক দিন আর যারা অচেনা যাত্রী তাদের প্রতিবার পারের জন্যই টাকা নেয়া হবে। এই নিয়মই চলে এসেছে বেশ কয়েক বছর ধরে।
মাত্র দুইট বাঁশের অবলম্বন পায়ের নীচে। এক পাশে বাঁশ বেঁধে রেলিং দেয়া হয়েছে যাতে করে সাঁকো আরোহী পা পিছলে পানিতে পড়ে না যায় । তবে শীতের কুয়াশায় বাঁশ ভিজে পিচ্ছিল হয়ে গেলে পা পিছলে কেউ কেউ যে পড়ে না তা নয়। তবে চালাক-চতুর আরোহী ঠিকই পার হয়ে যায়।
ছোট্ট খালের এই অংশ টা কোন সময়ই শুকায় না। চৈত-বোশেখ মাসেও এখানে কোমর পানি থাকে । ফলে মানুষের চলাচলের জন্য একটা কিছু তো দরকার। আগে নৌকার গুদারা ছিল। এতো কম পানিতে নৌকা দিয়ে পোষেনা । কারণ নৌকার সার্বক্ষণিক এক জন লোক লাগে। সারা দিন এক জন লোক রাখা মেলা খরচের ব্যাপার। তাই খালের পানিতে যখন স্রোত কমে যায় বিশেষ করে আশ্বিন –কার্তিক মাসে তখন বাশের সাকো বানায় সোলেমান মিয়া।
সাঁকোর পশ্চিম পাড়ে একটা টং ঘর তুলে সে। সেখানে বসে সাকো যাত্রীদের যাতায়াত দেখ-ভাল করতে হয়। যারা সাঁকো বানাতে বাশ, দড়ি ইত্যাদি দিয়েছে তাদের কারো কাছ থেকে তো টাকা পয়সা নেয়ার প্রশ্ণই আসে না। বাকি যাত্রীদেও কাছে টাকা চাইতে হয়। বেশীর ভাগ যাত্রী ই তো মনে হয় ভীষণ চালাক। টাকা না দেয়ার ফন্দি ফিকির করে। মুখ কাচু মাচু করে বলে- কোন ভাংতি নাই সোলেমান ভাই। হাতে ৫০০ টাকার নোট। সামনের হাটে দিমুনে।
সোলেমান মিয়া কিছু বলে না। সে মানুষ চেনার চেষ্টা করে। কত রকম মানুষ আছে এই জগতে। কেউ ফাকি দিতে চায় । আবার কেউ সেধে দিয়ে যায়। আজ সকাল এক লোক ৫০ টাকার একটা নোট দিয়ে গেল। তার মেয়ে এই সাকো দিয়ে স্কুলে যায়। তাই নিয়মিত টাকা দেন। মেয়ের বিদ্যা অর্জনের পথে কোন অন্যায় ঝামেলা তিনি রাখতে চাননা।
প্রতি দিন যদি এক শত লোকও পার হয় তাহলে টাকা উঠার কথা ২০০। কিন্তু কোন সঠিক হিসাব কাউকে বলা চলে না। এ ছাড়া এখন রাজনীতির খেলা চলে । দেখা যায় ছেলে –ছোকরাদের বেশীর ভাগই রাজনীতি করে। যারা রাজনীতি করে তাদের কাছে টাকা চাওয়া ভারি অন্যঅয়। বৃথা আব্দার। তাদের কাছে টাকা চেয়ে কোন অপরাধ করে বসে কে জানে? তখন আম আর ছালা দুটোই যেতে পারে।
বেশ কয়েক বছর আগে সে যারা টাকা না দিত তাদেরকে বলতো - যারা সাঁকো পার হয়ে টাকা না দিবেন তারা রোজ কেয়ামত পর্য়ন্ত ঠেকা থাকবেন। আজ কাল আর এই সব কথা বলে না সোলেমান মিয়া। সে অনেক ভেবে দেখেছে- রোজ কেয়ামতে পুল সিরাত তো তাকেও পার হতে হবে। কি দরকার মানুষকে অযথা সেই মহা সেতু পার হবার পেছনে বাঁধা সৃষ্টি করার। যার মনে চায় টাকা দেবে যার মনে চায় না সে দেবে না। সোজা হিসেব, ব্যস। বড় মনের মানষ যারা তারা নিশ্চয় টাকা মেরে যাবে না। যেমন এক লোক বলল- আপনার ২ টাকা মেরে দিয়ে আমি কি বাড়িতে দালান তুলমু। আজ দিতে পারি নাই কাল ৪ টাকা দিয়ে যাব। খবির শেখ মানুষের টাকা মারার লোক না। তার টাকা অনেক মানুষ মেরে খেয়েছে।
তবে তার টাকা কে মেরে খেয়েছে খবির শেখ তা বলে না। আর যথারীতি তার কাল আর হয় না। টাকা দেয়াও হয় না।
শনিবার বিকেলে উত্তর পাড়ার শফিক এসে একটা খারাপ খবর দিল । খুবই খারাপ খবর। শুনে মন সাংঘাতিক খারাপ হয়ে গেল সোলেমান মিয়ার।
- খবর কিছু জানেন নি সোলেমান ভাই।
- না তো । কি খবর বলতো।
- শুনলাম এই খালের উপর পুল হইবো।
- এই কথা তোমারে কে কইল
- বাজাওে চায়ের দোকানে শুনলাম। সবাই বলাবলি করতে আছেঠ। নেতা নাকি এই বার জিতলে এখানে পুল বানাবে।
- আওে না। পুল বানাইবো। এতো টেকা কই। একটা পুল বানাইতে কত টেকা লাগে সেই খবর রাখ?
- কত টেকা লাগে।
- লাখ লাখ টাকার কারবার। এই যে আমি সাকো বানাই তাই তো কত টেকা লাগে। পুল বানাতে লাগবে সিমেন্ট, ইট, রড, আরো কত কি? খরচের কি কোন হিসাব নিকাশ আছে।
বাইওে যাই বলুক মনে মনে সে খুব ভয় পেয়ে গেল। পুল হয়ে হয়ে গেলে তো তার সাকো থাকব্ েনা। তার সব আয় রোজগার বন্ধ। এমন তো না যে বর্ষায় খেয়া চলবে। পুল অনেক মজবুত জিনিস। সারা বছরই তা ব্যবহার করা যাবে। শীত কি বর্ষা তার কোন হের ফের হবে না।
এখন যেই জায়গায় সে সাঁকো বসিয়েছে শোনা যাচ্ছে এখানে নাকি খুব তাড়াতাড়ি পাকা সেতু হবে। তখন মানুষের নাকি আর টাকা লাগবে না। এই জায়গায় সাঁকো বসানোর জন্য তাকে জেলা পরিষদ থেকে ইজারা আনতে হয়েছে। সাঁকো তৈরীর খরচ আছে। প্রতি দিন এক জন লোক বাসিয়ে রাখতে হয় টাকা তোলার জন্য । এই সবের জন্য তো খয়-খরচার ব্যাপার আছে। এর পর না তার নিজের লাভের অংশ। কতই বা আর থাকে। সেই টাকায় সংসার চালানো তো আর সহজ কাজ নয়। সোলেমান মিয়া অনেক কষ্টে সেই কাজটি করে যাচ্ছে।
আচ্ছা, যদি কখনো সত্যি সত্যি পাকা সেতু হয়েই যায় তখন সরকার কি ইজারার টাকাগুলো হারাবে না? কারণ তখন তো কেউ আর টাকা দিয়ে সেতু পার হবে না। কেউ সেতুর জন্য জেলা পরিষদ থেকে ইজারা আনতেও যাবে না। সরকারী সেতু। এটা পার হতে পথচারীদেও তো কোন টাকা লাগবে না। বেশী বড় সেতু হলে হয়তো টোল তুলার কথা আসত। এটা নিয়ে কেউ কি উচ্চ-বাচ্য করবে না। মনে হয় না। আজকাল যারা প্রতিবাদী তারা আছে অন্য ধান্ধায়। সব সময় প্রতিবাদী মানুষ পাওয়া যায় না।
নেতা নাকি কথা দিয়েছেন তিনি পাস করেন আর যদি তার পার্টি ক্ষমতায় যায় এবং যদি তিনি মন্ত্রী হতে পারেন তাহলে খালের এই খানে সেতু বানাবেনই । এটা তার নির্বাচনী ওয়াদা। নির্বাচনী ওয়াদা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার কোন নিয়ম নাই। কিন্তু নেতা এই বার তার কথা রাখবেন। কারণ এই পথ দিয়ে যারা যাতায়াত করে তারা প্রায় সবাই গরীব খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের ভোট তার অনেক দরকার। তিনি জানেন যে তিনি ছাড়া আর কোন লোক তাদের ভোট পাবেনও না। এই এলাকার লোক নেতাকে বিশ্বাস করে। তিনি নিজেও তাদেরকে বিশ্বাস করেন। তাদের বিশ্বাসের মর্যাদা তিনি রাখবেন। তিনি এক জন সত্যিকারের জননেতা হতে চান। একবার তাদের অন্তরে ঢুকে যেতে পারলে ভোট কেনা হয়ে যাবে। বার বার ভোট কিনতে হবে না। একবার কিনে রাখাই ভালো বলে নেতা মনে করেন।
সোলেমান মিয়া আবার ভাবতে থাকেন সত্যি যদি এবার নেতা এবার ভোটে জেতেন তাহলে আগামী বছরে হয়তো তিনি আর এখানে সাঁকো বানাতে পারবেন না। যে সামান্য আয় হয় তাও বন্ধ হয়ে যাবে। সোলেমান মিয়া মনে মনে খুব ভয় পেয়ে যান। কি করে তার সংসার চলবে। তিনি আবার এটাও বুঝেন যে একটা সেতু আসলেই দরকার। শ্রাবণ মাসে যখন খালে খুব বেশী স্রোত থাকে তখন সাকো থাকে না। নৌকাই এক মাত্র ভরসা। রাত আটটা র পর আর নৌকা চালাতে পারেন না। অথচ মানুষ এর পরও আসে। মানুষের কষ্ট দুর হওয়া দরকার। তার এক জনের কথা ভেবে তো আর জীবন চলে না। জনগণের কথা ভাবতে হবে। মানুষের কথা ভাবতে হবে।
মসজিদের ইমাম সাহেব বলেন- মানুষ হচ্ছে আশরাফুল মাখলুকাত। সৃষ্টির সেরা জীব। তাদের কল্যাণের কথা ভাবলেও পূণ্য হয়। তাই মানুষ যাতে সহজে খাল পার হতে পাওে সেই ব্যবস্থা যখন হতে যাচ্ছে তখন সেটা সমর্থন করাই তো উচিত। সোলেমান মিয়া সেতু বানানো সমর্থন করবেন। কিন্তু তাল ভয় একটাই তার উপায় কি হবে।
দেখতে দেখতে নির্বাচন এসেই গেল। নেতা নমিনেশন পেলেন। তার দলের মার্কা দেখেইে সবাই ভোট দেয়। তারপরও নেতা সব মানুষের বাড়ি বাড়ি গেলেন। গরীব ধনী সবার বাড়ি গেলেন। কোলাকুলিও করলেন। সবাইকে একটাই কথা দিলেন - এই বার নির্বাচিত হলে আপনাদের পুল আমি বানাবোই। এটা আমার এক কথা। তবে আপনাদের দোয়া আর ভোট আমার দরকার। বাকি সব আমার দায়িত্ব। আমি আছি আপনাদের সবার সাথে।
ভোটের দিন যেন এলাকায় উৎসবের বন্যা হয়ে গেল। মানুষ মহা আমোদে ভোট দিতে গেল। কোন রকম হাঙ্গামা ছাড়াই দিন পার হল। গভীর রাতে ফল জানা গেল । নেতা জিতে গেলেন। চারিদিকে তার নামে বিজয় মিছিল হলো । সবাই খুব খুশী। নেতার বিরোধী পক্ষের কোন লোক জন দেখা গেল না। মনে হলো নেতা একাই। তার নির্বাচনে প্রতিদ্বদ্বী কোন প্রার্থীই ছিলেন না।
অনেক আশ্চর্যেও বিষয় যে তিনি মন্ত্রী হয়ে গেলেন। পত্রিকা আর টিভিতে তাকে দেখা যেতে লাগলো নিয়মিত।
মন্ত্রী হবার পর নেতা আর এই গ্রামে আসেননি। তবে একদিন শোনা গেল এই খালের জন্য সেতুর প্রস্তাব সরকার গ্রহণ করেছেন। খুব শিগগিরই সেতুর কাজ শুরু হয়ে যাবে।
সত্যি সত্যি সেতু হবে শুনে সোলেমান মিয়ার মন ভেঙ্গে খান খান হয় গেল। তার খুব খারাপ লাগতে লাগল। চোখের ঘুম চলে গেল। নিরাশা এসে ভর করলো তাকে। কি করবে ভেবে পেল না সে।
বাংলা ১৪১৩ সালের ৩০ শে চৈত্র যেখানে সাঁকো ছিল ঠিক সেই জায়গায়টিতে সেতুর কাজ উদ্বোধন করলেন মন্ত্রী তথা এলাকার নির্বাচিত নেতা। আশে-পাশের গ্রামের অনেক মানুষ তা দেখতে এলো। নানা আয়োজনে মেতে থাকলো সবাই। নেতা ভাষন দিলেন। শেষে ভিত্তি লাল ফিতা কাটার মাধ্যমে সেতু তৈরীর কাজ শুরু হয়ে গেল।

অনেক ভেবে অনেক চিন্তে অবশেষে সে এটা উপায় বার করে । নেতাকে বলে কয়ে নতুন সেতুর পাশে এটা পান বিড়ির দোকান দেবে সে। সেতুটাকে দেখে শুনে রাখার জন্যও তো একজন লোক দরকার। নেতা কি এটা বুঝবেন না? তিনি তো এক সময় অনেক করেছেন। এখন এ সামান্য দাবি কি তিনি রাখবেন না। এটা না হলেও তো তার ভিক্ষায় নামা ছাড়া উপায় নেই। সলেমান মিয়া গরীব হতে পারেন কিন্তু তিনি ভিক্ষা করতে জানেন না। তিনি কাজ করে খেতে চান। নেতা কি তাকে এই একটি কাজ দিতে পারেন না।

তখন গ্রামে দিনের আলো কমে আসছিল। পশ্চিম আকাশে সূর্য অস্ত যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেই দিকে তাকিয়ে সোলেমান মিয়া আকাশ - পাতাল ভাবতে থাকে। কোন উপায় ঠিক করতে পারে না। কেবল ভাবতেই থাকে। ভাবতে ভাবতে এক সময় সূর্য় অস্ত যায়। সোলেমান মিয়া তবু খালের পাড়ে বসেই থাকে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ৈ থাকে অস্তায়মান সূর্যের দিকে।

কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া
০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

মন্তব্য ৩০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৩০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪০

অগ্নি কল্লোল বলেছেন: চমৎকার।।
লিখে যান।

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০০

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আপনি পড়েছেন জেনে ।আমার খুব ভালো লাগছে।
চেষ্টা করবো সমাজের নানা সঙ্গতি-অসঙ্গতি তুলে ধরতে।

আপনার মতো মনোযোগী পাঠক পেলে ভালো লাগবে।

অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন সব সময়।

২| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০৫

অগ্নি কল্লোল বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।।
সময় হলে আমার ব্লগে একবার আপনার দর্শন দিয়েন।

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৪৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আপনার ব্লগে গেলাম। অনেক ভালো লাগলো।

৩| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৪৬

প্রামানিক বলেছেন: গল্প অনেক ভাল লাগল। ধন্যবাদ

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৫০

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: ভাই, আপনি পড়লেই আমার মনে হয় অনেক আগ্রহী কেউ এক জন পড়লেন। খুবই খুশী হলাম।

৪| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৩২

আজমান আন্দালিব বলেছেন: ভালো লেগেছে।

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:০৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আপনি পড়েছেন জেনে আমার খুব ভালো লাগলো। অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন সব সময়।

৫| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৭

জুন বলেছেন: এমন সোলেমান মিয়া যারা কাজ করতে চেয়েও পায়না তাদের জন্য রইলো সহানুভূতি। উন্নয়ন ও মানুষকে বিপদে ফেলে কোন কোন সময় তারই উদাহরন আপনার গল্পে। অনেক ভালোলাগা।
+

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:২৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আপুনি, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আপনি আমার পোস্ট পড়লে আমার মনে হয় আমার লেখার প্রচেষ্টা অর্থহীন নয়।

অনেক অনেক ভালো থাকুন সব সময়।

৬| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:১৮

বিজন রয় বলেছেন: সুন্দর গল্প।
++

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:২৭

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

অনেক অনেক ভালো থাকুন সব সময়।

৭| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৮

দুরন্ত ইসলাম বলেছেন: অনেক ভালোলাগা।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫৫

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: অনেক অনেক ভালো থাকুন সব সময়।

৮| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০০

রাবার বলেছেন: ভাললাগলো +++++

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫৫

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: অনেক অনেক ভালো থাকুন সব সময়।

৯| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:১১

শাহাদাত হোসেন বলেছেন: চমৎকার গল্প ।ভালো লাগলো

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৫২

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: অনেক অনেক ভালো থাকুন সব সময়।

১০| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৫

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: বেশ সাবলীল লেখনি । কিছু সামান্য বানান ভুল আছে, ঠিক করে দিলে পড়তে আরও ভালো লাগবে।অজস্র শুভকামনা থাকলো।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:০৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ, আপু। ভুল গুলো মার্ক করে দিলে আমার জন্য উপকার হতো। তারপরও চেষ্টা করবো ভুলগুলো খুঁজে বের করে ঠিক করতে।

ভালো থাকুন সব সময়।।

১১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৩

শিলা সুলতানা বলেছেন: গল্পে ভালোলাগা।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:১৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ, আপু।

১২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:১৬

কল্লোল পথিক বলেছেন: চমৎকার গল্প।ভালো লেগেছে।

০১ লা মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: ভাই, অনেক আনন্দ পেলাম। আপনারা যদি আমার ভুল-ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিতেন তাহলে আরো বেশী খুশী হতাম।
ভালো থাকবেন সব সময়।

১৩| ০২ রা মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:০৭

মাসুদ মাহামুদ বলেছেন: চমৎকার গল্প ।ভালো লাগলো

০২ রা মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:৫৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: ভাইয়া, অনেক ধন্যবাদ। আমার ভুল-ত্রুটিগুলো যদি একটু ধরিয়ে দিতেন তাহলে খুব কৃতার্থ হতাম। পড়ার জন্য অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা। ভালো থাকুন সব সময়।

১৪| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৩০

আমিই মিসির আলী বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে।
সাবলীল ভাষার লেখা ভালো লাগে।
ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন।

০৬ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৫৫

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: ভাইয়া, । পড়ার জন্য অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা। অনেক ধন্যবাদ। আমার ভুল-ত্রুটিগুলো যদি একটু ধরিয়ে দিতেন তাহলে খুব কৃতার্থ হতামভালো থাকুন সব সময়।

১৫| ১০ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ২:০৩

চাঁদগাজী বলেছেন:



মানুষের আয়ের পথ নেই, জঘন্য সমস্যা

১০ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:৫২

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: সব মানুষের জন্য কাজ দরকার। আয়ের জন্য ক‍াজ খুবই জরুরী।

কষ্ট করে পোস্ট পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন সব সময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.