নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজ্জাদ হোসেন

সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ

জানতে ও জানাতে আমার খুব ভাল লাগে।

সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিছু উপকারী উপদেশ

২৪ শে নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৮

যখন নিজের শৈশব-কৈশোরের কথা ভাবি, বুঝতে পারি, আমার বাবা আমাকে কিছু জিনিস শিখিয়েছেন, যা সাধারনত বাবারা সন্তানদের শেখান না।
১)শারীরিক পরিশ্রমকে সম্মান করা।
আমাদের সমাজের বেশিরভাগ মানুষ শারীরিক পরিশ্রমকে সম্মান করে না। কিন্তু শারীরিক পরিশ্রমকে সম্মান করতে জানলে আপনার গায়ে গতরে খাটা কাজ করতে বাধবে না। আমার মনে পড়ে, আমরা চার ভাই, দুই ভাই শারীরিক পরিশ্রমকে ঘৃনা করতো, আর আমিসহ দুই ভাই, শারীরিক পরিশ্রমকে সম্মান করতাম। দোকান থেকে বস্তার চাল তারা রিকশা/শ্রমিক ছাড়া আনতো না, আমরা কাধে করে নিয়ে আসতাম। এই চালের বস্তাগুলোর কাছে আমি ঋনী, এরা আমার আত্মবিশ্বাসকে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে।
২)শারীরিক পরিশ্রমকে উপভোগ করতে শেখা।
আমার বাবার একটা ব্যর্থ প্রজেক্ট ছিল মোমবাতির ব্যবসা দেয়া। প্রথমে ভাল করলেও, পরে প্রজেক্টটা ব্যর্থ হয়। মোমবাতি বানানোর মেশিনগুলো যথেষ্ট ভারী ছিল, এই মেশিনগুলো পরিষ্কার করতে গিয়ে খুব ঘামতাম, ঘামতেই থাকতাম। কিন্তু এগুলো আমাকে কষ্টসহিষ্ণু করেছে, আমি বুঝতে পারছিলাম, ঘন্টার পর ঘন্টা গরমে কাজ করতে কেমন লাগে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের আরামের জীবন এই অভিজ্ঞতাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। পরে চাকরিজীবনের শুরুতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাহাড়ের ওপরে থাকা ফ্যাসিলিটিতে যখন ইলেকট্রিসিটি ছাড়াই থাকতে হচ্ছিল মাসের পর মাস, থিতু হতে বেশি কষ্ট হয় নি। নিজেকে শক্তিশালী করে তুলতে বাড়তি খেয়ে বেশি পরিশ্রম করার মানসিকতাটা বাবার কাছ থেকেই পাওয়া।
৩)জীবনের অনিশ্চয়তার সাথে মানিয়ে নেয়ার অভ্যাস তৈরি।
এটা আমাকে আমার বাবার শেখানো আরেকটা বড় ব্যাপার। আব্বু এটা সচেতনভাবে শেখান নি। নিজে নিজে শিখেছি বললেই ভাল হবে। আব্বুর অর্থনৈতিক জীবনে অনিশ্চয়তা ছিল প্রচুর। এখান থেকে আমি শিখেছি, জীবনে কোন একটা পেশাতেই সবসময় ফিক্সড থাকা সম্ভব নাও হতে পারে। ক্যারিয়ার প্ল্যানিং সবসময় কাজ নাও করতে পারে, এজন্য নতুন কিছু শেখা এবং সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঝুকি নেয়া শিখতে পারলে কম পরিশ্রমেও ভাল করা সম্ভব। এটা ক্যারিয়ারে জব/সেক্টর সুইচ করতে বা ব্যবসার উদ্যোগ নিতে আমাকে অনুপ্রানিত করেছে, অনুপ্রানিত করেছে ছাত্রজীবনে প্রয়োজনে দূর দুরান্তে গিয়ে টাকা উপার্জন করতে।
৪)সিস্টেমকে দোষারোপ না করে মুখ বুজে নিজের কাজটা করে যাওয়া।
আমার বাবা ডান বা বামপন্থী কোনটাই ছিলেন না, তিনি যা ভাল বোঝেন তা হল নিজের কাজ। সিস্টেম কখনোই তার মত মানুষের জন্য সুবিধাজনক ছিল না, কিন্তু নিজের শ্রম, দক্ষতা আর অধ্যবসায়কে কাজে লাগিয়ে তিনি ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত পড়াশুনাকে কাজে লাগিয়েই একটা পর্যায়ে দেশের সেরা কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশান করেছিলেন।
৫)সততার শক্তির ওপরে আস্থা রাখতে শেখা।
আমার বাবা সবসময় আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন, হারাম রোজগার না করতে। আমার শরীরে আল্লাহর রহমতে কোন হারাম পয়সায় তৈরি অংশ নেই। আমি হারাম খাই না, হারাম রোজগারের অংশ হই না।
৬)আক্রমনাত্মক হওয়া ও প্রতিপক্ষের চেয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারা।
আব্বু দাবায় খুব আক্রমনাত্মক খেলতো আমার সাথে। আব্বুর সাথে ডিফেন্সিভ খেলে কোন লাভ নেই, আব্বু আমার তৈরি যেকোন ডিফেন্স ভেঙ্গে ফেলতো। ওদিকে, বড় ভাইয়া ছিল ডিফেন্সিভ খেলোয়াড়, তার ডিফেন্স ভাঙ্গা, বিশেষভাবে কোর্টের মাঝখানের ৪টা ঘরের দখল তার কাছ থেকে নেয়া ছিল বড়ই দুরুহ ব্যাপার। এই দুজন মানুষই আমাকে আরো আগ্রাসী হতে উৎসাহিত করে। আমি আব্বুর চেয়ে ক্ষিপ্রগতিতে খেলা শিখে নেই ক্লাস সেভেনে থাকতে, এবং এইট-নাইনে আব্বু আমাকে আর সামলাতেই পারতো না। আমার ক্ষিপ্র সিদ্ধান্ত আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে মাঝে মাঝে, কিন্তু একজন ভাল দাবাড়ু সাধারনত খুব বেশি ভুল করে না।
৭)স্ত্রীর রাগকে সহ্য করা।
আব্বু আম্মুর বকাঝকা সহ্য করতো প্রচুর, অত্যন্ত সহনশীল মানুষ ছিল আব্বু। এই ব্যাপারটা আমাকে পজিটিভ এবং নেগেটিভ দুভাবেই ইনফ্লুয়েন্স করেছে। আমি আমার ও আমার স্ত্রীর মধ্যকার আচরনের ব্যাপারে কিছু বাউন্ডারি তৈরি করেছি। এই বাউন্ডারির ভেতরের সবকিছু আমি সহ্য করি কিন্তু এর বাইরের কিছুই আমি সহ্য করি না। আমার বাবার কোন বাউন্ডারি ছিল না, তিনি সব সহ্য করতেন। তার একটা অনেক বড় গুন হচ্ছে তার গর্ব নেই। আমার এই গুনটা নেই। আমি একজন অত্যন্ত গর্বিত মানুষ। অতএব, আমার সাথে আমার স্ত্রীকে অনেক চিন্তা করে কথা বলতে হয়, যা আমার মাকে আমার বাবার সাথে বলতে হত না। কিন্তু, সাধারনত আমি ছোটখাট সমস্ত ব্যাপারে স্ত্রীর রাগ সহ্য করে নিতে পারি।
৮)আনন্দে থাকার চেষ্টা।
আমার বাবাকে দেখে আমি শিখেছি, আনন্দে থাকা বা না থাকার সাথে টাকার খুব বেশি সম্পর্ক নেই, সম্পর্ক আছে চারপাশে পছন্দের মানুষদের রাখতে পারার। জীবনের কঠিন সময়ে আনন্দের ছোট ছোট উপলক্ষগুলোকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতো আব্বু, নিজের অজান্তে। এসব নিয়ে অত ভাবনা চিন্তা করার মত মানুষ সে না, কিন্তু সে বুঝতো, দুঃখকে নিজের ওপর জেকে বসতে দিয়ে লাভ নেই।
৯)অর্থকে গুরুত্ব দেয়া এবং অর্থকে নিজের দাস মনে করা।
আমার বাবা অর্থকে গুরুত্ব দিতেন না, কিন্তু নিজেকে অর্থের দাস মনে করতেন। আমি তাকে বহুবার নোটে পা লাগার পর সেটা পরিষ্কার করে সালাম করতে দেখেছি, কেননা তিনি মনে করতেন টাকাকে অসম্মান করলে টাকা আসে না কাছে। এটা দেখে আমি চিন্তা করতে শুরু করি, টাকার কি আসলে কোন ক্ষমতা আছে কিনা?? পরে আমি বুঝি, টাকার নিজের কোন ক্ষমতা নেই। এরপর, সম্ভবত ক্লাস সেভেন বা এইটে ওঠার পর আমি একবার কিছু টাকাকে পায়ের নিচে পিষে ফেলি, অপেক্ষা করে দেখি টাকা আমার কাছে আসা বন্ধ করতে পারে কি না। পারে নি। আল্লাহর ইচ্ছায় টাকা আমাদের কাছে অসহায়, আমরা টাকার প্রভু, টাকা আমাদের দাস।
আমার বাবা এটা বুঝতে পারেন নি, তার সময়কার বেশিরভাগ মধ্যবিত্তের মতই।
১০)রাজনীতির গুরুত্ব বুঝতে শেখা।
আমার বাবা যে পেশায় ছিলেন(সাব কন্ট্র‍্যাক্টর), সেখানে রাজনীতির কোন বিকল্প ছিল না। কিন্তু তিনি নিজেই রাজনীতিকে বিরক্তিকর মনে করতেন। রাজনীতিহীনতা বারবার তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, কিন্তু তিনি কখনোই পালটা রাজনীতি করতে শেখেন নি। আমি আমার স্কুল জীবনেই ব্যাপারটা টের পেয়ে যাই। ফলে আমি রাজনৈতিক হয়ে উঠি। কিন্তু লাভ কুড়ানোর জন্য রাজনীতিকে বেছে না নিয়ে আমি আমার পেশাগত দক্ষতা বাড়াই, পাশাপাশি চেষ্টা করি রাজনীতিকে বুঝে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে, কেননা রাজনীতি অনেকাংশেই নির্ধারন করে দেয় আমাদের সিদ্ধান্তের লাভ ক্ষতির সম্ভাবনা।
আমার বাবা কি করতেন, তার সব আমি অনুসরন করি নি। আমি অনুসরন করেছি তিনি কি কি করতেন না, তাও, এবং তুলনা করেছি দুই ধরনের ক্ষেত্রে আসা ফলাফলের।
সন্তানের জীবনে বাবারা নিজের লক্ষ্যে-অলক্ষ্যে অনেক লেগ্যাসি রেখে যায় যা সন্তান নিজের অজান্তে বয়ে বেড়ায়। আমিও বয়ে বেড়াই।

মূল লিখা সজল ভাইয়ের। ভাই এখানে লিখেন না। বিষয়গুলা কাজে আসবে ভেবে এখানে শেয়ার করা সবার সাথে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.