নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আর আমার জিগরি দোস্ত মাঝে মাঝেই সমাজের নানা ব্যাপার নিয়ে কথা বলি। আমি নিজে যখন থেকে SCM (Supply Chain Management) শিখা শুরু করলাম, আমার বিশ্লেষণী শক্তিও বাড়তে শুরু করল, আমি নতুন কিছু দৃষ্টিভঙ্গি পেলাম তার জন্য। আর যখন CSCA™(Certified Supply Chain Analyst) অর্জন করলাম তখন থেকে তা আরও প্রগাঢ়তা পেল।
আমি আমার বন্ধুকে বলছিলাম যে আমি ক্ষমতা পেলে সবার আগে ভারতীয় সব চ্যানেল বন্ধ করতাম, কারণ ১. আমাদের সমাজটা শেষ হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে, যা আমরা টের পাচ্ছি না।
২. আমরা হাজার হাজার কোটি টাকা অর্জন হতে নিজেদের বঞ্চিত করছি।
আমার বন্ধু দুইটা কথার ১টাতেও কর্ণপাত করল না।
আমি বললাম: যে হারে আমরা ভারতীয় সিরিয়াল দেখি, আমরা ছেলেরা যদি টিভির সামনে বসি তবে বাধ্য হই বসতে, আর মেয়েদের ৯০%ইতো বলতে গেলে ভারতীয় সিরিয়ালের প্রেমে পাগল।
এর ফল কি?
সিরিয়াল আমরা কখন দেখি?
বিনোদনের সময়। এই সময়টায় আমরা সাধারণত ভাবনা চিন্তা করি না। মজা নিতেই ব্যস্ত থাকি। কিন্তু এর রেশটা যে কি পরিমাণ পরিব্যাপ্ত তা আমরা ভেবেও দেখি না।
সিরিয়ালগুলোতে মূলত কি দেখায়? কোন একটা ঘটনা, একটা সমস্যা। তাই নয় কিঁ?
কিন্তু সমস্যাগুলো কেমন? আপনার আমার জীবনের সাথে মিলে?
নাকি এখন মিলে যার কল্পনা আপনি আগে করতেন না।
আমাদের অবচেতন মন বলে কিছু একটা আছে, মনোবিজ্ঞানীরা বলেন যে, আপনার অবচেতন মনে যা থাকবে তা কোন না কোন ভাবে কোন না কোন একদিন প্রকাশ পাবেই। এর ব্যত্যয় হয় না। এ ঘটন প্রক্রিয়াকে স্বয়ংউপদেশ বা Autosuggestion ও বলা হয়।
আপনি সিরিয়ালে দেখছেন পরকীয়া, ঝগড়া, মনোমালিন্য, কূটনামি, চোগলখরিতা, খারাপ ও ঝামেলার লোকগুলোকে পুরো সিরিয়াল জুড়ে দাপটে চলতে, হয়ত শেষ দৃশ্যটা খানিকটা ভিন্ন, কিন্তু ৯৯% সময়ই সে খলনায়ক হয়েও নায়কের মতই দাপিয়ে বেড়ায়। খলনায়িকা হয়েও পুরোটা সময়ই নায়িকার থেকেও ফোকাসে থাকে, এসবের মানে কি?
সে কি আপনার অচেতনেই আপনার অচেতন মনে জায়গা করে নিচ্ছে না?
মানবের আদি প্রবৃত্তি হল নেতিবাচকতার লালন পালন, যার জন্য আমরা নাটক সিনেমায় একশন দেখে উল্লসিত হই, উৎফুল্ল হই। এখানেই ঠিক একই বিষয় ঘটছে আপনার অগোচরে। আপনি টেরও পাচ্ছেন না। ঠিক একইভাবে ঐ পরকীয়া, ঝগড়া, মনোমালিন্য, কূটনামি, চোগলখরিতা, খারাপ ও ঝামেলা কপি হয়ে চলে আসছে আমাদের জীবনেও।
টিভি বন্ধ করার পর তা নিয়ে আর কথা হবার কথা না, আপনার মনেও আসার কথা না, কিন্তু সেটা হচ্ছে কি?
আমাদের অনেকেরই খোশগল্পের টপিকই হয় অমুক সিরিয়ালে পরে কি হবে, অমুক সিরিয়ালে ওমন সাজ দিছে, চুলের স্টাইলটা অমন করছে, সেটা কই গেলে করা যাবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।
এসবই ঘটা অতি স্বাভাবিক এবং এসবের নেতিবাচকতা আমরা সমাজে দেখতে পাব না পারছি।
------------------- এই কথাগুলো আমি আমার বন্ধুকে বলছিলাম মাস খানেক আগেই। তখন সে পাত্তাই দেয়নি, কিন্তু যখন “পাখি” ড্রেস নিয়ে তালাক, আত্মহত্যা হল তখন সবার আগে আমার বন্ধু আমাকেই ফোন দিয়ে বলে যে আমার কথাগুলা এত তাড়াতাড়ি ফলে যাবে তা সে ভাবতেও পারেনি।
কিভাবে নিছক বিনোদন পুরো মানুষের জীবন, ভাব, ভাবনা, অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করল সেটায় সে অভিভূত।
আপনাদের কি মনে হয় না আমাদের সব পদক্ষেপগুলো একবার দীর্ঘমেয়াদের ভিত্তিতে ভেবে দেখার?
কার্টুন কি আদৌ বাচ্চাদের খোরাক হবার যোগ্য? এতে কি মেধা বাড়ে?
ডোরেমন দেখে দেখে তারা এটাই বিশ্বাস করে তারও একটা ডোরেমন থাকলে তার সব সমস্যাই সমাধান হয়ে যেত। তার ডোরেমনও নাই সমস্যারও সমাধান হবে না।
নবিতা একটা অকৃতকার্য, ফাঁকিবাজ বালক, অসফল বালক। তাকে দেখে দেখে বাচ্চাও তাই হচ্ছে।
ঐটুকুন পিচ্চি বয়সে সেওও সুজুকা পেতে চায়, প্রেমিকা চায়। আপনাদের কি ব্যাপারগুলো অস্বাভাবিক ও সমাজকে তিলে তিলে ধ্বংস করার ফন্দির আভাস দেয় না?
হুমায়ুন আহমেদ, জাফর স্যার ও প্রমুখেরা কি কার্টুন দেখতেন? তাদের সময়ওতো কার্টুন ছিল, চাচা চৌধুরী ছিল, কই তারা তো এসবের কথা বলেন না। তারা গঠনমূলক, উঁচুমানের বইয়ের কথা বলেন যা তাদেরকে “তাঁরা” বানিয়েছে।
আপনারাই ভাবুন কি করছেন, কি করা দরকার। পুরোটা ভেবে কাজ করলে সমস্যা নিজেই একটা সমাধান হয়ে যায়; নয়তো সমাধানই হাজারটা সমস্যার সৃষ্টিতে পরিব্যাপ্ত হয়।
Sazzad Hossain, CSCA™
MBA (DU)
©somewhere in net ltd.