নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখাটার শুরুতেই একটা কথা বলতে হয়, এটা একটি বিশ্লেষণধর্মী লিখা, পুরো ব্যাপারটার থিমে মন দিন, সামগ্রীকভাবে বিশ্লেষণ করে লিখা, কোন ব্যক্তিগত আঘাত বা আক্রমণের জন্য লিখা নয়।
লিখাটি পড়ার জন্য আগাম ধন্যবাদ সম্মানিত পাঠককে।
শুরুতেই কয়েকটা কথার সংজ্ঞা স্পষ্ট করে নেই: সমান অধিকার, জেন্ডার বৈষম্য।
সমান অধিকার: সমান অধিকার বলতে আমরা সম বা সমপরিমাণ অধিকারকেই বুঝি। অর্থাৎ সবাই সমান পরিমাণ সুবিধা, সুযোগ, অধিকার, দায়িত্ব ভোগ করবে। সমপরিমাণ অংশগ্রহণ থাকবে। নারী পুরুষের সমঅধিকার নিয়ে আমার কথা, এর মানে হয় যে উভয়েই সমপরিমাণ সুবিধা, সুযোগ, অধিকারভোগ করবে পাবে। কেউ বেশি কেউ কম পাবে না, ফোকাসটাও সমানই পাবে। অন্যথায় সেটা সমঅধিকার হল না।
জেন্ডার বৈষম্য: Gender Difference বা লিঙ্গ বা জেন্ডার বৈষম্য বলতে বোঝানো হয় নারী পুরুষের প্রতি অসম আচরণ। এটার সাথে সমঅধিকারের একটা দারুণ আন্ত:সম্পর্ক বিদ্যমান। যেথায় সমঅধিকার দেয়া হয় সেথায় উভয়কে একই ধরনের সুবিধা দেয়া হয় যা জেন্ডার বৈষম্য রাখে না। জেন্ডার সমতা রক্ষিত হয়। যেখানে নারী পুরুষ আলাদা অর্থাৎ একজন বেশি অন্যজন তুলনামূলকভাবে কম সুবিধা পায় সেথায় জেন্ডার বৈষম্য বিরাজ করে।
এবার আসা যাক আসল কথায়। একটা কথা বলে রাখা ভাল: যিনি আমার উপর্যুক্ত সংজ্ঞার সাথে দ্বিমত তিনি আমার বাকী লিখার সাথে অবশ্যই দ্বিমত হবেন। সুতরাং আপনি আপনার মত দেবার আগে আপনার সংজ্ঞাটি দিয়ে মতামত দেবেন, নয়তো ধরে নেব আপনি আমার সংজ্ঞাটি মেনে নিয়েছেন।
আজ ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৩। আজ ও গতকাল দুটো জাতীয় পরীক্ষার ফল প্রকাশ হল। এর আগেও এসএসসি আর এইচএসসি দুটোর ফলও প্রকাশিত হয়েছে। ফলপ্রকাশের চিত্র খবরের কাগজ, নিউজ চ্যানেলে দেখলে বোঝাই যায় যে দেশে কোন ছেলে পরীক্ষা দেয়নি; বাংলাদেশে হয়তো ছেলের অনেক অভাব। দেশে শুধু মেয়ে আর মেয়ে; ঠিক সমুদ্রের পানির মতন; সমুদ্রে শুধু পানি আর পানি। স্থলভাগ খুবই কম, মানে দ্বীপ।
আমাদের দেশে বলা হয় যে নারীরা অনেক নির্যাতিত, নিপীড়িত, অবহেলিত। তাই তাদের “বিশেষ” সুবিধা দেয়া হয়; যেমন- মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষা, চাকরি পাবার জন্য কম শিক্ষাগত যোগ্যতার অনুমোদন, কোটা, আরও অনেক কিছু।
এসবে কিন্তু সম অধিকারকে গলাটিপে হত্যা করা হল। আপনি একটা মেয়েকে স্বাবলম্বী হবার জন্য যে সুবিধা দিলেন, সেটা একটা ছেলেকে দিলেন না। কেন? কোন উত্তর নেই। কিন্তু কেন? আগে মেয়ে জন্মানো পাপছিল আর এখন ছেলে হয়ে জন্মানোটা?
একটা মেয়েকে আপনি দেশের অর্থনীতিতে অবদানে সাহায্য করবেন, কিন্তু একটা ছেলেকে সে সাহায্য দিচ্ছেন না, এতে করে কি দেশ অনেক এগিয়ে যাচ্ছে?
সমঅধিকার কিভাবে হল? একজন বেশিসুবিধা পেল অর্থাৎ মেয়েরা, সেখানে ছেলেরা পেল না। এটা কি ঠিক হল?
এর পরিণাম কি হতে পার? কি আর; কয়েকদিন পরে দেখা যাবে সম মেয়েরা অফিসে কাজ করছে আর অধিক খরচের ভয়ে ছেলেরা ঘরে বসে আছে। অবশ্য ব্যাপারটা জোসই, কারণ মেয়েরা, বউয়েরা কাজ করবে, আর জামাই, ছেলেরা বসে বসে খাবে। এর ফলটাকি অতি সুখের? কেউ কি ভেবে দেখেছে?
জেন্ডার বৈষম্যদূর করতে যেয়ে কি আরও গাঢ় বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে না?
কোথাও কোন অনুষ্ঠান থাকলে সেখানে মেয়েদেরই বেশি ফোকাস করা হয়, কিন্তু কেন? বেশি লোকে দেখবে বলে? যদি তাই হয়, সেটা কিভাবে জেন্ডার বৈষম্যদূরীকরণের সাথে যায়? কেউ কিন্তু ব্যাপারটা নিয়ে কোন কথাই বলে না।
কিছু কিছু ক্ষেত্রবাদে আর বাকীগুলোয় যেভাবে মেয়েদের ফোকাস করা হয় সেটা কি তাদের সম্মান, সমঅধিকারে কুড়াল মারে না? ফিল্মে নায়কের থেকে কিন্তু নায়িকার সংখ্যা বেশি। আর নায়িকাদের ঝড়ে যাবার হারটা আরও বেশি। এটা কি তাদেরকে যে মানুষ ভিন্ন অন্যকিছু বলে গণ্য করা হয়, সেটার একটা স্পষ্ট প্রমাণ।
একটা পরিবারে ধরুন শহরেই; কারণ এখানে শিক্ষার হার বেশি, তাই এক ধরনের পরিবেশ বিরাজ করে যেথায় লোকেরা আমার আলোচ্য বিষয়ে সচেতন; সে পরিবারে ১টা মেয়ে আর ১টা ছেলে। সুখী পরিবার বটে। কিন্তু আদর, কোন আবদার পূরণ –এসব ব্যাপারে মেয়েটার চাহিদাগুলো আগে পূরণ করা হয়। এমনটাই বেশি দেখা যায়। কিন্তু কেন এমনটা হয়?
এসের উত্তরে অনেকেই সেন্টিমেন্টাল হবেন; কিন্তু আবেগকে বাদ দিয়ে বিবেক ও যৌক্তিকভাবে ভেবে দেখুনতো ব্যাপারগুলো আসলে কি হচ্ছে?
আমরা বলছি এক, ভাবছি আরেক, আর করছি আরেক। এটা কি কোন যৌক্তিক কাজ হল? অন্তত বুদ্ধিমান করাও কাজ বলা চলে না।
আরও অনেক অনেক বিষয় আছে যা টানলে শেষ হবে না, শেষে একটা কথাই বলতে চাই, জেন্ডার বৈষম্যদূরীকরণ মানে কি মেয়েদের অতিরিক্ত সুবিধা দেয়া, আর ছেলেদেরকে টেকনিক্যালি পিছিয়ে রাখা? সমঅধিকার মানে কি মেয়েদেরকে ফোকাসে এনে বেশি সুবিধা দেয়া? এখনের বাংলাদেশে কিন্তু আমরা এমনটাই দেখছি যা অতীব দুখ:জনক।
________________________
সাজ্জাদ হোসেন
৩০ ডিসেম্বর, ২০১৩
সন্ধ্যা ৬:৫৪
©somewhere in net ltd.