নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সায়েমা খাতুনঃ নৃবিজ্ঞানী, এথনোগ্রাফার এবং গল্পকার

সায়েমার ব্লগ

সায়েমা খাতুনঃ নৃবিজ্ঞানী, গবেষক ও লেখক

সায়েমার ব্লগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাইবেল স্টাডি গ্রুপ ঠিক আছে! কোরআন স্টাডি ঠিক নাই!

০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪৪

প্র্যাকটিসিং বাঙ্গালী মুসলিম পরিবারের রেওয়াজমাফিক বারো বছর বয়েসে আমার কোরআন খতম করানো হয়েছে।কোন কিছুই না জেনে কেবল তেলওয়াত শেখানো হয়েছিলো সে সময়।পবিত্র কোরআনের বাংলা এবং ইংরেজি অনুবাদ পড়েছি প্রাপ্ত বয়েসে।মহাভারত, রামায়ণ এবং গীতার বিভিন্ন ভার্সন নিজের কৌতূহল ও আগ্রহে পড়েছি।পশ্চিমা সমাজের আত্মাকে জানা বোঝার জন্যে বাইবেলও বাদ যায় নাই।আমেরিকা আসবার পর বিভিন্ন হোটেল-মোটেলগুলোতে বেড-সাইড টেবিলের ড্রয়ারে বাইবেল রাখা দেখে অবাক হতাম।এখানে আসবার আগে আমার ধারনা ছিল, আমেরিকার মানুষেরা ধর্মকর্ম বিবর্জিত অথবা কমপক্ষে উদাসীন।হোটেলের প্রত্যেক রুমে বাইবেল রাখার জন্যে কত হাজার-লক্ষ বাইবেল কেনা-বেচা-সংগ্রহ করা হয়, সে হিসাব বলতে পারব না।একবার একটা হোটেলের টেবিলের ড্রয়ারে গীতা দেখে অবাক হলাম, পরে লক্ষ্য করলাম যে হোটেলটির ম্যানেজমেন্ট ভারতীয়।নেইবারহুডের এখানে ওখানে বাইবেল স্টাডি সার্কেল/বুক ক্লাব/স্টাডি গ্রুপ আমারিকান সংস্কৃতির একটা স্বাভাবিক প্রকাশ।অনেক টিভি সিরিয়াল, গল্প-উপন্যাসেও মা-গ্র্যান্ডমাদের বাইবেল স্টাডি গ্রুপ নিয়ে অনেক গল্প-হাসি-তামাশা-নাটকীয়তা চিত্রায়িত হয়।এখানে এমন কোন শহর আমি দেখি নি যেখানে কোন গির্জা নাই। দুনিয়ার বুকে ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের অগ্রণী মার্কিন দেশের প্রেসিডেন্ট বাইবেলে হাত রেখেই শপথ বাক্য পাঠ করেন।ডলারের উপর লেখা থাকে "ইন গড ইউ ট্রাস্ট"। ওল্ড টেস্টামেন্টে কি লেখা হয়েছে, আমেরিকান কংগ্রেসের বিতর্কে "চোজেন পিপল" এর সেই মিথলজির রেফারেন্স দিয়েই ইসরাইলের প্যালেস্টাইন দখলের অধিকারের বৈধতা দেয়া হচ্ছে।

এমতাবস্থায়, বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠীদের কাণ্ড-কারখানা দেখে হাসব, না কাঁদবো ঠিক বুঝি না।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরআন স্টাডি গ্রুপ/সার্কেলের অনুষ্ঠানে উপাচার্য কেন বক্তৃতা করলেন, কোরআন বিতরণে অংশ নিলেন, সেটা তাঁদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। মুলুবি-হুজুরদের কাছ থেকে কোরআনের ব্যাখ্যা গ্রহণের ট্র্যাডিশনের ফলে নীতি-নৈতিকতা-মূল্যবোধের কর্তৃত্ব যুগ যুগ ধরে জনমানুষের পরিবর্তে বিশেষ একটা গোষ্ঠীর কুক্ষিগত রয়ে গেছে।জনসাধারণ নিজে নিজে পড়ে জানাবোঝা তৈরি করলে কি সেই গোষ্ঠীর কর্তৃত্ব থাকবে? ধর্ম নিয়ে আর রাজনীতি করা যাবে?

ভুলে যাবেন না, এক সময় নারীদের জন্যে বেদ পাঠ নিষিদ্ধ ছিল।কোরআন পাঠ নিষিদ্ধ নয়, কিন্তু নিরুৎসাহিত।পবিত্র কোরআন নিয়ে মার্কিন ইসলামিক স্কলার আমেনা ওয়াদুদসহ বহু প্র্যাকটিসিং মুসলমান নারী পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে পবিত্র কোরআনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ-তাফসীরের ট্র্যাডিশনকে কয়েক দশক ধরে চ্যালেঞ্জ করছেন।পবিত্র কুরআন ঐশী, কিন্তু তাফসীর মানব-সৃষ্ট, ফলে ব্যাখ্যার বহুত্ব সম্ভব এবং মানবিক ভুলভ্রান্তি ও দুর্বলতার সম্ভাবনাপূর্ণ।কিভাবে কুরআনের মর্মবাণী পুংব্যাখ্যার শিকার হয়ে আল্লাহ্‌ সামনে বান্দাদের মধ্যকার সাম্য ও ইনসাফের স্পিরিট থেকে অনেক সময় সরে যেতে পারে, আমেনা ওয়াদুদ বহু বছরের কোরআন পাঠের আলোকে সেসব গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন।এর আরও পরে আয়শা হেদায়াতুল্লাহ লিখেছেন "ফেমিনিষ্ট এজেস অফ কুরআন", যেখানে কোরআনিক পরিসরে নারীদের সাবজেক্টিভিটি নিয়ে আলাপ তোলেন।কুরআন পাঠ না করে, এই জরুরী আলাপগুলো গড়ে তোলা কিভাবে সম্ভব হবে? দেশের মোল্লা-মুলুবীরা ইসলামের অনুশাসন বলে যুগ যুগ ধরে যে সব পুং-ব্যাখ্যাগুলো হরদম কোরআনের উৎস থেকে আগত বলে চালিয়ে দিচ্ছে, সেসব চ্যালেঞ্জ করাই বা কিভাবে সম্ভব হবে? না-জানা কিভাবে জানার চাইতে কাজের হবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকুলার জ্ঞানকাণ্ডের লেন্স থেকেও এই বিপুল-বিরাট ইতিহাস-সংস্কৃতি-দর্শনের কোরআনিক জ্ঞানভাণ্ডারকে জানা-বোঝায় অসুবিধা বা আপত্তি ঠিক বোধগম্য নয়।উইস্কন্সিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বার সময়, 'পলিটিক্স অব হিউম্যান রাইটস' নামে একটা কোর্সে মানবাধিকারের মূল উৎসগুলোর আলোচনায় বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের রেফারেন্সে কোরআনের অংশবিশেষ সিলেবাসে ছিল। একজন ইহুদী অধ্যাপক সেটা পড়িয়েছিলেন।বাইবেল-উৎসারিত নীতিনৈতিকতা, জীবনবোধ ইউরোপীয় ধর্ম-সংস্কার আন্দোলনের ছাঁকুনী দিয়ে ছেঁকে ঔপনিবেশিকতা ও পুঁজিবাদের অনুকূলে "ধর্ম-নিরপেক্ষ" বাতাবরণে আধুনিক সেকুলার শিক্ষায় আত্মীকরন করা হয়েছে।সেসব জ্ঞানকাণ্ডই সবচাইতে কঠিনভাবে কলোনিয়াল মাইন্ড-সেট তৈরি করে রেখেছে।এই সবকিছু আনলারন করতে বিপুল বুদ্ধিবৃত্তিক সাহসের প্রয়োজন!

শুক্রবার, নভেম্বর ৮, ২০২৪
উইস্কন্সিন



মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০৭

কামাল১৮ বলেছেন: কোরানের বড় সমস্যা হলো কোন ধারাবাহিকতা নাই।

২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১

আহরণ বলেছেন: যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, (নারী) ইয়াতীমদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে নারীদের মধ্য হতে নিজেদের পছন্দমত দুই-দুই, তিন-তিন ও চার-চার জনকে বিবাহ কর, কিন্তু যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, তোমরা সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে কিংবা তোমাদের অধীনস্থ দাসীকে; এটাই হবে অবিচার না করার কাছাকাছি। তাইসিরুল

৩| ০৯ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১২

আহরণ বলেছেন: কোরআন ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক বই। কোরআন মানুষে-মানুষে বিভেদ তৈরি করে, অমুসলিমদের ঘৃণা করতে শিক্ষা দেয়। কোরআন প্রচন্ড নারী বিদ্বেষী। কোরআনের দৃষ্টিতে নারী মানেই যৌন যৌনদাসী। হাদিসের কথা বাদ দিলাম, আরো বাজে।

সূরা ৯:২৯ : "যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা আল্লাহতে বিশ্বাস করে না ও পরকালেও নয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা নিষিদ্ধ করেছেন, তা নিষিদ্ধ মনে করে না এবং সত্য ধর্ম অনুসরণ করে না, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর; যে পর্যন্ত না তারা নত হয়ে করজোড়ে জিযিয়া আদায় করে"

সূরা ২৩:৫/৬- যারা নিজেদের যৌনাংগকে সংযত রাখে। নিজেদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসীগণ ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবেনা।

সূরা ৪:৩- যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, (নারী) ইয়াতীমদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে নারীদের মধ্য হতে নিজেদের পছন্দমত দুই-দুই, তিন-তিন ও চার-চার জনকে বিবাহ কর, কিন্তু যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, তোমরা সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে কিংবা তোমাদের অধীনস্থ দাসীকে; এটাই হবে অবিচার না করার কাছাকাছি।

মাত্র কয়েকটি উদাহরণ দেয়া হল, @ ভাইয়া?

৪| ০৯ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪০

Ruhin বলেছেন: বাংলাদেশে নিয়ে আর কি বলবেন? বাংলাদেশ থেকে ইউরোপীয় কালচার আরব, মধ্যপ্রাচ্যের দেশে বেশি। ১০৪০-৮০ দশকে তো ইরান, ইরাক,মিশর, সিরিয়া সম্পূর্ণ পশ্চিমা কালচারের ছিল ।

৫| ০৯ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৩

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:


পাক কোরআন মজিদ বড়ই আচানক একখানা কিতাব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.