নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])
খান একাডেমিতে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ছিল গতকাল। আজকে তার ফলাফল দেওয়ার কথা। পরীক্ষা তেমন ভালো হয়নি, তাই শান চিন্তিত ছিল। গিয়ে জানা গেল, চাকরিটা তার হয়নি।
শাহিন স্কুলে গতবার তাকে নির্বাচন করা হয়েছিল, ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে যোগদান করা হয়নি। আজকে গেলে কেমন হয়? যদি চাকরিটা হয়ে যায়? স্কুলের প্রধান সুজন স্যার তাকে চিনতেই পারলেন না; বললেন, আবার পরীক্ষা দিন।
পরীক্ষা মোটামুটি ভালো হয়েছে। ডাক আসার কথা। কিন্তু এলো না। কয়েকদিন কেটে গেল।
উল্কা সিনেমা হলের সামনে রাস্তার পশ্চিম পাশে যে ভবনটা, সেখানে একটা কোম্পানিতে নিয়োগ চলছিল। কোম্পানির নাম বেস্ট (BEST) লাইফ ইনসিওরেন্স। খান একাডেমিতে জীবনবৃত্তান্ত দেওয়ার আগে সেখানে গিয়েছিল শান। সবকিছু মোটামুটি চূড়ান্ত করে এসেছিল। কিন্তু পরে ভেবেচিন্তে দেখল সেখানে ভালো লাগছে না। তাই খান একাডেমিতেই যোগদান করতে মনস্থির করেছিল। সেখানে যে হবে না, কে জানত।
২
কালবার্টের ওপরে বসেছিল অনেকক্ষণ। মন ভালো ছিল না। কিছু না কিছু করতে হবে, তা না হলে চলবে কী করে? যা সঞ্চয় ছিল, গতমাসেই শেষ। গতমাসেই গাজীপুরে এসেছে সে। বর্তমান মাসের মেস ভাড়া, খাবার বিল, বুয়ার টাকা এবং আনুষঙ্গিক আরও খরচ দিতে হবে। কোথা থেকে আসবে এত টাকা? জনৈক বন্ধু রিফাতের কাছে কিছু টাকা পাওনা আছে। পুরোনো ল্যাপটপটা বিক্রির ব্যবস্থা করে দিয়েছিল সে। তার নিজেরই অর্থসংকট ছিল। তাই টাকাটা সে-ই খরচ করেছে। প্রয়োজনে শানকে দেওয়ার কথা। মাঝেমাঝে দিচ্ছেও। সে-ই সমর্থনেই ঠেলেঠুলে চলছে দিন। কিন্তু মুশকিল হলো, রিফাতের নিজেরই এখন রীতিমতো দুর্দিন চলছে। দিতে পারছে না।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটা চোখে পড়ল। আল আরাফাহ প্রাইভেট কোম্পানি, সান ফ্লাওয়ার গ্রুপের প্রকল্প। নিচে নম্বর দেওয়া। ফোন দিল শান। প্রথমবার কেউ ধরল না, দ্বিতীয়বার ধরল। ওপাশ থেকে জিজ্ঞেস করলো, “কে বলছেন?”
“আমি শান।”
“শান, বলুন। আমি রেজা।”
“একটা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখলাম।”
“হ্যাঁ, কিছু লোক নিয়োগ চলছে। কাগজপত্র সাথে আছে?”
“জি। আপনাদের কোম্পানিটা কোথায়?”
“বিকেল তিনটায় চৌরাস্তা এসে ফোন দেবেন।”
“ঠিক আছে।”
৩
চৌরাস্তা গিয়ে ফোন দিল শান, “আমি বাসস্ট্যান্ডের পাশেই দাঁড়িয়ে আছি।”
“অনুপম মার্কেটের দোতলায় আসুন। একটা মোবাইল কিনতে এসেছিলাম। আপনাকে নিয়ে অফিসে যাব।”
রেজাকে খুঁজে পেতে বেশ ঝামেলাই হলো। বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের ঢাকার দিকে অনেকটাই চলে গিয়েছিল শান। আবার ফোন দিয়ে মার্কেটের নাম জেনে লোকজনকে জিজ্ঞেস করতে করতে অনুপম মার্কেটের দোতলায় এলো। মজার ব্যাপার, এ মার্কেটের নিচে থেকেই সে প্রথমে ফোন দিয়েছিল। পণ্ডশ্রম! পথঘাট না চেনা থাকলে যা হয় আর কী!
“এত সময় লাগল,” মোবাইল চাপতে চাপতে রেজা বললেন, “চলুন, অফিসে যাই।”
ট্রাফিক মোড়ে যেতেই জনৈকা স্ত্রীলোকের সঙ্গে দেখা। “ইনি আমাদের ম্যাডাম, নূরজাহান”, রেজা বললেন, “ওনার সঙ্গে যান।”
শান পিছু পিছু চলল। দু’মিনিট হাঁটার পর হাতের ডানপাশের এক হোটেলের পাশের এক ভবনের পাঁচতলায় উঠতে লাগল তারা। শানের বুকটা ঢিপঢিপ করছিল। কারণ, গতকালই বিদঘুটে একটা খবর পড়েছে সে। ‘শহরে সুন্দরীদের ফাঁদ’ শিরোনামের খবরে লেখা ছিলো: সিনেমা হলের সামনে থেকে এক যুবককে ভুলিয়ে-ভালিয়ে একটা বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর জোরপূর্বক তার কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নেওয়া হয়। বাড়িতে ফোন দিয়ে বিকাশের মাধ্যমে মুক্তিপণও চাওয়া হয়। টাকা পাওয়ার পর বলা হয়, ঠিকানা চিনিয়ে দিলে নির্মমভাবে হত্যা করা হবে। ঐ লোক মুক্তিপণ দিয়ে বের হয়ে সরাসরি থানায় যোগাযোগ করে। পুলিশ তৎক্ষণাৎ গিয়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে।
৪
তেমন কিছু হলো না। সাদামাটা একটা অফিস। কিছু খালি চেয়ার আর টেবিল। একপাশে অ্যাকাউন্টসে এক স্ত্রীলোক বসে আছেন। কিছুক্ষণ কথা হলো নূরজাহানের সাথে; এরমধ্যে রেজা চলে এসেছেন। তার কাছে কাগজপত্র জমা দিল শান। কোম্পানির কিছু নীতিমালা শোনালেন রেজা। পরদিন আবার যেতে বলেন, সাথে কিছু টাকা নিয়ে যেতে বলা হলো আইডি কার্ড বানানো বাবদ। তারপর তিন দিন প্রশিক্ষণ হবে।
পরদিন বিকেল ৩ টার দিকে অফিসে গেল শান। রেজা অফিসে ছিলেন না, নূরজাহান ছিলেন। টাকা জমা দেওয়ার পর একটা রসিদ এনে দেওয়া হলো। নূরজাহান জিজ্ঞেস করলেন, সাথে কোনো ডায়েরি আছে কি না। শান জানাল নেই। রেজার সাথে ফোনে কথা হলো, তিনি পরদিন ডায়েরি-কলম নিয়ে আসতে বললেন।
পরদিনও রেজা এলেন না। নূরজাহান এলেন ঘণ্টাখানেক পর। কোম্পানির সম্পর্কে কিছু বিবরণ দিলেন। পরদিন আবার যেতে বললেন। রেজা একজনকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন। শানকে কিছুক্ষণ বসতে বললেন। শান বসে বসে গতকালের লেখাটুকুতে চোখ বোলাচ্ছিল। রেজা ডাকলেন। কিছুক্ষণ প্রশিক্ষণ দিলেন।
৫
পরদিন আরেকজন অফিসার এলেন। নাম সোহেল। নতুনদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেবেন। কিছু প্রশ্ন করা হলো শানকে। ঠিকঠাক উত্তর দিল সে। এবার বলা হলো, বিমা হিসেব খুলতে হবে। এককালীন কিস্তিও দিতে হবে।
শান বিলক্ষণ বুঝতে পারল কোথাও গড়মিল আছে। সে তার অক্ষমতার কথা জানাল। কিছুতে বোঝানো গেল না। অন্তত অর্ধেক পরিশোধ করতেই হবে। তাকে অভয় দেওয়া হলো, সপ্তাহের মধ্যেই ইনসেনটিভস পাওয়া যাবে।
পরদিন ফোনের আশায় বসেছিল শান, কিন্তু ফোন এলো না। সে নিজেই বারোটার দিকে রেজাকে ফোন দিল। রেজা বললেন, “লাঞ্চের পর ফোন দেবেন।”
লাঞ্চ পেরোনোর পরও কোনো ফোন নেই। রেজাকে আবার ফোন দেওয়া হলো; বললেন, বিকেলে ফোন দেবেন। ফোন এলো না। সারা রাত নির্ঘুম কাটল শানের।
সকালে আবার ফোন দিল শান। রেজা বললেন, অডিটে গিয়েছিলেন, তাই রাত হয়ে যায় আর ফোন দেওয়া হয়নি। সোহেলের নাম্বার আছে কি না জানতে চাইলেন। শান জানাল যে নেই। “এক্ষুণি এসএমএস করে দিচ্ছি,” বলে ফোন রেখে দিলেন রেজা। তারপর ফোন বন্ধ।
শান সিদ্ধান্ত নিল অফিসে যাবে। নানান কথা ভাবতে ভাবতে অফিস অভিমুখে হাঁটতে লাগল। এ সমস্যার কি সমাধান হবে?
৬
গিয়ে দেখল অফিসে কেউ নেই। দশ-বারো বছরের একটা বালক বসে আছে। শান জিজ্ঞেস করল, “কেউ আসবে না?”
“না। কার কাছে এসেছেন?”
“রেজা সাহেবের কাছে।”
এরপর ছেলেটা যা জানাল শুনে শান মুষড়ে পড়ল। অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মেরে দিয়েছে এরা। ছেলেটা বলল, “আর টাকা দেবেন না। গতকালও এদের মারার জন্য একজন লোক নিয়ে এসেছিল।”
শান চেয়ারে বসে পড়ল। বেস্ট (BEST) এর চাকরিটাও হাতছাড়া হয়ে গেল। ওরা নিশ্চয়ই তার জন্য অপেক্ষা করবে না। কাউকে না কাউকে নিয়ে নেবে। একূল-ওকূল দু’কূলই হারাল শান। তার চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। অবস্থা বুঝতে পেরে ছেলেটা বলল, “বসকে ফোন দেন।” নাম্বারটা সে-ই বলল। শান ফোন দিল। কিন্তু কেউ ফোন ধরে না।
ছবিঃ গুগল
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:১৩
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: নীতিনৈতিকতা সব বিসর্জিত। ফাঁদ হিসেবে ধর্মও ব্যবহৃত হচ্ছে।
২| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:১৮
ধ্রুবক আলো বলেছেন: এরকম অনেক ঘটনাই ঘটছে কিন্তু কোনো সচেতনতা নেই। একজন বেকার মানুষ চাকরির জন্য হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ায়, যেখানে পারে সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বেকারত্ব ঘুমানোর জন্য।
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:২৮
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: মানুষরুপী কিছু অমানুষ এদের জীবনকে পর্যুদস্ত করে তোলে।
৩| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৩১
প্রামানিক বলেছেন: এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে। ধন্যবাদ বাস্তবতার নিরিখে কাহিনী তুলে ধরায়।
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৪১
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কারও কারও সরলতার সুযোগে কিছু লোক ব্যবসা করছে।
৪| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৩৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
শেখ হাসিনা যে কিভাবে টিকে আছেন, সেটা উনিও জানেন না; নাইজেরিয়ার মত চলছে দেশ।
০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৪৩
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন:
৫| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:২৩
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আসলে বোধহয় দুদিকে পা দেয়াই ঠিক হয় নি।।
আর এমন ঠকানো হচ্ছে কিন্তু দিনে-দুপুরেই।। প্রতিকার আছে কি??
০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৩৫
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আসলে দুঃসময়ে মাথা ঠিকমতো কাজ করে না!
৬| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৩৭
অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: সুযোগসন্ধানী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৩৯
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: বিপদ।
৭| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:১১
রাজীব নুর বলেছেন: দুঃখজনক।
০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৫৩
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: তবুও চলছে জীবন জীবনের নিয়মে।
৮| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:১৩
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: এদের হাতে বেকার যুবকরা হর হামেশাই প্রতারিত হচ্ছে, দেখার কেউ নেই।
০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৮
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: সবকিছু প্রতারকদের দখলে চলে যাচ্ছে। দেখেও প্রতিবাদ করার কেউ নেই। গা সওয়া হয়ে যাচ্ছে।
৯| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:০৫
নতুন নকিব বলেছেন:
বেকার যুবকদের জীবনকে পুঁজি করে তেলে ভাতে খায় এক শ্রেনির প্রতারক। এদেশে এরা সংখ্যায় অনেক। এদের শায়েস্তা করার এখানে কাউকে দেখা যায় না। অদূর ভবিষ্যতে থাকবে কি না তাও জানি না। কালে ভদ্রে দু'য়েকটি ঘটনা অবশ্য ব্যতিক্রম।
আমরা কি দিনকে দিন আপাদমস্তক দুর্নীতির কালোছায়ায় ঢেকে থাকা জাতিতে পরিনত হচ্ছি? মানবিক মূল্যবোধ কোথায় যাচ্ছে আমাদের?
ধন্যবাদ, দাদা। আমার ব্লগে আপনাকে ঘুরে আসতে দেখলাম।
০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০১
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: যারা শায়েস্তা করবে তারা নিজেরাই তো এহেন কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ছে। সর্ষের মধ্যেই ভূত! নীতিনৈতিকতা, মানবিকতা, মূল্যবোধ আজ যাদুঘরে ঠাঁই পেয়েছে।
১০| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:০৩
শামচুল হক বলেছেন: বর্তমান বাস্তবতাই বলা যায়।
০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৭:২৮
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: বাস্তবিকই।
১১| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:০৮
সুমন কর বলেছেন: এমন কিন্তু অনেক হচ্ছে.......বাস্তবতা মিশ্রিত গল্প ভাল লাগল।
০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৭:২৯
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: চাকরি-বাকরির সবক্ষেত্রেই প্রতারণা, দুর্নীতির মহাসমারোহ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:০০
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: এমনতো হচ্ছে অহরহ। কি আশ্চার্য দুনিয়ার মানুষ এতো নিচু হতে পারে?