নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

অভিশাপ

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:০৬


নারাঙ্গী বাজারে এসে যখন গাড়িটা থামল, তখন অনেক রাত্রি। অন্ধকারে পথঘাট ঠিক মতো দেখা যাচ্ছে না। মা শবনম বেগম আর তাঁর কিশোরী মেয়ে সুরাইয়া বেশ বিপদেই পড়ল। ঢাকা থেকে এসেছে তারা। কী এক ঝামেলায় পড়ে এত দেরি! তারা যাবে মরচী গ্রামে, সেটা এখান থেকে অনেকটা দূরে। বাজারে পরিচিত কোনো লোক থাকলে হয়তো সহযাত্রী হতো। কোথাও কোনো সাড়া শব্দ নেই। মা মেয়ের ভয় করতে লাগল।

কিশোরী মেয়েটা ভীত হয়ে বলল, “মা, এহন কী অইব?” মা আর কী বলবেন! তাঁর উত্তর জানা নেই। তাঁর সব ভয় মেয়েটাকে নিয়েই। মেয়েটা যুবতী। দেখতে বেশ সুন্দরী! যদি কারও কুনজরে পড়ে! এই অজ পাড়া গাঁয়ে, তা অস্বাভাবিক নয়। অহরহ এখানে দুর্ঘটনা ঘটে। তবু মনে সাহস রেখে বললেন, “ভয় করিস না। চল।” মা আর মেয়ে দক্ষিণের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগল। তাদের মনে আতঙ্ক। পথে কী জানি কী বিপদ হয়! কিছুদূর যাওয়ার পর একটা দু-তলা বাড়ি। সেখানে পিদিম জ্বলছিল। জুয়া খেলে কয়েকজন লোক রাস্তায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছিল। হঠাৎ দু’জন স্ত্রীলোককে আসতে দেখে একজন বলে উঠল, “এত রাইতে কই যাইন আপনেরা?”

মা শবনম বেগম চমকে দাঁড়ালেন। আতঙ্কিত হয়ে বললেন, “আমরা মরচী যামু।” লোকটার নাম খালেক। নিজের পরিচয় দিয়ে বলল, “এত রাইতে যাইতে পারতাইন না! ডাকাইতে ধরব!” বাস্তবিকই রাস্তাঘাট ভালো না। অহরহ ডাকাত পড়ে।
“আমরা কী করি, কইন তো! দুইডা মাইয়া মানুষ!” মহিলার কান্নার উপক্রম। খালেক বলল, “আপনেরা এই বাড়িতে থাইক্কা যাইন। ঘর খালি আছে। সকালে যাইয়েন।”

মেয়েটা ফিসফিস করে মাকে বলল, “লও এইহানে থাইক্কা যাই। কী আর অইব?” মহিলা কী যেন ভাবলেন। খালেক বলল, “ভয়ের কিছু নাই।”
“বাড়িতে নিশ্চয়ই কোনো মহিলা আছে। কী আর হবে।” মহিলা এই ভেবে রাজি হয়ে গেলেন। তিনি অনুধাবন করতে পারলেন না, কী পরিণতি অপেক্ষা করছে!

বাড়িতে কোনো স্ত্রী লোক নেই। এ ব্যাপারে খালেককে জিজ্ঞেস করলে সে বলল, “আমার বউ বাপের বাইত গেছে। আমরা বন্ধুরা আছি।” সে অদ্ভুতভাবে হাসল। মহিলা ভিমড়ি খেলেন। চুপচাপ বসে রইলেন, আর কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। তাদের রাতের খাবার দেওয়া হলো। মা-মেয়ে খেয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ল।

শেষ রাতের ঘটনা। জুয়া খেলায় হেরেছে খালেক। মদ খেয়ে পুরো মাতাল অবস্থায় সে। বন্ধুরা বিদায় নিয়েছে আজকের মতো। মা-মেয়ের দরজায় কড়া নাড়ল সে। মহিলা ভেতর থেকে বললেন, “কেডা?” খালেক নিজের নাম বলল। মহিলা কপাট খোলে বাইরে এলেন। খালেক কাপড় দিয়ে তার মুখ বেঁধে ফেলল, যাতে টুঁ শব্দটাও না করতে পারে। তারপর বারান্দায় মহিলাকে খুঁটির সাথে বেঁধে রাখল। কিশোরী মেয়েটা তখন ঘুমোচ্ছিল। খালেকের ধাক্কায় সে জেগে ওঠল। খালেক তাকে কিছু বলার সুযোগ দিল না। উলঙ্গ করে তার ওড়না দিয়ে নাক-মুখ বেঁধে ফেলল। শুধু চোখ দুটো খোলা রাখল। তার লোলুপ দৃষ্টি পড়ল কিশোরীর বুকের দিকে। সবে কৈশোরে পদার্পণ করেছে মেয়েটা। শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ এখনও ছোটো। কোনো পুরুষের স্পর্শ লাগেনি এখনও। খালেক পশুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল কিশোরীর ওপর। প্রথম কামড় বসাল তার স্তনের ওপর। স্তন কেটে রক্ত ঝরছিল। তারপর তার সারা শরীরে কুকুরের মতো কামড়াল। মাতালের অন্তরে বিন্দু পরিমাণ মায়াও উদয় হলো না। বাচ্চা মেয়েটাকে বর্বরের মতো ধর্ষণ করতে লাগল উন্মাদটা। যোনি ফেটে রক্তে নৈরাকার হয়ে গেল।

এভাবে একাধিকবার মেয়েটাকে ধর্ষণ করল খালেক সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত। তার বর্বরতায় প্রকৃতিও কেঁদে ওঠেছিল। রাতের শেষ প্রহরে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হয়।

সকাল হওয়ার একটু আগে মা-মেয়েকে ছেড়ে দেয় খালেক। এ এলাকায় তাদের পরিচিত তেমন কেউ নেই। তার ওপর খালেক বেশ প্রভাবশালী। মহিলা কোথায় আর কার কাছে এই অন্যায়ের বিচার দেবেন! অভাগী মা নিভৃতে শুধু কাঁদলেন। আর চলে যাওয়ার সময় কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, “আমার মাইয়ার যে ক্ষতি তুই করলি, আল্লায় তোর বিচার করব। ছয় মাসের মইধ্যে তোর মরণ অইব।”

অলৌকিক হলেও সত্য। ছয় মাসের মধ্যেই খালেকের মৃত্যু হয়। যে বন্ধুদের সাথে সে জুয়া খেলত, নানান কুকাজে লিপ্ত থাকত; একদিন তারাই তাকে মদের সাথে এসিড খাইয়ে মেরে ফেলে। বেচারার ভেতরের সবকিছু একেবারে পুড়ে গিয়েছিল। জানা যায়, ঘরে বাইরে তার শত্রুর অভাব ছিল না। পয়সাওয়ালা হওয়ায় তার মাঝে এক প্রকার দম্ভ ছিল। বাজার করতে গেলে পুরো বাজারটাই নিয়ে আসত। অন্যদের সে কোনো মূল্য-ই দিত না। শত্রুরা-বন্ধুরা কেউ আর তাকে বাড়তে দিতে চায়নি।

ধীরে ধীরে তার পরিবারটাও ভেঙে পড়ে। স্ত্রী, ছেলেমেয়ে- কে কোথায়; এর কোন হদিস পাওয়া যায়নি। লোক মুখে শোনা যায়, তার একমাত্র ছেলে রোকনের নাকি বাপের মতোই নারী আর মদের প্রতি প্রচণ্ড আসক্তি। এ যেন পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া উত্তরাধিকার।

১১ ভাদ্র ১৪২১ বঙ্গাব্দ
সেনবাড়ি রোড, ময়মনসিংহ।

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:১৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


ঘটনা হলে, মোটামুটি; গল্প হয়ে থাকলে বেশ দুর্বল

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:২৮

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: গল্প হিসেবে আমার কাছেও দুর্বল মনে হচ্ছে, তবে ঘটনা সত্য এবং সাক্ষী নির্দোষ!

২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:২১

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: বাস্তবিক ঘটনা তুলে ধরেছেন মনে হল

ভালো লিখেছেন।

বিশ্বস্ত মানুষের বড় অভাব বর্তমানে!!

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:২৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে পৃথিবী ঘূর্ণায়মান।

৩| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:২২

রিএ্যাক্ট বিডি বলেছেন: হমম ভালো হৈচে

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৩০

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আপনার রিএ্যাকশানে প্রীত হলাম।

৪| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫৪

ওমেরা বলেছেন: কাহিনী সত্য তবু আরেক শালীনতা ভাবে লিখতে পারতেন ভাইয়া। উনাদের একা এভাবে যাওয়া উচিত হয়নি প্রথমত, দ্বীতিয়ত ঐ লোকের বাসায় থাকা মোটেও উচিত হয়নি। বিপদ তো বলে কয়ে আসে না!!

ধন্যবাদ।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:১১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কয়েকটা লাইন আমার কাছেও অস্বস্তি লাগছে। তবে মুশকিল হলো, সত্য ঘটনার ওপর কাঁচি চালানো আমার জন্য কষ্টকর!

এটা ঠিক যে বিপদ বলেকয়ে আসে না, সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। সত্যি বলতে কী ওরা গ্রামের মানুষ! কী ঘটতে পারে ঠাহর করতে পারে নি, তাছাড়া তাদের বাড়ি ওখান থেকে ৮-১০ কিলোমিটার দূরে; অতদূরে যাওয়াও তো সম্ভব ছিলো না!

৫| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:০৭

আহমেদ জী এস বলেছেন: রূপক বিধৌত সাধু ,




সম্ভবত একটি সত্যঘটনার সোজাসাপ্টা বর্ণনা মনে হলো ।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:১৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ঠিকই ধরেছেন।

৬| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৪৬

ধ্রুবক আলো বলেছেন: একদিন না একদিন অন্যায়ের শাস্তি পেতে হবে। আজ হোক আর কাল!

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৫০

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: প্রকৃতির প্রতিশোধ।

৭| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৪৯

সুমন কর বলেছেন: ঘটনা হলে ঠিক আছে, গল্প হিসেবে আরো ঘষা-মাজা দরকার ছিল।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৫১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: পরামর্শ মাথায় রাখলাম।

৮| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫০

মোহেবুল্লাহ অয়ন বলেছেন: ভয়ংকর ! :(

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:১৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: মানুষদের মাঝেই অমানুষদের বাস!

৯| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৩৮

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: বাস্তব ঘটনা, তবে অারেকটু রেখেঢেকে লিখলে ভাল হতো.......

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:১৪

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: পরবর্তী সময়ে বিষয়গুলো মাথায় রাখবো।

১০| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ২:১৫

নূর-ই-হাফসা বলেছেন: মর্মান্তিক কাহিনী । যাক লোকটার সাজা হলো ।

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:১৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: প্রকৃতি অনিয়মকে বরদাশত করে না!

১১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৩১

নীলপরি বলেছেন: গল্প সাবলীল লেগেছে ।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:২২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা নিরন্তর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.