নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পড়তে ও চিন্তা করতে ভালবাসি। ছোট গল্পের সাথে সাথে ব্লগ লিখি।
লাইটগুলো একে একে আলো হারিয়ে ফেলতে লাগল। মনে হল সেগুলোতে রেগুলেটর যুক্ত। আর কেউ একজন তা ঘুরিয়ে আলো কমিয়ে ফেলছে। পট করে একটা শব্দ—হয়ত লাইন অকেজো হয়ে গেল। বেড-সুইচ ধরে টেপাটেপি করলাম কোন কাজ হল না। পাশের রুমগুলোয় ঘুটঘুটে অন্ধকার, ভয় ঘাপটি মেরে আছে।
কাজের-মেয়েটি পাশের ঘরে ছিল—নাম জ্যোতিকা। কিন্তু এবার যে ঘরে ঢুকেছে সে অগ্নিকা—জিজ্ঞেস করায় বলল। চেহারা অবিকল জ্যোতিকার কিন্তু ওর কোন যমজ বোন ছিল বলে আমার জানা নেই। ওর কোনও বোনই নেই—একটি মাত্র ছোট ভাই।
ঘুমিয়েছিলাম একাই। মনে হল কেউ একজন মশারি ধরে টানছে। হাত দিয়ে দেখলাম ‘কেরে?’ গায়ে হাত লেগে গেল।
‘তোমার সঙ্গী—অঞ্জন। পেশাব করতে গিয়েছিলাম।’
কিছুক্ষণ পর খেয়াল হল আমি তো একাই ঘুমিয়েছিলাম...’
ঘার ফেরালাম বাঁয়ে অন্ধকারের মধ্যেও বেশ বুঝতে পারছিলাম জ্যোতিকা আমার পাশে শুয়ে। ওর নরম চুল আমার গালের নিচে সুড়সুড়ি দিল। সুন্দর একটা ঘ্রাণ— শ্যাম্পু করেছে নিশ্চয়। দিনের বেলায় পাশ দিয়ে যাবার সময় শরীরের বোটকা গন্ধে দম আটকে আসে। আশ্চর্য—আমার পাশে শুয়ে আছে অথচ কিছুই টের পাইনি। হয়ত গোসল করে এসেছে... আসলে ভুল আমারই ও তো জ্যোতিকা নয়—অগ্নিকা। তাই হয়ত গন্ধটা এত মিষ্টি...
কিন্তু অঞ্জন গেল কোথায়? সেদিন বিকেলে সাইকেল নিয়ে বেরিয়েছিলাম দুজন। পড়ন্ত সূর্যের আলোয় গল্প করে পথ চলতে বেশ লাগছিল। সিগারেটের অভ্যেস নেই তবু দুজনে সিগারেট ধরিয়ে মনের সুখে ধোঁয়া ছাড়তে লাগলাম। ডালিম বাগানটার সামনে এসে আমাদের গতি কমে গেল। বাগানের ভেতর থেকে মেয়েদের হাসির শব্দ ভেসে আসছে। অনেকটা ভরা কলসি থেকে জল ঢালার সময় প্রথমে যেমনটা হয়। গোপনে, খুব সাবধানে সাইকেল রেখে এগোতে থাকলাম। চারটি মেয়ে যেন রূপের নদীতে ডুব দিয়ে মাত্র উঠে এসেছে। ওরা চুল আঁচড়াচ্ছে সবারই মুখের অর্ধেকটা চুলে ঢেকে আছে। চিরুনিতে উঠে আসা চুলগুলো পেছন দিকে দলা পাকিয়ে ছুঁড়ে দিচ্ছিল। তার কয়েকটি নাকে ধরে শ্বাস নিলাম। ঘ্রাণে মাদক মেশানো যেন—চোখ মুদে এল। বুকের ভেতর শিরশির করে উঠল। ঠোঁটে চেপে ধরে চুমো খেলাম পাগলের মত। হয়ত পাগলই হয়ে উঠেছিলাম ক্রমশ। হাত আপনা থেকেই সচল হয়ে উঠল, দু-হাতে প্যান্টের পকেটে পুরতে থাকলাম। একবার ভাবলাম এসব কী করছি আমি! কিন্তু কাজটি থামাতে পারছিলাম না। কোন পৈশাচিক শক্তি অনুভব করলাম। আবার মনে হতে লাগল আমি নিজেই তো একটা পিশাচ...
আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে একসঙ্গে ওরা কপাল থেকে চুল সরিয়ে তাকাল। কাজল আঁকা দেবীর চোখ! কিন্তু সবার চেহারাই তো জ্যোতিকার মত, তবু আলাদা আলাদা! বিস্ময়ে অঞ্জনকে দেখাতে চাইলাম। হঠাৎ খেয়াল হল অঞ্জন তো চট্টগ্রামে, ও এখানে কী করে আসবে!
চিৎকার করে উঠলাম ‘কে রে?’
দেখি জ্যোতিকার নয়ত অগ্নিকার পাশে আরও একজন শুয়ে আছে। বয়স্ক ব্যক্তি। দুজনকেই মারতে চেষ্টা করলাম। হাত-পায়ে কোনও জোর পেলাম না। ভাল করে খেয়াল করে দেখি লোকটি মোটেই বয়স্ক নয়, নিতান্তই শিশু। আর মেয়েটি তাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে। ও-টি ওর ছেলে, নাম রেখেছে ভোলা। তাই বলেই তো ডাকল ‘ভোলা সোনা কাঁদে না, কাঁদে না...’
হঠাৎ করে অন্ধকারের মধ্যেও আমি দেখতে শুরু করলাম। সত্যি বলতে হঠাৎ করে কিন্তু নয়—কখনও কখনও আমি এমন আঁধারেও দেখতে পাই। তখন আমার সমস্ত শরীরে কোটি কোটি চোখ গজাতে থাকে। সেই চোখগুলো কিছু দেখার জন্য তৃষ্ণায় ছটফট করতে থাকে। আমি হেরে যাই ওদের অতজনের কাছে। আয়নায় নিজেকে দেখে একদিন ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ঠিক একটা শুঁয়োপোকার মত দেখাচ্ছিল, কিন্তু মুখটা ছিল ইঁদুরের মত। তারপর ভয় পেয়ে ঘরের আয়নাটা ভেঙ্গে ফেললাম।
আমাকে চমকে দিয়ে সেই বয়স্ক লোকটি কোথা থেকে যেন আবির্ভূত হল। লোকটি ওদের মা-ছেলেকে নিয়ে যেতে চাইল। ওরাও উঠে যাবার প্রস্তুতি নিতে লাগল। ভাবলাম বাধা দেই ওর বাবা তো সন্তানের জন্য পাগল হয়ে যাবে!
‘কিছুতেই নিতে পারো না ওদের—ওর বাবা কাকে নিয়ে থাকবে? ওকে হারালে তো সে মরেই যাবে!’
‘তাতে তোমার কী? তুমি তো আর ওর বাবা নও?’
‘ওরা এখানেই কাজ করবে—ভাল থাকবে...’
‘সারা জীবন কি শুধু পরের কাজই করবে? ওর কি কোনও ঘরের স্বপ্ন হয় না? শিশুটাই-বা কী কাজ করবে?’
‘ওদের আবার স্বপ্ন থাকে নাকি! ওদের কোনও মুখ থাকতে পারে না। সংসার তো কেবল মানুষেরই থাকে...’
‘ওরা কি তবে মানুষ নয়?’
তীব্র ঘৃণায় আমার মুখে কোনও কথা ফুটল না।
বারবার চেষ্টা করলাম আলো জ্বালতে, কিছুতেই পারলাম না। এক সময় দেখলাম দুলালকে। চাইলাম ঘটনাটি খুলে বলতে। পরে দেখি সেও ওদেরই দলে। আসলে সে দুলাল ছিল না। চিৎকার করে উঠলাম জোরে ‘ওদের কিছুতেই নিয়ে যেতে পারো না! ওরা আমার কাছেই থাকবে।’
ওদের গালাগাল দিলাম—শোনাল মাতালের মত। কিছুতেই ‘না’ শব্দটি উচ্চারণ করতে পারছিলাম না। তাই কথাটি হয়ে গেল ‘ওদের কিছুতেই নিয়ে যেতে পারো...’
লোক দুটো বিশ্রীভাবে হাসল।‘বেশ তাহলে সুমতি হল এতক্ষণে?’
ক্রোধে আমার দুচোখ জ্বলতে লাগল। একজন বলল ‘দেখ লোকটার চোখ দুটো কেমন পিশাচের মত!’
‘...আমি পিশাচ...’ এবারও না শব্দটি উচ্চারণ করতে কোনও শব্দ হল না। ওরা হা হা করে হাসতে লাগল।
‘দেখ পিশাচটাকে দেখ...’
ক্ষোভ, লজ্জা, ব্যর্থতায় গলার মধ্যে হাত ঢুকিয়ে একটানে আলা-জিহ্বাটা ছিঁড়ে ফেললাম।
তার পর থেকে বোবা হয়ে আছি। ঘরে-বাইরে আমি একজন সম্মানিত ব্যক্তি—কেননা বোবার কোনও শত্রু থাকে না।
ছবি - গুগল
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৪১
আহা রুবন বলেছেন: পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
২| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৪১
শাহরিয়ার কবীর বলেছেন:
গল্প পড়ে ভালো লেগেছে ভাই ।
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৩৫
আহা রুবন বলেছেন: ধন্যবাদ শাহরিয়ার কবীর ভাই।
৩| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:২৭
কালীদাস বলেছেন: লেখাটা বেশ ভাল হয়েছে।
চমৎকার
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:২২
আহা রুবন বলেছেন: আপনার কাছ থেকে অনুপ্ররণা, পরামর্শ পাই, যা গল্প লিখতে আরও উৎসাহিত করে।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৩৩
চাঁদগাজী বলেছেন:
জীবনের ছোঁয়া লেগেছে