নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়তে ও চিন্তা করতে ভালবাসি। ছোট গল্পের সাথে সাথে ব্লগ লিখি।

আহা রুবন

পড়তে ও চিন্তা করতে ভালবাসি। ছোট গল্পের সাথে সাথে ব্লগ লিখি।

আহা রুবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শ্বাসকষ্ট

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:২৪



‘হ্যাঁ হ্যাঁ আরও জোরে, জোরে শ্বাস নিন... আরে বাবা পেট ফুলাচ্ছেন কেন? বুক, বুক ফোলান—তারপর ছাড়ুন।’
‘ডাক্তার সাহেব, আমার পেটে অনেক গ্যাস...’

জিহ্বা, নাক, গলা একে একে সব খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন। কিন্তু কোনও কিছুই অস্বাভাবিক দেখছেন না।
ডাক্তার সাহেব চিন্তিত হয়ে পড়লেন ‘কোনও সমস্যাই তো দেখছি না?’ শুঁটকি গহেরের দিকে তাকালেন ডাক্তার।
‘তাইলে বড় ডাক্তারের ঠিকানা দিয়া দেন।’
‘দরকার হলে দেব। এরপর যখন শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তখনই চলে আসবেন।’
‘ডাক্তার সাহেব আজকে বাড়ি গেলে শ্বাস কষ্ট শুরু হবে।’
ডাক্তারের ভ্রু কুঁচকে গেল। ‘সে কি! আপনি আগে থেকেই জানেন, কবে আপনার রোগ বাড়বে?!’
‘বুঝতে পারি। যেদিন কামাই কম হয়। আজ তো দোকান বন্ধ করে আইছি...’
‘একটু বুঝিয়ে বলুন? কী করেন আপনি?’
‘মহল্লার মোড়ে ছোট একটা দোকান চালাই—শুঁটকি মাছ বেচি। সবদিন ভাল বিক্রি হয় না। যেদিন কম লাভ থাকে, বাড়িতে বউ গালপারে। জামালের, আজাদের সাথে তুলনা করে বলে—“ওরা বেটা ছেলে ওগো মুত খাও গিয়া।” তখন আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে—মনে হয় মারা যাব...’

‘হ্যাঁ এই ট্যাবলেট কয়টা খেয়ে একমাস পরে দেখা করবেন।’
‘ভাল হব তো?’
‘দেখা যাক, আশা করি সুফল পাবেন।’
‘ডাক্তার সাহেব আমার স্ত্রীর গালাগালি বন্ধ করার কি কোনও উপায় নাই? না, মানে এমন কোন ওষুধ দিলেন যে, কথা কইতে আলসেমি লাগবে। বা ধরেন যে, আলাজিহ্বাটা অবশ হয়ে গেল... তাইলে আর আমার ওষুধ লাগত না। একদিন একটু প্রতিবাদ করলাম—সে দা দিয়ে পালানের মরিচ গাছ, লাউ গাছ, পেঁপে কিছুই রাখল না। শেষে এসে চুলা কোপায়া ভাঙ্গল।’
‘পরে চুলোটা কে তৈরি করল?’
‘আমার বউ-ই... আমি চুলা বানানো দেখে কইলাম “কষ্ট তো তুমিই করলা, কী লাভ...” আর অমনি কাজ থামায়া কটমট কইরা আমারে দেখল। তারপর এক লাথি দিয়া ভাইঙ্গা কোন বাড়িতে চইলা গেল।’

রোগীর সমাধান কিছুটা দিলেও রোগের সমাধান দিতে পারলেন না। রোগীর দোকান বন্ধ তাই কপালে কী আছে তার, সেটা মনে করে, ভিজিট ফী নিলেন না। ভাবতে থাকলেন—অনেক স্বপ্ন চোখে নিয়ে ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলেন। যতদিন ভাল কোথাও জয়েন না করছেন, এবং জয়েন করেও মাঝে মাঝে নিজের গ্রামে এসে অল্প পয়সায় গরিবের চিকিৎসা দেবেন। অনেকের চিকিৎসা, সেবা, দিয়ে নিজেকে অনেক বড় আর তৃপ্ত মনে হত। আজ যেন কেমন লাগছে—এসবের সমাধান কী। কোন ওষুধ দেব? মনে হয় শিক্ষক হলে ভাল হত। ছেলেদের পড়িয়ে বিকেলে গ্রামের মানুষদের জীবন সম্পর্কে সচেতন করতে পারতাম। এরা সংসার শুরু করে অথচ কীভাবে জীবনটা সুন্দর করা যায় কিছুই জানে না। এই পরিবেশ রেখে দিয়ে কীভাবে সুন্দর দেশ আশা করি! তার আগে দরকার সুন্দর মানুষ—হ্যাঁ সুন্দর মানুষ! সংসার শুরুর আগে সবার প্রস্তুত হওয়া দরকার, সাংসারিক জ্ঞান দরকার। অশিক্ষা-কুশিক্ষা দূর করতে পারলে ভবিষ্যতে যারা আসবে, তারা উন্নততর হয়ে আসবে। সব কি শেষ হয়ে গিয়েছে? আমি কি একটা স্কুলে সপ্তাহে একদিন বিকেলে সবাইকে জড়ো করে এমন সমস্যার পরামর্শ দেয়ার উদ্যোগ নিতে পারি? মেয়েটিকে ডেকে কি বোঝানো যায়—সবার আয়-রোজগার কখনও সমান হয় না। সে যদি না শোনে? সেই সম্ভাবনাই বেশি, হয়ত অপমান করবে। ভেতরে ভেতরে দারুণ উত্তেজনা অনুভব করতে লাগলেন। কেমন যেন লাগছে—কী এর সমাধান? কী কী... রুমে পায়চারী করতে লাগলেন।

‘বড় ভাই জ্বরের একটা রোগী এসেছে, নিয়ে আসব?’
ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লেন ডাক্তার।
‘ফ্যান জোরে চালিয়ে দাও, আরও জোরে—জানালা খুলে দাও, পর্দাও... আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে...’
ছেলেটা তাই তাই করল।

কিছু সময় পর ডাক্তার কপাল মুছে এক গ্লাস পানি খেলেন। একটু ভাল বোধ করলেন। ছেলেটা হাসতে হাসতে বেরিয়ে এল ডাক্তারের রুম হতে।

ছবি যুগান্তর

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৪১

আহমাদ জামীল বলেছেন: ভাল লাগলো

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৪৩

আহা রুবন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৫৫

সুমন কর বলেছেন: মজা পেলাম।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৫৭

আহা রুবন বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা।

৩| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:০৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনার ভাবনা ও ধারণা আমাদের অনেক কিছুর সাথে মিল আছে; তবে, গল্প তেমন শক্তিশালী হয়নি। ডাক্তার ঠিক কাজই করছেন, সমস্যা হবে এ ধরণের সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্হায়; ডাক্তারকে আরও শক্তিমান করার দরকার ছিলো।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৩১

আহা রুবন বলেছেন: ধন্যবাদ চাঁদগাজী ভাই। সব সময় তো আর খুব ভাল গল্প লেখা সম্ভব হয় না। গল্পটি সমাজ বাস্তবতায় লিখতে চেয়েছি। অসহায় রোগী স্ত্রীর প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে তার জিহ্বা অবশ করার আজগুবি আশা করেছে। মূলত তার অসহায়ত্বই প্রকাশ করতে চেয়েছি। মহিলাটি যে নিজের ক্ষতি নিজেই করে, তার ঘরের মানুষটির কিছুই করার নেই। একে আপনি চেনেন...

ডাক্তারকে একটু দুর্বল চিত্তের দেখা যায়। উদ্দেশ্য ছিল--যারা সৎ চিন্তা করে, দেশকে, সমাজকে নিয়ে ভাবে তাদের আমরা বেকুব ঠাওরাই, তাকে নিয়ে মজা করি। ওই ছেলেটির মত, যে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতে হাসতে ডাক্তারের রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

আমার মনে হয় শুরুটা ভালই ছিল। শেষেরটুকু ভাল হয়নি।

৪| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:২২

কালীদাস বলেছেন: "শুঁটকি গহের" হা হা, সেরকম নাম দেখা যায় =p~

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৩৩

আহা রুবন বলেছেন: হা হা হা :D

৫| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৪৬

জীবন সাগর বলেছেন: 'এরা সংসার শুরু করে অথচ কীভাবে জীবনটা সুন্দর করতে হয় সেটাই জানেনা। এই পরিবেশ রেখে দিয়ে কীভাবে সুন্দর দেশ আশা করতে পারি!'
সত্যি হতাশার ব্যাপার। সমাজ উন্নয়ন না করে দেশের উন্নয়ন কতটা কাজে আসবে সেটাই ভাবনার!
মজা করেই পড়লাম, ভাল লাগলো

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৪৯

আহা রুবন বলেছেন: মজা করে পড়েছেন জেনে ভাল লাগছে। শুভেচ্ছা রইল।

৬| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৪৬

শাহরিয়ার কবীর বলেছেন:
বেশ মজার বটে ............। =p~

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৫১

আহা রুবন বলেছেন: ধন্যবাদ শাহরিয়ার কবীর ভাই। ;)

৭| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৪৯

ইমরান আল হাদী বলেছেন: ভালো লাগলো, মজাদার..... শ্বাস কষ্ট।

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৩৭

আহা রুবন বলেছেন: ধন্যবাদ, ইমরান আল হাদী। শুভেচ্ছা জানবেন।

৮| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৫৩

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাল লাগল লিখাটি ।
শুভেচ্ছা রইল ।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৪৭

আহা রুবন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, প্রিয় লেখক। শুভকামনা রইল।

৯| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৪৭

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:

বেশ মজাদার গল্প রূবন ভাই। প্লাস! আপনার লেখা গল্পগুলো ভালই লাগছে!

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:৫৫

আহা রুবন বলেছেন: অনুপ্রাণিত হলাম। আপনার কবিতা সব সময় পড়ি, বেশিরভাগ সময়ই মন্তব্য করি না। আসলে পারি না। জানেন তো প্রেমে পড়লে, বেশি মুগ্ধ হলে, মানুষ বোকার মত কথা বলে। তাই বোকা হতে চাই না। :`>

১০| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৫২

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: লিখাটি আবার পড়লাম, সেদিন সময় অভাবে ভাল লাগার সব কথা বলে যেতে পারিনি । গল্পটি সমাজ বাস্তবতা নিরীখে লিখা বলে মনে হল । অসহায় রোগী স্ত্রীর প্রতি অতিষ্ঠ হয়ে তার জিহ্বা অবশ করার আজগুবি আশা নিয়ে এসেছে ডাক্তারের কাছে । মূলত তার অসহায়ত্বই প্রকাশ পেয়েছে । সংসারে এমন অনেক আছে , যেখানে সংসারের গিন্নী তুচ্ছ কারণে অহেতুক নিজের ক্ষতি নিজেই করে, এ ক্ষেত্রে তার ঘরের মানুষটির কিছুই করার থাকেনা । এরকম মনে হয় প্রায় ঘরেই আছে ।
ডাক্তার বেচারাও মনে হল বেশ একটু দুর্বল চিত্তের । তার উদ্দেশ্য অতি সৎ , সবসময় সমাজের মঙ্গল চিন্তা , নীজ সমাজকে নিয়ে তিনি ভাবেন , এমন লোকজনদেরকে নিয়ে অনেকেই মজা করে যা লিখাটির শেষ দৃশ্যে দেখা যায় । যেখানে ছেলেটিকে দেখা যায় তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতে হাসতে ডাক্তারের রুম থেকে বেরিয়ে আসে আর ডাক্তার নীজ কপালের ঘাম মুছে ।
গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তা্ই শুধু ভাল লাগা।
আমার পোস্টে রেখে আসা মন্তব্যের জবাবটা দেখে আসলে খুশী হব ।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল ।

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:০৯

আহা রুবন বলেছেন: ভাবনাকে একটু সম্প্রসারিত করেও দেখা যায়। ঘরের কর্ত্রী ক্রোধান্বিত হয়ে চুলো ভাঙ্গে যেটা আবার তাকেই তৈরি করতে হয়। আমি রাজনীতির কথা বলছি... সংসার=দল/দেশ, স্বামী=জনগণ(যার আয়ে সংসার চলে তাকে মুত্র পান করতে বলা), ডাক্তার=প্রকৃত হিতাকাঙ্খি, স্ত্রী= :P, সুন্দর মানুষ=ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব। এভাবে ভাবলে মনে হয় খারাপ হয় না।

আপনার লিঙ্কটি চমৎকার! সবাই মিলে খুব মজা করে দেখেছি। কৃতজ্ঞতা জানবেন।

১১| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:৩০

খায়রুল আহসান বলেছেন: আমার মনে হয় শুরুটা ভালই ছিল। শেষেরটুকু ভাল হয়নি। (৩ নং প্রতিমন্তব্য)- মনে হয় আপনি ঠিকই ধরতে পেরেছেন।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৩৮

আহা রুবন বলেছেন: মতামত জানানোর জন্য ধন্যবাদ।

১২| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:১৬

মাঝিবাড়ি বলেছেন: চমৎকার মজার!

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৭

আহা রুবন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.