নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পড়তে ও চিন্তা করতে ভালবাসি। ছোট গল্পের সাথে সাথে ব্লগ লিখি।
চটুল একটা গানের সুর ভাজতে ভাজতে হাত নাড়িয়ে রাস্তা দিয়ে একাকী হেঁটে আসছিল বাম হাতে শাড়ির কুঁচি একটু উঁচিয়ে রাস্তার খুচরো পাথর খণ্ডগুলোকে লাথি মারতে মারতে। নিস্তেজ হয়ে আসা বিকেলের আলো গাছের ফাঁকে ফাঁকে ঝুলে ছিল। কিছু আবার খসে পড়ে লাল করে দিচ্ছিল মিষ্টির গাল দুটো। খুব আনন্দে আছ আজ।
একটা ছোট্ট ভাঙ্গা ডাল ডান হাতে বৃত্তাকারে(ওপরে-নিচে) ঘোরাতে ঘোরাতে লেকের ধারে পেয়ে গেল আনুকে। মাথা নিচু করে নিক্তিতে বাদাম মাপছে—সামনে দাঁড়ানো দুটো কৈশোর পেরুনো ছেলে।
‘আইনা দুই টাকার বাদাম দে।’
‘দুই টাকার কোনও বাদাম নাই।’ হাতে কাগজের কোণ বানাতে বানাতে বলল।
‘দে-না রে...’ এই বলে এক খাবলা তুলে নিয়ে দুই টাকা ছুঁড়ে দিয়ে দাঁতের নিচে একটা বাদাম ফেলে মটোস্ করে খোসা ভাঙ্গল।
রনিকে দেখে ডাক দিল, ‘বন্ধু এক কাপ কড়া চা দিয়ে যা—লেবু আছে তো’?
সকালের ঘুমটা ভাল হয়নি। ‘রাতের মোটকা শুয়োরটা একটুও ঘুমনোর সুযোগ দেয়নি। পারুক আর না পারুক... শালা... সারারাত জ্বালিয়ে ছাড়ল আর বখশিশ দেয়ার সময় পকেট খালি।’
‘খুব আনন্দ দিয়েছ...’
‘কিন্তু বকশিস কই?’
‘সামনে দেব... নয়টার দিকে তখন বাইরে গেলাম-না? বিকাশ করতে গিয়েছিলাম—বউয়ের বড় ভাই এসেছে, সকালে বাপের বাড়ি যেতে চাচ্ছে। তাই কিছু টাকা পাঠাতে হল। রাগ কোরো না।’
একটা ছোঁ মেড়ে হাত থেকে ওয়ালেটটা নিয়ে নিল মিষ্টি।
‘ঠিক আছে, রেখে দাও। নতুন— মাত্র এক সপ্তাহ হয় কিনেছি। শুধু যাবার ভাড়াটা দাও।’
রিক্সায় উঠে ওয়ালেট হাতরে দেখতে লাগল। একটা ভাঁজে বাসের টিকেট, হোটেল রশিদ, ফোন চার্জার ওয়ারেন্টি কার্ড, আরও কিছু আজেবাজে কাগজের টুকরোর সঙ্গে একটা লটারির টিকেট পেয়ে গেল। সবগুলো কাগজ কুটি কুটি করে হাওয়ায় উড়িয়ে দিল। লটারির টিকেটা পেঁচিয়ে বিড়ির মত তৈরি করল। ভাবল টিকেট কেনার কথা হয়ত ভুলে গিয়েছে, মিলিয়ে থাকলে তো ফেলে দিত।
সংবাদপত্রের দোকান সামনে পড়ায় রিক্সা থামিয়ে দোকানিকে জিজ্ঞেস করল ‘ভাই লটারির ফল বারাইছে না কি?’
‘হ্যাঁ পরশু দিন বারাইছে।’
‘ঐ দিনের একটা পেপার দেন।’
‘তিন দিনের পেপার তো রাখি না। দেখি ফটোকপি মনে হয় আছে।’
বাসায় ফিরে দু পা চৌকিতে ঝুলিয়ে দুই হাত দুদিকে ছড়িয়ে বিছানায় ধরাম করে পড়ে রইল। সাহানা এখনও ফেরেনি। এখন আবার রান্না চড়াতে হবে। ওরা দুইজন আট ফুট বাই আট ফুট এই ঝুপড়িতে থাকে। কিছুটা তন্দ্রার ভাব চলে এসেছিল—হঠাৎ খেয়াল হল লটারির কথা। উঠে ব্যাগ থেকে লটারির ফল বের করে বিছানায় বেছাল। বাম হাতে টিকেট ধরে ডান তর্জনী দিয়ে একটি একটি করে সংখ্যা মেলাতে লাগল।
তখনই ঘটল ব্যাপারটা বুকের মধ্যে ছ্যাত করে উঠল—বুক ফেটে সব যেন বেরিয়ে পড়বে— ছয় লাখ টাকা... উত্তেজনায় ক্ষুধার কথা ভুলে গেল। স্নান সেরে গা ভরে বডি স্প্রে ছেটাল। সবচেয়ে ভাল শাড়ি-ব্লাউজ গায়ে চাপাল। কপালে টিপ পরল। জমানো অংশ থেকে এক থোক টাকা নিয়ে, পিঠে সিক্ত চুলরাশি ছড়িয়ে যাত্রা করল নারায়ণগঞ্জ —বোনের বাসার উদ্দেশে।
বোনাই কাজে চলে গেছে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে বোন একা। ভাগ্নে-ভাগ্নি এত এত চকলেট, বিস্কুট পেয়ে আত্মহারা। বোনের জন্য আনা হরলিক্স দিতে গিয়ে বলল ‘তোর শরীর খুব খারাপ হয়ে গেছে, নিতু হবার পর থেকে। নে এটা।’
‘একটা বয়ম খেয়ে আর কী হবে রে? পেটে ঠিক মত ভাতই জোটে না ...’
মিষ্টি কোঁচকানো বিছানার চাদর টান দিয়ে বলল ‘তোকে আমি কিছু টাকা দেব—সংসারে খরচ করবি না। ভালমতো চিকিৎসা করা।’
দুপুরে খাবার খেতে মেরাজুল বাসায় আসে। শ্যালিকাকে দেখে রসিকতা করে বলল ‘ঘন ঘন আসো না, তাই ভাল-মন্দ খাওয়াই হয় না। আজ আশা করি আজ ...?’
‘ইহ কত টাকা উনি রেখে গেছেন! মেহমান এলে আমি পোলাও কোর্মা করি!’
‘হবে হবে সব হবে, একটু ধৈর্য ধরো ...’
‘তাতো হবেই আমি মরলে ...’
মিষ্টি রাগত স্বরে বলল ‘তোরা এসব করলে কিন্তু এখনই চলে যাব।’
দুপুরে খেয়েদেয়ে বিছানায় বসে বোনের কাছে পান চাইল মিষ্টি। মুখে পুড়ে একটা ঢোক চিপে বলল ‘ ভাবছি বাবা-মাকে নিয়ে আসব। দোকান-টোকান কিছু একটা করে দেব। শুনেছি খেলনা বিক্রিতে লাভ বেশি, পুঁজিও তেমন একটা লাগে না।’
‘টাকা পাবি কোথায়! আমার কাছে কিছু নেই কিন্তু!’
‘না না তোকে সেসব ভাবতে হবে না। ফ্যাক্টরিতে কিছুদিন হয় নিয়মিত ওভারটাইম করলাম। হাতে কিছু জমেছে।’
লটারির কথা বলতে নিয়েও বলল না—যদি বোন-জামাই আবার চেয়ে বসে!
‘কিন্তু বাড়ি খালি করে সবাই চলে আইলে, বাড়ির কী অবস্থা হবে?’
‘কী আবার? যা হবার তাই হবে—যমুনার পেটে যাবে। থাকলেই আর কত কী বাঁচানো যায়—বড় জোর ছাপরাটা। এই নিয়ে কতবার ঘর ভাঙ্গলাম বলতো? বছর বছর ঘর ভাঙ্গে আর বাপের পুরনো কালের কেচ্ছা—গোয়াল ভরা গরু, ডোল ভরা ধানের গল্প ভাল লাগে না।’
‘কথা তো মিথ্যা না।’
‘তুই তো আর দেখস নাই তাইলে সত্যি ভাবস কেমনে? শোন বু— যাদের বর্তমান অন্ধকার, ভবিষ্যতের কোনও সম্ভাবনা নেই, তাদের কেবল উজ্জ্বল একটা অতীত থাকে।’
মিষ্টি কিছু কবিতা, গল্প, উপন্যাস পড়ে সুযোগ মত। একটু আধটু কাব্য করে কথা বলতে পারলে শিক্ষিত খদ্দেররা ভাল বকশিস দেয়।
ফিরতে ফিরতে বিকেল গড়িয়ে গেল। টুনটুনির মত এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াল মিষ্টি।
সন্ধ্যা নেমে এসেছে। যে দুই চারজন এগিয়ে এসেছিল ভ্রুক্ষেপ না করে ঘুরতে লাগল। ওগুলোর চোখের দিকে তাকাতেই গা ঘিনঘিন করে উঠল। আবার আনুর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।
‘শোন আনু তোর সাথে কথা আছে—এদিকে আয়।’
‘আমার কাম আছে—বেচা-বিক্রি সুবিধার না।’
কিন্তু মিষ্টি কোনও কথার পাত্তা না দিয়ে আনুর হাত ধরে টেনে একটা শিরিশ গাছের গোড়ায় নিয়ে গেল।
‘কত টাকা লাভ হয়? তার চারগুন দেব। আমার কাছে একটু বস গল্প করি।’
‘আগে দাও...’
‘এই নে খুশি তো?’
আনুর মুখে হাসি ছড়িয়ে পড়ল। ‘এই আনু আরও পাঁচ শো নে, ধর।’
‘কীসের টাকা? লটারি পাইলা না কি? আমারে দাও কেন?’
‘তোকে চুমু খাব...’ এক ধাক্কায় আনুকে ফেলে দিল মাটিতে।
চুমোয় চুমোয় আনুর মুখ ভরে দিতে লাগল মিষ্টি। আনু দাপাদাপি করতে লাগল। পায়ের সঙ্গে লেগে বাদামের ঝাঁকা উল্টে ওদের শরীরের ওপর পড়ল। আনু ধাক্কা দিয়ে সরাতে চাইল মিষ্টিকে, ‘সর খানকি ... চেঁচাব কিন্তু—বার ভাতারের চুমায় হয় না? ...
‘আমার কি ইচ্ছা হয় না রে? ...’
আনুর পেটে সুড়সুড়ি দিয়ে হাসতে হাসতে ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখল মিষ্টি।
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৮
আহা রুবন বলেছেন: গল্পের সূত্র ধরিয়ে দিয়েছি, বাকি টুকু না হয় পাঠকই তৈরি করে নিল। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:০৪
শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: গল্প এতো ছোট কেন ? আরো বড় হলে পড়তে বেশ লাগতো ।
সুন্দর বর্ণনা, পড়ে ভালো লাগা রেখে গেলাম।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৪৭
আহা রুবন বলেছেন: অনুপ্রাণিত হলাম। অনেক ধন্যবাদ।
৩| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:২৯
ফাহমিদা বারী বলেছেন: ছোটগল্পের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায় বৈকি! আপনার লিখন শৈলী বেশ ভালো লেগেছে। ছোট ছোট বর্ণণাগুলো বেশ লাগলো। তবে হ্যাঁ, সমাপ্তিতে আরো একটু কিছু যুক্ত করতে পারতেন। গল্পটা খুব বেশি অতৃপ্তিতে ভুগিয়ে দেয়!
২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:২৫
আহা রুবন বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ, প্রিয় লেখক।
৪| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:২৬
পুলহ বলেছেন: গল্পের কলেবর নিয়ে উপরের পাঠক বেশিরভাগেরই অভিযোগ আছে মনে হলো। জবাবটা লেখক অবশ্য প্রথম প্রতি- মন্তব্যেই দিয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমিও ৩ নং মন্তব্যের "গল্পটা খুব বেশি অতৃপ্তিতে ভুগিয়ে দেয়!" কথাটির সাথে একমত।
"কিন্তু বাড়ি খালি করে সবাই চলে আইলে..." এর বদলে "কিন্তু বাড়ি খালি কইরা সবাই চইলা আইলে/আসলে..." হয়তো ভাষাটা কো-হেরেন্ট হতো। এ জায়গাটা (এবং তা পুরো গল্পের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য) লেখক ভেবে দেখতে পারেন।
"যাদের বর্তমান অন্ধকার, ভবিষ্যতের কোনও সম্ভাবনা নেই, তাদের কেবল উজ্জ্বল একটা অতীত থাকে।’"-- লাইনটা অসম্ভব ভালো লেগেছে।
লেখকের জন্য শুভকামনা থাকবে।
২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৪
আহা রুবন বলেছেন: আপনাদের মন্তব্যগুলো পড়ে বেশ ভাবনায় পড়ে গেলাম। গল্পের মিষ্টি দেহ বেচে। কিন্তু মিষ্টির শারীরিক চাহিদা পূরণ হয় না। যেখানে প্রেম নেই, নিজের চাওয়া-পাওয়া বলে কিছু নেই। সেখানে কী করে চাহিদা পূর্ণ হতে পারে? কেবলই অন্যের চাহিদা মত সব করা, যাকে মিষ্টি অবলীলায় সয়ে গেলেও মেনে নিতে পারে না বরং ঘৃণাই করে। এসব হজম করে এলেও তার অবচেতন মনের আকাঙ্ক্ষাটি তখনই প্রকাশ পায়, যখন সে কিছু টাকার মালিক হয়। অন্যভাবে বললে অতিরিক্ত টাকাই স্বেচ্ছাচারিতার মাতা। পুঁজিবাদের নির্লজ্জ প্রকাশ ঘটে মানুষের লাম্পট্যের মধ্য দিয়ে।
আমি হয়ত গল্পটা ভালভাবে প্রকাশ করতে পারিনি। আপনার পরামর্শমূলক মন্তব্য ভাবনায় লিলাম।
২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৯
আহা রুবন বলেছেন: ধারণা ছিল যা বলতে চেয়েছি তা বলা হয়েছে। তাই আর বড় করিনি।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৪৮
ঋতো আহমেদ বলেছেন: আনুর কাজকর্মের কিছু চিত্র পাওয়া গেল। সুন্দর বর্ণনা। কিন্তু গল্প তো পেলাম না..