নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পড়তে ও চিন্তা করতে ভালবাসি। ছোট গল্পের সাথে সাথে ব্লগ লিখি।
১
কাজ থেকে ফিরে গোসল শেষে আমগাছ তলায় মুড়ি-ভাজার পোড়া বালির মুঠ ছড়িয়ে দিচ্ছিল দরজার ডাঁসার ওপর। সুবিধার জন্য ডাঁসার এক মাথা টুলের ওপর উঠিয়ে দিয়েছে। বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে ধার পরখ করে উল্টে-পাল্টে দেখছিল, নতুন বানানো লম্বা ছোরাটা। শোভা পাশে এসে দাঁড়িয়েছে খানিকক্ষণ।
‘আচ্ছা একই জিনিসে রোজ রোজ ঘষাঘষি করতে তোমার রাগ হয় না?’
'নাহ, কাজের জন্য কি রাগ করা চলে?’
‘কাজ না ছাই! তোমার ঘরে আছে কী? ডাকাতের আর খেয়েদেয়ে কোনও কাজ নেই...’
‘আমার ঘরে কী আছে সে আমি জানি!’
‘একটু শুনি─রাজা সাহেব, কী আছে?’
শোভা মাঝে মধ্যে সাদেক কে রাজা সাহেব বলে ডাকে। যদিও অনেকে তাকে রাজ বলে। মিস্ত্রীর কাজ করতে গিয়ে এক বাড়িতে শোভাকে দেখে মনে ধরেছিল সাদেকের। অল্প বিস্তর মন দেয়া-নেয়াও হয়েছিল ওদের মধ্যে। বিয়ের প্রস্তাব দেয়ায় শ্বশুর প্রথমে গররাজি থাকলেও সাদেকের প্রশংসা সবার মুখে শুনে খুশি মনেই মেয়েকে সাদেকের হাতে তুলে দেয়।
দুই বছর হল প্রায় ওরা প্রতিবেশীদের কাছে সুখী দম্পতি বলেই পরিচিত।
‘আমাকে কি অতটা বোকা মনে করিস। সেটা বলে দেই আর তুই আমাকে ভুলে ওটা নিয়েই পড়ে থাক না কী?’
‘কয়দিন থকিই একটু, তোমাকে দেখ দেখে অরুচি এসে গেছে।’
'দেব একটা কোপ ঘারে বসিয়ে─বেশি পেকেছিস?’
দুই হাত গলায় জড়িয়ে আত্মরক্ষার অভিনয় করে শোভা।
‘বার দিন হয় রাজা সাহেব; ডাকাতের উঁকিঝুঁকিও তো দেখলাম না তোমার বাড়ি। কী সব শোনো! আগামাথা নাই, গরিবের ঘোরা রোগ, থুক্কু ছোরারোগ আর কী!’
‘ছোরাটা ধার দেই বলেই ভয়ে এমুখো হয় না। নইলে কবেই হানা গিয়ে বসত।’
‘তোমার কুন্নি, কোদাল, হাতুর, উসা, সুতা ঝুলানো বল্টু নিয়ে ডাকাত বউকে বলবে, দেখ কত কিছু এনেছি─তোমাকে এসব গয়না পরলে খুব মানাবে। আর ডাকাতের বউ খুশিতে ডাকাতের গলা জরিয়ে উম্মা দেবে।'
‘তোর যা বুদ্ধি তাই ভাব─আমার জায়গায় থাকলে ঠিকই বুঝতি─আমার ঘরে কী রত্ন আছে।’
‘তুমি কি সোনার কলসি পেয়েছ? তাইলে তো আমরা এখন বড় লোক!’
‘তোর কী মনে হয়, ডাকাত শুধু ধনিদের বাড়িতে যায়? না-রে না গরীবের বাড়িতেও হানা দেয়।’
২
দিনটা গেছে বেশ গরম। সন্ধ্যার পর থেকে বাতাস বইতে শুরু করেছে। সমেসপুর যাবার কথা ছিল কিন্তু আকাশের অবস্থা দেখে যাত্রা বাতিল করেছে।
বিছানায় বসে সাদেক কান খারা করল। চোখে হাত দিয়ে দেখল শোভা ঘুমে। মনে হল সামনের রাস্তায় কিছু লোকের হাঁটার শব্দ। কাঠের বাক্স খুলে ছোরাটা বের করল সাদেক। বাম হাতে ধারটা পরখ করে নিল আরও একবার। দরজায় শেকল তুলে বেরিয়ে এল।
আকাশ মেঘে ঢাকা। ঘুটঘুটে অন্ধকারে রাস্তা তলীয়ে আছে। রাস্তার পাশে পাকুড় গাছটার আড়ালে লুকিয়ে পড়ল সাদেক। পায়ের শব্দ এগিয়ে আসছে─বুকের মধ্যে হৃৎপিণ্ডটা লাফালাফি করতে লাগল। আবার ছোরাটায় ধার বোলাল। হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ল লোকটার ওপর। কোপ বসাল পিঠ বরাবর। সঙ্গে সঙ্গেই একটা গুলি এসে লাগল সাদেকের ডান ঊরুতে। মাটিতে পড়ে গিয়ে কোপ খাওয়া লোকটি চিৎকার করল, 'পালাল, পালাল...’
একজন দৌড়ে চলে গেল।
৩
দু-জনকেই এলাকার ক্লিনিকটায় আনা হয়েছে। সাদেকের গুলি মাংস ছিঁড়ে বেরিয়ে গেছে। আঘাত তেমন মারাত্মক নয়। কোপ খাওয়া লোকটার প্রচুর রক্তপাত হয়েছে, শরীর সাদা হয়ে গিয়েছে। তবে রক্ত পাওয়া গেল─ এ যাত্রায় মরতে মরতে বেঁচে গেল।
পুলিশের গাড়ি চলে এসেছে। এলাকার নেতা মোশারফ মৃধা আগুন স্ফুরিত চোখে জিজ্ঞেস করল, ‘সাদেক তুই এটা কী করলি! পুলিশের গায়ে হাত... একেবারে কোপ...!’ তাকিয়ে রইলেন বিস্ময়ে, তার যেন দু-চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না।
‘লোকটা ডাকাত─আমার বাড়িতে ঢুকতে চেয়েছিল। কোমরে পিস্তল ছিল।’
‘ফাজলামি না!? কোমরে পিস্তল দেখলি আর পুলিশের পোশাক চোখে পড়ল না?’
‘কোনও পোশাক পড়া ছিল না। শুধু পায়ে বুট আর কোমরে বেল্ট...’
‘অন্ধকারে দেখলি কেমনে? আর পোশাক না থাকলে এমনি এমনি সার্টের পিঠের অংশে কেটেছে ? লাথিয়ে না... মাঙ্গের পো।’
সাদেক এর কোনও সদুত্তর দিতে পারল না। নিচের দিকে তাকিয়ে রইল।
৪
খুব সকাল─অন্ধকার মাত্র কেটে যাচ্ছে। সাদেকের দরজায় এসে দাঁড়াল রঞ্জু। যে সকলের কাছে পুলিশের সোর্স নামে পরিচিত। নির্ঘুম রাত কেটেছে বলে দরজা খুলতে দেরি হল না শোভার।
‘ভাবি ঘটনাটা তো ঘটে গেছে, এখন কিছু তো করতে হবে। পুলিশের ওপর আঘাত ফাঁসীও হয়ে যেতে পারে...’
আঁতকে ওঠে শোভা─এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রঞ্জুর মুখের দিকে।
‘টাকা-পয়সা কত কি আছে, যা আছে─পারলে কিছু ধার-কর্জ করে তাড়াতাড়ি চলেন, ধরাধরি করে কতটুকু কী করা যায়... মৃধা সাহেবও সাহায্যের আশ্বাস দিলেন। আপনি বলবেন কিছুদিন হয় মাথার ঠিক নাই..’ উত্তরের জন্য শোভার মুখে তাকাল এবং নিচের ঠোঁট কামড়াল।
‘তাই কি রঞ্জু ভাই...সেটা সম্ভব... ও তো আসলেই পাগল হয়ে গেছে। আমাকে রোজ রোজ মারে, ছুরি দিয়ে জবাই করতে আসে। আগে এমন ছিল না...’ কিঞ্চিত আশা আর মিথ্যা অভিযোগ তোলায় শোভার অদ্ভুত একটা অনুভূতি তৈরি হল─দু-চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগল।
ঝটপট তৈরি হয়ে রঞ্জুর সঙ্গে বেরিয়ে পড়ল শোভা
৫
সারাদিন শহরটা যেন চষে বেড়াল। কত জনের কাছে গেল ঠিক মনে করতে পারে না শোভা। কিন্তু সাদেকের ব্যাপারে সবার সঙ্গে কথা বলল না রঞ্জু। নেতা ধরণের একজন শোভার মাথায় হাত দিয়ে সান্ত্বনা দিল— মা বলে সম্বোধন করল। মাংস ভাত খেতে দিল রেস্তোরাঁয় নিয়ে। সে অবশ্য কিছুই খেতে পারল না। অভয় দিয়ে রঞ্জু বলল ‘না খেলে তো দুর্বল হয়ে যাবেন। এখন আপনাকে সাদেক ভাইয়ের স্বার্থে শক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।’ শোভা শুনে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।
রাত পৌনে এগারোটা— থানাতেই এতক্ষণ ঘোরাঘুরি করেছে ওরা। পাশেই একটা বিল্ডিং এর দোতলায় শোভাকে বসিয়ে বাইরে গেল রঞ্জু। হয়ত এটা থানার এলাকার মধ্যেই হবে। আবার কখনও কখনও পুরো শহরটাকেই থানা মনে হচ্ছিল । বেশ কিছু সময় পর এক পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে বলতে রুমে ঢুকলেন সেই বড় নেতা— যে দুপুরে তাকে মা বলে মাথায় হাত বুলিয়েছেন।
একটা সমীহ-ভাব জাগে এমন চেহারা শোভা ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করে জড়সড় অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াল। এর মধ্যে রঞ্জু অন্য একজনসহ এসে দাঁড়িয়েছে। দুই হাত সামনে ঝুলিয়ে ধরা, মাথা নিচু করে আছে।
দূরের আকাশে একটা বাজ পড়ল— আকাশ ছিঁড়ে তিন টুকরো হয়ে গেল।
৬
সবকিছু ঠিকঠাক করে ফেলা হয়েছে বলে জানাল রঞ্জু, ‘কেস অত্যন্ত দুর্বল—আমরাই সেভাবে তৈরি করলাম।'
শোভাও সাদেককে পাগল বলত— কিন্তু সেটা আদর করে।
৭
খুব সকালে একটা ভ্যান ভাড়া করে তাতে বসিয়ে দিয়েছে শোভাকে। ভ্যান ছুটে চলেছে সামনে, হাওয়া দৌড়ুচ্ছে পেছন পেছন। শোভা দু-হাঁটুর মধ্যে মুখ চেপে ধরে ফুঁপিয়ে উঠল। মনে মনে বলল, 'তুমি ঠিকই বলতে— ডাকাত শুধু ধনি বাড়িতে পড়ে না, গরিবের বাড়িতেও পড়ে...’
দূর থেকে দেখাল মুখ বন্ধ লোহা-লক্কড়ের জীর্ণ একটা বস্তা ভ্যানের ওপর দুলছে। সারা রাত বৃষ্টি গেছে— সকালটা বেশ ঠাণ্ডা।
আহা রুবন
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:১০
আহা রুবন বলেছেন: কেবল বেশ বললে খুশি নই, পরেরবার ত্রুটিগুলো আগে বলবেন। আমাকে দিয়ে কি গল্প হবে না? ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৫৬
কল্লোল পথিক বলেছেন: গল্প বেশ হয়েছে।