নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রেমিকার চিরশত্রু
পরপর তিনবার দরজায় টোকা দিলেন সাঈদ। ভিতর থেকে আওয়াজ আসলো "আসছি!" হারিকেন হাতে নিয়ে দরজা খুলেই বললেন, "আরে সাঈদ যে! এমন চাদর জড়িয়ে, মুখ ঢেকে?"
ব্রিগ. সাঈদ সালাম জানিয়ে বলল, "অনেক জরুরি কথা আছে।" উত্তরে তিনি জানালেন, "জরুরি না হলে তুমি কখনও এই আজমের কাছে আসো না! সমস্যা নাই, ভিতরে এসো, প্রচুর ঠাণ্ডা বাইরে!"
"তো তুমি মীম নামের মেয়েটাকে পছন্দ কর?"
হামজার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না! আমির বিন আলম হলেন হামজা বাবা৷ এত ঠাণ্ডা মেজাজে কথা বলাটা মোটেও গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না হামজার কাছে! তিনি আবারও বললেন, "কি? কোনো কথা বলছো না?"
হামজা বলল, "কি বলবো বুঝতে পারছি না আব্বা!" কথাটা শুনেই হামজার দিকে তাকালেন। হামজা আবারও বলল, "আব্বা স্ট্যাটাস মেলে না! কোনদিকেই না! পারিবারিক হোক আর শিক্ষাগত!"
তিনি এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, "তুমি কি আমার মতামত চাও?"
হামজা বলল, "তুমি আমার উপর মন খারাপ করে আছো?"
"কেন?"
"কারণ হামজা কখনও তোমাকে মাথা উঁচু করে দাড়াতে দেয় নি। গর্ব করে কিছু বলবে সেটাও নেই!"
আলম বললেন, "আমি যা বলি সেটা মেনে নেবে তুমি?"
হামজা বলল, "আমি অলরেডি মেনে নিয়েছি!"
"বলতো কি?"
হামজা বলল, "তোমার সম্মতি নেই!"
হামজার বাবা চুপ করে রইলেন। হামজা বলল, "আব্বা যা তোমার আদেশ থাকে আমাকে বলে দাও। ওর সাথে কথাবার্তা বন্ধ করে দিব? দেখা করব না? কোনটা? আমি এতটাও দুর্বল নই যে সহ্য করতে পারবো না!"
হামজার বাবা টুপি নিয়ে বের হয়ে গেলেন, কোনো উত্তর দিলেন না হামজাকে!
এশার নামাজে বাবা ছেলে একই কাতারে দারিয়ে জামাতের সাথে নামাজ পড়ছে৷ জামাত শেষে বাকি নামাজ পড়ার জন্য হামজা পিছনে চলে গেল৷ সালাম ফিরিয়ে আলম দেখলেন হামজা দুই হাত তুলে আছে আল্লাহর দরবারে! হামজার দিকে কিছুক্ষণ তাকাতেই তার চোখ ভিজে উঠল। আমির বিন আলম তার সেই সময়ের কথা মনে করছে যখন তিনি হামজার এই বয়সে ছিলেন! মাঝে মাঝে ভাবেন হামজার তো এমন সৎ, সহজ-সরল হওয়ার কথা ছিল না যেখানে আলম ছিল স্বভাবে একদম উল্টো! বাইরে এসে হাটতে শুরু করলেন। হারানো দিন গুলোকে অবহেলা করেছিলেন তিনি। হামজা যখন বলল স্ট্যাটাস মেলে না তখনই তিনি কষ্ট পান। তিনি হামজাকে বলতে চান পরিবারের এই স্ট্যাটাসের জন্য হামজা কোনোভাবেই দায়ী নয়৷ সব দোষ তার৷ অপরাধ যা করার আলম করেছেন, হামজা তো নির্দোষ, নিষ্পাপ, মাসুম! বাসায় এসে হামজাকে বললেন, "চিন্তা করিস না, আল্লাহ আছেন। আমাদের কার কি দরকার সেটা আমাদের চেয়ে আল্লাহই ভাল জানেন৷"
দুইদিন আগে,
"হুজুর, আমি আপনার ছাত্র ছিলাম।"
আজম হুজুর বললেন, "ছিলাম মানে? এখন নাই?"
"এখনও হুজুর। আমি যত বড় বিপদে বা সিদ্ধান্তহীনতায় থাকি তখনই আপনার কাছে আসি পরামর্শ নিতে৷ আপনি আমাকে আমার ছেলেবেলা থেকে চেনেন, জানেন৷"
আজম হুজুর বললেন, "আমি জানি, বল তোমার কি বিষয়ে পরামর্শ লাগবে?"
ব্রিগ. সাঈদ জানালেন, "বিয়ের ব্যাপারে, আমার মেয়ের!"
আজম হুজুর মুচকি হেসে বললেন, "আমি বোধ হয় কিছুটা বুঝতে পেরেছি তো পেরেশানি!"
"দেখলেন? আমার বলতে হল না কিন্তু আপনি বুঝে গেলেন!" "তারপরও আমি বিস্তারিত শুনতে চাই৷"
তিনি বললেন, "সে আমাকে একটা ছেলের কথা বলল, ওরই ক্লাসমেট কিন্তু আলাদা। এখন সমস্যা হচ্ছে..."
"সমস্যা হচ্ছে তুমি ব্রিগেডিয়ার, তোমার একটা সামাজিক মর্যাদা আছে, তোমার আত্মীয় স্বজন কি বলবে/ভাববে?"
সাঈদ মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
হুজুর আবারও বললেন, "আমাদের ছেলে-মেয়েরা আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে আমাদের জন্য পরীক্ষাস্বরুপ। আমরা যদি তাদের দ্বীন, শিক্ষা, আদব কায়দা না শিখাই তার মানে হল আমরা ব্যর্থ! আমাদের সমাজ পাত্র পাত্রীর অর্থ দেখে রায় দেয় বিয়েটা দেয়া ঠিক হবে কিনা! পাত্র-পাত্রী একে অপরকে পছন্দ করে কিনা এটা দেখে না! সবকিছুর ওজন দেয়া হয় টাকা দিয়ে! ইসলাম জীবনসঙ্গী বাছাই করতে মানা করে নি, এটাও মানা করে নি তাদের অর্থ কেমন সেটার দিকে নজর দেয়া। কিন্তু সবকিছুই সম্পদ দিয়ে মাপা যায় না।
একটাবার তোমার কথাই চিন্তা কর না কেন?"
ব্রিগ. সাঈদ বললেন, "জ্বি হুজুর, বুঝতে পারছি৷ আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমার নিজেকে।"
হুজুর মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, "অর্থ দিয়ে তুমি আরামদায়ক বিছানা তৈরী করতে পারবে কিন্তু ঘুম কিনতে পারবে না! খাদ্য কিনতে পারবে কিন্তু ক্ষুধা কিনতে পারবে না। দামী ঘড়ি কিনতে পারবে কিন্তু সময় কিনতে পারবে না।"
ড. নাজনীন কে হন্যে হয়ে খুজছে নার্স দিলরুবা! কোথাও না পেয়ে শেষে কল করল তাকে। তিনি রিসিভ করতেই বলল, "ম্যাম আপনি কোথায়?"
উত্তরে নাজনীন বলল, "ডিউটি শেষ, কিছু বলবে?"
"ম্যাম আপনার সাত নম্বর বেডের পেসেন্টের হঠাৎ প্রেশার লো হয়ে গেছে! অন্যকোনো ডাক্তার নেই ওয়ার্ডে!"
ড. নাজনীন হসপিটালের দিকে দ্রুত হাটা দিলেন। সাত নম্বর বেডে অভ্রের কাছে গেলেন ড. নাজনীন। অভ্রের শরীর কাপছে। একটুপর ড. কাউসার এল। কোনভাবেই স্বাভাবিক হচ্ছে না রক্তচাপ! ড. কাউসার বললেন, "আমি দেখছি, নার্স এই কিটটা নিয়ে এসো৷
সেদিন রাতে অভ্রের শারীরিক অবস্থার একটু উন্নতি হল। রাতে রাউন্ডে এসে ড. নাজনীন দেখলেন অভ্রের বেডের নিচে একটা কলম পরে আছে! কলমটা তুলে পরিষ্কার করে নিল। অভ্র বলল, "খুব ক্লান্ত লাগছে আজ!"
নাজনীন বললেন, "কথা বলবেন না। রেস্ট নিন।"
অভ্র একটা কাগজ হাতে নিয়ে বলল, "এটা নাও।"
নাজনীন কাগজটা খুলে বলল, "কি এটা।"
"না না, এখনই দেখার প্রয়োজন নেই৷ যদি কখনও সময় পাও তাহলে লিখিত ঠিকানায় যেও।"
নাজনীন প্রশ্ন করল, "কার ঠিকানা?"
"আর দ্বিতীয় আরেকটা ঠিকানা আছে, ১ম ঠিকানায় যাওয়ার পর যদি কাউকে পাও তাহলে দ্বিতীয় ঠিকানায় তাকে নিয়ে যাবে৷"
ড. নাজনীন কাগজটা পকেটে রেখে বলল, "ইনশাআল্লাহ যাবো, আপনি রেস্ট করুন এখন।"
"স্যার, ওই যে উনি, উনিই আমির বিন আলম! ডেকে নিয়ে আসবো?"
সাঈদ বললেন, "না, এটা আমার কাজ৷"
এই বলে গাড়ি থেকে নামলেন সাঈদ। আলমের সামনে দারিয়ে বললেন, "আসসালামু আলাইকুম আলম সাহেব।"
আলম কিছুটা অবাক হল! স্যুট-কোট পরিধান করা এক ভদ্রলোক, আলম উত্তরে বললেন, "ওয়ালাইকুম আসসালাম। কিন্তু আপনাকে ঠিক চিনলাম না!"
"চেনার কথাও না, আমি আমার পরিচয় দিচ্ছি, আমি ব্রিগেডিয়ার হাসান আল সাঈদ।"
"জ্বি এখন চিনতে পেরেছি। আপনি মীমের বাবা? হামজা কি মীম বা আপনার সাথে কোনোরকম বেয়াদবি করেছে?"
সাঈদ হালকা হেসে বলল, "আরে না না, আমি এসব বলতে আসি নি৷ আপনি আমাকে দশ মিনিট সময় দেন, গাড়িতে আসুন, কিছুক্ষণ কথা বার্তা বলে আপনাকে বাসায় পৌছে দিয়ে যাবো।"
আলম জানালেন, "আপনি আমার সাথে কথা বলতে এসেছেন, এখন আমার দায়িত্ব আপনাকে আপ্যায়ন করা। প্লিজ বাসায় আসুন। এটাই সবচেয়ে ভাল হবে।"
"তাহলে হামজা আর মীমের বিয়ে মীমের বাবা সম্পূর্ণ খুশি মনে মেনে নিয়েছিলেন?" ড. নাজনীন প্রশ্ন করলেন৷
"হ্যা!"
"তাহলে আপনার সাথে মীমের কিভাবে ভাল সম্পর্ক তৈরী হয়েছিল?" অভ্র বলল, "ওই যে বললাম, আমি ওর বিশ্বাস অর্জনের টার্গেটে ছিলাম। মীম প্রথমে ভেবে নিয়েছিল হামজার নিখোঁজ হওয়ার পিছনে আমার মুখ্য ভুমিকা ছিল!"
নাজনীন বলল, "হওয়ারই কথা! আপনি হামজাকে সহ্য করতে পারতেন না আর অতীত হিসাবে অনেকবার মারধরও করেছেন!"
"হামজার নিখোঁজ হওয়ার রিপোর্ট দুই থানায় করা হয়েছিল। ঢাকা এবং যশোর কোতোয়ালী থানায়৷ সেখান থেকে আমার বাসায়ও যায় পুলিশ! নানান তল্লাশি চালায় কিন্তু কিছুই পায় নি! আমি প্রত্যেকবার বলেছিলাম হামজার সাথে যোগাযোগ ছিল না প্রায় দেড় বছর! পুলিশ হামজা, আমার এবং হুজাইফার কল লিস্টও চেক করেছিল কিন্তু কোনো প্রমাণ পায় নি! হামজার এই কেসে আমরা কয়েকজন প্রচুর হয়রানি হয়েছিলাম!"
"তো উনাকে কি আর খুঁজে পাওয়া যায় নি?" নাজনীনের প্রশ্নে অভ্র বলল, "ওর কোনো খবর আমি জানি না৷ হয়তো পাওয়া গেছে কিংবা আজও অজানা!"
"কেমন ফিল হচ্ছে তোর?" মিল্লাতের প্রশ্ন।
হামজা খুশিতে কি বলতে বুঝতে পারছে না৷ শুধু বলল, "ভাই এনগেজমেন্টের দিন আপনাদের দাওয়াত। আপনি আর আতিক ভাই অবশ্যই থাকবেন।"
আতিক বলল, "তুই দিন তারিখ জানানো ছাড়াই আমাদের থাকতে বলছিস?" মিল্লাত আর আতিক হাসাহাসি শুরু করে দিল!
"ওহ ভাই আসলে ভুলেই গেছি! আগামী শুক্রবার ভাই, ইনশাআল্লাহ।"
আতিক আবারও প্রশ্ন করলো, "সে না হয় বুঝলাম কিন্তু বিয়ে কবে?" "আমাদের দুই পরিবারের মতামত অনুযায়ী ফাইনাল পরীক্ষার মাস দুয়েক পর।"
"যাক মাশাআল্লাহ!"
"মীম আমাকে জানিয়েছিল যেদিন তাদের আংটিবদল হয় সেদিনের সম্পূর্ণ সময়টা সে কি কি করেছে এবং ভবিষ্যতের জন্য কি কি ভেবেছিল৷ আমি শুনতাম সবটাই কিন্তু গুরত্ব দিতাম না! হামজার হারিয়ে যাওয়া আমাকে এক প্রকার অপকার করলেও আমি সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছি! ওর কারণেই মীমকে হারিয়েছিলাম আবার ওর কারণে মীমের কাছে আসতে পেরেছি!"
নাজনীন জিজ্ঞেস করল, "তাহলে কোন কারণে মীম আজ আপনার পাশে নাই?"
অভ্র কিছু বলল না! এই উত্তর তার কাছে নেই। হঠাৎ আবার কাশি শুরু হল অভ্রের! ড. কাউসার গতকাল বলে দিয়েছে নাজনীনকে রোগীর সাথে অপ্রয়োজনীয় কথা না বলতে! অভ্র কষ্ট করে বলল, "উত্তর আছে। কেন যেন মনে হচ্ছে সময় খুব কম আমার হাতে!"
[চলবে]
২| ১৪ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৮:২৩
মু রাশেদুজজামান বলেছেন: this is a please where you can publish it hi there what a moment it is
৩| ১৪ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:১৪
রাজীব নুর বলেছেন: আজম হুজুর চরিত্রটা ভালো করেছেন।
১৪ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:১৮
দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৮:১৫
মু রাশেদুজজামান বলেছেন: its a good story /the first idea hi click here