নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবতে ভালবাসি, সেই ভাবনা যদি কোনো ঘটনায় মিলে যায় তবে তাকে লিখতে ভালবাসি! সেই লেখায় যদি কেউ বিন্দুমাত্র উপকৃত হয় তবে তাতেই আমার খুশি, আমি লেখাকে ভালবাসি।

দর্পণের প্রতিবিম্ব

প্রেমিকার চিরশত্রু

দর্পণের প্রতিবিম্ব › বিস্তারিত পোস্টঃ

"যশোর"

১৪ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১২:৫০




"কেমন আছিস হামজা?" হুজাইফা বলল।
"আরে তুই কখন আসলি? একবার জানালি না!"
হুজাইফা বলল, "ইচ্ছা ছিল না জানানোর। আর বাস থেকে নামার সাথে সাথে একজনের সাথে দেখা হয়ে যায়! বলতো কে?"
"আমি কিভাবে জানবো? দেখা হয়েছে তোর সাথে, তুই জানিস!"
"তুই না বললে জানতামই না তোর জানার কথা! যাই হোক, মীমের সাথে দেখা হয়েছিল। তোর কথা জিজ্ঞেস করল। বলল কিছুদিন যাবৎ খুব ব্যস্ত আপনি?"
হামজা বলল, "একটু এড়িয়ে যাচ্ছি শুধু।"
"টেস্ট?"
হামজা হেসে বলল, "হুম তাই।"
আতিক এসে বলল, "হামজা কাল তোর হেল্প লাগবে আমার, কোথাও যাস না, ভার্সিটিতে থাকিস।"
"কেন ভাই?" আতিক বলল, "সার্টিফিকেট তুলবো।"


পরেরদিন হামজা আর আতিক অফিসের দিকে যাচ্ছিল হঠাৎ হামজা খেয়াল করল মীম তার দিকে রাগী নজরে তাকিয়ে আছে! হামজা স্বাভাবিক হয়ে হাটা চালিয়ে যেতে লাগলো। আতিক বলল, "কি রে? ঝগড়া চলে নাকি?"
"না ভাই, টেস্ট চলে। আমার নিজের! কেন জানি মনে হয় ইদানিং শুধু মীমের কথাই মনে পরে!"

সকল কাগজপত্র জমা দিয়ে হামজা ক্লাসের দিকে আগাতেই মীম সামনে দারিয়ে যায়! সরাসরি জিজ্ঞেস করল, "ইগ্নোর করার কারণ কি?" কিন্তু হামজা কোনো উত্তর দিতে পারছে না! মীম আবারও বলল, "ওহ আচ্ছা তুমি তো আবার অভ্রকে খুব পাও!"
হামজা বলল, "মোটেও না!" মীম বলল, "বাহ! কথা বের হয়েছে তাহলে?"
"ও... আ.. আসলে আমি ইচ্ছা করেই এমন করছিলাম!"
"কিন্তু কি জন্য এমন করা?"
হামজা বলল, "জানি না, ইচ্ছা হল!"


"মীম যখন হামজার স্মৃতি গুলো আমার সাথে শেয়ার করতো, আমার শুনতে একদমই ইচ্ছা করতো না! কিন্তু ওর ট্রাস্ট আমাকে অর্জন করতেই হবে তাই ওর সকল কথা শুনতাম! সেদিন মীম বলেছিল, "আমার খুব রাগ করতে ইচ্ছা হচ্ছিল হামজার উপর কিন্তু কেন যেন সম্ভব হল না!" আমি পরে ওকে কারণ জিজ্ঞেস করলাম। মীম বলল, "ওর নিষ্পাপ চাহনি আর সাবলীল ভাষায় আমি রাগ করতে পারি নি!" যদিও আমার জন্য খুবই কষ্টকর ছিল হামজার গুণগান মীমের মুখে শোনা!"
ড. নাজনীন জিজ্ঞেস করল, "বুঝলাম আপনার জন্য কষ্টকর কিন্তু মীম কেন হামজার কথা আপনাকে বলতে যাবে? সে তো আপনাকে সহ্য করতেই পারতেন না!"
অভ্র হালকা হেসে ফেলল! হালকা কাশি দিয়ে বলল, "আমরা মানুষ যখন একাকী বোধ করি, মনের মধ্যে হাজারও কথা জমা যখন হয়ে যায় এবং কোনো স্রোতা থাকে না মানুষ তখন যাকে দেখতে পারে না কখনও কখনও তার সাথেও শেয়ার করে ফেলে! শুধু দরকার তার পাশে দাঁড়ানোর! আমিও তাই করেছিলাম।"
"আপনি এখানে এডমিট হয়েছেন আজ দশদিন, এপর্যন্ত কেউ আপনাকে দেখতে এল না কেন? আপনার ছেলে মেয়ে অথবা চেনা পরিচিত কেউ?" ড. নাজনীনের প্রশ্নে অভ্র বলল, "সময় হলে সবাই আসবে আর আমি কাউকে আমার ঠিকানা দিই নি।"
ড. নাজনীন বলল, "১ম তিনদিন আপনাকে নিয়ে আমরা ডাক্তাররা বেশ চিন্তিত ছিলাম। আল্লাহর রহমতে বর্তমানে আপনার শারীরিক অবস্থার বেশ উন্নতি হয়েছে।"
অভ্র বলল, "আমার বিল কত জমা হয়েছে?"
"এটার হিসাব নেই আমার কাছে!"
দশম দিনের রিপোর্ট লিখে অভ্রকে রেস্ট করতে বলে রাউন্ড শেষ করে রুমে ফিরে আসে নাজনীন।


"দেখতে দেখতে আমরাও এখন সিনিয়র হয়ে গেলাম!" অনেকটা চিন্তিত স্বরে বলল মীম! হামজা চুপ করে বসে আছে। মীম বলল, "মনে হচ্ছে সেদিন এসে ভর্তি হয়ে গেলাম, তোমার সাথে ট্রেনে পরিচয় হওয়া, আবার ভার্সিটি এসে দেখা হওয়া তারপর এখন ফাইনাল ইয়ার!"
হামজা চুপচাপ বসে আছে। হাতঘড়ি খুলে সময়ের দিকে তাকিয়ে আছে হামজা! মীম বই দিয়ে একটা আঘাত করে বলল, "আমি কার সাথে বলছি?" হামজা বলল, "কি যেন বলছিলে?" মীম রেগে বলল, "তোমার বিয়ে কবে?"
"ধুর...." মীম জিজ্ঞেস করল, "আজকাল কোথায় হারিয়ে যাও? যখন তোমাকে দেখি খুব হতাশ বা কি যেন ভাবো? শেয়ার কর আমার সাথে।"
হামজা বলল, "সেটাই ভাবি যার ধারে কাছে তুমি কখনও যাও নি! যার স্পর্শও তুমি পাও নি!"
মীম জিজ্ঞেস করল, "কি সেটা? আর এতো সিরিয়াস কেন তুমি?"
মীমের দিকে তাকিয়ে বলল, "আছে অনেক কিছু! ধীরে ধীরে সব দেখা দিবে।" মীম হামজার হাত ধরে বলল, "তুমি কি আমার ব্যাপারে সিরিয়াস নও?"
হামজা কিছু বলল না। মীম আরেকটু শক্ত করে হামজার হাত ধরল! হামজা বলল, "আমাদের স্ট্যাটাস এক নয়"
মীম বলল, "ওহ আচ্ছা! এখন তাহলে এই জমানার বিখ্যাত সেই ডায়ালগ ঝারাই বাকি আছে?"
হামজা জিজ্ঞেস করল, "কেমন ডায়ালগ?"
"তুমি আমার থেকে বেটার কিছু ডিজার্ভ কর!"
মীমের কথা শুনে হামজা আর কিছু বলল না। শুধু বলল, "সবুর কর। দেখি কিছু হয় কিনা।"


"কি অবস্থা এখন আপনার?" ড. নাজনীন জিজ্ঞেস করল। অভ্র বলল, "জ্বি একটু ভাল লাগছে।"
"আপনার ব্লাড প্রেশার একটু উন্নতি হয়েছে।"
অভ্র বলল, "আ... একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারি?"
ড. নাজনীন বলল, "জ্বি অবশ্যই।"
"তুমি কি ম্যারিড?" অভ্রের এমন প্রশ্নে ড. নাজনীন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল! নিচুস্বরে বলল, "না।"
অভ্র একটু হেসে বলল, "জানতাম।"
ড. নাজনীন জিজ্ঞেস করল, "কিভাবে?"
অভ্র বলল, "এই ধর আন্দাজ করলাম! এতগুলো বছরের অভিজ্ঞতা বলে কথা!"
ড. নাজনীন বলল, "আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আপনার অতীতটাই আমার বর্তমান!"
"অস্বাভাবিক কিছু না! এখনও যদি আমার কোন ন্যাচার তোমার মধ্যেও থেকে থাকে তাহলে সেটাকে শুধরে নাও! সময় চলে গেলে আফসোসই হবে। এই আমাকেই দেখ! কেউ আসে না দেখতে! ছেলে-মেয়ে, বউ কেউ নাই!"
ড. নাজনীনের চোখ ভিজে যাচ্ছে! রুমাল দিয়ে চোখ মুছে বলল, "কেউ একজন ছিল যে সবসময় আমার খেয়াল রাখতো!"
অভ্র বলল, "হুম, এখনও তার কথা মনে পরে তাহলে?" ড. নাজনীন বলল, "আমি কারও সাথে শেয়ার করি নি আজ পর্যন্ত! আজ আপনার সাথে শেয়ার করলাম। এখন এমন অবস্থা আমি শত চেষ্টা করলেও সে আসবে না আমার কাছে।"
অভ্র বলল, "তারপরও তোমার চেষ্টা করা উচিৎ! যদি কোনো কারণে ব্যর্থ হও তবে নিজেকে সামাল দিতে পারবে এই বলে যে তুমি চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখো নি!"
ড. নাজনীন চোখ মুছে নিল। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে এগারোটা ছুই ছুই! "এখন আপনি রেস্ট নিন। সকালে দেখা হবে আপনার সাথে।"


"ভাই তুই কোথায়?" অস্থির হয়ে হামজা জিজ্ঞেস করল হুজাইফাকে। সে উত্তরে বলল, "কি ব্যাপার তোর কণ্ঠ এমন শোনা যাচ্ছে কেন?"
"ভাই একটা জরুরি আলাপ করা লাগবে তোর সাথে, পরামর্শ চাই। কোথায় আছিস বল, না হয় আমি আসি!"
"আচ্ছা ঠিক আছে, পার্কে দেখা কর!" হুজাইফা বলল।
"তুই পার্কে কি করিস?" হুজাইফা বিরক্ত হয়ে বলল, "তুই এসে দেখে যা।"
যানজট ঠেলে ঠিক ৪০মিনিট পর হামজা এল হুজাইফার কাছে। হুজাইফার সাথে সে একটা মেয়েকে দেখে কিছুটা অবাক হল! চেনা চেনা লাগে কিন্তু মনে পরছে না! চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করল, "কে সে?"
হুজাইফা বলল, "আ.. এ হচ্ছে আমার কাজিন, হামজা! আর হামজা, সে হচ্ছে আমার ক্লাসমেট আফরোজা!" পরিচয় করিয়ে দেয়ার পর হামজা তাকে সালাম দিল। হুজাইফা বলল, "হামজা, দুই মিনিট বস আমি ওকে বিদায় দিয়ে আসি।"
কিছুক্ষণ পর হুজাইফা এসে বলল, "ভাইরে ভাই! কি হইছে তোর?"
"বসে পর। শোন, জানিস তো মীম আমাকে কত ভালবাসে?" হুজাইফা মাথা নেড়ে বললো, "হুম জানি!"
"সমস্যাটা আসলো এখানে যে, আমরা এখন সবমাত্র অনার্স পাশ! মানে এখনও করি নি"
"আচ্ছা, তারপর?" হামজা বলল, "মীম বলতেছে সময় থাকতে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা কর।"
হুজাইফা বলল, "ঠিকই তো বলছে! খারাপ কি?"
হামজা রেগে বলল, "আরে বলদ! ভবিষ্যত মানে সে বিয়ের কথা বলছে! লাস্টে বলল আমি যেন সেই বিখ্যাত উক্তি না দিই তুমি আমার থেকে বেটার কিছু ডিসার্ভ কর!"
"তো বল এখানে আমার কি কাজ?" হামজা বলল, "একটু পরামর্শ দে আমাকে। মীমের ব্যাপারে বাসায় কথা বলা ঠিক হবে কিনা?"
হুজাইফা বলল, "চল হাটি, হাটতে হাটতে কথা বলি।
হামজা বলল, "এখন বল কি করা যায়?"
"পালিয়ে বিয়ে করে ফেল!" এই বলেই হুজাইফা হো হো করে হেসে উঠল।
"দোয়া কর যেন এমন সিচুয়েশন তৈরি না হয়।" হুজাইফা বলল, "দেখ ভাই, প্রেমের ক্ষেত্রে সিনিয়র জুনিয়র টাইপ গুলাও বিয়ে হয় না। আর তুই তো ভাই সেমএজ রিলেশনশিপে জরাইছিস! চোখ বন্ধ করে ভবিষ্যৎ...." হুজাইফাকে থামিয়ে দিয়ে হামজা বলল, "ওসব আমি জানি, আমি তোর কাছে আসছি কিছু বুদ্ধি পরামর্শের জন্য।"
হুজাইফা বলল, "আমি এক্ষেত্রে অসহায়, ঠিক তুই এখন যেমন অসহায়!"


"যেদিন আমি ভার্সিটি যাই, আমার কাছে ক্যাম্পাস অচেনা অচেনা লাগতে শুরু করে! ওই মেইন গেটে যে দাঁড়াত সে আমাকে দেখে ভয়ে লুকিয়ে যেত! প্রত্যেক আড্ডা থেকে কেউ না কেউ বলতো, "অভ্র ভাই কি অবস্থা/কেমন আছেন ভাই!" আরও কত কি!" ড. নাজনীন বলল, "আমি আন্দাজ করতে পারছি আপনি কতটা ফেমাস ছিলেন ক্যাম্পাসে!"
অভ্র বলল, "হুম ছিলাম কিন্তু দুটো ঝড় আমার সকল নাম ডাককে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে! তখন পর্যন্ত ভাবতাম ওটা হামজার দোষ!"
ড. নাজনীন কৌতূহল মনে জিজ্ঞেস করল, "কেমন?"
অভ্র বলল, "আমি গেট দিয়ে ঢুকে যখন বিশাল কাঠালগাছটার নিচে বসে আমার পুরানা দিন গুলো মনে করছিলাম তখনই কিছু ছাত্রছাত্রী এসে আমাকে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে গেল! আমি ভেবে নিয়েছিলাম এটা র‍্যাগিং চলছে কিন্তু কাগজটা দেখে আমি সাথে সাথে দারিয়ে গেলাম!" ড. নাজনীন কারণ জিজ্ঞেস করল। অভ্র বলল, "কাগজটায় হারানো বিজ্ঞপ্তি লেখা ছিল! আর নামটা খুবই চেনা, হামজা!"
অভ্র একটু থেমে আবারও বলতে লাগলো, "আমি তখনও বুঝতে পারছিলাম না হামজা নিখোঁজ হবে কেন? আমি যতই হামজাকে অপছন্দ করি না কেন কখনও ভাবি নি ওর নিখোঁজ সংবাদ আমাকে শুনতে হবে!"

[চলবে]

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: প্রথম পর্ব পড়লাম।
প্রথম পর্বে আকর্ষন বোধ করার তেমন কিছু পেলাম না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.