নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রেমিকার চিরশত্রু
শেষ পর্ব,
কেবিনে বসে ডাক্তারের অপেক্ষা করছে নাসির এবং আহসান। ফাইয়াজের শারীরিক অবস্থার মাঝে মাঝে উন্নতি হলেও ডাক্তার এখনও সুস্থতার সলিড কোনো রায় শুনায় নি। এরমধ্যে ডাক্তার এসে দেখে নিলেন ফাইয়াজকে। আহসান এবং নাসিরকে বাইরে ডেকে নিলেন। বললেন, "ডেমেজ স্পটটা এখনও হিল হচ্ছে না। তাই আমার আপনাদের প্রতি অনুরোধ আপনারা উনার সাথে কোনো রকম কথা বলবেন না।"
নাসির জিজ্ঞেস করল, "ডক্টর, উনার ঠিক হতে এত সময় লাগছে কেন? কতদিন লাগবে আরও?" ডাক্তার নাসিরের কাধে হাত রেখে বলল, "আল্লাহ তায়ালাকে ডাকুন, সব উনার মর্জি।"
চাবিরিং বের করে আঙুলে ঘুরাতে লাগলো আহসান। ফাইয়াজকে এভাবে দেখে মোটেই ভাল লাগছে না তার। আহসান নাসিরকে ডেকে বললো, "চল মকবুলকে মোচড়ে আসি। সবই ওর চাল। ওকে আজ শ্যুট আউটে নিব আমি।"
নাসির বলল, "স্যার স্যার, এসময় উত্তেজিত হওয়া যাবে না স্যার।"
আহসান বসে পরলো। চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে। বারবার ফাইয়াজের কথা মনে পরছে! বিশেষ করে তার ছোট্ট মেয়েটার কথা। ফাইয়াজের কিছু হলে অবুঝটা বুঝতেই পারবে তার বাবার মনের কষ্টটা। ব্রেন টিউমারে ফাইয়াজের প্রিয়তমা স্ত্রী জান্নাত তাকে ছেড়ে চলে গেছে। একটুপরে নাসির এসে বললো, "স্যার মকবুলের ঠিকানা পাওয়া গিয়েছে, গা ঢাকা দিতে পারবে আর!" আহসান চোখ মুছে রিভলভারের ম্যাক্সিন দেখে নিয়ে বললো, "চল, তাকে জিজ্ঞেস করি, How is the tea?"
রেলওয়ে এরিয়ার ছোট্ট একটা ঘরের ঠিকানা পেয়েছে তারা। "রেলওয়ে পুলিশকে খবর দেয়া হইছে নাসির?" আহসান জিজ্ঞেস করল।
"না স্যার, টাস্ক যেহেতু আমাদের তাই আমরাই করব, কারও হস্তক্ষেপ চাই না স্যার!"
আহসান বলল, "আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমরা মকবুলকে পাবো না।"
নাসির বলল, "কেন স্যার?"
"একজন পুলিশ জানে পুলিশ কিভাবে কাজ করে! দ্বন্দ্বটা যখন আমাদের মাঝেই, আমরা জানি কার কেমন দুর্বলতা আছে আর কিভাবে দুর্বলতাকে কাজে লাগাতে হয়! মকবুল জানে আমরা আসবো তার খোঁজে এবং সে চায় আমরা তার পিছু পিছু যাই!"
নাসির বললো, "স্যার আমার মনে হয় এদের ভিতরে দ্বন্দ্ব লেগেছে, না হলে ফাইয়াজ স্যারকে তারা আরও আগেই মেরে ফেলতে পারতো! কিংবা মকবুলও চাইলে সমরেশ, রাজা এবং আমিনকেও মেরে ফেলতে পারতো!"
"সেটাও হতে পারে, এখন দেখার পালা পানি কোনদিকে গড়ায়...!"
গাড়িটা কিছুটা দুরে রেখে নেওয়াজকে বলল, "আপনি এখানেই থাকেন, মকবুলের স্পাইরা আশেপাশে কোথায় ঘোরাফেরা করছে হয়তো! আর এটা রাখেন, যদি প্রয়োজন মনে হয় তবে চালাবেন।" নেওয়াজ অস্ত্রটা নিয়ে আহসানকে বলল, "স্যার মানুষ মারা আমার পক্ষে সম্ভব না। এই সাহস আমার নাই। হাতে কাঁপুনি উঠে যাবে স্যার!"
"রাখেন এটা..."
নাসিরকে নিয়ে আগানো শুরু করল আহসান। দুইমিনিট হাটতেই নাসির বলল, "স্যার, এটাই।"
বস্তির নিচে দারিয়ে আছে তারা। বাচ্চা কাচ্চারা সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছে দুই লোক গুলি হাতে দারিয়ে আছে! ঠিক যেমন ভাবে তারা গুলি গুলি খেলে! নাসির তাদের ঈশারায় চুপ থাকতে বলল। বাসায় উঠার সিড়ির কাছে আসতেই আহসান হাত উপরে তুলে মুঠ করে ফেলল। নাসির থেমে গেল। আহসান বললো, "প্রতিটি স্টেপ কেয়ারফুলি, চেক কর কোথাও কোনো ট্র্যাপ আছে কিনা।"
"ইয়েস স্যার!"
আহসান খুব সাবধানে রিভলভার তাক করে সিড়ি দিয়ে উঠছে আর নাসির উল্টো পায়ে উঠছে। দরজার কাছে আসতেই নাসির চাকু বের করে ঢুকিয়ে দিল দরজার মাঝ বরাবর। নিচ থেকে উপরের দিকে উঠলো কিন্তু চাকুতে কিছুই বাধলো না!
"ক্লিয়ার স্যার"
আহসান বাম বাহু দিয়ে প্রচণ্ড এক ধাক্কা মেরে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে পরলো কিন্তু মকবুলকে পেল না! নাসির বাকি রুম গুলোও চেক করে নিল। আহসান দেখে নিল জানালা দিয়ে কিছু দেখা যায় কিনা! নাসির এসে বলল, "নেগেটিভ স্যার! কিছুই পাওয়া যায় নি, দেয়াল, ফ্লোরে কিছুই নেই!"
আহসান বললো, "বলেছিলাম না মকবুলকে পাবো না! আমার ধারণা ঠিক ছিল।" আহসান পিনবোর্ডের সামনে এসে দেখলো ছোট্ট একটা কাগজ গেথে দেয়া আছে! নাসিরকে ডেকে দেখালো, লেখা আছে, "আমার টার্গেট সম্পূর্ণ শেষ না করা পর্যন্ত আমাকে ধরতে পারবেন না। ফাইয়াজের পাশে থাকুন, ওয়াদা রইলো কাজ হয়ে গেল আমি সারেন্ডার করবো!"
আহসান জিজ্ঞেস করলো, "কি বুঝলে নাসির?"
"স্যার সে কি ফাইয়াজ স্যারের কোনো ক্ষতি করবে?" আহসান মৃদু হাসি দিয়ে বললো, "না, আমাদের ইনডিরেক্টলি চ্যালেঞ্জ করছে সে! আমি তো তোমাকে ছাড়ছি না মকবুল।"
তিনদিন পর,
পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে পিয়াস বললো,
"হ্যালো আহসান স্যার!"
- জ্বি।
- স্যার একটা নিউজ, স্যার আপনার দেয়া নম্বর গুলোর একটা এখন সেন্টার শপিং মলের দিকে আছে এবং ওই নম্বর থেকে একজন কথা বলেছে সেও শপিং মলের দিকেই আগাচ্ছে! আশাকরি তারা মিট করবে!
"ওকে থ্যাংকস!" নাসিরকে ডেকে ২টা স্কেচের ছবি তুলল। সে আশা করছে এরাই দুইজন হবে! ১২জন সিভিল পুলিশ রেডি। ছবিগুলো সবার মোবাইলে দিয়ে দিল আহসান। আহসান তাদের বলল, "আপনার সবাই দুইজনের গ্রুপে ভাগ ছয়টা টিম হবেন। সাসপেক্টদের ছবি আপনাদের দেয়া হয়েছে আর অফিসার মকবুলকে আপনারা তো চেনেন। আমাদের টাস্ক এদের সবাইকে জীবিত ক্যাপচার করা। কোন কনফিউশন?"
সবাইকে একত্রে উত্তর দিল, "নো স্যার!"
"Any Question?"
"No Sir!"
"ওকে, আপনাদের সাথে আরও ছয়জন এজেন্ট থাকবে যারা সিকিউরিটি ক্যামেরায় নজর রাখবে। তাদের সাথে সবসময় যোগাযোগ রাখবেন। গুড লাক!"
সেন্টার শপিং মল,
পার্কিং লট,
"Ok, are we ready?" আহসান বলল
"Yes Sir!"
"এজেন্টরা, আপনারা কন্ট্রোলের দিকে চলে যান, আলাদা আলাদা হয়ে। আর বাকি আপনারা দুইজনের গ্রুপ হয়ে প্রত্যেকটা পয়েন্ট নজর রাখা শুরু করেন। পাবলিক প্যানিক যেন না হয়। এটা পুলিশ বনাম ক্রিমিনাল পুলিশ বনাম ক্রিমিনাল। ত্রিদলীয় লড়াই!"
আহসানের কথামত সবাই আলাদা হয়ে শপিং মলের বিভিন্ন পয়েন্ট চলে গেল। আধাঘন্টার মত সবাই বিভিন্ন পজিশনে অপেক্ষা করছে ক্রিমিনালদের জন্য কিন্তু কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না! আহসান জিজ্ঞেস করল, "কোনো খবর আছে?" এক এক করে সবাই বলল, "নেগেটিভ স্যার।" এভাবে কেটে গেল আরও ১০মিনিট! এমন সময় কন্ট্রোল থেকে একজন এজেন্ট বলল, "স্যার একজনকে পাওয়া গেছে!"
আহসান বললো, "লোকেশন?"
"৩য় তলা, ক্যাফে কোল্ড আর ডেইলি ফান এর মাঝামাঝি। ব্লু জিন্স, রেড চেক শার্ট!"
শোনা মাত্রই ছয় জন চলে গেল তাদের লোকেশনে। আহসান অপেক্ষা করছে বাকিদুইজনের জন্য। গাড়িতে বসে মেজাজ চরম খারাপ হচ্ছে এদের জন্য। নাসিরকে বলল, "পানি দিও তো।"
আহসানকে বোতল দেয়ার পর নাসির সামনে তাকিয়ে দেখে খুব চেনা চেহারা! একটু কাছাকাছি আসতেই দেখে এটা মকবুল! নাসিরের জলদি রিভলভার বের করে নেয়া দেখে আহসান জিজ্ঞেস করল, "কি হল?"
"গেট ডাউন স্যার, মকবুল, আমাদের সামনাসামনি!"
আহসান হালকা মাথা উঁচু করে দেখে মকবুল ফোনে কথা বলছে! আহসান রাগে বের হতে চাইলে নাসির বলে, "না না স্যার, এই ভুল কাজ করবেন না। স্যার শান্ত হন।"
আহসান বলল, "যেকোনো দুই টিম, ইমিডিয়েটলি পার্কিং এর ২য় তলায় রিপোর্ট করুন, ইটস মকবুল!"
খবর শোনা মাত্রই চারজন চলে এল পার্কিং লটে! বিভিন্ন পজিশন থেকে তারা মকবুলের দিকে নজর রাখছে।
মকবুল হাটা দিল পার্কিং লটের দিকে। এমন সময়, "We've got a situation here! হঠাৎ লোকজনের ভীড় আর স্যার সাসপেক্ট আর্মড! রাগারাগি হচ্ছে! আপনার কমান্ডের জন্য অপেক্ষা করছি স্যার...."
আহসান কোনো কথার জবাব দিচ্ছে না! ধীরে ধীরে পিছু নিয়েছে মকবুলের। আবারও বলল, "স্যার আপনার কমান্ডের অপেক্ষায় আছি স্যার!" হঠাৎ তাদের একজন দেখলো সাসপেক্ট একজন দিকে গুলি তাক করে জোরে কথা বলছে! এদিকে আহসানও কোনো কথা বলছে না! সে আবারও বলল, "স্যার আপনার কমান্ডের অপেক্ষায় আছি! স্যার রেস্পন্স করুন!"
এমন সময় কন্ট্রোল থেকে বললো, "স্যার তৃতীয়জন আপনাদের ঠিক পিছনে!" আহসান থেমে গিয়ে পিছনে ঘুরে দেখে কে যেন আহসানের দিকে অস্ত্র তাক করে এগিয়ে আসছে! গুলি করার মুহূর্তেই নাসির দেখার সাথে সাথে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আহসানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়! তাদের আওয়াজে মকবুলও পিছনে তাকায়। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে! বুলেট নাসিরের বাম হাতের ইঞ্চিখানেক ব্যবধানে বেরিয়ে মকবুল পায়ে আঘাত করে! সাথে সাথে মকবুল মাটিতে পরে যায়! নাসির বেশ ভাল ব্যথা পায়! পার্কিং এ থাকা বাকি সিভিল পুলিশ মকবুলকে আটক করে। নাসিরকে একপাশে রেখে পালাতে থাকা সেই ক্রিমিনালের পা বরাবর গুলি চালাতে থাকে আহসান। কিন্তু কোনটাই লাগলো না! শেষ দুইটা বুলেটে আহসান রিভলভার ক্রিমিনালের দিকে লক করে ৩য় তলায় বললো, "You're allowed to engaged!" বলেই শেষ দুই বুলেটও চালিয়ে দিল! আহসান দেখতে পেল সে আর দারাতে পারছে না। অনেকদিন পর মনে শান্তি আসলো তার! ৩য় তলায় অফিসাররা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সাসপেক্টকে গ্রেফতার করেছে। তিনজন টার্গেট এবং সবাইকে জীবিত গ্রেফতার করেছে আহসান এবং তার টিম! মকবুলের কাছে আসতেই আহসান বলল, "ব্যাড লাক মকবুল! ধরা পরে গেলে!"
"আমি বলেছিলাম আমার কাজ শেষ করতে দাও কিন্তু তোমরা দিলে না! আফসোস, আমি তাকে নিজ হাতে মারতে পারলাম না!" মকবুলের কথা শুনে আহসান বলল, "একসাথে দুটো পরিবারের ইজ্জত আর খুশিকে ধূলিসাৎ করে দিয়ে আর কি চাও? চল এখন বাকি কাহিনীটা শুনাও, কি প্ল্যান করেছিল আর কেনই বা নিঝুমের মত ফুটফুটে প্রাণটা কেড়ে নিলে?"
"মৃত্যু যেখানে অবধারিত সেখানে আর কিছু লুকিয়ে রেখে লাভ নেই! আমাকে দুইজনের সাথে দেখা করাও প্লিজ!" মকবুলের অনুরোধ।
নাসির বললো, "কে কে?"
"সমরেশ এবং হোসেন।"
ঘটনা চারদিন আগে,
বিকাল ৪টা,
"আরে আলাউদ্দিন স্যার যে! আসেন স্যার বসেন। আগে বলেন চা নাকি কফি নাকি ড্রিংকস?"
আলাউদ্দিন সোজা মকবুলকে বলল, "দেখুন স্যার আমি সোজা একটা কথা বলতে আপনার কাছে এসেছি সেটা হল আমার ক্লাসের কিছু ছাত্রীকে এলাকার ছেলেপেলে রাস্তাঘাটে যেখানে পায় সেখানেই টিজ করে! মা বাবা কাউকে মানে না তারা! আপনার মত একজন দায়িত্ববান পুলিশ থাকতে এলাকার এমন বাজে অবস্থা কেন? আমি এই দিয়ে আপনার থানা আজ ছয়দিন আসলাম অথচ আপনি একবারের জন্য কোনো একশন নেন নি! কেন?"
মকবুল বলল, "দেখেন আলাউদ্দিন সাহেব, আপনি যেমন চাকরি করেন আমিও তেমনই করি! আমাদের একটা লিমিটের মধ্যে চলাচল করতে হয়। ইচ্ছা করলেই সবকিছু করতে পারি না! উপর মহলেও আমাদের জবাব দিতে হয়।"
আলাউদ্দিন বলল, "তাহলে আমি আপনার কাছে এসেছি কেন? আমিও আপনার উপর মহলের কাছেই নালিশটা জানাই যে আপনি তাদের লায় দিচ্ছেন! এমনিই সমাজের মামুষ আপনাদের পুলিশকে দেখতে পারে না!"
"আলাউদ্দিন সাহেব আপনি আমার ইনসাল্ট করছেন।" আলাউদ্দিন বলল, "যদি করে থাকি তাহলে আপনাকে দুইদিন সময় দিচ্ছি, এরমধ্যে যদি আমার ছাত্রীদের রাস্তায় চলাচলে কোনো বাধাবিপত্তি আসে তবে সেটা আপনার জন্য ভাল হবে না বলে দিচ্ছি! এটা আপনি থ্রেট হিসাবে নিতে অথবা অর্ডার হিসেবে, আপনার ইচ্ছা, আসি!" আলাউদ্দিনের ঝাঁঝালো কথায় মকবুলের মেজাজ চরম খারাপ হয়েছে। এভাবে আজ পর্যন্ত তার সাথে কেউ কথা বলে নি! সে ভাবছে, "আমাকে শেখাতে আসে আইন কি আর কিভাবে বাস্তবায়ন করা লাগে?"
তারপরের দিন,
"আলাউদ্দিনকে সাইজ করা লাগবে, মনু বেশি বেরে গেছে। শহরে নতুন এসে কলেজের ছাত্রীদের সামনে নিজেকে হিরো বানাচ্ছে অথচ সে জানেই না দুনিয়ায় ভিলেনরাই চিরস্থায়ী হয়, হিরো না!" সমরেশকে বলল মকবুল।
সে বলল, "স্যার কিছু করা লাগবে?" মকবুল বলল, "হাত পা ভাঙতে হবে। খেয়াল রাখিস যেন আমার নাম না আসে। আর হ্যা আরেকটা কথা, তোদের দিয়ে মানে তুই হোসেন আর রাজা, তোরা তিনজন এখন যাবি চাঁদার জন্য। যদি না দেয় তাহলে রাতে ওর বাসায় হামলা করবি। অবশ্যই চেহারা ঢেকে যাবি।"
আহসান মকবুলকে জিজ্ঞেস করলো, "তারপর?"
সে বললো, "আমি তাদের বলেছিলাম আলাউদ্দিনের হাত পা ভাঙতে কিন্তু নিঝুম নামের মেয়েটাকে মেরে ফেলতে বলি নি!"
আহসান হো হো করে হেসে উঠলো! বলল, "নাসির শুনলে? এই মা****** নাকি মারার অর্ডার দেয় নাই!" আহসানের হাসি থামছেই না! একটুপর মকবুলের চুল মুঠ করে শক্ত করে ধরে বলল, "তুই না বললে ওই নিষ্পাপ মেয়েকে এমনিই মেরে ফেলবে? আর রিপোর্টে কি লিখছিলি? আলাউদ্দিন রেপ করছে?"
মকবুল করুণাময় চোখে তাকিয়ে বললো, "এটা জানার জন্যে আমি লুকিয়ে ছিলাম। খুজতেছিলাম সমরেশ, রাজা এবং হোসেনকে। কেন তারা একাজ করেছে! এটা আমার জানা দরকার। যখন দেখলাম আমি ফেঁসে যাচ্ছি তখন খুব সতর্কতার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট উনিশবিশ করছি। কারণ এটা ছাড়া আমার উপায় ছিল না! আমার নিঝুম রেপ এবং মার্ডার কেসের সাথে কোন তালুক নাই অফিসার! আমি অনেককেই পিটিয়েছি কিন্তু মেরে ফেলি নি কাউকে! আপনিও জানেন, আমিও জানি কিভাবে পিটালে একটা অপরাধী আহত হয় কিন্তু নিহত না।"
আহসান বলল, "বেশ বড় কাজ করে ফেলছেন আপনি!"
নাসিরকে বললো, "নাসির, ওই তিনটাকে নিয়ে এসো, আজ একটা কথা এদিক সেদিক হলে হাড় ভেঙে প্রত্যেকটা রাস্তার মোড়ে এদের ঝুলিয়ে রাখবো।"
সমরেশ, হোসেন এবং রাজা, এদের দেখেই মকবুলের রক্ত মাথায় উঠে গেল! বসা থেকে দ্রুত উঠে বাধা দুইহাত দিয়ে বেশ জোরে হোসেনের গালে আঘাত করল মকবুল! ঘটনা দেখে নাসির এবং বাকিরা আলাদা করে দিল তাদের! মকবুল একের পর এক গালাগাল দিয়ে যাচ্ছে! এদের আলাদা করার পর হঠাৎ হোসেন একেরপর এক লাথি দিচ্ছে সমরেশকে! ঘটনা কিছুই বুঝতে পারছে না আহসান! তাদের সবাইকে আলাদা চেয়ারে বসিয়ে হাত পা বেধে দিল নাসির। আহসান বলল, "ব্যস অনেক হয়েছে, এবার এক এক করে মুখ খোল। নিজেদের মধ্যে কি প্ল্যানিং হইছে বল।"
রাজা বলতে শুরু করল,
"সন্ধ্যা ৭টা, সেদিন নেশাটা খুব বেশিই করছিলাম আমি আর সমরেশ! স্টেশনের পাশের বস্তির পট্টি থেকে বের হয়ে মাথা আর ঠিক ছিল না! টাকার জন্য শুধু উপযুক্ত লোক খুজতেছিলাম। ট্রেনে সেদিন কারও পকেট মারার সাহস বা শক্তি কিছুই কিছুই ছিল না! এমন সময় নির্জন সেই রাস্তায় একটা মেয়েকে দেখি। মেয়েটাকে দেখেই মনে হচ্ছিল বড়লোকের মেয়ে! আমি আর সমরেশ তার পিছু পিছু যাইতে থাকি। আমাদের দেখে সে আন্দাজ করে নেয় আমরা তার পিছু নিচ্ছি! ধীরে ধীরে হাটার গতি বারতে থাকে তার এবং এক পর্যায়ে দৌড়াতে থাকে! আমরাও দৌড়াই কিন্তু সে পেরে উঠে নি। তারপর তাকে ধরে পাশের মাঠে নিয়ে যাই। আমি ওর মুখ চেপে ধরি আর সমরেশ ওর ব্যাগ পার্স থেকে টাকা পয়সা সব নিয়ে নেয়! আমাদের মাঝে হাতাহাতি চলতে থাকে! একসময় সে হাতের কাছে পাথর পেয়ে আমাদের মাথায় আঘাত করে! মাতাল ছিলাম বলে অজ্ঞান হতেও বেশি দেরি লাগে নি। ততক্ষণে দেখলাম সে দৌড়ে চলে গেল। ঘন্টাখানেক চার পর হুশ এল, দেখলাম বৃষ্টি হচ্ছে! সমরেশকে ডেকে তুললাম। কিছুক্ষণপর মকবুল স্যারের কল আসে। তিনি বললেন আলাউদ্দিনের কথা। আমরা রাতে আলাউদ্দিনের বাসার আশেপাশে ঘুরে ঘুরে দেখলাম। কিছুদিন আগেই এখানে ডাকাতি করি, তখনই যতটা সিসি ক্যামেরা সম্ভব অকেজো করে দিই। মকবুল স্যার নিঝুমকে মারার কাজ আমাদের দেন।"
এটা শুনে মকবুল চিৎকার দিয়ে বলল, "অফিসার সে মিথ্যা বলছে! আমি একথা বলিই নি ওদের!" আহসান চুপ করতে বলল মকবুলকে। কিন্তু মকবুল আবারও বলল, "রাজা, নিজের মরা বাপের কসম করে বল, আমি তোদের বলেছি নিঝুমকে মারার জন্য। আমি কোনোদিনই বলি না স্যার।" হোসেন কেঁদে ফেলল! এমন কান্না যা থামার নাম নেই। আহসানের সন্দেহ হল! ফাইয়াজ বলেছিল তাদের মধ্যে একজন কেঁদেছিল। আহসান জিজ্ঞেস করল, "হোসেন তুমিই কি সমরেশকে মারধর করে চেয়ারে বেধে রেখেছিলে?" হোসেন কান্না থামাতেই পারছিল না! আহসান আবারও বললো, "কাঁদছ কেন?"
হোসেন বলল, "সেদিন যদি আমার মনে একটু দয়া বা সাহস বা বিবেক আসতো!"
আহসান এবং নাসির বুঝলো না হোসেন কি বলল! নাসির বলল, "মানে?"
সমরেশ বলল, "অয় স্যার মেন্টাল।"
নাসির আর বসে থাকলো না। সোজা উঠে সমরেশের চোয়াল বরাবর ঘুষি মেরে বলল, "আর একটা কথা বলবি তো তোর মাথা আলাদা করে দিব। চুপ, একদম চুপ!"
হোসেন কেঁদে কেঁদে বলল, "স্যার নিঝুমকে মারার কোনো প্ল্যান ছিল না আমাদের!"
আহসান বলল, "ভয় নেই, খুলে বল।"
হোসেন চোখ মুছে বলতে শুরু করল, "সকাল ৭টা, আমি আলাউদ্দিনের বাসার কাছাকাছি বসে আছি রাস্তার মোড়ে আর অপেক্ষা করি এদের। গাড়ি আসলে আমি উঠে যাই, ভিতরে আমরা প্রস্তুতি নিতে থাকি। গ্লাভস, মাস্ক আর মুখোশ এবং মাথার চুলের জন্য ক্যাপ পরতে বলে সমরেশ। আমি কারণ জিজ্ঞেস করার পর বলে এটা আমাদের সুরক্ষার জন্য যেন পরবর্তীতে দেখা হলে চিনতে না পারে। আমরা চারজন ছিলাম। আর বাড়িওয়ালা মন্ডলকে আমরা বেশ ভালই জানি। উনি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেন না তাই কোনো চিন্তা ছিল না। উনার বাসায় গিয়ে দেখি দরজায় তালা দেয়া! আমি এদের বললাম চল ফিরে যাই আবার পরে আসবো। কিন্তু সমরেশ বলল বাসার ভিতরে ঢুকবে তালা ভেঙে আর সে আসলে হাড্ডি ভাঙবো তার! আলাউদ্দিনের বাসার তালা ছিল নরমাল। আমরা অনেক চাবি নিয়ে গিয়েছিলাম এই ভেবে যে একটা চাবিতে কাজ হবেই এবং কাজ হয়েছিল। সাধারণত দরজা আটকাতে বা তালা দিতে অনেক আওয়াজ হয় কিন্তু আলাউদ্দিনের বাসার দরজা বাড়িওয়ালা ওই সপ্তাহেই সম্পূর্ণ নতুন ফ্রেমে লাগিয়েছে যার জন্য কোনো রকম আওয়াজ হয় নি এবং আমাদের কাজ আরও সহজ হয়ে উঠে! সেম চাবি আরও কয়েকটা ছিল। সমরেশ আমিনকে আরেকটা চাবি দিয়ে বাইরে থেকে তালা আটকে দিতে বলল। ভিতরে ঢুকেই গোসলখানা থেকে আওয়াজ পেয়ে ভয় পেলাম! আমার হাত লেগে কলমদানি নিচে পরে গেলে ভিতর থেকে একটা মেয়ে এসে অর্ধ সালাম দিয়েই থমকে গেল আমাদের দেখে! সমরেশ আর রাজা সাথে সাথে মেয়েটার মুখ চেয়ে ধরে টেনে তুলে রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল! আমি বুঝতে পারছিলাম না কি হচ্ছে! আওয়াজ আসছিল শুধু! দম বন্ধ করে রাখার। আমি দরজায় আঘাত করতে পারছিলাম না কারণ ফেঁসে যেতাম! কি করবো বুঝতেও পারছিলাম না! প্রায় ৪০মিনিটের মত আমি আলাউদ্দিনের রুমে বসা! এরপর দরজা খুলে বের হল সমরেশ এবং রাজা! আমাকে বলল হাতে ২৫মিনিট সময়, ঘর সাফ করতে হবে। আমি উঠেই রুমে গিয়ে দেখলাম মেয়েটা বিছানায় পরে আছে এবং রক্তে চারদিক ভেসে গেছে! বেশ ভয় পেয়ে গেলাম! আমার বুঝতে বাকি রইল না সমরেশ আর রাজা কি করছে তার সাথে। শেষে কিছু যেন না বলতে পারে এর জন্য পেটে ছুড়ি মেরে দেয় সমরেশ! আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম এটার জন্য তো আমরা আসি নি? সে উত্তরে বলল সেখান থেকে বের হয়ে কথা বলবে। সমরেশ ব্যস্ত হয়ে গেল স্প্রে করে আলাউদ্দিনের আঙুলের ছাপ বের করতে! মকবুল স্যার এটা ওকে শিখিয়েছে! রাজা জিনিসপত্র ঠিকঠাক এবং মুছতে আরম্ভ করবো। শুধু আমার মাথায় কাজ করছিল না! সমরেশ আলাউদ্দিনের আঙুলের ছাপ মেয়েটার শরীরের স্পটের অংশ গুলোতে লাগিয়ে দিল। রাজা দেখলো আলাউদ্দিন নিজ বিছানা গুছায় নি। সেখান থেকে আলাউদ্দিনের মাথার চুল মেয়েটার আশেপাশে রাখলো। সবকিছু গোছগাছ শেষে যখন কোনো প্রমাণ রাখে নি রাজা আর সমরেশ তখন আমি গ্লাভস খুলে আমার আঙুলের ছাপ রেখে যাই টেবিলের রেকসিনে! আমি জানতাম এটা তদন্তের জন্য মকবুল স্যার আসবে কিন্তু সেদিন যে ভুলটা করি সেটার জন্য আজ পর্যন্ত আমি রাতে ঘুমাতে পারি নাই! পরে জানতে পারি এই মেয়েটাই নিঝুম এবং এরসাথেই দ্বিতীয়বার এরা এমনটা করলো!"
আহসান, নাসির এবং উপস্থিত বাকিরা এদের প্ল্যান শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল! হোসেন আবারও বলল, "সেদিন ফাইয়াজকে বাঁচানো আমার উদ্দেশ্য ছিল না কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম সমরেশের মত নেশাখোর যেকোনো কাজই করতে পারে! অনেক কথা কাটাকাটি হয় আমাদের মাঝে এবং এক সময় আমাকে মারার চেষ্টাও করে সমরেশ এবং রাজা। আমি এদের নজরের আড়াল হয়ে যাই এবং খুঁজতে থাকি মকবুলকে মারার জন্য। তিনজন ব্যক্তিকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম যার মধ্যে সমরেশকে আপনাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছি আর এর আগেই আপনারা রাজা এবং আমিনকে গ্রেফতার করে ফেলেন! বাকি রইল মকবুল এবং সেই ডাক্তার যে এই কাজে মকবুলকে সাহায্য করেছে!"
আহসান রাজা এবং সমরেশকে জিজ্ঞেস করল, "তোমাদের কারও কিছু বলার আছে?"
তারা কোনো উত্তর করল না। নাসির বলল, "সামান্য কয়েকটা টাকার জন্য তোমরা দুইটা পরিবারকে শেষ করে দিয়েছো। একটা পরিবার হয়তো তাদের সম্মান ফিরে পাবে কিন্তু নিঝুমের পরিবার? তারা তাদের মেয়েকে পাবে না।"
আহসান নাসিরকে বলল, "এদের সবার স্টেটমেন্ট রেকর্ড করে নাও। অপেক্ষা কর আদালতের রায়ের জন্য।"
এপোলো হসপিটাল,
ড. ইউসুফ রাজীর রুমে বসে আছে আহসান। উনি একটা ফর্ম দিয়ে বললেন, "এটাতে আপনার সাইন লাগবে।"
আহসান জিজ্ঞেস করল এটা কিসের ফর্ম। উনি বললেন, "মি. ফাইয়াজের অপারেশনটা খুব ক্রিটিক্যাল! ব্রেনের এই অপারেশন না হলে ফাইয়াজের জীবনের ঝুকি আছে আবার মাঝে মাঝে অপারেশনের পরেও দেখা যায় পেশান্ট...."
উনাকে থামিয়ে বলল, "জ্বি বুঝেছি।"
ফর্মটা হাতে নিয়ে দেখে হাত কাঁপছে তার! কিছুক্ষণ পর অশ্রুতে চোখ ভিজে উঠল! ড. ইউসুফ বললেন, "শান্ত হোন আহসান সাহেব, আমরা আমাদের বেস্ট চেষ্টা করব, আপনি আল্লাহকে ডাকুন।"
ফর্মে সাইন করে ফাইয়াজের কাছে গেল আহসান। ফাইয়াজের চেহারাটা শুকিয়ে এসেছে! আস্তে আস্তে বলল, "কেসটার কি অবস্থা?"
আহসান কোনো কথা বলছে না! একটুপর আবারও বলল, "একটা অনুরোধ রাখবি?"
"বল।"
"আমার মেয়েটাকে দেখে রাখিস। আর বলিস তার বাবা কেমন ছিল।" আহসান কেঁদে ফেলল। বললো, "বাজে চিন্তা করিস না। তুই আসবি, আমরা আবারও একসাথে ফিল্ডে থাকবো।"
"নাসির কোথায়?"
"তোর মেয়েকে স্কুলে নিয়ে গেছে, কিছুক্ষণের মধ্যে ছুটি হবে।" ফাইয়াজ বলল, "হয়তো আমারও ছুটির সময় হয়েছে!
ফাইয়াজকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হল। আহসান নামাজ পড়ে চলে গেল কোর্টে। নিঝুম হত্যা মামলার রায় আজ। এমন একটা দিনে রায় পরল যেটা আহসানের জন্য খুবই কষ্টের! এদিকে ফাইয়াজের অপারেশন এবং আরেকদিকে ফাইয়াজের মেয়েটাকে নিয়ে ভাবছে।
আদালত, রুম ২৫৬,
"নিঝুম ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী আলাউদ্দিন, নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় এই আদালত জনাব আলাউদ্দিনকে বেকসুর খালাস দিচ্ছে এবং সেই সাথে, এই মামলায় জড়িত ধর্ষক ও খুনী সমরেশ এবং রাজাকে ফাঁসির আদেশ, আসামী মকবুলকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ফরেনসিক ড. মানোস বড়ুয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, আসামী আমিন এবং হোসেনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করছে। The court is adjourned!"
আলাউদ্দিনের মা বাবা সেদিন খুব খুশি! আলাউদ্দিন নিজেও বেশ খুশি। আহসান চিন্তিত হয়ে বসে আছে! নিঝুমের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত। আলাউদ্দিন একে একে সবার সাথে কথা বলে আহসানের কাছে বসল। জিজ্ঞেস করল, "স্যার, আপনাকে ধন্যবাদ দেয়ার কোনো ভাষা আমার কাছে নেই! আপনি আমার অনেক বড় উপকার করলেন।"
আহসান বলল, "শুকরিয়া করতে হলে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া করেন। আল্লাহ কখনও ভাল মানুষের সাথে অবিচার করেন না। আপনিও সেই ভাল মানুষদের একজন।"
আহসানের বিমর্ষ মুখ দেখে সে জিজ্ঞেস করল, "স্যার মনে খারাপ লাগছে আপনার?"
"আজ ফাইয়াজের অপারেশন! খুবই ক্রিটিক্যাল! ফর্মে সাইন করে এসেছি। আল্লাহ জানে কি হয়। আপনি দোয়া করবেন তার জন্য।"
আলাউদ্দিন জেনে খুব চুপ হয়ে গেল। কোনো কথা বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে। আলাউদ্দিনের কেসের জন্যেই ফাইয়াজ আজ মৃত্যু পথযাত্রী!
এরমধ্যে হাসপাতাল থেকে কল এল আহসানের। জরুরী ডাক পরেছে তার। আলাউদ্দিনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওনা দিল। নাসিরকেও বলে দিল হাসপাতালে পৌঁছাতে।
ড. ইউসুফ বললেন, "আধাঘন্টার মধ্যে দুইব্যাগ O -ve রক্ত ম্যানেজ করুন। আমাদের ব্লাডব্যাংক থেকে দুই ব্যাগ পেয়েছি আর দুই ব্যাগ ম্যানেজ করুন।" আহসান ১ম অপারেশনে রক্ত দিয়েছে কিন্তু এখন তাকে রক্তের জন্য এলাউ করবে না ডাক্তার। ওসমান স্যারকে কল করে রক্তের কথা বলল আহসান। উনি তাৎক্ষণিক তিনজনকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলেন। নাসির স্কুল থেকে ফাইয়াজের মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে চলে এল। মেয়েটা অচেনা জায়গা দেখে বলল, "আংকেল আমি বাসায় যাবো, আব্বু কোথায়?" নাসির কোনো জবাব দিল না। শুধু চোখ মুছে নিচ্ছে। হাসপাতালের নামাজের স্থানে নেওয়াজ চাচা তসবি হাতে আল্লাহকে ডাকছেন। আহসান মোনাজাতে বসে কাঁদছে। এভাবে কেটে গেল দুইঘন্টা! বাবাকে খুঁজে না পাওয়া মেয়েটা একসময় ঘুমিয়ে গেল নাসিরের কোলে! নাসির তাকে জড়িয়ে রেখেছে পরম আদরে।
জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থান,
নওগাঁ
আলাউদ্দিন দারিয়ে আছে নিঝুমের কবরের পাশে। মেয়েটার কবর জিয়ারত শেষ করে ভাবছে যদি সে সেরাতে নিঝুমের কাছ থেকে ঘটনা শুনতে কাল বিলম্ব না করতো, যদি সেদিন সকালে সে বাজার থেকে তাড়াতাড়ি ফিরতো কিংবা বাজারেই না যেত! মোনাজাত শেষ করে হাটা দিতেই দেখে আহসান ফাইয়াজের মেয়েটাকে নিয়ে হাটতে বের হয়েছে। আলাউদ্দিনকে দেখে আহসান জিজ্ঞেস করল, "কি অবস্থা আলাউদ্দিন সাহেব? নওগাঁয় হঠাৎ?"
আলাউদ্দিন বলল, "নিঝুমের কবর জিয়ারত করতে এলাম, রাতের বাসে ফিরে যাবো। আমার হেয়ালিপনার কারণে মেয়েটা আজ.... যাক সেসব কথা। আপনার অবস্থা বলেন।"
"আমার অবস্থা এই আলহামদুলিল্লাহ! ফাইয়াজের গ্রামের বাড়ি এখানে, তাই চলে এলাম। তারপর কি করছেন এখন?"
সে বলল, "শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়েছি! এই পেশা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে!"
এমন সময় নুসাইবা আহসানকে বলল, "আংকেল আংকেল ওই যে আব্বু আসছে! আব্বু...." এই বলে ফাইয়াজের দিকে ছোট ছোট পায়ে দৌড়াতে থাকলো নুসাইবা! আহসান খুঁজতে থাকলো আর পিছন থেকে ডাকছে, "মামনি থামো, ব্যথা পাবে!"
নুসাইবা থামার নাম নিচ্ছে না! আব্বু বলে চিৎকার করতে করতে দৌড়ে যাচ্ছে।
সমাপ্ত..
[ধন্যবাদ আপনাদের সকলকে যারা গল্পটি পড়েছেন। গল্পের মাঝের ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো এবং গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]
২৯ শে মে, ২০২০ রাত ১২:৩৫
দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: খুবই দুঃখিত আমি, তারপরও ধন্যবাদ আপনাকে, গল্পটা পড়ার জন্য
আমি আমার তরফ থেকে কোনো ঘাটতি রাখার চেষ্টা করি নাই। তারপরও আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। পরবর্তীতে খেয়াল রাখবো।
২| ২৯ শে মে, ২০২০ সকাল ১০:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: সব মিলিয়ে সুখবর হলো লেখাটা আপনি মন দিয়ে লিখেছেন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে মে, ২০২০ রাত ১১:৪৪
চাঁদগাজী বলেছেন:
অনেক ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে লিখেছেন, ইন্টারেষ্টিং মনে হয়নি।