নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবতে ভালবাসি, সেই ভাবনা যদি কোনো ঘটনায় মিলে যায় তবে তাকে লিখতে ভালবাসি! সেই লেখায় যদি কেউ বিন্দুমাত্র উপকৃত হয় তবে তাতেই আমার খুশি, আমি লেখাকে ভালবাসি।

দর্পণের প্রতিবিম্ব

প্রেমিকার চিরশত্রু

দর্পণের প্রতিবিম্ব › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিঝুম

২৮ শে মে, ২০২০ রাত ৯:৫১




৪র্থ পর্ব,


"স্যার গাড়ির তেল শেষের দিকে! কোনো পেট্রোল পাম্পে নিয়ে যাবো?"
নেওয়াজ অনুমতি চাইলো কিন্তু আহসানের মনোযোগ অন্যদিকে! সে নেওয়াজের কথা শুনতেই পায় নি! নেওয়াজ আবারও বললো, "স্যার!"
আহসান কেঁপে উঠে বললো, "হ্যাঁ, হ্যাঁ কি? কি বললে?"
"স্যার তেল শেষের দিকে, পাম্পে কি যাবো?"
"হুম চল।"
নাসিরকে বললো, "এই দুইটাকে ঘুমের ঔষধ দিয়ে দাও। আর নেওয়াজ আপনি গাড়ির দরজা জানালা সব লক করে দিবেন আমরা বের হলে!"
"জ্বি স্যার।"
পাম্পে এসে গাড়ি থেকে নেমে নাসির জিজ্ঞেস করল, "স্যার কোনো খবর আছে?"
নেওয়াজ বলল, "না! ওরা দশ মিনিটের কথা বলে এখন ২৫মিনিট চলছে তাও কোনো কল দিল না! বুঝতেছি না কি করি!"
নাসির বললো, "স্যার আমার একটা প্ল্যান আছে, বলবো?"
"তাড়াতাড়ি!"
"স্যার আপনি ডিরেক্টর স্যারকে কল করে দুই গাড়ি সিভিল পুলিশ গার্ড নিয়ে ওদের হেডকোয়াটারে পাঠিয়ে দিন। নেওয়াজের সাথে আমি আমার ফোন দিয়ে কনফারেন্স যোগাযোগ রাখব। আর কল সেন্টারে আপনার একজন পরিচিত আছেন, উনার কাছ থেকে ফাইয়াজ স্যারের লোকেশন নিন। আমি আর আপনি সেই লোকেশনে যাই! আর এরমধ্যে যদি তার কল আসে তাহলে আমি তো নেওয়াজের সাথে যোগাযোগ রাখছিই, সেই হিসাবে উত্তর দিয়ে দিব? চলবে না স্যার?"
নাসিরের প্ল্যান শুনে আহসান খুব খুশি হয়ে গেল! বললো, "রজার ক্যাপ্টেন! যাও নেওয়াজকে বুঝিয়ে দাও আর ওসমান স্যারের সাথে কথা বলি।"
আহসান একের পর কল করে যাচ্ছে ওসমানকে কিন্তু রিসিভই করছে না!
শেষমেশ ম্যাসেজ দিল আহসান, "স্যার ইমার্জেন্সি, আহসান।"
এর কিছুক্ষণ পর ওসমান কল ব্যাক করলেন,
"সরি আহসান মিটিং ছিলাম, কি হয়েছে বল।"
আহসান সমস্ত ঘটনা খুলে বললো। সেই সাথে আহসান তার পরবর্তী পদক্ষেপ জানিয়ে আন্ডারকভার এজেন্ট চাইলো। আহসান তার লোকেশন বলে দিল। ওসমান বললেন, "১০মিনিটের মধ্যে ব্যাক আপ পৌঁছে যাবে তোমার লোকেশনে!"
"রজার স্যার।"

আহসান গাড়ির কাছে গেল। নাসিরকে জিজ্ঞেস করলো, "সব ঠিকঠাক? তাকে বলছো বিস্তারিত?"
"জ্বি স্যার!"
"গুড, এবার শোনেন, আমাদের জন্য দুইগাড়ি ব্যাক আপ আসতেছে, দশ মিনিটের মধ্যেই এখানে আসবে। তো নেওয়াজ চাচা আবারও শুভ কামনা আপনার জন্য। সোজা হেডকোয়াটারে যাবেন।" আহসান বললো।
"জ্বি স্যার।"
একটুপরেই তারা চলে এল। তাল মিলিয়ে হর্ণ বাজিয়ে জানিয়ে দিল তারা প্রস্তুত! আহসান নেওয়াজকে যাওয়ার জন্য বলে দিল। নেওয়াজ চলে গেলে নাসিরকে নিয়ে পরবর্তী কাজের জন্য রেডি হচ্ছে। আহসান কল করল আরশীকে যে তাকে কললিস্ট দিয়েছিল। বেশি সময় লাগলো না রিসিভ করতে,
"আসসালামু আ'লাইকুম স্যার, কি অবস্থা?"
"খুব বিজি, একটা উপকার কর, একটা নাম্বার সেন্ড করছি সেটার লোকেশন জানান প্লিজ, আর্জেন্ট!"
"জ্বি দেখছি।"

আহসান অপেক্ষা করতে থাকলো। আজ তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। নাসিরকে বলল এক বোতল পানি কিনে আনতে। শুধু দোয়া করছে যেন ফাইয়াজের কিছু না হয়। যেখানেই থাকে যেন অক্ষত থাকে।
একটুপর আরশী মেসেজে লোকেশন জানিয়ে দিল। দেরি না করে তাড়াতাড়ি রওনা করল তারা। একটা ক্যাব ভাড়া করে উঠে পরল। নাসির নিচু আওয়াজে বলল, "স্যার, চেহারায় অস্থিরতার ছাপ আনা যাবে না, আমাদের স্বাভাবিক থাকতে হবে।" আহসান তার চেহারা মুছে নিল। স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করল।
কিছুক্ষণ পর আবার আরশীর কল আসলো, রিসিভ করতেই বললো,
"স্যার, এটাই লোকেশন এবং উত্তর দিকে।"
"ওকে, থ্যাংকস।"
কল রেখে দিলেন এবং ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলে ভাড়া দিয়ে নেমে গেলেন। আহসান আবারও আরশীকে কল দিয়ে বললেন, "আমি মুভ করতেছি, যেখান থেকেই ফাইয়াজের নাম্বার আমার সবচেয়ে বেশি কাছে হবে সেখানেই আমাকে থামতে বলবেন!"
"ওকে স্যার।"
আহসান এবং নাসির আগাতে থাকলো ধীরে ধীরে। আরশী শুধু আগাতে বলছে। এক সময় বললো, "স্যার এটাই লোকেশন এবং আপনি দক্ষিণে বেশি কাছাকাছি!"
"নাসির, এই বিল্ডিংটাই হওয়ার কথা? কনস্ট্রাকশন চলতেছে?"
"কিভাবে বলবো স্যার? এমনও হতে পারে তার লোকজন কোনো এক জানালা দিয়ে আমাদের উপর নজর রাখতেছে!" নাসিরের কথায় আহসান কর্কশ মেজাজে বললো, "বি পজিটিভ!"
"রজার স্যার!"
একটু আগাতেই দেখে গেটে লেখা, "কুকুর হতে সাবধান!"
"কি করবো স্যার এখন? আমাদের ওয়েপন তো সাইলেন্স না! ফায়ার করলে দেখা গেল এর বন্ধুবান্ধব চলে আসলো! আমি কুকুর দেখে ভয় পাই স্যার!" এটা শুনে আহসান বলল, "চুপ! দেখা গেল এখানে কিছু নাই! আর ফাইয়াজ ভিতরে থাকলে কিডন্যাপার কুত্তার বন্দবস্ত করেই ভিতরে ঢুকছে!"
একটু একটু করে ২য় তলায় এসে দরজার সামনে একটা স্যান্ডেল দেখতে পেল তারা! আহসান এবং নাসির দরজার দুইপাশে দারিয়ে গেল। আশেপাশে দেখে আহসান আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে! আঙুলের ঈশারায় বললো,
"তিন...
দুই...
এক... গো গো...!"


৩৭ মিনিট আগে,

"সোজা কথায় আসি, ফাইয়াজকে জীবিত দেখতে চাইলে যে দুইজনকে আটক করেছো তাদের সসম্মানে ছেড়ে দাও! এবং সেখানেই ছেড়ে দিবে যেখানে আমি বলবো, ওকে? দশ মিনিট পর কল করছি, ততক্ষণে ফ্রি রাইড কর!! আর আরেকটা কথা, কল ট্রেস বা ট্র‍্যাক করার ভুল কর না। ছোট করে বললাম।"

কল কেটে চেয়ার টেনে ফাইয়াজের সামনে বসলো সে। মুখের পেঁচানো কাপড়টা খুলে দিয়ে বলল, "আমাদের সবার একটা ছদ্মনাম আছে। আমারটা হল বুলেট!"
ফাইয়াজ চোখে ঝাপসা দেখা শুরু করেছে! মাথায় রড় দিয়ে আঘাত করার কারণে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অল্প অল্প আওয়াজে ফাইয়াজ বলল, "যে দুইজনকে........ আটক করা হয়েছে তাদের কোনভাবেই..... ছেড়ে দিব না! তুই চাইলে..... আমাকে মেরে ফেলতে..... পারিস! আমার টিমের অপেক্ষা.... করার মত বড়..... ভুল করিস না!"
বুলেট তার এই কথা শুনে রেগে গেল! ফাইয়াজের মাথার চুল টেনে বলল, "কে বলছে আমি তো ছেড়ে দিব? ওরা ওদের ছেড়ে দিতেই তোকে উড়িয়ে দেব!"
ফাইয়াজ হঠাতেই বললো, "পানি।"
বুলেট তার পানির আর্তনাদে বেশি খুশি হলো। জিজ্ঞেস করলো, "পানি লাগবে? কতজন কে তোরা গুলি করার আগে কোনদিন চিন্তা করিস নি যে কে কি চায়?"
"আমি কোনো..... ভুল করি নি! ভুল কাউকে.... মারিনি! সবই কৃতকর্মের ফল!"

এমন সময় কোথা থেকে আরেকজন এসে অতর্কিত মারতে শুরু করল বুলেট কে! বুলেট কোনো তাল পাচ্ছে না সে কিভাবে আত্মরক্ষা করবে! একেরপর এক মার খেয়েই যাচ্ছে! শেষমেশ কানের কিছুটা ওপরের অংশে আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পরে গেল বুলেট! ফাইয়াজ বলল, "আহসান? নাসির? তোরা একদম ঠিক সময় আসছিস রে ভাই! আমাকে একটু পানি দে।"
কিছুক্ষণপর ফাইয়াজ কান্নার আওয়াজ পেল! সে বললো, "আহসান কাদিস কিসের জন্য? নাসির কই?" অপরিচিত সে বললো, "অপেক্ষা করেন পানি আনছি।" ফাইয়াজ অপরিচিত আওয়াজ শুনে ঘাবড়ে গেল! বললো, "কে আপনি? আহসান আর নাসির কোথায়?" ততক্ষণে অপরিচিত সে পানির খোঁজে চলে গেছে। নিচ থেকে এক বালতি পানি এনে ফাইয়াজের মাথা ধুয়ে দিচ্ছে সে। ফাইয়াজের মুখ, কপাল সব পরিষ্কার করে দিল। পানি খাইয়ে বললো, "এক মিনিট, রেস্ট নেন।" ফাইয়াজ জিজ্ঞেস করলো, "ভাই আপনি কে? আমার এত উপকার করছেন কেন?"

অপরিচিত সে কোনো উত্তর নিচ্ছে না! ফাইয়াজ একটু একটু দেখতে শুরু করলো। সে দেখলো কালো রঙের প্যান্ট এবং গেঞ্জি আর তার চোখটাই দেখা যাচ্ছে বাকিসব ঢাকা!
"এটা আপনাদের জন্য ছোট্ট একটা উপহার! বাকি অফিসাররা এটা দেখে বেশ খুশি হবে।" তার কথা শুনে ফাইয়াজ বলল, "কিসের উপহার? কি?"
অপরিচিত সে বুলেটকে চেয়ার বসিয়ে খুব শক্ত করে বেধে দিল! হঠাতই নিচে আওয়াজ শুনতে পেল সে! আড়ালে গিয়ে দেখলো বাকি দুই অফিসার ঢুকছে! ফাইয়াজের কাছে এসে বললো, "আর কয়েক মিনিট অপেক্ষা করেন, আপনার বাকি অফিসাররা নিচে আছেন। আশাকরি তারা আপনাকে পেয়ে যাবেন ততক্ষণে এই কাপড়টা আবারও পেচিয়ে দিই যেন আপনি কথাবার্তা না বলতে পারেন! কারণ আমাকে পালাতে হবে এবং মুক্ত আকাশে আরও কয়েকদিন শ্বাস নিতে হবে! আসি।" এই বলে কাপড় পেঁচিয়ে দরজা চাপিয়ে অন্যদিক দিয়ে চলে গেল সে।
কিছুক্ষণ পরেই আহসান আর নাসির দরজা খুলে ঢুকেই দেখে দুইজন চেয়ারে বাধা! ফাইয়াজকে পেয়ে সাথে সাথে এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করলো তারা। বাকি থাকলো বুলেট! তাকে পানি ছিটিয়ে সজ্ঞানে এনে নিয়ে গেল হেডকোয়াটারে!


তিনদিন পর,
"কি অবস্থা ফাইয়াজ? এখন কেমন লাগতেছে?"
আহসানের প্রশ্নে সে বলল, "আলহামদুলিল্লাহ বেঁচে আছি।"
আহসান জিজ্ঞেস করলো, "কি হইছিল তোর সাথে?"
"ওইযে কি যেন নাম? হ্যাঁ বুলেট।"
"ওর আসল নাম সমরেশ! আর যাদের ধরেছি তাদের একজনের নাম রাজা আরেকজন আমিন।" আহসান বললো।
"আরও একজন আছে, নাম জানি না, চেহারাও দেখি নি! শুধু সমরেশকে মেরে চেয়ারে বেধে রেখেছিল আর আমার মুখ আর কপাল পরিষ্কার করে দিয়েছে!" ফাইয়াজ বললো।
"তার নামও পাওয়া গেছে, হোসেন। এবার মকবুলের পালা।" ফাইয়াজ শুনে বললো, "তাহলে সে কাঁদছিল কেন? আর কিভাবে শিওর তুই যে ওই লোকটাই হোসেন?"
আহসান থেমে গেল! আসলেই তো, আহসান বলল, "তাহলে কি তুই বলতে চাচ্ছিস আরও একজন আছে এদের সাথে?"
ফাইয়াজ বলল, "হয়তো! আবার নাও থাকতে পারে!" আহসান কপালে হাত বুলিয়ে বলল, "তুই সুস্থ হয়ে উঠ, মকবুল আর বাকি কেউ থাকলে তাদেরও ধরে ফেলবে।"
ফাইয়াজ মৃদু হেসে বলল, "আমার অপেক্ষা করিস না, তুই আর নাসির তদন্ত করতে থাক। দেরি করা ঠিক হবে না।"


১৯ বছর আগে,
গতরাতের তুফানে ক্ষেতের ব্যাপক হয়েছে! লতিফ হোসেন মাথায় হাত দিয়ে বসে বসে ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে আছেন। যার জমিতে সে চাষাবাদ করেছে সেখান থেকে টাকা পাওয়ার আশা এবার হয়তো তাকে ছেড়ে দিতে হবে। দুরে দারিয়ে মকবুল তার বাবাকে দেখছে কিভাবে বসে আছে জমির ফসলের দিকে তাকিয়ে! পরেরদিন স্কুলে যাওয়ার জন্য রওনা হয়ে দেখে বিলের সাকোটাও ভেঙে গেছে! পাশে নৌকা দেখে এগিয়ে গেল কিন্তু না মাঝি আছে না বৈঠা! ফেরত চলে গেল সে। লতিফ হোসেন জিজ্ঞেস করল কেন ফেরত এল। কারণ বলতেই বাবা তার পুরানো বৈঠা মকবুলকে দিয়ে বললেন, "এটা তো হামিদ চাচাকে দিয়ে আয়। বেচারার বৈঠা গতকাল নদীতে পরে গেছে! খুব কষ্টে বাড়ির কাছে আনছে। এটা মেরামত করে নিবে নে সে আর তুই ও স্কুলের দিকে যা।"
বৈঠা নিয়ে আবারও রওনা হল মকবুল। হামিদ চাচা এটা দেখেই খুশি হয়ে গেলেন! বললেন, "যা তুই ঘুইরা আয়, আমি ঠিকঠাক করে খবর দিব নি!"
বাড়ির দিকে যাচ্ছিল হঠাত পাড়ার ছেলেপেলে মকবুলকে দেখে বলল, "ওই মকবুল, খেলতে যাই চল! ফুটবলও আছে আজ।" ব্যাস সে আর দেরি করলো না! পানি জমা মাঠে ফুটবলের চেয়ে মজার খেলা দুনিয়ার আর দ্বিতীয়টা আছে কিনা সন্দেহ। ওদিকে হামিদ বৈঠা মেরামত করে মকবুল খোঁজে বের হয়ে দেখে সে ফুটবল খেলায় ব্যস্ত! সেও চলে গেলেন গ্রামের মানুষগুলাকে পারাপারের ব্যবস্থা করতে।

সপ্তাহ খানেক পর,
মহাজন এসে জমির বাজে অবস্থা দেখে লতিফকে ব্যাপক কথা শুনিয়ে দিলেন! টাকাপয়সার কোনো অভাব তাকে দেন নি আল্লাহ। প্রত্যেকবার তিনভাগের এক ভাগ লতিফ পায় কিন্তু এবার তিনি এক অংশও দিতে রাজি নন! কোনরকম আকুতি মিনতি করার পর কিছু টাকা দেন মহাজন। যাওয়ার সময় বললেন, "শোনো, আমি এই গ্রামেই জমি কিনে বাড়ি তুলতেছি, এরপর থেকে তোমরা যারা ফসল নিজেদের বাড়ি রাখতে, আমার বাড়ি হওয়ার পর ওখানেই দিয়া আসবে।"

শীতের সকাল, কনকনে ঠাণ্ডা এবং কুয়াশায় ঢাকা চারদিক! বোর্ডের শেষ পরীক্ষা আজ। একটা একটা করে পরীক্ষা যায় আর ছাত্র এক এক করে কমতে থাকে! হয় নকল করতে গিয়ে ধরা পরে অথবা ইচ্ছা করে আসে না! এভাবেই চলতে থাকে। জামিল স্যার সকালে মকবুলের বাড়িতে এসেছেন খোজ খবর নিতে। মকবুলকে ডেকে বললেন, "আজ কি লাস্ট পরীক্ষা?"
- জ্বি স্যার
- কোনো পরীক্ষা বাদ দিস নাই তো?
- না স্যার।
- বাইর হবি কখন?
- স্যার এই কিছুক্ষণের মধ্যেই।
- ফাইলপত্র রেডি কর, একসাথে যাই, কিছু কথা কমু তোরে।

জামিল স্যারের খুব পছন্দের ছাত্র মকবুল। খুব আশা ভরসা তাকে নিয়ে। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, "এই ম্যাট্রিক পরীক্ষার কাগজপাতি যা আছে সব যত্ন কইরা রাখবি। এই কাগজ তোরে সামনে আগায়া নিব। গ্রামে আমাদের অবস্থা তো দেখাই আছে তোর, এই আমরা সবসময় পয়সাওয়ালার পায়ের নিচে থাকি! তুই এমন এক ছেলে, যে পারবি তর মা বাপরে নিয়া শহরে ভাল ভাবে থাকতে পারবি। তর সেই যোগ্যতা আছে।" আরও নানা কথা বলেছিল সেদিন জামিল স্যার। কোনটাই মকবুল ভুলে যায় নি। পরীক্ষার রেজাল্ট হওয়ার দেখা গেল গোটা গ্রামে ছয়জন ১ম গ্রেড পেয়েছে এরমধ্যে মকবুল একজন! জামিল স্যার সেদিন খুব খুশি হয়েছিলেন! কলেজের ভর্তি ফ্রি ছিল সেই ছয়জনের জন্য। এতে বাধা পরে মকবুল! কারণ যাতায়াতে অনেক টাকা আর সময় খরচ হয়! বাধ্য হয়ে কাছের এক কলেজে ভর্তি হয় সে।

একদিন কলেজে থেকে ফেরার সময় পাশের বাড়ির মুরুব্বি মকবুলকে বললেন, "আরে তুই এখানে? ওইদিক তর বাপের নামে নালিশ লাগছে বিচার হইতেছে ওইখানে যা তাড়াতাড়ি, গোলামের চায়ের দোকানে।"

মকবুল এক দৌড়ে চলে গেল। ভীড় ঠেলে ভিতরে যেতেই দেখে লতিফ হোসেনের কপালে রক্ত লেগে আছে! মকবুলকে দেখে মহাজন এসে শার্টের কলার ধরে গালে চড় বসিয়ে বললো, "আমার ফসল বেইচা এরে কলেজে ভর্তি করাইছস?" মকবুল কোনো কথা বলতে পারলো না! সে জানেই না কি ঘটেছে! থানার পুলিশ উপস্থিত সেখানে। মকবুল তাকে বললেন, "স্যার, আমার বাপরে ছাইড়া দেন। কি করছে সে?"
"তোর যা বলার থানায় এসে বল। হাবিলদার, গাড়িতে নাও এদের!" মকবুল অনেক অনুরোধ করলো, হাতে পায়ে ধরলো কিন্তু পুলিশ সেদিন তার কোনো কথা শোনে নি!

লতিফের সাথে আরও যে কয়েকজন কৃষক ছিল তাদের ঘটনা জিজ্ঞেস করল। তারা বলল, "গতকালের হিসাবে কিছু ধান পাওয়া যাইতেছিল না, আজ মহাজন তর বাড়ি আইসা দেখে ধানগুলা আছে! এইজন্য তর বাপ সহ আরও দুইজনকে মহাজন মারছে! পরে পুলিশ ডাইকা আনছে!"
মকবুল বলল, "আপনেরা তো জানেন আব্বা এইকাজ কোনদিনই করবে না?"
"আমরা জানি কাজটা কেডা করছে, মহাজনেরই কেউ একজন করছে। তর বাপের উপর চাপাইছে সেই সাথে আমাগো টাকাও দেয় নাই!"
সেদিন থানায় দৌড়াদৌড়ি করে কোন লাভ হয় নি তার! থানার ওসি ধমক দিয়ে বলেছিল, "বেশি বাড়াবাড়ি করলি তরেও ভিতরে ঢুকামু!"
মকবুল সাহস করে বললো, "দেন স্যার কোনো সমস্যা নাই।" ওসি আরও একবার মকবুলের গালে চড় বসিয়ে দিল! হাজতের ভিতরে থেকে সবই দেখলো লতিফ! হাত জোড় করে বলল, "স্যার ওরে মাইরেন না, ওই মকবুল বাড়ি যা...." মকবুল কাঁদতে কাঁদতে জামিল স্যারের কাছে চলে গেল। তাকে সব খুলে বলার পর বললেন, "এতকিছু ঘটছে আর তুই এখন জানাস এসব আমাকে? সকালেই যাবো আমি, চিন্তা করিস না।"

সেদিন রাতে মকবুলের পেটে কোনো খাবার যায় নি, সেই সাথে ঘুমায় নি! সে রাতেই সে প্রতিজ্ঞা করে যেভাবেই হোক পুলিশ হতে হবে। একটা কাগজে লিখে রাখে, "ক্ষমতাকে আমি আমার হাতে মুঠ করে রাখবো।"

পরেরদিন সকালে,
থানায় গিয়ে জামিল স্যার কিছু বললেন না ওসিকে। কারণ জানেন বলে কোনো লাভ হবে না! চুরির অপবাদে মহাজন আর পুলিশের মার খেয়ে জ্বরে দুই সপ্তাহ বিছানায় ছিলেন লতিফ হোসেন! সবকিছু যখন স্বাভাবিক হয়ে আসলো তখন লতিফের ঘরে খাবারের কোনো দানাপানি নেই। বাবা ছেলে মিলে কাজ করা শুরু করল তাঁতশিল্পে। কিন্তু সেখানেও শান্তি নেই! কয়েকমাস কাজ করার পর যখন তারা জানতে পারে এই তাঁতখানাও মহাজনের আত্মীয়ের তখন তারা সিদ্ধান্ত নেয় এখানে কাজ করবে না। মহাজনও এক সময় জানতে পারে লতিফ আর তার ছেলে এই মিলে কাজ করছে। তখন তখনই তাদের বের করে দেয়! .
মকবুলের নিজেকে আয়নায় দেখে ঘৃণা জন্মাতে থাকে! ধীরে ধীরে মন মানসিকতা নিচের দিকে যেতে থাকে। থানার ওসির প্রতি এতই ক্ষেপে ছিল যার ফলে একদিন সকালে ওসির ছেলের স্কুলের সামনে তাকে ধরে টেনে এনে মাথায় কালো পলিথিন পেচিয়ে বেরধক মারধর করে সে! নিজের চেহারা ঢেকে একই কাজ কয়েক সপ্তাহ পর মহাজনের দুইছেলের সাথে করে। পুলিশ বা মহাজন কেউ তাকে সন্দেহ করতে পারবে না এটা মকবুল জানতো কারণ তাদের আরও বড় লেভেলের শত্রুও ছিল!
এরই দুইদিন পর রেডিওতে শুনতে পেল বাজারের দুই ব্যবসায়ী নিহত! মকবুল বুঝে নিয়েছে তাকে কেউ সন্দেহ করে নি!

এরমধ্যে মকবুল মা মারা যান অসুস্থতায়! ঘরে শুধু মকবুল এবং তার অসুস্থ বাবা। তিনিও হয়তো মৃত্যুর অপেক্ষায় আছেন। একদিন বিকালে জামিল স্যার বললেন, "তুই তোর ডিগ্রির কাগজ পত্র রেডি কর, পুলিশের চাকরির বিজ্ঞপ্তি এসে গেছে! ঢাকায় যা, ফর্ম তুলে পুরণ করে দে। লতিফের পাশে আমরা আছি।"

মকবুলের খুশি আর দেখে কে সেদিন! পুলিশের চাকরি কনফার্ম হয়েছে। জয়েন আর ট্রেনিং এর তারিখও দিয়েছে তাকে। লতিফ, হামিদ, জামিল তারা সবাই খুশি! গলাগলি ধরে কান্না শুরু করেছিল তারা! ডিউটি জয়েন করার দুইমাস পর লতিফকে ঢাকা চলে আসে মকবুল। কিন্তু লতিফের ভাল লাগে না এই পরিবেশ। তিনি ছেলেকে বললেন, "আমারে গ্রামে থুইয়া আয়, ভাইগুলারে ছাড়া ভাল লাগে না! যদি পারস ঘর দুয়ারটা ঠিকঠাক করে দে।" মকবুল বললো, "আপনে যেহানে খুশি থাকবেন আমিও সেহানেই খুশি। সামনের মাসেই আপনেরে রেখে আসুম আর ঘর মেরামতের ব্যবস্থা করে রাখছি।"
লতিফ হোসেনকে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়ে খোঁজ খবর নিল রহমপুর থানার ডিউটি কার। জানলো সেখানে সেই আগের ওসিই আছে! এই সুযোগে মকবুল নিজ গ্রামে ট্রান্সফারের দরখাস্ত করল এবং সেটা খুব তাড়াতাড়ি খেটে গেল।
ওদিকে ওসি নতুন অফিসারের আগমণে যত বড় বড় লোক আছে তাদের দাওয়াত দিয়ে ফেলেছে। জয়েন ডেটে যখন মকবুল গাড়ি থেকে নেমে থানার দিকে হাটা দিল ওসি এবং মহাজন তখন থানায় উপস্থিত! মকবুলের গ্লেস মারা চেহারা দেখে তারা নিজেদের বিশ্বাসই করতে পারছে না! চেয়ারে বসার পর সকল কর্মকর্তাকে এক লাইনে দারাতে বলল সে। ওসিকে সামনে ডেকে বলল, "নাম কি তোর?"
সে বিস্ময় নিয়ে দেখল মকবুলকে! আজ মকবুল তার তিন গ্রেড উপরের পুলিশ! কম্পিত কণ্ঠে বলল, "নেয়ামত কবির।"
"হুম এইসব নেতারা আমার থানায় কি করে?"
কেউ কোনো কথা বলছে না। মকবুল তার ডান হাত দিয়ে নেয়ামতের গালে সজোরে চড় বসিয়ে ধমক দিয়ে বলল, "বল এরা এখানে কি করে? আড্ডাখানা এটা?"
মকবুলের কথার ধরনটাও পাল্টে গেছে! নেয়ামত তখনও তার গালে হাত দিয়ে দারিয়ে আছে! মকবুল মহাজনকে দেখে বলল, "এই যে তুই, হ্যা তুই, এদিকে আয়।"
মহাজন সামনে আসতেই তাকেও ডান হাতের চড় বসিয়ে দিলেন! মকবুল সারা শরীরে তখন ক্ষোভের আগুন জ্বলছিল! থানার বাকিরাও দেখতে থাকে কি হল এটা! নেয়ামতকে ডেকে বললো, "এরপর থেকে যদি আমার থানায় এই দালালদের দেখি তোর চাকরি চাবায়া খেয়ে ফেলবো।"
চেয়ারে বসে আওয়াজ করে বলল, "কনস্টেবল মাহমুদ।"
"জ্বি স্যার।"
"এই নেয়ামতের ডিউটি অবস্থায় এযাবতকালে যত কেস আসছে সব নিয়ে আসো আর সেই সাথে ওই মহাজনের যত অবৈধ কাজ আছে সব লিস্ট করে আমার কাছে আনো। একটাও যেন এদিক সেদিক না হয়।"
"যা হুকুম স্যার।"
ফাইল গুলো দেখতে দেখতে মাহমুদ এসে বলল, "স্যার, জামিল নামের একজন দেখা করতে এসেছে, ভিতরে আসতে বলব?"
নামটা শুনেই খুশিতে মন ভরে উঠলো তার। "জলদি নিয়ে আসো আর সেই সাথে নেয়ামতকে ডাকো।"
জামিল স্যারকে দেখে সালাম করে জড়িয়ে ধরে বলল, "স্যার আপনি আমাকে গাইড না করলে আজ আমি এখানে থাকতাম না! কি করলে আপনার ঋণ শোধ হবে এটা আমি জানি নাহ স্যার!"
জামিল স্যার মকবুলের মাথায় হাত রেখে বললেন, "মানুষের উপকার করবি আর কোথা থেকে তুই এখানে আসলি সেটা ভুলে যাবি না।"
"স্যার আপনি আমার চেয়ারে বসেন।"
এমন সময় নেয়ামত রুমে আসার অনুমতি চাইলো। মকবুল অনুমতি না দিয়ে দরজা থেকেই বললো, "আমাদের দুইজনের জন্য চা-নাস্তা নিয়ে আয় জলদি, দেরি যেন না হয়!"
নেয়ামত চলে গেল। নিজের কর্মফল আজ হারে হারে টের পাচ্ছে সে! জামিল স্যার বললেন, "এটা কি ঠিক হল?"
"জানি না স্যার, তবে আমার আব্বার জীবন জাহান্নাম বানাতে এরা দ্বিধা করে নাই।"

মাস দুয়েক পর,
"স্যার এমনটা কইরেন না স্যার। আমার বউ বাচ্চাকাচ্চা মরে যাবে স্যার!" নেয়ামতের আকুতি মিনতি কোনটাই কানে লাগছে না মকবুলের। ভিতরটা তার খুব শান্তিতে আছে। সে বললো, "অনেক বছর আগে এক ছেলে আর তার বাপ এভাবেই তর মত একজনের কাছে হাত পা ধরছিল, মরছে তারা? বাইচা আছে না? তর বউ পোলাপানও বাইচা থাকবো!"
নেয়ামত কাঁদতে কাঁদতে চোখ লাল বানিয়ে ফেলেছে! আবারও বললো, "স্যার মাইয়াটা কলেজে পড়ে, পরীক্ষা দিব এবার আর পোলাডা কলেজে উঠবো মাত্র স্যার!"
মকবুল বললো, "তর মাইয়ারে বল আমার মত পুলিশ হইতে আর এইখানে জয়েন দিয়া জানি আমার উপ্রে প্রতিশোধ নেয়! তর ব্যাটারে তো ছোট থাকতে পলিথিন পেঁচায়া মারছিলাম যার জন্য তোরা দুই ব্যবসায়ীরে জানে মাইরা দিছস!"
নেয়ামত বললো, "মানে স্যার? কি মারছিলেন আপনি?" "অনেক গরীরের টাকা খাইছিস তুই, তরে মাফ করলে যারা তর অত্যাচারে মরছে তারা আমারে মাফ করবে না। সোজা বাসা থেকে দুরে যা না হইলে এখনই জেলে ঢুকামু! চাকরি গেছে সাথে প্রাণও যাবে বলে দিলাম।" মকবুল থানায় ফোন করে বলে দিল নেয়ামতকে এসে হাজতে ঢুকাতে আর ঘুষ দেয়ার চেষ্টা করায় কেস লিখতে।
নেয়ামতকে বললো, "তর অধ্যায় শেষ, তর মহাজনরে যে কি করবো, ভাবতেই পশম দারায়া যায় আমার!"


সপ্তাহখানেক পর,
"আচ্ছা শুনলাম সেই মহাজন নাকি হাসপাতালে আছে?" মাহমুদকে জিজ্ঞেস করলো মকবুল।
"জ্বি স্যার, ডায়াবেটিস আর প্রেশার একসাথে ধরছে তারে! ব্যাটার নামে কেস তো কম ছিল না!"
"ড্রাইভারকে বল গাড়ি বের করতে, দেখে আসি তাদের।" মকবুলের কথায় মাহমুদ বললো, "স্যার সত্যি যাবেন?"


কেবিন নম্বর ২৩,
মহাজন সুবেদার শুয়ে আছে। মকবুল ভিতরে ঢুকেই দেখে পরিবার পরিজন দিয়ে ভরা মহল! ডাক্তারকে বললেন, "কি অবস্থা তার?"
"স্যার, উনার প্রেশার লো, এই ভাল এই খারাপ!"
মকবুল বলল, "আমার কিছু কথা আছে উনার সাথে, যদি আপনারা পাঁচ মিনিট সময় আমাকে দিতেন খুব ভাল হতো। এক দুইজন থাকেন কিন্তু বাকিরা বাহিরে যান প্লিজ।"
ডাক্তার দুইজনকে রেখে বাকিদের বাহিরে নিয়ে আসলেন। মকবুল চেয়ার টেনে বেডের পাশে বসে জিজ্ঞেস করলেন,
"কি অবস্থা এখন মহাজন সুবেদার?"
সে ধীরে ধীরে বলল, "এই দেখতেই তো পাচ্ছেন স্যার। কর্ম আজ এখানে নিয়ে এসেছে!"
পত্রিকা হাতে নিয়ে মকবুল বলল, "সেই ধন সম্পদ, সেই বাহাদুরি, গায়ের জোর কিছুই নাই আজ, তাই না?"
মহাজন কোন কথা বলছেন না! চোখের কোণা দিয়ে অশ্রু বের হয়ে বালিশে মিশে ভিজে যাচ্ছে!
অনেকক্ষণ পর বলল, "মকবুল, তুই আমার উপর অনেক ক্ষ্যাপা আছস, আমি জানি। আমি তর বাপসহ আরও অনেক মজলুমের উপর জুলুম করছি।" পত্রিকার পৃষ্ঠা উল্টিয়ে বলল, "যাক মনে আছে আপনার?"
"ওই সময়টা আমি লোভী আছিলাম খুব খারাপ ছিলাম আমি।" একটুপর মকবুলের হাত ধরে বলল, "মনে হয় দুনিয়ায় হায়াত কমে আইছে আমার, এই শেষ সময়ে আমি তর আর তর বাপের কাছে মাফ চাইতেছি যা যা করছি তোদের সাথে। সবার সাথে দেখা করার সময় তো পাই নি, কখন চইলা গেছে টের পাই নাই।"
মকবুল বললো, "পাঁচ আটি ধান কম হইছিল, তারজন্য আব্বারে কত কথা কইলেন, মারলেন, পুলিশেও দিলেন!"
তিনি বললেন, "পুরানা কথা আর দৌড়াইছ না, তুইও সেই ক্ষোভে সেদিন আমারে থাপ্পুড় দিছিলি! আমি কিছু মনে করি নাই, আমার পরে বুঝছি ওটা আমার প্রাপ্য ছিল।"
"ঠিক আছে আজ উঠি আমি, আপনার সুস্থতা কামনা করি।" এই বলে চলে এল মকবুল। মনের ভিতরে হালকা অনুভব হচ্ছে তার।
রাতে খাওয়ার সময় মকবুল সমস্ত ঘটনা বলল লতিফকে। তিনি বললেন, "আল্লাহ আমার ব্যাটারে আজ এইখানে আনছে, আমি এই খুশিতেই সবকিছু ভুলে গেছি! মহাজনের কোনো কথা মনে আনি নাই। আমার তার প্রতি কোন রাগ গোসসা নাই। আল্লাহ হেদায়েত দিক তারে।"

এরই এক সপ্তাহ পর, মহাজন মারা যান। মৃত্যুর পূর্বে আরও একবার মকবুল হাসপাতালে গিয়ে মহাজনের সাথে দেখা করেন। জানিয়ে দেয় তার বাবা এসব কোনো কিছু মনে রাখে নি। তিনি বলেছিলেন, "যাক, একটু হলেও চিন্তা কমে গেল।"

মকবুলের বিয়ের সাত মাস পর লতিফ হোসেন মারা যান। গোটা বাড়িতে আর ভাল লাগে না তার! অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে নিজের বলদির ব্যবস্থা করেন এবং গ্রামের ভিটা বাড়িটা তার হামিদ চাচাকে বসবাস করার জন্য দিয়ে যায়। শহরে এসেই রাতারাতি পাল্টে যায় তার জীবনব্যবস্থা! ঈমানদারি বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে পারে নি যখন ব্যয়বহুল জীবন সামনে চলে আসে! শুরুতে ঘুষ নিতে হাত পা কাপতো তার। কিন্তু দিন যেতে যেতে এখন সে ঘুষ আর নিজের ফায়দা ছাড়া কিছুই করে না। বছরখানেকের মধ্যেই নিজের ফ্ল্যাট আর গাড়ি হয়ে গেল। ধীরে ধীরে ঋতু পাল্টে যায়, পাল্টে যায় মানুষের মন, মানুষের চরিত্র, শুধু পাল্টায় না অভাব। আর সেই সাথে চাহিদাটাও!


(পরের পর্বে সমাপ্তি)


[ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মে, ২০২০ রাত ১০:৩৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: চলুক ।

২৯ শে মে, ২০২০ রাত ১:০৮

দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: ধন্যবাদ, সকল পর্ব পোস্ট করা হয়েছে। সময় করে পড়ে নিয়েন :)

২| ২৮ শে মে, ২০২০ রাত ১০:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: যেন মুভি দেখছি।

২৯ শে মে, ২০২০ রাত ১:০৮

দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: ধন্যবাদ, শেষ পর্ব পোস্ট করেছি, সময় করে পড়ে নিবেন :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.