নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবতে ভালবাসি, সেই ভাবনা যদি কোনো ঘটনায় মিলে যায় তবে তাকে লিখতে ভালবাসি! সেই লেখায় যদি কেউ বিন্দুমাত্র উপকৃত হয় তবে তাতেই আমার খুশি, আমি লেখাকে ভালবাসি।

দর্পণের প্রতিবিম্ব

প্রেমিকার চিরশত্রু

দর্পণের প্রতিবিম্ব › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিঝুম

২৮ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৬




২য় পর্ব,


"আসসালামু আ'লাইকুম আব্বু, কেমন আছো?"
আলাউদ্দিনের হাতে হাত রেখে জবাবে জনাব মহসীন বললেন, "খুব কষ্টে এপর্যন্ত এসছি। এলাকায় মান সম্মান একবারেই নেই আমাদের।"
আলাউদ্দিন বলল, "তোমার মনে হয় আমি এমনটা করতে পারবো?"
"আমরা বাসার সবাই যাচ্ছিলাম তোর বিয়ের কথাবার্তা পাকা করতে, সরকার বাড়ি। এমন সময় জানতে পারি এসব!" আলাউদ্দিনের বাবা আর কিছু বলতে পারলেন না, কেঁদে ফেললেন।
"আব্বা দেখ আমার দিকে, আমার কেস কেউ লড়তে চাচ্ছে না! এখানে ম্যাক্সিমাম প্রমাণ আমাকে আসামী বানিয়েছে।"
ক্ষানিক পরে আলাউদ্দিন আবার বললো, "আব্বা, রিভিউ করেন, আপিল করেন পুনরায় তদন্তের এবং মামলা, ইন্সপেক্টর মকবুলের বিরুদ্ধে।"


বিকাল ৪টা,
ডিবি মিটিং,
"জেন্টলম্যান, আজ মোট ছয়টা কেস আমাদের হাতে এসেছে তদন্তের জন্য। আপনাদের ৪জনের টিম করে এই কেস গুলোর দায়িত্ব দিলাম। প্রত্যেকটা কেসের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তথ্য আমার চাই।"
ডিরেক্টর ওসমান ফাইল গুলা দিয়ে সবাইকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন। কিছুক্ষণপর ডেস্কে কল করে বললেন, "অফিসার আহসান, ফাইয়াজ, নাসিরকে রুমে আসতে বল।"
সালাম দিয়ে বললেন, "আমায় ডেকেছেন স্যার?"
"এসো আহসান, বসো।"
"ধন্যবাদ স্যার"
"স্যার আসবো?"
ফাইয়াজ এবং নাসির এল।
ওসমান একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বললো, "নিঝুম কেসের ব্যাপারে তো জানো তোমরা?"
-ইয়েস স্যার।
-এই কেস পুনরায় তদন্তের জন্য এসেছে এবং আমি চাই আমার তিন বেস্ট অফিসার এটার ইনভেস্টিগেশন করুক। আহসান তুমি এই কেসের তদন্ত লিড করবে। ফাইলটা ভাল করে দেখে নাও। কাল থেকেই তোমরা কাজ শুরু করে দাও।"
"ইয়েস স্যার!" তিনজন রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।
ফাইয়াজ বললো, "তাহলে আমরা আরও একটা কেসে তিনজন একত্রে তদন্ত করছি?"
নাসির বললো, "স্যার আমাদের তিনজনকেই বেশি ট্রাস্ট করেন তাই এমন কেস আমরা ছাড়া কেউ পায় না।"
"আমরা তিনজন তিনজনকে শুভ কামনা জানাই তাহলে!" এই বলে হেসে দিল আহসান!

সকাল ১০টা,
আলাউদ্দিনের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য গেল ফাইয়াজ এবং আহসান। "জনাব আলাউদ্দিন, আমরা এসেছি আপনার কাছ পুরো ঘটনা শোনার জন্য। আশাকরি আপনি আমাদের সত্যটাই বলবেন।"
আলাউদ্দিন তাদের বললো, "স্যার, মাঝে মাঝে সত্য বারবার বললে মিথ্যাতে পরিণত হয়! আর মিথ্যে বারবার বললে এক সময় সত্যের মত শোনা যায়! এবং এজন্যেই আমি এই কারাগারে এবং আসামী মুক্তমনা পাখি হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে!"
ফাইয়াজ বললো, "আপনার কেসটা নিয়ে আমরা খুবই এক্সাইটেড! এমন কেস খুব কম আসে।"
আহসান বললো, "আপনার সন্দেহের তালিকায় এমন কেউ আছে?"
- স্যার আমার সন্দেহের কোনো তালিকা নেই, আমি একজনকেই সন্দেহ করি এবং আমি জানি প্রত্যেক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেই জড়িত এই কেসের সাথে!"
ফাইয়াজ বললো, "কে সে?"
"ইন্সপেক্টর মকবুল। লোভী এবং বেঈমান মানুষ।"
"লোভী? বেঈমান?" টাকা পয়সার লেনদেন করেছেন?" আহসানের বিস্মিত প্রশ্ন!
"সে বেঈমান কিন্তু আমি নয়, আমি আমার ঈমান এবং আমার আল্লাহর উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে। লেনদেন আমি করি নি, সে চেয়েছিল..."
আলাউদ্দিনের সাথে কথা বলে ফাইয়াজ নাসিরকে কল করে বলল এই কেস রিলেটেড ফরেনসিক রিপোর্টগুলো রেডি করতে এবং আলাউদ্দিনের বাসায় জলদি চলে আসতে।


দুপুর ১২টা,
মন্ডল ভিলা

দরজায় নক করতেই ভিতর থেকে আওয়াজ এল, "কে?" ডিবি টিম কোনো কথা বললো না। এক মধ্যবয়স্ক লোক দরজা খোলার পর আহসান বলল, "আমরা রুবেল মন্ডলের সাথে দেখা করার জন্য এসেছি।"
- জ্বি আমিই রুবেল মন্ডল।
আহসান বললো, "আমরা পুলিশ, আপনার সাথে নিঝুম হত্যা মামলা সম্পর্কে কিছু কথা বলবো। আশাকরি সাহায্য করবেন!"

ঘরে ঢুকে ফাইয়াজ বললো, "আলাউদ্দিন স্যারকে কতদিন ধরে চেনেন? কবে থেকে বাসা ভাড়া দিয়েছেন?"
- স্যার, উনার কলেজে জয়েন করার দুই সপ্তাহ পর। উনাকে তো ভালই ভাবতাম কিন্তু ওই ঘটনার পর থেকে আমি কোনো রকম ব্যাচেলর পোলাপানকে বাসা ভাড়া দিই নাই!"
"উনার সাথে দেখা সাক্ষাতের জন্য কেউ আসা যাওয়া করতো?" আহসানের প্রশ্ন।
"উনার একজন ড্রাইভার ছিলেন কিন্তু বাসা নেয়ার পর থেকে সে আর আসে নি। আমারও তার সাথে দেখা হয় নি!"
"জ্বি অনেক ধন্যবাদ সময় দেয়ার জন্য ভবিষ্যতেও আমাদের আসা যাওয়া হতে পারে" বাড়িওয়ালার সাথে কথাবার্তা শেষ করে আলাউদ্দিনের ফ্লাটে গেলেন তারা। ক্রাইম সিনের সিল মেরে দেয়া ফ্ল্যাট। আহসান ফাইয়াজ এবং নাসিরকে জিজ্ঞেস করলেন, "আচ্ছা, আলাউদ্দিন বলছে সে বাসা তালা দিয়ে বাজারে গেছে তাহলে সেই অক্ষত কিভাবে? এবং বাসার দরজা জানলা কোথাও কোন ক্ষয়ক্ষতি নেই, কোনো চিহ্ন নেই! মামলা তো বুঝতে পারছি না!"
নাসির বললো, "ফরেনসিক রিপোর্টে নিঝুমের জামা কাপড়ে আলাউদ্দিনের কয়েকটা চুল পাওয়া গেছে!"
"এদিকে আলাউদ্দিন বলছে সে এমন কিছুই করে নিই!" আহসান বললো। ফাইয়াজ বললো, "আচ্ছা, আমরা যখন ঘুমাই এমন তো হয় যে আমাদের মাথার চুল ঝরে পরে যায়! কিংবা চুলে হাত বুলালেও দুই একটা চুল তো হাতের মুঠে পাওয়াই যায়! তো এমন কি হতে পারে না আলাউদ্দিন ওই বিছানায় আগেও ঘুমিয়েছে?"
"নাহ আলাউদ্দিন কিন্তু বলেছে সে নিজে বিছানা নতুনভাবে গুছিয়েছে এবং পরিষ্কার করেই!" আহসান বললো।
নাসির আবারও বললো, "কিন্তু রিপোর্টে নিঝুমের চোয়ালে যে লাল স্পট পাওয়া গেছে তাতে আলাউদ্দিনের আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে!"
ফাইয়াজ হাসতে হাসতে বললো, "মজার ব্যাপার হল যে ডিএনএ স্যাম্পল পাওয়া গেছে সেটা আলাউদ্দিনের সাথে মিলে যাওয়ার পরও সে বলছে সে নির্দোষ! কিভাবে সম্ভব?"
"এটাই তো কথা রে ভাই, ডিএনএ ম্যাচ হয়, যেসকল প্রমাণ পাওয়া গেছে সবটাই প্রমাণ করে খুনি আলাউদ্দিন এবং আলাউদ্দিন বলছে সে খুন করে নি!"


"ডেস্ক, শোয়েবকে পাঠিয়ে দাও আমার রুম।"
আহসান মন্ডল ভিলার আকার আকৃতি নিয়ে আঁকিবুঁকি করছে। চিন্তা করছে কোন কোন উপায়ে এই মার্ডার হতে পারে। এরমধ্যে চলে এল শোয়েব। আহসান বলল, "দেখতো আমার আকানো ছবিগুলো বুঝতে পারো কিনা?"
শোয়েব মনে মনে ভাবছে এত বিশ্রি ড্রইং আগে কখনও দেখে নি। অনেক মনোযোগ দেয়ার পর বুঝতে পারলো এটা একটি ফ্ল্যাট এর ড্রইং!
- স্যার, এটা তো একটা ফ্ল্যাট!
- হুম এবং পরের পৃষ্ঠায় বিল্ডিংও আছে। তোমাকে যে জন্য ডেকেছি সেটা হল এই ছবিগুলো দেখে আমাকে তিনতলা কাঠামোর একটা মডেল বানিয়ে দাও। সময় কেমন লাগবে?
- স্যার আজ আর কাল দুইদিন, কাল লাঞ্চের আগেই পেয়ে যাবেন।
- ওকে।

ফাইয়াজ রুমে ঢুকতেই দেখে আহসান টেবিলে মাথা রেখে কি যেন ভাবছে! জিজ্ঞেস করতেই বললো, "ইনস্পেক্টর মকবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার না?"
- তাকে পাওয়া গেলে তো? গা ঢাকা দিয়েছে।
- এর আগে আরও একটা কাজ করা লাগবে।
- কি কাজ?
- নিঝুমের পরিবারের সাথে কথাবার্তা
- আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আলাউদ্দিন নির্দোষ!
- এমন কেন মনে হল?
- কাউকে খুন করা এতটাই সহজ কাজ নয় যতটা আমরা চিন্তা করি! আমাদের কথাই ভাব, গুলি চালাতে পারতিস প্রথমে? ডিফেন্সের জন্য আমার হাতে যখন প্রথম ছুড়ি দেয়া হয়, আমি ওই বস্তাটাকে ঠিকমত স্টেবিং করতে পারি নি! আর আলাউদ্দিন জীবন্ত এক মানুষকে মেরে ফেলবে? বিষয়টা কেমন না? তাছাড়া রাতের সময়, কেউ কোনো চিৎকার চেঁচামেচি শোনে নি!
- ছোটখাটো ঘাপলা না, বেশ বড় কারসাজি আছে!
একটুপর আবারও আহসান বললো, "অনেক কথা হল, চল নিঝুমের পরিবারের সাথে কথা বলি। নাসিরকে নিয়ে নিচে আয় আমি অপেক্ষা করতেছি..।"

টানা তিনঘণ্টা ড্রাইভিং সিটে বসে শরীর ধরে গেছে আহসানের সেই সাথে খাওয়া দাওয়ার সময়ও হয়েছে। "আজ রাস্তায় এত চাপ আগে জানলে খাওয়া দাওয়া করেই বের হতাম!" আহসান বললো।
পিছনের পুরো সিটে পা লম্বা করে মেলে দিয়ে ফাইয়াজ বললো, "গাড়িটা আশেপাশের ট্রাকের হোটেল টাইপ হোটেলে থামা, হাইওয়ে রেস্টুরেন্টে কোনভাবেই খাবো না আজ!"
"নাসির, তোমারও কি কিছু বলার আছে?" আহসানের প্রশ্নে নাসির হেসে দিয়ে বলল, "না স্যার আসলে চায়ের নেশা ধরেছে। এক কাপ চা হলেই আমি ড্রাইভিং সিটে বসবো।"


"ভাইরে, নওগাঁ আসতে আজ এত সময় লাগলো? আমি চায়ের স্বাদ না নিয়ে আর আগাচ্ছি না, কনফার্ম!", ফাইয়াজ বললো।
চা বিরতি শেষে নিঝুমের বাসার দিকে রওনা দিল তারা। ঠিকানা মিলিয়ে দেখে বাড়িটাও খুঁজে পেল। কলিং বেল চাপতেই দরজা খুলে সামনে আসলেন নিঝুমের বাবা,
"জ্বি কাকে চাই আপনাদের?"
আহসান বললো, "আসসালামু আ'লাইকুম আমরা ডিবি, আসলে নিঝুমের বাবা মার সাথে দেখা করতে এসেছি।"
"জ্বি, ভিতরে আসুন।"

"নিঝুমের সাথে শেষ কবে কথা হয়েছিল আপনাদের?" আহসানের প্রশ্ন,
- ঘটনার দুইদিন আগে... নিঝুমের বাবার উত্তর।
এরমধ্যে নিঝুমের মা বললেন, "ঘটনার আগের দিন রাতে আমার ফোনে ৭বার কল করেছিল কিন্তু মোবাইল সম্পর্কে এত বুঝি না আর মেহমান ছিল বিধায় টের পাই নি।"
ফাইয়াজ বললো, "এরপর কল করেন নি?"
"জ্বি করছি কিন্তু ফোন তারপর থেকেই বন্ধ! আর পরেরদিন সকালে তো টিভিতেই দেখলাম বাকিটা....." এই বলে কেঁদে ফেললেন নিঝুমের মা!
আহসান জিজ্ঞেস করলো, "আপনাদের কারও সাথে কোনো শত্রুতা আছে? পারিবারিক কিংবা ব্যবসায়িক? বা কোন সন্দেহভাজন?"
নিঝুমের মা বললেন, "ওই আলাউদ্দিন কুলাঙ্গার ছাড়া একাজ কেউ করে নি। ওর মত শিক্ষকদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিলেও কম হয়ে যাবে।"

আরও বেশ সময়ধরে কথাবার্তা বলে চলে এল তারা। গাড়িতে উঠেই আহসান বললো, "কিছু বুঝলে? আলাউদ্দিন নিয়ে তারা খুব ক্ষিপ্ত! ছোট মেয়ের শিক্ষককেও বিদায় করে দিয়েছে!"
ফাইয়াজ বললো, "মেয়েটা মরে যাওয়ায় বেশি সমস্যা হয়েছে। কে সত্য বলছে আর কে মিথ্যা বলছে?"
নাসির জিজ্ঞেস করলো, "স্যার পরবর্তী কাজ কি?"
"আলাউদ্দিনের বাসায় চিরুনি অভিযান চালাবো। যত বড় অপরাধ হোক, অপরাধী খুব ছোট ছোট ভুল করে। সেই ছোট ভুল খুঁজতে হবে।"


বিকাল ৪টা,
মুক্ত বাতাসে আলাউদ্দিন মাঠের এক কোণায় বসে আছে। একটা একটা করে ঘাস ছিঁড়ছে আর ভাবছে কেমন ছিল আর কেমন হয়ে গেল! শিক্ষক সমাজে তার আর কোনো মান সম্মান থাকলো না। কয়েদি পোশাকে তার নম্বর ৭৮৯। এই নাম্বারটাও নিঝুমের ক্লাস রোল ছিল। মাথায় বার বার সেদিন রাতের নিঝুমের চেহারাটাই ভাসছে। মনে মনে বলছে একবার যদি সেদিন রাতে ওর কথাটা শুনতাম! কি কারণে সে এতটা ঘাবড়ে ছিল!
"কি অবস্থা আলাউদ্দিন স্যার? কি ভাবছেন?" কয়েদি শফিক এসে পাশে বসে বললো। শফিকও আলাউদ্দিনের মত মিথ্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। শফিক আবারও বললো, "কি ব্যাপার স্যার?"
"আপনি আমাকে এখানে স্যার বলে ডাকছেন আর দেশ আমাকে শিক্ষক নামের কুলাঙ্গার হিসাবে ডাকা শুরু করেছে!" আলাউদ্দিন বললো।
শফিক হেসে উত্তর দিল, "তো আপনার কি মনে হয় এখানে সবাই পাপী? এখানে আসা ৬০% কয়েদী নির্দোষ, তারা এখানে এসেছে গুনাগার গুলোর জন্যেই। অপরাধী মুক্ত আকাশে চিল হয়ে ডানা মেলে উড়ে বেড়ায় আর সুযোগ পেলেইই নতুন শিকারে নামে! আমাকে দেখেন, নিজেকেও দেখেন!"
আলাউদ্দিন বললো, "এমন তো হওয়ার কথা ছিল না?" "এমনটাই তো হয়ে আসছে এবং চলতেই থাকবে! বাদ দেন দুনিয়ার চিন্তা, নিজেকে তো বুঝ দিতে পারবেন আপনি সত্য ছিলেন?" শফিকের উত্তর।
"দেখছেন না নারী সংঘটন এবং নারী অধিকারের নেত্রীরা কি সব বলছে আমাকে নিয়ে?"


মন্ডল ভিলা
সকাল ১১টা,

আলাউদ্দিনের বাসায় এসে আহসান, ফাইয়াজ এবং নাসির তল্লাশি চালাতে শুরু করল যদি কিছু একটা পাওয়া যায়! এমন সময় শোয়েবের কল এল, "স্যার আপনার মডেল রেডি, আপনার রুমে রেখে আসবো?"
"ঠিক আছে, রেখে দাও!"
আবারও তল্লাশিতে লেগে গেল তারা। নাসির বাহির থেকে এসে বললো, "স্যার এই এলাকার রাস্তা দুইপাশের বিল্ডিং গুলোর সিসিটিভি ক্যামেরা মিসিং স্যার! একটাও নেই!"
আহসান ফাইয়াজ অবাক হয়ে গেল!
"তাহলে আমাদের দেখতে হবে কোন কোন বিল্ডিংগুলোতে ক্যামেরা আছে। এমনও হতে পারে যে পর্যন্ত ক্যামেরা নেই ক্রিমিনাল সেই পথেই চলাচল করছে?" ফাইয়াজ বললো।
তার কথাটা আহসান শুনে বলল, "সম্ভবত! হতেও পারে!"
বাসায় তল্লাশি চালিয়ে তেমন কিছু পায় নি তারা! নিঝুম যে রুমে ছিল সেখান থেকে কিছু চুল পাওয়া গেছে। আহসান বললো, "চল তো বাসার পিছন সাইডে গিয়ে তল্লাশি করি।"
পিছনে এসে নাসির বললো, "স্যার আপনার বিশ্বাস হয় আপনি এরমধ্য থেকে কোনো প্রমাণ পাবেন? প্রতিদিনই এই স্তুপ পরিষ্কার করা হয় আবার নতুন আবর্জনা জমা হয়!"
আহসান হতাশ হয়ে যাচ্ছে। ফাইয়াজ বলল, "এমনভাবে সব সাফ করা করে গেছে যেন আমরা কিছুই খুঁজে না পাই! তো নিঝুমের বডি ফেলে রেখে গেল কেন? সেটাও নিয়ে যেত?"
"বাদ দে, চল আশেপাশের বাড়িওয়ালাদের সাথে কথা বলি সিসি ক্যামেরা নিয়ে।" আহসান স্থান ত্যাগ করলো। তারা তিনজন আলাদা হয়ে বাড়িওয়ালাদের সাথে কথা বলতে গেল। আহসান এক বাড়িওয়ালা কে জিজ্ঞেস করার পর বলল, "স্যার এই দিয়ে চারবার সিসি ক্যামেরা চুরি হল! এজন্য এখন আর ইন্সটলই করব না। টাকা বেশ খরচ হয়! এখন শুধু বিল্ডিং এর ভিতরে ক্যামেরা আছে।"
"ক্যামেরা যারা চুরি করেছে অন্তত তাদের চেহারা ছবি তো আপনার কাছে থাকার কথা?"
আহসানের প্রশ্নে তিনি জবাব দিলেন, "চোরেরা সেই সুযোগ রাখলে তো স্যার!"
"মানে?"
"শেষ যেইবার ক্যামেরা চুরি হইছে মার্ডারের আগের দিন রাতে, আমি কি এক কাজে কম্পিউটারে বসছিলাম, ক্যামেরা চেক করতে গেলাম হঠাৎ দেখি কই থেকে কি যেন মেরে ক্যামেরা নষ্ট করে দিল! কাচগুলো ভেঙে এদিক সেদিক পরে গেছে। উপরে তাকান, এই সেকশনে আরও অনেক দাগ আছে! তাহলে বলেন কি লাভ আমার সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে?"
আহসান বললো, "তো আপনারা গার্ড রাখেন নি?" তিনি উত্তরে বললেন, "স্যার গার্ড ছিল কিন্তু ছুটিতে, ওর বউ তখন ডেলিভারির জন্য হাসপাতালে ছিল।"

আশেপাশের বাড়িওয়ালাদের সাথেও কথাবার্তা বলল আহসান কিন্তু কারও কাছেই কোনো তথ্য পেল না! ক্লান্ত হয়ে তারা তিনজন এক টঙের দোকানে বসল। কেস নিয়ে আলাপ আলোচনায় মগ্ন হয়ে গেল তারা। নাসির বললো, "স্যার এটা কিভাবে সম্ভব যে কারও কাছে কোনোরকম ছবি/ভিডিও ফুটেজ নেই! কেউ কিছুই বলতে পারে না!" ফাইয়াজ বললো, "এটা অনেকদিন আগের প্ল্যান! রাতারাতি প্ল্যান করে খুন করা হয় নাই। কি বলিস আহসান?"
"ঠিক, এটাও ঠিক আলাউদ্দিন খুন করে নি! আলাউদ্দিন যদি জড়িত থাকতোই তবে লাশ ওই রাতের অন্ধকারেই কোথাও দাফন করে দিত অথবা অন্য কিছু করতো।"
নাসির বলল, "স্যার আমার মনে হচ্ছে এটা একার পক্ষে সম্ভব নয়, একাধিক ব্যক্তি হতে পারে।"
টঙের দোকানদার চা নিয়ে এসে বললো, "স্যার আপনাদের চা।" একটুপর সে আবার বললো, "স্যার আপনারা কি কলেজের ওই আলাউদ্দিন স্যারের কেস নিয়ে কথা বলতেছেন?"
আহসান বললো, "হুম, তুমি চেন আলাউদ্দিন কে?" সে হাসতে হাসতে বললো, "জ্বি স্যার, উনি আমার রেগুলার কাস্টমার।" ফাইয়াজ বললো, "কি নাম তোমার?"
"স্যার আমার নাম রনি।"
আহসান আবারও জিজ্ঞেস করল, "তার ব্যাপারে কি জানো? কেমন স্বভাবের সে? মানুষ কেমন?"
রনি অনর্গল আলাউদ্দিনের ব্যাপারে যত ইতিবাচক কথা আছে সব এক নাগারে বলে যাচ্ছে। এরমধ্যে ফাইয়াজ জিজ্ঞেস করল, "তুমি দোকান কয়টায় খুলো?"
"স্যার ফজরের নামাজের পরেই। নামাজ পড়েই দোকানে চলে আসি।" নাসির জিজ্ঞেস করল, "অত ভোরে কেউ আসে?"
"আসে স্যার, এই এলাকার যত নাইট গার্ড থাকে এরা ভোরে এখানে জমায়েত হয়, চা সিগারেট খেয়েই যে যার বাসায় বা ডিউটিতে চলে যায়।"
"তুমি তো এখানের স্থানীয়, তাই না?" আহসান জিজ্ঞেস করলো। উত্তরে রনি বললো, "স্থানীয় না স্যার, এখানে আছি ৬ বছর ধরে।" আহসান আবারও প্রশ্ন করল, "এই এলাকায় ছেঁচড়া চোর আছে না? তোমার তো জানার কথা?"
"স্যার, এখানে বাসা বাড়িতে চুরি হয় না, না হয় ছিনতাই। যা হওয়ার পাশের এলাকায় হয়। কিন্তু স্যার এই কথা কেন বলতেছেন?" রনির প্রশ্নে আহসান বললো, "ওই কয়েকটা বিল্ডিং এর সিসি ক্যামেরা চুরি আর নষ্ট করছে কারা যেন! তাই বললাম।"
"ওহ স্যার, তাহলে আপনাকে একটা কথা বলি।"
রনি কাছাকাছি একটা টাওয়ার দেখিয়ে বললো, "স্যার ওই যে টাওয়ারটা দেখতে পাইতেছেন, ওই টাওয়ারে চারদিকে চারটা সিসি ক্যামেরা আছে যেইটা দিয়ে এই এরিয়া দেখা যায়।"
আহসান, ফাইয়াজ এবং নাসির অবাক হয়ে গেল কথা শুনে! ফাইয়াজ জিজ্ঞেস করল, "তুমি কিভাবে জানো?" "স্যার আমি প্রায়ই তাদের চা দিতে যাই, মাঝারি সাইজের অনেক গুলা টিভি দেখছি, আমি তেমন বুঝি না, আপনেরা গেলেই বুঝবেন।"
আহসান একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে নিল। দোয়া করতে থাকলো যেন সেখানে কোনো একটা ক্লু পায়। ফাইয়াজ এবং নাসিরকে বললো তাদের অফিসে যাওয়ার জন্য। তখনই রনি আবার বললো, "স্যার আজকে তাদের ছুটির দিন, কাল আসেন।"
আহসান তাদের তিনজনের ফোন নম্বর রনিকে দিয়ে বললেন, "কয়েকদিনের জন্য সরকারি চাকরি কর, এলাকার চোর ছ্যাঁচড় গুলা মার্ডারের দিন কে কোথায় ছিল খোজ লাগাও। কিছু জানা মাত্রই কল দিয়ে জানাবে। আমরাও তোমার রেগুলার কাস্টমার এখন থেকে।"
"জ্বি স্যার, আসসালামু আ'লাইকুম স্যার।"

"এই ধরনের লোকেরা খুব কাজের নাসির, আমরা যে পর্যন্ত যেতে পারি না তারা ওখান থেকে খবর নিয়ে আসে!" আহসান বললো। ফাইয়াজ তাল মিলিয়ে বললো, "দেখলি না কত খুশি হল যখন বললাম সরকারি কাজ কর।"
"এখন কোথায় যাচ্ছি স্যার?" নাসির জিজ্ঞেস করল।
"আলাউদ্দিনের সাথে কথা বলতে।"

আলাউদ্দিনের সাথে দ্বিতীয় দফায় কথা বলে অফিসের দিকে ফিরছে সবাই। ফরেনসিক থেকে কল এসেছে ডিএনএ রিপোর্ট নিয়ে।
ল্যাবে পৌছে দেখলেন ড. ফারহানা এবং সহযোগী ড. মৌ রিপোর্ট নিয়ে রেডি। ড. ফারহানা বললেন, "একটা নতুন অধ্যায় খুলেছে আজ! নাসিরের দেয়া হেয়ার এবং কিছু ফিঙ্গারপ্রিন্ট কোনটাই কোনটার সাথে ম্যাচ করে নি! সবগুলো আলাদা!"
আহসান অবাক হয়ে গেল! ফাইয়াজ বললো, "মানে?" ড. মৌ বললেন, "আপনারা ৬টা হেয়ার স্যাম্পল দিয়েছেন এরমধ্যে তিনটা একই ব্যক্তির এবং বাকি দুইটা আলাদা আলাদা আর অবশিষ্টটা আলাউদ্দিনের! সেই সাথে আলাদা একজন ব্যক্তির ফিঙ্গারপ্রিন্ট যা আলাউদ্দিন এবং নিঝুম কারও সাথেই মিলে নি!"
নাসির বললো, "স্যার তারমানে কি দারাচ্ছে আমাদের সাসপেক্ট বেড়ে তিনজনে দারিয়েছে?"
"সেটা এখন আপনাদের তদন্তই বলে দিবে। আর হ্যা আহসান, ফিঙ্গারপ্রিন্টটা ডেটাবেজে মিলিয়ে দেখবেন, এই বান্দা হাতে এলে বাকিরাও হাতে চলে আসবে।" ড. ফারহানা উপদেশ।
"জ্বি ম্যাম, যথা আজ্ঞা!"

আহসানের টেবিলে মন্ডল ভিলার মডেল এবং আলাউদ্দিনের ফ্ল্যাটের মডেলটা রাখা। আহসান মনে মনে কল্পনা করতে থাকলো কিভাবে নিঝুমকে মার্ডার করা হতে পারে। ধরে নিই তিনজন ব্যক্তি, দুইজন ঘরে ঢুকলো, তৃতীয়জন বাহিরে পাহারা দিল। ভিতরের দুইজনের একজন নিঝুমকে ধরে রেখেছে এবং আরেকজন ধর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছে। নিঝুমের হাত পা ছোড়াছুড়িতে তারা সুবিধা করতে পারছে না! চিৎকার যেন করতে না পারে সেজন্য মুখে কাপড় পেচিয়ে দিল তারা! জোর জবর্দস্তির পর একজন নিঝুমকে দাড় করিয়ে দিল। তার হাতাহাতি তখনও হয়তো চলছিল। এরমধ্যে একজন নিঝুমের মাথায় সজোরে শক্ত কিছু একটা দিয়ে আঘাত করল এবং সেই অস্ত্রটা এখনও মিসিং! ধীরে ধীরে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে নিঝুম! এরমধ্যে প্রথমজন ছুড়ি বের করে পেট বরাবর স্টেবিং করে ফেললো! বিছানায় শোয়া অবস্থায় তার পেটে ছুরি চালায় নি কারণ দারিয়ে স্টেবিং করার ক্ষত আর শুইয়ে স্টেবিং করার ক্ষত দুইয়ের মাঝে আকাশ পাতাল ব্যবধান। নিঝুমের হাত ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দিয়েছে তারা যেন কোনো প্রমাণ না পাওয়া যায়! হয়তো তারা গ্লাভস পরে সকল অপকর্ম চালিয়েছে! আলাউদ্দিনের গেস্টরুমের সকল আসবাবপত্র তারা চেক করেছে যেন কোনো ক্লু না থাকে, আর যদি থেকেও যাও তবে সেটা মিটিয়ে দেয়ার! কাজ শেষ করে জানালা দিয়ে তারা পালিয়ে যাবে এটা সম্ভব নয়। এজন্য তারা মেইন দরজা ব্যবহার করেছে এবং সেটায় আবার তালা দিয়েছে! ফাইয়াজ কে ডেকে জিজ্ঞেস করলো "আচ্ছা এইযে এতটা সময় কেটে গেল এরমধ্যে কেউই কি বাইরে আসে নি?"
"শুক্রবারের সকাল! কে বা তার প্রিয় ঘুম নষ্ট করে প্রতিবেশীর খবর নিতে আসবে?" ফাইয়াজ বলল।
"স্যার, আলাউদ্দিন সম্পর্কে তারা ডিটেলস জানে এজন্যই তারা এত সহজে সবকিছু করে ফেলেছে। হয়তো আলাউদ্দিনের এব্যাপারে কোনো ধারণা নেই। সেই সাথে তারা নিঝুমকেও ফলো করছিল। ভেবে নিন স্যার যে হুট করেই ব্যাটে বলে মিলে গেছে এবং সিক্স!" নাসির বলল।
"হয়তো, এমন কোয়েনসিডেন্স এর আগে কোনো ক্রিমিনালদের সাথে হয় নি! বেশ ভাগ্যবান তারা।"
"আর স্যার ওই যে লোকটার কথা আলাউদ্দিন বললো, কি যেন নাম তার? মনে আসছে না!" নাসির বলে ভাবতে লাগলো। ফাইয়াজ বললো, "নেওয়াজ রহমান?"
"জ্বি স্যার নেওয়াজ রহমান, তাকে কি আমাদের ড্রাইভার হিসাবে নেয়া যায়? আলাউদ্দিন তো বললো লোকটা বেশ ভাল। আর আমাদের ড্রাইভারের সংকটও আছে!"
আহসান বললো, "আলাউদ্দিনকে আমার ভাল লোকই মনে হচ্ছে, নিজের দুর্দিনে নেওয়াজ রহমানের কথা ভুলে যায় নি!"
ফাইয়াজ সন্দেহ নিয়ে বলল, "আচ্ছা এমন তো না যে নেওয়াজ কে নিয়ে আলাউদ্দিনের মাথায় কোন প্ল্যান চলছে?"
আহসান এবং নাসির উভয়ই ফাইয়াজের কথায় দ্বিমত পোষণ করে বলল, "না, এমন হবে না।"
ফাইয়াজ বলল, "ঠিক আছে তাহলে ডিরেক্টর স্যারের সাথে কথা বলে দেখ স্যার কি বলে! আমার মনে হয় স্যার রিজেক্ট করে দিবেন।"
আহসান বলল, "হয়তো, আবার না ও!
The enemy of my enemy is my friend!"


চলবে...


[ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন]

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মে, ২০২০ রাত ৮:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: ঠিক আছে চলুক।

২৯ শে মে, ২০২০ রাত ১:১২

দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২৮ শে মে, ২০২০ রাত ১০:১০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: একরাশ ভালো লাগা

২৯ শে মে, ২০২০ রাত ১:১২

দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, পরের পর্বগুলো পড়ে নিয়েন :)

৩| ০৬ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:৪৫

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: লেখাটা একটু বিচ্ছিন্ন মনে হচ্ছে, আরেকটু গোছানো হলে হয়তো মানে বাড়তো।

শুভেচ্ছা রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.