নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রেমিকার চিরশত্রু
১ম পর্ব,
"এক এক করে প্রশ্ন শুরু করি?"
কেন যে বেট ধরতে গেলাম আমার ছাত্রী সাথে! এমন একটা পরিস্থিতিতে আটকে যাবো এটা কখনও ভাবি নি! তার প্রশ্ন গুলো শোনার আগে দুই সপ্তাহে আগে কি এমন বেট ধরেছিলাম সেটা জেনে আসা যাক। সপ্তাহ দুই আগে, টিউশনি শেষ করে বাসায় এলাম, পকেটে হাত দিতেই দেখি মানিব্যাগ নাই! কোথায় রেখেছি বা হারিয়েছি কিনা মনে আসছিল না। প্রথমে নিজেকে সার্চ করলাম, পেলাম না! পুরো বাসা খুঁজলাম, তাও পেলাম না! কয়েকশ টাকা আর দুইটা ছবি আর একটা কাগজ ছিল যা খুবই প্রয়োজন ছিল। রওনা দেয়ার আগে ভেবেছিলাম ছবি আর কাগজ ড্রায়ারে রেখে যাই কিন্তু কোন এক কথায় সেটাও ভুলে গেলাম! কি আজব স্মৃতিশক্তি আমার!
পরেরদিন পড়াতে গেলাম। টেবিলে বসতেই ছাত্রীর মুখে দাত কটমট করা ভিলেনী হাসি! আমি জিজ্ঞেস করলাম, "কি হয়েছে? এমন ইমোজি হয়ে আছো কেন?" ছাত্রীর হাসি বেড়ে গেল! "পড়া শেষে বলবো নে স্যার!" আমি মোটামুটি শক খেয়ে গেলাম! অন্যান্য সময় গল্প আগে শুরু করে পড়া পরে আর আজ পড়া আগে!! আজ দেখছি অনেক অনেক গণিত সমস্যা, গ্রামার সল্যুশন নিজ থেকেই নিয়ে আসছে! আজ সবকিছু যেন মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। পড়া শেষে সে বললো, "স্যার দুই মিনিট বসেন। আমি যাবো আর আসবো!" একটুপর ফোন নিয়ে আমার ফেসবুকে দুইটা ছবি পাঠালো! এটা দেখার জন্য আমি একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, "এটা কই পাইছো?" সে তার ভিলেনী মার্কা চেহারা করে বললো, "সব আছে আমার কাছে এবং খুব যত্নে।" আমি বললাম,
- তাড়াতাড়ি দিয়ে দাও না ভাল হবে না বলে দিচ্ছি...
- ভাল হবে না? যান গিয়ে আম্মুকে বলেন আমি আপনার মানিব্যাগ লুকিয়ে রেখেছি! আর আম্মু নিজেও জানে না...
- দেখ ভাল হচ্ছে না বলছি!
- আমিও আম্মুকে বলবো আপনার মানিব্যাগে কি কি আছে! এর সাথে এক্সট্রা যোগ করেও বলতে পারি। না হয় আম্মুর হাতের আদর নিলাম...
আমি একদম ধরা! বাধ্য হয়ে বললাম, "বল কি চাই তোমার? কি খাবে?"
- স্যার খাওয়া দাওয়া পরে, আমি ছবি গল্পটা সম্পূর্ণ জানতে চাই!
- মোটেও না!
- বাকি দাবি গুলো শুনবেন না? আচ্ছা এটাই পুরণ করেন।
ভাবছি কি করা যায়। শেষে বললাম, "ওকে ফাইন, তাহলে আমারও একটা দাবি আছে!"
- পেশ করেন কি দাবি আছে!
- তোমাকে ইংরেজি ১ম ও ২য় তে ৯০+ মার্কস তুলতে হবে, যদি রাজি থাকো আমিও তোমার শর্তে রাজি!
ছাত্রীর মুখ একদম শুকিয়ে গেল! কিছুক্ষণ পরেই বললো, "ঠিক আছে স্যার, এই টেস্ট পরীক্ষায় ৯০+ মার্ক তুলে নিয়েছি মনে করেন তবে শর্ত কিন্তু ভুলবেন না!!!
টেস্টের রেজাল্ট দিয়েছে, একেকটা মার্ক দেখতে দেখতে ইংরেজিতে এসে চোখ আটকে গেল! দুই পার্ট মিলে ১৮৯ পেয়েছে! আমি ধীরে একটা ঢোক চিপলাম। ভাল লাগছে ওর রেজাল্ট দেখে কিন্তু এটাও ভাবছি এত নম্বর কিভাবে তুলল!
"তারপর বলেন, মার্কস ঠিক আছে না স্যার?"
আমি বললাম, "ইশ এত মনোযোগ যদি সবসময় দিতে! তোমার মার্কস আমাকে প্রথমবার হতাশ করল।"
- স্যার বেটের কথা মনে আছে না?
আমি মাথা নারালাম। বললাম, "আগে এক গ্লাস পানি নিয়ে এসো।"
পানি পান করার পর রেডি হচ্ছি ওর বেট নিয়ে!
"তাহলে স্যার, এক এক করে প্রশ্ন করি?"
- হুম, বল!
"এটা কার ছবি স্যার? নাম কি? কে হয় আপনার?"
আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি কিছু বলার, একটু ঝেরে কেশে নিলাম। ঘড়ির দিকে তাকালাম, পড়ানোর আর ১০ মিনিট সময় বাকি আছে। এই দশ মিনিটে সার সংক্ষেপ করে বলে দিই।
"ওর নাম মেহেরুন, আমার ক্লাসমেট ছিল।" আমি বললাম। "অস্থির নাম তো স্যার! মাশাআল্লাহ!! চেহারা আর নাম দুইটাই সুন্দর!" ছবিটা এদিক সেদিক করে দেখে ছাত্রী বললো।
তারপর বলেন, "উনি কি হয় আপনার?"
বললাম, "খুবই কাছের বন্ধু। এতটা কাছের যা বর্ণনা করে বলা প্রায়ই অসম্ভব।"
ছাত্রী বলল, "উনি কি আপনার গার্লফ্রেন্ড?"
এই হল ক্লাস নাইন/টেনের পোলাপানের বৈশিষ্ট্য! কিছু দেখলেই সবার আগে টান দিয়ে গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ডে নিয়ে যাবে! পরে আমি বললাম, "নাহ, কারণ তাকে কখনও গার্লফ্রেন্ড এর মত দেখি নি।" কিছুক্ষণপর বললাম, "নাও এবার পরবর্তী দিনের পড়া লিখে নাও। এগুলা দিচ্ছি পড়ে নিও। আজ আসি আমি!" এই বলে উঠতে নিলাম তখনই ছাত্রী বললো, "স্যার বাকিটা বলবেন না?" আমি বললাম, "তোমার জন্য এতটুকু যথেষ্ট! বাকিটা ওয়েস্ট অফ টাইম। সামনে পরীক্ষা না? এখন যেভাবে পরছো সেভাবেই পড়তে থাকো, তোমার রেজাল্ট খুবই ভাল হবে।"
আজকের মত পড়িয়ে বেরিয়ে আসলাম। রাস্তা দিয়ে হেটে হেটে যাচ্ছি। হালকা মুচকি হাসি হেসে যাচ্ছি। এভাবেই আমি তার পরিচয় গোপন রাখি অনেক মানুষের কাছে! মেহেরুন নামের কাউকে আমি চিনি না, ইন্সট্যান্ট কারও একজনের নাম নেয়ার দরকার ছিল বিধায় এই নিলাম। এটা নিয়েই নিধি অর্থাৎ আমার ছাত্রী, সে ভাবতে থাকবে। এত কিউরিসিটি তার মধ্যে যেকোনো ঘটনা জানার জন্য যা বলার মত না! কিউরিসিটি দমিয়ে রাখার জন্যেই একটু মিথ্যা বলা। সত্যি বলতে ছবির সেই মেয়েটি আমার ক্লাসমেট ছিল! স্কুল থেকে কলেজের শেষ পর্যন্ত আমরা একই সাথে পড়েছি। আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেল ছিল অনেক বড় মাকড়শার জালের মত! আমরা একসাথে যেখানে আড্ডা দিতাম সেটা অনেকটা এক প্লাটুনের মত। আর ক্লাসের মেয়েরা একসাথে হলে তো কথাই নাই! ক্লাসে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশি এগিয়ে ছিল। কিন্তু বুদ্ধিমত্তায় ছেলেরা এগিয়ে। এরমধ্যে সবকিছুর সংমিশ্রণ ছিল সুমি! এই সুমিই হল ছবির মেয়েটি যাকে অন্য আরেক নাম দিয়ে নিধির সামনে তুলে ধরেছি! আমরা আহামরি ফ্রেন্ড ছিলাম না। মোটামুটি ভাল সম্পর্ক ছিল আমাদের মাঝে। সুমির সবচেয়ে ভাল ফ্রেন্ড ছিল পিয়াল। আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে সুদর্শন ছেলে ছিল পিয়াল। সার্কেলের অনেকের মতে তারা দুইজন কাপল! আমি এতটা মাথা ঘামাইনি এদের নিয়ে। আমি অনেকটা চাপা স্বভাবের ছিলাম। শুধু একটা মৃদু হাসি দিয়ে উত্তর করতাম আর বন্ধুদের পচানি দেখে কখনও অট্টহাসিও দিতাম। ক্লাসের এক বলেছিল, "শোন দোস্ত, এমন ভাবে হাসবি না, তোর হাসি শুনে মনে হয় আশেপাশে কোথাও বুল্ডোজার যাচ্ছে!" এই শুনে বাকি সবাই তাদের সুমধুর হাসি দিচ্ছিল আর আমি মৃদু ভাবে হেসে সেটাকে অন্যদিকে উড়িয়ে দিলাম। একটা মানুষের সবদিক পারফেক্ট হয় না বা সর্ব গুনে গুণান্বিত হয় না। কিন্তু কিছু মানুষ থাকে যাদের দেখলে আপনি মেনে নিতে বাধ্য যে আসলেই এমনটা হয়! সুমি আর পিয়াল ছিল ঠিক সেরকম, মাঝে মাঝে ভাবতাম কেন তারা এমন হল আর কেনই বা আমরা এমন হলাম! সুমির বর্ণনা দিতে গেলে অনায়সে যত ভাল গুণাবলি আছে সব দিয়ে দেয়া যায়! পিয়ালও তাই। আর আমার ক্ষেত্রে, থাক গল্পে একটু একটু করে সব বলে দিব।
ভালবাসা নামক শব্দটার প্রতি আমি খুব কৌতূহলী ছিলাম। আমার কাছে এটার এক কথার সংজ্ঞা হল সুখ দুঃখ শেয়ার আর কেয়ার করা! এসবের কোনো অভিজ্ঞতা আমার নেই। যাদের আছে তাদের বলতে শুনেছি "সিঙ্গেলই মঙ্গল!" আমার কখনও তা মনে হতো না। সুমি আর পিয়ালকে দেখলে মনে হতো বন্ধু কম কাপল বেশি! সুমি ছাড়া পিয়াল কোথাও বসতো না, পিয়াল ছাড়া সুমি ঘুরতে বের হত না! এই অবস্থাকে কাপল ছাড়া আর কিছু বলে কিনা আমার জানা ছিল না! রোদ, বৃষ্টি, শীত যাই হোক এরা দুজন ক্লাসে আসবেই! আরেক ছিলাম আমি, যার ক্লাস ছাড়া অন্য কোথাও সময় কাটতো না! আমি বেশিরভাগ সময় আমির এবং আকিব এর সাথে থাকতাম। আমরা তিনজন একসাথে থাকলে মনে হতো পান্ডার গ্রুপ! আমাদের রোলও পরপর যার ফলে পরীক্ষাগুলাতে মাঝে মাঝে ব্যাপক ঝামেলা তৈরি হত। কারণ, আমির টানা মুখস্ত করে আসতো আর ভুলে গেল সেখানেই স্টপ! আর আকিব বানিয়ে লেখতো, এমন সংজ্ঞায় একেকটা প্রশ্ন সংজ্ঞায়িত করে উত্তর লেখে যা স্যারের দিন খারাপ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট! আর আমার সামনে সুমি বসতো যা আমার জন্যে তেমন সুখকর কিছু ছিল না। সে লেখা শেষ না হওয়া পর্যন্ত পিছনের ডাক শুনতো না আর শুনলেও বলতে পারতো না!
ইন্টার পরীক্ষার রেজাল্টের দিন, কলেজের বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে ১১'এর ব্যাচ সবচেয়ে ভাল রেজাল্ট করেছে! ৭০টা প্লাস আর শতকরা শতাধিক পাশ নিয়ে আমাদের কলেজ জেলার মধ্যে ২য় স্থানে ছিল! সুমির রেজাল্ট প্লাস, পিয়ালের রেজাল্ট এ!!! মজার ব্যাপার ছিল আমরা তিনজন পিয়ালের চেয়ে পয়েন্টে অনেক এগিয়ে ছিলাম। এডমিশন কোচিং এ কেউ মেডিকেল, কেউ ইঞ্জিনিয়ারিং আর কেউ বা ডিফেন্সের জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছিল। ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনেকের মধ্যে অনেক রকমের উত্তেজনা কাজ করতো। আমার মাঝে কাজ করতো আবেগ। আমার মনে হয় আবেগ দিয়ে যদি জীবন চলতো তাহলে আমার চেয়ে সুখি হয়তো কেউ আর হতো না। আর মনে হয় এসব বেশি হওয়ার কারণ আমি খুব বেশি হিন্দি সিনেমা দেখতাম। যাই হোক, তখন আমার জীবনের কোনো লক্ষ্য ছিল না। এটা হতে হবে, ভাল ভার্সিটিতে চান্স পেতে হবে এসব নিয়ে ভাবতাম না। এমন নয় যে আমার পারিবারিক অবস্থা খুব ভাল, মধ্যবিত্ত! তারপরও আমি একটু অন্যরকম ছিলাম। সবাই আমাকে বলতো "লক্ষ্যহীন মানুষ জীবনে কিছু করতে পারে না!" কিন্তু আমি তখনও বুঝতে পারি নি আমার জীবনের লক্ষ্য কি? কি হব বড় হয়ে! আমার দুই বন্ধুর ইচ্ছা একজন আর্মিতে জয়েন দিবে আরেকজন বাপের ব্যবসা দেখবে! দেখতে দেখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার সময় এল। আমরা অনেকেই পরীক্ষা দিয়েছিলাম কিন্তু হাতে গোনা কয়েকজন চান্স পেল। ডিফেন্সের সিলেকশনের কথা এখনও মনে পরে, উচ্চতা কম হওয়ায় অনেক ফ্রেন্ড আমাকে নিয়ে অনেক হাসি তামাশা করেছিল। হয় নি পরে সেখানে। দিন যেতে লাগলো আর আমি হতাশ হতে থাকলাম! আমি প্রস্তুতি নিয়েছিলাম ভার্সিটির জন্য কিন্তু কি নিয়ে পড়বো এটা ঠিক ছিল করা না! শুধু ভাবতাম "পাবলিক ভার্সিটি তো, যেকোনো সাবজেক্টে একটা সিট হলেই হল!" এই একটা সিট আমার কপালে জুটেছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে, রসায়ন সাবজেক্টে! সেদিনের মত খুশি আমি কোনদিনও হয় নি! এরমধ্যে খবর পেলাম আকিব সেনাবাহিনীতে চান্স পেয়েছে আর আমির বিদেশে যাচ্ছে! আমি শুধুমাত্র আকিবের সাথে দেখা করতে পারছিলাম, আমিরের সাথে এখনও দেখা হয় নি! তিন চারদিন পর, আমরা তিন বন্ধু বেশ ভাল একটা জমপেশ আড্ডা দিয়ে একে অপরকে বিদায় জানিয়ে চলে এলাম। আকিবকে বলল্লাম ছুটিতে যখনই আসবি অবশ্যই দেখা করিস। আমিরকে বলেছিলাম যোগাযোগ থাকবে আমাদের মাঝে ভিডিও কলে।
আমার ক্লাস শুরু হয়ে গেল। সপ্তাহখানেক ক্লাসে সিনিয়র ভাইয়েরা এসে বিভিন্ন লেকচার দিয়ে যেত। জিজ্ঞেস করতো কয়জন এসেছে আর কয়জন আসেনি। কার কি সমাচার ইত্যাদি ইত্যাদি! কিছু সিনিয়র ছিল এমন শুধু মেয়েদেরই খোঁজখবর নিতো এবং এটা স্বাভাবিক! আরেকটা কথা তো বলতে ভুলেই গেছি, র্যাগিং!!
জ্বি হ্যাঁ, ভার্সিটি হলে র্যাগিং হবে না এটা কোনো কথা? উঠতে বসতে র্যাগিং। রাস্তা দিয়ে হাটছি, কোনো এক অপরিচিত কে দেখে সালাম দিলাম না, ব্যাস! এক ঘন্টার মধ্যে আপনি কোথায় আছেন র্যাগিং ফোর্স এসে আপনার ক্লাস নেয়া শুরু করবে! শীতের রাতে র্যাগিং! কি যে ভয়াবহ পরিণতি শুধুমাত্র অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিরাই বুঝে।
ভার্সিটির ১ম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের কিভাবে চেনা যায় জানেন? অনেকেই বলে তাদের মুখ দেখে চেনা যায়! তবে আমার মনে হয় সেটা ঠিক নয়, কারণ তারা যে ভার্সিটির নতুন মুখ সেটা তাদের কর্মকাণ্ডের মাঝেই নিহিত থাকে। তাদের কর্মকাণ্ডই পরিচয় করিয়ে দেয় যা নতুন! যেমনটা আমার হয়েছিল, আবেগের বসে বিকালে হাটতে বের হয়েছি, হাটতে হাটতে এদিক সেদিক দেখছিলাম। দেখছিলাম ক্যাম্পাসের পরিবেশ কেমন, কেমন কোলাহল থাকে। একেকবার একেক দিকে তাকাচ্ছিলাম, আমার মনে হয় এগুলাই পর্যাপ্ত যা আপনাকে অন্যের কাছে প্রমাণ করিয়ে দিবে আপনি ভর্তি হয়েছেন, আপনি অতিথি নন!
শনিবার,
সকাল ১০টা,
অসময়ে টয়লেটের চাপের আভাস পেয়ে অনেকখানি সময় নষ্ট করে ১ম ক্লাস মিস দিয়ে ফেলেছি! পরের ক্লাস ধরার জন্য রিল্যাক্সে তৈরী হয়ে নিচ্ছি। ক্লাসরুমের উদ্দেশ্য বের হলাম, ক্লাসের দরজার সামনে আসতেই দেখি স্যার মাত্র বের হলেন। আমিও চলমান অবস্থায় ৩৬০ডিগ্রি ঘুরে স্যারকে পাশ কাটিয়ে ক্লাসে ঢুকে পরলাম। বেঞ্চের ব্যাগ রাখতেই সোজা বরাবর আমার চোখ আটকে গেল! যাকে দেখলাম সেটা কল্পনার বাইরে! দেখি সুমি আর আমি পরস্পরের দিকে আকস্মিক তাকিয়ে রইলাম! নিজেকে কোনোরকম সামলে নিলাম। ভাবছিলাম এটা আসলেই সুমি তো? এরপরের ৪৫মিনিট আমি ভুল করেও বামদিকে তাকাই নি। ভার্সিটি ক্লাসের এই অষ্টম দিনে আমি এতটা মনোযোগ দেই নি বোর্ডের দিকে যা সেদিন দিয়েছিলাম! ম্যাডাম এটেন্ডেন্স নেয়ার সময় সুমি যখন রেস্পন্স করলো তখনও আমি তার দিকে তাকাই নি। কি দরকার? স্কুল কলেজ একসাথে পড়ছি বলেই যে এখনও কথা বলা লাগবে এমন কই লেখা আছে! আর আমরা কোনোদিন ওই পর্যায়ের ক্লাসমেট ছিলাম না যে কথা বলতেই হবে!
ক্লাস শেষে এখন গ্যাপ চলছে। আমি বসে বসে ভাবছি সুমিকে নিয়ে। ক্লাস ফাকা হতেই সুমি আমার সামনে ব্যাগ রেখে বললো, "আমি কখনও ভাবি নি এখানে চেনা জানা কারও সাথে দেখা হবে! বিশ্বাস করতে পারছিলাম না!" আমি বললাম, "আমি শুনছি তোর অন্য কোথায় যেন চান্স হইছিল?"
সে বললো তার চান্স হয়েছিল জগন্নাথে কিন্তু সাবজেক্ট পছন্দ হয় নি!
ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও অনেক কথা বলে ফেললাম ওই সময়টুকুতে! এটা আসলেই ভাল লাগে যখন সম্পূর্ণ অজানা একটা চক্রে আপনি এসে পরেন এবং হাজার হাজার অচেনা ভীড়ের মাঝে হুট করে পরিচিত কাউকে পেয়ে যান! হয়তো আমাদেরও সেরকমটা মনে হচ্ছিল।
আমি শুরুতে বলেছিলাম সুমির গুণাবলি তে সকল ভাল গুণবাচক শব্দ আপনি ব্যবহার করতে পারেন। সেদিনের পর অনেকেই সুমিকে দেখে বেশ বড় মাপের মন বসিয়ে নিয়েছে! রাতে হলের ডাইনিংয়ে খাওয়া দাওয়ার সময় সুমির কথা আশেপাশে শুনলাম। আমি তাদের কথা কানে দিলাম না কিন্তু কিছু কিছু কথা এতই বাজে ছিল যা আমি কানে না নিলেও আমার শুনতে খুবই খারাপ লাগছিল! হঠাৎ এরমধ্যে একজন আমাকে দেখে বলে উঠল, "ওই তুই ফ্রেশার না?"
আরেকজন বললো, "আরে ব্যাটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে!" একথা সেকথায় এখানেও র্যাগিং এর মত পরিবেশ তৈরী হল! বলতে না বলতেই আরেকজন বললো, "শোন, এখন রাত ৯টা বাজে, তোর ক্লাসের ওই মালটা যেই হলেই থাকুক ওর নাম্বার নিয়ে আয়!"
এই হচ্ছে আসল উদ্দেশ্য তাদের। খাওয়া শেষ হতেই তারা একপ্রকার জোর করে পাঠিয়ে দিল আমাকে। বড় কপাল খারাপ আমার কারণ কলেজেও কখনও ওকে ফোন করা লাগে নি, নাম্বারই বা কেন নিবো! নাম্বার ছাড়াই হলে ফেরত আসার পর সিনিয়ররা সাজা শুনিয়ে দিলেন, "এখন থেকে এক সপ্তাহ, হলে আর হলের বাইরে যারে যারে দেখবি, ছোট বড় চেনা অচেনা সবাইরে সালাম দিবি! একটা সালাম যদি এদিক সেদিক হয় তোর খবর আছে!"
সালাম বিনিময়ের প্রথম দিনেই আমার সালাম দেয়া দেখে সুমির ১ম প্রশ্নটা ছিল, "কিরে? র্যাগিং এর কেস চলতেছে নাকি তোর নামে?" আমি বললাম, "তোরে র্যাগ দেয় নাই?"
সে উত্তরে না বললো। আর তাছাড়া তাদের ক্লাস কিভাবে নেয় সেটা আমার ইচ্ছা ছিল না তাই আর কিছু বলি নি।
ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর কিছু হাস্যকর বিষয়াবলী দেখা যায়। যার মধ্যে প্রেম অন্যতম! সেই প্রেমটা হলো পরিচয়ের এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রপোজ আর সাথে সাথে রাজি হয়ে যাওয়া! ক্লাসের অনেকের মধ্যে এমটা হয়েছে। অনেক গ্রুপ হয়ে গেছে এরমধ্যে। এভাবে প্রায় ৪মাস চলে গেল। এখন আমরা বেশ ভালই পরিচিত সবার কাছে। সবচেয়ে বেশি পরিচিত হলো ছ্যাঁচড়া প্রজাতির ক্লাসমেটরা! বেশ ভালই চলছিল দিনগুলো। এরমধ্যে কিছু কিছু অঘটনের দেখাও পাওয়া গেল, সুমিকে নিয়ে।
সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা চলছিল সেদিন, অনেকেই বিভিন্ন ভাবে ব্যস্ত। আমাদের ব্যাচের তিনজন কে ডাকা হলো ডিপার্টমেন্টকে সুন্দর করে সাজানো জন্য। এরজন্য বেশ সুন্দর একটা কূটনৈতিক চাল দিয়েছে আমার কয়েকজন ক্লাসমেট! এরা হল সিনিয়রদের গোলামি করা টাইপ! আমি তখনও বুঝতে পারি নি আমাদের দিয়ে খাটিয়ে নিজেরা মজা নিবে। দেয়ালে বিভিন্ন লেখা আলপনা লাগানোর কাজ ব্যস্ত আমি। এরমধ্যে দেখি ক্লাস থেকে সুমি বের হয়ে হনহন করে হেটে চলে গেল! বিষয়টা কেমন যেন মনে হলো আমার। আমিও ক্লাসে ঢুকলাম, দেখি রঙের কৌটাটা মেঝেতে পরে আছে! তাড়াতাড়ি গিয়ে যতটুকু সম্ভব রঙ কৌটায় তুলে রাখলাম। এমন সময় সিনিয়র তিন চারজন এসে এসব দেখে ফেলল এবং সেখানেই শুরু করলো বিভিন্ন কথা শোনানো। এরমধ্যে একজন বললো, "তোর কোহিনুর ফেসটা দেয়ালে ঘষা দিলেই খুব সুন্দর আলপনা হয়ে যাবে!" এমন কথা আমি শুনে শুনে অভ্যস্ত। সবশেষে বললাম, "ভাই ভুল হয়ে গেছে, যা নষ্ট হয়েছে সেটা আমি কিনে আনবো নে।" এরমধ্যে জলিল ভাই (ফাইনাল ইয়ারের) এসে বললো, "আরে এক্সিডেন্ট হইতেই পারে। ব্যাপার না, না হয় যে রঙ গেছে সেটা অন্য কিছু দিয়ে কভার দিয়ে দেয়া যাবে!" জলিল ভাই এসে আমাকে কোনোরকম উদ্ধার করে নিল। এজন্য ভাইকে আমি সম্মান করি। তবে এই সাজানোর কাজে আমি আর নেই, এক হাটায় ডিপার্টমেন্টের বাইরে চলে এলাম। হাত আর প্যান্টের বিভিন্ন অংশে রং লেগে আছে। সামনে তাকাতেই কিছুটা দুরে দেখি সুমি আর অবন্তী কি যেন কথা বলছে। আমিও সেই রাস্তা দিয়েই চায়ের দোকান বরাবর হাটছি। সেখানে যাওয়ার আগে সুমির দিকে গেলাম। বললাম, "কিরে তোর সাজানো শেষ?"
অবন্তী বললো, "কিছু না, তুই যা আমরা কিছু কথা বলছি।" আমিও আর কিছু বললাম না। সোজা চলে গেলাম চায়ের দোকানে। অবন্তীর বলার ভঙ্গিটা আমার পছন্দ হল না। শুধু শুধু এগিয়ে কথা বলতে গেলাম।
ডিপার্টমেন্টে যাওয়ার সময় সুমিকে দেখলাম ঠিক আগের জায়গায় আছে! কিন্তু অবন্তী নেই! কেন যেন আবারও ইচ্ছা হল যাই তার কাছে। কাছেই যেতেই ইটের সাথে পা বেধে গেল! আমার আওয়াজে সুমিও পিছনে তাকালো। আহ বেশ ভাল রকম লেগেছে পায়ে। সুমি বললো, "কিছুক্ষণ বস এখানে। ঠিক হয়ে যাবে।" আমি বসে পরলাম। আমি দূর্বাঘাস পায়ে লাগাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণপর সে বললো, "একটা প্রশ্ন করি?" আমি মাথা নারালাম। "একটা মেয়ে তোদের কাছে কেমন?" আমি প্রশ্নটা বুঝতে পারলাম না! সে বললো, "কিভাবে দেখিস তোরা একটা মেয়েকে?"
সে যে কেন এই প্রশ্ন আমাকে সেদিন করেছিল সেটা তখন জানলে আরও ভাল করে উত্তর দিয়ে দিতাম। আমি বোকার মত কিছুক্ষণ তাকিয়ে ভাবলাম কি উত্তর দেয়া যায়! তারপর বললাম, "সবার দৃষ্টিভঙ্গি একই না।"
সে রেগে গিয়ে বললো, "সবারটা বাদ দে, তুই কিভাবে দেখিস সেটা বল..."
আমি বললাম, "আমার কাছে একটা মেয়ে তার পরিবারের মধ্যমণি। বাচ্চাদের আধো আধো কথায় যেমন একটা পরিবার মাতিয়ে রাখে, একটা মেয়েও তেমন তার পরিবারের কাছে! একজন পিতার সবচেয়ে আদরের, ভাইয়ের সবচেয়ে চুল টানার মত খুনসুটি! সে একটা পরিবারের নিউক্লিয়াস, প্রাণ, হাসির উৎস, গোটা ঘর মাতিয়ে রাখার জন্য একাই একশো....! আর কি চাস? এতো গেল মেয়ে তার বাসার কাছে কি। যদি ভবিষ্যৎ যেমন তার স্বামীর কাছে, বাচ্চাদের কাছে কি সেটা নিয়েও বিরতিহীনভাবে রচনা লেখা যাবে কিন্তু শেষ হবে না!"
সে বললো, "সবটাই বললি আরাফ, শুধু একটা বললি না!" আমি জিজ্ঞেস করলাম কোনটা?
সে বললো, "বন্ধু হিসাবে!"
"এটা আমার বর্ণনার বাইরে, ধরাছোঁয়া বা ভাবনাহীন। ছেলে আর মেয়ের বন্ধুত্ব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অন্যদিকে মোড় নেয়। বেশি ঘনিষ্ঠ হলে সম্মান/বিবেক/বিচার লোপ পেয়ে যায়।"
"আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি। ধন্যবাদ তোকে। সত্য একটা কথা বলি তোকে, এই সম্মান সবাই দিতে জানে না। আমরা যার কাছে যা আশা করি সেটার বিপরীত হয় বেশি। আসি, পরশু ক্লাসে দেখা হবে।"
হয়তো এমন কিছু একটা হয়েছে ওর সাথে যা কাউকে বলতে চায় না। হয়তো ভয়ে কিংবা বিশ্বাস আরও একবার ভাঙতে পারে বলে? খুব সম্ভবত কলেজের কাহিনী, পিয়াল আর সুমি!
[চলবে]
০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৫৪
দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: আন্তরিকভাবে দুঃখিত অবগত না করার জন্য। ইনশাআল্লাহ সামনে আরও ২ পর্ব আসবে এবং উপন্যাসই হবে। ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য
২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর ঝরে ঝরে লেখা।
অবশ্যই চলুক----
০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৫৩
দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: ধন্যবাদ, ধন্যবাদ
৩| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৫৭
নেওয়াজ আলি বলেছেন: ছোট করে দিবেন । চমৎকার লেখা ।
০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৩৭
দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য এবং পরবর্তী পর্ব পোস্ট করা হয়েছে আশাকরি আপনাদের পরার ধৈর্য্য থাকবে
৪| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৩৫
মা.হাসান বলেছেন: সুন্দর লেখা। যথেষ্ট সারপ্রাইজ এলিমেন্ট ছিলো। এক সময় থেকে অন্য সময়ে চলে যাওয়াটা খুব সুন্দর ভাবে হয়েছে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি বড় লেখা পছন্দ করি বেশি, আমার জন্য সাইজ আরো বড় হলে আরো ভালো হতো। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৩৮
দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, পরের পর্ব পোস্ট করা হয়েছে দয়া করে পড়ে নিবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৪০
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
এর পরেও বলছেন চলবে !!
এটুকু পড়তেই তিনবার পানি খেলাম !!
উপন্যাস বলতেন তা হলে আগে থেকেই
প্রস্তুতি নিয়ে রাখতাম, সাথে পানির বদলে
চা কিংবা কফি !! গল্প ভালে লেগেছে।
ধন্যবাদ।