নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রেমিকার চিরশত্রু
ইন্টার পরীক্ষার রেজাল্টের পর সবকিছু এলোমেলো হয়ে যেতে থাকলো। আমার সাজানো গোছানো স্বপ্ন গুলো ধিরে ধিরে হাতছাড়া হয়ে যেতে লাগলো। কখনও ভাবতে পারি নি এমনটা হবে আমার সাথে! প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেখে আমি একের পর এক হতাশায় ডুবে যাচ্ছিলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম সবকিছু আমার হাতের থেকে দুরে সরে যাচ্ছে। এরমধ্যে শুধু মাত্র হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পেলাম। কিন্তু এতেও আমি অনেক সমস্যা দেখতে পাচ্ছি। যত সমস্যাই হোক পরীক্ষা দিব বলে মনস্থির করলাম। দিনতারিখ অনুযায়ী ট্রেনের টিকেটও কাটলাম। ভ্রমণের দিন আমার মনে শুধু একটা চিন্তা দৌড়ে বেড়াচ্ছিল। চান্স পেতেই হবে, খালি হাতে ফেরা যাবে না। দিনাজপুরের ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে শুরু কোচের ভিতরে বাইরে কিংবা ছাদে শুধু মানুষ আর মানুষ! আমার পাশের সিটে বসা ভদ্রলোক তার মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছেন দিনাজপুর। আমি সিওর না আদৌও সে পরীক্ষার্থী কিনা তবে চেহারায় বলছিল সে হয়তো পরীক্ষার্থী। আমার সাথে আরও বন্ধু বান্ধব ছিল কিন্তু ওদের কাছে গেলাম না আমি! ওরা যাচ্ছে ব্যাক আপ হিসাবে পরীক্ষা দিতে। কয়েকজনের একটু দুরের পজিশন আর কয়েকজন ফিক্সড! যাক সেসব, তাদের নিয়ে আমার মাথা নেই। হেলে দুলে চলতে থাকা ট্রেন একসময় তার শেষ স্টেশনে পৌঁছে গেল। সময় তখন প্রায় ভোর হবে হবে এমন। প্লাটফর্মে কোন পোকামাকড়ও নেই! বাকিটা সময় স্টেশনেই থেকে গেলাম। ধীরে ধীরে সকাল হল, মানুষের ভীড় বাড়তে লাগলো, যে ট্রেনে এসেছিলাম সেটাও ঢাকামুখী যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে প্লাটফর্ম ত্যাগ করলো, আমি শুধু বসে বসে কি হচ্ছে সেটা দেখে যাচ্ছি!
সময়মত হাজী দানেশে পৌঁছে পরীক্ষা দিতে গেলাম। প্রশ্ন দেখে তেমন কঠিন মনে হল না! ভালভাবে পরীক্ষা দিয়ে বের হলাম। ওয়াজেদ ভবনের নিচ তলায় এসে দেখা হল সেই স্কুল জীবনের বন্ধু আরাফের সাথে! এত বছরের ব্যবধানে আমরা কেউ কাউকে চিনতে ভুল করি নি! ভার্সিটি থেকে বের হয়ে নিজদের যতটুকু চেনা রাস্তা আছে ততটুকু হাটতে হাটতে সুখ দুঃখের অনেক কথা বলা হয়ে গেল! জিজ্ঞেস করলাম ঢাকা ফিরবি কবে, উত্তরে বললো রাতেই! আমার কথা জিজ্ঞেস করলো, বললাম টিকেট কাটি নাই আর বাস/ট্রেন কোনকিছুতে সিট ফাকা নাই... আরাফ আমাকে ওর সাথে যাওয়ার জন্য বললো এবং আরও বললো একটা সিট দুইজনে ভাগাভাগি করে যাওয়া যাবে, কতই বা লম্বা জার্নি? একসাথে থাকলে মুহূর্তেই শেষ হয়ে যাবে। আমিও ভেবে নিলাম হয়তো ওপরওয়ালা এটাই রিজিকে রেখেছেন! ঠিক সেদিন রাতেই আরাফের সাথে রওনা হলাম। সারা রাস্তা দুজনে গল্প করলাম। কি কি হয়েছে এতদিনে, পুরানা বন্ধুরা কেমন আছে, কেউ কি আবেগে এসে বিয়ে করছে কিনা, গার্লফ্রেন্ড ইত্যাদি ইত্যাদি! এগুলো বলতে বলতে পথ কখন যে শেষ হয়ে গেল বুঝলাম না। শেষে আরাফ বললো, "দোস্ত, জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান মোড়ের সামনে আমরা দারিয়ে আছি, ভেঙে না পরে শক্ত হতে হবে, আবেগে না বাস্তবে ভাবতে হবে, একটা ভুল ডিসিশন? যথেষ্ট ভারী হয়ে উঠবে জীবনের জন্য! পাবলিকে যদি চান্স না হয়, তবে প্রাইভেটে দেখিস, জানি পাবলিকের লাইফ আর প্রাইভেটের লাইফ আলাদা তবুও চেষ্টা করিস।" আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম ভেবে দেখবো। ট্রেন এম মনসুর আলী স্টেশনে দারালো, আমি আরাফের ফোন নাম্বার নিয়ে নেমে পরলাম ট্রেন থেকে। দারিয়ে রইলাম ট্রেনের দুর সীমানায় মিশে যাওয়ার অপেক্ষায়! হর্ণ বাজিয়ে ট্রেন আবারও চলতে শুরু করলো! আস্তে আস্তে গতি বাড়তে থাকলো। যতদূর সম্ভব আরাফকে বিদায় দিয়ে বাসায় এসে পরলাম।
পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে, লিস্টে নিজের রোল খুঁজে পেলাম না! আরাফের রোলটাও দেখলাম, নাহ পেলাম না! তারপরও মনে আশা রাখলাম ওয়েটিং লিস্টে নিজের রোল দেখার। অপেক্ষা করতে থাকলাম কবে দিবে ওয়েটিং লিস্ট। ধীরে ধীরে সপ্তাহ দুয়েক কেটে গেল! বছরটাও প্রায় শেষ শেষ। ডিসেম্বরের ১ম সপ্তাহে ২য় তালিকা প্রকাশ করা হল কিন্তু মন্দভাগ্য আমার এখানেও নিজের রোল পেলাম না! আরাফেরও একই অবস্থা! এভাবে আরেক সপ্তাহ অতিক্রম হল। আমার মেজাজ, আচার আচারণ সবকিছুই দিন দিন চরম খারাপের দিকে যাচ্ছে! কেউ ভাল কিছু বললে বা উপদেশ দিলেই আমার কাছে মনে হয় আমাকে খোটা দেয়া হচ্ছে! একদিন আব্বু ডেকে বললেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আমার ধারণা কেমন? আমার কোনো ধারণা নেই, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় মানে আলালের ঘরের দুলাল ধরনের ছেলেমেয়ের মাঝে নিজের অস্তিত্বকে ডুবিয়ে দিয়ে আসার মতই! তাদের চালচলন এবং নিজেকে মানিয়ে নেয়া যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আব্বু আমাকে এক সপ্তাহ ভাবার সময় দিলেন, কি করবো ভবিষ্যতে এই নিয়ে! কয়েকদিন পর আরাফকে কল করলাম, জানতে চাইলাম কি করবে সে এখন? ওর ইচ্ছা বিবিএ নিয়ে পড়া, সেই হিসাবে প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হবে। আমাকেও জিজ্ঞেস করলো কি করবো? আমি বললাম কাল জানাবো..
আমি আব্বুকে বললাম আমি ট্রিপল ই পড়তে চাই। আর তুমি জানো যন্ত্রাংশ আমার কতটা ভাল লাগে! আব্বু শুনে বেশ খুশি হলেন। আব্বু খোজ খবর নেয়া শুরু করলেন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমন খরচ হতে পারে, এর আগে আমি আরাফের সাথে যোগাযোগ করলাম সে কোন ভার্সিটিতে পড়তে চাচ্ছে। আমি বললাম, "তাহলে এক সাথেই পড়া যাক!" এরকিছু দিন পরেই আব্বু আর আমি গেলাম ঢাকায় সেই বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে এবং ভর্তিও হয়ে আসলাম। আরাফের সাথেও দেখা হয়েছে এবং একদিন থেকেছি ওদের বাসায়। সমস্যা হল ওদের বাসা থেকে ভার্সিটি অনেক দুর! যানজট ঠেলে প্রায় এক দেড় ঘন্টা লেগেই যায়। এজন্য আমরা একটা মেস দেখলাম। জানুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু! যেদিন ক্লাস শুরু হবে তার আগের দিন রওনা হলাম আমি। নিজের মাঝে একটু একটু ভাল লাগা শুরু হয়েছে। হয়তো নতুন করে বাচার আশা জেগে উঠেছে!
প্রথম দিনের ক্লাসে অনেকের সাথেই পরিচয় হল। আমার সাথে পরিচয় হল সাদাত, অবন্তী এবং আরশির সাথে। টুকটাক কথাবার্তা হল সেদিনের মত। নোটিশবোর্ডে ক্লাস রুটিনের একটা ছবি তুলে নিয়ে চলে গেলাম রুমে। কিছুক্ষণপরই আরাফ আসলো। খাওয়া দাওয়ার সময় গেলাম খাওয়া দাওয়া করতে, একবার মুখে নিয়ে ভাত তরকারি আর ভিতরে ঢুকছিল না! কেমন যেন জর্দা জর্দা স্বাদ! আমাদের খাওয়া দেখে সিনিয়ররা হাসাহাসি করছিল তবে তাদের হাসির কারণ বুঝতে আমাদের বেশি সময় লাগে নি! অপেক্ষা শুধু রাতের...
রাত ৮টার দিকে দরজায় আওয়াজ হল! আমি দরজা খুলে দিলাম, দেখলাম চারজন সিনিয়র দারিয়ে আছেন! ব্যস, যা হওয়ার সেটায়, র্যাগিং চলা শুরু হল! আনুমানিক ঘন্টা দুয়েক চলতে থাকলো র্যাগিং। তারপর একটা ছোট খাটো খানাপিনার আয়োজন করা হল। র্যাগিং একদিক দিয়ে খুব ভাল কিন্তু অতিরিক্ত হয়ে গেলে সমস্যা!
.
দেখতে দেখতে কেটে গেল দুই সেমিস্টার! সাদাত, অবন্তী, আরশি আর আরাফ, এদের নিয়েই কেটে যাচ্ছে আমার ভার্সিটির সময়গুলো! এরপর ভর্তি হল আরও দুই সেমিস্টার, আমরা এখন সিনিয়র হলাম। এক শুক্রবারে আমি আর অবন্তী গেলাম বসুন্ধরা শপিং মলে! অবন্তী বললো তার কিছু কেনাকাটা আছে! আমি বললাম, "তাই বলে আমাকেই নিতে হবে?" শেষ পর্যন্ত জোর করেই নিয়ে গেল! এই প্রথম বসুন্ধরায় ঢুকলাম। উপরে তাকিয়ে দেখি বিশাল আকারের গম্বুজ টাইপের কি যেন যেটা আমাকে টাইটানিক সিনেমার শেষ দৃশ্যের কথা মনে করিয়ে দেয় যে স্থানটাতে নায়ক নায়িকা স্বপ্নে দেখা করে! আহা কি সুন্দর সেই মুহূর্তখানা!! অবন্তী জোর গলায় বললো, "কি রে কি ভাবিস তুই? চল.." আরে ধুরু, আমিও কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলাম! "চল তো!"
প্রায় আড়াই ঘন্টা এই দোকান সেই দোকান ঘুরাঘুরি করলো অবন্তী অথচ কিনলো না কিছুই!! আমার তেমন একটা খারাপ লাগে নি, আর অবন্তী বুঝতে পেরেছে আমি আজ প্রথম ঢুকলাম এই মহলে। অবশেষে কয়েকটা মেহেদি আর চুলের ব্যান্ড কিনে একদম ওপর তলায় নিয়ে গেল আমাকে! একটা টেবিলে বসলাম আমরা। একজন এসে মেনু দিয়ে গেল। অবন্তী আমাকে মেনুটা এগিয়ে দিয়ে বললো, "কি ভাল লাগে দেখ.." আমি মেনুটা নিয়ে মিনিটের পর মিনিট সেটা দেখতে লাগলাম! কিছুই বুঝতে পারছি না পিৎজা বার্গার ছাড়া! এমন সব আইটেম আমি আগে কখনই নাম শুনি নি! "দোস্ত, তুই জানিস আমি এইখানে প্রথম আসছি আর যেসব আইটেমের নাম দেয়া এসব কিছুই আমি কখনও শুনি নি! শুধু শুধু আমাকে এমন বিপদে ফালাচ্ছিস কেন?"
অবন্তী একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল! মেনুটা নিয়ে বললো, "আমি অর্ডার করছি.."
দুইটা বার্গার আর কফি অর্ডার করল সে। পনেরো মিনিট পর একজন এসে দিয়ে গেল আমাদের। অবন্তীর দিকে তাকিয়ে দেখি কিছুটা আনমনা হয়ে আছে সে! কি হয়েছে তা তো জানি নাহ তবে জিজ্ঞেস করতেও কেমন যেন ইতস্তত লাগতেছে! তারপরও জিজ্ঞেস করলাম, "কি রে এমন মনমরা হয়ে আছিস যে?" অবন্তী যেভাবে আমার দিকে তাকালো সেই নজর সোজা আমার বুকে এসে আঘাত করলো! ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমি কিছু একটা বলতে যাবো সেটা মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না! কি করি কি করি কিছুই বুঝতে পারছি নাহ! অবন্তী হালকা স্বরে বললো, "তুই কি কিছুই বুঝিস না?" আমি বললাম, "কি বুঝবো?"
আমি আসলেই কিছুই বুঝতে পারছি না ওর কথা! অবন্তী এদিক সেদিক তাকিয়ে কি যেন দেখলো, তারপর বললো, "জানিস আজ কেন আমি তোকে এখানে আনলাম?"
- তুই কিসব কিনবি এজন্য
আমার সোজা উত্তর!
অবন্তী একরাশ বিরক্তি নিয়ে তাকালো!
- কায়েস, আমি সোজা একটা কথা বলি?
- হুম বল..
- আমার তোকে খুব ভাল লাগে, যখন তোর সাথে প্রথম দেখা হয় তখন থেকেই! বলবো বলবো করেও তোকে বলতে পারি নাই, ভয়ে ছিলাম যদি কথা না বলিস বা অন্যকিছু! কিন্তু সত্যি খুব ভালবাসি তোকে..
আমি কি আসলেই সেটা শুনছি যেটা অবন্তী আমাকে বলছে? আমি কি উত্তর দিব বুঝতে পারছি নাহ!
- অবন্তী, আমি আসলে কখনই তোকে নিয়ে এমন কিছু ভাবি নি। সবসময় ভেবেছি আমরা বন্ধু, শুধুই বন্ধু! তাছাড়া আমরা সেম এজ বা ক্লাসমেট, আমাদের মাঝে এসব হলেও ভবিষ্যতে তুই অন্যের আমিও হয়তো সেরকম কিছু!
- কায়েস, আমি জানতাম তুই এমন কিছুই বলবি! এটাই আশা করছিলাম তোর কাছে! আমি বেশি কিছু বলি নি তোকে বা একটু আহ্লাদী ভাব বা একসাথে ফুসকা চটপটি এসব খেয়ে ভালবাসি এটা বুঝাতে চায় নি! এমন কিছু করি নি যেটায় তুই আমাকে খারাপ ভাবিস। তোকে নিয়ে যা ভাবছি সেটাই বলছি..
আমি চুপচাপ ওর কথা শুনে যাচ্ছি। আমিও সত্যটাই বলছি ওকে। আমি জানি অবন্তী বিশাল আকারের কষ্ট পেয়েছে আমার কথা শুনে কিন্তু এটাই সত্য। একটু পর অবন্তী আবার বললো,
-আজ আমাদের মধ্যে যা কথাবার্তা হল সেটা কাউকে জানানোর দরকার নেই, এটা আমাদের মাঝেই থাক। তোকে আজ প্রপোজ করলাম আর তুই আমাকে রিজেক্ট করে দিলি! এতে আবার ভাবিস না আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে গেছে! আগামীকাল ক্লাসে গতদিন গুলোর মতই হাসিখুশি আমরা। তুই হয়তো নিজেকে অনেক গর্বিত ভাবছিস কারণ একটা মেয়ের ভালবাসাকে তুই রিজেক্ট করে দিলি ইউথ সাম কমন ডায়ালগস! অনেক বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করবি ভবিষ্যতে অবন্তী নামের একটা মেয়ের প্রেমের প্রস্তাব পাইছিলাম যেটা আমি সগৌরবে বাতিল করে দিছি! করলেও করতে পারিস, কোন অধিকার নিয়ে বাধা দিব না... চল আজকের মত আর তাড়াতাড়ি কফি শেষ কর...
অবন্তী কথাগুলো বলে ফেললো! ওর যে কতটা কষ্ট হচ্ছে সেটা আমি ঠিকই বুঝতে পারছি। মার্কেট থেকে বের হয়ে বাসে উঠলাম আমরা। একটু সময়ের জন্যেও অবন্তী আমার সাথে কথা বলে নি! জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল! বাস ভাড়া দেয়ার সময় একটু চোখাচোখি হল আমাদের। কেমন যেন একটু তাড়াহুড়া করছে অবন্তী! আমি একটু জোর করে বললাম, "আমি দিচ্ছি!" অবন্তী আর কিছু বললো না, আবারও বাহিরে তাকিয়ে আছে! আমি বুঝতে পারছি সে খুব কষ্টে কান্না চেপে রেখেছে! লোকমুখের আড়ালে একটু সুযোগ পেলেই সেই কান্না সাগরের ঢেউয়ের মত আছড়ে পরবে সে চোখের তীরে!
"কাঁচা বাজার যারা নামবেন উইঠা আসেন!! ওস্তাদ হালকায় বামে চাপায়া, নামবো, অনেক নামবো, মহিলা আচ্ছে!" বাসের হেল্পারের নামার সংকেত শুনে অবন্তী উঠে গেল নামার জন্য। আমিও ওর সাথে নামার জন্য উঠলাম কিন্তু সে বাধা দিল! আমি কিছুটা জোর করেই নামলাম ওর সাথে। ভিতরে ভিতরে আমার ওকে নিয়ে খুব টেনশন হচ্ছে একা ছেড়ে দিতে! না জানি এই ঘোরের মধ্যে মগ্ন থেকে কখন কি করে ফেলে মেয়েটা! খানিক হাটার পর অবন্তী বললো, "তুই চলে গেলেই পারতিস! শুধু শুধু আমার জন্য এখান পর্যন্ত হাটছিস!" আমি কিছুই বললাম না। চুপচাপ ওর সাথে তালমিলিয়ে হাটছি। কিছুক্ষণপর ওর বাসার সামনে এলাম। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, "আসি আজকের মত, সাবধানে যাস আর I am sorry for everything that happened today.." আমি বাইরে দারিয়ে রইলাম, অবন্তীও চলে গেল ভিতরে, মনে মনে একটু স্বস্তি ফিরে এসেছে ওকে ঠিকমত বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পেরে।
রুমে এসে চুপচাপ শুয়ে পরলাম। যেদিকে তাকাই শুধু অবন্তীর মুখটা ভেসে উঠে! ও যেসব কথা বললো সেগুলা আমার রুমের প্রত্যেকটা দেয়ালে বিভিন্ন রঙে ছুটাছুটি করে বেড়াচ্ছে! কেমন যেন আজ আমার অন্যরকম মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে একটা দুরত্ব তৈরী হয়ে গেছে। আমি চাইলেও যেতে পারছি না বা অবন্তীকেও কিছু বলতে পারছি নাহ! আমি আরাফকেও জানাবো না আজকের ঘটনাটা। এখনও ফেরে নি আরাফ, আমি নিশ্চিত যেভাবেই হোক আরাফ জেনে যাবে! এই গুণাবলি ছেলেটার মাঝে ভরপুর। কিছুক্ষণ পরেই দরজায় টোকা পরল! আওয়াজের ধরণ শুনে আমিও বুঝে গেলাম আরাফ এসেছে! দরজা খুলে দিলাম,
- এত দেরি করলি আজ?
আমার কথা শুনে আরাফ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো! হাতের ঘড়িতে তাকিয়ে বললো, "কোনদিন তো জিজ্ঞেস করলি না দেরি হল কেন!!! আজ হঠাৎ জিজ্ঞেস করলি?"
সেটাই তো! অবন্তীর চিন্তা ভাবনায় কিসব বলতেছি আমি নিজেও বুঝতে পারছি নাহ! "সাইড দিবি? তাহলে রুমে ঢুকতে পারতাম.." আমি যে তখন থেকেই দরজায় দারিয়ে আছি মনেই ছিল নাহ। এখন চুপচাপ থাকি, প্রায় ধরা পরেছিলাম! যাই হোক, কুল থাকি এখন। সেদিনের পর ক্লাসে অবন্তীর সাথে আগেরমত কথা বলতে গিয়েও পারছিলাম না! কিন্তু অবন্তী দিব্বি আমার সাথে আগের মত কথা বলে যাচ্ছে যেন কিছুই হয় নি! আমি ভাবছি সে আরশিকে কিছু বলে দেয় নি তো? ক্লাসের মেয়েদের মধ্যে আরশিকেই আমি একটু বেশি ভয় পাই। সে একটু চিল্লায় বেশি আর ঝগড়ায় প্রথম শ্রেণীর। ক্লাস শেষে আমি আর সাদাত আমাদের প্রতিদিনের আড্ডার দোকানে বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছিলাম। ইঞ্জিন নিয়ে হালকা আলোচনা চলছে আমাদের মাঝে। এমন সময় অবন্তী এসে বললো, "কিরে একা একাই খাচ্ছিস তোরা?" সাদাত বললো, "মামা আরেকটা চা দিয়েন সুন্দর করে, আমাদের খাস বন্ধুর জন্য.." আমি অবন্তীকে বসতে বললাম। সাদাত গেল সিগারেটের জন্য। অবন্তী আস্তে আস্তে বললো, "তুই কি এখনও আমার ওপর রাগ করে আছিস নাকি আমার উপস্থিতি তোকে ইরিটেট ফিল করাচ্ছে?" আমি ওর দিকে তাকালাম। বললাম সেটা হবে কেন? অবন্তী হেসে দিল! কিছু বলতে যাবে এরমধ্যে সাদাত চলে এল। এটা নিয়ে সেদিন আর অবন্তী কিছুই বললো না। একদিন ক্লাস শেষ করে আরাফকে কল করলাম কিন্তু রিসিভ করছে না! আমি দোকানে বসে ওর অপেক্ষা করতে লাগলাম। হঠাৎ দেখি জনাব রিক্সা করে যাচ্ছেন পাশে একটা মেয়ে! আরেকটু খেয়াল করতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম কারণ মেয়েটি আর কেউ নয়, সে হল আরশি!!! দেখলাম বেশ হাসিখুশি ভাবেই যাচ্ছে! আমার দিকে অনিচ্ছা স্বত্তেও আরাফের চোখ পরে মুখটা লজ্জায় পরে গেল! বাহ! বেশ ভাল।
দিনগুলি এভাবেই যাচ্ছে। দেখতে দেখতে কেটে গেল আরও একটি বছর। যুক্ত হল আরও দুটি ব্যাচ এবং সেই সাথে সিনিয়ররা খুঁজতে লাগলো কোন পাখিটাকে পটানো যায়, কার সাথে প্রেম করা যায় আরও কত কি! এরমধ্যে অবন্তীও তিন চারটা ছেলের প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছে আর সেগুলা আমাকে এসে বলেছে! সে সবাইকে একটাই কথা বলেছে যে ও একজন কে ভালবাসে! আমি শুনে কখনও হাসতাম, কখনও ট্রিট চাইতাম আর ওকে রাগাইতাম। আরাফ আমার পিছনে উঠে পরে লেগেছে শুধু আরশির জন্য! শুধু একটাই আবদার, আরশির কাছে ওর জন্য প্রেমের প্রস্তাব নিয়ে যেতে হবে! আমি বললাম, "আমার বুঝি আর কোন কাজ নাই আমি খাল কেটে কুমির আনি?" আরাফকে একদিন বললাম, "শোন, ভালবাসিস তুই, প্রপোজও করবি তুই, আমি যদি তোর কথা ওকে বলি তাহলে সে বলতে পারে আরাফ কি ভিতু নাকি? এমন ভিতুর ডিমের সাথে প্রেম করা যায়? আরও কত কি ইত্যাদি ইত্যাদি!" আমি আরেকটু বলে দিলাম যে আমি দরকার হলে তোকে সাহস দিব কিন্তু ভাই আমাকে নিয়ে তোর প্রেমের সৌরভ ওর দারে পৌঁছানো আমার দ্বারা সম্ভব হবে না। মাফও চাই, দোয়াও চাই..। এভাবে অনেক বলার পর রাজি হল আরাফ সাহেব। প্লান করলাম আরাফ যাবে এবং আমি আর আরশি বসে গল্প করবো এমন সময় যা বলার আরাফ বলবে। তো এরপরের দিন, আমি অবন্তী আর আরশি বসে গল্প করছি। আরাফকে মিস কল দিয়ে সংকেত দিলাম আসার জন্য। কিছুক্ষণ পর দেখলাম আরাফ আসলো কিন্তু সাহস পাচ্ছে না! অনেক নাটক করার পর আরাফ আমাদের সাথে যোগ দিল। আরাফ আমার পাশে বসে আমাকে খোচা দিয়ে যাচ্ছে! আমার রাগ হচ্ছে ওর কর্মকাণ্ডে, আমিও সুযোগ বুঝে ওর পায়ে একটা পাড়া মারলাম! বেচারা একটু ব্যাথা পেয়েছে! অবন্তী বুঝতে পেরেছে কিছু একটা হচ্ছে এখানে। অবন্তী আরাফকে জিজ্ঞেস করলো, "কি হয়েছে আরাফ? কোন সমস্যা?" আমিও আরাফকে কানেকানে বললাম, এই সুযোগে আরশিকে বলে দে সব!" আরাফ খুব নার্ভাস! আমি টেবিলে মাথা দিয়ে আছি। এই সময়ে মাথা উচু করার সাহস নাই আমার। "আসলে আরশি, তোমাকে অনেক দিন হল আমার একটা কথা বলা জরুরি..." আরাফ বললো।
- হ্যা তো বলো, আরশির কথা
আমি একটু মাথা উচু করলাম পরিস্থিতি দেখার জন্য। অবন্তীকে দেখলাম দাত চেপে হাসছে!
- আমার তোমাকে খুব ভাল লাগে, আমি তো তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি!
আরাফের কথা শুনে অবন্তী খুশিতে হাত তালি দিয়ে উঠলো! আমিও আরাফকে কংগ্রাচুলেশনস জানালাম।
- তো আমি কি করবো? আরশি বললো
আমরা অবাক হয়ে গেলাম! আমি বললাম,
"তুই কি ওকে ভালবাসিস না?"
- আমার কি ভালবাসাটা জরুরি?
অবন্তী বললো, "কিন্তু তুই না আমাকে..." অবন্তীকে থামিয়ে দিয়ে আরশি বললো, "অবন্তী, শোন, একজন ভালবাসে দেখে আরেকজনকেও যে ভালবাসতে হবে এটা কোথায় বলা আছে? আজকাল ভালবাসা অনেক সস্তা হয়ে গেছে! অলিগলিতে বর্তমানে ভালবাসা খুঁজে পাওয়া যায়। পাওয়া যায় না মানুষের মনে! আর আমার যে ভালবাসতেই হবে এটায় আমি বিশ্বাসী নাহ। সরি আরাফ, তুমি আমার থেকে ভাল কাউকে ডিজার্ভ কর, আসি আমি।" এটা বলে আরশি হাটা দিল! আরাফের দিকে তাকিয়ে আমার খুব মায়া হচ্ছিল! আমিও হাটা দিলাম আরশির পিছু পিছু, ওকে ডেকে বললাম,
- তুই আরাফকে এভাবে না বললেও পারতিস আরশি!
- কায়েস, তোকেও হয়তো কেউ তার প্রানের চেয়ে বেশি ভালবাসে! কিন্তু যদি তুই ভাল না বাসিস? যদি ইচ্ছা না হয়?
আরশি আর কিছু না বলে চলে গেল! আমিও চলে এলাম আরাফের কাছে। গিয়ে দেখি অবন্তী একাই রয়েছে! ওকে জিজ্ঞেস করলাম আরাফ কোনদিকে গেছে? এসব ক্ষেত্রে আমার ভয় লাগে যদি আবেগে এসে কোনো অঘটন ঘটিয়ে দেয়! নিচে এসে আরাফকে পেলাম।
- ভয় হচ্ছিল তোর জন্য।
- পাগল কোনহানকার, ভাবছিস মরতে যাবো? আরশি বললো না ভালবাসা সস্তা হয়ে গেছে? এই সস্তা জিনিসের জন্য মরতে যাবো?
ওর কথা শুনে আমি হেসে দিলাম। "চল, রুমে যাই" বলে আমি ওর কাধে হাত রেখে হাটা শুরু করলাম।
রাতে ছাদে বসে তারাদের দেখছিলাম। তার সাথে ঢাকার রাজপথের আলো যেন অদ্ভুত সুন্দর রাতের সৌন্দর্য্য! কিছুক্ষণ পর আরাফ এসে পাশে বসলো,
- বাড়ি যাবি কবে?
- জানি নাহ, যেদিন ইচ্ছা হবে সেদিন
- আমার না হয় বাসা এই শহরে, একটু সময় নিয়ে বের হলেই পৌঁছে যাবো কিন্তু তোর?
- আমার আবার কি? ১২৮ কি.মি এর রাস্তা, বাসের ছাদ বা ট্রেনের ছাদে অনায়াসে যাওয়া যায়। তুই যেসময়ে পৌঁছাবি সেই সময়ে আমার বাড়ি পৌছে একটা ঘুম দেয়া হয়ে যাবে!
এটা বলে হাসতে লাগলাম।
- কায়েস, আমি কিন্তু বুঝি কেন তুই বাড়ি যেতে এত লেট করিস! এই তিন বছর ধরে দেরিতে যাস, বাড়ির কারও সাথে কথা বলিস না এসব একসময় তোকে খুব যন্ত্রণা দিবে! মানসিকভাবে পঙ্গু করে দিবে। মন খুলে কথা বল, সব সমস্যা শেয়ার কর পরিবারের সাথে, পৃথিবীর কেউ তোর কথা না শুনলেও পরিবার তোর কথা/সমস্যার সমাধান দেয়ার জন্য হা করে বসে থাকবে! শুধু একটু সাহস করে বলতে হবে, ব্যস!
- যা তো ঘুমা, সময় হলে সব বলবো...
- শুনলি না তো? জানি কে বললে তুই শুনবি, দেখি সেও একই কথা বলে কিনা...
ঈদের পূর্বে আজ শেষ ক্লাস, সবাই সবাইকে আগাম ঈদের শুভেচ্ছা, দাওয়াত ইত্যাদি জানাচ্ছে। অনেকেই আমার সাথে কোলাকুলি, শুভেচ্ছা বিনিময় ইত্যাদি করেছে কিন্তু অবন্তীকে দেখলাম না! ক্লাসেই ছিল সে কিন্তু এখন দেখছি না তাকে। এই প্রথম আমি অবন্তীকে খুঁজছি! কিছুক্ষণ পর অবন্তী এসে আমার সামনে বসলো,
- বাদাম খাবি?
- দে..
অবন্তীর সাথে একটা একটা করে বাদাম চিবাচ্ছি। আমি বুঝি না এত টেনশন ফ্রি, হাসি খুশি কিভাবে থাকে সে!
- কি ভাবছিস?
- কিছুনা
- বলতে পারিস, জোর করবো না তোকে
- এক বছর আগে, পরিবারের সাথে মানে আব্বু আম্মুর সাথে খুব খারাপ ভাবে ঝগড়া হইছে, আমি তেমন ভাল ভাবে কথা বলি নাহ বাসায়, কল দিলে কেমন আছি এতটুকু আর আমার মানসিক চাপ তো আছেই! গতকাল আম্মু কল দিছিল..
- শোন, অতকিছু বলতে হবে না, জানিস যখন আমি ডিপ্রেশন বা মানসিকভাবে চাপে থাকি তখন কি করি?
- কি?
- আব্বুর সাথে কথা বলি! জানিস তো আব্বুই আমার সব কিছু, আম্মু বেচে নেই না হলে সামনে দুজনকে বসিয়ে সব কথা বলতাম। যখন তুই কোন কিছু পরিবারের সাথে শেয়ার করবি বা সমাধান চাবি তখন দেখবি তোর আব্বু আম্মুই তোর জন্য বেস্ট সমাধান এনে দিবে। আরে পাগল, তুই তোর পরিবারের বড় ছেলে, তোর আব্বু আম্মু কিছু করার আগে তোর পরামর্শ সবার আগে নিবে আর তুই সেখানে কথাই বলিস না তাদের সাথে?
- না ঠিক সেটা না..
- না হলে কি? রেজাল্ট যখন খারাপ হয় বা প্রত্যাশা অনুযায়ী ভাল না আসে তখন সবার আগে জানতে চায় কারা? পরিবার? রাগারাগি করবে পরিবার। এই অধিকারটুকু আছে মা বাবার। সামান্য বিষয় নিয়ে এমন রিয়েক্ট করা বোকামি ছাড়া কিছুই না! এখন তো বাজে ৩টা, মেসে যা, ফ্রেশ হয়ে নে, ৫টার মধ্যে বিদায় হ, তোকে যেন কাল এই শহরে না দেখি!
হাসি মুখে একপ্রকার হুমকি দিয়ে দিল অবন্তী! আমি উঠে এলাম, অন্যরকম আনন্দ কাজ করছে মনের মাঝে! রুমে এসে আগে ব্যাগপত্র গুছালাম। আমার ব্যাগপত্র গোছানো দেখে আরাফ বললো, "কই যাস? এমন করে গোছগাছ করতেছিস যেন কোথাও পালাবি?"
আমি বললাম, "হ, আমার বাড়িতে পালাইতে যামু! আমি পালাইতেছি এই শহর থেকে!" এই বলে বাথরুমে ঢুকে পরলাম। ফ্রেশ হয়ে আরাফ জড়িয়ে ধরে বললাম, "বন্ধু বাড়ি যাচ্ছি, দোয়া করিস আর তোর ঈদের দাওয়াত রইলো। আসিস! আমি গেলাম!" বাসায় কল করে জানিয়ে দিলাম আমি আসছি, রাস্তায় আছি, ভাল কিছু রান্না করে রাখতে! আজ কি যে আনন্দ লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না! টিকেট পাই নি, বাসের অভাব, রাস্তায় যানজট আরও কত ঝামেলা! সোজা একটা ছোট পিক আপে ভাড়া মিটিয়ে উঠে পরলাম। বাড়ি যাচ্ছি, স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার!
এতটা ভাল সময় আমার কখনও যায় নি, কখনও কাটাই নি! আত্মীয়স্বজনদের মাঝে ঈদের আনন্দ খুঁজে পাওয়া একটা অদ্ভুত আনন্দ! এসবের পিছনে দুজনের জাদু আছে! আরাফ আর অবন্তীর, এদের দুজনকেই আমি কষ্ট দিছি বিভিন্ন ভাবে! বিশেষ করে অবন্তীকে, আম্মুকে বললাম আমার এই বান্ধবীর কথা, সোজা বললো, "বুঝতে পারছি, ও তোকে খুব পছন্দ করে, ভালবাসে, তুইও এখন ওর প্রতি দুর্বল!" আমি বললাম, "কিভাবে বুঝলে?" আম্মু বললো, "তুই তো এই পেটের মধ্যেই ছিলি? লাথি গুতা যা মারার মারছিলি, আমি ছাড়া বুঝবে কে?" আমি হাসলাম, আম্মু গাল টেনে বললো, "পাগল ছেলে.." আমি বুঝি না এই মায়া ছেড়ে কিভাবে রাগ করে ছিলাম আমি! আমিও বুঝতে পেরেছি অবন্তীকে, বুঝতে পারছি আরাফকেও সেই সাথে আরশির সেদিনের কথাটা যেটা আরাফকে বলেছিল। আসলে অবন্তীর জন্য আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল! বাইরে এসে আরশিকে কল করলাম, "তোরা তলে তলে প্রেম করিস আর আমাকে খোটা মারিস না?"
- এতদিন পর বুঝলি? তুই আমার সাথে দেখা করিস, তোরে যে কি করবো ভাবলেই অবন্তীর চেহারা সামনে চলে আসে!
- থাক, ওকে কিছু বলিস না! আমি আসছি খুব তাড়াতাড়ি!
এবার কল দিলাম আরাফকে, রিসিভ করার সাথে যত গালাগাল মুখে আসছে সবই বলছি! আরাফ শুধু বললো, "Same to you! মেসে আয়, আমরা চারজন ঘুরতে যাবো একদিন।"
ক্লাস শেষে আমি, অবন্তী, আরাফ এবং আরশি হাটছি। আরাফ আর আরশি সামনে আমরা দুজন পিছনে। আরাফকে দেখলাম ক্যামেরা বের করলো! আমি জিজ্ঞেস করলাম ক্যামেরা কেন? "একটা স্মৃতি রেখে দিব!" আমিও বুঝতে পারলাম। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম কেউ আছে কিনা কিন্তু তেমন কেউ নেই। "অবন্তী, এখানে দাড়া, সামনে আগাবি না!" সে ঠিক ওখানেই দারিয়ে রইলো। তবে কিছু বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে! একটুপর গাছ থেকে ছোট্ট একটা ফুল ছিড়ে অবন্তীর সামনে দাঁড়ালাম,
- তুই হয়তো বুঝতে পারছিস কেন আমি তোকে দাড় করাইছি?
অবন্তী কথা বলছে নাহ! বুঝতে পেরেছে কি করবো।
- অবন্তী, আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পারি না, সোজা কথায় তোকে আমার অনেক ভাল লাগে! খুব ভালবাসি তোকে, তুইও কি আমায় ভালবাসিস?
- কি বললে তুই খুশি হবি?
- যা সত্যি তাই বল, যা মনে আসে!
- খুব পানির পিপাসা লাগছে, পুরা বলতে পারবো নাহ, আমাদের ফার্স্ট টেবিলে যা যা বলছিলাম সেটাই...
- তাই বলে বলবি নাহ?
- এই এই দাড়া দাড়া, আমার ক্যামেরা রেডি হইছে, একটা ছবিতো তুলেই ছাড়বো! আরাফ বললো,
- আকাশের দিকে তাকা কায়েস, অবন্তী বললো,
আমিও তাকালাম সেদিকে,
- আমি আজও তোকে ভালবাসি, সেদিনের চেয়ে বেশি, ধীরে ধীরে আরও বেশি হবে, বারতে থাকবে শেষ পর্যন্ত...
- ওয়াও দোস্ত, ছবিটা অস্থির সুন্দর আসছে! আরাফ, তুমি তো ভালই ছবি তুলতে পারো! ওই কায়েস, আমাদের একটা ছবি তুলে দে,
আমার রোমান্টিকতায় ছেদ ঘটিয়ে আরশি বললো!
মাঝে মাঝে আপনার জীবনে এমন এমন কিছু মানুষ আসবে যা আপনার ভুল ধারণা বা আপনার অগোছালো জীবনকে সাজিয়ে সুন্দর করে দিবে! হতে পারে আপনিও এমন কারও জীবনে এসে পরবেন যেখানে আপনার মত কাউকে খুব দরকার ছিল একজনের। পৃথিবীতে সবচেয়ে শান্তির জায়গা হল পরিবার। এই পরিবারের মাঝে আপনার সকল সুখ দুঃখ নিহিত! ভাল থাকুক সবার পরিবার পরিজন, ভাল থাকুক আরশি, আরাফ এবং অবন্তীরা....
[এবং ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন...]
০২ রা জুন, ২০১৮ রাত ১২:৪২
দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: আরেকটু বিস্তারিত লিখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এতে পর্ব করে লিখতে হতো এবং পাঠকদের পড়ার আগ্রহ কমে যাবে। তবে আপনাকে ধন্যবাদ মতামতের জন্য। ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিবেন
২| ০২ রা জুন, ২০১৮ রাত ১২:৪৯
সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: ঝরঝরে, সাবলীল লেখনী। এক নি:শ্বাসে পড়ে ফেললাম। বেশ ভালো গেঁথেছেন গল্পটি। কিছু কিছু ডায়ালগ মন ছুঁয়ে যাবার মতো। আর যখন আরশি প্রপোজ পেয়ে রিজেক্ট করল এবং অবন্তী আরশিকে বলল, "কিন্তু তুই না আমাকে!" তখনই বুঝে গিয়েছিলাম কিছু একটা প্ল্যান চলছে। বেশ ভালো লেগেছে গল্পের আইডিয়াটি।
তবে ওপরের মন্তব্যের সাথে একমত। বেশ কয়েক পর্ব হলে হয়ত আরো আকর্ষনীয় হতো কিছু পাঠকের কাছে; যারা বড় লেখা পড়তে পছন্দ করেন না তাদের জন্যে। তবে আমার জন্যে এই ভালো, সাসপেন্সে নাহলে অবস্থা খারাপ হয়ে যেত। হাহা।
অনেক ভালো থাকবেন।
০২ রা জুন, ২০১৮ রাত ১:৪৭
দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই, তবে পরে এমন কোনো গল্প লিখলে পর্ব আকারে লিখবো এবং পর্ব গুলো বেশি বড় না করে ছোট করে পোস্ট করবো।
আরও একবার ধন্যবাদ আপনার মতামত প্রকাশ করার জন্য। এর কিছু অংশ সত্য এবং অনেকের সাথেই ঘটে থাকে।
৩| ০২ রা জুন, ২০১৮ রাত ১২:৫৬
হবা পাগলা বলেছেন: গল্পটা ব্লগের জন্য একটু বড়, তবে সুন্দর। সুভকামনা রইল।
০২ রা জুন, ২০১৮ রাত ১:৪৯
দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই আপনার মন্তব্যের জন্য এবং পরবর্তীতে চেষ্টা করবো আরেকটু ছোট করে মার্জিত করে লেখার জন্য।
৪| ০২ রা জুন, ২০১৮ সকাল ৯:৪২
রাজীব নুর বলেছেন: ভালো গল্প।
০২ রা জুন, ২০১৮ রাত ১১:৩৪
দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা জুন, ২০১৮ রাত ১২:১৭
সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: দুই অথবা তিন কিস্তিতে পোষ্ট করলে মনে হয় মন্দ হতো না।