নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রেমিকার চিরশত্রু
১ম পর্বের লিংক, Click This Link
২য় পর্ব,
বাজারে আসলাম কিছু তরিতরকারি কিনতে। শাক সবজির দামও অনেক বেশি বেড়েছে! লাল শাক কেনার জন্য এক সবজিওয়ালার কাছে গেলাম। একটু পর আরেরজন এল সবজি কিনতে। "দুই কেজি ঢেঁড়স দিয়েন" আমার পাশের লোকটি বললো। হঠাৎ মনে হল কণ্ঠটা কারও সাথে খুব মিলে যাচ্ছে! একটু খেয়াল করতেই মনে পরল এটাতো সেই কিডন্যাপার!! আবার আমি তার দিকে তাকালাম। মুখে রুমাল পেঁচানো আর পরনে লম্বা কোট আর ফরমাল প্যান্ট! তাহলে ইনিই সেই কিডন্যাপার! একটুপর সেও তাকালো আমার দিকে! শাক সবজি ফেলে দিয়ে বাজারের মধ্যেই দৌড়ানো শুরু করল সে এবং তার পিছু পিছু আমি! কয়েকবার ধরতে গিয়েও পারি নি। দৌড়াতে দৌড়াতে কোন অলিগলিতে চলে এলাম জানি নাহ। এবার আমি প্রাণপণে ঝাপটে ধরলাম তাকে এবং দুজনেই পরে গেলাম রাস্তায়। তার রুমালটা আমার হাতে আর সে আমার থেকে কিছুটা দুরে। পরে গিয়ে বেশ ভালই আঘাত পেলাম আমি। উঠতে একটু কষ্টই হচ্ছে। ততক্ষণে সে রিক্সায় চড়ে পালিয়েছে! আমি কোনরকম ভাবে উঠলাম। পিঠ আর হাতে বেশ ব্যাথা পাচ্ছি। মনে হচ্ছে ছিলে গেছে। বাসায় পৌঁছে কাপড় খুলে আয়নায় দেখলাম পিঠের বিভিন্ন অংশে কেটে ছিড়ে গেছে আর হাতে রাস্তার আচড় পরেছে! ফোনটা বের করে সাগরকে কল করে আমার বাসায় আসতে বললাম। সেও দেরি না করে চলে এল। আমি বললাম,
- এই রুমালটা সেই কিডন্যাপারের...
সাগর সেটা হাতে নিয়ে বললো, "আপনি পেলেন কোথায়?"
আমি সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম তাকে। তারপর বললাম, "আজই ওর জীবনের শেষ দিন। কিছুক্ষণ পরই আমি বের হবো।"
সাগর বললো, "স্যার একটু শান্ত হন, আমাদের যা করতে হবে সেটা ঠাণ্ডা মাথায়। তাড়াহুড়ো করা যাবে না..."
আমি বললাম, "এখন না গেলে হয়তো অনেক বড় কিছু হয়ে যাবে!"
- স্যার, আমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বলছি, এখন সে কিছুই করবে না, করার মধ্যে হয়তো আপনার ছোট ভাইকে অন্য স্থানে শিফট করবে..
আমার ইচ্ছা হচ্ছে এখনই কিডন্যাপারের শরীরটা কেটে টুকরো টুকরো করে দিই!
"স্যার আমরা আর দুই ঘন্টা পর বের হই। সূর্য ডোবার পর ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করবো। এখন গেলে সেদিনের মত জানাজানি হয়ে যাবে! এতে করে কিডন্যাপারের সুবিধা হবে..."
আমি কিছুক্ষণ ভাবলাম কি করবো? সাগরকে বললাম, "একটা হেল্প করতে পারবেন?"
- বলুন,
- শেষ বারের মত আমাকে সাহায্য করুন।
- স্যার, আপনার জন্য আমি সবসময় প্রস্তুত, শুধু বলেন কি করতে হবে?
- F5 এবং N1 কে সাথে নিন এবং N1 কে তার গাড়িটাও আনতে বলুন। আমি আপনাকে একটা ইকুইপমেন্ট লিস্ট দিচ্ছি, এগুলো নিয়ে আমার সাথে দেখা করুন।
- স্যার, এর আগে আপনার পিঠে ফার্স্টএইড লাগিয়ে দিই?
- দিন...
"স্যার আমি তাদের কল করেছি, তারা বাজারে আসছে, আপনি আমাকে লিস্ট দিন।"
আমি লিস্ট নিয়ে সাগরকে দিলাম।
"বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট
বাইনোকুলার
ড্রোন ক্যামেরা সাথে তিনটি মাইক্রো মনিটর
সাইলেন্সার
ফ্লাশব্যাং
নাইট ভিশন গগল
এগুলোই স্যার?"
- হুম, স্নাইপার থাকবে দুইজন, F5 এবং N1 আর আপনি এবং ক্যালিবার আমার সাথে থাকবেন।
- Yes sir.. See you in an hour.
সাগর চলে যাওয়ার পর আমি ক্যালিবারের কাছে গেলাম। আমাকে দেখেই দাড়িয়ে গেল সে!
"Good boy.." বলে আমি ওর গায়ে হাত বুলাতে লাগলাম আর সে ঘেউ করে উঠলো। আমি ওর বেল্ট টা খুলে এদিক সেদিক ঘুরিয়ে আনলাম। হালকা ট্রেনিংটাও করিয়ে নিলাম। এতদিন বসে থেকে ক্যালিবারের দিন কিভাবে যাচ্ছিল এটা হয়তো সেই ভাল জানে। আমার রিভলভারটা অন্য একটা জায়গায় রেখে ক্যালিবারকে খুঁজতে বললাম। সে ঘরের এদিক সেদিক ঘুরঘুর করে খুঁজে বের করেছে। কিন্তু এটা করতে গিয়ে জিনিসপত্রের বারটা বাজিয়েছে! বুঝলাম অনেকদিন ট্রেনিং করানো হয় নি তারই ফলাফল। তারপর যেটুকু সময় পেলাম ক্যালিবারকে ট্রেনিং দিতে লাগলাম।
ঘন্টা খানেক পর সাগর(Barrett), S.O জহির (N1) এবং সার্জেন্ট কাদির (F5) সমস্ত কিছু ব্যবস্থা করে আসলেন। লিস্টের সকল কিছু আমার সামনে রাখলেন।
- খুব কষ্ট হয়ে গেছে তাই না? আমি বললাম
- নাহ স্যার, বেজ থেকে কিছুই নিয়ে আসি নি, এগুলা সব আমাদের নিজস্ব, কাদির বললো
- কাজটা খুবই ভাল হয়েছে কাদির।
- স্যার আপনি তৈরী হয়ে নিন, জহির বললো।
"টিম, হালকা একটু ব্রিফিং নিয়ে নিন। আমরা কোন লোকেশনে যাচ্ছি, কতক্ষণ লাগবে, লোকেশন কেমন হবে এসব কিছুই জানা নেই। যাকে ধরার জন্য যাচ্ছি সে সেখানে আছে কিনা সেটাও জানা নেই বা কতজন ছেলেমেয়েকে সে কব্জা করে রেখেছে সেটাও আমাদের জানা নেই। অতীতে আমরা অনেক মিশন দেশে এবং দেশের বাইরে গিয়েছি এবং সেটায় পূর্ণাঙ্গ তথ্য নিয়ে কিন্তু আজকের এই সিক্রেট অভিযানে আমরা কিছুই জানি নাহ কি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্যে। এটা যতটা সোজা ভাবছি যে একজন কিডন্যাপারই তো? সে আর কেমন কি করবে? যদি কেউ এমন ভেবে থাকেন তাহলে মাথা থেকে সম্পূর্ণ ঝেড়ে ফেলেন। কারণ এখানে আমাদের সামান্য ভুলের কারণে অনেক বড় মাশুল দিতে হতে পারে। কিডন্যাপারের কেস পেয়েছে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এবং আমরা যাচ্ছি তাদের কাজে বাম হাত ঢুকাতে! সবাই মনে রাখবেন, আমরা যা যা নিয়ে যাচ্ছি তার কোনকিছুই ফেলে আসে যাবে না। এমন কিছু করা যাবে না যাতে আমরা ধরা পরে যাই। আমি লিস্টে যা যা রেখেছি সব নিয়ে নিন। আমাদের ক্লু শুধুমাত্র কিডন্যাপারের এই রুমালটা। So, we are leaving in 4 minutes, prepare yourself & check your equipment."
"Yes Sir..." সবাই একত্রে বলে উঠলো।
আমি ক্যালিবারের সামনে সেই রুমালটা রাখলাম। সে তার ঘ্রাণ নিয়ে সামনে আগাতে শুরু করলো। আমার কাজকর্ম আশেপাশের মানুষজন দেখছে, কেউ কেউ এদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ করছে না! ব্যাপারটা ভাল। আমরা সবাই সিভিল ড্রেসে আছি। এমনভাবে অভিনয় করছি যেন আমরা কেউ কাউকে চিনি নাহ! আমি সবাই কনফারেন্সে যোগাযোগ করছি। কোন ঝামেলা যেন না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হচ্ছে।
- This is captain, keep following me and avoid close distance.
- Copy that..
একটু একটু করে আগাতে আগাতে একটা জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত দুইতলা বাড়ির সামনে চলে এসেছি। ক্যালিবার আমাদের বাড়ির ভিতরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে!
"Slow down boy. slow down" বলে ক্যালিবারকে থামালাম। বাড়িটার দিকে তাকালাম। কাঠামো বেশ ভালই ছিল মনে হচ্ছে। গেটে তাকিয়ে দেখি একটা ল্যাম্পপোস্ট। বলা যায় না কখন লাইট জ্বলে উঠে আর আমরা ধরা পরে যাই! তাই একটু পিছিয়ে আসলাম।
- This is captain, looks like we found the location. Now, regroup with me. over
বলে আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম বাকিদের জন্য। বের হওয়ার আগে বলেছিলাম গাড়ি অন্যখানে রেখে আসতে, এপর্যন্ত গাড়ি আনলে ওরা টের পেয়ে যাবে আমাদের অবস্থান। একটুপর বাকিরা এল। আমি এক এক করে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছি।
- F5 & N1, weapons ready?
- Almost sir...
"বাড়িটা ভাল ভাবে খেয়াল করুন সবাই, আনুমানিক একটা যৌথ পরিবার থাকার মত, রুম ৭টা হতে পারে। বাড়ির দুই পাশে একটা দুরত্ব নিয়ে দুইটা বট গাছ আছে। আশাকরি আপনারা দুইজন আমাদেরকে ভিতরের পরিস্থিতি জানাবেন। Barrett, আপনি থাকবেন আমার সাথে। আমি তিনটা মাইক্রো মনিটরের কথা বলেছিলাম না? এবার এটার ব্যবহারের সময় এসেছে। ড্রোন ক্যামেরার সাথে মনিটর গুলো কানেক্ট করুন, এবার দুটো আপনাদের কাছে এবং একটা আমাদের দুইজনের কাছে থাকবে। আশা করা যায় রেঞ্জের মধ্যে আমরা ভিজুয়াল পেয়ে যাবো। এই মনিটরের মাধ্যমে আমরা এটা কন্ট্রোল করতে পারবো এবং খেয়াল রাখবেন একসাথে যেন কন্ট্রোল না হয় কারণ ড্রোন ক্যামেরা একটাই। So squad, get your positions, we going to smash him..."
- Yeahh, Let's show him how deadly we are. F5 বললো
একটুপর বললাম, "Everyone in position?"
"Yes Sir.. We are connected."
- ঠিক আছে, F5, what's the status there?
- Negative sir, no one is there.
- This is N1, got an activity on the road, vehicle approaching towards you captain.
- Copy that N1
একটু পর গাড়ির হেডলাইট দেখতে পেলাম আমরা। আমি ক্যালিবারের শরীরে হাত বুলিয়ে বারবার তাকে শান্ত করছি কারণ হঠাৎ যদি ঘেউ ঘেউ করে তবে অন্য কিছু হয়ে যাবে।
- This is F5, I have seen two man getting out from the car. over
- Keep me updated F5
- This is N1, found a lot of hostages in the 2nd floor. over
- Capt this N1 again, I think they have some guns and they are entering.
সময় এসেছে আমাদের কাজ শুরু করার। ক্যালিবারকে নিয়ে খুব সাবধানে ভিতরে যাচ্ছি। এমন সময় একটা গুলির আওয়াজ!
"স্যার, সে কি কাউকে গুলি করলো?" সাগর বললেন।
আমি ক্যামেরাটা দুই তলায় নিয়ে গেলাম। জানালার কাছে নিয়ে দেখি লোকটা কয়েকটা বাচ্চাকে ভয় দিচ্ছে!
- F5 এবং N1, আমরা ভিতরে যাচ্ছি।
- Good luck sir
- Barrett, throw a flashbang
- Be advise, hostilities are at 12'o clock
- copy that N1, do it Barrett..
Barrett ফ্লাশব্যাং নিক্ষেপ করার কিছুক্ষণ পরই ছেলে মেয়েদের চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পেলাম। কিডন্যাপার কিছুক্ষণ চোখে ধাঁধা দেখবে। আমি ঢুকেই সোজা কিডন্যাপারের দিকে গেলাম। হালকা দেখাতেই আন্দাজ করে নিয়েছি এই ব্যক্তি কিডন্যাপার হবে। Barrett আরেকজনকে মাটিয়ে শুইয়ে রেখেছে আর আমি কিডন্যাপারকে!
- তাহলে মনে হয় খেলা শেষ?
কিডন্যাপারকে বললাম।
কিডন্যাপার হাসতে লাগলো! বললো, "এত তাড়াতাড়ি?"
আমি ওর কথাটা বুঝলাম না!
"N1, cover here" বলে জহিরকে ডাকলাম। সে আসার পর বললাম ক্যালিবারকে নিয়ে গোটা বাড়ি খুঁজে দেখতে কোন বিস্ফোরক আছে কিনা।
"F5, I need you"
জহির গোটা বাড়ি ক্যালিবারকে নিয়ে খুঁজে দেখলো কিন্তু পিছুই পেল না! এরমধ্যে কাদিরও এসে গেল। একটা চেয়ারে কিডন্যাপারকে বসিয়ে শক্ত ভাবে দড়ি দিয়ে বেধে রাখলাম এবং তার সহযোগীকে হাত পা বেধে ফ্লোরে ফেলে রাখলাম।
জহির বললো, "স্যার আমরা এখনও ময়নালের দেখা পাই নি!"
আমার ভিতর টেনশন কাজ করছে।
সাগর বললো, "স্যার এই বাচ্চাগুলোকে তাদের বাসায় রেখে আসা উচিৎ।"
আমি বললাম কয়জন আছে এখানে? জহির জানালো ১৭জন!
আমি কাদিরের দিকে তাকালাম, দেখছি কাদির এক নজরে কিডন্যাপারের দিকে তাকিয়ে আছে! আমি কাদিরকে জিজ্ঞেস করলাম, "কি ব্যাপার কাদির?"
"স্যার, একে আপনি চিনতেন নাহ?"
আমি বললাম, "নাহ তো!"
কিডন্যাপার বললো, "থাক কাদির, কিছু বলতে হবে নাহ!"
আমরা বাকি তিনজন অবাক! কি হচ্ছে এখানে! আমি সাগরকে বললাম, "ছেলে মেয়েদের নিয়ে নিচে চলে যান.."
সাগর তাদের নিয়ে নিচে যেতেই আমি আমার রিভলভারটা কিডন্যাপারের কপাল বরাবর ঠেকিয়ে দিয়ে বললাম, "কে তুই? কাদিরকে চিনিস কিভাবে? নাম কি তোর?" এরপর কাদিরকে বললাম, "কাদির, এ কে? কি জানো এর সম্পর্কে?"
কিডন্যাপার হাসতে লাগলো! এই সময় ওর এই হাসি আমার সবচেয়ে বেশি মেজাজ খারাপ করছে! কাদির বললো,
"স্যার, ওর নাম তায়েজ, আমাদের চিফের ভাতিজা!!"
"এই জন্যেই ভিতরের এত খবর জানে সে?"
"আমি সবকিছুর খোজ খবর রাখি।" তয়েজ বললো
একটা টেবিলে রাখা রিমোট দেখিয়ে তয়েজ আমাকে বললো, "ক্যাপ্টেন, ওই রিমোটের অন বাটন চাপলে সব উত্তর পেয়ে যাবেন!!"
আমি রিমোট নিয়ে অন করার বাটনে চাপলাম,
"আমার ভয় লাগতেছে, অনেক অন্ধকার এখানে! ক্ষুধাও লাগছে খুব! কিছুই খাইতে দেয় নাই আমাকে... ভাইয়া!"
ময়নালের আওয়াজ! আমি বিভিন্ন বাটনে প্রেস করলাম, সব খানেই ময়নালের কথা! ক্যাসেটে বাজছে! আমি কিছুই বুঝতে পারছি না! আমি ঘুরে তয়েজের কাছে গেলাম। ওর গলা চিপে ধরে বললাম, "ময়নালের আওয়াজ কেন? ময়নাল কই? তাড়াতাড়ি বল!!"
শক্ত করে গলা চেপে ধরেছি তবুও ওর হাসি থামছে না! আমার ধৈর্য্যের বাধ ভেঙে যাচ্ছে! আমি সজোরে ওর বুক বরাবর এক লাথি মারলাম। এতে সে চেয়ারসহ অনেকটা দুরে ছিটকে পরলো!
"কাদির চেয়ার সোজা কর!" কাদিরকে বললাম
"আজ আমি একটা ইতিহাস গড়তে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমরা সেটা হতে দিলে না!" তয়েজ বললো!
কাদির জিজ্ঞেস করলো, "কিসের ইতিহাস?"
"এমন ইতিহাস যেন আমি মরার পরেও পৃথিবী আমাকে মনে রাখে..."
আমি বললাম, "আমার ময়নালকে ফেরত দে, কোথায় সে?"
আমি কথা বললেই সে হাসতে থাকে!
"দাড়া, তুই বলবি না? তোকে বলতে হবে, আমি আসছি।
কাদির, এসো আমার সাথে..
জহির, খেয়াল রেখ এদের।"
আমি নিচে নেমে অপহরণ হওয়া ছেলেমেয়েদের কাছে গেলাম। তাদেরকে ময়নালের ছবি দেখলাম। ওর ছবি দেখে বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে ভয় পাচ্ছে আর দুই একজন কেঁদে ফেলেছে!! আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি ছেলেমেয়ে গুলোকে অভয় দেয়ার চেষ্টা করছি। এরমধ্যে একজন ওপরের দিকে ইশারা দিল! আমি তাকে বললাম দুই তলায় আছে? ছেলেটি মাথা নাড়ালো। আমি সাথে সাথে আবার ওপর তলায় গেলাম। তয়েজের কাছে গিয়ে বললাম, "কই রাখছিস ওরে? বল, আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে ওর জন্য.." তবুও সে মুখ খুলছে না! রাগে কিছুটা দুরে গিয়ে পা ফ্লোরে জোড়ে ফেললাম আর সাথে সাথে একটা প্রতিধ্বনি শোনা গেল! জহির এবং কাদির সাথে সাথে এদিকে চলে এল। ফ্লোরের অন্যান্য অংশে আমরা হাত ঠকঠক করতে লাগলাম। শুধুমাত্র এখানের আওয়াজটাই ভিন্ন! আবারও গেলাম তয়েজের কাছে। বললাম, "কি আছে এর ভিতরে? এটার রাস্তা কোনদিকে?"
"খুঁজে দেখেন ক্যাপ্টেন, এতটা পথ খুঁজে খুঁজে আসলেন, এখানে এসে হেরে যাবেন?" ওর কথা শুনে আমার মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আবারও সজোরে বুক বরাবর লাথি দিলাম।
"কাদির, ওকে চেয়ার সহ উল্টা করে ঝুলিয়ে রাখো!" এই বলে আমি রড খুঁজতে লাগলাম বা এমন কিছুর তালাশ করছি যেটা এই ফ্লোরকে ভাঙতে পারে। খুঁজতে খুঁজতে একটা বড় কাঠের টুকরো পেলাম। জহিরকে বললাম সাহায্য করতে। আমরা দুইজন একত্রে বারি মারতে লাগলাম কিন্তু এটা ভাঙছে না!! শেষমেশ একসাথে একটা তীব্র আঘাতের পর দেখা গেল এটা একটা লোহার আস্তরণ! আমি এরপরও আঘাত করতে থাকলাম। একসময় একটা অংশ আলগা হতে লাগলো! তার কিছুক্ষণপরই আমি আর জহির ফ্লোর ভেঙে নিচে পরে গেলাম! পাশে তাকিয়ে দেখি একটা সিলিন্ডার, তারমানে অল্পের জন্য বেঁচে গেছি। এদিকে উঠতে একটু কষ্টই হচ্ছে। জহিরকে জিজ্ঞেস করলাম ঠিক আছো কিনা? উত্তরে বললো, "স্যার, তাড়াতাড়ি ওপরে চলুন, আপনার এখানে থাকা উচিৎ না!"
আমি বললাম, "নাহ জহির, ময়নালকে ছাড়া আমি যাচ্ছি নাহ!" এই বলে উঠলাম। কিছুটা অন্ধকার এবং হালকা আলো রয়েছে এখানে। আমি নাইট ভিশন গগল পরে নিলাম। একটু আগাতেই খুব ভাল রকমের হোচট খেলাম! হোচট খাওয়ায় জহির আমাকে বারবার বলা শুরু করছে ওপরে যাওয়ার জন্য! আমি ওর কথাটা একটু ভাবলাম। এরপর যেখানে হোচট খেলাম সেখানে তাকালাম। যা দেখলাম তাতে আমার পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে! এযে ময়নাল! আমি ওকে দেখেই মাটিতে বসে পরলাম! এরপর তাড়াতাড়ি ওরকাছে গেলাম। এত সুন্দর চেহারায় আজ শুধু কাটা ছেঁড়ার দাগ! আমি ওর গালে হাত দিলাম। একটু একটু করে জাগানোর চেষ্টা করছি কিন্তু ময়নাল উঠছে নাহ! জহির এসে বললো, "স্যার, ময়নাল আর উঠবে নাহ! তয়েজ খুব হিংস্রভাবে খুন করেছে ময়নালকে তিন চারদিন আগে!"
"আরে কি বল এসব? কালই তো ওর সাথে কথা বললাম আমি!"
"স্যার সেটা রেকর্ডিং ছিল!!"
আমি ময়নালকে ধরে হাউমাউ দিয়ে কেঁদে উঠলাম! ভিতরে জমে থাকা আশা আজ চিৎকারের কান্না হয়ে বেরিয়ে আসছে! ওর গলা এবং ঘাড়ে স্পষ্ট লাল দাগ আছে যেটা সম্ভবত কোনো দড়ির হবে। আমি এখনও জড়িয়ে ধরে আছি ময়নালকে।
জহির বললো, "স্যার, ময়নালের গলা দেখে মনে হচ্ছে ওই সিলিন্ডারটা রশি দিয়ে বেধে ওর গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে! বাচ্চাটা যখন ভার সহ্য করতে পারে নি তখন নিচে পরে গেছে!"
আমার শরীরে রাগ ফুটন্ত এবং টগবগানো রক্তের মত হয়ে যাচ্ছে! কান্না থামিয়ে জহিরকে বললাম বের হওয়ার রাস্তা খুঁজতে। আমি ময়নালকে ঘাড়ে তুলে নিয়ে উপরে উঠলাম। কাদির আমার কান্না শুনেই বুঝে গেছে কিছু একটা হয়েছে! সাগরও তখন নিচতলা থেকে এসে পরেছে। ময়নালের লাশটা দেখে সাগর এবং কাদির একদমই নিস্তব্ধ হয়ে গেছে! ময়নালকে নিচে শুইয়ে রেখে তয়েজের কাছে গেলাম। আরেকটা কাঠ নিয়ে ওর উল্টা হয়ে থাকা চেহারার সামনে দারালাম। চোখটা মুছে বললাম,
"ময়নাল কি দোষ করছিল যে তুই ওকে মেরে ফেললি?" জহিরকে বললাম, "ওর সহযোগীর মুখ খুলে দে.." আমি ওর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, " তোর নাম কি?"
"নিজাম"
"তুই বল ময়নাল কি দোষ করেছিল?"
"স্যার আল্লাহর কসম আমি এসব কিছুই জানতাম না, ও আমাকে বলছিল একটা কাজে হেল্প করার জন্য, আমি জিজ্ঞেস করছি কি কাজ কিন্তু ও বলে নাই! এখানে এসে বললো সেই ১৭জন বাচ্চা গুলাকে ও মেরে ফেলবে সেটা ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছরিয়ে দেয়ার জন্য! আমি মানা করছি, আমি বের হয়ে যেতাম কিন্তু সে আমাকে বের হতে দেয় নি! আমি পালিয়ে যাবো এমন সময় আপনারা এসে পরলেন.."
নিজাম আবারও বললো, "স্যার সে চেয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে তার নাম যেন সবাই মনে রাখে! এজন্য সে সবাইকে একসাথে মারতে চেয়েছিল!"
আমি আবার তয়েজ এর কাছে গেলাম।
"বল, ওকে মারার কারণ কি?"
"ওকে বাঁচিয়ে রাখলে আমার মিশন কমপ্লিট হত না, আর আমি জানি ময়নাল তোর কাছে খুব প্রিয় জিনিস! আর প্রিয় জিনিস নিয়ে খেলতে আমার খুব ভাল লাগে!"
ওর কথা শুনে আমি উঠে দারালাম। কাঠ নিয়ে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে তয়েজের চোয়াল বরাবর মারলাম! সাথে সাথে কাঠের কিছুটা অংশ ভেঙে গেল। এরপর আরেকটা সজোরে আঘাত করলাম মাথা বরাবর! কয়েক সেকেন্ড পরই অঝর ধারায় রক্ত পরতে লাগলো! সাগর, কাদির এবং জহির শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল! আমি তয়েজের চুল ধরে বললাম, "পৃথিবী তোর নাম মনে রাখবে, তাই না? আমি থাকতে পৃথিবী তো দুরের কথা, তো পরিবারও তোকে খুঁজে পাবে নাহ...!" এরপরও তয়েজের মুখে হালকা তাচ্ছিল্যের হাসি!
"I have never seen this kind of bastard in my entire life! স্যার একে সবচেয়ে কঠিনতম শাস্তি দিন..!" কাদির এটা বলার সাথে সাথে দৌড়ে এসে কাঠ নিয়ে লাগামহীন ভাবে মারতে লাগলো! একটুপর সাগর এবং জহির এসে পা থেকে কোমড় পর্যন্ত বেধরক মার দিতে লাগলো! আমি বললাম, "থামো সবাই! ওকে আমি ওর স্টাইলে দোযখ দেখিয়ে দিব। জহির, সিলিন্ডার আর বেশি করে দরি নিয়ে আসো নিচ থেকে।"
জহির সিলিন্ডার এবং দরি নিয়ে আসলো। আমি দরি দিয়ে ওর হাত পা বাধা শুরু করলাম।
"প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও.... এমনটা আমি জীবনেও করবো নাহ!!" এই প্রথম তয়েজ এটা বললো! কিন্তু এসবে লাভ হবে না, আমি আজ খুব হিংস্র, এতটা হিংস্র যে বনের বাঘ, সিংহ, নেকড়েবাঘ আমাকে দেখলে দৌড়ে জঙ্গল ছেড়ে পালিয়ে যাবে! আমি তয়েজের প্রত্যেকটা অনুরোধে ওর শরীরের বাধনগুলো আরও শক্ত করে বেধে দিলাম!
কাদিরকে বললাম, "কাদির, ঠিক সেখানেই ওকে ঝুলিয়ে দাও যেখানে ময়নালকে ঝুলানো হয়েছে তবে উল্টা করে!"
আমি সিলিন্ডার সাথে দরি বেধে দিলাম এবং গলায় আটকে থাকবে এমন মাপ নিয়ে দরিতে গিট বেধে দিলাম। দরির একপ্রান্ত তয়েজের গলায় পেঁচিয়ে দিলাম! কাদির ওকে লিভার সাথে উল্টো করে ঝুলিয়ে দিল। আমি সিলিন্ডার কাধে তুলে নিলাম। সাগরকে বললাম, "নিজামকে নিয়ে আসুন।" নিজাম আসতে চাচ্ছিল না, ভয়ে সে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলেছে! সিলিন্ডার কাধে নিয়ে তয়েজের সামনে দারিয়ে আছি। "এটা দিয়েই তুই ময়নালকে খুন করছিস না, এটাই তোকে আজ তোর গলায় উপহার হিসাবে দিব..."
এই বলে আমি চিৎকার দিয়ে বললাম, "Caliber, hunt him...!"
ক্যালিবার দৌড়ে এসে লাফ দিয়ে তয়েজের শরীরের বিভিন্ন অংশে কামড়ানো শুরু করলো এবং সেই সাথে আমিও সিলিন্ডারটা নিচে ফেলে দিলাম! ক্যালিবারের একেকটা কামড়ে তয়েজ চিৎকার করছিল। হঠাৎ সেই চিৎকার থেমে গেল এবং ক্যালিবার সহ তয়েজ নিচে পরে গেল! আমি জানি তয়েজের মৃত্যু নিশ্চিত এবং ক্যালিবারের কোন ক্ষতি হয় নি। এসব দেখে নিজাম জ্ঞান হারিয়ে ফেলে! একটুপর ক্যালিবার আমার পাশে এসে দারালো! ওর মুখে রক্ত লেগে আছে দেখলাম। ময়নালের নিথর শরীরটা আমার সামনে পরে আছে! আমি ওকে কোলে নিয়ে ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম। কিছুক্ষণপর কান্না থামিয়ে রাখতে পারলাম নাহ! চিৎকার করে শুধু ময়নাল বলে উঠলাম! আর কিছু বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে। বাকিরা সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে! কি করবো এই পৃথিবীতে আর, প্রথমে মা, তারপর বাবা আর এখন আমার আদরের ভাই ময়নাল আমাকে ছেড়ে চলে গেল! আমিও মৃত্যুর অপেক্ষায় আছি। ভাবছি, এত লোক মরে পৃথিবীতে অথচ আমি বেচে থাকি কেন?
[ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন এবং কারও সাথে মিলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত]
লেখা: Dorponer Protibimbo
২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ১২:০১
দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: ১ম পর্ব পড়ে নিন
২| ২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ১২:০১
অর্থনীতিবিদ বলেছেন: অসাধারণ লেগেছে গল্পটা। সবচেয়ে ভালো লেগেছে তয়েজের শাস্তি পাওয়াটা। তবে আরেকটু যন্ত্রনা দিয়ে মারলে ভালো হতো। বেশি তাড়াতাড়ি মরে গেলো শয়তানটা।
২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ৮:৫৫
দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই আপনার মতামতের জন্য, দোয়া করবেন যাতে আরও ভাল করে সাজিয়ে গুছিয়ে লিখতে পারি।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে মে, ২০১৮ রাত ১১:৫৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনি লেখাটা পড়ুন, আপনি যদি পুরোটা পড়তে পারেন, আমার হয়ে একটা কমেন্ট করবেন, "ভালো"।