নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রেমিকার চিরশত্রু
৫ম পর্ব
২৭শে আগস্ট, ২০১২
ভোর ৫টা.
দ্য ফাইনাল ডে,
নদীর কাছাকাছি একটা ছোট আস্তানা বানিয়েছে নাজিম। তার পাশেই ক্যাপ্টেন রাফিকে রেখেছেন। তিনদিন হল শুধু পানির উপর আছে রাফি! টর্চারে কপালের একপাশ দিয়ে রক্ত ঝড়া শুরু করেছিল যেটা এখন জমাট বেধেছে, শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাঁটাছেড়ার দাগ আছে তার। নড়াচড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন স্থানে জ্বলে যাওয়ার মত ব্যথা হচ্ছে। নাজিম তার এই অবস্থা দেখে এখনও খুশি হয় নি! নাজিম চান এরচেয়ে বড় শাস্তি কিন্তু মৃত্যু দেয়া যাবে না। রাফিকে বেঁচে থাকতে হবে আরও অনেক কিছু সহ্য করার জন্য।।
উঁচু উঁচু পাহাড় বেয়ে উপরে উঠার পর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের ভয়ানক রুপকে হার মানিয়ে বা গভীর সমুদ্রের তলদেশ থেকে নিশ্বাস যায় যায় অবস্থার মাঝে পানির উপরে এসে মন খুলে শ্বাস নিয়ে প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে হাসি এবং ভাবতে থাকি এই দুর্লভ জীবন যখন ফিরে পেয়েছি তখন আর কোনো ভয় নেই! সৌন্দর্য্যের মাঝে এত বড় নিষ্ঠুরতা আছে সেটা তখনই বোঝা যায়।।
একসাথে এতদুর পর্যন্ত এসেছিলাম আমরা, কতবার মৃত্যুর মুখে গিয়েও ফিরে এসছি! একেকটা মিশন মানে প্রত্যেক মুহূর্তে নিজের নিরাপত্তার কথা না ভেবে হস্টাইল এরিয়া ক্লিয়ার করা। সঙ্গীসাথী যারা থাকে তারা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের জন্য মনের বল, সাহস এবং আত্মবিশ্বাস এর নাম। বিশ্বাস ঘাতকতার কোন স্থান এদের মনে হয় না। প্রতিটা কমান্ডের মাঝে যাদের বিশ্বাস থাকে তারাই জয়ী হয় সবসময়। অবিশ্বাসীর খাতায় নাম লিখে যুগে যুগে অনেকেই পার পেয়ে গেছে কিন্তু এমন একসময় এসে তারা বেধে যায়, ব্রেক পরে যায় প্ল্যানে, ভেস্তে যায় সবকিছু, জয়ী হয় সত্য!
- The is magnet two four, do you copy?
নাজিমের টিমের বার্তা
- Yes copy..
- Be advised, couple of tango are coming towards us..
- Roger..
নাজিম ক্যাপ্টেন রাফির দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,
- ক্যাপ্টেন রাফি তোমার টিম এসে গেছে আফসোস তারা তোমার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানে না!! জানলে এতদুর পর্যন্ত আসতো না। থাকো দেখা করে আসি তাদের সাথে।।
- Magnet two four, this is commander, leave them..
- Roger.
২৭শে আগস্ট, ২০১২
ভোর ৪.৪৫ মিনিট
পদ্মার চর,পাকশী
ঈশ্বরদী, পাবনা
- হুম, আশেপাশে শুধু গাছপালা আর গাছপালা!
- তাই তো দেখছি স্যার, সুন্দরবনের চেয়ে কোনো অংশে কম না, পিটার বললো।
আমি সিদ্ধান্ত নিলাম বন জঙ্গলের মধ্যে না ঢুকে নদীর পাশ দিয়ে গাছপালার আড়ালে আড়ালে আগাতে থাকি।
- পিটার তুমি কি দেখতে পেয়েছো?
- জ্বি স্যার, তিনচারটা মশাল।
- তাদের ফুটপ্রিন্ট ফলো করে আমরা আস্তে আস্তে আগাই...
- রজার..
ধিরে ধিরে সূর্যের আলো ফুটতে শুরু করেছে। আলোকিত হচ্ছে আকাশসীমা। দুই তিনটা পাখির ডাক শুনা যাচ্ছে। কিছুটা ভিতরে ঢুকতেই ছোট একটা ঝোপঝাড়ে নড়াচড়া লক্ষ্য করলাম। এদিকে জংলী জন্তু জানোয়ার থাকার কথা না।
- পিটার, কভার মি..
আমি সামনে আগালাম। ঝোপের লতাপাতা সরাতেই দেখি এলেক্স! হাত পা মুখ বাঁধা!
- Peter, come here..
আমি এলেক্সের বাঁধন গুলো খুলে দিলাম,
- তুমি ঠিক আছো এলেক্স?
- ক্যাপ্টেন রাফি কি করেছে...
- আমি জানি এলেক্স, যথা সময়ে সবাই জেনে যাবে। এখন সামনের দিকে চল।
- স্যার, মামুন আর গৌতম আশেপাশে কোথাও পরে আছে, আশাকরি তাদের কোনো ক্ষতি হয় নি। তাদেরও খুঁজতে হবে স্যার।
- ঠিক... পিটার বললো।
আমি আমার রিভলভারটা এলেক্সকে দিলাম। খুঁজতে শুরু করলাম মামুন এবং গৌতমকে। ঝোপঝাড় কোনকিছুই বাদ রাখছি না।
- স্যার, মামুনকে পেয়ে গেছি। এলেক্স বললো!
আমরা আশপাশটা ভাল করে দেখে নিলাম কেউ আছে কিনা এবং কাউকে দেখলাম না সেখানে।
- He is alive sir just unconscious.. এলেক্স বললো।
পিটার কিছুটা পানি মামুনের চোখে মুখে ছিটালো। দুই তিনবার পানি ছিটানোর পর কাশি দিয়ে উঠলো! মামুন বললো,
- লেফটেনেন্ট, অনেকদিন পর একটা আশার আলো দেখতে পেলাম।
- চোখ বন্ধ থাকলে দিন রাত সমান, সবকিছুই অন্ধকার।
আবারও কাশতে লাগলো মামুন! আমি পিটারকে বললাম মামুনের পাশে থাকতে। এরপর এলেক্স এবং আমি আগাতে শুরু করলাম। কিছুক্ষণ হাটার পর ঈশ্বরদী মহাসড়ক শুরু হল। যানবাহনের চলাচল স্বাভাবিক। এখন মোটামুটি সকাল হয়েছে। রাস্তা পার করে আবারও চলতে শুরু করলাম। এমন সময় আমরা একটা গুলির আওয়াজ শুনলাম!
- Get down, find a cover...
আমরা দুইজন লতাপাতার সাথে মিশে লুকিয়ে আছি।
- কারা হতে পারে স্যার? নাজিমের টিম না তো?
- জানি না, কাউকে দেখছি না আশেপাশে..
আমরা চারপাশে নজর রাখা শুরু করলাম। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলাম।
- follow me
আবারও সামনে আগাতে লাগলাম। কিছুদুর যেতেই আবারও কয়েকজন,
- Stop, স্থানীয় ডাকাতের দল মনে হচ্ছে
- ভালই ডাকাতি করেছে মনে হচ্ছে, তাই না স্যার?
- সেটাই তো.. বাদ দাও, ধীরে ধীরে যাই আমরা..
এই বলে আমরা চলা শুরু। হঠাৎ আবারও গোলাগুলি শুরু! এবার মুশুলধারে গুলিবর্ষণ শুরু হল! আমি আর এলেক্স গাছের আড়ালে লুকিয়ে গেলাম। তুমুল গুলিবিনিময় হচ্ছে এখানে! একটুপর বুঝতে পারলাম দুই ডাকাত দলের মাঝে ভাগাভাগিতে গণ্ডগোল লেগে গেছে! আমি বললাম,
- Okay mate, time to smash them,
এদের চক্করে পরে আমরা শহীদ হতে চাই না..
- আমি রেডি স্যার।
- থ্রি, টু, ওয়ান... ফায়ার!!
আমি আর এলেক্স গুলি চালাতে লাগলাম। আমি নিশ্চিত তাদের মনে ভয় ঢুকে গেছে তৃতীয় পক্ষকে নিয়ে! তিন মিনিটের ফায়ারিং এবং তাতে দুই দল ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে। তিন চারজন নিহত হয়েছে, বাকিরা কোনরকম জান হাতে নিয়ে পালিয়েছে।
- মনে হচ্ছে এলাকা শান্ত হয়ে গেছে, ওকে চল যাওয়া যাক।
- Peter, what's your status? Did you find Gautam?
- Negative Sir but still searching..
আবার চলতে শুরু করলাম। কিছুদুর যেতেই দুইজন লোককে দেখছি আমাদের দিকেই আসছে! ভাল করে খেয়াল করে দেখি এটা নাজিম এবং ক্যাপ্টেন রাফি!!!
- hold your fire, hold your fire, it's Nazim with Captain Rafi!!
ওদিক থেকে নাজিমও চিৎকার দিয়ে বললো, Put Down your weapon boys otherwise I'll shoot him!
ক্যাপ্টেন রাফি বললেন, "বাবুল, আমার চিন্তা করার দরকার নেই, Shoot him! Now!!"
- Drop your weapon Sergeant... ক্যাপ্টেন রাফির কপালে জোরে রিভলভার চেপে ধরে নাজিম বললো।
- Ok. Ok. রেখে দিচ্ছি কিন্তু উনাকে গুলি কর না। এলেক্স অস্ত্র ছেড়ে দাও, আমি বললাম।
- Nooooo.... ক্যাপ্টেন রাফির চিৎকার!
- Good boy. এখন পিছনে হাটতে থাকো। Now..
আমরা আস্তে আস্তে পিছিয়ে যেতে লাগলাম। বুঝতে পারছি নাজিম আমাদের অস্ত্র পর্যন্ত পৌঁছে কিছু একটা করবে! কিন্তু কি যে করবে সেটাই বুঝতে পারছি না। এক পা করে পিছিয়ে যাচ্ছি আর কৌশলে আমার কোমড়ের পকেটে রাখা চাকুর দিকে হাত বারাচ্ছি। একটাই সুযোগ পাওয়া যাবে এরই মধ্যে চাকু বের করে নাজিমের শরীর বরাবর নিক্ষেপ করতে হবে। আমার এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি মেজাজ খারাপ হচ্ছে পিটারের উপর। এখনও কোনো খবর নেই, কোনো যোগাযোগ করছে না, আমিও কিছু বলতে পারছি না। নাজিম আমাদের অস্ত্র নিতে ঝুঁকেছে! এই সুযোগ, এখনই চাকুটা মারতে হবে। আমি তাড়াতাড়ি চাকু বের করে ওর দিকে মারলাম। সাথে সাথে ডানহাতে লাগলো! এলেক্স এবং আমি গাছের আড়ালে চলে গেলাম। তবুও নাজিম ক্যাপ্টেনকে ছাড়ে নি! হাত থেকে চাকু বের করে ক্যাপ্টেন রাফির কাঁধে বসিয়ে দিল। আমার রিভলভারটা ওর কাছেই ছিল, সেটা তুলে আমাদের দিকে তিনচারটা গুলি করলো! এরমধ্যে একটা বুলেট আমার হাটুতে এসে বিঁধল! প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছে সাথে রক্তক্ষরণ! নাজিম ক্যাপ্টেনকে নিয়ে অন্য গাছের আড়ালে চলে গেল। "তোমাদের কাউকে মারার শখ আমার নেই। Better leave my way" এই বলে তিনি রাফিকে নিয়ে বের হলেন।
একটু একটু করে আমাদের দিকে আগাচ্ছেন তিনি। এমন সময় গৌতম এসে পিছন থেকে নাজিমের মাথায় আঘাত করলো এবং সে মাটিতে লুটিয়ে পরলো!
- আঘাতটা ছোট কিন্তু তিনি সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারালেন! গৌতম বললো।
- বড় আঘাত মৃত্যুর দিকে ঢলে দেয় গৌতম, জ্ঞান হারানোর তার আগের ধাপ, আমি বললাম।
কিছুক্ষণ সবাই চুপচাপ বসে রইলাম।
- You are bleeding sir!! গৌতম বললো।
- It's okay, Peter, where the hell are you?
- Almost there sir..
- Come first..
- Roger
একটুপর মামুনকে কাধে করে নিয়ে আসলো পিটার! "মামুন কি আহত হয়েছে?" গৌতম বললো। পিটার মাথা নাড়ালো। কপালে কাটা দাগ! অনেকটা রক্ত ঝরেছে দেখা যাচ্ছে।
- স্যার যেহেতু আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ফার্স্ট এইড নেই, নাজিমের আস্তানা পাশেই এবং ফার্স্ট এইড বক্সও সেখানে আছে। গাড়িতে ফিরতে অনেক হাটতে হবে, অনুমতি দিলে আমি নিয়ে আসবো..
আমার এবং ক্যাপ্টেন রাফির দিকে তাকিয়ে গৌতম বললো।
আমি ক্যাপ্টেন রাফির দিকে তাকালাম। এতক্ষণ পর্যন্ত উনি একটা কথাও বলে নি!
- ওকে যাও.. ক্যাপ্টেন রাফি বললো।
১১ই অক্টোবর, ২০০১
বিকাল ৪.৩৭ মিনিট,
সুইজারল্যান্ড...
"Shhhh!!! Hold here..." ক্যাপ্টেন হারিস বললেন। আস্তে আস্তে দরজাটা খুললো, ভিতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। ভিতরে কোনো জানালা নেই বুঝাই যাচ্ছে।
- Switch to night vision..
এরপর তারা ভিতরে ঢুকলেন। নিঃশব্দে হাটছে সবাই। আরেকটা দরজা খুলতেই নাকে একটা গন্ধ এল সবার,
- ওয়াক, কুকুর মরা গন্ধ স্যার!! ক্যাপ্টেন নাজিম বললেন।
- কতদিন হল যে এদের মেরে এভাবে ফেলে রেখেছে কেবল তারাই জানে... ক্যাপ্টেন হারিস বললেন।
তারা রুমগুলো ভাল করে খোজা শুরু করলেন। এমন সময় অন্য দরজা দিয়ে কয়েকটা টর্চের আলো দেখা গেল!
- মনে হচ্ছে কেউ ভিতরে ঢুকেছে! ক্যাপ্টেন রুহুল
- Those are not friendly. Find a cover & weapons low.
সবাই একটা রুমের ফেলানো টেবিলের নিচে লুকালো।
- তারা আসছে, শুধুমাত্র আকস্মিক আক্রমণের ক্ষেত্রে গুলি চালাবে।
ক্যাপ্টেন হারিসের কমান্ড। একটুপর সাত আটজনের একটি দল তাদের রুমের পাশ দিয়ে চলে গেল!
রুমগুলোর মধ্যে আলো বাতাস না থাকলেও মশা মাছি অবশ্যই আছে।
"Okay, let's move. No quick movement & do not do anything stupid... ক্যাপ্টেন হারিসের আদেশে সবাই আগাতে শুরু করলেন। হঠাৎ রাফির পায়ের সাথে পরিত্যক্ত টিনের কৌটা লেগে টুং টান শব্দ হয়! ঠিক তার কিছুক্ষণ পরই সেই দলটি আবারও ঢুকে তাদের তাদের খুঁজতে শুরু করে এবং ফায়ারিং শুরু করে!
ক্যাপ্টেন হারিস বললেন, "We have been compromised!! Weapons free."
সকলেই গুলি চালানো শুরু করে দিল!!হারিস নাজিমকে ফ্লাশব্যঙ্ক ছুড়তে বললেন। এরপর তারা সামনাসামনি গুলি করে মেরে ফেলে।।
- Close call Rafi!! Watch your steps. Okay, let's move
হারিস রাফিকে সাবধান করে দিলেন।
রাফি চুপচাপ তার অপরাধ মেনে নিয়ে আরও সতর্ক হলেন।
আন্ডারগ্রাউন্ড দিয়ে বের হয়ে হারিস এবং তার টিম একটা পাহাড়ের দেখা পেল। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নামছে এবং ঠাণ্ডা পরাও শুরু হয়েছে।
পরেরদিন,
দুপুর ১টা...
"স্যার, আমাদের একটা ব্যাকআপ প্ল্যান বা প্ল্যান বি করা দরকার যাতে আমরা দল থেকে ছুটে গেলেও একত্রিত হতে পারি।" ক্যাপ্টেন নাজিম বললেন। জবাবে হারিস বললেন,
"এরিয়া সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা নিয়ে নাও নাজিম, প্ল্যান যাই হোক, একত্রিত হতে পারবো।"
এরপর কিছুক্ষণ সবাই আরেকটু বিশ্রাম করে নিল। হারিস রাফিকে অস্ত্র দিয়ে বললো,
- Take it Raf, তোমার কাজে লাগবে এটা।
- সুন্দর, সঠিক সময়েই ব্যবহার হবে স্যার।
- Okay, boys, Let's move..
"সবকিছু ঠিক ছিল, সঠিকটাই বলেছে রাফি কিন্তু আসল যে ঘটনাটা বলে নি সেটা অন্য কিছু ছিল। যেটা ভাবলেই অবাক লাগে এমন কি হয়েছিল যার জন্য সে এমন করলো!!" নাজিম বললো।
ক্যাপ্টেন রাফি পাশেই বসে আছেন। তিনি চুপচাপ আছেন, কিছুই বলছেন না। আমি জিজ্ঞেস করলাম কারণটা কি?
"চপারের একপাশে বসেছিলাম আমি এবং ক্যাপ্টেন হারিস এবং অপর পাশে ছিল ক্যাপ্টেন রুহুল এবং রাফি। নির্দিষ্ট পয়েন্টে আমাদের নামিয়ে দিল পাইলট। আমরাও আগাতে থাকলাম। হারিস আমাদের সাবধান করে দিলেন যেন কোনো প্রকার বোকামির কাজ না করি। সেটা ছিল সাইলেন্ট মিশন। কেউ যেন আমাদের কারও উপস্থিতি টের না পায়। আমি দেখতে পাচ্ছি সামনে একটি ট্যাঙ্ক এবং সাথে একজন সেনা আছে। হারিস বললেন তাকে না মারার জন্য। আমরা অন্য দিক দিয়ে ঘুরে যাবো ঠিক তখনই রাফি ট্যাঙ্কের পাশের সেনাকে গুলি করে!! সে গুলি করলেও ঠিকমত লাগে না! দ্বিতীয় বারের গুলিতে সেনা বধ হলেও ট্যাঙ্ক আমাদের লোকেশন পেয়ে যায়!! আমাদের দিকে অনবরত ফায়ারিং করতে থাকে তারা এবং সকল গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যায়! আকাশে উড়ে বেড়ানো বোমারু বিমান থেকে কমান্ড এল সেখান থেকে যত দ্রুত পারা যায় সরে যাওয়ার জন্য! আমরা প্রাণপণে দৌড়াতে শুরু করি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আকাশ থেকে মিসাইল পরা শুরু হল। শত্রুপক্ষের ট্যাঙ্ক/বিএমপি/বিটিআর যা ছিল সবই ধ্বংস করে দিল বোমারু বিমান! কিন্তু স্যাম লঞ্চারের মিসাইলে আমাদের বিমান বিধ্বস্ত হয়ে যায়!! পরে ফাইটার জেটের সাহায্য চায় হারিস কিন্তু কিছুটা সময় লাগবে বলে জানায় ক্যাপ্টেন স্ট্যান। প্রচুর গুলিবর্ষণ চলছে তখন। এত এত সেনা এরা কিভাবে জোগাড় করেছে কে জানে! রাফির ইচ্ছাকৃত ভুলের কারণে হারিস অনেক কথা শুনিয়ে দেয়। রাফি চুপচাপ থেকে যায়। গোলাগুলির এক পর্যায়ে চিফ স্ট্যান আমাদের জানালেন আমাদের জন্য একটা চপারের ব্যবস্থা করেছেন যেটা মিনিট দশের মধ্যে আসবে। আমরা সেদিকে ছুটতে লাগলাম। কিন্তু বাধা পরলো লঞ্চার! হারিস বললেন তাকে কভার করার জন্য। রাফিকে পাঠালেন না তিনি, নিজে গিয়ে স্যাম লঞ্চারের পিছনে C4 মাইন সেট করে দিলেন। কিছুটা দুরত্বে এসে ব্লাস্ট করলেন। এতে সকলের জন্য চপার আসায় সুবিধা হল। এরপর আমাদের চপার এল। হারিস রাফিকে চপারে উঠে মিনিগান চালাতে বললেন যাতে আমাদের সুবিধা হয়। আমরা রাফিকে কভার করা শুরু করলাম। রাফি মিনিগান চালানো শুরু করলে আমরা আগাতে থাকি চপারের দিকে। এমন সময় একটা বোমা ক্যাপ্টেন রুহুলের দিকে আসলো! বোমাটা বিস্ফোরণ হতে বেশি দেরি লাগলো না! সাথে সাথেই ছিটকে গেলেন ক্যাপ্টেন রুহুল!! কাগজের মত ছিড়ে গেল রুহুলের ডান পা! আমি রুহুলকে কাঁধে নেয়ার জন্য এগিয়ে গেলাম কিন্তু আরেকটা বোমা এসে রুহুলের পাশেই বিস্ফারিত হল! আমি দেখতে লাগলাম রুহুলকে। তারপরও রুহুল তার হাতের ঈশারায় বললেন, "আমি কভার করছি, আপনারা যান!" আমি কোনভাবেই তাকে ছাড়া যেতে রাজি না। কিন্তু পরিস্থিতি যেতে বাধ্য করেছে। পাইলট বললেন, "এখানে বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব না, দৌড়ে চপারে উঠুন!!!" আমরা দৌড়ে চপারের ল্যাডারে উঠলাম। আমরা উঠছিলাম হঠাৎ রাফি আমাদের দিকে তাকিয়ে বললো, "সময় এসেছে স্যার আপনার অস্ত্রটার সঠিক ব্যবহার করার!" আমরা বুঝতে পারলাম না সে কি বুঝাতে চেয়েছে। তারপরই হারিসের দেয়া রিভলভারটা নিয়ে ল্যাডারের দুই প্রান্তে দুইটা গুলি করে! সাথে সাথে আমরা নিচে পরে গেলাম। রাফি চিৎকার দিয়ে বললো "Go to hell my seniors..."
এলেক্স কৌতুহল নিয়ে বলল, "তারপর কি হল??? হারিস কি জীবিত ছিল তখনও??"
নাজিম বললো, "একটা ডালের আঘাতে চোখটা বন্ধ হয়ে যায় আমার। মনে নাই কি হয়েছিল এর পরে। চোখ খোলার পর আশেপাশে হারিসকে পাই নি! বাম হাতটা প্রচণ্ড ব্যাথা করছিল, একটু সামনে যেতেই দেখি হারিস মাটিতে পরে আছে! মাথার একপাশ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পরছে! ভ্রুর উপরে আর গালে কেটে ছিঁড়ে গেছে!! আমি যখন তার কাছে যাই তখনও তার শ্বাস প্রশ্বাস চলছিল! সে আমার কাঁধে হাত রেখে বললো, "It wasn't close call mate!! He betrayed us and destroyed my trusts!!"
আমি তার অবস্থা দেখে কেঁদে ফেলছি! এটা বলার পরই সে মারা যান। আমার জানা নেই কতক্ষণ অজ্ঞান ছিলাম, অজ্ঞান না থাকলে কিছু একটা করে হয়তো তাকে বাঁচাতে পারতাম।
[পরের পর্বে সমাপ্তি]
লেখা: Dorponer Protibimbo
©somewhere in net ltd.