নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবতে ভালবাসি, সেই ভাবনা যদি কোনো ঘটনায় মিলে যায় তবে তাকে লিখতে ভালবাসি! সেই লেখায় যদি কেউ বিন্দুমাত্র উপকৃত হয় তবে তাতেই আমার খুশি, আমি লেখাকে ভালবাসি।

দর্পণের প্রতিবিম্ব

প্রেমিকার চিরশত্রু

দর্পণের প্রতিবিম্ব › বিস্তারিত পোস্টঃ

CLOSE CALL

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:০৩




৪র্থ পর্ব


১৮ই আগস্ট, ২০১১
সকাল ৭.২০ মিনিট,
রাজশাহী রেলস্টেশন,


আমাদের টিম নিয়ে প্লাটফর্মে দারিয়ে আছি। তবে কোন মিশনের জন্য নয়, তিনদিনের একটা ট্যুরে যাওয়ার প্ল্যান করেছিলাম আমরা। আমি, ক্যাপ্টেন রাফি, পিটার, এলেক্স, মামুন এবং গৌতম। রাজশাহীর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান গুলোতে আমরা ঘুরলাম। বেশ জমপেশ একটা ট্যুর হয়ে গেল। এরমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ গেলাম সেখানকার আমবাগান গুলো দেখতে। সবমিলিয়ে ভালই আনন্দ ফুর্তি করলাম। আজ ফেরার পালা। ব্যাগপত্র নিয়ে উঠলাম ট্রেনে উঠলাম। সিট নাম্বার খুঁজে আমরা বসে পরলাম। কিছুক্ষণ পরই ট্রেন হুইশেল বাজিয়ে রওনা হল। হেলে দুলে আস্তে আস্তে গতি বাড়তে থাকে সিল্কসিটি ট্রেনের। আমি কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে গান শুনা শুরু করলাম। আমার পাশে পিটার বসে আছে। সে ম্যাগাজিন পড়ায় ব্যস্ত! মামুন এবং গৌতম দাবা খেলায় মনোযোগী হয়ে আছে। এলেক্সের দিকে তাকাতেই দেখি হা করে ঘুমাচ্ছে!! ক্যাপ্টেন রাফির দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি একটু চিন্তিত আছেন! আমি ক্যাপ্টেন রাফিকে বললাম, "স্যার আপনাকে এটোটা চিন্তিত দেখাচ্ছে যে!!"
- কিছু না বাবুল, শুধু একটু মাথা ব্যথা করছে।
- ঘুমিয়ে নেন স্যার, ভাল ঘুম হলেই সব ঠিক।।
আমি নিজের সিটে বসে পরলাম। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে দেখি প্রকৃতি অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে কালো মেঘের ছায়ায়! আকাশের ভাবে বুঝলাম বেশ ভালই বৃষ্টি হবে। এই ভেবে চোখ বন্ধ করলাম। ধীরে ধীরে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম জানি না।।

চোখ খুলে দেখলাম আমরা উল্লাপাড়া স্টেশনে থেমে আছি। ততক্ষণে বৃষ্টি থেমে গেছে এবং সূর্যের দেখা পাওয়া গেছে। আশেপাশের লোকজনকে বলতে শুনলাম ক্রসিং হবে তাই ট্রেন অনেকক্ষণ দারিয়ে আছে! আসলেই ক্রসিং হবে কিনা সেটা এটেনড্যান্টের কাছে শুনে নিলাম। অনেকক্ষণ বসে ছিলাম বিধায় শরীরটায় অলস অলস ভাব বিরাজ করছে। পিটার, মামুন এবং এলেক্সকে নিয়ে বের হলাম চা খাওয়ার জন্য। যদিও ট্রেনের ভিতরে চা পাওয়া যায় কিন্তু চাস্টলের চা আলাদা ভাবে উপভোগ করা যায়।
চা সিগারেট খেয়ে আবার ট্রেনে উঠলাম। কিছুক্ষণ পর আরেকটা ট্রেন চলে গেল। আবারও আমাদের ট্রেন চলে গেল। ট্রেনের ভিতরের ভীড় ধীরে ধীরে কমে এল। যমুনা সেতুর উপরে উঠে ট্রেনের গতি আরও কমে গেল! বর্ষার মৌসুমে যমুনা নদী কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আছে! আমি চারপাশের সৌন্দর্য দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরলাম। এমন সময় ক্যাপ্টেন রাফি দ্রুত সিট ছেড়ে কামড়ার গেটের দিকে ছুটলেন!! আমি জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যাচ্ছেন কিন্তু তিনি কোন উত্তর দিলেন না! একটু পর আমিও উঠলাম। আমাদের কোচের সবখানে তাকে খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না! ট্রেনের টয়লেট গুলোও ফাকা!! মামুন, গৌতম, পিটার এবং এলেক্সকে পাঠিয়ে দিলাম সম্পূর্ণ ট্রেন খুঁজতে! ইঞ্জিন থেকে শুরু করে পিছনের পাওয়ারকার পর্যন্ত সবকয়টা কোচ খুঁজেও ক্যাপ্টেন রাফিকে পেলাম না। সবাইকে কল করলাম কেউ পায় নি! এমনসময় আমাদের পাশের কামরায় চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হল! আমি সেখানে যেতেই দেখি লোকজন বলাবলি করছে কোথায় যেন গুলির আওয়াজ শুনতে পেয়েছে তারা! আরেকজন বললো ট্রেনের ছাদে দুইজন মারামারি করছে! একথা শুনে আমি দ্রুত ট্রেনের সামনের দিকে যেতে লাগলাম। পিটারকে কল দিয়ে সামনে আসতে বললাম। ট্রেনের গতি অল্প থাকায় আমি খুব সহজেই ইঞ্জিনে উঠতে পারি। রেলের চালক প্রথমে বাধা দিলেন। কিন্তু আমি এবং এলেক্স তার কথা না শুনে ট্রেনের ছাদে উঠে গেলাম!! চলন্ত ট্রেনে দারিয়ে থাকা প্রচুর কষ্টের কাজ। আমরা আস্তে আস্তে বসে বসে সামনের দিকে যেতে লাগলাম।
- ক্যাপ্টেন নাজিম!!! পিটার চমকে বললো।
আমি তার সাহস দেখে অবাক হয়ে গেলাম! সাথে সাথে এলেক্সকে কল করলাম,
- তাড়াতাড়ি ট্রেনের যেকোনো বগির চেন টান, তাড়াতাড়ি।।
- স্যার, সেতুর উপর ট্রেনে থামাতে দিচ্ছে না!! বলছে নিয়ম নেই।
- নিয়মের মা***প, টান তাড়াতাড়ি!!
আমি এবং পিটার আস্তে আস্তে সামনে আগাতে লাগলাম। এমন সময় নাজিম ক্যাপ্টেন রাফির দিকে রিভলভার তাক করে!! পিটার চিৎকার দিয়ে বললো, "Noooo!!!!"
একটুপর গৌতমও ট্রেনের ছাদে উঠে গেল! নিচে থেকে গেল মামুন এবং এলেক্স। কি মনে করে নাজিম রিভলভার নামিয়ে নিল! আমি বুঝতে পারছি না সে কি করতে যাচ্ছে! নাজিম আশেপাশে তাকিয়ে নিল। ট্রেনের গতি তখন ধীরে ধীরে কমে আসছে। আমরা সামনে ও পেছন দিক দিয়ে ঘীরে ফেলেছি। ক্যাপ্টেন রাফি বললো,
- নাজিম, আমার ছেলেরা সবখান থেকে আপনাকে ঘিরে রেখেছে! সারেন্ডার করলেই মঙ্গল আপনার জন্য।।
গৌতমও তার রিভলভার নাজিমের দিকে তাক করে আস্তে আস্তে আগাচ্ছে। এরমধ্যে সেতুর মাঝখানেই ট্রেন থেমে গেছে। আমরা নাজিমকে ঘিরে বন্দুক তাক করে আছি!!
এমন সময় পিটার বললো, "তিন পর্যন্ত গুনবো, এর মধ্যে সারেন্ডার না করলে We will shoot you!!"
নাজিম ধিরে ধিরে তার বন্দুকটা নিচে রেখে দিয়ে আবার দারালো! আমাদের দিকে একটু একটু হাসি দিল। এমন সময় সে ক্যাপ্টেন রাফির দিকে দৌড়ানো শুরু করলো! দৌড়ে এসে সে ক্যাপ্টেন রাফির কোমড় বরাবর কাধ দিয়ে ধাক্কা এবং দুইহাত দিয়ে ধরে যমুনার গভীরতার দিকে লাফ দিল!! দেখলাম সে ক্যাপ্টেন রাফিকে নিয়ে পানিতে পরে গেল!! আমরা পানিতে গুলি করতে চাইলাম কিন্তু করলাম না কারণ যেকোনো একটা বুলেট যদি তার লেগে যায় তবে ক্যাপ্টেন রাফির মৃত্যু হতে পারে।।
- শেষ পর্যন্ত নাজিম ক্যাপ্টেন রাফিকে কিডন্যাপ করতে পেরেছে! পিটার বললো।
- অনেকদিন সাধনা করতে হয়েছে তাকে পিটার।
আমি এলেক্সকে কল করে বললাম, "ট্রেন ছাড়তে বল, সময় হয়েছে বদলা নেয়ার।" ট্রেনের ভিতরে আতঙ্ক তৈরী হয়েছে এই নিয়ে। আমি আর পিটার ভিতরে গেলাম না। ছাদেই থেকে গেলাম। বসে বসে চিন্তা করলাম কিভাবে ঘটে গেল এই ঘটনা? পাঁচজন উপস্থিত থাকার পরও কিভাবে ক্যাপ্টেন রাফিকে চোখের সামনে থেকে নিয়ে গেল নাজিম!!

১৯শে আগস্ট, ২০১১
সকাল ১০টা
গোয়েন্দা বিভাগ, ঢাকা


"স্পেশাল ফোর্সের ক্যাপ্টেন রাফির নিখোঁজ হওয়ার ২৪ঘন্টা পার হয়েছে, অথচ পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ, র‍্যাব কেউই তার কোনো খোঁজ খবর পান নি। জানা যায় সিল্কসিটি ট্রেনে ভ্রমণরত অবস্থায় ক্যাপ্টেন রাফিকে অপহরণ করা হয়। কে বা কারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তার কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায় নি। পুলিশ এবং ডিবি যৌথভাবে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।"
নিউজ চ্যানেলের এমনসব সংবাদে আমাদের মত যে কোনো কর্মকর্তারই মেজাজ খারাপ হওয়ার কথা।
- স্যার, দায়িত্বটা জার্নালিস্টদের দিলে হয়তো তারা ভাল কিছু বের করতে পারবেন। এলেক্স বললো।
- যার বিয়ে তার খবর নাই, পাড়াপড়শির ঘুম নাই!! গৌতম চুপচাপ বললো।
গোয়েন্দা বিভাগের হেড জনাব আবুল মোশাররফ নায়েক এর অপেক্ষায় আছি। উনার সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে এসেছি। ভি আই পি ব্যক্তিবর্গ সারাদিন মিটিং মিটিং আর মিটিং নিয়েই ব্যস্ত থাকে। সেই সকাল আটটার সময় এসে বসে আছি কিন্তু তার মিটিং শেষ হবার খবর নাই!
- স্যার এটা খুবই বিরক্তিকর। দুই ঘন্টা হল বসে আছি। আমাদেরও একটা মানসম্মান আছে। গৌতম বললো।
- স্যার, উনি যদি আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে মিটিং শেষ না করেন তবে দরজা ভেঙে ভিতরে সব তছনছ করে দিয়ে আসবো।। মামুন দাত কটমট করে বললো।
আরও পাঁচ মিনিট ধৈর্য্যের বাধ বাড়িয়ে নিলাম। ঘড়ির দিকে তাকালাম, আর মাত্র ৩০০ সেকেন্ড। এমন সময় সেক্রেটারি এসে বললো, "স্যার আপনাদের ভেতরে ডেকেছেন।"
গৌতম বললো, "দুই মিনিটে বেঁচে গেলেন আপনাদের।"
সেক্রেটারি আমাদের কথাটা বুঝে উঠতে পারি নি। যাক সেসব, ভিতরে গিয়ে জনাব নায়েক বললেন,
- সরি, খুব বেশি সময় অপেক্ষা করালাম। বসুন।
আমরা ধন্যবাদ জানিয়ে বসলাম।
উনার সাথে আমাদের এবং গোয়েন্দা সংস্থার কাজ নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কথা হল। উনি যে কথাটা বেশি বললেন সেটা হল আমাদের নিরাপত্তা! আমরা যেহেতু ক্যাপ্টেন রাফির টিমে হয়তো দেখা গেল নেক্সট টার্গেট আমরাই হতে পারি।
বেশ কিছুক্ষণ পর আমরা চলে এলাম। জেনারেল ওসমানকে সব কথা জানালাম। আগামীকাল এক প্রেস কনফারেন্স আছে যেখানে আমাদের থাকতে বলেছেন।


পরেরদিন,
সন্ধ্যা ৭.৩০টা


জেনারেল ওসমান, ব্রিগ. সামস, কর্ণেল আলাউদ্দিন এবং আমাদের টিম প্রেস কনফারেন্সে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য বসেছেন। একটু সুযোগ দিতেই মিডিয়ার লোকজন যা ইচ্ছা তাই প্রশ্ন করে যাচ্ছে! একজন তো সরাসরি বললো, "আমাদের তো মনে হয় আপনারাই জড়িত এর সাথে এবং কুমিল্লা ট্রাজেডি আপনাদের করা প্ল্যান!!!"
ব্যস! সাথে সাথে আগুন লেগে গেল আমাদের মাথায়! ব্রিগ. সামস এবং অন্যান্যরা খুবই ক্ষিপ্ত হয়ে গেল। এমন সময় আরেকজন সাংবাদিক উঠে জেনারেল ওসমানকে বললো,
- স্যার স্যার আরেকটা প্রশ্ন প্লিজ।।
- জ্বি বলুন
- স্যার, শোনা যাচ্ছে ক্যাপ্টেন রাফির অপহরণকারীকে খুঁজে বের করতে আপনাদের দায়িত্বে অবহেলা হচ্ছে!
এমন সময় পিটার সেই সাংবাদিককে বললো, "তাহলে দায়িত্বটা আপনি নিয়ে যমুনার পানিতে ডুব দিয়ে আসেন।।"
পিটারের কথায় সাংবাদিক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল! এরপর জেনারেল ওসমানকে নিয়ে কনফারেন্স থেকে উঠে এল পিটার। আমি এদিকে সামাল নেয়ার চেষ্টা করছি। এরপরও সাংবাদিকদের শেষ প্রশ্নই শেষ হচ্ছে না!!

কনফারেন্স থেকে ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেল। রাত তখন প্রায় ১২টা ছুই ছুই! মোবাইলে পিটারের কল,
- হুম পিটার বল
- স্যার, এলেক্স, গৌতম এবং মামুনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এক ঘন্টা ধরে!! ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে!
- মানে? কি বল এসব?
- জ্বি স্যার, সাবধানে থাকতে হবে আমাদের। আশেপাশে খেয়াল রাখবেন।
- জেনারেল জানে???
- এখনও জানাই নি স্যার।
আচ্ছা কল রাখো।
আরেক টেনশন মাথায় ঢুকে গেল! কি হচ্ছে এসব কিছুই বুঝতে পারছি না। এমন সময় আবারও কল! অচেনা নাম্বার!! রিসিভ করতেই বললো,
- লেফটেন্যান্ট বাবুল!
- ক্যাপ্টেন রাফি!!!!! স্যার, স্যার আপনি ঠিক আছেন?
আমি হন্তদন্ত হয়ে বললাম। অস্থিরতা বেড়েই চলেছে আমার মাঝে!
- নাজিম...
- নাজিম কি স্যার... কোথায় সে? কি করেছে আপনার সাথে???
- নাজিম আমাকে মেরে..... (আর কোন কথা আসলো না!)
- নাজিম এত সহজেই ক্যাপ্টেন রাফিকে মারবে না.... (একটা অপরিচিত আওয়াজ!!)
- হ্যালো!! কে এটা? কে?
- ক্যাপ্টেন নাজিম। এক্স কমান্ডর অফ স্পেশাল ফোর্স ব্যাটালিয়ন!! ব্যাচ নাম্বার ২৪, ক্যাডেট কোর ৭১।।
- কি চান আপনি? আমাদের সাথে এত শত্রুতা কিসের আপনার?
নাজিম একটা অট্ট হাসি হাসলো!!
- শত্রুতা??? তোমাদের সাথে??
এই বলে আবারও হাসলো!! হঠাৎ একটা চিৎকার শুনা গেল!!
- শত্রুতা, শুধু রাফির সাথে।। তোমাদের কারও সাথে না, যদি হতো তাহলে সেই ট্রেনের ছাদেই তোমাদের মেরে দিতাম!! জীবিত রেখে নিজের মৃত্যু অনেক আগেই কাছে ডেকে এনেছি।
- কি চাই আপনার??
- যা চাওয়ার সেটা নিয়েই খেলা করতেছি, লেফটেন্যান্ট রাফি এখন ক্যাপ্টেন রাফি!!
এই বলে আবারও হাসতে লাগলো সে!!
- লেফটেনেন্ট বাবুল, গল্প না বুঝলে শুরু থেকে পড়তে হয়। পড়তে থাকো, যে পয়েন্টে বেধে যাবে সেখানেই আমাকে পাবে।
- মানে???
- আরেকটা কথা, পিটারকে অবশ্যই সাথে নিয়ে আসবে, দেশপ্রেমের একটা নমুনা দেখাবো।
- শুধু পিটার না, গোটা ফোর্স নিয়ে আসছি
- আরে সেটা করতে যেও না, তাহলে লোকেশন পাবে না।
- তবে?
- বললাম তো, প্রথম থেকে গল্প পড়া শুরু কর। যেখানেই ঠেকবে সেখানেই আমি।।
- ঠিক আছে আপনার মৃত্যু ঘনিয়ে এসছে, কালেমা মুখস্ত করে নিন।।
- কে মুখস্ত করবে সেটা সামনে আসলেই বোঝা যাবে।।
কল কেটে দিলাম। এক্স ক্যাপ্টেন নাজিম, ৭১ ক্যাডেট কোর, স্পেশাল ফোর্স। এখন বাসার দিকে যাচ্ছি। গল্প পড়তে হবে। যেখানে ঠেকবো সেখানেই নাজিমকে পাওয়া যাবে। পিটারকে দেশ প্রেমের নমুনা দেখাবে।


১৮ই আগস্ট ২০১১
সকাল ৯.৩৯ মিনিট
উল্লাপাড়া রেলস্টেশন
সিরাজগঞ্জ


- হ্যালো
- সব ঠিকটাক হয়েছে?
- জ্বি স্যার। ট্রেন এসছে?
- ক্রসিং এর জন্য অপেক্ষায় আছে, আমি ট্রেনে উঠবো। তোমরা তোমাদের পজিশনে যাও।
- Roger that...

কমান্ডর নাজিম পেপার হাতে নিয়ে মুখ ঢেকে প্লাটফর্মে বসে আছেন। কিন্তু তার নজর চারপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর দেখলো বাবুল এবং তার সাথীরা রেলওয়ে স্ন্যাক্সবার দোকানের সামনে চা সিগারেট খাওয়ার জন্য দারিয়েছে। রাফিকে খুঁজে পাচ্ছে না। আজকেই টার্গেট নিয়েছেন রাফিকে কিডন্যাপ করার। একটু পর বাবুল এবং অন্যান্যরা ট্রেনের ভিতরে ঢুকে গেল সাথে সাথে ট্রেনও হুইশেল বাজালো। ধিরে ধিরে চলতে শুরু করলো ট্রেন। সময়মত নাজিম ট্রেনে উঠে গেল।

মামুন এবং গৌতমকে দেখলো তারা দাবায় মনোযোগ দিয়েছে। বাবুল ঘুম পিটার, এলেক্স বাইরে গেছে। নাজিম রাফির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলো। একসময় রাফি নাজিমকে দেখে ফেলে। নাজিমের হাতে একটা ফাইল দেখে ঘাবড়ে যায় রাফি। নাজিম হালকা রহস্যের হাসি দিল, এরপর নাজিমকে ধরার জন্য রাফিও উঠে গেল। দরজায় বারি লেগে নাজিমের হাত থেকে ফাইলটি পরে যায়! ধাওয়া করতে করতে একেবারে সামনে চলে গেল। নাজিম ট্রেনের ছাদে উঠে ধীরে ধীরে ক্রাউচভাবে ট্রেনের পিছন দিকে আগাতে শুরু করলো এবং সাথে ক্যাপ্টেন রাফি!! একসময় নাজিম তার রিভলভার রাফির দিকে তাক করে! সেতুর উপরে ট্রেনের গতি ধিরে ধিরে কমে আসছে। এমন সময় বাবুল, এলেক্স এবং গৌতম উঠে এল। গৌতম নাজিমের দিকে রিভলভার তাক করে আছে। নাজিম ধিরে ধিরে নিজের রিভলভারটা নিচে নামালো। একটু পর সেটা নিচে রেখে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে দৌড়ানো শুরু করলো! সে রাফিকে নিয়ে যমুনার গভীরে ঝাঁপিয়ে পরলো। ফাইলের কাগজ ততক্ষণে আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে।


পানির উপরে মাথা তুলেই রাফিকে খুঁজতে লাগলেন তিনি। নদীর স্রোত প্রচণ্ড বেশি তাই বিপরীত দিকে রাফি বা নাজিম কেউই যেতে পারবে না। কিছুক্ষণ পর কিছুটা দুরত্বে রাফিকে দেখতে পেল সে। স্রোতের সাথে দ্রুত তাল মিলিয়ে একপর্যায়ে রাফিকে ধরে ফেলে! কিন্তু ধস্তাধস্তির ফলে ছুটে যায় সে! কিছুদুর যেতেই দেখা যায় তিনটা স্টিমার অল্প দুরত্বে একে অপরের সাথে নোঙর করে রেখেছে! সেখান থেকে পাঁচজন পানিতে নেমে নাজিম এবং রাফিকে পানি থেকে তুলে নিল।
- ওকে স্যার উই গট হিম।
- গুড জব, সেন্সলেসের ইনজেকশন দিয়ে দাও তাকে। আমি একটু রেস্ট নিই, তার আগে ফার্স্ট এইড বক্সটা দাও। হাতের ব্লিডিং এখনও বন্ধ হয় নি।
- স্যার এর পরের মিশন কি???
- সপ্তাহ খানেক পর, তবে এইমাসের মধ্যেই তোমরা তোমাদের প্রাপ্য পুরস্কার পাবে, আমি নিশ্চিত..


২৫শে আগস্ট, ২০১২
সকাল ৯টা,
কুমিল্লা


আমরা হাটতে হাটতে নাসিরের ঘাটিতে এলাম। স্পটটা সিল করে রাখা হয়েছে।
হাটতে হাটতে পিটার বললো, "স্যার ট্রেনের দৃশ্যটা আমার চোখে চোখে ভাসছে। ক্যাপ্টেন রাফিকে নিয়ে কিভাবে সে আমাদের সামনে থেকে নিয়ে গেল!
- সেটা ভেবে লাভ নেই পিটার। আমরা খোঁজাখুঁজি চালু রাখি।
ঘাটির সবখানে আমি এবং পিটার যেকোনো কিছু পাওয়ার সন্ধান করে যাচ্ছি। কিছুদুর যেতেই দেখি সবুজ রঙের একটা কাপড় পরে আছে। আগেই কাছে যাওয়া যাবে না, মাইন বা যেকোনো বিস্ফোরক দ্রব্য বা ফাদ পেতে থাকতে পারে। আশেপাশে মাইনের কোনো সতর্ক সংকেত দেয়া নেই। ধিরে ধিরে এগিয়ে গেলাম। পিটার কাপড়টা তুলে দেখে সেখানে কিছু লেখা আছে তবে অর্ধেক করে! এপিঠ ওপিঠে আর কিছু নাই। আমি পিটারকে বললাম, "একটা যখন পাওয়া গেছে আরেকটাও পাওয়া যাবে!! খুঁজতে থাকো.." আমি চারপাশে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিলাম। যে করেই হোক খুঁজে বের করতে হবে সেটা। এমন সময় পিটার চিৎকার দিয়ে ডাকলো! আমি দ্রুত ছুটে গেলাম সেখানে।
- স্যার, লাল রঙের রুমাল পেলাম। তবে এটা গোল! এখানেও অর্ধেক ভাবে লেখা আছে!
আমি মিলাতে শুরু করে দিলাম। সবুজের উপরে লাল রঙের রুমাল রাখলাম। "স্যার, এটা বাংলাদেশের পতাকা!!" তাড়াহুড়ায় আমি খেয়াল করি নি এটা দেশের পতাকার মত হয়েছে! "Straight to the middle point, 2'o clock, 100 steps"
- আমি বুঝতে পারছি না স্যার কোন মিডেল পয়েন্ট।।
- আমিও পিটার। এক কাজ করি, আমি উত্তর দিক থেকে শুরু করি, তুমি দক্ষিণ থেকে শুরু কর।
- রজার...
রুমালের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী উত্তর দক্ষিণ দিকে খুঁজে কিছু পেলাম না। এবার বাকি আছে পূর্ব ও পশ্চিম। পিটারকে পূর্বে যেতে বললাম এবং আমি পশ্চিমে শুরু করলাম। আশা যখন হারিয়ে ফেলছিলাম ঠিক তখনই পিটার কিছু একটা পেল! ওর ডাকে আমি সেদিক ছুটে গেলাম। দেখলাম একটা ফাইল! "Days at Heaven" ফাইলটির নাম। ধুলাবালি ঝেড়ে ফাইলটা খুললাম, প্রথমেই দেখি একটা ছবি! ক্যাপ্টেন নাজিম এবং ক্যাপ্টেন হারিসের! ছবির পিছনে দিন তারিখ লেখা ছিল "১১ই মে, ১৯৯৯" পরের পেজে আরেকটা ছবি, এখানে ক্যাপ্টেন রাফি এবং ক্যাপ্টেন রুহুল আছে তাদের সাথে। বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বুঝা যাচ্ছে তাদের মাঝে। এরপর কয়েকটা কাগজ, অনেক কিছু লেখা!
- এতকিছু পড়া কিভাবে সম্ভব? পিটার বললো
- দেখি কি লেখা আছে....


চলবে...

লেখা: Dorponer Protibimbo

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.