নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রেমিকার চিরশত্রু
দ্বিতীয় পর্ব
২৯শে মে, ২০১০
রাত ১০.৩২মিনিট
কুমিল্লা
"আজ বাংলাদেশের জন্য এটি একটা স্মরণীয় দিন হিসাবে থাকবে। এদিকে সেনাবাহিনী আর ওদিকে গ্রামবাসী! স্কোয়াড রেডি?"
"ইয়েস স্যার"
এমন সময় বিকট এক বজ্রপাত গাছের উপর পরলো এবং গাছ ভেঙে রাস্তা মাঝে পরে গেল! "যাক, আমাদের কাজ আরও কমে গেল। গাছ কাটা বাদ দাও।" কমান্ড আবারও বললেন, "গাড়ি এসে পরেছে, সবাই পজিশন নাও।" এমন সময় গাড়ি বিস্ফোরিত হয়!
"টিম, ফলো মি।" বলে সামনে এগিয়ে গেলেন। "সবখানে খুঁজো, বাদ যেন না যায় কেউ, একটু নড়াচড়া দেখলেই মেরে দেবে। কিল দেম!" একজন বললো, "কমান্ডর, ক্যাপ্টেন রাফিকে পাচ্ছি না!" কমান্ডরের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল! আসল টার্গেটটাই মিস হয়ে গেল! কমান্ডার সবাইকে ভাল ভাবে খোঁজার নির্দেশ দিলেন। কিছুক্ষণ এদিক সেদিক খুঁজে ক্যাপ্টেনকে না পেয়ে কমান্ডর খুঁজাখুঁজি বাদ দিয়ে অন্যদিকে চলে গেলেন। "সময় নেই, স্কোয়াড গেট ব্যাক টু হোম।"
গাড়িতে বসে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে কমান্ডার। মন মেজাজ খুবই খারাপ তার। "কমান্ডার, তাদের এক স্নাইপারের কাছ থেকে এই ছোট্ট কাগজটা পেলাম।" কমান্ডার কাগজের লেখাটি পড়ে দেখলেন সেখানে "আঘাত" লেখা আছে! তিনি সবাইকে বললেন, "আঘাত না শোনা পর্যন্ত কেউ কোনো কথা বলবে না। আজকের পর থেকে আমরা কেউ কাউকে চিনি না। একদম অপরিচিত যেমনটা প্রথমদিন ছিলাম!"
সবাই একত্রে বলে উঠল "ইয়েস স্যার"
গ্রামের পথে হেটে যাচ্ছেন কমান্ডর এবং তার সঙ্গীরা। পোশাক পরিচ্ছেদ সম্পূর্ণ সেনাবাহিনীর নকল! পরিচিত একজনকে ইশারা দিলেন ক্যাম্পে খবর পাঠাতে। বৃষ্টি তখনও মুশলধারে হচ্ছে।
"রেডি স্কয়াড?"
- ইয়েস স্যার
- ওয়েপনস ফ্রি! ফায়ার!!
নির্বিচারে গ্রামের প্রত্যেক ঘরে ঘরে গুলি চালাতে লাগলো তারা। শুরু হল চিৎকার চেঁচামেচি! কেউ বুঝতে পারছে কি কারণে সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে! কমান্ডর এবং তার অনুসারীরা অজস্রধারায় গুলি করে যাচ্ছে। গ্রাম ছেড়ে এখন তারা ছোট খাটো জঙ্গলের কাছাকাছি। আবারও নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে যাচ্ছে কমান্ড! এক পর্যায়ে তারা সবাই বিভক্ত হয়ে গুলিবর্ষণ শুরু করে! এমন সময় কে যেন "আঘাত" বলে চিৎকার দিয়ে উঠল! কমান্ডর বুঝতে পারলেন ক্যাপ্টেন রাফির একজন স্পাই এই ঘাটিতে আছে। "হোল্ড ইউর ফায়ার!" নাসিরকে সাথে করে নিয়ে একজন সামনে আসলো!
"ওয়েলডান ক্যাপ্টেন রাফি।"
কমান্ডর চিনে নিয়েছে ক্যাপ্টেন রাফির গোয়েন্দাকে। তিনি হলেন লেফট. মামুন! কমান্ডর নিজের মাস্ক, ইউনিফর্ম খুলে ফেললেন! নাসির ধীরে ধীরে অট্ট হাসি দেয়া শুরু করলো! বের হয়ে আসলো আসল পরিচয়! মামুনের মাথায় একটা বারি দিয়ে ওকে অজ্ঞান করে দিল নাসির!
"কমান্ডর, ইউ আর আমেইজিং অ্যাজ অলওয়েজ! রিয়েলি সারপ্রাইজড! বাই দ্য ওয়ে, এরা কারা?"
নাসিরের কথার উত্তরে কমান্ডর বললেন, "এই পাঁচজন অসাধারণ কাজ দেখিয়েছে রাফিকে ওয়াশ করতে।" নাসির তাদের টাইগার্স বলে অভিনন্দন জানালেন এবং তাদের পুরস্কার হিসাবে প্রত্যেককে এক কোটি টাকা দিলেন। সেই পাঁচজন চলে গেল।
কমান্ডর বললেন, "এই রাফির চামচাটাকে কি করা যায়?"
নাসির বললো, "চলুন, তাকে একটু দেশপ্রেমের নমুনা দেখিয়ে নিয়ে আসি।"
"লাশগুলো থাক, আমাদের এক্ষুণি এখান থেকে বের হতে হবে।"
"ফরিদ, গাড়ি নিয়ে আসো।" নাসির তার ড্রাইভারকে বললো। নাসির মামুনকে কাধে নিলেন। বৃষ্টির বেগ আগের মতই আছে এখনও। "স্যার, গাড়ি বেশি ভিতরে আনতে পারছি না, কাঁদার পরিমাণ বেশি!"
কমান্ড বললেন, "আমরা হেটেই যাই কিন্তু একটু দ্রুত।"
গাড়িতে মামুনের বডি রেখে তারাও উঠে গেল। নীলফামারীর দিকে রওনা হল তারা। কমান্ডর নাসিরকে বললেন,
- আরেকজনকে ধরতে হবে!
- কে?
- গৌতম! গৌতম সরকার চন্দ্র!
- আপনি চিনেন কিভাবে তাকে? সে কি সেনাবাহিনীর?
- হুম, লেফটেনেন্ট গৌতম। স্পেশাল ব্রাঞ্চে ট্রেইনিং এর সময় সে ছিল। আজ থেকে সাত বছর আগের কথা এটা।
- আপনি কিভাবে খবর পেলেন?
- মামুনের কললিস্ট থেকে।।
নীলফামারী পৌঁছাতে প্রায় ভোর হয়ে গেছে।
"কমান্ড, নীলফামারীতে আপনাকে স্বাগতম। আগে এসেছিলেন কিনা জানি না তবে এখানকার পপুলার সব খাদ্য খাবার দিয়ে আপনার আপ্যায়ন করা হবে।"
কমান্ড বললেন, "ঠিক আছে তার আগে গৌতমকে খুঁজে নিই?"
- নিশ্চয়ই!! নিশ্চয়ই!!
কমান্ড এবং নাসির সৈন্যদের ক্যাম্পে ঢুকে গৌতমকে খুঁজতে লাগলো। ওর সাথে ধস্তাধস্তি না করে ঘুমের ওষুধ দিয়ে অজ্ঞান করে ইন্টারোগেশন রুমে নিয়ে যা করার করতে হবে। কমান্ড দেখল বেড নাম্বার ৩৪ এ গৌতম ঘুমিয়ে আছে। আগে তিনি নিশ্চিত হয়ে নিলেন যে এটা গৌতম কিনা! নাসিরকে বললেন ইনজেকশন দিতে। ইনজেকশন দেয়ার পর দুইজন সেনাকে বললেন তাকে ইন্টারোগেশন রুমে বেধে রাখার জন্য। "প্রহরিকে এই ইনজেকশন আবার ৪ঘন্টা পর দিতে বলবেন।" কমান্ডরের হুকুম!
"নাসির, নতুন একটা অস্র মার্কেটে এসেছে! আমাদের হাতে এলে আমরা অনেক শক্তিশালী হবো। এটা ডিফেন্সকে একটা শক্তপোক্ত জবাব দেয়ার উপযুক্ত সময়।"
- হুম ঠিক বলেছেন, কিন্তু কাকে পাঠানো যায়? আর ডিল কোথায় হবে?
- নাটোরে।
- নাটোরে!!! তাহলে তো সমস্যা নাই, আনসারকে পাঠালেই হবে!
- সে কোথায় আছে এখন?
- নাটোরেই আছে।
- ঠিক আছে, যেতে বলুন সেখানে। আমি সিকিউরিটি এরেঞ্জ করছি।
৬ই জুন, ২০১০
রাত ১২.৩৯মিনিট
"অপারেশন ডে লাইট"
নীলফামারী,
ক্যাপ্টেন রাফির নেতৃত্বে বারজন তিন টিমে বিভক্ত হয়ে নাসির ঘাটিকে ঘেরাও করার জন্য যাচ্ছি। আশা করছি আমাদের এজেন্ট মামুন আর গৌতমকে এখানে পাওয়া যাবে।
- "বাবুল, রেডি?" ক্যাপ্টেন রাফি বললেন।
- ইয়েস স্যার!
এই বলে সামনে আগাতে লাগলাম। পিটার এবং এলেক্স আমার সাথে আছে। ক্যাপ্টেন রাফি বললেন, "নাসিরকে আমার জীবিত চাই। অনেক খেলা দেখিয়েছে সে, এবার আমাদের পালা।" স্টোর রুমের দিকে আগাতে থাকলাম। আর এর কিছুটা দুরেই সেনা ক্যাম্প। গৌতম এখানেই আন্ডারকভার হিসেবে ছিল। আর মামুন ছিল কুমিল্লায়। স্টোর রুমের দরজাটা খুলে ভিতরে ঢুকলাম। দেখি একজন শুয়ে আছে! নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। আমি তাদের বললাম, "ওয়েট হেয়ার, একে আমি দেখছি।" আস্তে আস্তে ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে মুখ চেপে ধরে ঘাড় বরাবর ছুড়ি চালিয়ে দিলাম। পিটার দরজাটা ভিতর দিয়ে আটকে দিল। আমি ড্রায়ার আলমারিতে খুঁজতে লাগলাম জরুরী কিছু পাওয়া যায় কিনা! "লেফটেনেন্ট বাবুল, আমি সিকিউরিটি রুমের কাছাকাছি, তোমরা কোথায়? এক্ষুণি এদিকে আসো।"
- ওকে ক্যাপ্টেন, উই আর অন দ্য ওয়ে।
স্টোর রুমের আরেক দরজা দিয়ে বের হলাম। বড় বড় ঘাসের সাথে মিশে আমরা আগানো শুরু করলাম! হঠাৎ সামনে দেখি চার পাচ জনের একটি দল কি যেন খুঁজছে।
"স্টপ! পাঁচটা শিকার সামনে, তাদের কাউকে ছাড়া যাবে না। সাইলেন্স ওয়েপন্স মাস্ট বি ইউজড। সবাইকে একই সময় বসাতে হবে।"
আমি, পিটার এবং এলেক্স নিজেদের থেকে আলাদা হয়ে গেলাম। এমন একটা পজিশন নিলাম যেন এক বুলেটে দুইজন মরে যায়!
"আই'ম ইন পজিশন!" পিটার জানালো। এলেক্স এবং আমিও পজিশন পেয়ে গেছি।
- রেডি...... শট!
এই বলে গুলি চালালাম! পাঁচজনই মারা গেল। আবারও সামনে আগাতে লাগলাম। হঠাৎ দেখি সামনে একটা দুইরুমের ছোট বাড়ি! মনে মনে সন্দেহ কিছু একটা থাকতে পারে। আমরা বাড়িটির সামনে আগাতে শুরু করি। হঠাৎ ভিতর থেকে দুইজন বের হল! দেখলাম দরজা কে যেন বন্ধ করে দিল! তার মানে নিশ্চিত ভিতরে কেউ আছে। "পিটার এন্ড এলেক্স, ড্রপ দেম!" সাথে সাথে গুলি করলো তাদের।
"এলেক্স, পিছনে দেখে আসেন কি হচ্ছে। পিটার, আমার সাথে আসুন।"
আমরা দরজার সামনে দারালাম। "স্যার, ভিতরে সাতজন আছে! দুইজন বন্দি, একজন ডাক্তার এবং চারটা কন্ট্রাক্ট আপনাদের বামদিকে আছে!"
এলেক্স জানালো।
"ওকে, স্টে দেয়ার, আমরা ঢোকার সাথে সাথে গুলি চালাবেন। ওয়েপন্স ফ্রি! পিটার দরজা ভাঙুন!" দরজা ভেঙেই বামদিক বরাবর গুলি চালালাম। এলেক্স পিছন দিক থেকে গুলি করছে। চারজনই মারা গেল! আমি বন্দি দুজনের দিকে গেলাম। গিয়েই অবাক হলাম! এ যে গৌতম এবং মামুন! তার পায়ে ব্যান্ডেজ করা!
"গৌতম! গৌতম! চোখ খোল ভাই!" কোন সারা শব্দ পেলাম না! মামুনকেও ডাকলাম কিন্তু কোনো শব্দ পেলাম না! "প্লিজ, আমাকে মারবেন না, আমি একজন ডাক্তার! আমার নাম জে. পি আলম। এদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই!" ভিতরের ডাক্তার ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠল। এলেক্স তার কলার চেপে ধরে বললো, "তোকে এখানে কি জন্য আনা হয়েছে?" ডাক্তার ভয়ে ভয়ে বললো, "এই গুলি বিদ্ধ ব্যক্তি চিকিৎসার জন্য।"
আমি আমার রাইফেল তার কপাল বরাবর ঠেকিয়ে রেগে বললাম, "তাড়াতাড়ি এদের চিকিৎসা কর! হুশ ফিরিয়ে আন তাদের! না হলে বুঝিস তো কি করতে পারি?" আমাদের মেজাজ তখন চরম খারাপ। ক্যাপ্টেনকে বললাম, "স্যার, গৌতম আর মামুনকে পেয়েছি!"
- গুড জব টিম। আমি ডাটা আপলোড করছি তাড়াতাড়ি এসো এবং আমাকে কভার দাও।
- রজার দ্যাট!
ডাক্টার বললো, "স্যার আমাকেও এখান থেকে নিয়ে যান প্লিজ। আমার পরিবার আমার খোঁজখবর কিছুই জানে না! ওরা আমাকে ঢাকা থেকে তুলে এনেছে!" আমি আবারও গেলাম গৌতমের কাছে। ওর মুখে পানি ছিটালাম। হঠাৎ কাশি দিয়ে উঠলো!
"গৌতম, তুমি ঠিক আছো তো?"
- লেফটেনেন্ট বাবুল! অনেকদিন পর আপনাদের দেখে ভাল লাগলো।
- তোমাকে জীবিত পাবো ভাবি নি! যাক, উঠো এখন! নাসিরের পালা এখন।
- পিটার, এলেক্স! কি অবস্থা আপনাদের?
পিটার বললো, "এটা খোঁজখবর নেয়ার সময় না। জাস্ট গেট আপ ইয়াংম্যান!"
মামুনের ব্যাপারে ডাক্তার আবার বললো, "উনাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিন। অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে তার!"
আমি এলেক্সকে বললাম মামুনকে কাধে তুলতে। এরপর গৌতম এবং ড. আলমকে নিয়ে চপারের দিকে যেতে লাগলাম। ল্যান্ডিং জোনে পৌঁছে মামুন এবং ড. আলমকে পাঠিয়ে দিলাম। গৌতমকেও বললাম কিন্তু সে গেল না! মিশনের শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে! এদিকে হেলিকপ্টার আসায় সম্পূর্ণ ঘাটি আমাদের আগমণ সম্পর্কে জেনে গেছে! আমরাও হন্তদন্ত হয়ে ক্যাপ্টেন রাফির দিকে ছুটলাম। ক্যাপ্টেন রাফি গৌতমকে পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে!
"ক্যাপ্টেন রাফি, পেট্রোল কামিং ফ্রম সাউথইস্ট কর্ণার! ইট'স এ লার্জ নাম্বার!" এলেক্স বললো!
- ওকে ফাইল ১০০% আপলোডেড! এলেক্স ওপেন দ্য ব্যাক ডোর। সবার মনে আছে তো কি করা লাগবে?
- ইয়েস স্যার...
আমরা কন্ট্রোল রুম থেকে বের হলাম। মাটির সাথে মিশে চলা শুরু করলাম। "জেনারেল. ওসমান! আমাদের ব্যাক আপ লাগবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সবকিছু জোগাড়ের ব্যবস্থা করুন, ওভার।" জেনারেল বললেন, "কপি দ্যট ক্যাপ্টেন রাফি, ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দশ মিনিটের মধ্যে এখান থেকে সব বের হচ্ছে, টিল দেন সার্ভাইভ!"
আমি ক্যাপ্টেনকে বললাম, "স্যার দশ মিনিট খুব বেশি হয়ে যাচ্ছে!" ক্যাপ্টেন বললেন, "কিছু করার নেই।" এই প্রথম আমার মৃত্যুর ভয় হচ্ছে! যদি বাড়ি না পৌঁছাতে পারি! আমার সাত মাসের ছেলেটা যদি তার বাবার মুখ না দেখতে পারে!! ভবিষ্যতে কি হবে সেটা জানা নেই তবে ইতিহাস বদলে যেতে বেশি সময় নেবে না। আমার কাছে আমার বউ বাচ্চার একটা ছবি আছে। সেটা বের করে দেখতে লাগলাম। হঠাৎ দেখি সেখানে পানি পরলো! বুঝলাম আমি কাঁদছি। চিন্তা হচ্ছে ওদের নিয়ে।
"লেফট. বাবুল, ভেঙে পরবেন না, কত মিশন আমরা একসাথে জয় করেছি! একসাথেই চপারে বসে হাসতে হাসতে ময়দান থেকে ফিরে এসেছি। এবারও তাই করব। বিশ্বাস রাখুন নিজের উপর।" পিটার আশ্বাস দিল। আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করলাম সার্ভাইভিং!
"জেনারেল ওসমান. কি অবস্থা ব্যাক আপ এর?" "কপি দ্যট ক্যাপ্টেন রাফি, এভরিথিং ইন দি এয়ার! ওভার।"
"অল মেটস, কিপ গোইং!"
- স্যার, নাসিরকে তো পেলাম না! এলেক্স বললো।
ক্যাপ্টেন রাফি বললেন, "নাসির আমাদের আসার খবর পেয়ে আগেই পালিয়ে গেছে। তবে গৌতম আর মামুনকে পেয়ে আমি খুব খুশি!"
সামনে দেখা যাচ্ছে একটা জঙ্গল শুরু হচ্ছে। কিছুক্ষণ এখানে থেকে ট্র্যাপ বানিয়ে রেখে যাই নাসির বাহিনীর জন্য। "অল স্কয়াড, ক্যাপ্টেন রাফি বলছি, সময় কম, কিছু ট্র্যাপ বানিয়ে রাখুন নিরাপত্তার জন্য। আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমাদের টিম আসছে উদ্ধারের জন্য, ওভার।"
এমন সময় গোলাগুলি শুরু হল! "গেট ডাউন! গেট ডাউন!" ক্যাপ্টেন রাফির কমান্ড। "গুলি আসলো কোন দিকে থেকে?" গৌতম বললো, "উত্তর দিক থেকে স্যার!"
আবারও শুরু হল গুলিবর্ষণ! উত্তরদিক থেকে গুলিবর্ষণ হচ্ছে।
"ওয়েপন্স ফ্রি! রিটার্ন ফায়ার!!"
আমরা গুলি চালাতে লাগলাম। আমাদের অতিরিক্ত সাপোর্টের জন্য ক্যাপ্টেন রাব্বি এবং সার্জেন্ট ইউনুস আছেন। ফায়ারিং সাপোর্টের জন্য ক্যাপ্টেন রাফি বললেন, "ক্যাপ্টেন রাব্বি উই নিড স্নাইপার সাপোর্ট!"
"কপি দ্যট ক্যাপ্টেন রাফি।" ক্যাপ্টেন রাব্বি বললেন।
স্নাইপার সাপোর্টের কারণে মুহূর্তের মধ্যে এলাকা শান্ত হয়ে গেল! হঠাৎ করে একটা মাঝারি সাইজের ডাল আমার পায়ের পরলো! সাথে সাথে শুরু হল বিরাট যন্ত্রণা। গৌতম পিটার এসে ডালটা সরিয়ে দিল কিন্তু আমার অবস্থা খুবই করুণ! পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে। মনে হচ্ছে ফ্রাকচার হয়েছে! আমি গৌতমকে বললাম, "সরি গৌতম, আমাকে কষ্ট করে কাধে করে নিয়ে যেতে হবে তোমার।" গৌতম আমাকে কাধে নিয়ে চলতে থাকলো। আমি ওর কাধে থাকা অবস্থায় গুলি করে যাচ্ছি। ট্রেনিং এর সময় এটা আমাদের শেখানো হয় যাতে কোন প্রকার বিপদে পরলে কাউকে ফেলে না রেখে এবং যতটুকু সম্ভব ফায়ার করতে থাকা। কিচ্ছুক্ষণ পর হেলিকপ্টারের আওয়াজ পাওয়া গেল! তারমানে আমরা বাড়ির পথে যাচ্ছি। শত্রুপক্ষের কিছু সেনা আমাদের প্রায় কাছাকাছি এসে পরেছে। কিন্তু আমাদের ট্র্যাপের কারণে আর আগাতে পারে নি। মনে হল তারা আহত হয়ে পরে ছিল।
"লেফটেনেন্ট বাবুল, আমরা চলে এসেছি। ওইযে হেলিকপ্টার দেখা যাচ্ছে।" গৌতমের কথায় আমি একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিলাম। হেলিকপ্টারে উঠে আমরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ হেসে নিলাম। বেঁচে থাকার হাসি!!
৯ই জুন, ২০১০
বিকাল ৫.৪০ মিনিট,
ঢাকা
জেনারেল ওসমানের সাথে মিটিং করে নিলাম। নাসির সরাসরি জেনারেল ওসমানকে কল করেছে! ওপেন থ্রেড দিয়েছে সে যে আমাদের মধ্যে একজনকে খুব নির্মম ভাবে হত্যা করা হবে! কেউ তাকে বাঁচাতে পারবে না। আমি জেনারেলকে বললাম, "স্যার কি কারণে নাসির এমনটা বলছে?" তিনি উত্তরে বললেন, "সে শুধু বললো ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে মুখস্ত করতে!!"
আমি ভাবতে লাগলাম ইতিহাসের পাতায় এমন কি আছে? জেনারেলকে আবারও জিজ্ঞেস করলাম, "স্যার আর্মির ইতিহাসে কোন অবিচার হয়েছে নাকি কারও সাথে?"
হয়েছে বাবুল, সময়ের সাথে অনেক বড় বড় অফিসার অনেক অবিচার করেছে! কেউ মুখ লুকিয়ে কেঁদে সহ্য করে আর কেউ চাকরি ছেড়ে চলে যায়!!
তিনি আবারও বললেন, "নাসির টেররিজম সাথে জড়িত আছে বলে আমার মনে হয়। তবে আমার মনে হয় নাসির একা নয়। নাসিরের দ্বারা এত বড় বড় অ্যাটাক করা সম্ভব নয়। কেউ না কেউ তার সাথে আছেই।"
এরপর আমি গৌতমকে ডাকলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলাম কাকে কাকে দেখছো সেদিন? সে বললো দুইজন ছিল, একজন হয়তো নাসির হবে কারণ একজন চুপ ছিল আর কথা বলে নি যদি তার কণ্ঠ চিনে যাই! আর আরেকজন ছিল যে আমার সাথে কথা বলেছে এবং তার হাতে আরবী অথবা উর্দু হরফে কিছু একটা লেখা আছে। কণ্ঠ সুন্দর কিন্তু শরীরে প্রবল জোর!
মামুনকে ডাকলাম। মামুন বললো, "আমি তো প্রথমে ভেবেছিলাম আপনারাই হবেন কিন্তু ওরা সবাই যখন...." আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, "ওরা কয়জন?"
ছয়জন।
তারপর...?
ওরা একেরপর এক হেল্ম, গ্লাস খুলে ফেললো! যে লিডার ছিল সে অনেক উচা লম্বা আর ভালই সুদর্শন!
ক্যাপ্টেন রাফি বললেন, "তার চেহারা মনে আছে?" মামুন হ্যাবোধক উত্তর দিল এবং বললো বাকিদের চেহারা তার মনে নেই।
"বাবুল, জলদি স্কেচ আর্টিস্টকে নিয়ে আসো, আগে স্কেচ বানাই তার, দেখি কোন সে বীর পুরুষ..."
পরেরদিন,
যে লোকটা মামুনের সামনে ছিল অর্থাৎ যার স্কেচ দরকার ছিল সেটা আমরা পেয়ে গেছি। ক্যাপ্টেন রাফি এবং জেনারেল ওসমানকে দেখানো দরকার। তাদেরকে স্কেচ দেখানো জন্য নিয়ে গেলাম। স্কেচ দেখে জেনারেল ওসমান অবাক হয় গেলেন!
"ক্যাপ্টেন নাজিম!!! এটা কিভাবে সম্ভব?" জেনারেল ওসমান মামুনকে বললেন, "তুমি নিশ্চিত যে এই ব্যক্তিই ছিল??"
মামুন হ্যা সুচক জবাব দিল কিন্তু জেনারেল ওসমান চিন্তিত হয়ে গেলেন! ক্যাপ্টেন নাজিম মারা গেছেন আজ থেকে নয় বছর আগে। তিনি সুইজারল্যান্ডে মারা যান। তিনি অত্যন্ত সৎ ছিলেন কিন্তু মৃত্যুর পর জানতে পারি তিনি ছিলেন স্পাই!! আমাদের তথ্য অন্ডারওয়ার্ল্ডে পাচার করেছেন!"
তার মানে ক্যাপ্টেন নাজিম মারা যান নি! এখনও জীবিত তিনি। আমার আর্মি জয়েনের পর থেকে যেসব ঘটনা এবং অপারেশনে ছিলাম সেসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে বাসায় গেলাম। হয়তো আমাদের মধ্যেই কেউ ক্যাপ্টেন নাজিম এর সাথে জড়িত। কিন্তু যেটা বুঝতে পারছি না সেটা হল ক্যাপ্টেন নাজিম কেন নাসিরের সাথে হাত মিলাবেন! বারান্দায় বসে বসে ভাবছি কি এমন ইতিহাস হতে পারে যার কারণে নাসির ইতিহাসের কথা বলে হুমকি দিল।
চলবে..
লেখা: Dorponer Protibimbo
©somewhere in net ltd.