নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রেমিকার চিরশত্রু
দ্বিতীয় পর্ব
[প্রথম পর্বের লিংক→ Click This Link ]
- আচ্ছা থাক, বাদ দেন।
- আরে জোক্স করছিলাম, বলেন
- আসলে আপনার একটা ছবি যদি দিতেন তাহলে...
- তাহলে কি?
- না মানে একটু খু্শি খুশি লাগতো।
খানিক নিরবতা চলতে থাকে উভয় পাশে। সাগর ধরেই নিয়েছে ছবি দিবে না! হঠাতই মেসেঞ্জারের টুংটাং শব্দ বেজে উঠে! খুশিতে সাগরের মন বেশ টইটম্বুর হয়ে আছে!
ছবিটায় একনজরে তাকিয়ে আছে সাগর! শুধু মুখটা দেখেই পুরোটা কল্পনা করে নিচ্ছে কেমন হবে সেই অপরিচিতা!!
এখানে তো অপ্সরীর মত লাগছে তাকে! না জানি সামনাসামনি সে কতটা সুন্দর হবে!
- কিছু বলছেন না যে?
নওশীনের অল্পস্বল্প রাগ হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর মেসেঞ্জারের টুংটাং আওয়াজ শুনতে পেল,
- কিভাবে তারিফ করবো বুঝতে পারছি না, তবে আমার দ্বারা এই নুরানি চেহারার তারিফ সম্ভব হবে না!
- পাম দিতে হবে না। হুহ..
- আরে না, সত্যি বলছি আমি যেমনটা ভেবেছিলাম তারচেয়ে হাজার গুণ বেশি সুন্দর আপনি!!
নওশীন একটু একটু লজ্জা পাচ্ছে। বিছানার এপাশ থেকে ওপাশ গিয়ে বা বালিশ জরিয়ে ধরে একটু একটু হাসছে। আবারও মেসেজ দিল,
- কি করেন?
-সেই একই, আপনাকে নিয়ে ভাবছি!
আবারও নিরবতা নওশীনের মাঝে! কোনো টপিক খুঁজে পাচ্ছে না বলার মত।
- আচ্ছা বাস্তবেই এটা কি আপনি?
- সন্দেহ হচ্ছে?
- একটু একটু হচ্ছে। আসলে ভাবি নি তো।
- ঠিক আছে ভাবুন তাহলে, টেক কেয়ার, বাই এবং শুভ রাত্রি যদিও এখন শেষ রাত।
একটু একটু করে নওশীন অপরিচিতর প্রতি দূর্বল হচ্ছে কিন্তু বলতে পারছে না। নাটক সিনেমার মত সেও পন করে নিয়েছে মনের কথা তাকে কখনও জানাবে না। সে যে খুব বাজে ভাবে মুখ থুবড়ে প্রেমে পরেছে!
কলেজের প্রথম ক্লাসে লেট করে ফেলেছে নওশীন! কারণ তো একই, রাত জেগে মেসেজিং!
-ম্যাম আসতে পারি?
ম্যাডাম চশমাটা একটু নাকের সাথে ঠেসে নিয়ে দেখলো!
- কে তুমি?
ম্যামের এই প্রশ্নে সারা ক্লাসে হাসির রোল পরে গেল!
- ক্লাস সাইলেন্ট...
- সরি ম্যাম, রিক্সা পেতে লেট হয়ে গেছে!
- ঠিক আছে, এসো।
ক্লাসে ঢুকেই একদম শেষ দিকে বসলো। চোখ ভাঙা ঘুম আসছে নওশীনের। ভাবছে পরের একটা ক্লাস করে চলে যাবে। বামে তাকিয়ে দেখে সাগর ঘুমে ঝিমাচ্ছে! রাহাত তো লো বেঞ্চে ব্যাগকে বালিশ বানিয়ে ঘুমিয়েই পরেছে! ভাগ্যিস ম্যাডাম পিছনে আসে না, না হলে আজ পিছন সারির অবস্থা খারাপ ছিল। একসময় ম্যামের ক্লাস শেষ হল। হঠাৎ আকাশে মেঘের গর্জন শুরু হল। দেখতে দেখতে ঝুম বৃষ্টি! নওশীন বাইরে এসে বৃষ্টির পানিতে হাত ভিজিয়ে নিল। পদার্থবিজ্ঞান ক্লাস সম্ভবত হবে না। ক্লাসে বসে বিরক্ত হওয়ার চেয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখা ভাল। সাগরও বাইরে আসলো, এসে দেখে নওশীন বৃষ্টির পানিতে হাত ভিজাচ্ছে! আশেপাশে দারানোর মত জায়গা নেই। বাধ্য হয়েই নওশীনের পাশে দারালো সাগর। আসলে কিছু একটা বলার জন্য এসেছে সে কিন্তু বলা হচ্ছে না। একটু দম নিয়ে ডাকলো,
- নওশীন!
এতক্ষণে নওশীনের ধ্যান ভাঙলো! একটু ইতস্ততবোধ করলো সে,
- কিছু বলবে?
- হুম,
- কি?
- আসলে যা হয়েছে সেটা ইচ্ছাকৃতভাবে হয় নি।
- কোনগুলো?
সাগর জানে নওশীন সবই জানে তবুও সে না জানার ভাব করছে!
- আমি জানি তুমি সবই জানো কিন্তু অভিনয় করতেছ।
নওশীন শুনে যাচ্ছে কিন্তু কিছু বলছে না।
- আমি ইচ্ছে করে কল করি নি তোমার নাম্বারে। বিশ্বাস কর, প্লিজ।
- আচ্ছা, বুঝেছি, মানলাম। হয়েছে?
সাগর কিছুক্ষণ নওশীনের দিকে তাকিয়ে থাকলো। এক অসীম সততা সাগরের চোখে মুখে ভাসমান কিন্তু বুঝাতে পারছে না।
- ধন্যবাদ।
এই বলে ক্লাসে চলে গেল! দারালো না সেখানে। এরপর থেকে নওশীনের সামনে সাগর আর আসে না। একটু চোখাচোখি হলে অন্যদিকে চলে যায়। নওশীন যেন তাকে দেখতে না পারে সে জন্য হিসাব করে এমন বেঞ্চে বসে যেখান থেকে তাকে ভালভাবে দেখা যাবে না। নওশীন ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছে কিন্তু আমল করে নি। দিন দিন সাগর পিছন থেকে পিছনের বেঞ্চের ছাত্রতে পরিণত হল। বাসায় এসব কিছুই জানায় না। মাঝে দুইবার ওর আব্বু এসে দেখে গেছে তাকে। পরীক্ষার সময় মোটামুটি মানের রেজাল্ট করে খুশি থাকে। একদিন রসায়ন নোটের জন্য লাইব্রেরীতে ভীড় লেগে আছে! শত শত ছেলেমেয়ে একই নোটের পিছনে লেগে আছে। নওশীন ভীড় দেখে ভিতরে ঢুকার সাহস পাচ্ছে না। অথচ তিনদিন পর ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা! অপেক্ষায় আছে কখন ভীড় কমবে।
- এই ভীড় শেষ হবে না, আর শেষ হলে নোট পাওয়া যাবে না।
সাগরের কথায় নওশীনের চেহারায় একাকিভাব বিরাজ করছে। একটা নোট দিয়ে বললো,
- এখনও তিন দিন আছে পরীক্ষার। আমার হাতে একদিনও ছিল না।
এতদিনে নওশীন সাগরের দিকে একটু তাকালো। সাগর আবারও বললো,
- ভিতর থেকেই বুঝতে পারি তুমি কি নিয়ে ভাবছিলে তাই জোর যবরদস্তি করে একটা বারতি নোট নিয়ে এলাম। নাও এটা।
নোট নিয়ে ধন্যবাদ দিতে যাবে তখনই সাগর বললো,
-আর আমি সরি, আবারও তোমার সামনে এসে পরেছি! বাই, টেক কেয়ার...
নওশীনের হঠাৎ সেই অপরিচিতর কথা মনে পরলো! অপরিচিতর কণ্ঠ না শুনলেও একটু ভেবে নেয়া যায় কেমন হবে তার আওয়াজ। "বাই, টেক কেয়ার" কথাটা নওশীন মনে মনে যেভাবে উচ্চারণ করে অপরিচিত কে মেসেজে লিখতো ঠিক সেরকম ভাবেই সাগর আজ তাকে সেই কথাটা বললো। মনে শুধু একটা প্রশ্ন, অপরিচিত নামের সেই আইডিটা সাগরের না তো? আতকে উঠে মন, উদ্বিগ্ন হয়ে যায় সে। একের পর এক প্রশ্ন জেগে উঠে, কে হতে পারে সেই অপরিচিত? হাতের নোট বটিয়ে নিয়ে ব্যাগে ঢুকালো নওশীন। সারাটা পথ রিক্সায় সাগরের শেষ কথাটা মাথায় ভনভন করে ঘুরছে। তবে সাগর কখনও নওশীনের দিকে ভালভাবে তাকায় নি, আড়ালে দেখেছে কিনা জানে না তবে নওশীন জানে সাগর এরকম কিছু করে নি। বেশি করেছে তো নওশীন, উঠতে বসতে সাগরকে লজ্জা আর অপমান করেছে!
দিন চারেক পার হয়ে গেছে, সাগর নওশীনের সামনাসামনি বা দেখা করছে না এবং কথাও বলছে না। বান্ধবীরা আন্দাজ করতে পেরেছে নওশীনের উদাসিনীতা বা চিন্তিত অমনোযোগী ভাব। কিন্তু বরারবের মতই এরিয়ে যায় নওশীন, যেন কিছুই হয় নি! দেড় বছরের কলেজ সময়ে অনেককেই দেখেছে পাল্টাতে বা সুযোগ খুঁজতে বা স্বার্থপরের মত পাশ কাটিয়ে চলে যেতে। সাগরের সাথে কিছু কথা বলা দরকার কিন্তু ডাকার সাহস হচ্ছে না। অপরিচিতর সাথে মেসেজিং হচ্ছে কিন্তু জিজ্ঞেস করতে ভয় লাগছে। সাগর আর অপরিচিত এই দুজনের মাঝে মিল খোঁজার চেষ্টা করতেছে কিন্তু মিল অমিল দুইটাই পাচ্ছে সে। অনেক সাহস জোগাড় করে সাগরের কাছে গিয়ে বললো,
- তোমার সাথে কথা আছে, সময় হবে?
সাগর অবাক হয়ে গেল! নওশীন তার সাথে কথা বলার জন্য এসেছে!
- হুম, হবে।
ক্লাস শেষে একটু বস।
ক্লাসের শেষে,
- সাগর তুমি কি সত্যিই সেদিন ইচ্ছা করে কল কর নি?
- আমাকে সেদিন সম্পূর্ণ কথা বলতে দিলে আজ এ প্রশ্ন করতে হতো না
- এখনের উত্তর দাও
- হুম, সজীবের কাছে নাম্বার চাইছিলাম, সে তোমার বাসার নাম্বার দিছে, আমি জানতাম না সেটা তোমার নাম্বার নাকি! আর..
- আর কি?
- সেদিনের কাগজ ছুড়ে মারাটা। সেটা আজাদ আর শাকিলের কাজ। প্রত্যেকটা ঘটনাতেই আমি পরিস্থিতির শিকার হলাম।
নওশীন চুপচাপ শুনছিল কথাগুলো। সাগর আবারও বললো,
- তুমি একজনের কাছে সাহায্য চাইলে দশজন আসবে। একটু হেসে বলবে আমার এই লাগবে ওই লাগবে, ছোট থেকে শুরু করে বুড়া সবাই লাইন দিবে তোমার জন্য।
- ক্লাস কর কেমনে?
- এভাবেই
- যদি একটা প্রশ্ন করি সঠিক উত্তর দিবে?
- যদি দেয়া যায়...
নওশীন কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
- সময় কাটাও কিভাবে?
সাগর কিছুটা ভ্রু কুঁচকে অন্যদিকে তাকিয়ে নিল।
- এটাই প্রশ্ন?
- হুম,
- আছে একজন, ফেসবুকে।
- ফেসবুকে!!! মেয়ে?
সাগর চমকে উঠলো!
- তুমি কিভাবে জানো?
- আরে তুমি নিশ্চিত ফেসবুকে অপরিচিত কোনো ছেলেদের সাথে চ্যাটিং করে সময় নষ্ট করবা না?
- হুম তাও ঠিক, কিন্তু...
- আরে এটা লজিক। আচ্ছা নাম কি মেয়েটার?
- নাম জানি না, চেষ্টায় আছি।
সেদিন টুকটাক কথা হল দুজনের মাঝে। ক্লাস থেকে বের হয়ে নওশীন ছোট কাগজে সরি লিখে দিল সাথে একটু হাসি! সাগরের যত রাগ ছিল সেটা এক সরিতেই গলে গেল! ছোট শব্দেও কত কিছু পরিবর্তন হয়।
সাগরের কলেজের সময় কাটে ক্লাস আর নওশীনের সাথে। অপরিচিতার ব্যাপারে নওশীনকে অনেক কিছু জানিয়েছে। একটু একটু করে মনের সব লুকানো কথা শেয়ার করে নওশীনের সাথে। নওশীন ভেবে পায় না যে অপরিচিত ব্যক্তির সাথে তার মেসেজিং হয় সে কে? আসলেই কি সে সাগর নাকি অন্যকেউ? অপরিচিতর কোন ছবি নেই তার কাছে। মেয়েরা ছবি শেয়ার করে না প্রাইভেসির ব্যাপার থাকতে পারে কিন্তু ছেলেরা কেন ছবি দিবে না বা নাম জানতে চাইলে নাম বলবে না! আজব বিষয়। নওশীন খুব সাবধানতা হয়ে সাগরের সাথে কথা বলে। সে চায় না অপরিচিত ব্যক্তিটি তার বন্ধু সাগর হোক।
মাঠের গোলপোস্টের বারে হেলান দিয়ে বসে আছে সাগর। নওশীন হাপাতে হাপাতে এসে বললো,
- তুমি এখানে আর আমি কত খুজছি তোমাকে..
- ঝালমুড়ি খাবে?
- হুম চলে
সাগর ঝালমুড়ি নিয়ে একটা নওশীনকে দিল। নওশীন সাগরের গোমড়া মুখ দেখে বললো,
- কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?
- হুম, গত পরসু রাতে অপরিচিতার সাথে ঝগড়া হইছে।
- কি নিয়ে?
- বছরের বেশি হয়ে যাচ্ছে ওর সাথে কথা হচ্ছে, একটু দেখা করা যায় কি না বললাম,
- কি বলেছে সে?
- কি আর, মানা করছে আর রাগারাগি।
- আচ্ছা, অপরিচিতার ছবিটা কি দেখতে পারি আমি যদি কিছু মনে না কর?
- আরে কি যে বল না। দেখাচ্ছি
নওশীন ছবিটার দেখলো। সে বিশ্বাস করতে পারছে না এটা আসলেই সাগরের অপরিচিতা কি না!
- এটা যদি আসল না হয়? যদি অন্য মেয়ে হয়?
- নাহ, আমার বিশ্বাস এমনটা হবে না।
- দেখ, তুমি খুব সহজ সরল সোজা ছেলে, আমার মত হল তুমি যেওনা, দেখা গেল তোমার টাকা মোবাইল বা কোন ক্ষতি করে দিল! আজকাল কারো বিশ্বাস নেই।
নওশীনের কথাটা হেলা অবহেলায় এড়িয়ে গেল সাগর। তার বিশ্বাস এমনটা হবে না, অন্য কোন মেয়ে হবে না।
চারদিন হল অপরিচিতার সাথে মেসেজিং হয় না সাগরের। টেবিলে বসে বসে অপরিচিতার কথা ভাবছে। এমন সময় মোবাইল বেজে উঠল সাগরের,
- হ্যালো আব্বা কেমন আছো?
- ভালই আছি, তুই কেমন আছিস?
- এইতো মোটামুটি।
- কোনো সমস্যা হইছে আব্বা? সাগর আচ করতে পারছে কিছু একটা হয়েছে।
- বাসায় একা একা ভাল লাগে না রে বাপ। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন।
উভয় পাশে নিরবতা চলছে! সাগর ছাড়া যে বাসায় কেউ নেই ওর আব্বাকে দেখার মত। সাগর একটু কাপা কণ্ঠে বললো, "ট্রান্সফার নিয়ে এদিকে চলে আসো আব্বা, মেস আর পছন্দ হয় না আমার....!"
এক প্রকারের হাহকার বুক চিরে বের হয়ে আসে বাপ ছেলের ভিতর থেকে। এতদিন কেউ কাউকে বুঝতে দেয় নি কিন্তু ধৈর্য্যের শেষ সীমায় কেউ আর ধরে রাখতে পারলো না!
- চেষ্টা করবো, আমরা একটা বাসা ভাড়া করে থাকবো, কেমন?
- হুম।
- কিছু বলবি?
- ওষুধ গুলো ঠিকমত খাবে আর টেনশন করবে না।
- ঠিকমত খেয়ে নিস।
অনেক মাস পর পরিতৃপ্তির সাথে কমান্ডর সাহেবের সাথে কথা বললো সাগর। সময় সুযোগ হত না সাগরের বাবার। কোনো না কোনো কাজে তিনি ব্যস্ত থাকেন। তার কথা ভাবতে ভাবতে ফেসবুকে ঢুকে দেখে Messages(1) লেখা। বুঝে নিল যে মেসেজ কে দিয়েছে!
- সরি
মেসেজটি পেয়ে খানিকটা অবাক হল সাগর। অপরিচিতা মেসেজ দিয়েছে সেটাও সরি বলে!
- না ঠিক আছে, আমারই ভুল আমি একটু বেশিই বারাবারি করে ফেলছিলাম।
- কি করেন?
- আব্বুর সাথে কথা বললাম।
- আপনার আব্বু কি করে?
- কমান্ডর, সেনাবাহিনীর।
- ওহ, ভাল।
- কি করেন?
- আপনার কথাই ভাবছিলাম। খাতায় কলম দিয়ে দাগ দিচ্ছিলাম।
সাগরের ঠোটে হালকা হাসি ফোটে। অপরিচিতার মেসেজে এক প্রকার জাদু আছে, মেসেজ পড়েই কল্পনা করা যায় তাকে দেখতে কেমন লাগবে। প্রহর গুনছে সাগর অপরিচিতার সাক্ষাতের, শুধু অপেক্ষা। কয়েকদিন মেসেজ না হওয়ায় জমানো কথাগুলো বিস্ফোরিত হয়ে অপর প্রান্তের মেসেঞ্জারে টুংটাং ঘন্টা বাজাচ্ছে।
নওশীনের আজ জন্মদিন! স্কুল, কলেজ, প্রাইভেট এর অনেক বন্ধুই শুভেচ্ছা জানিয়েছে কিন্তু সেই অপরিচিত কিছুই জানায় নি। সারা রাত অনলাইনে ছিল কিন্তু একটি মেসেজও দেয় নি। ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেল এরজন্য! বাসার সবাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। বড় ভাই কানন তো তার জন্য বড় সাইজের টেডিবিয়ার নিয়ে এসেছে। সকালে কোন রকম খাওয়া দাওয়া করে কলেজের উদ্দেশ্য রওনা দিল সে। পথে সাগরের সাথে দেখা নওশীনের,
- শুভ সকাল
- হুম,
- ওহ শুভ জন্মদিন, জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা, হাল্কা পাতলা ট্রিট দিও হি হি হি
- খুব খুশি মনে হচ্ছে?
- হুম, জিজ্ঞেস কর কেন?
- কেন?
- তিনটা কারণ। প্রথম, আব্বু সামনের মাসে ট্রান্সফার নিয়ে এখানে আসছে। দুই, আজ তোমার জন্মদিন। তিন, অপরিচিতা দেখা করার জন্য রাজি হয়েছে!!
- ভাল..
সাগর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
- নওশীনের শর্টকাট উত্তরে মনে হচ্ছে নওশীন দেবদাস হচ্ছে!
- ফালতু প্যাঁচাল আর বকবক কর না তো
সাগর অনেকটা অবাক হল! এমনভাবে কথা বলার কারণ?
- কোনো সমস্যা? শেয়ার করা যাবে?
নওশীন জবাব দিচ্ছে না।
সারাটা রাস্তা নওশীনের পিছুপিছু আসলো কিন্তু উত্তর পেল না। ক্লাসে ঢুকতেই একের পর ছেলেমেয়ে নওশীনকে উইশ করে যাচ্ছে। এদের চাপে সাগর এক কর্ণারে পরে গেল! আড্ডার মধ্যমণি হয়ে উঠল নওশীন! ক্লাসে একদল সিনিয়র এসে উইশ করে গেল নওশীনকে। সাগর দেখেই গেল কি হচ্ছে! পরে ক্লাসে সাগরের সাথে আর কথা হল না নওশীনের। কলেজে শেষে বাসায় ফিরে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ঘুমের জগতে প্রবেশ করলো সে। সেই দুপুরে আর কাননের খাওয়া হল না! সে না খেয়েই চলে গেল।
রাতে ফেসবুকে লগ ইন করে দেখলো অনেক উইশ এসেছে! কিন্তু অপরিচিতর পক্ষ থেকে কোনো উইশ আসে নি। আইডি ডিএক্টিভ করতে যাবে এমন সময় মেসেঞ্জারের শব্দে ঘোর কাটলো নওশীনের
- জানি অনেক রাগ করে আছো, সারাদিন অপেক্ষায় ছিলে একটা মেসেজের আর সেটাও এল না! যাক, শুভ জন্মদিন। এত্তগুলা শুভ কামনা আর এক বক্স চকলেটের শুভেচ্ছা!
নওশীন অল্প স্বল্প রাগ দেখালেও অধিক মাত্রায় খুশি হয়েছে। ইচ্ছা হচ্ছে মেসেজের রিপ্লাই এখনই দিয়ে দিক কিন্তু সেটা করলো না! এর মাঝে খেয়াল করে নি অপরিচিত তাকে তুমি বলে সম্বোধন করেছে!
- আমি কিন্তু এখনও খাই নি..
বড় ভাই কানন দরজায় দারিয়ে বললো
- আরে ভাইয়া, কখন এলে? নওশীন তার ভাইয়ের আগমনে একটু চমকে উঠে!
আর দেরি না করে ভাইয়ের সাথে খেতে চলে গেল। অপরিচিত একের পর এক মেসেজ দিচ্ছে কিন্তু রিপ্লাই দাতার কোনো খবর নাই।
মেস ছেড়ে সাগর এখন ওর বাবার সাথে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। কলেজ ছেড়ে বাকি সময়টা বাবার সাথেই কাটে যার ফলে নওশীনের সাথে যোগাযোগ একটু কমে যায়। আর নওশীনের সেদিনের ব্যবহারে সাগর খুব কষ্ট পেয়েছে। শুক্রবার হলে সকালে কমান্ডর সাহেবের সাথে বাজারে যাওয়া আর একসাথে জুম্মার নামাজে যাওয়া সাগরের নেশা হয়ে দারিয়েছে। ভাল ছেলের গুনাবলি অর্জনের চেষ্টায় আছে। দিন গুলো ভালভাবে কেটে যাচ্ছে। আগামীকাল কলেজ বন্ধ। অপরিচিতার সাথে দেখা করার কথা আছে, সেই কাঙ্ক্ষিত এসে পরেছে। আগামীকালের প্লান করতে দুইজন ব্যস্ত,
- অপরিচিতা..
- হুম
- কাল তো দেখা হচ্ছে?
- কেন? আপনার সন্দেহ হচ্ছে?
- ঘুম আসছে না আপনার দেখা পাওয়ার কথা ভেবে! মনে মনে পাগল পাগল ভাব বিরাজ করছে সাগরের।
- আচ্ছা আপনার লাল কোনো ড্রেস আছে?
অপরিচিতার এই প্রশ্নে সাগর লাফ দিয়ে উঠে আলনা, আলমারি, ওয়ারড্রব ঘাটা শুরু করলো! অনেক খুজে খুজে লাল কালোর মিশ্র কালারের একটা শার্ট খুঁজে পেল। ধুয়ে ওমনি রেখে দিয়েছিল যার ফলে কুঁচকে গেছে! আয়রণ করলে ঠিক হয়ে যাবে।
- হুম আছে
- সেটা পড়ে আসবেন কাল বিকালের দিকে, আপনার সাথে দেখা হচ্ছে।
সাগর বুঝি এটাই শুনতে চেয়েছিল! মেসেজে অক্ষর গুলোর ঝনঝন শব্দ কানে শুনা না গেলেও ভেবে নেয়া যায় কেমন আগ্রহ নিয়ে বলেছে!
- ঠিক আছে, এখন ঘুমান কাল দেখা হবে!
সকাল তো হতেই চাচ্ছে না। বিছানার এপাশ ওপাশ এমনকি সারা বিছানা ঘুরেও ঘুম এল না! চোখে যখন ঘুম ঘুম ভাব তখন ভোরের আলো আর ঘড়ির কাটা ৫টা ছুইছুই! অবশেষে কখন যে সাগর ঘুমিয়ে গেল টের পেল না।
চলবে....
©somewhere in net ltd.