নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রেমিকার চিরশত্রু
জনাব মতি মুন্সির বাড়িতে সকাল থেকে রান্নার বিশাল আয়োজন চলছে! আর মতি মুন্সি কখনও বাজারে বা রাস্তায় বা চায়ের দোকানে গিয়ে সময় কাটাচ্ছেন! তার আর সহ্য হচ্ছে না! সহ্য হবেই বা কেন? তিনি অপেক্ষা করছেন কখন বিকাল হবে আর কখন তার প্রিয় মুখগুলো দেখতে পাবেন। তার আগে মতি মুন্সির সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। উনার পুরো নাম মোহাম্মদ মুন্সি মতিউর রহমান! রিটায়ার্ড গভর্নমেন্ট গেজেটেড অফিসার! চার ছেলে ও দুই মেয়ের এক বিশাল পরিবার। মতি মুন্সির দুই ভাই ও এক বোন রয়েছে! তাদের মধ্যে উনিই সবার বড়। তার ছোট বোন থাকে খুলনায়, নাম সাবিনা রহমান আর উনার স্বামীর নাম আপেল রহমান। ছোট ভাই ইমতিয়াজ থাকে চট্টগ্রাম! মতি মুন্সি আর উনার ভাই রতন একসাথে থাকেন সিরাজগঞ্জ। রতন মুন্সির একটাই ছেলে। নাম আলী আকবর। আফিল গ্রুপে বড় পদে নিয়োজিত আছে সে। মতি মুন্সির স্ত্রী গত হয়েছেন সাত বছর হয়েছে। প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও এখন তিনি পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন! এখনও তার কষ্ট হয় কিন্তু সেটা মনের মাঝে চেপে রাখতেই বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যাক সেসব কথা। পরিচয় করিয়ে দিই তার ছেলে মেয়ের সঙ্গে!
প্রথমে বড় ছেলে আরিফ, পেশায় সরকারী চাকরিজীবী, লোক প্রশাসনে চাকরি করে। বিয়ে করেছে এক বছর হল, এখনও কোনো সন্তান হয় নি তাদের। মেজ ছেলে সৈকত সিলেটে থাকে। শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি তে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে বের হবে ইনশাআল্লাহ। এই দুই ছেলের পর আসছে উনার আদরের কন্যা মেহেরুন। মতি মুন্সির দুই মেয়ের মধ্যে মেহেরুন হল শান্ত আর অনেক গুণে গুণান্বিত! লেখাপড়া আর অনার্স মাস্টার্স শেষ করেছে রংপুর কারমাইকেল কলেজে। মেয়েটার বিয়ে দিয়েছেন তিন বছর হল। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে মেহেরুনের সুখি পরিবার! মেহেরুনের স্বামী বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত আছেন। সবমিলিয়ে ভালই বেতন পায়। আর থাকে ঢাকাতেই। এরপর আসছে সেজ ছেলের কথা। সেজ ছেলের নাম আশরাফ। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ালেখা করছে। সবশেষে আসছে ইমন আর আয়না। মতি মুন্সির সবচেয়ে আদরে আদরে বাদর হওয়া ছোট সন্তান। ইমন আর আয়না দুই যমজ ভাই বোন। বংশের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী এরা দুইজন। এদের মেধার কারণে এদের ফ্রেন্ড সার্কেল এবং ওদের চেয়ে ছোট কাজিনদের কতই না কথা শুনতে হয়! ইমন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছর কম্পিউটার সাইন্সে চান্স পেয়েছে আর আয়না চট্টগ্রাম মেডিকেলে!
.
.
.
১৩দিন আগে,
.
আয়না আর ইমন কর্ণফুলী নদীর ধারে বসে আছে। ফুচকা খেতে খেতে ইমনকে বললো, "ভাইয়া এবার একটা কাজ করলে কেমন হয়?" "কি কাজ?"
"আচ্ছা আমরা সবাই মানে আমি তুই, সেজ ভাইয়া, মেজ ভাইয়া, বড় ভাইয়া আমরা সবাই যদি একই দিনে রওনা দিই বাড়ি যাওয়ার জন্য? ভালই আনন্দ হবে তাই না?"
ইমন খাওয়া বন্ধ করে বলল, "মাথার বুদ্ধিশুদ্ধি সব গেছে নাকি? আমি তুই আর সেজ ভাইয়া বাদে সবাই বাড়ি ঈদ করবে আর আমাদের তিনজনকে রাস্তায় জ্যামে থেকে থেকে ঈদ করা লাগবে। সিরাজগঞ্জ ঢাকার অনেক কাছে তাই যখন তখন যাওয়া আসা করা যায় কিন্তু চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট থেকে অনেক দুরে!"
আয়না আবার বললো, "তো কি হয়েছে? আমরা তাদের একদিন আগে রওনা দেব। আমরা রাতে রওনা দেব আর বাকিরা সকাল দুপুর যখন ইচ্ছা রওনা দিবে!"
"রাস্তায় যে আপনি বমি করেন সেটা কি ভুলে গেছেন?"
"আরে ধুর ভাইয়া, বাড়ি যাওয়ার সময় আমার এসব মনেই থাকে না!" এই বলে হাসতে থাকে আয়না!
"সবই করা যাবে, সবাইকে ম্যানেজ কর।..... ও আর তাছাড়া আমাদের ছূটি আগে হবে আর যারা চাকরিজীবী তাদের ছুটি হবে ঈদের দুই তিনদিন আগে! সো, টাইমে মিলবে না....!"
"টাইম মিলানো আমার দায়িত্ব! ওকে?"
"কিন্তু....." ইমনকে আর কিছু বলতে দিল না আয়না।
হলে পৌঁছে আগে খাতা কলম নিয়ে বসলো আয়না! হিসাব করছে কে কখন রওনা দিলে কখন পৌঁছাবে! গুগল ম্যাপে ট্রিপের টাইম দেখে প্রায় দুই ঘন্টা হিসাবে ব্যয় করে মিলিয়ে নিল। সাথে সাথে কল দিল ছোট চাচাকে। কুশলাদি বিনিময় করে সোজা জিজ্ঞেস করলো কবে যাবেন! চাচার সোজা উত্তর ১০ তারিখ! এক পক্ষের সাথে কথা বলা শেষ! এবার কল করলো বড় ভাইকে! বড় ভাই কেটে ব্যাক করলো।
"কি রে খাটাস কেমন আছিস?"
"কিইইইইইইইইইইই???? আবার খাটাস?"
"আরে এমনি বললাম, কেমন আছিস?"
"ভাল, শোন কবে রওনা দিবি?"
"এই সর্বনিম্ন ৯ তারিখ আর সর্বোচ্চ ১১ তারিখ!"
"বাসে, ট্রেনে নাকি অফিসের গাড়িতে?"
"বাসেই হবে! কেন?"
"কিছুনা রাখি....."
হ্যা হ্যালো.......
আর কিছু বলতে দিল না! একে একে সবাইকে কল করে জেনে নিল কে কে কখন রওনা দিবে। হিসাব করে দেখে সবাই ১০ তারিখের মধ্যেই রওনা দিবে! ঠিক আছে ১০তারিখই ডেট ফিক্সড! আর আমি, ছোট ভাইয়া, সেজ ভাইয়া, ছোট চাচ্চু একদিন আগে রওনা দেব! ভাবতেই আয়নার মন খুশিতে নেচে উঠল! হঠাৎই ভাবলো আব্বুকে জানানো হয় নি! দেরি না করে সাথে সাথে আব্বুকে কল করে আয়না,
"মা আমার কেমন আছিস?"
"আছি ভালই, তুমি?"
"তোদের ছাড়া যে আমার একদমই ভাল লাগে না!"
"নেও!!!! আবার ইমোশনাল!!!!"
"আচ্ছা ঠিক আছে, তোদের ছাড়া যে আমার কত ভাল লাগে!!!"
"আব্বুউউউউউউ!"
মতি মুন্সি হাসতে হাসতে বলে, "ইমোশনাল হলেও দোষ, ভাল থাকলেও দোষ তো কি করবো এখন?"
"বাদ দাও, আচ্ছা আমরা সবাই যদি একসাথে দশ তারিখ আসি তাহলে কি কোনো সমস্যা হবে?"
আয়না ওর প্ল্যান সম্পর্কে সবকিছু জানালো! কিন্তু মুন্সি সাহেবও ছোট মেয়েকে বুঝালেন কিন্তু বুঝতে নারাজ! অবশেষে মেয়ের জিদের কাছে হার মানলেন।
"আচ্ছা ঠিক আছে, আমি সবাইকে বলে দেব।"
ফোন রেখে দিয়ে হাসছেন মুন্সি সাহেব! রাস্তায় বুঝবে কত ধানে কত চাল!
.
অনেক রিকুয়েস্ট আর জিদের পর আয়না সবাইকে রাজি করিয়েছে যেন তারা একই সাথে রওনা দিয়ে একসাথে গ্রামে পৌঁছাতে পারে। এখন সেটাই দেখার বিষয় যে কে কখন গ্রামে পৌঁছে আর আয়নার হিসাব কেমন ফলাফল দেয়!
.
৯ই সেপ্টেম্বর
এ কে খান, চট্টগ্রাম
সময় রাত ১০টা
.
ইউনিক কাউন্টারে বসে বাসের অপেক্ষা করছে আয়না, ইমন আর তাদের ছোট চাচা ও চাচী এবং তাদের দুই সন্তান। কাউন্টার থেকে বলে দিয়েছে বাস এক ঘন্টা পর আসবে! রাস্তার জ্যামে বাস সিটি গেটে আসতে পারে নি! কাউন্টারে কতক্ষণ বসে থাকা যায়! ইমন ব্যাগ গুলো রেখে কাউন্টারের বাইরে গেল হাটাহাটি করতে। একটু দুরে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালো! তিন চারটান দেয়ার সাথে সাথে ছোট চাচা হাজির! ভাতিজাকে সিগারেট ধরাতে দেখে উনি রেগে গেলেন। ইমন বলে জোরে ডাক দিলেন আর সাথে সাথেই ইমন চমকে উঠে আর কাশি শুরু হয়ে গেল! এখন সিগারেট ফেলাবে নাকি কাশি কন্ট্রোল করবে নাকি পানি খাবে কিছুই বুঝতে পারছে না! ছোট চাচা গিয়ে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বললো, "সিগারেটটা দে, অনেকক্ষণ হল ধরাই নি!" ছোট চাচার বাঘের হুংকারের পিছনে এমন কাণ্ড লুকিয়ে থাকবে সেটা জানতো না ইমন! এক নজরে চাচার দিকে তাকিয়ে আছে ইমন! কি হল এটা!!! "ওই এইরকম করে কি দেখস?" ইমন কিছু বলছে না! "আরে চাচীর জন্য তো সিগারেট খাওয়ায় যায় না! আর ভাল কথা, আর সিগারেট ধরাবি না, আমি দেখলেই তর খবর আছে! সোজা ভাইয়ের কাছে রিপোর্ট যাবে বলে দিলাম!" ইমন আহাম্মক হয়ে গেল চাচার কাণ্ড দেখে! কি আর করার! বেচারা ইমন! চাচীর কাছে বললে নিজের ইমেজটাই নষ্ট হবে! বাইরে হাটাহাটি ছাড়া কোনো লাইন নেই তার। সেন্টার ফ্রুট চিবাতে চিবাতে কাউন্টারের দিকে গেল ইমন। বাস অতিরিক্ত দেরি হবার ফলে ইউনিক সার্ভিস কর্তৃপক্ষ নতুন বাসের ব্যবস্থা করলেন।
যাত্রীরা সবাই যে যার মত বাসে উঠলো। সুপারভাইজার লিস্ট চেক করে কনফার্ম করে নিল কেউ বাদ আছে কিনা। অবশেষে রাত দশটার বাস রাত বারোটায় ছাড়লো!
.
.
১০শে সেপ্টেম্বর
রাত ২.৩০ মিনিট
.
বরিশাল থেকে মুন্সি সাহেবের সেজ ছেলে আশরাফ রওনা দিয়েছে ঢাকার উদ্দেশ্যে! সাভারে পৌঁছে বড় ভাইয়ের সাথে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে ওরা সবাই। আয়নার কথায় ভাবলো সবাই একসাথে গেলে আনন্দ হবে সেই লেভেলের! দুরন্ত গতিতে চলছে সাকুরা পরিবহনের বাস। একেরপর এক অভারটেক! আশরাফ ২য় লাইনের সিটে বসে যার্নি চরমভাবে উপভোগ করছে!
.
.
১০শে সেপ্টেম্বর
রাত ৩টা,
.
সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে সৈকত রাত ১১টায় বাসে উঠেছিল। আগে যতবার ঢাকায় গিয়েছে ততবারই কপালে হিংস্র বাসের ড্রাইভার জুটেছিল। কিন্তু এবার বিধি বাম! বরাবরের মতই হানিফ এন্টারপ্রাইজে যাত্রা শুরু করেছে কিন্তু ড্রাইভার নতুন! এপর্যন্ত আসা সম্পূর্ণ রাস্তা হেল্পারের সাহায্য এসেছে! রাত ৩টা বাজে অথচ বাস এখনও উজান ভাটি রেস্টুরেন্টে পৌঁছায় নি! না জানে কাল ঢাকা ঢুকতে কয়টা বাজবে সৈকতের! কত বাস যে অভারটেক করে গেল ভাবতেই মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে!
.
.
রাত সাড়ে তিনটা,
অবশেষে উজান ভাটি রেস্টুরেন্টে বাস যাত্রা বিরতি দিল! রেস্টুরেন্টে ফ্রেশ হয়েই আশরাফকে কল করলো,
"হ্যালো, কোন পর্যন্ত তুই?"
"ঘাটের কাছাকাছি, তুই?"
"হোটেল ব্রেকে, উজানভাটি তে!"
হ্যাভ এ ঈদ যার্নি, আমাদের দিয়ে শুরু, বড় ভাইকে দিয়ে শেষ হবে!"
"কেন? আর ইমন, আয়না, ছোট চাচা কোথায়?"
"কল করি নি, জানতে হবে।"
"আচ্ছা আমি দেখছি!"
.
.
রাত ৩.৪৭ মিনিট,
.
ঘুম ঘুম চোখে আয়না মোবাইল স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে মেজ ভাইয়ের কল! রিসিভ করে,
"হ্যালো, ভাইয়া।"
"কোথায় তোরা?"
আশেপাশে একনজর চোখ বুলিয়ে বললো, ঢাকা ক্রস করছি, হয়তো নবীনগর!"
"রাস্তায় কোনো যানজট নেই তো?"
"আরে না।"
"আচ্ছা সাবধানে যাস!"
"আচ্ছা রাখি.....!"
.
রাত ৪টা,
.
সামনে পিছনে সকল বাস থেমে আছে! বাস থেমে থাকার কারণে ইমনের ঘুম ভেঙে গেল। আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারছে না কোথায় আছে। এদিকে আয়না, ছোট চাচা, ছোট চাচী সবাই ঘুম! ফোন বের করে গুগল ম্যাপে লোকেশন দেখতেই অবাক হয়ে গেল! সবেমাত্র কুমিল্লার কোটবাড়ি! এখনও বাস হোটেল পর্যন্তও পৌঁছে নি! সুপারভাইজারকে জিজ্ঞেস করলে বললো, "আর বলিয়েন না ভাই, ভাটিয়ারী, সিতাকুন্ডের অনাকাঙ্ক্ষিত যানজটে এখনও হোটেল পর্যন্ত যেতে পারলাম না! বাস ১ঘন্টা হল বসা!" হয়েছে গ্রামে যাওয়া আজ! সবই আয়নার দোষ! "এত করে বললাম আগে আগে রওনা দিই না উনি শুনবেন না!" মনে মনে বিরবির করলো ইমন। ইয়ারফোন বের করে গান শুনতে লাগলো সে! কিন্তু বাস না চললে পছন্দের গানও বেমানান লাগে সবার! সময় কাটানোর জন্য ওর সেজ ভাইকে কল করলো.....
.
.
রাত ৪. ১০মিনিট,
.
দৌলতদিয়া ঘাটে এসে বাস থামলো। তবে অন্যান্য সময় বাস ঘাটের আশেপাশে কোলাহলময় এলাকায় থামতো কিন্তু আজ নির্জন স্থানে থামলো ব্যাপারটা আশরাফের বোধগম্য হচ্ছে না। সুপারভাইজার কে ডেকে বললো, "ভাই ঘাটের সিরিয়াল নাকি এখানে?"
সুপারভাইজার করুণসুরে উত্তরে বললো, "ভাই, ঘাটে পাঁচ কি.মি জ্যাম! কখন ফেরিতে উঠবো সেটা পরে, ফেরির সামনে কখন যাবো এটা ভাবেন। এমনিই দুইটা ঘাট বন্ধ, একটার কাজ চলতেছে আরেকটা চালু আছে। সেটা দিয়েই চলাচল হচ্ছে!"
সুপারভাইজারের কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আশরাফ! বাড়ি যাওয়াও পরে, বড় ভাইয়ের কাছে যাওয়াও পরে! আগে দেখা ফেরির কাছে কখন যাওয়া যায়! এমন সময় ফোন বেজে উঠলো! ইমনের কল।
"হ্যা ইমন কতদূর? টাঙ্গাইল?"
"টাঙ্গাইল মানে? আরে এ পর্যন্ত কুমিল্লা ঢুকতে পারি নি! রাস্তায় এত জ্যাম!"
"ওই মাথা ঠিক আছে তর? কিছুক্ষণ আগেই আয়না বললো নবীনগর আছিস তোরা!"
"আরে সত্যি বলছি, আমি এখন বাস থেকে নেমে একটা দোকানে চা খাচ্ছি!"
"বাহ বাহ! কি সুন্দর কপাল আমাদের! আজকের দিনটা কে সিলেক্ট করছে? আয়না তো?"
"হুম, গাধী একটা।"
"তোরা কুমিল্লা পাস নাই, সৈকত ভাইয়া উজান ভাটিতে, আমি ফেরি ঘাট থেকে ছয় কি.মি দুরে! অস্থির দিন আজকের!"
.
.
একই সময়,
কোটবাড়ি, কুমিল্লা
.
অনেকক্ষণপর শান্তিতে একটা বেনসন ধরালো ইমন! তার আগে বাসে একটু উকি দিয়ে দেখলো ছোট চাচা কোন অবস্থায় আছে। যাক সব ঠিকঠাক। লাইটার দিয়ে আগুন ধরানোর অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। শেষে দিয়াশলাই দিয়েই ধরাতে হল! শান্তিতে সিগারেটে একের পর এক টান দিয়ে যাচ্ছে ইমন। এমন সময় দেখে সামনের বাস ট্রাক আগাতে শুরু করেছে! সিগারেটটা সবেমাত্র অর্ধেকেও আসে নি তার আগেই আবার ফেলে দেয়ার উপক্রম হল! এই দিয়ে ২৪টাকা লোকসান হল ইমনের! শেষমেশ সিগারেটটা ফেলে দিয়ে বাসে উঠল আর আবারও বাস থেমে গেল! আর নড়াচড়া করছে না! আজ পরিস্থিতি তার বিপরীত দিকে অতিবাহিত হচ্ছে! ইমনের খুব মায়া হচ্ছে সিগারেটের জন্য! শান্তিতে সিগারেটের অর্ধেকটাও শেষ করতে পারলো না!!!
.
.
ভোর ৫টা,
দৌলতদিয়া ঘাট
.
বাসে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছে আশরাফ! ব্যাগে ল্যাপটপ রয়েছে যার ফলে নিরাপত্তার জন্য বাইরেও হাটতে পারছে না আর তাছাড়াও বড় কথা হল এখনও হালকা হালকা প্রকৃতি অন্ধকার হয়ে আছে! আশরাফ সিদ্ধান্ত নিল বাইরে না গিয়ে সিটে বসে মুভি দেখবে। ল্যাপটপ চালু করে ইয়ারফোন সেট করে মুভি চালু করতেই, "ভাইয়া প্লিজ অফ করুন, চোখে লাগছে! ঘুমাতে পারছি না!" পাশের সিটের ভদ্রলোক স্বার্থপরের মত বললো! ব্যাপারটা সহজভাবে নিলেও ভিতরে ভিতরে রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে অবশেষে ল্যাপটপ বন্ধ করলো! মোবাইলে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান ছেড়ে ঘুমানোর ব্যর্থ চেষ্টায় নিজেকে নিয়োজিত করলো আশরাফ!
.
.
সকাল ৮.২০ মিনিট
সায়েদাবাদ
.
.
.
যানবাহন প্যা প্যা টি টিট শব্দে সৈকতের ঘুম ভাঙলো। চোখ খুলে দেখে সায়েদাবাদ বাস এসে পরেছে! কিন্তু এখানেও নিত্যদিনের জ্যাম! মহাসড়কের যানজটে আটকা পরলে মানা যায় কিন্তু ঢাকার ভিতরের জ্যাম আটকে থাকাটা সবার কাছেই বিরক্তিকর! কোনোরকম মতিঝিল পৌঁছাতে পারলেই সৈকত প্রথম দফায় বেচে যায়। বাঙ্কার থেকে ব্যাগ নামিয়ে নিয়ে সুপারভাইজারকে বললো, "মতিঝিল নামিয়ে দিয়েন।" "দেরি আছে ভাই, রাস্তার যা অবস্থা তাতে ঘন্টাখানেক লাগবে....."
কি সব হচ্ছে সৈকতের সাথে! এমন বিভ্রান্তিকর অবস্থায় সে কখনও পরে নি। বাস একটু একটু করে আগাতে থাকে। এভাবে যাওয়ার চেয়ে হেটে যাওয়াই অনেক ভাল, মনে মনে ভাবছে সৈকত।
.
.
একই সময়,
কাঁচপুর ব্রীজ
.
কাচঁপুর ব্রীজের এপারে ওপারে বিশাল যানজট! আধা ঘন্টা হল বাস থেমে আছে। মোটামুটি বাসের সবাই জাগ্রত, ঘুমন্ত শুধু আয়না। একসময় চোখ খুলে ইমনকে জিজ্ঞেস করলো, "ভাইয়া আমরা কোথায় আসছি? যমুনা সেতু আর কতদুর?" ইমন গম্ভীরভাবে তাকিয়ে বললো, "আমরা সবেমাত্র কাঁচপুর ব্রীজে আসছি। বলতে গেলে ঢাকায় এখনও প্রবেশ করা হয় নি!" ইমনের কথা শুনে আশেপাশের সাইনবোর্ড আর দোকানে ঠিকানায় নজর দেয় আয়না। মনটাই খারাপ হয়ে গেল বেচারীর! "আর কখনও লেট করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিবি?" ইমনের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিচ্ছে না! আয়না জানে ইমনের মন মেজাজ এখন ভাল নেই তাই কোনো উত্তর দিচ্ছে না।
.
.
সকাল ৮.৩০ মিনিট
খুলনা রেলস্টেশন,
.
চিত্রা এক্সপ্রেসের জন্য বসে আছে মুন্সি সাহেবের ছোট বোন ও তার পরিবার। চিত্রা এক্সপ্রেসের ইতিহাসে এ ট্রেন তেমন একটা লেট করে না ঈদের সময় মাঝে মাঝে দুই তিনদিন ভালই লেট করে। যেমনটা আজ করছে! জনাব আপেল রহমান ট্রেনের খবর নিতে স্টেশনমাস্টারের কাছে গিয়েছিলেন এবং খবর নিয়ে এসেছেন যে ট্রেন পাক্কা দুই ঘন্টা লেট! উনাদের বাসা স্টেশন থেকে একটু দুরে! ফিরে গিয়ে আবার আসার চান্স নেই। অনেক বছর পর আবার ভাইয়ের কাছে যাচ্ছেন তারা। ভালই লাগছে তাদের। সবার সাথে দেখা সাক্ষাৎ হবে, আনন্দ আর আনন্দ! কিন্তু এখন সময় কাটানোর জন্য কিছু দরকার। উনার বড় ছেলে হিমেল একটা পত্রিকা এনে দিল। "আম্মু পত্রিকা পড়ে নাও, সময় কেটে যাবে।" সাবিনা রহমানের এক ছেলে দুই মেয়ে। ছেলেই বড়। ছেলের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল কিন্তু ছেলে প্রত্যেকবারই মানা করে দেয়। কারণ অন্তত এক বোনের বিয়ে দিয়ে তারপর তার বিয়ে হবে। আর ছেলেটা চাকরি করে মংলা পোর্টে। বড় মেয়ে নিধি অনার্স কমপ্লিট করেছে আর ছোট মেয়ে পুনম কলেজে পড়ালেখা করছে। এদিকে ট্রেনের অপেক্ষা করতে করতে তাদের সময় একেবারেই কাটছে না। পুনম ওর আব্বুকে বললো, "ট্রেনের একটা মেসেজ করে আসলেই হতো, অযথা টাইম লস!" পাশ থেকে ওর আব্বু বললো, "হুম সারাদিন তো মোবাইল নিয়েই থাকিস, আরেকটু সময় পেতিস মোবাইল টেপার.......!" পুনমের।মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল এমন কথায়। অবশ্য এটা সব ছেলেমেয়ের উদ্দেশ্যে সকল মা বাবার একই উক্তি। অনন্তকাল ধরে এই ধরনের উক্তি চলতে থাকবে।
.
.
সকাল ১০.১০ মিনিট
দৌলতদিয়া ঘাট,
.
অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ফেরীর মুখ দেখার সৌভাগ্য হল আশরাফের। বাস ফেরীতে উঠার সাথে সাথে আশরাফ সোজা ফেরির উপরে চলে গেল! সূর্যের কিরণে পদ্মাকে অনেক বিধ্বংসী দেখাচ্ছে। ফেরিতে উঠে যেন আশরাফের মুখে এভারেস্ট বিজয়ের হাসি ফুটেছে। মোবাইল বের করে কল করলো বড় ভাই আরিফকে।
"হ্যালো, কতদুর তুই?"
"এইতো ফেরিতে উঠলাম সবেমাত্র।"
"কি?????? এই মাত্র ফেরিতে? আর আমরা সবাই এখানে রেডি হয়ে আছি যে তুই হয়তো এখনই চলে আসবি!!"
"আমরা তো ভক্সিতে যাবো, এত তাড়া কিসের? আস্তে ধীরে আসি!"
"আর কতক্ষণ লাগবে?"
"আশা করা যায় আর ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে বাসায় পৌঁছাবো, আর তো কোনো ঝামেলা নেই।"
"আচ্ছা সাবধানে আসিস। রাখি।"
.
.
বেলা ১১.০০টা,
মতিঝিল, ঢাকা
.
MAN VS TRAFFIC JAM খেলার পর অক্লান্ত হয়ে অবশেষে সৈকত তার বড় আপুর বাসায় পৌঁছেছে! কারও সাথে কথাবার্তা না বলে সোজা বিছানায় গা এলিয়ে দিল! বেচারার সকল শক্তি বাস জার্নিই শুষে নিয়েছে!
.
.
বেলা ১১.২০ মিনিট
নোয়াপাড়া, যশোর
.
দুই ঘন্টা লেট করে ট্রেন খুলনায় এসেছে আবারও খুলনা ত্যাগও করা হয়ে গেছে। সাবিনা রহমানের পরিবার ট্রেনে উঠেছে দেড় ঘন্টা হল। এতক্ষণে যশোরের আশেপাশে থাকার কথা। তবে ট্রেনের ভাল দিক হল যত ঘন্টা লেট হবে পৌঁছানোর নির্দিষ্ট সময়ের সাথে তত ঘন্টা যোগ করলেই কখন পৌঁছানো যায় সেটা জানা যায়। এখন আপাতত তাদের কোনো ঝামেলা নেই। শুধু এম মনসুর আলীতে নামতে হবে।
.
.
দুপুর ১.৪০ মিনিট,
মতিঝিল, ঢাকা
.
ফ্রেশ হয়ে দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার পরিকল্পনা করছে সৈকত এবং ওর আপা, দুলাভাই। খাওয়া দাওয়ার আগে ভাগ্নেভাগ্নিদের সামাল দিতে অনেকটা হিমশিম খাচ্ছে সে। একেরপর এক ঝগড়া মারামারি লাগিয়ে দিয়েছে কে সামনে বসবে! পরে টস করে কোনরকম সামলে নিয়েছে তাদের।
ছাদে শুকাতে দেয়া বাকি কাপড় আনতে গিয়ে রাস্তায় তাকিয়ে বাড়ি না যাওয়ার কথা চিন্তা করছে সৈকত। ভাবছে, "থাক সৈকত, এরচেয়ে ভাল হবে একটা সাইকেল নিয়ে রওনা দে! রাস্তার ফাক ফোকর দিয়ে যেতে পারবি। বসে থাকতে হবে না।" রাস্তার যানজটের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বিরবির করতে থাকে সৈকত।
.
.
একই সময়
চন্দ্রা,
তিন দফায় বমি করে কাহিল হয়ে উঠেছে আয়না! বাস যেভাবে থেমে থেমে যাচ্ছে তাতে আয়নার মনে হয় না আজ সে বাড়ি পৌঁছাতে পারবে! এদিকে ভোগান্তির শিকার যাত্রীদের পেটে ক্ষুধার টান পরেছে। ইমনের ছোট চাচী একেরপর এক পলিথিন নিয়ে বমি করে বাইরে ফেলে দিচ্ছেন! ইমন আর ওর ছোট চাচা সকল রাগ ক্ষোভ মনের মধ্যে পুষে রেখেছে! বাস যার্নি আয়না আর ওর ছোট চাচীর জন্য দুঃসাধ্য ব্যাপার। বাসের অর্ধেক পলিথিন এরা দুজনই শেষ করে দিয়েছে। এরমধ্যে আরেকটি বিরক্তিকর ব্যাপার হচ্ছে বাস জ্যামে আটকা পরে গেছে কিন্তু বাম সাইড দিয়ে একের পর এক প্রাইভেট কার মাইক্রো ধুলো উড়িয়ে চলে যাচ্ছে! ইউনিক সার্ভিসের সামনে থাকা কেয়া পরিবহনের স্টাফরা ক্ষিপ্ত হয়ে বাস বামে ঘুরিয়ে দিয়েছে যাতে এই প্লাস্টিক নামক প্রাইভেট গুলো যেতে না পারে। কয়েকটা প্রাইভেট ইতোমধ্যে থামিয়ে দিয়েছেন তারা এবং সামনের তিন চার বাসের স্টাফরা মিলে আচ্ছা মত তর্কাতর্কি লাগিয়ে দিয়েছেন! এই প্রচণ্ড গরমে রাস্তায় জ্যামে আটকে থেকে যে কোনো লোকের ধৈর্য্যের বাধ ভেঙে যাবে!
অনেকক্ষণ হল যাত্রীরা খেয়াল করছে ডানদিক দিয়ে অনেক বাস এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ইউনিকের যাওয়ার কোনো খবর নেই! ইমনের ছোট চাচা আর সহ্য করতে না পেরে রেগে গিয়ে বললেন, "ওই ড্রাইভার, পিছনের কত বাস আমাদের কেটে চলে গেল আর তুমি মিয়া কি দেখতেছো? তুমি যাইতে পারো না?" আশপাশ থেকে আরও অনেক সাপোর্ট পেল ছোট চাচা। সবাই বলছে রংসাইড দিয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু ড্রাইভার নারাজ! বললেন, "আরে ভাই সার্জেন্টের হাতে ধরা পরলে হেড লাইট ভাইংগা দিবো! রাইত হইয়া গেলে বাকি রাস্তা আপনাদের নিমু কেমনে?"
ছোট চাচা আবারও বললেন, "তোমার তো রাস্তা মুখস্ত থাকে, জানো না কোন পয়েন্টে সার্জেন্ট বইসা থাকে?"
কে শোনে কার কথা! সবাইকেই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে! আরও রাস্তা চার লেন করার কাজ শুরু করাতে ঝামেলা বেশি সৃষ্টি হয়েছে। সবার মোবাইলের চার্জ প্রায় শেষ! ইমনের পাওয়ার ব্যাংকে যে চার্জ ছিল সেটা সকালে ওর আর আয়নার ফোন চার্জ দিয়ে শেষ করে দিয়েছে! চাচা চাচীর মোবাইলও বন্ধ হয়ে গেছে! শেষমেশ গরমে থাকতে না পেরে ইমন আর ওর ছোট চাচা বাইরে কোথাও বসার জন্য বেরিয়ে গেল!
.
.
দুপুর ৩.৩০ মিনিট,
শ্যামলী ও সাভার,
.
.
মুন্সি সাহেবের বড় মেয়ে এবং মেয়ের জামাই ও সৈকত যানজটে শ্যামলীতে আটকে আছে! মতিঝিল থেকে জ্যাম ঠেলে ঠেলে কোনোরকম শ্যামলী পর্যন্ত এসেছে! অফিসের লাক্সারি গাড়িতে রওনা দিয়েছে বলে ক্লান্তি আর ভোগান্তি তেমন টের পাচ্ছেন তারা। এদিকে মুন্সি সাহেবের বড় ছেলে আরিফ এবং ছেলের বউ আর আশরাফ সাভার থেকে রওনা হয়েছে। এখন তারা ক্যান্টনমেন্টে অবস্থান করছে। ভোগান্তি কত প্রকার ও কি কি সেটা আজ দেশের সব ঘরমুখো মানুষ টের পাচ্ছে! কে জানে আজ তারা কে কখন নিজ নিজ গন্তব্য পৌঁছাবে!
.
.
বিকাল ৪টা,
কড্ডার মোড়, সিরাজগঞ্জ
.
মুন্সি সাহেব আর রতন সাহেব কড্ডার মোড়ে এসেছেন তাদের সন্তানদের রিসিভ করতে! বাকি সবার সাথে যোগাযোগ হলেও আয়না, ইমন আর তার ছোট ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না! কল করলে বারবার সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না জানাচ্ছে! ভিষণ টেনশনে পরে গেলেন তিনি! রাস্তাঘাটের অবস্থা টিভিতে যা দেখেছেন তাতে তার অস্থিরতা আরও বেড়ে যাচ্ছে! বারবার কল করছে সবাইকে কিন্তু কারও কাছে কল ঢুকছে না!
.
.
একই সময়
ধামরাই, ঢাকা
.
রতন মুন্সির ছেলে আলী রওনা দিয়েছে বাড়ির উদ্দেশ্য। সব কাজিনদের মধ্যে আলী সবচেয়ে দেরিতে রওনা দিয়েছে! কিন্তু দিন শেষে আলীই সবার আগে পৌঁছাবে। কারণ তার নিজের বাইক আছে। আজকে শেষ অফিস ছিল আলীর। বেতন বোনাস নিয়ে হাসি মুখে বাড়ির পানে রওনা হল সে।
.
.
বিকাল ৪.৪৫ মিনিট,
উল্লাপাড়া,
.
"দেখি আপারা ভাইয়ারা যে যা পার দশ টাকা বিশ টাকা করে আমাদের দাও..... দেরি কর না, লক্ষি ভাইয়েরা আমার।" হাত তালি দিতে দিতে বলল কয়েকটা হিজড়া! সাবিনা বেগম বললেন, "আচ্ছা আপনারা পেয়েছেন টা কি? এপর্যন্ত চারবার আপনার টাকা নিলেন! আমরা ব্যাংক নিয়ে এসেছি?" একজন হিজরা বললো, "শোনো আপু, আমরা হলাম সেতুর এপারের হিজরা, আগে যারা নিছে তারা ওই সেতুর ওপারের হিজরা। বেশি বাড়াবাড়ি কর না, হালকা কিছু দিয়ে দাও....." হাত তালি দিতে দিতে বললো। "সেতুর এপার ওপার বলে তো চারবার নিলেন! ডাকাতরাও তো এমন করে না!" এই বলে পাঁচ টাকার একটা কয়েন ধরিয়ে দিলেন সাবিনা রহমান! পাকশী সেতুর এপারে ওপারে দিয়েছেন, ট্রেনে উঠার পর একবার দিয়েছেন এখন নামার আগে আরেকবার দিলেন! এদের কিছু বলাও যায় না, সারা দেশের মধ্যে বোধ হয় উল্লাপাড়ার হিজরা বেশি মারাত্মক! তবে ভদ্র সমাজ এদের সাথে কথাকাটি করতে আসে না। কারণ তাদের সম্মানের ভয় আছে......
.
.
বিকাল ৫টা,
.
ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ যানজটের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যানজটে স্থির হয়ে থাকা যানবাহন এখন থেমে থেমে চলছে।
.
.
বিকাল ৫.১৫ মিনিট,
এলেঙ্গা, টাঙ্গাইল
.
জ্যাম ঠেলতে ঠেলতে ইমন, আয়না ও তাদের ছোট চাচা এলেঙ্গা পর্যন্ত এসেছে। হঠাৎ সকল যানবাহন দ্রুত চলাচল শুরু করলো! মনে হচ্ছে আর যানজট নেই রাস্তায়! বাস সাই সাই করে এগিয়ে যাচ্ছে। ইউনিকের ড্রাইভার সুযোগ পেলেই খুবই বেপরোয়া ভাবে একের পর এক ওভারটেক করে যাচ্ছে যেন সে ফর্মুলা ওয়ান রেসে নেমেছে! অনেক ভোগান্তির পর এখন জার্নি করে সবার ভাল লাগছে! আয়নার যত ক্লান্তি ছিল সব নিমেষেই দুর হয়ে গেল।
.
.
একই সময়
চন্দ্রা,
.
আলীর সাথে রাস্তায় দেখা হয়ে গেল আরিফের। আলী আরিফের প্রাইভেটকে ওভারটেক করার সময় দেখতে পায়। সেখানে ইশারায় কুশলাদি বিনিময় করে নিল তারা। এদিকে মেহেরুন ও সৈকত চন্দ্রার জ্যামের শেষ পর্যন্ত এসেছে। রাস্তার যানজট নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ফলে ধীরে ধীরে সবাই নিজেদের মাঝে ছোট দুরত্বে অবস্থান করছে।
.
.
বিকাল ৫.৪৭ মিনিট,
কড্ডার মোড়, সিরাজগঞ্জ
.
মতি মুন্সির সাথে দেখা হয়ে গেল তার ছোট বোন সাবিনা এবং বোনজামাইয়ের সাথে। ভাগ্নেভাগ্নিরর সাথে কুশলাদি বিনিময় চলছে। রতন মুন্সি বললেন,
"তোদের আসতে কোনো সমস্যা হয় নি তো?"
"ভাইজান আর বলবেন না, ট্রেনে আজকের মত এত বাজে জার্নি আর কখনও হয় নি। আচ্ছা, বাকি সবাই কই?"
"ওরাও রাস্তায় আছে!"
মতি মুন্সি বললেন, "আচ্ছা তোরা বাসায় যা, অনেক টায়ার্ড হয়ে আছিস তোরা।"
মুন্সি সাহেব তাদের বাসায় পাঠিয়ে দিলেন। এদিকে তিনি অধৈর্য্য হয়ে যাচ্ছেন তার প্রিয় মুখ গুলো দেখার অপেক্ষায়।
.
.
বিকাল ৬টা,
কড্ডার মোড়, সিরাজগঞ্জ
.
"ভাই, ওইযে ওরা সবাই! আয়না, ইমন আর ইমতিয়াজ!!!"
রতন মুন্সির কথায় চা রেখে পিছনে ফিরে সবাইকে দেখতে পান! ওরাই তাদের দেখতে পায়। রাস্তা পার হয়ে আয়না ওর আব্বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে! একটু পর মুন্সি সাহেবের বড় ছেলে, বউমা এবং আশরাফ গাড়ি নিয়ে এসে গেল। রতন সাহেবের ছেলে আলী এসে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যে। সবাই আয়নাকে বলছে, "আর কখনও দেরি করে ঈদে ফিরবি?" আয়না কিছুই বলছে না, শুধু রাগ করে আছে। আয়না বললো, আপু দুলাভাই আর মেজ ভাইয়া কই?" ওদের আসতে দেরি হবে। কমপক্ষে ১৫/২০ মিনিট লাগবে। ছোট চাচা বললেন, "আচ্ছা আমরা সিএনজি ঠিক ঠাক করি ততক্ষণে ওরা এসে পরবে।" ছোট চাচা, ইমন আশরাফ গেল সিএনজি ঠিক করতে।
.
.
সন্ধ্যা ৬.২০ মিনিট,
.
সিএনজি ঠিক করে সবাই রওনা হল। আশরাফ কার থেকে সিএনজিতে উঠলো। আয়না আশরাফের স্থান দখল করলো। বেচারি যা ভাবে নি তারচেয়ে বহুগুণ ভোগান্তিতে পরতে হয়েছে সবাইকে! .
বাড়ি ফিরে সবাই খাওয়া দাওয়া করে একসাথে বসে গল্প করতে বসে পরলো! এমন সময় মুন্সি সাহেবের বড় মেয়ে, মেয়ের জমাই, নাতি নাতনি আর সৈকত এসে পরলো!! সৈকত আসার সাথে সাথে,
"আয়না! ওই আয়না, কই তুই?"
ভাবি বললেন, "কিরে সৈকত কি হইছে তোর? এই মাত্র আসলি, রেস্ট নে খাওয়া দাওয়া কর তা না ডাকাডাকি শুরু করলি?"
একটু পর আয়না ভয়ে ভয়ে আসলো! সৈকত আবারও বললো, "কি ম্যাডাম? হিসাব মিলছে? স্বাদ আহ্লাদ মিটে গেছে?"
আয়না কিছুই বলছ না। কারণ তার হিসাবের সবকিছু গড়মিল হয়ে গেছে!
একটু পর সৈকত বললো, গুড, খুব মজা হইছে! ইনশাআল্লাহ সামনের ঈদেও হবে!!
.
ঈদ উপলক্ষে সবাই সবার জন্য ছোটখাটো উপহার নিয়ে এসেছে! সবাই সবাইকে দিচ্ছে। আনন্দ চলছে, মুন্সি সাহেবের বাড়ি আবার তার প্রাণ ফিরে পেয়েছে! এভাবেই তো ঈদে আনন্দ হয়! কিন্তু এর মাঝেও একটু কষ্ট আছে! মুন্সি সাহেবের মেয়ে মেহেরুন আর একমাত্র বোন ঈদের আগের দিন শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে! এত মায়ার বাধন, এত প্রীতি একে অপরের মাঝে তবুও নিয়ম বিধি বিধান মেয়েদের মেনে চলতে হয়! আয়নার এখনও বিয়ে হয়নি কিন্তু বিয়ে হলেই পরের ঈদগুলোতে মুন্সি সাহেবের বাড়ি প্রধান শিল্পীর উপস্থিতি পাওয়া যাবে না। তাকেও অন্য সকল গৃহিণীর মত দায়িত্ব পালন করতে হবে! ভাবতেই কেমন লাগে তাই না? তাই যতদিন পৃথিবী আছি কেননা আমরা সবাই আপন জনদের সাথে মিলেমিশে থাকি! বিপদে আপদে তারাই তো আমাদের পাশে দারাবে।
.
.
.
গল্পটা অন্যস্বাদের। প্রেম ভালবাসার গল্প নয় এটি। অনেকের ভাল লাগবে না খারাপ মন্তব্য করবেন। তবে এই গল্পটা লিখেছি শুধু ঈদ যাত্রায় বাড়ি ফেরার ভোগান্তি এবং অনুভূতি কেমন হতে পারে তার একটা প্রকাশ। যাই হোক, কষ্ট করে পড়ার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ এবং আপনার সময় নষ্টের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
সবাইকে ঈদ মোবারক।
২| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ২:০৫
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: বেশ বড় গল্প।
কাহিনী টানার হাত আছে আপনার।
গল্পটা মোটেও বিরক্তিকর হত না। গল্পের থিমটা খুবই সুন্দর। গল্পের মাঝের পরিবারের বন্ধন মারাত্নক রকমের ভাল লেগেছে। উপভোগ্য হতে পারত গল্পটা।
আপনাকে লেখায় আরো দক্ষ হতে হবে। গল্পটা খুব দ্রুত্, এলোমেলো এগিয়ে ফেলেছেন, বাক্যের গঠনে হেরফের হয়ে গেছে। পাঠক হিসেবে এইদিক স্বাচ্ছন্দবোধ করতে পারেনি।
গল্পের সমালোচনায় অনেককেই এগুলোর কথা বলি। তবে, আপনার উপর একদম জোর খাটিয়েই বলছি - দ্রুত লেখার হাত ভাল করে ফেলুন। আপনার কাহিনীটা সুন্দর হয়েছে।
বিরক্তিভাবটা এসেছে লেখার কারণে।
গতানুগতিকের থেকে আলাদা হওয়ায় গল্পের আকর্ষণটা ভাল ছিল।
যাইহোক, + তো অবশ্যই। সাথে, ঈদের শুভেচ্ছা।
৩| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৩৬
বিজন রয় বলেছেন: ঈদ মোবারক।
আপনার এবং আপনার পরিবারের সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:০০
ভ্রমরের ডানা বলেছেন: বাস্তবতার সাথে মিল আছে গল্পের! পড়তে বোরিং লাগলেও পড়ে বুঝেছি লেখক কি বোঝতে চেয়েছেন!