নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রেমিকার চিরশত্রু
প্রথম পর্ব,
.
.
.
২১শে ডিসেম্বর, ২০০৫
সকাল ৮টা,
স্কুল প্রাঙ্গণ আজ খুব ভালভাবে সাজানো হয়েছে। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১মাস পর আজ রেজাল্ট দিবে। ছেলেমেয়েদের শীতকালীন ছুটির ঘন্টা প্রায় শেষের দিকে! চারদিকে ছাত্রছাত্রী দিয়ে ঘেরা। হেড স্যার মাইকের সামনে দারিয়ে একে একে ১ম শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত ১ম, ২য়, ৩য় স্থান পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের নাম ঘোষণা করলেন। প্রত্যেককে স্টেজে ডেকে আকর্ষণীয় পুরস্কার এবং রেজাল্টকার্ড দিয়ে হাত মিলিয়ে ক্যামেরায় তাকিয়ে ছবি উঠছে! করতালিমুখর সংবর্ধনায় তারা স্টেজে উঠেছিল আর সেভাবেই আনন্দের সাথে নেমে যাচ্ছে! তাদের অভিভাবকদের গুণগানে শিক্ষক সমাজ ব্যস্ত! অন্যান্য ছেলেমেয়েদের অভিভাবকরা বাসায় পৌঁছে তাদের সন্তানদের কিভাবে কাঁচা চিবিয়ে খাবে সেই পরিকল্পনায় ব্যস্ত! হ্যাঁ, এর মধ্যে আমার আম্মুও উপস্থিত আছেন! হেড স্যার বললেন, "এবার ৯ম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পালা!............ ৩য় স্থান অধিকার করেছে বখতিয়ার ইসলাম হাসান!" সাথে সাথে হাততালি শুরু হল! "২য় স্থান অধিকার করেছে আলপনা করিম!" হুম, আমার মনটা অনেকে ভাল হয়ে গেল! আমি চাচ্ছিলাম আলপনা সেকেন্ড হোক। "বরাবরের মত ১ম স্থান অধিকারকারী ছাত্রের নাম আল মাহমুদ রিয়াদ!" হেডস্যার এমনভাবে রিয়াদের নাম নিলেন যেন মনে হচ্ছে রিয়াদের চেয়ে স্যার নিজেই বেশি খুশি হয়েছে! বাকি ছাত্রছাত্রীদের রেজাল্ট নিজ নিজ ক্লাসে দেয়া হবে!" মনে মনে ভাবলাম হয়তো অপমানের বোঝা একটু কমলো! আম্মুর দিকে তাকিয়ে দেখি আম্মু রাগে চোখ বড় করে কটমট করে তাকিয়ে আছে! স্কুল ফাঁকা থাকলে হয়তো আজ এখানেই আমার সমাধি হত! ক্লাসরুমে সবার পিছনের বেঞ্চে বসে পরলাম আর আম্মু অন্যান্য মহিলাদের সাথে সামনে বসে আছে। ক্লাস টিচার রেজাল্ট কার্ড গুলো এনে টেবিলে রেখে তার প্রিয় ছাত্র অঙ্কনকে ডেকে বললেন, "নাম ডেকে কার্ডগুলো দিয়ে দে...!" অঙ্কনের সাথে একটু পরিচয় করিয়ে দিই। পুরো নাম, "মিল্লাত রহমান অঙ্কন। মোটামুটি ভাল ছাত্র। তার বদ অভ্যাসের মধ্যে অন্যতম হল সে যা অর্জন করে সেটা নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট হয় না! কোন স্টুডেন্ট ওর চেয়ে ভাল রেজাল্ট করলে সে কিছুতেই মানতে পারে না! অঙ্কন নাম ডেকে কার্ড দিচ্ছে সাথে রেজাল্ট গুলোও দেখে নিচ্ছে। পাশ করা স্টুডেন্টদের আর অঙ্কনের পছন্দ হচ্ছে না। এদিকে আমি আর খেয়াল করি নি আলপনা কোথায় বসেছে! এমন সময় একটা নাম ডাকলো অঙ্কন, "আতিকুল হাসান জসিম, রেজাল্ট এফ!!!!!!" কথাটা শুনেই মেজাজ বিগড়ে গেল! এরপর থেকে যারাই ফেল করেছে সবার রেজাল্ট নিজ মুখে "এফ" বলে যাচ্ছে!! আমরা সবাই আহাম্মক হয়ে গেলাম। মানলাম অঙ্কন ভাল ছাত্র এবং রোল সবসময় দশের মধ্যে থাকে! তার মানে এই নয় যে কারো ব্যাড রিপোর্ট সে সবার সামনে এভাবে বলার অধিকার রাখে না। ফেল করা ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকরা মাথা নিচু করে আছে। কোন ভাবে ক্লাসরুম থেকে বের হতে পারলে তারা বেঁচে যায়। "আয়াত মাহবুব, রেজাল্ট এফ।" আমার রেজাল্ট!!!! সবার সামনে অঙ্কন বললো! এই ভীড় ঠেলে সামনে গিয়ে নির্লজ্জের মত রেজাল্ট কার্ড কিভাবে আনবো মাথায় আসছে না! বড় কথা হল বার্ষিক পরীক্ষায় আমি ফেইল!!! দশম শ্রেণীতে উঠতে পারবো না! ছোট ভাইগুলা আমাকে নাম ধরে ডাকবে! আলপনা আমার বড়! কি নির্মম ভাগ্য! আম্মুর দিকে তাকালাম কিন্তু ততক্ষণে আম্মু রুম থেকে বের হয়ে গিয়েছে! ফেল করা ছাত্রছাত্রীর অভিভাবকরা অপেক্ষা করছে ক্লাসরুম ফাকা হলে তাদের রেজাল্ট নিবে। কিন্তু আমি আর অপেক্ষা করলাম না। রেজাল্ট নিয়ে সোজা বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলাম।
আম্মু আমার দশ পা সামনে হাটছে। মাঝে মাঝে রাস্তায় থেমে যাচ্ছে আর আমার দিকে তাকাচ্ছে! ওই সময়টা আমার পা আর চলতে চাচ্ছিল না। জানি না বাসায় আজ ইসরাফিল আঃ কেমন শক্তিতে ফু দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে! মনের ভিতরটা ভয়ে একদম ছোট হয়ে যাচ্ছে!
সেদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত আমার উপর এমন কোন ঝড় নেই যা আঘাত করে নি। অনেক মারধরও খাওয়া লাগছে। ইচ্ছা হচ্ছিল সিনেমার মত বাসা থেকে পালিয়ে যাই। কিন্তু পালিয়ে গিয়ে করবো কি? আর সবচেয়ে বেশি রাগ হচ্ছিল অঙ্কনের উপর! ষষ্ঠ হইছে তাই কি ভাব হারামজাদার!
.
কয়েক সপ্তাহ হল আম্মু আব্বু ঠিকঠাক ভাবে কথা বলছে না। কারণ খালাতো বোনেরও রেজাল্ট দিয়েছে এবং সে প্রথম হয়েছে! কি দারুণ কপাল আমার! সবখানে খুশির ছড়াছড়ি আর আমার বাসায় হিংসার আগুন!
.
১৬ই জানুয়ারি ২০০৬,
ফের নবম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার জন্য স্কুলে গেলাম! লম্বা লাইনে দারিয়ে থাকার পর বেতন কাউন্টারের সামনে যেতেই, "কিরে আয়াত? নবম শ্রেণীতে ভর্তি হচ্ছিস যে?" ক্যাশিয়ার চাচা এমনভাবে বললেন যেন আমি চার পাঁচ বছর হল নবম শ্রেণীতেই আছি!! "ওহ, আচ্ছা! নিশ্চয়ই ফেল করছিস?" পিছনে থাকা মেয়েরা এমনভাবে চাহনি দিল যেন এলিয়েন দেখছে! রেগে গিয়ে বললাম, "তাতে আপনার কি? টাকা দিছি, স্লিপ আর বেতন বই দেন..."
কিন্ত লোকজন ফেল করা স্টুডেন্টের রাগের মাঝে বেয়াদবি খুঁজে পায় আর ভাল ছাত্রের রাগের মাঝে জীদ খুঁজে পায়। "যা... তো, বিদায় হ... পড়ালেখা নাই, আদুভাই আইছে ভর্তি হইতে!" ইচ্ছা হচ্ছিল অফিসে আগুন লাগিয়ে দেই। রাগে দুঃখে চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। অফিস থেকে হতেই আলপনার সাথে দেখা!
"কেমন আছিস?"
"জানিস যে ভাল নাই, তারপরও জিজ্ঞেস করিস কেন?" রেগে গিয়ে আলপনাকে বললাম। একটু দুরেই ওর আম্মু ছিল। আমার রাগের আওয়াজ উনার কান পর্যন্ত পৌঁছেছে! উনি এসে আলপনাকে বললেন, "কি হয়ছে? চল ভিতরে, আর এই ছেলে কে?" "আম্মু ও আমার ক্লাসমেট, আয়াত!" ক্লাসমেট!!! ক্লোজ বন্ধু থেকে সহপাঠী! যাক কমপক্ষে সহপাঠীতো বলছে, অন্যরা ছোটভাই বলা শুরু করছে! "তা বাবা তোমার রেজাল্ট কি? রোল কত?"
যে প্রশ্নটা আমি সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি। কেমনে বলি আমি ফেইল করছি! "মোটামুটি হইছে, আচ্ছা আন্টি আমি একটু ব্যস্ত, পরে কথা হবে! আসসালামু আ'লাইকুম।" কোনমতে তাদের পাশ কাটিয়ে বের হয়ে গেলাম। এমন দিনও দেখতে হবে তা আমার জানা ছিল না।
.
ক্লাস রুমে গিয়ে সেই পিছনের বেঞ্চে বসে পরলাম। আশেপাশের সবার নতুন বই আর আমার পুরানো মলাট বাধানো বই!
ক্লাস ঠিকঠাক মতই যাচ্ছে। প্রতিদিন যাচ্ছি। শুধু আফসোস হয় আলপনার জন্য। আর আলপনাকে দেখলে আরও বেশি খারাপ লাগে! আমার সিনিয়র বলে কথা!
ক্লাসে নতুন একটা মেয়ে ভর্তি হয়েছে। নাম নকশা! খুব সুন্দর চেহারা আর খুব বাজে ক্যারেকটার। যদিও এটা আমার সন্দেহ। দেখতে দেখতে ক্লাসে খুব নামকরা হলে গেল নকশা! মেয়েদের মনিটরও নির্বাচিত হল সেটাও আবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়! আমি একটা ভবিষ্যৎ বানী করছিলাম নকশাকে নিয়ে। সেটা হল নকশা অঙ্কনের প্রেমে পরবে। নকশা নবম শ্রেণীর মেয়েদের মনিটর আর অঙ্কন দশম শ্রেণীর! ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে নিজেদের মাঝে চোখাচোখিও হয়! এখনও পর্যন্ত ক্লাসের কারও সাথে আমার ভাল বন্ধুত্ব হয় নি। নাইন ফেল বলে কেউ বন্ধুত্ব করতেও চায় না। টুকটাক কথা হয় মাঝে সাঝে। এভাবে দেখতে দেখতে ১ম সাময়িক পরীক্ষা শুরু হল। গণিত পরীক্ষায় আমার সামনে নকশা আর নকশার পাশে অঙ্কন! ৭ম, ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের সিট একরুমে! আমার আর একটা অংক হলেই পাশ উঠে যাবে কিন্তু কার কাছ থেকে দেখবো বুঝতেছি না। নকশাকে ইশারা করলাম বারবার একটু দেখানোর জন্য। কিন্তু নকশা দেখাচ্ছে না। আবার ডাকলাম নকশাকে, তখনই অঙ্কন উঠে বললো, "স্যার, আয়াত নকশাকে ডেকে আমাদের সবার পরীক্ষা দেয়ার কনসান্ট্রেশন নষ্ট করে দিচ্ছে !" আমার কলম চলা বন্ধ করে দিল তবুও এমন ভাব নিচ্ছি যেন আমার লেখার গতি হুলস্থুল গতিতে চলছে! অঙ্কনের এমন কথায় স্যার আমাকে সামনের বেঞ্চে বসিয়ে দিলেন! পরীক্ষার হলে সামনের বেঞ্চ একটা ছাত্রের জন্য কোনো জেলখানার চেয়ে কম না!
পরীক্ষা শেষ, অঙ্কন নকশার উত্তরগুলোর ভুল ত্রুটি তুলে ধরছে। আমি গিয়ে বললাম, "অঙ্কন, তোর প্রব্লেম কি? আমার বাশ মারতে তর খুব মজা লাগে?" অঙ্কন এমনভাবে তাকালো যেন আমি এলিয়েন! প্রশ্ন ভাজ করতে করতে বললো, "তুই আমাদের ছোট ভাই! নাইন ফেল, তুই আমাকে ভাই বলে ডাকবি! তা না নাম ধরে ডাকিস! সাহস বেশি হয়ে গেছে?" নকশা মিটিমিটি হাসছে! "বাদ দেন তো অঙ্কন ভাইয়া, চলেন যাই।" নকশার জবাব! ওরা যাওয়ার পর পিছনে ফিরতেই দেখি আলপনা দারিয়ে আছে! আমি জানি আলপনা সব শুনেছে।
.
"কেমন বাচ্চা ছেলের মত স্বভাব ওর! আমার পিছে লাগছে কেন?" আলপনাকে জিজ্ঞেস করলাম। "জানিস নকশা আর ওর রিলেশন চলতেছে। অনেকবার ডেটও করছে!" আমি বললাম, "তো আমাকে বলছিস কেন? যা পারলে ওদের হেল্প কর আর ওদের টপিক নিয়ে কোনো কথা বলবি না।"
খানিকক্ষণ চুপ থেকে আবার বললাম, "তুই যা, আমার সাথে কথাবার্তা বলার দরকার নাই। সবাই খারাপ ভাববে।" আলপনাকে কথা বলার সুযোগ দিলাম না। ওকে ছেড়ে অলিগলির মধ্য দিয়ে অন্য রাস্তায় ঢুকলাম।
.
১৫ই জুন ২০০৬,
আজ ১ম সাময়িক পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে। একটু ভাল লাগছে যে এই ক্লাসে অঙ্কন টাইপের বাড়তি অহংকারী ছাত্র নেই। পাশ বা ফেল কিছু একটাতো করবো। দেখতে দেখতে স্যার চলে এলেন। রোল কল করে সবার রেজাল্ট কার্ড দিয়ে দিলেন! আমি রেজাল্ট কার্ড খুলে খুব খুশি হয়ে গেলাম! ভাল রেজাল্ট করি নি কিন্তু পাশ করে গেছি! এটাই অনেক! বারবার রেজাল্ট কার্ডের এ টু জেড পরে যাচ্ছি। খুবই ভাল লাগছে নিজের কাছে। ক্লাসে আলপনা থাকলে হয়তো অনেক খুশি হইতো! টিফিন ব্রেকে মাঠে একাই বসে আছি। এমন সময় আলপনা এল। জিজ্ঞেস করলো, "দোস্ত, তোর রেজাল্ট কেমন হয়েছে?" "পাশ করছি, ৩.৬৯।" আলপনা খুশি হল আর বললো, "আমি ভয়ে ছিলাম সেদিনের তোর ম্যাথ পরীক্ষা নিয়ে। যাই হোক পাশ করছিস এখন ট্রিট দে!"
আসছে ট্রিট নেয়ার জন্য........!!
আমি বললাম, "আমি পাশ করছি তুই আমাকে আগে ট্রিট দিবি আর তোর রেজাল্ট কি?" একটু মন খারাপ করে বললো, "৪.৯৪! আরেকটু পরিষ্কার করে লিখলে হয়তো প্লাস এসে যেত!"
"যা পাইছিস তাতেই সন্তুষ্ট থাক...."
"নারে, ৪ পয়েন্ট থেকে ৪.৭৫ পর্যন্ত পেলে সন্তুষ্ট থাকতাম কিন্তু ৪.৯৪ পাওয়াটা খুব কষ্টের। ফিনিস লাইনের সামনে এসে গাড়ি নষ্ট হওয়ার সমান।"
"আচ্ছা, বাদ দে, এমনিই এস.এস.সিতে গোল্ডেন নিশ্চিত তোর।"
ভাল ছাত্রছাত্রীদের এই একটা সমস্যা! যা পায় সেটা নিয়ে একদমই সন্তুষ্ট হয় না তারা। সবসময় খাই খাই করেই থাকে। পড়ালেখার টপিক বাদ দিয়ে গল্প করতে থাকলাম আলপনার সাথে। সময়টা এভাবেই কেটে যাচ্ছে। কোচিং প্রাইভেট সবই করছি কিন্তু নিজের সাথে যুদ্ধ করে। এমনিতেই নাইন ফেল, পাশ করেও স্যারদের নজরে ভাল হতে পারছি না আর ক্লাসমেটগুলাও কেমন যেন আমার সাথে ভালভাবে মিশতে চায় না। আর নকশার কথা বাদই দেই। অঙ্কন যে আমার নামে কেমন ব্রেইন ওয়াশ করছে কে জানে! আমাকে দেখলেই এমন ভাব করে যেন আমি ওর মেকাপ বক্সসহ খেয়ে ফেলেছি!
.
ম্যাথ কোচিং থেকে বের হয়ে মাথা নিচু করে সাইকেল নিয়ে হেটে যাচ্ছি। ইচ্ছা করছে না সাইকেল চালিয়ে বাসায় যাই। কারণ আজ কোচিংয়ে স্যার যা তা বলে অপমান করেছে আমাকে। কারণটা হল কে যেন Naksha+Ayaat লিখে রেখেছিল বোর্ডে! কত করে বললাম স্যার এসবের সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আমার কোনো ইচ্ছাও না যে নকশাকে ভালবাসবো! কিন্তু স্যার কিছুই শুনলেন না। আমি হাটতে হাটতে বাসা ফেলে এসেছি! টের পাই নি কখন আসলাম! হঠাৎ দেখি আলপনা ফিজিক্স কোচিং করে বের হচ্ছে! আমাকে দেখেই একটু অবাক হল। এ এলাকায় আমার আসার কোনো কারণ নেই।
"তুই এখানে কি করিস? আর তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?" আমি শুধু চুপচাপ বললাম, "কোথাও বসি তারপর বলছি!" কেন জানি আজ চোখের পানি আমি কোনভাবেই থামাতে পারছি না! ভারি ভাবে রাস্তায় কেঁদে ফেললাম! আলপনা অবাক হয়ে গেল! কিছু কিছু সময় কাঁদতে না চাইলেও কেমন যেন কান্না আরও দ্রুত চোখে আছড়ে পরে! এত চেপে রাখার চেষ্টা করলাম তাও থামাতে পারলাম না। আলপনা বারবার বলছে, "এই কিরে? কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে?" আমি উত্তর দিতেই পারছি না। কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন হাজারটা হাত আমার গলা চেপে ধরেছে! অল্প স্বল্প নির্জন রাস্তার পাশে দারিয়ে আমিই কেঁদেই যাচ্ছি, কান্না থামানোর কোনো উপায় পাচ্ছি না! খুব কষ্ট করে বললাম, " ম্যাথ ক.... ক.. ক... চিংয়ে নকশা+আ...আ.. য়াত........" আর কিছু বলতে পারলাম না। সারা পৃথিবীর সকল অশ্রু আজ আমার চোখ দিয়ে বের হচ্ছে! চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে কাঁদতে কাঁদতে! আলপনা কি করবে বুঝতে পারছে না বারবার কান্না থামাতে বলছে কিন্তু আমি বাচ্চাদের মত কেঁদেই যাচ্ছি।
"দোস্ত, পথচারী আর রিক্সার লোকজন আমাদের দিকে তাকাচ্ছে! কান্না থামা। প্লিজ!"
অনেকক্ষণপর আলপনাকে পুরো ঘটনা বললাম। অনেক কথা বললাম আলপনাকে। কথা বলতে গিয়ে আরও অনেক কথা বের হয়ে গেল! সবকথা শেয়ার করলাম আলপনার সাথে। আমার সবকথা শুনে শুধু সান্ত্বনা দেয়া ছাড়া আলপনার কিছু করার নাই। ছেলে হলে হয়তো হুমকি ধমকি দিয়ে ঘটনার সত্যতা বের করার চেষ্টা করতো! কিন্তু আলপনা সেটা পারবে না আর এটা আমি আলপনার কাছ থেকে আসা করি না। ওর ক্লাসের সবাই আমাকে দেখতে পারে না এমন নয়, দুই চারটা ছেলে আছে যারা আমাকে আগের মতই ভাল জানে। অল্প স্বল্প আড্ডা দিতে আসে মাঝে মাঝে! আজকের কোচিং এর ঘটনার পিছনে নকশা আর অঙ্কনের হাত রয়েছে সেটা আমি নিশ্চিত। কিন্তু কোন প্রমাণ নেই বলে আমি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারছি না। আমিও সেটাই করলাম যেটা অন্যান্য ছেলেরা করতো। হুম, স্যারের কোচিং ছেড়ে দিলাম। সাথে সেই মাসের বেতনটাও মেরে দিলাম।
.
দীর্ঘ একমাস ম্যাথ কোচিং থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছি। তাল না মিলাতে পেরে আমি নতুন কোচিংয়েও ভর্তি হতে পারছি না। এদিকে বার্ষিক পরীক্ষা খুব কাছাকাছি এসে পরেছে! রেজাল্ট এফ যেটা আমি চোখ বন্ধ করলেই প্রত্যেক দেয়ালে দেয়ালে দেখতে পাই!
ইদানিং আলপনাকে দেখতে পাই না। পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছে! ছাদে বসে শুধুই ভাবতাম যদি আমি আলপনার মত মেধাবী হতাম, আব্বু আম্মু খুশিতে সবসময় উৎফুল্ল থাকতো! গণিত ব্যতীত সব সাবজেক্টই পাশ করার মত লেখে আসতে পারবো। কিন্তু রহমান স্যারের জন্য ভয় হয়। টাকা দেই নি, কোচিংয়ে যাই নি, প্লাস নামের ঘটনা সব মিলিয়ে আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে!
.
সময়মত পরীক্ষাগুলো হয়ে গেল! কিন্তু আমার মনের যে ভয়টা ছিল সেটা কেটে যায় নি! স্যার যদি পাশ করানোর জন্য দুই তিন নাম্বার দেয় তাহলে আমি পাশ করে যেতে পারি। বার্ষিক পরীক্ষার জন্য আব্বু আম্মু অনেক খেয়াল রাখা শুরু করেছিল। নামাজে আল্লাহকে ডাকতো, শুধু একটাই আশা "ছেলেটা যেন ভাল রেজাল্ট করে!"
আমাকে নিয়ে তাদের অনেক আশা ভরসা আছে। স্বপ্ন আছে। মামাতো ভাই বোনদের সাথে তাল মিলিয়ে যেন চলতে পারি। তাদের মধ্যে কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে আর তার পরেই আমার স্থান। পড়ালেখায় তাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আমি!
খাওয়ার টেবিলে একসাথে বসে খাচ্ছি। হঠাৎ আব্বু বললো, "আয়াত, তোমার চোখের নিচে কালো হয়ে যাচ্ছে কেন?" "কি! কই দেখি?" আম্মুও বললো। আমি জানিই না আমার চোখের নিচে কালো হয়ে যাচ্ছে! "আরে কিছু না এগুলা!" আমি বললাম! "কিছু না মানে? রাতে ঘুমাও না ঠিক মত?" আব্বুর ঝাঁঝালো কথা। "না মানে, ঘুমাই ঠিকই...." কত রাত যে ঠিকমত ঘুম হয় না সে তো আমিই জানি! অঙ্কন, নকশা আর রহমান স্যার এই তিন ব্যক্তির কারণে আমার রাতে ঘুম হয় না। সারারাত জেগে থাকি! শেষ রাতে তারাদের ছুটাছুটি দেখি! কত রাতকে ভোর বানিয়েছি। নির্ঘুম রাতগুলোর সময় পার হয়ে যেত বছরের সময় নিয়ে!
.
আজ রেজাল্ট দিয়েছে! রেজাল্ট নিতে আম্মু আসে নি! জানাই আছে তাদের সন্তান কেমন রেজাল্ট করতে পারে!আর রেজাল্ট যা ভেবেছি তাই হয়েছে! এফ!! তবে আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেলাম যে আমি দশম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছি! কিভাবে হল এটা! আমি বিশেষ বিবেচনায় পাশ করেছি! রহমান স্যারের এক প্রিয় ছাত্রের কাছে শুনলাম তিনি আমাকে নাইনে তৃতীয়বার রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন! কিন্তু স্যার ভুলে গেছেন যে উপরে একজন আছেন!
রেজাল্টের দিন অঙ্কন এসেছে নকশার রেজাল্ট জানতে। বেশ কথোপকথন চলছিল তাদের মাঝে। দেখলাম নকশা বারবার চোখ মুছছে! বুঝে গেলাম রেজাল্টে ডিমোশন হয়েছে! গেট দিয়ে বের হব এমন সময় দেখি আলপনা আসছে! আমি ওর আসার কারণ ভাবতে পারছি না! ওদের ক্লাস তো অফ! দেখতে দেখতে আমার সামনে চলে আসলো!
আমিই আগে জিজ্ঞেস করলাম, "তুই আজ স্কুলে যে! কোনো কাজ আছে?"
"না তোর রেজাল্ট জানতে আসলাম!"
"কি করবি রেজাল্ট জেনে?"
"কি বলিস এসব? তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড! তোর রেজাল্ট জানতে চাইবো না কেন?"
"আমি বিশেষ বিবেচনায় পাশ করছি!"
আমার রেজাল্ট শুনে আলপনা বিশ্বাস করতে পারছে না! কিছুক্ষণ অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে থেকে দ্রুত হাত থেকে রেজাল্ট কার্ড নিয়ে নিল! কিছুক্ষণ রেজাল্ট কার্ড দেখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, "গাধা, ইতর! সারাদিন কি করিস? একটু পড়ালেখা করা যায় না? ওরা সবাই যে চাল খায় তুই তো তার বেশি ভাল মানের চাল খাস! ওদের রেজাল্টে বিবেচনা নাই তো তোর রেজাল্ট কার্ডে বিবেচনায় পাশ লেখা থাকবে কেন?"
আলপনার কথাগুলো আমার সারা দেহে তীরের মত ঢুকে রক্তাক্ত করে দিয়ে গেল! এক নিঃশ্বাসে এসব কথা বললো আলপনা! শেষমেশ রেজাল্ট কার্ডটা আমার দিকে ছুড়ে দিয়ে হাটা দিল আলপনা! একটু ভাল রেজাল্ট আশা করেছিল কিন্তু এমন রেজাল্ট সে আশা করে নি! চোখ দুটো ভিজে যাচ্ছে ওর এসব কথায়! বাম চোখটা মুছার জন্য আঙুল দিলাম সাথে সাথে ব্যথা লাগলো! তাকিয়ে দেখি আঙুল দুটোতে রক্ত লেগে আছে! রেজাল্ট কার্ডের শক্ত কোণাটা নাকের কাছাকাছি লেগেছে!আমার দৃষ্টিসীমা থেকে আলপনা ততক্ষণে অনেক দুরে চলে গেছে! বাসায় এসে রেজাল্ট কার্ড দেখে আম্মু আব্বুর অনেক কথা শুনতে হয়। কিন্তু রেজাল্টের শোকে কেউই আমার নাকের কাছাকাছি ক্ষতটা খেয়াল করে নি!
.
সকালে খাওয়ার সময় আম্মু ক্ষতটা খেয়াল করেছে! ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো, "আয়াত তোর গালে কাটা কিসের?" আমি সহজভাবে পাশ কাটিয়ে বললাম, "ভোরে দরজার সাথে বারি লাগছিল! তাতেই মনে হয় এমন হয়েছে!" খাওয়া শেষে আম্মু স্যাভলন লাগিয়ে দিল।
আসতে আসতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে লাগলো! আমি আগের মত পড়ালেখা করতে থাকি! একটু একটু করে মনোযোগ দিতে থাকি!
.
.
১১ই জানুয়ারি, ২০০৭,
.
স্কুলে ক্লাস ঠিকঠাক ভাবে হচ্ছে না। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু হবে কয়েক সপ্তাহ পরে। দশম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার জন্য অফিসের সামনে লাইন ধরে দারিয়ে আছি। নোটিশবোর্ডের সামনে এসে দেখি এস.এস.সির ক্যান্ডিডেটদের টেস্টের রেজাল্ট লাগানো আছে! প্রথম হয়েছে আলপনা!! যাক মেয়েটার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে! এবার রিয়াদ ফার্স্ট হতে পারে নি! গোল্ডেন পেয়েছে ছয়জন! এরমধ্যে আলপনার নাম সবার আগে! কত্ত পড়ালেখা করে আলপনা! অঙ্কনের নাম দেখলাম অনেক পরে! রেজাল্ট ৪.৩৮! এতে আমি খুব খুশি হয়েছি! মনে মনে একটা পৈশাচিক হাসি দিলাম! "ওই আয়াত, দারাই আছস কেন? সামনে যা!!" আরিফের কথায় বাস্তবে ফিরলাম! আমার সামনের অনেকেই ভর্তি হয়ে চলে গেছে! আমিও ভর্তি হয়ে আসলাম। এবার কোনো ঝামেলা হয় নি।
.
২২শে জানুয়ারি ২০০৭,
এস.এস.সির ক্যান্ডিডেটদের বিদায় অনুষ্ঠানের জন্য ক্লাসের সবাই বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছে! স্টেজ সাজানো, মাইক টেস্টিং, খাবার দাবার আরও নানান কিছু! আমিই একমাত্র পাবলিক যে গাছের নিচে বসে বেকার চিন্তা ভাবনা করে যাচ্ছি! অনেক ক্যান্ডিডেট ইতিমধ্যে স্কুলে হাজির হয়েছে! সবার আগে আসছে অঙ্কন। অনেক সাজ সজ্জা করে এসেছে! এমন পারফিউম নিয়েছে যা ২০০হাত দুর থেকেও ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে! একে একে সবাই চলে এসেছে! হায় কপাল! পাশ করলে আজ আমি ওদের দলে থাকতাম! কেউ গুরুত্ব না দিলেও আলপনা ঠিকই আমার সাথে সাথে থাকতো। আমি এ পর্যন্ত আলপনাকে খুঁজে পাই নি! যাই হোক, সবাই ক্লাসের দিকে যাচ্ছে তাই আমিও এগিয়ে গেলাম! দারিয়ে থাকলাম বাইরে। হঠাৎই দেখি আলপনা ভিতরে আছে! কখন গেল আমি দেখতেও পেলাম না!
কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে বিদায় অনুষ্ঠান শুরু হল। হেড স্যার বক্তব্য দিলেন। শিক্ষকসমাজ আলপনা, রিয়াদ, সায়েম, হাসান, মাহবুব, রিয়াসহ আরও কয়েকজন প্রথম কাতারের ছাত্রছাত্রীকে কিছু বক্তব্য দিতে বললেন! এরমধ্যে আলপনার কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শুনলাম!
সেদিন অল্প সময়ের জন্য আলপনার সাথে আমার চোখের দেখা হয়েছিল! ওরা সবাই ছবি উঠছিল আর আমি দারিয়ে দারিয়ে দেখছিলাম! এ ছাড়া আমার কিছুই করার ছিল না! কষ্টে আমি স্কুল থেকে চলে যাই। থাকুক ওরা, ওদের মত ভাল।
.
.
২২শে মে, ২০০৭
.
প্রখর তাপে সবাই অপেক্ষা করছে রেজাল্টের জন্য! সবাই একনামে আল্লাহকে ডাকছে! এমন সময় রহমান স্যার রেজাল্ট শীট নিয়ে আসলেন! জানতে পারি স্কুলের সবাই পাশ করেছে, ১২জন গোল্ডেন, ২৭জন প্লাস! এ এবং তার নিচে কে কোন পয়েন্ট পেয়েছে জানা নেই! হ্যা, এতটুকু জানি আলপনা গোল্ডেন পেয়েছে আর অঙ্কন ৪.২৪! কিন্তু আলপনা আমার সাথে একটুও দেখা করে নি! জানি না কেন সে এমনটা করছে! স্কুলের শিক্ষকসম্প্রদায় সবাই খুশি ছাত্রছাত্রীদের রেজাল্ট নিয়ে!.
এরপর আলপনার সাথে আমার তেমন কথা হয় নি! মেয়েটা নিজ ইচ্ছায় আমার সাথে কথা বলছে না! আমি আর বেশি কিছু আশা করি নি ওর কাছ থেকে। যথেষ্ট সাহায্য পেয়েছি আলপনার।
.
আমার টেস্ট পরীক্ষা সামনে! দেরি না করে অনেক কষ্ট করে আরেকটা ম্যাথ কোচিংয়ে পড়া আরম্ভ করলাম। বাসা এবং স্কুল উভয় থেকেই সাইকেল নিয়ে যেতে পনেরো বিশ মিনিট টাইম লাগে! ধীরে ধীরে মনোযোগী হচ্ছি! এতে আম্মু আব্বুও খুশি! শুধু আলপনাকে মিস করছি! পরীক্ষা আসলে আলপনা অনেক সাজেশন দিত আমাকে! কিছু না বুঝলে ক্লাসের ফাকে বুঝিয়ে দিত। সেদিন এক বন্ধুর কাছে শুনলাম সে রাজশাহীর এক সরকারি কলেজে পড়ছে! যাক পড়ুক, জানি সে ভালই করবে! এদিকে আমি নিজেকে ঘরের চার দেয়ালে বন্দি করে ফেলি। শুধুমাত্র কোচিংয়ের সময় কোচিংয়ে যাই তাছাড়া বাইরের প্রকৃতি দেখা হয় না। এর মানে এই নয় যে আমি সারাদিনই পড়ি! বাইরে যেতে ভাল লাগে না তাই!
.
এস.এস.সির শেষ পরীক্ষা ছিল আজ। এরপর ব্যবহারিক আছে। আমার অনুযায়ী আমি ভালো পরীক্ষাই দিলাম বাকিটা আল্লাহ ভরসা। প্র্যাক্টিকাল খাতাগুলো রেডি হয়ে গেছে। আমি নিজেই ভাবতে পারছি না আমি এস.এস.সি পরীক্ষার্থী! শুধু ব্যবহারিক গুলো শেষ হলেই আমি বেঁচে যাই। পরীক্ষাগুলোতে ভালই সাহায্য পেয়েছি অন্যান্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছে!
.
আজ সব পরীক্ষা শেষ হল। পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে বাসা প্রায় চার কি.মি দুরে। আজ এই পথটা আমি হেটে হেটেই যাচ্ছি। আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। বৃষ্টি শুরু হতে বেশি দেরি হবে না বলে মনে হচ্ছে। এডমিট কার্ড ও রেজিস্ট্রেশন কার্ডের নিরাপত্তা আরও জোরদার করে নিলাম। রাস্তার মোড়ে আসার সাথে সাথেই বৃষ্টি শুরু হল! মানুষজন এদিক সেদিক লুকানোর চেষ্টা করছে! আমি আপন মনে হেটেই চলেছি! কোনো চিন্তা নেই ভাবনা নেই। ভিজলে হাড় কাঁপানো জ্বর আসবে এব্যাপারেও আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই! ভালো তো! এভাবেই মুশলধারার বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আমি বাসার উদ্দেশ্য হাটতে থাকি!
.
.
.
চলবে.....
প্রথম পর্ব,
.
.
.
২১শে ডিসেম্বর, ২০০৫
সকাল ৮টা,
স্কুল প্রাঙ্গণ আজ খুব ভালভাবে সাজানো হয়েছে। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১মাস পর আজ রেজাল্ট দিবে। ছেলেমেয়েদের শীতকালীন ছুটির ঘন্টা প্রায় শেষের দিকে! চারদিকে ছাত্রছাত্রী দিয়ে ঘেরা। হেড স্যার মাইকের সামনে দারিয়ে একে একে ১ম শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত ১ম, ২য়, ৩য় স্থান পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের নাম ঘোষণা করলেন। প্রত্যেককে স্টেজে ডেকে আকর্ষণীয় পুরস্কার এবং রেজাল্টকার্ড দিয়ে হাত মিলিয়ে ক্যামেরায় তাকিয়ে ছবি উঠছে! করতালিমুখর সংবর্ধনায় তারা স্টেজে উঠেছিল আর সেভাবেই আনন্দের সাথে নেমে যাচ্ছে! তাদের অভিভাবকদের গুণগানে শিক্ষক সমাজ ব্যস্ত! অন্যান্য ছেলেমেয়েদের অভিভাবকরা বাসায় পৌঁছে তাদের সন্তানদের কিভাবে কাঁচা চিবিয়ে খাবে সেই পরিকল্পনায় ব্যস্ত! হ্যাঁ, এর মধ্যে আমার আম্মুও উপস্থিত আছেন! হেড স্যার বললেন, "এবার ৯ম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পালা!............ ৩য় স্থান অধিকার করেছে বখতিয়ার ইসলাম হাসান!" সাথে সাথে হাততালি শুরু হল! "২য় স্থান অধিকার করেছে আলপনা করিম!" হুম, আমার মনটা অনেকে ভাল হয়ে গেল! আমি চাচ্ছিলাম আলপনা সেকেন্ড হোক। "বরাবরের মত ১ম স্থান অধিকারকারী ছাত্রের নাম আল মাহমুদ রিয়াদ!" হেডস্যার এমনভাবে রিয়াদের নাম নিলেন যেন মনে হচ্ছে রিয়াদের চেয়ে স্যার নিজেই বেশি খুশি হয়েছে! বাকি ছাত্রছাত্রীদের রেজাল্ট নিজ নিজ ক্লাসে দেয়া হবে!" মনে মনে ভাবলাম হয়তো অপমানের বোঝা একটু কমলো! আম্মুর দিকে তাকিয়ে দেখি আম্মু রাগে চোখ বড় করে কটমট করে তাকিয়ে আছে! স্কুল ফাঁকা থাকলে হয়তো আজ এখানেই আমার সমাধি হত! ক্লাসরুমে সবার পিছনের বেঞ্চে বসে পরলাম আর আম্মু অন্যান্য মহিলাদের সাথে সামনে বসে আছে। ক্লাস টিচার রেজাল্ট কার্ড গুলো এনে টেবিলে রেখে তার প্রিয় ছাত্র অঙ্কনকে ডেকে বললেন, "নাম ডেকে কার্ডগুলো দিয়ে দে...!" অঙ্কনের সাথে একটু পরিচয় করিয়ে দিই। পুরো নাম, "মিল্লাত রহমান অঙ্কন। মোটামুটি ভাল ছাত্র। তার বদ অভ্যাসের মধ্যে অন্যতম হল সে যা অর্জন করে সেটা নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট হয় না! কোন স্টুডেন্ট ওর চেয়ে ভাল রেজাল্ট করলে সে কিছুতেই মানতে পারে না! অঙ্কন নাম ডেকে কার্ড দিচ্ছে সাথে রেজাল্ট গুলোও দেখে নিচ্ছে। পাশ করা স্টুডেন্টদের আর অঙ্কনের পছন্দ হচ্ছে না। এদিকে আমি আর খেয়াল করি নি আলপনা কোথায় বসেছে! এমন সময় একটা নাম ডাকলো অঙ্কন, "আতিকুল হাসান জসিম, রেজাল্ট এফ!!!!!!" কথাটা শুনেই মেজাজ বিগড়ে গেল! এরপর থেকে যারাই ফেল করেছে সবার রেজাল্ট নিজ মুখে "এফ" বলে যাচ্ছে!! আমরা সবাই আহাম্মক হয়ে গেলাম। মানলাম অঙ্কন ভাল ছাত্র এবং রোল সবসময় দশের মধ্যে থাকে! তার মানে এই নয় যে কারো ব্যাড রিপোর্ট সে সবার সামনে এভাবে বলার অধিকার রাখে না। ফেল করা ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকরা মাথা নিচু করে আছে। কোন ভাবে ক্লাসরুম থেকে বের হতে পারলে তারা বেঁচে যায়। "আয়াত মাহবুব, রেজাল্ট এফ।" আমার রেজাল্ট!!!! সবার সামনে অঙ্কন বললো! এই ভীড় ঠেলে সামনে গিয়ে নির্লজ্জের মত রেজাল্ট কার্ড কিভাবে আনবো মাথায় আসছে না! বড় কথা হল বার্ষিক পরীক্ষায় আমি ফেইল!!! দশম শ্রেণীতে উঠতে পারবো না! ছোট ভাইগুলা আমাকে নাম ধরে ডাকবে! আলপনা আমার বড়! কি নির্মম ভাগ্য! আম্মুর দিকে তাকালাম কিন্তু ততক্ষণে আম্মু রুম থেকে বের হয়ে গিয়েছে! ফেল করা ছাত্রছাত্রীর অভিভাবকরা অপেক্ষা করছে ক্লাসরুম ফাকা হলে তাদের রেজাল্ট নিবে। কিন্তু আমি আর অপেক্ষা করলাম না। রেজাল্ট নিয়ে সোজা বাসার উদ্দেশ্য রওনা হলাম।
আম্মু আমার দশ পা সামনে হাটছে। মাঝে মাঝে রাস্তায় থেমে যাচ্ছে আর আমার দিকে তাকাচ্ছে! ওই সময়টা আমার পা আর চলতে চাচ্ছিল না। জানি না বাসায় আজ ইসরাফিল আঃ কেমন শক্তিতে ফু দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে! মনের ভিতরটা ভয়ে একদম ছোট হয়ে যাচ্ছে!
সেদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত আমার উপর এমন কোন ঝড় নেই যা আঘাত করে নি। অনেক মারধরও খাওয়া লাগছে। ইচ্ছা হচ্ছিল সিনেমার মত বাসা থেকে পালিয়ে যাই। কিন্তু পালিয়ে গিয়ে করবো কি? আর সবচেয়ে বেশি রাগ হচ্ছিল অঙ্কনের উপর! ষষ্ঠ হইছে তাই কি ভাব হারামজাদার!
.
কয়েক সপ্তাহ হল আম্মু আব্বু ঠিকঠাক ভাবে কথা বলছে না। কারণ খালাতো বোনেরও রেজাল্ট দিয়েছে এবং সে প্রথম হয়েছে! কি দারুণ কপাল আমার! সবখানে খুশির ছড়াছড়ি আর আমার বাসায় হিংসার আগুন!
.
১৬ই জানুয়ারি ২০০৬,
ফের নবম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার জন্য স্কুলে গেলাম! লম্বা লাইনে দারিয়ে থাকার পর বেতন কাউন্টারের সামনে যেতেই, "কিরে আয়াত? নবম শ্রেণীতে ভর্তি হচ্ছিস যে?" ক্যাশিয়ার চাচা এমনভাবে বললেন যেন আমি চার পাঁচ বছর হল নবম শ্রেণীতেই আছি!! "ওহ, আচ্ছা! নিশ্চয়ই ফেল করছিস?" পিছনে থাকা মেয়েরা এমনভাবে চাহনি দিল যেন এলিয়েন দেখছে! রেগে গিয়ে বললাম, "তাতে আপনার কি? টাকা দিছি, স্লিপ আর বেতন বই দেন..."
কিন্ত লোকজন ফেল করা স্টুডেন্টের রাগের মাঝে বেয়াদবি খুঁজে পায় আর ভাল ছাত্রের রাগের মাঝে জীদ খুঁজে পায়। "যা... তো, বিদায় হ... পড়ালেখা নাই, আদুভাই আইছে ভর্তি হইতে!" ইচ্ছা হচ্ছিল অফিসে আগুন লাগিয়ে দেই। রাগে দুঃখে চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। অফিস থেকে হতেই আলপনার সাথে দেখা!
"কেমন আছিস?"
"জানিস যে ভাল নাই, তারপরও জিজ্ঞেস করিস কেন?" রেগে গিয়ে আলপনাকে বললাম। একটু দুরেই ওর আম্মু ছিল। আমার রাগের আওয়াজ উনার কান পর্যন্ত পৌঁছেছে! উনি এসে আলপনাকে বললেন, "কি হয়ছে? চল ভিতরে, আর এই ছেলে কে?" "আম্মু ও আমার ক্লাসমেট, আয়াত!" ক্লাসমেট!!! ক্লোজ বন্ধু থেকে সহপাঠী! যাক কমপক্ষে সহপাঠীতো বলছে, অন্যরা ছোটভাই বলা শুরু করছে! "তা বাবা তোমার রেজাল্ট কি? রোল কত?"
যে প্রশ্নটা আমি সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি। কেমনে বলি আমি ফেইল করছি! "মোটামুটি হইছে, আচ্ছা আন্টি আমি একটু ব্যস্ত, পরে কথা হবে! আসসালামু আ'লাইকুম।" কোনমতে তাদের পাশ কাটিয়ে বের হয়ে গেলাম। এমন দিনও দেখতে হবে তা আমার জানা ছিল না।
.
ক্লাস রুমে গিয়ে সেই পিছনের বেঞ্চে বসে পরলাম। আশেপাশের সবার নতুন বই আর আমার পুরানো মলাট বাধানো বই!
ক্লাস ঠিকঠাক মতই যাচ্ছে। প্রতিদিন যাচ্ছি। শুধু আফসোস হয় আলপনার জন্য। আর আলপনাকে দেখলে আরও বেশি খারাপ লাগে! আমার সিনিয়র বলে কথা!
ক্লাসে নতুন একটা মেয়ে ভর্তি হয়েছে। নাম নকশা! খুব সুন্দর চেহারা আর খুব বাজে ক্যারেকটার। যদিও এটা আমার সন্দেহ। দেখতে দেখতে ক্লাসে খুব নামকরা হলে গেল নকশা! মেয়েদের মনিটরও নির্বাচিত হল সেটাও আবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়! আমি একটা ভবিষ্যৎ বানী করছিলাম নকশাকে নিয়ে। সেটা হল নকশা অঙ্কনের প্রেমে পরবে। নকশা নবম শ্রেণীর মেয়েদের মনিটর আর অঙ্কন দশম শ্রেণীর! ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে নিজেদের মাঝে চোখাচোখিও হয়! এখনও পর্যন্ত ক্লাসের কারও সাথে আমার ভাল বন্ধুত্ব হয় নি। নাইন ফেল বলে কেউ বন্ধুত্ব করতেও চায় না। টুকটাক কথা হয় মাঝে সাঝে। এভাবে দেখতে দেখতে ১ম সাময়িক পরীক্ষা শুরু হল। গণিত পরীক্ষায় আমার সামনে নকশা আর নকশার পাশে অঙ্কন! ৭ম, ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের সিট একরুমে! আমার আর একটা অংক হলেই পাশ উঠে যাবে কিন্তু কার কাছ থেকে দেখবো বুঝতেছি না। নকশাকে ইশারা করলাম বারবার একটু দেখানোর জন্য। কিন্তু নকশা দেখাচ্ছে না। আবার ডাকলাম নকশাকে, তখনই অঙ্কন উঠে বললো, "স্যার, আয়াত নকশাকে ডেকে আমাদের সবার পরীক্ষা দেয়ার কনসান্ট্রেশন নষ্ট করে দিচ্ছে !" আমার কলম চলা বন্ধ করে দিল তবুও এমন ভাব নিচ্ছি যেন আমার লেখার গতি হুলস্থুল গতিতে চলছে! অঙ্কনের এমন কথায় স্যার আমাকে সামনের বেঞ্চে বসিয়ে দিলেন! পরীক্ষার হলে সামনের বেঞ্চ একটা ছাত্রের জন্য কোনো জেলখানার চেয়ে কম না!
পরীক্ষা শেষ, অঙ্কন নকশার উত্তরগুলোর ভুল ত্রুটি তুলে ধরছে। আমি গিয়ে বললাম, "অঙ্কন, তোর প্রব্লেম কি? আমার বাশ মারতে তর খুব মজা লাগে?" অঙ্কন এমনভাবে তাকালো যেন আমি এলিয়েন! প্রশ্ন ভাজ করতে করতে বললো, "তুই আমাদের ছোট ভাই! নাইন ফেল, তুই আমাকে ভাই বলে ডাকবি! তা না নাম ধরে ডাকিস! সাহস বেশি হয়ে গেছে?" নকশা মিটিমিটি হাসছে! "বাদ দেন তো অঙ্কন ভাইয়া, চলেন যাই।" নকশার জবাব! ওরা যাওয়ার পর পিছনে ফিরতেই দেখি আলপনা দারিয়ে আছে! আমি জানি আলপনা সব শুনেছে।
.
"কেমন বাচ্চা ছেলের মত স্বভাব ওর! আমার পিছে লাগছে কেন?" আলপনাকে জিজ্ঞেস করলাম। "জানিস নকশা আর ওর রিলেশন চলতেছে। অনেকবার ডেটও করছে!" আমি বললাম, "তো আমাকে বলছিস কেন? যা পারলে ওদের হেল্প কর আর ওদের টপিক নিয়ে কোনো কথা বলবি না।"
খানিকক্ষণ চুপ থেকে আবার বললাম, "তুই যা, আমার সাথে কথাবার্তা বলার দরকার নাই। সবাই খারাপ ভাববে।" আলপনাকে কথা বলার সুযোগ দিলাম না। ওকে ছেড়ে অলিগলির মধ্য দিয়ে অন্য রাস্তায় ঢুকলাম।
.
১৫ই জুন ২০০৬,
আজ ১ম সাময়িক পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে। একটু ভাল লাগছে যে এই ক্লাসে অঙ্কন টাইপের বাড়তি অহংকারী ছাত্র নেই। পাশ বা ফেল কিছু একটাতো করবো। দেখতে দেখতে স্যার চলে এলেন। রোল কল করে সবার রেজাল্ট কার্ড দিয়ে দিলেন! আমি রেজাল্ট কার্ড খুলে খুব খুশি হয়ে গেলাম! ভাল রেজাল্ট করি নি কিন্তু পাশ করে গেছি! এটাই অনেক! বারবার রেজাল্ট কার্ডের এ টু জেড পরে যাচ্ছি। খুবই ভাল লাগছে নিজের কাছে। ক্লাসে আলপনা থাকলে হয়তো অনেক খুশি হইতো! টিফিন ব্রেকে মাঠে একাই বসে আছি। এমন সময় আলপনা এল। জিজ্ঞেস করলো, "দোস্ত, তোর রেজাল্ট কেমন হয়েছে?" "পাশ করছি, ৩.৬৯।" আলপনা খুশি হল আর বললো, "আমি ভয়ে ছিলাম সেদিনের তোর ম্যাথ পরীক্ষা নিয়ে। যাই হোক পাশ করছিস এখন ট্রিট দে!"
আসছে ট্রিট নেয়ার জন্য........!!
আমি বললাম, "আমি পাশ করছি তুই আমাকে আগে ট্রিট দিবি আর তোর রেজাল্ট কি?" একটু মন খারাপ করে বললো, "৪.৯৪! আরেকটু পরিষ্কার করে লিখলে হয়তো প্লাস এসে যেত!"
"যা পাইছিস তাতেই সন্তুষ্ট থাক...."
"নারে, ৪ পয়েন্ট থেকে ৪.৭৫ পর্যন্ত পেলে সন্তুষ্ট থাকতাম কিন্তু ৪.৯৪ পাওয়াটা খুব কষ্টের। ফিনিস লাইনের সামনে এসে গাড়ি নষ্ট হওয়ার সমান।"
"আচ্ছা, বাদ দে, এমনিই এস.এস.সিতে গোল্ডেন নিশ্চিত তোর।"
ভাল ছাত্রছাত্রীদের এই একটা সমস্যা! যা পায় সেটা নিয়ে একদমই সন্তুষ্ট হয় না তারা। সবসময় খাই খাই করেই থাকে। পড়ালেখার টপিক বাদ দিয়ে গল্প করতে থাকলাম আলপনার সাথে। সময়টা এভাবেই কেটে যাচ্ছে। কোচিং প্রাইভেট সবই করছি কিন্তু নিজের সাথে যুদ্ধ করে। এমনিতেই নাইন ফেল, পাশ করেও স্যারদের নজরে ভাল হতে পারছি না আর ক্লাসমেটগুলাও কেমন যেন আমার সাথে ভালভাবে মিশতে চায় না। আর নকশার কথা বাদই দেই। অঙ্কন যে আমার নামে কেমন ব্রেইন ওয়াশ করছে কে জানে! আমাকে দেখলেই এমন ভাব করে যেন আমি ওর মেকাপ বক্সসহ খেয়ে ফেলেছি!
.
ম্যাথ কোচিং থেকে বের হয়ে মাথা নিচু করে সাইকেল নিয়ে হেটে যাচ্ছি। ইচ্ছা করছে না সাইকেল চালিয়ে বাসায় যাই। কারণ আজ কোচিংয়ে স্যার যা তা বলে অপমান করেছে আমাকে। কারণটা হল কে যেন Naksha+Ayaat লিখে রেখেছিল বোর্ডে! কত করে বললাম স্যার এসবের সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আমার কোনো ইচ্ছাও না যে নকশাকে ভালবাসবো! কিন্তু স্যার কিছুই শুনলেন না। আমি হাটতে হাটতে বাসা ফেলে এসেছি! টের পাই নি কখন আসলাম! হঠাৎ দেখি আলপনা ফিজিক্স কোচিং করে বের হচ্ছে! আমাকে দেখেই একটু অবাক হল। এ এলাকায় আমার আসার কোনো কারণ নেই।
"তুই এখানে কি করিস? আর তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?" আমি শুধু চুপচাপ বললাম, "কোথাও বসি তারপর বলছি!" কেন জানি আজ চোখের পানি আমি কোনভাবেই থামাতে পারছি না! ভারি ভাবে রাস্তায় কেঁদে ফেললাম! আলপনা অবাক হয়ে গেল! কিছু কিছু সময় কাঁদতে না চাইলেও কেমন যেন কান্না আরও দ্রুত চোখে আছড়ে পরে! এত চেপে রাখার চেষ্টা করলাম তাও থামাতে পারলাম না। আলপনা বারবার বলছে, "এই কিরে? কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে?" আমি উত্তর দিতেই পারছি না। কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন হাজারটা হাত আমার গলা চেপে ধরেছে! অল্প স্বল্প নির্জন রাস্তার পাশে দারিয়ে আমিই কেঁদেই যাচ্ছি, কান্না থামানোর কোনো উপায় পাচ্ছি না! খুব কষ্ট করে বললাম, " ম্যাথ ক.... ক.. ক... চিংয়ে নকশা+আ...আ.. য়াত........" আর কিছু বলতে পারলাম না। সারা পৃথিবীর সকল অশ্রু আজ আমার চোখ দিয়ে বের হচ্ছে! চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে কাঁদতে কাঁদতে! আলপনা কি করবে বুঝতে পারছে না বারবার কান্না থামাতে বলছে কিন্তু আমি বাচ্চাদের মত কেঁদেই যাচ্ছি।
"দোস্ত, পথচারী আর রিক্সার লোকজন আমাদের দিকে তাকাচ্ছে! কান্না থামা। প্লিজ!"
অনেকক্ষণপর আলপনাকে পুরো ঘটনা বললাম। অনেক কথা বললাম আলপনাকে। কথা বলতে গিয়ে আরও অনেক কথা বের হয়ে গেল! সবকথা শেয়ার করলাম আলপনার সাথে। আমার সবকথা শুনে শুধু সান্ত্বনা দেয়া ছাড়া আলপনার কিছু করার নাই। ছেলে হলে হয়তো হুমকি ধমকি দিয়ে ঘটনার সত্যতা বের করার চেষ্টা করতো! কিন্তু আলপনা সেটা পারবে না আর এটা আমি আলপনার কাছ থেকে আসা করি না। ওর ক্লাসের সবাই আমাকে দেখতে পারে না এমন নয়, দুই চারটা ছেলে আছে যারা আমাকে আগের মতই ভাল জানে। অল্প স্বল্প আড্ডা দিতে আসে মাঝে মাঝে! আজকের কোচিং এর ঘটনার পিছনে নকশা আর অঙ্কনের হাত রয়েছে সেটা আমি নিশ্চিত। কিন্তু কোন প্রমাণ নেই বলে আমি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারছি না। আমিও সেটাই করলাম যেটা অন্যান্য ছেলেরা করতো। হুম, স্যারের কোচিং ছেড়ে দিলাম। সাথে সেই মাসের বেতনটাও মেরে দিলাম।
.
দীর্ঘ একমাস ম্যাথ কোচিং থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছি। তাল না মিলাতে পেরে আমি নতুন কোচিংয়েও ভর্তি হতে পারছি না। এদিকে বার্ষিক পরীক্ষা খুব কাছাকাছি এসে পরেছে! রেজাল্ট এফ যেটা আমি চোখ বন্ধ করলেই প্রত্যেক দেয়ালে দেয়ালে দেখতে পাই!
ইদানিং আলপনাকে দেখতে পাই না। পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছে! ছাদে বসে শুধুই ভাবতাম যদি আমি আলপনার মত মেধাবী হতাম, আব্বু আম্মু খুশিতে সবসময় উৎফুল্ল থাকতো! গণিত ব্যতীত সব সাবজেক্টই পাশ করার মত লেখে আসতে পারবো। কিন্তু রহমান স্যারের জন্য ভয় হয়। টাকা দেই নি, কোচিংয়ে যাই নি, প্লাস নামের ঘটনা সব মিলিয়ে আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে!
.
সময়মত পরীক্ষাগুলো হয়ে গেল! কিন্তু আমার মনের যে ভয়টা ছিল সেটা কেটে যায় নি! স্যার যদি পাশ করানোর জন্য দুই তিন নাম্বার দেয় তাহলে আমি পাশ করে যেতে পারি। বার্ষিক পরীক্ষার জন্য আব্বু আম্মু অনেক খেয়াল রাখা শুরু করেছিল। নামাজে আল্লাহকে ডাকতো, শুধু একটাই আশা "ছেলেটা যেন ভাল রেজাল্ট করে!"
আমাকে নিয়ে তাদের অনেক আশা ভরসা আছে। স্বপ্ন আছে। মামাতো ভাই বোনদের সাথে তাল মিলিয়ে যেন চলতে পারি। তাদের মধ্যে কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে আর তার পরেই আমার স্থান। পড়ালেখায় তাদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আমি!
খাওয়ার টেবিলে একসাথে বসে খাচ্ছি। হঠাৎ আব্বু বললো, "আয়াত, তোমার চোখের নিচে কালো হয়ে যাচ্ছে কেন?" "কি! কই দেখি?" আম্মুও বললো। আমি জানিই না আমার চোখের নিচে কালো হয়ে যাচ্ছে! "আরে কিছু না এগুলা!" আমি বললাম! "কিছু না মানে? রাতে ঘুমাও না ঠিক মত?" আব্বুর ঝাঁঝালো কথা। "না মানে, ঘুমাই ঠিকই...." কত রাত যে ঠিকমত ঘুম হয় না সে তো আমিই জানি! অঙ্কন, নকশা আর রহমান স্যার এই তিন ব্যক্তির কারণে আমার রাতে ঘুম হয় না। সারারাত জেগে থাকি! শেষ রাতে তারাদের ছুটাছুটি দেখি! কত রাতকে ভোর বানিয়েছি। নির্ঘুম রাতগুলোর সময় পার হয়ে যেত বছরের সময় নিয়ে!
.
আজ রেজাল্ট দিয়েছে! রেজাল্ট নিতে আম্মু আসে নি! জানাই আছে তাদের সন্তান কেমন রেজাল্ট করতে পারে!আর রেজাল্ট যা ভেবেছি তাই হয়েছে! এফ!! তবে আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেলাম যে আমি দশম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছি! কিভাবে হল এটা! আমি বিশেষ বিবেচনায় পাশ করেছি! রহমান স্যারের এক প্রিয় ছাত্রের কাছে শুনলাম তিনি আমাকে নাইনে তৃতীয়বার রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন! কিন্তু স্যার ভুলে গেছেন যে উপরে একজন আছেন!
রেজাল্টের দিন অঙ্কন এসেছে নকশার রেজাল্ট জানতে। বেশ কথোপকথন চলছিল তাদের মাঝে। দেখলাম নকশা বারবার চোখ মুছছে! বুঝে গেলাম রেজাল্টে ডিমোশন হয়েছে! গেট দিয়ে বের হব এমন সময় দেখি আলপনা আসছে! আমি ওর আসার কারণ ভাবতে পারছি না! ওদের ক্লাস তো অফ! দেখতে দেখতে আমার সামনে চলে আসলো!
আমিই আগে জিজ্ঞেস করলাম, "তুই আজ স্কুলে যে! কোনো কাজ আছে?"
"না তোর রেজাল্ট জানতে আসলাম!"
"কি করবি রেজাল্ট জেনে?"
"কি বলিস এসব? তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড! তোর রেজাল্ট জানতে চাইবো না কেন?"
"আমি বিশেষ বিবেচনায় পাশ করছি!"
আমার রেজাল্ট শুনে আলপনা বিশ্বাস করতে পারছে না! কিছুক্ষণ অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে থেকে দ্রুত হাত থেকে রেজাল্ট কার্ড নিয়ে নিল! কিছুক্ষণ রেজাল্ট কার্ড দেখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, "গাধা, ইতর! সারাদিন কি করিস? একটু পড়ালেখা করা যায় না? ওরা সবাই যে চাল খায় তুই তো তার বেশি ভাল মানের চাল খাস! ওদের রেজাল্টে বিবেচনা নাই তো তোর রেজাল্ট কার্ডে বিবেচনায় পাশ লেখা থাকবে কেন?"
আলপনার কথাগুলো আমার সারা দেহে তীরের মত ঢুকে রক্তাক্ত করে দিয়ে গেল! এক নিঃশ্বাসে এসব কথা বললো আলপনা! শেষমেশ রেজাল্ট কার্ডটা আমার দিকে ছুড়ে দিয়ে হাটা দিল আলপনা! একটু ভাল রেজাল্ট আশা করেছিল কিন্তু এমন রেজাল্ট সে আশা করে নি! চোখ দুটো ভিজে যাচ্ছে ওর এসব কথায়! বাম চোখটা মুছার জন্য আঙুল দিলাম সাথে সাথে ব্যথা লাগলো! তাকিয়ে দেখি আঙুল দুটোতে রক্ত লেগে আছে! রেজাল্ট কার্ডের শক্ত কোণাটা নাকের কাছাকাছি লেগেছে!আমার দৃষ্টিসীমা থেকে আলপনা ততক্ষণে অনেক দুরে চলে গেছে! বাসায় এসে রেজাল্ট কার্ড দেখে আম্মু আব্বুর অনেক কথা শুনতে হয়। কিন্তু রেজাল্টের শোকে কেউই আমার নাকের কাছাকাছি ক্ষতটা খেয়াল করে নি!
.
সকালে খাওয়ার সময় আম্মু ক্ষতটা খেয়াল করেছে! ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো, "আয়াত তোর গালে কাটা কিসের?" আমি সহজভাবে পাশ কাটিয়ে বললাম, "ভোরে দরজার সাথে বারি লাগছিল! তাতেই মনে হয় এমন হয়েছে!" খাওয়া শেষে আম্মু স্যাভলন লাগিয়ে দিল।
আসতে আসতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে লাগলো! আমি আগের মত পড়ালেখা করতে থাকি! একটু একটু করে মনোযোগ দিতে থাকি!
.
.
১১ই জানুয়ারি, ২০০৭,
.
স্কুলে ক্লাস ঠিকঠাক ভাবে হচ্ছে না। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু হবে কয়েক সপ্তাহ পরে। দশম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার জন্য অফিসের সামনে লাইন ধরে দারিয়ে আছি। নোটিশবোর্ডের সামনে এসে দেখি এস.এস.সির ক্যান্ডিডেটদের টেস্টের রেজাল্ট লাগানো আছে! প্রথম হয়েছে আলপনা!! যাক মেয়েটার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে! এবার রিয়াদ ফার্স্ট হতে পারে নি! গোল্ডেন পেয়েছে ছয়জন! এরমধ্যে আলপনার নাম সবার আগে! কত্ত পড়ালেখা করে আলপনা! অঙ্কনের নাম দেখলাম অনেক পরে! রেজাল্ট ৪.৩৮! এতে আমি খুব খুশি হয়েছি! মনে মনে একটা পৈশাচিক হাসি দিলাম! "ওই আয়াত, দারাই আছস কেন? সামনে যা!!" আরিফের কথায় বাস্তবে ফিরলাম! আমার সামনের অনেকেই ভর্তি হয়ে চলে গেছে! আমিও ভর্তি হয়ে আসলাম। এবার কোনো ঝামেলা হয় নি।
.
২২শে জানুয়ারি ২০০৭,
এস.এস.সির ক্যান্ডিডেটদের বিদায় অনুষ্ঠানের জন্য ক্লাসের সবাই বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছে! স্টেজ সাজানো, মাইক টেস্টিং, খাবার দাবার আরও নানান কিছু! আমিই একমাত্র পাবলিক যে গাছের নিচে বসে বেকার চিন্তা ভাবনা করে যাচ্ছি! অনেক ক্যান্ডিডেট ইতিমধ্যে স্কুলে হাজির হয়েছে! সবার আগে আসছে অঙ্কন। অনেক সাজ সজ্জা করে এসেছে! এমন পারফিউম নিয়েছে যা ২০০হাত দুর থেকেও ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে! একে একে সবাই চলে এসেছে! হায় কপাল! পাশ করলে আজ আমি ওদের দলে থাকতাম! কেউ গুরুত্ব না দিলেও আলপনা ঠিকই আমার সাথে সাথে থাকতো। আমি এ পর্যন্ত আলপনাকে খুঁজে পাই নি! যাই হোক, সবাই ক্লাসের দিকে যাচ্ছে তাই আমিও এগিয়ে গেলাম! দারিয়ে থাকলাম বাইরে। হঠাৎই দেখি আলপনা ভিতরে আছে! কখন গেল আমি দেখতেও পেলাম না!
কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে বিদায় অনুষ্ঠান শুরু হল। হেড স্যার বক্তব্য দিলেন। শিক্ষকসমাজ আলপনা, রিয়াদ, সায়েম, হাসান, মাহবুব, রিয়াসহ আরও কয়েকজন প্রথম কাতারের ছাত্রছাত্রীকে কিছু বক্তব্য দিতে বললেন! এরমধ্যে আলপনার কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শুনলাম!
সেদিন অল্প সময়ের জন্য আলপনার সাথে আমার চোখের দেখা হয়েছিল! ওরা সবাই ছবি উঠছিল আর আমি দারিয়ে দারিয়ে দেখছিলাম! এ ছাড়া আমার কিছুই করার ছিল না! কষ্টে আমি স্কুল থেকে চলে যাই। থাকুক ওরা, ওদের মত ভাল।
.
.
২২শে মে, ২০০৭
.
প্রখর তাপে সবাই অপেক্ষা করছে রেজাল্টের জন্য! সবাই একনামে আল্লাহকে ডাকছে! এমন সময় রহমান স্যার রেজাল্ট শীট নিয়ে আসলেন! জানতে পারি স্কুলের সবাই পাশ করেছে, ১২জন গোল্ডেন, ২৭জন প্লাস! এ এবং তার নিচে কে কোন পয়েন্ট পেয়েছে জানা নেই! হ্যা, এতটুকু জানি আলপনা গোল্ডেন পেয়েছে আর অঙ্কন ৪.২৪! কিন্তু আলপনা আমার সাথে একটুও দেখা করে নি! জানি না কেন সে এমনটা করছে! স্কুলের শিক্ষকসম্প্রদায় সবাই খুশি ছাত্রছাত্রীদের রেজাল্ট নিয়ে!.
এরপর আলপনার সাথে আমার তেমন কথা হয় নি! মেয়েটা নিজ ইচ্ছায় আমার সাথে কথা বলছে না! আমি আর বেশি কিছু আশা করি নি ওর কাছ থেকে। যথেষ্ট সাহায্য পেয়েছি আলপনার।
.
আমার টেস্ট পরীক্ষা সামনে! দেরি না করে অনেক কষ্ট করে আরেকটা ম্যাথ কোচিংয়ে পড়া আরম্ভ করলাম। বাসা এবং স্কুল উভয় থেকেই সাইকেল নিয়ে যেতে পনেরো বিশ মিনিট টাইম লাগে! ধীরে ধীরে মনোযোগী হচ্ছি! এতে আম্মু আব্বুও খুশি! শুধু আলপনাকে মিস করছি! পরীক্ষা আসলে আলপনা অনেক সাজেশন দিত আমাকে! কিছু না বুঝলে ক্লাসের ফাকে বুঝিয়ে দিত। সেদিন এক বন্ধুর কাছে শুনলাম সে রাজশাহীর এক সরকারি কলেজে পড়ছে! যাক পড়ুক, জানি সে ভালই করবে! এদিকে আমি নিজেকে ঘরের চার দেয়ালে বন্দি করে ফেলি। শুধুমাত্র কোচিংয়ের সময় কোচিংয়ে যাই তাছাড়া বাইরের প্রকৃতি দেখা হয় না। এর মানে এই নয় যে আমি সারাদিনই পড়ি! বাইরে যেতে ভাল লাগে না তাই!
.
এস.এস.সির শেষ পরীক্ষা ছিল আজ। এরপর ব্যবহারিক আছে। আমার অনুযায়ী আমি ভালো পরীক্ষাই দিলাম বাকিটা আল্লাহ ভরসা। প্র্যাক্টিকাল খাতাগুলো রেডি হয়ে গেছে। আমি নিজেই ভাবতে পারছি না আমি এস.এস.সি পরীক্ষার্থী! শুধু ব্যবহারিক গুলো শেষ হলেই আমি বেঁচে যাই। পরীক্ষাগুলোতে ভালই সাহায্য পেয়েছি অন্যান্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছে!
.
আজ সব পরীক্ষা শেষ হল। পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে বাসা প্রায় চার কি.মি দুরে। আজ এই পথটা আমি হেটে হেটেই যাচ্ছি। আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। বৃষ্টি শুরু হতে বেশি দেরি হবে না বলে মনে হচ্ছে। এডমিট কার্ড ও রেজিস্ট্রেশন কার্ডের নিরাপত্তা আরও জোরদার করে নিলাম। রাস্তার মোড়ে আসার সাথে সাথেই বৃষ্টি শুরু হল! মানুষজন এদিক সেদিক লুকানোর চেষ্টা করছে! আমি আপন মনে হেটেই চলেছি! কোনো চিন্তা নেই ভাবনা নেই। ভিজলে হাড় কাঁপানো জ্বর আসবে এব্যাপারেও আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই! ভালো তো! এভাবেই মুশলধারার বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আমি বাসার উদ্দেশ্য হাটতে থাকি!
.
.
.
চলবে.....
©somewhere in net ltd.