নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবতে ভালবাসি, সেই ভাবনা যদি কোনো ঘটনায় মিলে যায় তবে তাকে লিখতে ভালবাসি! সেই লেখায় যদি কেউ বিন্দুমাত্র উপকৃত হয় তবে তাতেই আমার খুশি, আমি লেখাকে ভালবাসি।

দর্পণের প্রতিবিম্ব

প্রেমিকার চিরশত্রু

দর্পণের প্রতিবিম্ব › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: আয়নার দর্পণ

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:৪০

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে! কুমিল্লার টাইম স্কয়ারে যাত্রা বিরতি শেষ করে বাস আবারও রওনা দিল ঢাকার উদ্দেশ্য। বাসের ভিতরের ছোট ছোট হলুদ রঙের বাতিগুলো আমার খুব বিরক্ত লাগছে। সুপারভাইজারকে ডেকে বললাম,

-সুপারভাইজার ভাইয়া একটু পেছনে আসবেন?

-জ্বী ভাইয়া বলেন।

-ভাই এই সাবলাইট গুলো একেবারে বন্ধ করে দিন।

-আচ্ছা ভাইয়া দিচ্ছি।

অনার্স ৪র্থ বর্ষে পরছি অথচ এখনও কোনো প্রেয়সী কপালে জুটলো না! এদিকে বন্ধুকে একের পর এক জামা পাল্টানোর মত করে গার্লফ্রেণ্ড পাল্টানো শুরু করেছে! প্রেয়সী পাওয়ার জন্য ফেসবুকে "দর্পণের প্রতিবিম্ব" ছদ্মনাম দিয়ে টুকটাক লেখালেখি শুরু করলাম। এতে করে অনেক ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টও পাই। মেয়েদেরও রিকুয়েস্ট আসে কিন্তু কাউকে তেমন ভাল লাগে না! আর যাও বা একটু ভাল লাগে তাও দেখা যায় একই জেলায় থাকে না! তারপর চ্যাটে নক করলে তেমন উত্তরও পাওয়া যায় না! এরপরও লেখালেখি চালিয়ে গেলাম! কিন্তু কচ্ছপ গতির মত চলতে থাকে আমার ভার্চুয়াল লাইফ। প্রোফাইলে নিজের কোনো ছবিও রাখি নি। চাচ্ছিলাম কেউ যেন আমাকে চিনতে না পারে। এভাবে অনেকদিন চলতে থাকে। মোটামুটি ভার্চুয়াল জগতের অনেক নামীদামী লেখকের সন্ধান পাই! তাদের দ্বারা আরও অনেক পেজের সাথে সংযুক্ত হলাম। শুরু করলাম সেখানেও লেখা দেয়া। অনেক রিকুয়েস্ট পাই কিন্তু মনের মত কোন রিকুয়েস্ট পাই না! মনে মনে রেগে উঠলাম! কারণ পাবলিক বলতে লাগলো আমি রিকুয়েস্ট পাওয়ার জন্য লেখালেখি করি! এরপর ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠানোর অপশনটায় প্রাইভেসি সেট করে দিই! শুধুমাত্র ম্যাসেজ আর ফলো অপশন চালু করে রাখি! শুরু করি বাস্তবতা নিয়ে লেখা! একদিন "আয়নার দর্পণ" নামের এক আইডি থেকে ম্যাসেজ আসে। সেখানে লেখা ছিল, "আমি আপনার ফ্রেন্ডলিস্টের ছোট্ট একটু জায়গা পেতে পারি?" আইডির নামটা দেখে আমি খুবই অবাক হয়ে যাই! কারণ আমার আইডির নিক নেম ছিল "আয়নার দর্পণ!" সাথে সাথে আইডিটা নিয়ে গবেষণা শুরু করি। আইডির মালিক একজন মেয়ে! আমি রিকুয়েস্ট পাঠাই তাকে! ঘন্টাখানেক পর সে একসেপ্ট করে। সেদিন তার সাথে আর কোনো মেসেজিং হয় নি।

তার একটা অভ্যাস ছিল যে আমার কোনো পোস্টে লাইক দিত না কিন্তু প্রতিটা স্ট্যাটাসে দাঁতভাঙা সব কমেন্ট করতো! আমি তার কমেন্টের কি উত্তর দেব বুঝতে পারতাম না তাই কোন উত্তর দিতাম না। কিন্তু আমি তার সকল পোস্টে লাইক কমেন্ট করতাম। আর সেখানেও তার দাঁতভাঙা জবাব পেতাম! সে নিজেকে কি মনে করতো সেই ভাল জানে! তার এসব কীর্তি আমার রাগ উঠার জন্য যথেষ্ট ছিল! একদিন সাহস করে নক করি,

-আচ্ছা, আপনি আমার সব পোস্টে এমন দাঁতভাঙা কমেন্ট করেন কেন?

-এটা আমার ইচ্ছা।

-ওকে, সরি।

-আমি আপনাকে সরি বলতে বলেছি?

-না.....

-তো বললেন কেন?

-আমার ইচ্ছা। ভাল থাকবেন!

এই বলে চ্যাট অফ করে দেই! মেয়েটার এমন ভাব আমার পছন্দ হত না। এরপর সপ্তাহ খানেক ওর কোন পোস্টে লাইক আর কমেন্ট করি নি! খুব ইচ্ছে হচ্ছিল কমেন্ট করার জন্য কিন্তু করি নি। তারপর একদিন সেই নক করলো,

-কেমন আছেন?

-আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?

-জ্বি আমিও।

-ভাল

-হুম

তারপর কিছুক্ষণ নিরবতা....!

-আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন?

-রাগ করবো কেন?

-করতেই পারেন! আপনাকে কমেন্ট করে বিরক্ত করি বলে।

-ঠিক বলেছেন!

আবারও নিরবতা....!

-I'm sorry..

-কেন?

-bcz I disturb u..

-itz ok...

-আমি কি আপনার নতুন ফ্রেন্ড হতে পারি?

-নতুন ফ্রেন্ড মানে?

-মানে আপনার হাজারও ফ্রেন্ডদের মাঝে কি ফ্রেন্ড হতে পারি?

-তা তো আপনি আছেন!

-Really?

-হুম

-Thank you so much... আপনার লেখা গুলো জোস!!

-আপনারও, মূলত আমি আপনার লেখার একজন ভক্ত।

-আমার লেখার ভক্ত আপনি? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না!

-সত্যি বলছি।

-ধন্যবাদ... আচ্ছা আপনার নাম কি?

-আমি দর্পণ। আপনি?

-আমি আয়না।

-এটা কি আপনার রিয়েল নেম?

-Yes, But why are u asking?

-না মানে আমার আইডির নিক নেম আয়নার দর্পণ! তাই বললাম।

-না আয়না নামটা আমার আব্বু রেখেছে।

-সুন্দর নাম।

আচ্ছা আপনি এখন আমার ফ্রেন্ড! তো ফ্রেন্ডকে আপনি করে বলা ভাল দেখায় না! I hope u understand...

-ঠিক আছে! তুমি?

-হুম, পরিচয় হয়ে ভাল লাগলো।

-আমারও...

-আজ আসি তাহলে। আল্লাহ হাফেজ।

-Bye bye...

প্রথমদিনের চ্যাটিংয়ে আয়নাকে অতিরিক্ত স্টাইলিশ বলে মনে হচ্ছিল! মনে মনে ওর নামকে ভালবেসে ফেলছি! খুব সুন্দর নাম। একেবারে আমার মনের মত। এরপর দুই তিনদিন চ্যাট করি নি! কারণ সামনে পরীক্ষা! আমি ছাত্র হিসাবে খুব ভাল না আবার খারাপও না।

পরীক্ষার মাত্র দুইদিন বাকি আছে! আমি ফেসবুকে লগইন করে দেখি আয়নার ৫টা মেসেজ!!! মেসেজ গুলো ছিল,

hi! how r u?
hey! where are u?
কি হল? উত্তর দিচ্ছো না কেন?
দেখ! আমি রেগে যাচ্ছি কিন্তু!
Are you alright?

বুঝতে পারছি না আয়না এতো মেসেজ দিল কেন! আমি সাথে সাথে রিপ্লে দিয়ে দিলাম, "সরি, আমি একটু ব্যস্ত আছি। আর দুইদিন পর পরীক্ষা শুরু তাই ফেসবুকে আসতে পারি নি!"

দশমিনিট পর রিপ্লে আসলো!

-ওহ আচ্ছা! আমি মনে করলাম তোমার অসুখ-বিসুখ হল কিনা!

-না ওমন কিছু না। এতবার মেসেজ করেছিলে কেন?

-সময় কাটছিল না।

-সময় কাটছিল না? ফেসবুকে মেয়েদের সময় কাটে না এটা তো অস্বাভাবিক কথা!

-কেন?

-আরে তোমাদের ইনবক্সে অলওয়েজ দশ বারোটা করে মেসেজ আসে সেখানে তোমার সময়ই কাটে না!

-কাঙ্ক্ষিত কারও মেসেজ না পেলে সময় কাটবে কিভাবে?

-কি!!!!

তারমানে আমি সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষদের লিস্টে আছি?

-তোমার কি মনে হয়?

-কিছু না, বাদ দাও। কেমন আছো?

-এইতো আছি, তুমি?

-আলহামদুলিল্লাহ ভাল।

এরকম ঘন্টাখানেক চ্যাট করে আমার পড়ালেখা আকাশে পাঠিয়ে দিই! সেদিন আর পড়ালেখা হল না! তাই আমি আইডি বন্ধ করে দিলাম! এরপর পড়ালেখা শুরু করলাম! আমি অতটা মেধাবী ছাত্র না যে অল্প পরলেই পড়া বুঝতে পারবো আর আমার অনুর্বর মস্তিষ্কে কোন ফসল দিবে! তাই গার্লফ্রেণ্ডের সাথে ঝগড়া করলে যেমন অনর্গল কথা বলে যেতে হয় তেমনি আমিও বইয়ের পড়াগুলো সেভাবে পড়ছিলাম! মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় ফেসবুকে লগ ইন করি কিন্তু নেশা হয়ে যাবে আর এরজন্যে আমার গ্রেডও লাটে উঠে যাবে! এভাবে অনেক কষ্টে পরীক্ষা শেষ করলাম! সবাই শেষ পরীক্ষা দিয়ে ফ্রেন্ডদের সাথে মাঠে বসে আড্ডা দেয় কিন্তু আমি শেষ পরীক্ষা দিয়ে হল থেকে বের হয়ে রুমে গিয়ে আগে ফেসবুকে লগ ইন করি! লগ ইন করেই আয়নার আইডির পাশে সবুজ বাতি আছে! তারপর আমি তাকে নক করলাম! কিন্তু সে রিপ্লে দিচ্ছে না! দশ বারোটা মেসেজের পর আগুন ঝরা রিপ্লে পেলাম! কেন ফেসবুকে আসো নি? কোথায় ছিলে? আরও কত কি! এরপর আয়নার মাথা ঠাণ্ডা হল। তারপর আবার চ্যাট শুরু করলাম! অনেকসময় মেসেজিং করার পর আমি খুব ক্লান্ত হয়ে পরেছি! ওর সাথে কথা বলার চক্করে আমি খাওয়ার কথাও ভুলে গিয়েছি! তারপর ওকে বিদায় দিয়ে অফলাইন হলাম। তখন মনে পরে সে কোথায় থাকে, কি করে এগুলো কিছুই জিজ্ঞেস করি নি! নাহ থাক! পরে জানা যাবে। একদিনে এত কিছু জানতে হয় না।

সেদিন রাতটা না খেয়েই পার করে দিলাম। পরেরদিন রাতে আয়না আমাকে নক করে। হাই কেমন আছো ইত্যাদি কথা বলতে বলতে আবারও ভুলে গেলাম তার সম্পর্কে জানতে! চ্যাট অফ করবো আর ঠিক সেসময় আয়না আবারও ফেসবুকে আসলো! তাকে আবারও নক করলাম,

-একটা কথা জানার আছে।

-হুম বল,

-আচ্ছা তুমি কোথায় থাকো?

-ঢাকায়..

-ঢাকার কোথায়?

-বসুন্ধরায়।

-ওহ..

-তুমি কোথায় পড়?

-ঢাবি।

-আচ্ছা! আমিও পড়ি!

-কিতা কও তুমি? আগে কও নাই ক্যারে?

-তুমিই তো জিজ্ঞেস কর নি!

-ওহ হ্যাঁ তাইতো! ভুল হয়ে গেছে!

-হুম, কোন ইয়ার? কোন ডিপার্টমেন্ট?

-Accounting Houners last year. U?

-English 2nd year.

-খুব ভাল।

-হুম, আজ আসি! খুব মাথা ব্যাথা করছে!!

-আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ ভাল থেকো।

-হুম, Bye....

আজ আমি আগে ইংলিশ ঝাড়লাম! বুঝতে পারলাম উনি এত ইংলিশ ঝাড়েন কেন! এরপর প্রতিদিনই আমাদের মাঝে চ্যাটিং চলতো! খুব ভাল একটা ফ্রেন্ডশিপ হয়ে যায়! কিন্তু আমি তারপরও ওর নাম্বার বা ছবি কোনটাই চাই নি! আমি চাইনা এই দুটো জিনিসের জন্য ফ্রেন্ডশিপে কোনো প্রকার আঘাত লাগুক! এরপর পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়। আল্লাহর রহমতে ফার্স্টক্লাস পেয়েছি! আমি এতে খুব খুশি হয়েছি! রেজাল্টের কথা সবার প্রথমে আম্মু-আব্বুকে জানাই তারপর আত্মীয়স্বজনকে জানাই। তারপর আয়নাকে। আয়না খুশি হল। তারপর আবার ফেসবুকে ম্যাসেজিং! একটা পর্যায়ে সে তার সকল পোস্টে আমাকে ট্যাগ দেয়া শুরু করে! ওর দেখাদেখি আমিও আমার প্রতিটা পোস্টে ট্যাগ দেয়া শুরু করি! পোস্ট গুলোতে ওর বন্ধু-বান্ধব অনেক রসায়ন ভরা কমেন্ট করে (যেমন: আমাদের দুলাভাই নাকি? নতুন রিলেশন? What a Romantic Couple ইত্যাদি ইত্যাদি)। কিন্তু আমরা সেসবকে পাত্তা দিতাম না! ফ্রেন্ডশিপকে ফ্রেন্ডশিপের মতই যত্ন করে রাখতাম। আমরা একই ভার্সিটিতে পড়ি তবুও একে অপরকে দেখা করার কথা বলি নি! কেন বলি নি তাও জানি না! দুজন দুজনের সম্পর্কে অনেক কথা শেয়ার করতাম!

এরপর মাস্টার্সে ভর্তি হলাম। জীবন এখন খুব ভাল লাগে। আয়না, আমি আর আমাদের বন্ধুত্ব নিয়ে আমি খুব ভাল আছি। ক্লাস আর পরীক্ষার পাশাপাশি আমাদের ফেসবুকিং চলছে! কিন্তু আজও আয়নার নাম্বার বা ছবি কোনটাই চাই নি! দেখতে দেখতে আমাদের বন্ধুত্বের একবছর পুরণ হল। ফেসবুকে ঢুকেই দেখি আয়নার ম্যাসেজ!

"Happy Friendship Anniversary!!!"

আয়নার ম্যাসেজটা পেয়ে ঠোটের কোণায় আপনাআপনি হাসি চলে আসে! আমিও তাকে রিপ্লে করলাম। তারপর আয়না বললো,

-কেমন আছো?

-ভাল ছিলাম না তবে তোমার ম্যাসেজ পেয়ে ভাল হয়ে গেলাম।

-হিহিহি... ফ্লার্টিং?

-আরে না।

-তোমার মুড এখন আরও ভাল হয়ে যাবে।

-আচ্ছা? কিভাবে?

-নোটিফিকেশন চেক কর।

আয়নার সাথে চ্যাটিং করতে গিয়ে নোটিফিকেশন চেক করতে ভুলেই গিয়েছি! নোটিফিকেশনটা ছিল,
"আয়নার দর্পণ said she was with you: feeling special."

"আমি তো মেয়ে মানুষ,
তাই লজ্জ্বা লাগে!
কিন্তু তুইতো জোয়ান ছেলে,
চাইলেই তুই পারতিস!
ফেসবুকেতে আমার নামে
নীলবাতি যবে জ্বলতো,
নাহয় একটুকু নক করতিস
চাইলেই তুই পারতিস!

পরিচয় যখন হয়েই গেলো,
হতো জমপেশ আড্ডা।
তোর বাসা নাকি আমার পাশেই,
ছিলো পুরাতন বাড্ডা।
চাইলেই তুই ঠিকানা নিয়ে
দেখা করে যেতে পারতিস!
চাইলেই তুই পারতিস!

আমার নামে নীলবাতি দেখেই
মিটমিট করে হাসতিস,
আমার সাথে চ্যাট করতে নাকি
বড্ড ভালবাসতিস।
আমায় বলতে পারতিস!
চাইলেই তুই পারতিস!

তারপর নাকি হঠাৎ হঠাতই
আমায় নিয়ে ভাবতিস,
কল্পনাতে নদীর কিনারে
আমায় সাথেই হাঁটতিস।
একটু আমাকে ডাকতিস!
চাইলেই তুই পারতিস!

ভাবনা নদীতে ডুব দিয়ে নাকি
আমায় নিয়েই ভাবতিস,
মনে মনে নাকি এই আমাকে তুই
একান্ত তোর করতিস।
চাইলেই তুই পারতিস,
চাইলেই তুই পারতিস!"

এই ছিলো আয়নার কবিতা যেটায় আমাকে সে ট্যাগ করেছে! অনেক সুন্দর কবিতা লিখতে পারে আয়না। আমি বুঝতে পেরেছি কেন ও আমাকে এই কবিতাটা ট্যাগ করে লিখেছে, "ফিলিং স্পেশাল!" আমার বলতে ইচ্ছে করে, জানোতো আয়না, আমার মধ্যেও এই স্পেশাল ফিলিংসটা হচ্ছে ......!
কিন্তু তারপরও ওই যে, আমি চাইতেই পারি না!

-কবিতা খুব সুন্দর!

-হিহিহি.... আর পাম দিতে হবে না।

-আরে না সত্যি বলছি। আমি তো কবিতা লিখতেই পারি না।

এভাবেই ছোটখাটো খুনসুটিতে কেটে যাচ্ছে আমাদের দিন। আমি আস্তে আস্তে কেমন যেন আয়নার প্রতি দুর্বল হয়ে পরছি! অর্থাৎ বন্ধুত্ব এখন ভালবাসার দরজার কাছে দারিয়ে আছে! শুধু অনুমিত নেয়ার দরকার।

এখন ভালভাবেই দিন কাটাচ্ছি। কিন্তু দিন যতই সামনে যাচ্ছে আমার ভালবাসাও বাধ ভাঙার চেষ্টা করছে! কিভাবে আয়নাকে বলি মনের কথা বুঝতে পারছি না। এভাবে মাসের পর মাস কেটে যায় তবুও আয়নাকে ভালবাসার কথা বলতে পারছি না। ভয় লাগে আবার বলতেও ইচ্ছা করে। মাসগুলো যেতে যেতে বছর হয়ে যায় আর এরই সাথে পাল্লা দিয়ে বন্ধুত্বও বেড়ে যায়! স্ট্যাটাসে ট্যাগ করা, পোক করা সবকিছুই চালিয়ে যাচ্ছিলাম! নিজেকে লুকিয়ে রাখতে গিয়ে ফ্রেন্ডদের কাছে ধরা পরেই যাচ্ছিলাম তবুও বেঁচে যাই। এদিকে মাস্টার্সের শেষ বছরে এসে পরছি, এখনও আয়নাকে ভালবাসি বলি নি! সাহস করে চ্যাটে নক করলাম,

-কেমন আছো?

-আছি আরকি, তুমি?

-ভাল না।

-কেন?

-অনেকদিন হল ভাল না লাগার কারণটা লুকিয়ে রেখেছিলাম কিন্তু আর লুকাতে পারছি না।

-আমাকে বল তোমার কি হয়েছে।

মোবাইলের বাটন গুলো খুব কষ্টে চেপে চেপে ভালবাসার কথা লিখে আল্লাহর নাম নিয়ে পাঠিয়ে দিলাম!

দুই মিনিট যায়, পাঁচ মিনিট যায়, দশ মিনিট যায় তবুও সীনও হয় না রিপ্লেও আসে না! ভিতরে থেকে অস্থিরতা বেরেই চলেছে! তেরো মিনিট পর রিপ্লে আসলো,

-এটা কি ছিল?

আমি নির্বাক হয়ে যাই! কারণ সে তার আগের দাঁত ভাঙা কথার রুপে ফিরে আসে!

-যা সত্য তাই বলছি।

-ভার্চুয়াল রিলেশন, বুঝতে পারো?

-আমি শুধু জানি তোমাকে ভালবাসি।

-আর আমি সেটা বুঝি না, এটা কেন বললে?

-বললাম তো আমি লুকাতে পারি নি।

-ভাল থেকো। আসি!

-কিন্তু আমার কথার উত্তর দাও। প্লিজ। ভুল হয়ে গেল সরি।

এরপর সেই নামের পাশে আর সবুজবাতি দেখতে পাই নি! কিন্তু আইডিটা নীল থেকে কাল হয় নি! দিন কেটে সপ্তাহ যায়, সপ্তাহ ফুরিয়ে মাস তবুও তার নামের পাশে সবুজ বাতি পাই না! মেসেজের কোন রিপ্লে আসে না! মাস্টার্সের ভাল প্রস্তুতি ছিল কিন্তু আয়নাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে তাও শেষ হয়ে যাচ্ছে! দিশেহারা হয়ে পরি! বুঝতে পারি আয়নাকে ছাড়া আমার দিন কত কষ্টে চলে! পড়ায় মন বসাতে পারছি না! ভাবলাম ফেসবুকে লগ ইন করি। লগ ইন করতেই দেখি একটা মেসেজ এবং সেটা আয়নার!

-হুম তোমায় ভালবাসি।

ওর রিপ্লে পেয়ে আমার দেহে যেন প্রাণ ফিরে এল! খুব ভাল লাগছিল। খুশিতে একটু কান্নাও পেলে চোখে। তারপর শুরু হয় নতুন অধ্যায়। আবারও সেই আগেরমত ফেসবুকে ট্যাগিং চলে। একদিন আয়না বললো,

-আমি ব্রেক-আপ চাই!

-কেন?

-তুমি আমাকে ভালবাসো না তাই।

-কে বলছে ভালবাসি না!

-আমি প্রমাণ পেয়েছি।

-কি প্রমাণ?

-তুমি একটা গাধা! এতদিন হল আমরা একে অপরকে চিনি কিন্তু আজ পর্যন্ত আমার ফোন নাম্বার চেয়েছো?

-ওহ সরি। আসলে তুমি কিছু মনে করবে কিনা তাই আমি চাই।

-বলদ কোথাকার! নাম্বার চাও আমার কাছে!

-তোমার নাম্বারটা কি দেয়া যাবে?

-না

-প্লিজ

-ফুফফফফ..... Wait.

-হিহিহি দাও।

-0

-তারপর?

-তারপর কিছুই না।

-মানে?

-১১ডিজিটের নাম্বার ১১দিনে পাবে!

-হায় হায়! এটা কেমন অবিচার?

-Honest Injustice man....

আয়না তাই করলো! ১১দিনে একটা একটা করে নাম্বার আমাকে বললো! পরীক্ষার কারণে ফেসবুকিং কমিয়ে দিলাম। কিন্তু ফেসবুকের ঘাটতিটা মোবাইলে পুরণ করে দিই! এভাবে কথা বলতাম আর এরপর পরীক্ষা দিলাম। আমার পরীক্ষা চলাকালীন সময় ওর রেজাল্ট দিলো। বললো সেও ফার্স্টক্লাস পেয়েছে। খুব খুশি হলাম ওর রেজাল্ট শুনে। ওকে দেখার করার প্রস্তাব দেই কিন্তু সে দেখা করতে নারাজ! সোজা কথায় বললো, "চাকরি যেদিন পাবে সেদিন দেখা করবো!" কিছুটা হতাশ হয়ে পরি ওর কথায়! তবুও সে আমাকে পড়ার ব্যাপারে যথেষ্ট উৎসাহ দিত। পরীক্ষা শেষ করে আমি গ্রামে চলে যাই। এরপর রেজাল্টে দেয়। আল্লাহর অশেষ রহমতে এবারও ফার্স্টক্লাস পেয়েছি! আয়নাকে রেজাল্ট জানাই। সেও খুশি হয়। এরপর চাকরি জন্য প্রস্তুতি নিই! আয়না ফেসবুকে আমাকে একটা চাকরির সার্কুলার দিল। সেখানে আবেদন করলাম। সাথে সাথে আরও বিভিন্ন যায়গায় আবেদন করলাম। ইন্টার্ভিউ এর তারিখও দিয়ে দিল। পরীক্ষাও দিলাম। কিন্তু কোথাও চাকরি পেলাম না! কারণ ফার্স্টক্লাস নিয়ে আমার মত আরও অনেকেই আছে। সবারই একটাই উদ্দেশ্যে! চাকরি! সেটা যে পদেই হোক!

আয়নার দেয়া চাকরির ফর্ম নিয়ে ইন্টার্ভিউ দিতে গেলাম। আল্লাহর কাছে দুইহাতে দোয়া করলাম চাকরি হওয়ার জন্য। জীবনে এমন হতাশা আর কোথাও হইনি! তারপরও কেন যেন মনে হচ্ছিল চাকরিটা পেয়ে যাবো। এবং অবশেষে পেয়েও যাই! বেশ ভাল পদবী পেলাম। আয়নাকে বললাম এবার দেখা করি! তবুও সে দেখা করবে না! বললো জানুয়ারি মাসে দেখা করবে! সেতো এখনও অনেক দেরি! প্রায় তিনমাস! আয়না অপেক্ষা করতে বললো! কিন্তু আমার কাছে তিন মাস তিন বছরের সমান!

প্রতিদিন অফিসে যেতাম ঠিকই কিন্তু তিন মাস কবে কাটবে এটা ভাবতেই অর্ধেক দিন চলে যায়! এদিকে অফিস থেকে বলে জানুয়ারি মাসে পিকনিক হবে! স্থান কক্সবাজার! জায়গাটা দেখার অনেক ইচ্ছা কিন্তু জানুয়ারি মাসে যে আয়নার সাথে দেখা করতে হবে! আমি না করে দিই কিন্তু কলিগরা আমাকে যাওয়ার জন্য জোর করে! বলে, "আপনি চাকরিতে নতুন জয়েন করেছেন, আপনাকে অবশ্যই যেতে হবে!" আয়নাকে বিষয়টা জানালাম! সে আমাকে বারবার যেতে বললো! আমি তাকে দেখা করার কথা বললে সে পিকনিকের পরে দেখা করতে বলে এবং ওরা ফ্যামিলিসহ ট্যুরে যাচ্ছে!

এরপর আমি রাজি হয়ে যাই। জানুয়ারির তিন তারিখ ডেট পরে। ঢাকা অফিসের বিভিন্ন শাখা থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচশো জন অফিসার এবং তাদের পরিবারসহ যাচ্ছে! সন্ধ্যার সময় অফিসে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। যথাসময়ে অফিসে পৌছে দেখি আটটা বিলাসবহুল এসি বাস দারিয়ে আছে! অফিস কর্তৃপক্ষ হানিফ ভলভো, আর.এম টু, গ্রীণ লাইনের এসি(ভলভো আর স্ক্যানিয়া), টি.আর ট্রাভেলসের হুন্ডাই মিলিয়ে মোট ১৫টা বাস রিজার্ভ করেছে! মোটামুটি একটা ব্যয়বহুল পিকনিক যাকে বলে এমন! আমার কপালে গ্রীণ লাইন পরেছে। কলিগরা বলছিল, "তাড়াতাড়ি উঠে সিট দখল করুন তা নাহলে সিটে বসা নিয়ে মারামারি লেগেই যাবে!" যেহেতু এসি বাস সেহেতু বসা নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই। তাই উঠে আগে পিছনের সিটটায় বসে পরি! কলিগরা বলে উঠল, "বাহ ভাই বাহ!!! আমরা সামনে বসা নিয়ে মারামারি করি আর উনি পিছনে বসা নিয়ে!" হো হো করে হাসির রোল পরে গেল বাসের মধ্যে!! আমিও তাল মিলিয়ে হাসলাম!

বাস ছাড়লো রাত সাড়ে আটটায়। প্লেয়ারে পুরনো দিনের কিছু মন ছুয়ে যাওয়া গান ছাড়লো। গান গুলো শুনতে শুনতে কখন যেঁ ঘুমিয়ে পরলাম বুঝতে পারি নি! তারপর চোখ খুলেই দেখি বাস হোটেলে থেমেছে! হাত মুখ ধুয়ে চা কফি নিলাম সবাই। রাতে হোটেল গুলোর সৌন্দর্য বেড়ে যায় বিভিন্ন প্রকার ছোট ছোট বাতির কারণে। এরপর আবার বাস ছাড়লো। আমিও ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে উঠে দেখি আমরা পৌছে গিয়েছি! "হোটেল কক্স টুডে"তে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে! আমি এতকিছুর মাঝে ভুলেই গিয়েছিলাম আয়নার কথা! কিন্তু সে আমাকে কল করতে বারণ করেছে। কারণ সে তার মা বাবার সাথে থাকবে!

হোটেলবয় রুমের চাবি দিয়ে গেল। ক্লান্ত শরীর রুমে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে একটু ঘুমালাম। ঘন্টাখানেক ঘুমের পর গোসল করে কয়েকজন কলিগ মিলে বীচে গেলাম। সাগরপাড়ে হাটলাম কিছুক্ষণ। ঢাকায় যে পরিমাণ ঠাণ্ডা ছিল এখানে সে পরিমাণ ঠাণ্ডা নেই! এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে আবার হোটেলে ফিরে গেলাম। দুপুরের লাঞ্চ করার জন্য হোটেলের রেস্টুরেন্টে গেলাম। সুবিশাল একটা টেবিলে কয়েকজন পরিচিত কলিগ বসলাম। এরমধ্যে সাবির সাহেব আমাকে একটু খোচা দিয়ে রহমান সাহেবের দিকে তাকাতে বললেন। আমি তাকিয়ে দেখি রহমান সাহেব ডিরেক্টরের মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন! আমি তার কানে কানে বললাম, "ওমন করে দেখবেন না! আপনার মত আরও অনেকে তাকে চায়!" উনি বললেন, "আমার বিয়ে না হলে ডিরেক্টর স্যারের মেয়েকেই বিয়ে করতাম!" উনার কথা শুনে আমরা সকলেই হেসে উঠি! লাঞ্চ করে রুমে গিয়ে আরেকটু বিশ্রাম নিলাম। বিকালে আবারও বীচে গেলাম। এদিকে আয়নার সাথে কথা হয় নি অনেকক্ষণ হল। তাই ওকে কল দিলাম,

-হ্যালো আয়না।

-কেমন আছো?

-ভাল না!

-কেন?

-তোমার সাথে দেখা না করে এখানে চলে এলাম তাই!

-আরে পাগল, দেখা তো হয়েই যাবে একদিন।

-সেদিন আর আসে না কেন?

-দেখবে খুব শীঘ্রই আসবে।

-দেখি কিভাবে আসে। কি করছো?

-ছাদে বসে আছি। সুন্দর বাতাসে আমার চুলগুলো উড়ছে।

-আমি কল্পনা করছি তোমাকে দেখতে কেমন লাগবে!

-আচ্ছা ধর, আমি দেখতে ভাল না, কালো, মোটা, খাটো তাহলে কি আমাকে গ্রহণ করবে না?

-তুমি যেমনই হও তবুও তোমাকে ভালবেসে যাবো।

-আচ্ছা!

-হুম।

-পশ্চিম আকাশে সূর্যটা দেখছো?

-হুম দেখছি। খুব সুন্দর আর স্পষ্ট।

-আমি ওটাই দেখছি আর তোমার কথা ভাবছি।

-ওয়াও! বেশ রোমান্টিক তো!!!

-হিহিহি! আচ্ছা রাখি! আব্বু এসে পরেছে! Bye.. Love u...

-Love u too..

পরেরদিন লাঞ্চ করার পর অফিস কলিগ রহমান সাহেব আমাকে বললেন, "শোভন সাহেব আপনার সম্পূর্ণ নাম বলেন তো!" "কেন রহমান সাহেব " "আরে গানবাজনা হবে আজ রাতে!" "কিন্তু আমি নাম দিয়ে কি করবো?" সাবির সাহেব বললেন, "দেখুন, অফিসে আপনি নতুন জয়েন করেছেন, তো যারা নতুন জয়েন করে তাদের পরে আরেকজন নতুন কেউ জয়েন না করার আগে যদি পিকনিক হয়ে যায় তাহলে আমরা তাকে গান গাওয়ার তালিকায় নাম দিয়ে দেই!" "তো আমাকে গান গেতে হবে?" "একদম ঠিক ধরেছেন!" "রহমান সাহেব, আমি গান গাইলে অডিয়ান্স জীবনেও থাকবে না!" "আচ্ছা থাক, আপনার নাম দিতে হবে না, আপনার নাম আমরা বসিয়ে দিচ্ছি!" আমার কোনো কথাই কলিগরা শুনলো না! আল্লাহ ভাল জানে আজ কি হবে!

তারপর ডিনার করে সবাই হল রুমে গেলাম। মোটামুটি সবাই উপস্থিত হলাম। একে একে ডিরেক্টর, চেয়ারম্যান এবং আরও বড় বড় অফিসাররা বক্তব্য দিলেন। এবার সংগীতের পালা। অন্যান্য অফিসারের ছেলে মেয়েরা একক এবং ডুয়েট গান গাইলো। এরপর আমার পালা এলো! আমি খুব নার্ভাস হয়ে আছি! কারণ জীবনে প্রথম আজ আমি গান গাইতে যাচ্ছি! জানি না কার কেমন লাগবে! এরপর স্টেজে উঠলাম। এত মানুষ দেখে মনে হচ্ছিল কক্সবাজার থেকে একদৌড়ে পালিয়ে যাই! তারপর সাহস করে ব্যান্ডদলকে বললাম, "কেন দুরে থাকো" গানটার অরিজিনাল মিউজিক দিয়ে গাবো! তারা কিছুটা অবাক হলেন! তারপর ধীরে ধীরে মিউজিক শুরু করলেন। আর আমিও গান ধরলাম। গান শেষে ধন্যবাদ দিয়ে নেমে যাবো তখন ডিরেক্টর স্যার বললেন আবারও গান গাওয়ার জন্য! অনেক করতালিমুখর উৎসাহে আমি আবারও স্টেজে গেলাম! ব্যান্ডদল বললো, "ভাইয়া এবার কোনটা?" তাদের বললাম, "আইয়ুব বাচ্চুর তোমার চোখে দেখলে বন্ধু গানটা!" ব্যান্ডদল আবারও মিউজিক আরম্ভ করলো আর আমি গান গাওয়া শুরু করলাম! গান শেষ করে ধন্যবাদ দিয়ে নেমে এলাম। উপস্থাপক রহমান সাহেব বললেন, "অনুষ্ঠানে গান নিয়ে আসছেন আমাদের ডিরেক্টর সাহেবের মেয়ে সামিয়া ইসলাম আয়না।" নামটা শুনেই আমার ভিতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠল! এই কি সেই আয়না যাকে আমি ভালবাসি! মনের অস্থিরতা বেড়েই চলছে! ভাবতে মেয়েটা গান ধরলো "তুমি আমার এমনি একজন....!" গানের গলা শুনে বুঝতে আর বাকি রইলো না ইনিই সেই আয়না! আমার হাত-পা কাঁপতে লাগলো! শেষ পর্যন্ত ডিরেক্টরের মেয়ের সাথে রিলেশন! ডিরেক্টর স্যারের তো মান সম্মান কিছুই থাকবে না! আর আমার চাকরি নট হয়ে যাবে শিওর! এখন মনে পরছে কেন আয়না আমার সাথে দেখা করতে চায় নি, কেন সে বারবার আমাকে পিকনিকে যেতে জোর করছিল, চাকরির ফর্ম, চাকরির ব্যবস্থা করা এগুলা সব আয়নারই কাজ! এত ভালবাসে আমাকে? চিন্তা করতে করতে চোখদুটো ভিজে গেল! কি করবো বুঝতে পারছি না! হঠাৎ ফেসবুকে লগ ইন করলাম। নোটিফিকেশনে দেখলাম, "আয়নার দর্পণ said she was with you: feeling special: কেন দুরে থাকো...." ওর স্ট্যাটাস চেক করে দেখলাম সেখানে আমি যে গানটা প্রথমে গেয়েছি সেটা লিখেছে, কেন দুরে থাকো....." এখন সব মাথায় ঢুকেছে! পাশে তাকিয়ে দেখি সাবির সাহেব আয়নার গান গাওয়াটা ভিডিও করছেন। উনাকে বললাম,

-সাবির সাহেব, ল্যাপটপ এনেছেন?

-জ্বী এনেছি, কেন?

-এই ফুটেজ আমার লাগবে, আমার খুব প্রিয় একটা গান।

-ওকে রুমে গিয়ে দিচ্ছি।

হল রুমে থেকে বের হওয়ার কোনো রাস্তা খুজে পাচ্ছি না! ইচ্ছা করছে জানালা ভেঙে চলে যাই! হাতে কিছু ড্রর টিকেট আছে! যেগুলা বাসে কিনেছিলাম! সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গিয়েছে কিন্তু ড্র হওয়া বাকি আছে! ড্র দেখার তোয়াক্কা না করে হল রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। আয়না খেয়াল করেছে কিনা সেটা আর দেখনি! রুমে গিয়ে সাবির সাহেবের অপেক্ষা করতে থাকি। ঘন্টাখানেক পর উনি আসলো। তারপর ফুটেজ নিয়ে নিলাম।

সেদিন রাতে একটুও ঘুম হয় নি। কিভাবে কি হয়ে গেল বুঝলাম না। পরেরদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রুম থেকে বের হই নি! শুধু ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চ করার জন্য বের হয়েছিলাম! দেখতে দেখতে তিনদিন কিভাবে কেটে গেল বুঝতে পারলাম না! বিকেলে হোটেল ছেড়ে দিলাম, এবার ফেরার পালা। আসার সময় গ্রীণ লাইনে ছিলাম আর এখন হানিফের ভলভোতে আছি। সেই পিছনের সারির সিট! কিন্তু আমার সিট বাদে বাকি তিনটা সিট খালি! হয়তো কেউ যাচ্ছে না! এরপর বাস ছাড়লো! এত বিলাসবহুল বাসের সিটে বসেও আমার চোখে একদমই ঘুম নেই! চোখের পাতা এক করতে পারছি না। দেখতে দেখতে কুমিল্লা চলে আসলাম! এখন বাস হোটেলে যাত্রা বিরতিতে আছে। বাস থেকে নেমে আমি, সাবির সাহেব আর রহমান সাহেব একটা টেবিলে বসে চা অর্ডার করলাম! চা শেষ করে আবার বাসে উঠলাম।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে! কুমিল্লার টাইম স্কয়ারে যাত্রা বিরতি শেষ করে বাস আবারও রওনা দিল ঢাকার উদ্দেশ্য। বাসের ভিতরের ছোট ছোট হলুদ রঙের বাতিগুলো আমার খুব বিরক্ত লাগছে। সুপারভাইজারকে ডেকে বললাম,

-সুপারভাইজার ভাইয়া একটু পেছনে আসবেন?

-জ্বী ভাইয়া বলেন।

-ভাই এই সাবলাইট গুলো একেবারে বন্ধ করে দিন।

-আচ্ছা ভাইয়া দিচ্ছি।

আনমনে বাসের জানালা দিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ পাশে এসে একজন বসলো!

-সরি...

চেনা কণ্ঠের মেয়েটা আমার পাশে বসা! সেটাও আবার পিকনিক বাসে! কলিগরা কি মনে করবে কে জানে!

-সরি বলছেন কেন?

-তুমি আপনি করে কথা বলছো কেন?

-আমি বুঝতে পারি নি আমি কাকে ভালবেসেছি!

-এজন্যেই আমি সরি বললাম।

-এত নাটক করলে কেন আমার সাথে?

-কারণ আমি তোমাকে ভালবাসি। সেদিন থেকে যেদিন আমি তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম।

-মানে? কবে দেখেছিলে?

-প্রায় চার বছর আগে তোমার একটা গল্পে তোমার এক ফ্রেন্ড কমেন্ট করেছিল। তার আইডির ইনফো দেখে বুঝতে পারি তুমি তার ক্লাসমেট! তারপর তোমার ব্যাপারে উনার কাছে জানতে পারি। তারপর তো সবকিছুই জানো!

-হুম... আসলেই নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারলাম না।

-কিন্তু তুমি তোমার নাম গোপন রেখে আমাকে মিথ্যা বলছো কেন?

-ভুল হয়েছে, সরি।

-মাফ নাই!

-কেন?

-আমার ইচ্ছা!!

-আচ্ছা ডিরেক্টর স্যার কিছু জানে?

-ডিরেক্টর মানে? উনি তোমার শশুড় আর আমার আব্বু!

-সে একই কথা।

-আব্বু না জানলে তোমাকে এই বাসে উঠালাম কিভাবে?

আমি হাসলাম তারপর সেও হাসলো! আসলেই কাছের মানুষের কাছ থেকে নিজেকে লুকিয়ে বা দুরে রাখা যায় না। ভাগ্যিস যে পেছনের তিনটা সিট খালি ছিল!!!

লেখা: দর্পণের প্রতিবিম্ব
কবিতা: অঝোর শ্রাবণ

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৬

আজিজার বলেছেন: So.........good

০১ লা মে, ২০১৫ রাত ১:২৮

দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৮:২৭

করিম কাকা বলেছেন: wow! মুগ্ধ হয়ে গিলেছি। অনেক দিন না খেতে পেয়ে খাবার পেলে যেমন হয় তেমন!

০১ লা মে, ২০১৫ রাত ১:২৯

দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ

৩| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:০৯

ইমোশনাল কিলার বলেছেন: পড়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। গল্পের মাঝখানেই বুঝতে পেরেছিলাম এরকমই হবে। আমি ভেবেছিলাম যাওয়ার সময়ই হয়তো বাসে দেখা হবে। সেটা আসার সময় হল।
ভাল লাগলো।
ওহ হ্যাঁ, বিয়েতে দাওয়াত দিয়েন কিন্তু।

০১ লা মে, ২০১৫ রাত ১:৩০

দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। দোয়া করবেন যেন আরও ভাল লিখতে পারি।

৪| ০১ লা মে, ২০১৫ সকাল ১০:৪৭

মোঃ ওমর ফারুক অনিক বলেছেন: অসম্ভব ভালো লাগলো ভাই,,,যদি অনধিকার চর্চা না ভাবেন তবে গল্পটার সত্যতা জানতে চাই,,,

০১ লা মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩০

দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। কিন্তু এটা কাল্পনিক গল্প

৫| ০১ লা মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৪২

সুফিয়া বলেছেন: ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

০১ লা মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩১

দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপু

৬| ০১ লা মে, ২০১৫ বিকাল ৫:০২

দ্য ইলিউশনিস্ট বলেছেন: চমৎকার!

০১ লা মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩১

দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ভাই

৭| ০১ লা মে, ২০১৫ রাত ১১:১৬

অবনি মণি বলেছেন: অনেক ভালো লেগেছে কাহিনিটা ! কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেলো !

০২ রা মে, ২০১৫ রাত ১২:২৫

দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এবং আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.