নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবতে ভালবাসি, সেই ভাবনা যদি কোনো ঘটনায় মিলে যায় তবে তাকে লিখতে ভালবাসি! সেই লেখায় যদি কেউ বিন্দুমাত্র উপকৃত হয় তবে তাতেই আমার খুশি, আমি লেখাকে ভালবাসি।

দর্পণের প্রতিবিম্ব

প্রেমিকার চিরশত্রু

দর্পণের প্রতিবিম্ব › বিস্তারিত পোস্টঃ

"তুই আর আমি"

১৫ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১:৪৯

কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে হাই সাউন্ড দিয়ে হাবিবের হৃদয়ের কথা গান শুনছিলাম। গানটা শুনতে শুনতে তাসনিমের কথা ভাবছিলাম। আজ তিন বছর পর তাসনিমের সাথে আবার দেখা হয় আমার। আমি আর তাসনিম, দুইজন স্কুল জীবনের খুব ভাল বন্ধু ছিলাম। পাশাপাশি বাসা ছিল আমাদের। ৮ম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমাদের পরিবার বদলি হয়ে যায়। খুব কষ্ট পাই আমি। কারণ আমার একমাত্র খেলার সাথী ছিল তাসনিম। আর তাসনিমেরও তাই। এরপর কেটে যায় তিনটা বছর। আজ কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে গিয়ে আমার সাথে তাসনিমের দেখা হয়। আমি প্রথমে তাসনিমকে চিনতে পারে নি। কারণ তাসনিম এখন চশমা ব্যবহার করে। তাসনিমের সাথে দেখা হয়ে কেমন যেন এক অদ্ভুত ভালোলাগা অনূভব করছি আমি। নিজে নিজেই মুচকি হেসে যাচ্ছি আমি,

-আরাফ. আরাফ.. ঐ আরাফ...

আমার কোন খবর নাই। একমনে তাসনিমের কথা ভেবে যাচ্ছি। কখন যে আম্মু আমার সামনে ঝাড়ু নিয়ে দারাইছে আমি খেয়াল করি নি। আম্মু দেখে আমার হুশ ফিরে আসে।

-কিরে? মন কোথায় থাকে তোর? কয়বার ডাকলাম? আর তুই সেই কখন থেকে হেসে যাচ্ছিস? অসুখ বিসুখ হয় নি তো?

-আরে না আম্মু, আজ আমি খুব খুশি।

-কেন? এমন কি হইছে যে তুই এত খুশি!

-আম্মু আজ তাসনিমের সাথে দেখা হয়েছে কলেজে!

-কি? ওরা ফিরে আসছে? কোথায় থাকে এখন? ওর মা বাবা কেমন আছে? মেয়েটা দেখতে কেমন হয়েছে? কত বছর দেখি না মেয়েটাকে! শোন, কালই ওকে বাসায় নিয়ে আসবি।

-এ আবার বলতে হয়? কালই নিয়া আসমু।

বাহ, বাহ! আমার চেয়ে দেখি আম্মুকে বেশি এক্সাইটেড মনে হচ্ছে। আম্মু আদেশ দিছে আর আমি কি তা অমান্য করতে পারি? কখনই না। হাজার হলেও আম্মুর বাধ্যগত ছেলে আমি। মনে মনে হাসতে থাকি। সারা রাত ছটফট করতে থাকি। বিছানার এপাশ থেকে ওপাশ গড়াগড়া করতে থাকি। কখন যে সকাল হবে। সুখ সময়ে কেন যে সকাল হতে চায় না। এভাবে সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম। ঠিক সকাল ছয়টায় ঘুম থেকে উঠলাম। আমার ইতিহাসে এই প্রথম আমি এত সকালে জাগলাম। কেমন যেন এই সকালের সবকিছু নতুন লাগছে আমার। সূর্যটাও আমার কাছে নতুন লাগছে। খুব কষ্ট করে আটটা বাজালাম, তারপরও সময় যাচ্ছে না। গোসল শেষে তাড়াতাড়ি খাওয়া খেয়ে বের হবো তখনই আম্মু আমাকে আবার আগের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। আমি ভদ্র ছেলের মত সেটা মস্তিষ্কে প্রবেশ করালাম।

কলেজে গিয়ে আগে তাসনিমকে খুজা শুরু করলাম। অনেকক্ষণ খোজার পর ওকে পেলাম। আমাকে দেখতেই চলে এল আমার কাছে। ওকে বললাম,

-দোস্ত, আজ এই মুহূর্তে তুই আমার সাথে আমার বাসায় যাবি।

-এখন?

-হুম।

-কিন্তু..

-কোনো কিন্তু শুনবো না। যাবি তো যাবি।

আজ আমি কিভাবে এক কথার মানুষ হয়ে গেলাম কিভাবে বুঝতে পারলাম না। বুঝলাম না কেন এত তাসনিমের কথা ভাবছি। হিসাব মিলিয়ে দেখলাম আমি নিশ্চয়ই তাসনিমকে ভালবেসে ফেলেছি।

-কি রে কি ভাবছিস?

-হ্যা, না কিছু না। ওহ বাসার সামনে এসে পরছি। চল ভিতরে চল।

ভিতরে গিয়েই আম্মু আমাকে ভুলে গেল! তাসনিমকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো। আর এক নাগারে আমাকে শুধু হুকুম করে যাচ্ছে, আরাফ এটা আন, আরাফ ওটা আন, আরও কত কি! আর আম্মু! আম্মু ওর সাথে গল্প জুড়ে দিছে।আমি তাসনিমের ধারে কাছে ঘেষতে পারছিলাম না। তবে আমি এ সুযোগে দরজার পাশে দারিয়ে ওর কথা আর হাসির শব্দ শুনছিলাম। মেয়েটা খুব সুন্দর হাসতে পারে। খেয়াল করলাম তাসনিম কথার মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকাচ্ছে। ওর সে চোখ দেখলে আমি পুরো হারিয়ে যাই অন্য এক দুনিয়ায়। তারপর আমি, আম্মু আর তাসনিম একসাথে খাওয়া দাওয়া করলাম। আর আমি তখন ওর পাশে বসেছিলাম। মনে শুধু ভালবাসার প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় চলছিল। লজ্জায় লাল যেন না হয়ে যাই সেজন্য ঠোট চেপে চুপচাপ বসে ছিলাম। বিকালের সময় আম্মু তাসনিমকে ওর বাসায় পৌছে দিয়ে আসতে বললো। আর তখনই আমার মনটা কিছুটা খারাপ হয়ে গেল। মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছিল না। তাসনিমের কথায় আবার সচল হই। আমাকে যা জিজ্ঞেস করলো তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ও বললো,

-আরাফ, তুই কখনও প্রেম করবি না?

-হঠাৎ করে এই প্রশ্ন করলি কেন?

-এমনি। কেন করতে পারি না?

-পারিস।

-তাহলে বল।

-ভালবাসা বুঝাতে না পারলে ভালবেসে কি করব?

-ওহহহ, তাই বুঝি?

-তুই কাউকে ভালবাসিস?

-হুম বাসি।

ওর মুখে এই কথা শুনার পর আমার হৃদয়টা একেবারে চুপসে গেল। কথাটা শুনার পর আমার চোখটা কেমন ভারি ভারি মনে হচ্ছিল।

-জানিস, সে আমাকে কতটা ভালবাসে সে নিজেও জানে না। বারবার বুঝাতে চায়, সে আমি বুঝতে পারি কিন্তু সে প্রকাশ করতে পারে না।

মনে মনে ভাবতেছি মেয়েদের ভাগ্য কত ভাল! তাদের জন্য কেউ না কেউ অপেক্ষায় করে থাকে, আর আমার মত ছেলেদের জন্য কোন মেয়ে অপেক্ষা তো দুরে থাক, চিন্তাও করে না। ওর সাথে কথা বলতে আমার গলাটা ধরে আসছিল। ওকে বললাম,

-ছেলেটার নাম কি? কি করে?

-পেশা আর নাম দুইটাই তোর সাথে মিল খায়। ও পড়াশুনা করে, নাম আরাফ।

-থাকে কোথায়?

-কেন কিছুক্ষণ আগেই তো ওদের বাসা থেকে আসলাম! একসাথে খেলাম, কিছুটা চোখাচোখি হল! কেন তুই জানিস না?

ওর কথাগুলা আমার মাথার উপর দিয়ে চলে গেল।কোন কথা কোথায় এনে জোড়া লাগালো। রাস্তায় থমকে দাঁড়ালাম। শুধু একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছি আমি। আর ও আমাকে ঝারি দিয়েই যাচ্ছে,

-বলদ, গাধা, ইতর, গরু!
তুই না আমাকে ভালবাসিস? তো বলিস না কেন?

-ভয় লাগে।

-কিসের ভয়? আমি বাঘ না ভাল্লুক!

-ঈগল।

-কি! আমি ঈগল?

-হ্যা, তুই যেভাবে তাকালি যেন আমি তোর খাদ্য।

-ইচ্ছা তো হচ্ছে তোকে গলা টিপে মেরে ফেলি!!

আমি আবারও ওর চোখে তাকিয়ে রইলাম, একরাশ অকল্পনীয় ভালবাসার জোয়ার ছিল সেখানে। আমি কাপা কাপা হাতে সেটি মুছে দিলাম। আর ও আরও রেগে গেল!

-এ পর্যন্ত আমাকে ভালবাসি বলিস নি?

আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম কিছু আছে কিনা!

ঠিক তখনই দেখি একটা পুরানো মরিচা পরা প্রাইভেট কারের ধুলামাখা বডি। আমি সেখানে লিখলাম...

"আমি তোকে ভালবাসি।"

আর একটা <3 আঁকলাম আর তাসনিম তাতে A+T লিখে ফেললো।

-আসলেই তুই একটা জিনিয়াস গার্ল।

-আর তুই আসলেই একটা সিনিয়র গাধা।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৩:০০

ডেড আকাশ বলেছেন: হুম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.