নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেশ নিয়ে খুব চিন্তায় মগ্ন থাকি। ভালবাসি আমার এই দেশটাকে।
হাটাহাটি করা আমার নেশা সেটা কম বেশী আমার বন্ধু মহলের সবাই জানে। বর্তমানে নিউ ইয়র্কেও কাজের ফাঁকে যখনই সময় পাই হাটতে থাকি। কোনো গন্তব্য ছাড়াই হাটতে থাকি। হাটতে ভালো লাগে তাই হাটি। ছোট্ট ছেলের সাথে যেরকম খেলতে ভালো লাগে, ফুটবল খেলা যেরকম দেখতে ভালো লাগে ঠিক সেরকম হাটাহাটিটাও সেরকম চরম ভালো লাগে।
এই হাটাহাটিটা নতুন কিছু নয়, সেই বাংলাদেশে থাকতেও হাটাহাটি করতাম। ঘন্টার পর ঘন্টা হাটতাম। রোদ-বৃষ্টি কিছুই মানতাম না। তো একদিন হলোটা কি হাটতে হাটতে কালিগঞ্জ পর্যন্ত গেলাম। ইচ্ছে ছিলো হেটে হেটে যাবো পরে বাসে করে ঢাকা ফেরৎ আসবো। মাঝখানে কি যে হয়ে গেলো তা চিন্তা করলে আজও গা শিউরে উঠে।
সেদিনের কথা বলবো! ঘটনাটি আজ থেকে ৩--৪ বছর আগের। দিনটি ভালই ছিল। বৃষ্টির কোনো লক্ষণ ছিলনা। আবার সেরকম যে কড়া রোদ সেটাও ঠিক নয়। বলা যেতে পারে শীতকালের সকাল ঠিক যেমন হয় সেরকম। কুয়াশা ছিল সকালের দিকে তবে সেটা দিনের সাথে সাথে একেবারেই চলে গিয়েছিল। মাথায় চিন্তে আসলো এই আবহাওয়ায় যদি হাটাহাটি না করি তাহলে কেমনে কি? অনেকক্ষণ ধরে হাটা যাবে কারণ তাপমাত্রা এমনই ছিল যে হাটাহাটি করলে যে অনেক ঘাম হবে সেরকম নয়।
সকাল ১১টার পর হাটতে বের হলাম। আজমপুরের ওখানে এসে একটা টং-এর দোকান থেকে এক কাপ চা ও দুটো বিস্কুট খেয়ে আবার হাটা শুরু করলাম। দেশে হাটাহাটির একটা মজার দিক হলো যেখানে সেখানে টং এর দোকান পাওয়া যায়। তাই হাতমুক্ত রাখার জন্য কোনো কিছু নিয়ে বের হয়নি। পানি পিপাসা লাগলে যেকোনো দোকান থেকে কিনলেই হবে।
মূল ঘটনায় আসি। আমি হাটছিলাম। গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। গ্রাম বলতে পুরোপুরি গ্রাম যেটাকে বলে। শহরের কোনো ছাপ নেই। হাটতে হাটতে খেয়াল করলাম সামনের রাস্তাটা সরু হয়ে আসছে। অন্ধকার রাস্তা। হাটা বন্ধ করলাম না। সামনের দিকে আগালাম। এই জায়গাটি পুরোপুরি গাছ দিয়ে ঘেরা। রাস্তার দুই ধারেই গাছ। এক সাইডের গাছ আরেক সাইডের গাছের সাথে মিশেছে দেখে সূর্যের কোনো আলো এসে রাস্তার ওপর পরেনা।
আমি হাটতে থাকলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম রাস্তার একদিকে গাছে ঘেরা দোতলা একটি বাড়ি। বাড়িটির আশপাশে শুধু জঙ্গল। পরিত্যক্ত একটি বাড়ি। বুঝাই যাচ্ছে বাড়িটিতে কেউ থাকেনা। গ্রামের মধ্যে এরকম পুরোনো একটি বাড়ি দেখে বেশ অবাকই হলাম। আমি যখন বাড়িটির পাশ দিয়ে হেটে হেটে যাচ্ছিলাম আড় চোখে তাকাচ্ছিলাম বাড়িটির দিকে। কেমন যেনো মনে হলো কিছু একটা দেখেছি আমি। মনের মধ্যে এই সময়ে অনেক কিছুই খেলে। ভাবলাম এমনি এমনিই মনে করছি হয়তো। আমি হাটছিলাম। আশপাশে আর কোনো বাসা চোখে পড়লোনা। এরকম একটি নির্জন জায়গায় মাত্র একটা বাড়ি দেখে বেশ অবাকই হলাম। কিছুক্ষণ আগেই রাস্তা দিয়ে হাটার সময় লোকজন দেখছিলাম হঠাৎ এই জায়গায় আসার পর দেখি সব কিছু কেমন যেন থমকে গেলো। কোনো লোকজন নাই, নেই অন্য কোনো বাড়ি। আমি কি ঘোরের মধ্যে হাটছিলাম? এইতো কয়েক মিনিট আগেই রাস্তার দু'ধারে বাসা বাড়ি, দোকান দেখছিলাম, মানুষজনের ভীড় দেখছিলাম আর এখন এগুলো কিছুই নেই। আমি এসব ভাবতে ভাবতে বেশ সামনে চলে আসার পর ভাবলাম আর সামনে না গিয়ে পিছনে যেতে থাকি। এই জায়গা থেকে বের হয়ে যাই।
পিছনের দিকে হাটা শুরু করলাম। আবার ঐ বাড়িটি সামনে এলো। একটু জোড়েজোড়ে হাটা শুরু করলাম কারণ আমি জানি আর একটু এগুলেই এই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে পারবো। হঠাৎ খেয়াল করলাম ঐ বাড়িটির বারান্দার দরজার কোণায় কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। আমার দিকে একনজরে তাকিয়ে আছে। সাদা শাড়ি পরা এক মহিলা, লম্বা কালো চুল ও মুখে বিষন্নতার ছাপ নিয়ে আমার দিকে চেয়ে আছে।
একটু ভয় পেয়ে গেলাম! তারপরেও হাটতে থাকলাম। পিছনে তাকালাম না। ওমা! হাটছিতো হাটছিই! এই জায়গায় ঢোকার সময় দেখেছিলাম রাস্তার দুই ধারে উচুউচু গাছ একটার সাথে একটা মিশে গেছে। এই জায়গায় ঢোকার আগে কিন্তু এরকম ছিলনা আর এই জায়গায় প্রবেশ করার একটু পরেই ঐ বাড়িটি দেখেছিলাম সুতরাং যখন এই বাড়িটি আবার দেখলাম তখনতো আর বেশি সময় লাগার কথা নয় এখান থেকে বের হবার কিন্তু এখন এতো সময় লাগছে কেনো? আমি তাও হাটতে থাকলাম। পিছনে একবার তাকালাম ও বাড়িটি দেখা যাচ্ছে। আমি হাটছি। হাটছি তবে আনন্দ পাচ্ছিনা। ভয় লাগছে। হাটতে হাটতে কোথায় আসলাম বুঝছি না। পথ হারায় ফেললাম নাকি? ঠিক ঐ সময় আকাশে মেঘের ডাক শুনতে পেলাম। হায়! হায়! এখন যদি বৃষ্টি হয়!!!
আমি হাটতে থাকলাম সামনের দিকে কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখি আমি ঘুরেফিরে ঐ বাড়িটির সামনেই আসলাম। এটা কেমন করে হলো? এরই মধ্যে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। কি যে করি বুঝতে পারছিলামনা। বৃষ্টির পানিতে ভিজে তখন আমি একদম চপচপে হয়ে গেলাম। আমি হাটতে থাকলাম ভাবলাম এর আগে হয়তো সোজা যায়নি, কিন্তু আমিতো আর রাস্তা বদলায় নাই কারণ রাস্তাতো এখানে একটাই!!
বৃষ্টির মধ্যেই হাটলাম। মিনিট দশেক হেটে দেখি আবারো ঐ বাড়িটির সামনেই আসলাম। আমি রীতিমতো ঘাবড়ে গেলাম এবারে। না পেরে বাড়িটির সামনে গেলাম। উপরের দিকে তাকালাম কাউকে দেখতে পাই কিনা। ততক্ষণে কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে এসছে। আমার ঐ মহিলার কথাটা মনে পড়লো যাকে কিনা দেখেছিলাম বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে তবে ভয় লাগছিল বেশ। নির্জন এরকম জায়গায় কোথায় যে চলে আসলাম বুঝলাম না। আর পথ হারালাম কিভাবে সেটাও ঠিক বুঝতে পারছিলাম না।
আমি বাড়িটির নিচে দাঁড়িয়ে আছি। বৃষ্টির জন্য কালো মেঘ তার ওপর আবার সন্দ্ধ্যা, আকাশ একেবারে কালো হয়ে গিয়েছিল। আমি মোবাইল ফোনের লাইট জালাতে যাবো দেখি চার্জ বেশীক্ষণ নাই। এরকম ঘুটঘুটে অন্ধকার জায়গায় বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় কিভাবে রাত কাটাবো তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। আর ঐ সময় দেরী হয়ে গিয়েছে যে আবার হেটেহেটে যে আমি ওখান থেকে বের হবো। তাহলে কি রাত এই বাড়িতেই কাটাতে হবে? তাহলে ঐ মহিলাটা কে? ভূত নাতো?
আমি দরজায় নক করবো কিন্তু দেখি বাড়িটির দরজা খোলা। ব্যাপারটি বেশ অস্বাভাবিক লাগলো। তারপরেও আস্তে করে দরজাটা খুললাম। কেউ আছে কিনা জিজ্ঞেস করলাম। কোনো উত্তর পেলাম না। শুনশান নিরবতা! কোনো রকম সারাশব্দ নাই। পরিত্যাক্ত বাড়ি যাকে বলে ঠিক সেরকম। তাহলে সাদা শাড়ি পড়া ঐ মহিলাটি কে যাকে দেখেছিলাম? উপরতালা থেকে কিরকম যেন আওয়াজ আসছিলো। খিল খিল হাসি ও আস্তে আস্তে হাটাহাটির আওয়াজ। আমি ভাবলাম দৌড় দিয়ে বের হয়ে যাবো কিনা, কিন্তু যাবো কোথায়? বাইরে ততক্ষণে বৃষ্টির মাত্রা চরম আকারে বেড়েছে। মুষল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে। সকালে যেখানে আবহাওয়া দেখে বের হলাম এবং দেখলাম যে সারাদিন কোনো বৃষ্টি হবেনা সেখানে এরকম বৃষ্টি হওয়াটা আশচর্য লাগলো। আমি যে ঘরে ঢুকেছিলাম সেই ঘরের মেঝেতে চুপচাপ বসে রইলাম। মনে হলো কে যেনো উপর থেকে উকি দিলো। আমি ভয়ে কেপে উঠলাম। আমি হ্যালো বলে ডাকলাম। কোনো উত্তর পেলাম না। বেশ কিছুক্ষণ চুপ ছিলাম। কেমন জানি মনে হচ্ছিলো আমার ঠিক পাশে কে যেন জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস ফেলছে। আর আমার পাশের ঘর থেকে কে যেনো বলে উঠলো "তুই বেড়িয়ে যা!" কথাটি বেশ আ্বতে আস্তে বলছিলো তবে শুনতে পাচ্ছিলাম আমি। উপরতলা থেকেও দেখি একই সময় মৃদু কান্নার শব্দ। "নিয়ে যা! নিয়ে যা! নিয়ে যা!" এমন কথা শুনততে পেলাম। বাড়িতে তাহলে কি দুইজন আছে, নাকি আরো কয়েকজন আছে? আমিতো রীতিমতো ভয়ে কাপছি।
হঠাৎ দেখি কালো কাপড় পরিহিত বেশ লম্বা এক বুড়ি মহিলা হাতে বেশ বড় একটা ছুরি নিয়ে সিড়ির সামনে দাঁড়িয়ে। ঠিক একই সময়ে বিশাল জোড়ে এক বজ্রপাত হলো। "তুই যাবিনা"।
আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। ভয়ে দৌড়াতে যাবো পা পিছলে পরে গেলাম। আমার দিকে ছুটে আসছিলো মহিলাটি। আগে কোনো বুড়ি মহিলাকে কখনও এতো জোড়ে দৌড়াতে দেখিনি। আমি কোনভাবে উঠে দৌড়াতে থাকলাম। বাড়িটি থেকে বের হয়ে দেখি মুষলধারে বৃষ্টির কারণে চারিদিক পানিতে ভড়ে গিয়েছে। আমি কোনোদিকে তাকালাম না শুধুই দৌড়াতে থাকলাম। আমার পিছন পিছন ঐ বুড়িটাও দৌড়াচ্ছে। আমি এক নিশ্বাসে দৌড়ালাম। বেশ অনেক্ষণ হয়ে গিয়েছে। আমি বড় একটি গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার পিছনে দেখি কেউ নেই। এতই জোড়ে দৌড়িয়েছি হয়তো অনেক সামনেই চলে এসছি তবুও এই জঙ্গল জায়গাটি ছাড়তে পারলাম না।
মনে হলো এই জায়গাটিতে আগে এসছিলাম বোধ হয়। ওমা! কি ভয়ঙ্কর ব্যাপার! সামেই দেখতে পেলাম ঐ বাড়িটি। এতক্ষণ কি কোনো সার্কেলের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছি আমি? বৃষ্টি কিছুটা হলেও কমেছে কিন্তু চারপাশে কেমনজানি কান্নাকাটির আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি আর থাকতে পারছিলাম না। বেশ ভয় পেয়ে গেলাম।
এরপর কি হয়েছে আমি সঠিক বলতে পারবোনা। আমার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি একটি মানসিক হাসাপাতালের ওয়ার্ডে শুয়ে আছি।
২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৪৬
কবিতা পড়ার প্রহর বলেছেন: আমার সাথে এমন হলে মানসিক হাসপাতালেও যাওয়া হত না। তার আগেই অক্কা পেতাম।
৩| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৪৯
তারেক ফাহিম বলেছেন: এমনটা ঘটেছিলো? কি সাংঘাতিক।
৪| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১৩
কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন:
৫| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:২৬
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: লিখেছেন অভিজ্ঞতা, পড়ে মনে হলো রূপকথা। যাইহোক পড়ে ভালো লেগেছে। দেখুন এটাকে আগে-পিছে কিছু জুড়ে দিয়ে একটা ছোট গল্প বানানো যায় কিনা! ধন্যবাদ।
৬| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:০০
ফয়সাল রকি বলেছেন: মানসিক হাসপাতালে কত দিন ছিলেন?
গল্প ভালো লেগেছে।
৭| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:০৪
রাজীব নুর বলেছেন: প্রচুর সিনেমা দেখলে এরকম বিভ্রম হয়।
৮| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১৩
নেওয়াজ আলি বলেছেন: ওহ বাপরে। ঘটনা সত্য কিনা
৯| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৩৯
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: ভয়ানক ঘটনা।
১০| ২৩ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১০
হাসান মাহবুব বলেছেন:
১১| ০৯ ই মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:৩৭
মিরোরডডল বলেছেন:
গল্পটা সত্যিই ভয়ের ছিলো । ভালো লেগেছে ।
কোনো মন্তব্যের উত্তর দেয়া হয়নি ................
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৩৮
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
ঘটনা কি আসলেই সত্য। ?