নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বল বীর – বল উন্নত মম শির! শির নেহারি’আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!
আফগানিস্তান ও শতাব্দির ইতিহাসঃ পর্ব ১
আফগানিস্তান ও শতাব্দির ইতিহাসঃ পর্ব ২
১৯৭৯ সালে বাবরাক কারমল কে সমর্থন করে আফগানিস্থানে সোভিয়েত ইউনিয়ন সেনা পাঠায় এবং হাফিযুল্লাহ আমিন কে ক্ষমতাচ্যুত করে বন্দী করে এবং এর তিন দিন পর তাকে হত্যা করা হয়। সোভিয়েত সেনারা ছিল প্রশিক্ষিত ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত। ফলে কমিউনিষ্ট শাসন ঠেকাতে মোজাহিদরাও আরো জোরে সোরে মাঠে নামে।
এদিকে সোভিয়েত সেনাদের আফগানিস্তানে প্রবেশ পাকিস্তানের জন্য ভয়াবহ সমস্যার সৃষ্টি করে। পাকিস্তানের একদিকে বৈরি ভারত অন্যদিকে ভারতের মিত্র সোভিয়েত ইউনিয়ন। সূতরাং পাকিস্তান সরকার ও সীমান্তবর্তী পাকিস্তানি পশতু নেতারা মোজাহিদীনদের সহায়তায় এগিয়ে আসে। তারা মোজাহিদীনদের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা শুরু করে।
যেখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন আছে সেখানে যুক্তরাষ্ট্র না এসে পারেই না। ফলে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের মাধ্যমে মোজাহিদীনদের সামনে রেখে প্রক্সি যুদ্ধ শুরু করল। যুদ্ধে নতুন মাত্রা পেল। যুক্তরাষ্ট্র মোজাহিদীনদের আধুনিক অস্ত্র ও অর্থ পাকিস্তানীদের মাধ্যমে পৌছে দিতে লাগল এবং পাকিস্থান সেনাবাহিনী এবং আই এস আই ট্রেইনিং এর ব্যবস্থা করল। এ সময়ে কৃষক ও সাধারন শ্রমজীবিরা মোজাহিদ বাহিনীতে যুক্ত হয় এবং স্থানীয় ভাবে ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে লড়াই করতে থাকে এবং সোভিয়েত বাহিনীর উপর চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে থাকে। আস্তে আস্তে যুদ্ধের ভয়াবহতা বাড়তে থাকলে সাধারন আফগানরা দেশ ছাড়তে শুরু করে এবং মোজাহিদরা পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে সেখান থেকে হামলা চালাতে শুরু করে। ফলে সোভিয়েত সাজোয়া যান, আর্টিলারি বা ট্যাংক মোজাহিদদের ঠেকাতে অকার্যকর হয়ে পড়ে। তখন সোভিয়েত বাহিনীর প্রধান অস্ত্র হয়ে ওঠে মিল ২৪ গানশিপ। গানশিপের সাহায্যে সোভিয়েতরা পাহাড়ে অভিজান চালাত।
পাকিস্তান খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে আফগান যুদ্ধের নিয়ন্ত্রন সেল খুলে এখান থেকে আফগান যুদ্ধ নিয়ন্ত্রন ও দেখভাল করতে থাকে। এখানকার শরনার্থী শিবির গুলোতে পাকিস্তান মোজাহিদিনদের ট্রেইং দিয়ে আফগানিস্তানে পাঠাতে শুরু করে। ফ্রন্ট লাইনে পাকিস্তান থাকলেও পেছন থেকে অর্থ ও রশদ সরবরাহ চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এ দিকে সেসময়ে চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্পর্ক ভাল না থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে চীন, সৌদি ও মধ্যপ্রাচ্যের আরো কিছু দেশ মোজাহিদীন বাহিনীকে পাকিস্তানের মাধ্যমে সহযোগিতা প্রদান করে।
এমন সময় আমেরিকানরা দৃশ্যপটে নিয়ে আসে আর পি জি ও এফ আই এম ৯২ স্ট্রিংগার। ৩০ হাজার ডলার দামের একটি মিসাইল ১০ মিলিয়ন ডলার দামের এক একটি কপ্টার ধ্বংশ করে ফেলতে পারে। ফলে দেখা যায় প্রায় প্রতিদিনই দুই একটি সোভীয়েত হেলোকপ্টার মোজাহিদ বাহিনী ভূপাতিত করছে। মোজাহিদরা গ্রামের সাধারন মানুষের সাথেই মিশে ছিল এবং তাদের আলাদা করা যাচ্ছিল না ফলে সোভিয়েত সেনারা হেলিকপ্টার থেকে বোমাবর্ষন করে গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংশ করতে থাকে। যেহেতু মোজাহিদরা কোন কেন্দ্রীয় কমান্ডের নিয়ন্ত্রনাধীন ছিল না ফলে যুদ্ধ বন্ধে তাদের সাথে কোন শান্তি চুক্তিও করা সম্ভব হচ্ছিল না। দেখা যায় এ সময়ে প্রায় ১ বছরেই ১০ লাখ আফগান হত্যার শিকার হয়। এছাড়াও প্রায় ৮০ লাখ আফগান দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়ে আরো প্রচুর মানূষ স্থানীয় ভাবে বাস্তুচ্যুত হয়। এ শরনার্থীদের প্রায় ৬০ লাখ পাকিস্তানে ও ২০ লাখ ইরানে আশ্রয় নেয়। একটা সময় দেখা যায় দেশের বেশিরভাগ পরিবারের নারী ও শিশুরা দেশ ছেড়ে বিদেশে আশ্রয় নিয়েছে, শুধু প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষরা রয়ে গেছে যুদ্ধ করতে।
সোভিয়েত বোমা বর্ষন ও পুতে রাখান মাইনে হেরাত কান্দাহারের মত বড় শহরগুলি ব্যপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এক দশকে প্রায় ২০ লাখ আফগান নিহত হয়, আহত হয় আরো কয়েক মিলিয়ন। এ সময় অর্থনৈতিক ভাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং আফগানিস্থানে ব্যপক ক্ষয় ক্ষতির মুখে ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত বাহিনী আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যায়। সোভিয়েত সামরিক সহায়তা ছাড়া আফগান সরকার দূর্বল হয়ে পড়ে এবং তার ফলশ্রুতিতে ১৯৯২ সালে মোজাহিদরা কাবুল দখল করে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ নাজিবুল্লাহ কে ক্ষমতাচ্যুত করে ও সরকার গঠন করে।
দশক ব্যাপি চলা এ যুদ্ধে আফগানিস্তানের আর্থসামাজিক ব্যবস্থা ব্যপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সবার হাতে অস্ত্র চলে আসে। মানুষ ছোট ছোট মিলিট্যান্ট গ্রুপ তৈরি করে নিজস্ব প্রভাব বলয় তৈরি করে এবং লুটতরাজ করতে থাকে। এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন ওয়ারলর্ড গজিয়ে ওঠে যারা স্থানীয় প্রশাষন নিয়ন্ত্রন করতে শুরু করে এবং ট্যাক্স নিতে শুরু করে। বিভিন্ন মোজাহিদ নেতাদের সমন্বয়ে নতুন আফগান সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও এ সরকার সম্পূর্ন আফগানিস্থান নিয়ন্ত্রনে নিতে ব্যর্থ হয়। এক এক এলাকা ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের নিয়ন্ত্রনে চলে যায় ফলে একটি দেশ হয়ে আফগানিস্তান হয়ে পড়ে খন্ডিত দেশ।
চলবে………
৩০ শে মে, ২০২২ দুপুর ১:৪১
খাঁজা বাবা বলেছেন: লেখাটা উইকিপিডিয়া, অন্য কিছু লেখা, ভিডিও ব্লগ ও নিউজ থেকে তথ্য নিয়ে নিজের মত করে লেখা।
ওইভাবে সূত্র দেয়া একটু কঠিন।
আপনার পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ।
২| ৩০ শে মে, ২০২২ দুপুর ১:৪২
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: আফগানিস্তানের করুণ ইতিহাস। চলতে থাক.......
৩০ শে মে, ২০২২ দুপুর ১:৫৪
খাঁজা বাবা বলেছেন: করুণ ইতিহাস।
মূলত তালিবান উত্থানের কারন তুলে ধরতেই এই লেখা।
ধন্যবাদ।
৩| ৩০ শে মে, ২০২২ দুপুর ১:৪৪
শাহ আজিজ বলেছেন: স্ট্রিংগার মিসাইল এর সাম্প্রতিক ভার্সন এখন আরও বিপজ্জনক । ইউক্রেনে রাশিয়ার পরাজয়ের কারন এই মিসাইল আর ট্যাংক বিধ্বংসী মিসাইল ।
ভাল লাগছে , চলুক ।
৩০ শে মে, ২০২২ দুপুর ১:৫৭
খাঁজা বাবা বলেছেন: কাঁধে বহল যোগ্য স্বল্প পাল্লার এই মিসাইল নিচু দিয়ে ওড়া আকাশযানের জন্য মারাত্বক হয়ে উঠতে পারে।
অবশ্য এখন বিমানকে বোমা হামলার জন্য খুব নিচুতে উড়তে হয় না।
ধন্যবাদ।
৪| ৩০ শে মে, ২০২২ বিকাল ৩:১৯
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
আফগানিস্তান দেশটা এক্সপেরিমেন্টের জায়গা।
৩০ শে মে, ২০২২ বিকাল ৩:৩৮
খাঁজা বাবা বলেছেন: খুব দ্রুত পরিবর্তনশীল।
রাজতন্ত্র, গনতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, কমিউনিজম, শরিয়া, ক্যাপিটালিজম সব কিছুই দেখেছে এদেশের মানুষ।
৫| ৩১ শে মে, ২০২২ রাত ১২:৫২
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: কাবুলিওয়ালাদের সম্পর্কে কিছু পেলাম না। আফগানিস্তানের শতাব্দীর ইতিহাসে ওদের কোন ভুমিকা আছে কি?
৩১ শে মে, ২০২২ সকাল ৯:২৯
খাঁজা বাবা বলেছেন: অবশ্যই কাবুলিওয়ালাদের ভূমিকা আছে, তবে আমি এখানে শুধু রাজনৈতিক ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
৬| ৩১ শে মে, ২০২২ রাত ৩:০৪
শ্রাবণধারা বলেছেন: তিনটি পর্বই পড়লাম এবং আফগানিস্তানের ইতিহাস সম্পর্কে অনেকটা জানলাম। আপনাকে ধন্যবাদ এই ইতিহাস জানার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আর হ্যা, আমানুল্লাহর কথা মুজতবা আলীর দেশে বিদেশে উপন্যাসে ছিল। সেখান থেকে আমার ধারণা হয়েছিল যে একদল ডাকাত আমানুল্লাহকে বিতাড়িত করেছিল। তালেবানকে সেই ডাকাতদের পরবর্তী প্রজন্ম ভেবেছিলাম।
৩১ শে মে, ২০২২ সকাল ৯:৩১
খাঁজা বাবা বলেছেন: সবগুলি পর্ব পড়ার জন্য ধন্যবাদ। শুরুতে ভেবেছিলাম ৩ পর্বের মধ্যে শেষ হবে যাবে। কিন্তু লেখা শুরুর পর শুধু বাড়ছেই। আরো হয়ত দুটি পর্ব আসবে। আশা করি সাথে থাকবেন।
৭| ০২ রা জুন, ২০২২ রাত ৯:৩৬
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: পরপর দুটি পর্ব পড়ে তৃতীয় পর্ব পড়া শেষ করলাম। অনেক পরিশ্রম করেছেন । মুজাহিদের উপর আমার একটা গল্প আছে।বাইরে থেকে সাধারণ আফগানরা কমিউনিস্ট সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করলেও উপমহাদেশের অনেক সাধারণ মানুষও এতে অংশ নিয়েছিল।দশ বছরের যুদ্ধে মুজাহিদরা সাফল্য পায় ঠিকই কিন্তু যুদ্ধ শুরু হলে কবে শেষ হবে তা নিয়ে উভয় পক্ষের সংশয় ছিল। ফলে মুজাহিদের কয়েক বছরের মধ্যেই চারিত্রিক অবক্ষয়তা ধরা পড়ে। আমারই এক চাচাতো বোনকে এক মুজাহিদ বিয়ে করে আফগানিস্তানে নিয়ে যায়।সেখানে তার করুন ইতিহাস গল্পের মুল বিষয়। মূলতঃ এটাই এই গল্পে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
সম্ভব হলে আমার তমোময়ী সিরিজে একটু আসার জন্য অনুরোধ রইলো।
সময় নিয়ে পরের পর্বগুলোতেও যাব।
পোস্টে লাইক।
শুভেচ্ছা আপনাকে।
০২ রা জুন, ২০২২ রাত ১০:১৭
খাঁজা বাবা বলেছেন: ধৈর্যধরে আমার লেখা পড়ার জন্য পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
এ কদিন আফগানিস্তানের ইতিহাস নিয়ে অনেক পড়াশুনার পর আপনার সত্য ঘটনা অবলম্বনে গল্পটি পড়ার লোভ সামলাতে পারছি না। আপনার গল্পটি অবশ্যই পড়ব।
আপনাকে ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে মে, ২০২২ দুপুর ১:২৯
রাজীব নুর বলেছেন: লেখার তথ্যসুত্র দিয়ে দিন। অন্যথায় বিপদে পড়বেন আমার মতো।