নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বল বীর – বল উন্নত মম শির! শির নেহারি’আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!
প্রতিদিনের মত অফিস সেরে সন্ধ্যা বেলায় বাসায় ফিরে কিছুক্ষন টিভি দেখলাম। তারপর রাতের খাওয়া খেয়ে মোবাইলে ফেসবুক আর ইউটিউবের পাতা স্ক্রলিং করতে করতে ঘুমের পরি টা কখন যে চোখে নেমে এল টের পেলাম না। এর পর গভীর ঘুম।
সকাল বেলা ঘুম ভাঙল। টের পেলাম গভীর ঘুমের পর শরীরটা একেবারে ঝরঝরে হয়ে গেছে। ঘুম ভাংলেও চোখ খুললাম না। সিদ্ধান্ত নিলাম এলার্ম না দেওয়া পর্যন্ত বিছানায় চোখ বন্ধ করে আর একটু গড়াগড়ি করব। চোখ খুললেই ঘুমের মজা টা নষ্ট হয়ে যাবে। এলার্ম দিলে উঠে ফ্রেশ হয়ে অফিসে যেতে হবে।
কতক্ষন সময় পার হল ঠিক বলা যাবে না, ২০ বা ৩০ মিনিট। এখনো এলার্ম দিচ্ছে না কেন? এলার্ম কি মিস হয়ে গেল? তাহলে তোঁ লেট......
চোখ খুললাম মোবাইলে ঘড়ি দেখার জন্য। কিন্তু একি?????
চোখ খুলে দেখলাম আমি তো আমার ঢাকার বাসায় নেই, বাড়িতে আমার বিছানায়। এখানে এলাম কখন, কিভাবে? মাথার ভেতরটা কেমন ফাকা ফাকা লাগছে। কিছুই বুঝতে পারছি না। কি হচ্ছে?
বিছানায় সুয়ে আছি। চিন্তা বেশিদূর আগাচ্ছে না। এমন সময় মায়ের ডাক শুনলাম।
কিরে এখনো ওঠো নাই? স্কুলে যাবি না.........
এবার আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরল।
আমি এক লাফে উঠে আয়নার সামনে গেলাম। দেখলাম আমি তোঁ সেই আগের মতই দেখতে, যেমন স্কুলে পড়ার সময় ছিলাম। তবে এতক্ষন কি হল? আমি কি রাতে স্বপ্ন দেখছিলাম ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে? তাই হবে......
আমি আমার বর্তমান নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করলাম। আজ কি কি করতে হবে, কোথায় যেতে হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। আস্তে আস্তে সব মনে পরছে। ৯ টায় ক্লাস। প্রথম পিরিয়ডে অঙ্ক ক্লাস। দ্বিতীয় পিরিয়ডে বাংলা। সারে দশটায় খেলা সাইন্স-কমার্স গ্রুপ। প্রথম পিরিয়ডের পরেই ক্লাস থেকে পালাতে হবে নইলে খেলা মিস। বাসা থেকেও খেলার প্রিপারেশান নিয়ে বের হতে হবে।
ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে ক্লাসে গেলাম। প্ল্যান মাফিক একটা ক্লাস করেই পিছিনের দেয়াল টপকে দল বল সহ সাবাই ভাগলাম। খেলায় হাড্ডা হাড্ডি লড়াইয়ের পর আমরাই জিৎলাম। আমার পার্ফমেন্সের কথা আর নাই বা বলি, ভাল ব্যাট করলাম। খেলায় হারার পর হারু পার্টির মন খারাপ। তারা প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আগামী কাল আবার খেলতে চায়। ঠিক হল আগামী কাল আবার আমরা খেলব। একই সময় ক্লাস ফাকি দিয়ে, স্কুল পালিয়ে।
খেলা শেষে বাসায় ফিরে, খাওয়া দাওয়া করে আবার বিকেলে খেলতে গেলাম পাড়ার মাঠে। খেলা শেষে সন্ধায় বাসায় আসলাম। পড়তে বসলাম আর আল্লাহর নাম নিতে লাগলাম যাতে স্যার আজকে পড়াতে না আসে। স্যারের দেয়া কোন পড়াই পড়া হয় নাই। কিন্তু কিছুক্ষনের মদ্ধ্যেই স্যার এসে হাজির। একঘন্টা বকা ঝকা করে স্যার চলে গেলেন। স্যার যাওয়ার পর আম্মা এসে আর এক চোট বকলেন। সামনে এস এস সি পরীক্ষা, এখনো কেন পড়ি না। এমন ভাবে চললে ফেইল নিশ্চিত। আর ফেইল করলেই ঘরের দরজা আমার জন্য বন্ধ।
কে কার কথা শোনে, স্যার যাওয়ার পর আমি বইয়ের নিচে মাসুদ রানা নিয়ে পড়া শুরু করলাম। “আই লাভ ইউ ম্যান”। ৪ টা বই ধার করে এনেছি। এক সপ্তাহের মধ্যে ফেরত দিতে হবে। বসে থাকলে চলবে না। সামনে খাতা কলম রাখলাম, যাতে আম্মা পড়ার শব্দ না পেলেও মনে করে আমি লিখছি। কিছুক্ষন পরেই মাথাটা ঝিম ঝিম করা শুরু করল। সারাদিনের ক্লান্তি এসে চোখে ভর করেছে।
এমনি করেই দিন পার। তারপর খাওয়া, ঘুম। বিছানায় সুয়ে আগামী কালের খেলা নিয়ে ভাবছি, কালকেও জিততে হবে। একে তোঁ প্রেস্টিজ তার উপর কালকের খেলায় ১০০ টাকা বাজি। তাছাড়া আজ স্যার ক্লাসে এসে নাকি কাউকেই পায় নাই, সবাই পালিয়েছে। কাল কিশ্চয়ই ধরার জন্য স্যার কোন প্ল্যান করেছে। সূতরাং কাল অন্য রাস্তায় পালাতে হবে। প্ল্যান করতে করতে কখন যেন ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে ঘুম ভাঙল এলার্মের শব্দে। চোখ খুলে আমি আবার বো...চো... হয়ে গেলাম। আমি আমার ঢাকার বাসায় বিছানায় সুয়ে আছি। কিভাবে এলাম? আজকের খেলার কি হবে? কি হচ্ছে আমার সাথে? মোবাইলে ডেট দেখলাম আজ ১৩ তারিখ। আমার নিশ্চিত মনে আছে গতকাল মানে যখন আমি ঘুমিয়ে ছিলাম সেদিন ১১ তারিখ ছিল। অফিসে কাগজ গুলিতে সিগ্নেচার করার পর ১১ তারিখ লিখেছিলাম। তাহলে মাঝখানের ৩৩ ঘন্টা সমইয়ের ই বা কি হল? এই সময়টা আমি কোথায় ছিলাম?
আমি কি স্বপ্ন দেখছি? নাকি দেখেছিলাম? পুরোটা সময় কি আমি ঘুমিয়ে ছিলাম? কোনটা স্বপ্ন? এটা না আগেরটা? ওটাই তো ভাল ছিল। স্বপ্নের মত দিনগুলি। জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। কেন ফিরলাম আবার?
যাহ আর বেশী কিছু চিন্তা করতে ভাল লাগছে না। যা হওয়ার হচ্ছে। অফিসে যেতে হবে। অলরেডি ৪ দিন লেট হয়ে গেছে। আজকেও লেট হলে হাফ ডে’র ছুটি কাটা যাবে। একদম দেরী করা যাবে না। এখনো মাসের ১২ দিন বাকি।
(একটি ভাবনায় রঙ লাগানোর অপচেষ্টা)
©somewhere in net ltd.