নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যুর বাগানে নিমন্ত্রণ আপনাকে।

মরুভূমির জলদস্যু › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাঁচ খানি কবিতা - ০৩

৩০ শে আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:০৭


‘আমাকে খোঁজো না তুমি বহুদিন – কতদিন আমিও তোমাকে
খুঁজি নাকো; – এক নক্ষত্রের নিচে তবু – একই আলো পৃথিবীর পারে
আমরা দুজনে আছি; পৃথিবীর পুরনো পথের রেখা হয়ে যায় ক্ষয়,
প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়,
হয় নাকি? – বলে সে তাকাল তার সঙ্গিনীর দিকে;
আজ এই মাঠ সূর্য সহমর্মী অঘ্রাণ কার্তিকে
প্রাণ ভরে গেছে।
দুজনে আজকে তারা চিরস্থায়ী পৃথিবী ও আকাশের পাশে
এবার প্রথম এল মনে হয়- যেন কিছু চেয়ে কিছু একান্ত বিশ্বাসে।



অনেকেই জানেন ফুল আমার খুবই প্রিয়। ফুল কার না প্রিয়! সকলেই ফুল ভালোবাসে। আমি ফুলের ছবি তুলতে পছন্দ করি। ফুলের নাম জানতে চেষ্টা কবরি। এইটুকুই হয়তো ব্যাতিক্রম। আমি যেমনি ভাবে ফুল ভারোবাসি তেমনি ভাবে কবিতাকেও ভালোবাসি এটা বলা যাবে না। বলা যায় আমার সবচেয়ে কম পছন্দের বিষয় হচ্ছে এই কবিতা। কবিতা আমি একেবারেই পড়ি না, তা না। আমি কবিতা পড়ি। ইদানিং আগের চেয়ে বেশীই পড়ছি। সম্ভবতো বয়স বাড়ার সাথে সাথে পড়ার রুচি পালটাচ্ছে। বেশীরভাগ সময় কবিতার অর্থ বুঝতে পারি না বলে কবিতা এড়িয়ে চলি। বিশেষ করে আধুনিক কবিতা। মনে হয় যেনো কঠিন কিছু শব্দের এলোমেলো সমাবেশ, যে যার মতো যেখানে খুশী বসে আছে অর্থের পরোয়া না করেই। আমার পছন্দ কঠিন শব্দের সহজ-সরল কবিতা। আমার পছন্দ নরীর রূপ বর্ননার কবিতা, আমার পছন্দ ফুল-পাখি-প্রকৃতির কবিতা, আমার প্রছন্দ প্রেমের কবিতা, আমার পছন্দ .... কঠিন শব্দে সরল অর্থের কবিতা।

আজ আমার পছন্দের জীবনানন্দ দাশের পাঁচ খানি কবিতা রইলো।


-২-
আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে – এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয় – হয়তো বা শঙখচিল শালিকের বেশে,
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিঁকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়।
হয়তো বা হাঁস হবো – কিশোরীর – ঘুঙুর রহিবে লাল পায়
সারাদিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে।
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলঙ্গীর ঢেউ এ ভেজা বাংলারি সবুজ করুণ ডাঙ্গায়।

হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে।
হয়তো শুনিবে এক লক্ষীপেঁচা ডাকিতেছে শিমুলের ডালে।
হয়তো খৈয়ের ধান সরাতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে।
রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে
ডিঙ্গা বায় – রাঙ্গা মেঘে সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে,
দেখিবে ধবল বক; আমারে পাবে তুমি ইহাদের ভীড়ে।





-৩-
এই জল ভালো লাগে; বৃষ্টির রূপালি জল কত দিন এসে
ধুয়েছে আমার দেহ — বুলায়ে দিয়েছে চুল — চোখের উপরে
তার শান — স্নিগ্ধ হাত রেখে কত খেলিয়াছে, — আবেগের ভরে
ঠোঁটে এসে চুমা দিয়ে চলে গেছে কুমারীর মতো ভালোবেসে;
এই জল ভালো লাগে; — নীলপাতা মৃদু ঘাস রৌদ্রের দেশে
ফিঙ্গা যেমন তার দিনগুলো ভালোবাসে — বনের ভিতর
বার বার উড়ে যায়, — তেমনি গোপন প্রেমে এই জল ঝরে
আমার দেহের পরে আমার চোখের পরে ধানের আবেশে

ঝরে পড়ে; — যখন অঘ্রাণ রাতে ভরা ক্ষেত হয়েছে হলুদ,
যখন জামের ডালে পেঁচার নরম হিম গান শোনা যায়,
বনের কিনা ঝেরে যেই ধান বুকে করে শান — শালিখুদ,
তেমনি ঝরিছে জল আমার ঠোঁটের পরে চোখের পাতায় –
আমার চুলের পরে, — অপরাহ্নে রাঙা রোদে সবুজ আতায়
রেখেছে নরম হাত যেন তার — ঢালিছে বুকের থেকে দুধ।




-৪-
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ‘পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতোদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে—সব নদী—ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।





-৫-
সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়ো নাকো তুমি,
বোলোনাকো কথা ওই যুবকের সাথে ;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা :
নক্ষত্রের রূপালি আগুন ভরা রাতে ;

ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে ;
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার ;
দূর থেকে দূরে—আরো দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেয়ো নাকো আর।

কী কথা তাহার সাথে? তার সাথে !
আকাশের আড়ালে আকাশে
মৃত্তিকার মতো তুমি আজ :
তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে।

সুরঞ্জনা,
তোমার হৃদয় আজ ঘাস :
বাতাসের ওপারে বাতাস—
আকাশের ওপারে আকাশ।



পাঁচ খানি কবিতা - ০১
পাঁচ খানি কবিতা - ০২

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:৪১

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: কী সুন্দর লিখা

৩০ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১:৪০

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: জীবনানন্দের তুলনা হয় না।

২| ৩০ শে আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:৪১

অপু তানভীর বলেছেন: জীবন বাবু যেমন কবিতা লেখেন সেই কবিতা কেন জানি আমার মনে ধরে না । আমার রবিবাবুর কবিতা পছন্দ । জীবন বাবুর কেবল দুইটা কবিতা আমার বেশ পছন্দ । লিস্টের চার আর পাঁচ নম্বর ! তার ভেতরে চার নম্বরটা মুখস্ত করেছিলাম সেই স্কুলে থাকতে । প্রথম প্রেমিকা পাঠ করে শোনানোর জন্য !

৩০ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১:৪১

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
আমার কাছে বেশ ভালোই লাগে। বিশেষ করে প্রকৃতির কথা যেভাবে উপস্থাপন করেন কবিতায় তেমনি ভাবে আর কেউ করেন নাই।

৩| ৩০ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১২:৩৮

জুল ভার্ন বলেছেন: শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

৩০ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১:৪২

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যভাদ।

৪| ৩০ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১:৪৪

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: এখানে উল্লেখিত জীবনানন্দের প্রত্যেকটা কবিতা আমার ভীষণ প্রিয়।++++

৩০ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ২:০৩

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
বুঝা গেলো জীবনানন্দের কবিতা আপনি বেশ পছন্দ করেন।

৫| ৩০ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:৩৮

ঢিসুম বলেছেন: মহাভারত কই?

৩০ শে আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:৪০

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
ভুলে গেছিলাম।
ঠিক আছে আবার শুরু করবো।

৬| ৩০ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১০:৪৭

কামাল৮০ বলেছেন: দ্বিতীয় টি দেশকে দেশের প্রকৃতিকে ভালবাসা ও ভাল লাগার কবিতা।চতুর্থটি সিংহল থেকে মালয় পর্যন্ত যেতে যেতে,প্রাচীন ভারতের যে কৃষ্টি ও সস্কৃতির যে সমৃদ্ধ নিদর্শণ দেখেছেন তার বর্ণনা।জীবনান্দের সব কবিতাই আমার ভালোলাগে।

৩০ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১০:৫৯

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
জীবনান্দের সব কবিতা আপনার ভালো লাগে জেনে আনন্দিত হলাম।
আমি জীবনান্দের কবিতা পছন্দ করি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.