নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যুর বাগানে নিমন্ত্রণ আপনাকে।

মরুভূমির জলদস্যু › বিস্তারিত পোস্টঃ

অশোক বন্দনায় কবি নজরুল

০১ লা মার্চ, ২০২২ রাত ১২:০৮



গত কয়েকদিনে অশোক ফুল নিয়ে লেখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতাংশ গুলি ৪টি পর্বে এখানে লিখেছি।
অশোক বন্দনায় রবীন্দ্রনাথ - ১
অশোক বন্দনায় রবীন্দ্রনাথ - ২
অশোক বন্দনায় রবীন্দ্রনাথ - ৩
অশোক বন্দনায় রবীন্দ্রনাথ - ৪
আজ লিখছি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা কবিতাংশ গুলি।

অশোক অতি চমৎকার একটি ফুল। কারণ অতি অল্পসংখ্যক উদ্ভিদ আছে যারা তাদের কাণ্ড ফুড়ে ডালপালা জুড়ে ফুল ফোটায়। অশোক তাদের মধ্যে অন্যতম। তাছাড়া অশোকের প্রস্ফুটন কাল অতি দীর্ঘ বলে ফুল ফুটার সময়ে গাছগুলি ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়। মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনের দ্বিতীয় গেটটা পার হলেই শুরু হয় পথের দুই ধারে অশোকের সারি। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় গাছগুলি। এমন দৃশ্য দেখেই হয়তো কাজী নজরুল ইসলাম লিখে ছিলেন –

শ্যামল তনুতে হরিত কুঞ্জে
অশোক ফুটেছে যেন পুঞ্জে পুঞ্জে
রঙ-পিয়াসি মন ভ্রমর গুঞ্জে
ঢালো আরো ঢালো রঙ প্রেম-যমুনাতে।।
----- কাজী নজরুল ইসলাম -----




অশোক আমার পছন্দের ফুলগুলির মধ্যে একটি। আমি দেখেছি কাজীনজরুলের অনেক কবিতা ও গানে ঘুরে ফিরে এসেছে এই অশোকের কথা। আমার চোখে ধরাপরপ সেইসব কবিতাংশ আজ তুলে দিচ্ছি এই লেখায় আপনাদের জন্য।

০১।
অঙ্গের ছন্দে পলাশ–মাধবী অশোক ফোটে,
নূপুর শুনি’ বনতুলসীর মঞ্জরী উলসিয়া ওঠে।
মেঘ–বিজড়িত রাঙা গোধূলি
নামিয়া এলো বুঝি পথ ভুলি,
তাহার অঙ্গ তরঙ্গ–বিভঙ্গে কুলে কুলে নদী জল উথলায়।।
----- কাজী নজরুল ইসলাম -----




০২।
রাঙা জবার বায়না ধরে আমার কালো মেয়ে কাঁদে
সে তারার মালা সরিয়ে ফেলে এলোকেশ নাহি বাঁধে॥
পলাশ অশোক কৃষ্ণচূড়ায়, রাগ করে সে পায়ে গুঁড়ায়
সে কাঁদে দুহাত দিয়ে ঢেকে যুগল আঁখি সূর্য চাঁদে॥
----- কাজী নজরুল ইসলাম -----




০৩।
বনে বনে দোলা লাগে।
মনে মনে দোলা লাগে
দখিনা-সমীর জাগে।।
একি এ বেদনা লয়ে
ফুটিল কুসুম হৃদয়ে
আবেশে পুলকে ভয়ে
না-জানা পরশ মাগে।।
কিশোর হৃদয় পুটে
অশোক রঙিন ফোটে
কপোল রাঙিয়া ওঠে
অতনুর অনুরাগে।।
----- কাজী নজরুল ইসলাম -----




০৪।
আগুন-রাঙা ফুলে ফাগুন লাগে লাল,
কৃষ্ণচূড়ার পাশে অশোক গালে-গাল।
আকুল করে ডাকি বকুল বনের পাখি,
যমুনার জল লাল হ’ল আজ আবির, ফাগের রঙে ভরি।।
----- কাজী নজরুল ইসলাম -----




০৫।
আগুন-রাঙা ফুলে ফাগুন লালে-লাল,
কৃষ্ণচূড়ার পাশে রঙন অশোক গালে-গাল,
লোল হয়ে পড়িল ঐ রাতের জোছনা-আঁচল।।
----- কাজী নজরুল ইসলাম -----



০৬।
খুলেছে আজ রঙের দোকান বৃন্দাবনে হোরির দিনে।
প্রেম-রঙিলা ব্রজ-বালা যায় গো হেথায় আবির কিনে।।
আজ গোকুলের রঙ মহলায়
রামধনু ঐ রঙ পিয়ে যায়
সন্ধ্যা-সকাল রাঙতো না গো ঐ হোরির কুমকুম বিনে।।
রঙ কিনিতে এসে সেথায় রব শশী আকাশ ভেঙে'
এই ফাগুনী ফাগের রাগে অশোক শিমুল ওঠে রেঙে'।
আসে হেথায় রাধা-মাধব এই রঙেরই পথ চিনে।।




০৭।
হোরির রঙ লাগে আজি গোপিনীর তনু মনে।
অনুরাগে-রাঙা গোরীর বিধু-বদনে॥
ফাগের লালী আনিল কে,
কাজল-কালো চোখে
কামনা-আবির ঝরে রাঙা নয়নে॥
অশোক রঙন ফুলের আভা জাগে ডালিম-ফুলী গালে,
নাচিছে হৃদয় আজি রসিয়ার নাচের তালে।
তাম্বুলীরাঙা ঠোঁটে ফাগুনের ভাষা ফোটে,
তার প্রাণের খুশির রং লেগেছে রাঙা বসনে॥
----- কাজী নজরুল ইসলাম -----




০৮।
বসন্ত মুখর আজি।
দক্ষিণ সমীরণে মর্মর গুঞ্জনে
বনে বনে বিহ্বল বাণী ওঠে বাজি।।
অকারণ ভাষা তার ঝর ঝর ঝরে
মুহু মুহু কুহু কুহু পিয়া পিয়া স্বরে,
পলাশ বকুলে অশোক শিমুলে
সাজানো তাহার কল-কথার সাজি।।
----- কাজী নজরুল ইসলাম -----




০৯।
কোন দূরে ও-কে যায় চলে যায়, সে ফিরে ফিরে চায় করুণ চোখে।
তার স্মৃতি মেশা হায়, চেনা-অচেনায় তারে দেখেছি কোথায়
যেন সে-কোন লোকে।।
শুনি স্বপ্নে তারি যেন বাঁশি মন-উদাসী
তারি বার্তা আসে নব মধু-মাসে, পলাশ আশোকে।।
----- কাজী নজরুল ইসলাম -----




বাংলা, হিন্দি, সংস্কৃত মিলিয়ে অশোক ফুলের অনেকগুলি নাম আছে, যেমন -
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : অপশোক, বিশোক, কঙ্গেলি, কর্ণপূরক, কেলিক, চিত্র, বিচিত্র, দোষহারী, নট, পল্লবদ্রুপ, প্রপল্লব, পিণ্ডিপুষ্প, বঞ্জুলদ্রুম, মধুপষ্প, রক্তপল্লবক, রাগীতরু, শোকনাশ, সুভগ, স্মরাধিবাস, হেমপুষ্প, হেমাপুষ্প, হিমাপুষ্পা, অঞ্জনপ্রিয়া, মধুপুষ্প, পিণ্ডিপুষ্পা, সিটা-অশোক ইত্যাদি।
Common Name : Ashoka, Sorrowless, Yellow Ashok, Yellow Saraca ইত্যাদি।
Scientific Name : Saraca indica

----- সমাপ্ত -----

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মার্চ, ২০২২ সকাল ৯:৪৮

জুল ভার্ন বলেছেন: অশোকের মধ্যে এমন কিছু সৌন্দর্য্য আছে- যার জন্য বড়ো বড়ো কবি সাহিত্যিকদের অশোক নিয়ে চমতকার সব লেখা!

০১ লা মার্চ, ২০২২ সকাল ১১:২৫

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ঠিক বলেছেন। অশোকের রূপ অন্যদের চেয়ে আলাদা।

২| ০১ লা মার্চ, ২০২২ দুপুর ১২:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: কবি জীবনানন্দও কিন্তু অশোক নিয়ে লিখেছিলেন-
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে সেখানে ছিলাম আমি

০১ লা মার্চ, ২০২২ বিকাল ৩:৫৫

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: বাহ!! চমৎকার।
জীবনানন্দের আর কোনো কবিতায় কি অশোক আছে?

৩| ০১ লা মার্চ, ২০২২ বিকাল ৩:২১

ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: কি অদ্ভুত। জীবনে মাত্র এক কি দু বার দেখেছি এই ফুল!

০১ লা মার্চ, ২০২২ বিকাল ৩:৫৭

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: এটি আমার পছন্দের ফুল গুলির একটি। বছরের একটি নিদৃষ্ট সময়ে এই ফুল ফুটে বলে সব সময় দেখার সুযোগ হয় না। তাছাড়া এর বিস্তারও কম।

৪| ০১ লা মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:২৫

ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: সংসদ ভবনের পিছনে, লেক রোডে কৃষ্ণচূড়ার মেলা বসে প্রতি বছর। যখন ঢাকায় থাকতাম, তখন কৃষ্ণচূড়ার সময় প্রায় প্রতিদিন যেতাম ঐখানে। অন্যরকম এক শান্তি লাগতো।

০১ লা মার্চ, ২০২২ বিকাল ৪:৩৮

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আমিও হঠাত কৃষ্ণচূড়ার সময় ঐপথে গেলে চমৎকৃত হতাম। পাতাহীন গাছে যেনো আগুণ লেগে থাকতো, আর ঝড়া ফুলগুলি আগুন লাগাতো গাছের নিচেও। মাঝে বেশ কিছু গাছ মরে গিয়েছিলো। পরে আবার লাগানো হয়েছে।

৫| ০১ লা মার্চ, ২০২২ রাত ১১:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: বাহ!! চমৎকার।
জীবনানন্দের আর কোনো কবিতায় কি অশোক আছে?

না নেই।

০২ রা মার্চ, ২০২২ বিকাল ৩:২৭

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.