নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যুর বাগানে নিমন্ত্রণ আপনাকে।

মরুভূমির জলদস্যু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহাভারতের গপ্পো - ০২৯ : ধৃষ্টদ্যুম্ন ও কৃষ্ণার জন্ম রহস্য ; গন্ধর্বরাজ অঙ্গারপর্ণ

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৪৬


কয়েকদিন পরে পাণ্ডবদের আশ্রয়দাতা ব্রাহ্মণের বাড়িতে অন্য এক ব্রাহ্মণ বেড়াতে এলেন।
তিনি জানালেন, দ্রোণাচার্যের কাছে পরাজয়ের পর দ্রুপদ প্রতিশােধ নেয়ার জন্য পুত্রলাভের চেষ্টা করতে থাকলেন। তিনি গঙ্গা ও যমুনার তীরে ঘুরে ঘুরে যাজ ও উপযাজ নামক দুই ব্রাহ্মণের কাছে উপস্থিত হলেন। দ্রুপদ উপযাজকে সেবা করে তুষ্ট করে
বললেন- আমি আপনাকে দশ কোটি গরু দন করব, আপনি আমাকে এমন পুত্র পাইয়ে দিন যে দ্রোণকে হত্য করবে। উপযাজ রাজি হলেন না, তবুও দ্রুপদ তাঁর সেবা করতে লাগলেন।
এক বৎসর পরে উপযাজ বললেন- আমার বড় ভাই যাজ শুচি অশুচি বিচার করেন না, তিনি আপনার জন্য পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করবেন।
একথা শুনে দ্রুপদ যাজের কাছে গিয়ে প্রার্থনা জানালেন। যাজ সম্মত হয়ে যজ্ঞ শুরু করলেন। যজ্ঞ শেষ হলে যাজ আহতি দিলে যজ্ঞাগ্নি থেকে এক অগ্নিবর্ণ এক কুমার সগর্জনে উত্থিত হলেন। আকাশবাণী হল– এই রাজপুত্র দ্রোণকে হত্যা করবেন।



তারপর যজ্ঞবেদী থেকে সুদর্শনা শ্যামবর্ণা, কুঞ্চিতকৃষ্ণকেশী কুমারী উথিত হলেন। আকাশবাণী হ'ল- সব নারীর শ্রেষ্ঠা এই কৃষ্ণা হতে ক্ষত্রিয়ক্ষয় এবং কুরুবংশের মহাভয় উপস্থিত হবে।



দ্রুপদ ও তাঁর স্ত্রী এই কুমার-কুমারীকে পুত্রকন্যা হিসেবে গ্রহণ করলেন। রাজকুমারের নাম ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং আকাশবাণী অনুসারে রাজকুমারীর নাম কৃষ্ণা হল।

দৈববাণী অনিবার্য এই জেনে এবং নিজ কীর্তি রক্ষার জন্য দ্রোণাচার্য ধৃষ্টদ্যুম্নকে নিজের বাড়িতে এনে অস্ত্রশিক্ষা দিলেন।


এই কাহিনী শুনে পাণ্ডবরা দুঃখীত হলেন। কুন্তীর পরামর্শে পাণ্ডবরা পাঞ্চাল দেশে যাওয়ার জন্য মনস্থির করলেন। এই সময় ব্যাস তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে এলেন। তিনি বললেন, কোনও এক ঋষির একটি পরমা সুন্দরী কন্যা ছিল, পূর্বজন্মের কর্মদোষে তাঁর বিয়ে হয় নি। তাঁর কঠোর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে মহাদেব বর দিতে চাইলে মেয়েটি পাঁচ বার গুণবান স্বামী চাইল। মহাদেব বললেন- তুমি পাঁচ বার পতি চেয়েছ, এজন্য পরজন্মে তোমার পাঁচটি ভরতবংশীয় পতি হবে।
সেই ঋষিকন্যাটি কৃষ্ণা নামে দ্রুপদের মেয়ে হয়ে জন্মেছে, এই মেয়েটিই তােমাদের পাঁচ ভাইয়ের পত্নী হবে। তােমরা পাঞ্চাল দেশে যাও, দ্রুপদকন্যাকে পেয়ে তােমরা সুখী হবে।

পাণ্ডবরা পাঞ্চালদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন। পথে রাতের বেলা গঙ্গাতীরে পৌছলে পথ দেখার জন্য অর্জুন একটি জলন্ত কাঠ নিয়ে আগে আগে চললেন। সেই সময়ে গন্ধর্বরাজ অঙ্গারপর্ণ স্ত্রীদের নিয়ে গঙ্গায় জলকেলি করছিল। পাণ্ডবদের কণ্ঠস্বর শুনে সে রেগে গিয়ে বললেন- "আমি কুবেরের বন্ধু গন্ধর্বাজ অঙ্গারপর্ণ, এই বন আমার, তােমরা দূরে যাও। অর্জুন সরে গেলেন না। অর্জুন আর অঙ্গারপর্ণের সাথে লড়াই শুরু হয়ে গেলো। অর্জুন আগ্নেয় অস্ত্র নিক্ষেপ করে গন্ধর্বরাজের রথ পুড়িয়ে দিলেন। গন্ধর্বরাজে অচেতন হয়ে পরে রইলো। তখন অর্জুন তাঁর হত্যা করতে নিলে গন্ধর্বের স্ত্রী কুম্ভীনসী যুধিষ্ঠিরের কাছে স্বামী প্রাণভিক্ষা চাইলেন। যুধিষ্ঠির তখন অর্জুনকে গন্ধর্বরাজ অঙ্গারপর্ণকে ছেড়ে দিতে বললেন।



গন্ধর্বরাজ অঙ্গারপর্ণ নিজের প্রাণ ফিরে পেয়ে খুশী হয়ে অর্জুনকে চাক্ষুষী বিদ্যা দান করতে চাইলো। চাক্ষুষীবিদ্যা বলে ত্রিলােকের যা কিছু দেখতে ইচ্ছা করবে তাই দেখতে পাবে। তাছাড়া পঞ্চপাণ্ডবদের প্রত্যেককে একশটি করে অলৌকিক সুন্দর বেগবান গন্ধর্ব দেশীয় ঘোড়া দিতে চাইলো, যারা মালিকে ইচ্ছানুসারে উপস্থিত হবে। কিন্তু অর্জুন প্রাণের ভয়ে দেয়া এইসব দান নিতে রাজি হলেন না। তখন গন্ধব অর্জুনের আগ্নেয় অস্ত্র এবং চিরস্থায়ী বন্ধুত্বের বিনিময়ে চাক্ষুষীবিদ্যা ও ঘোড়া দিতে চাইলেন। অর্জুন তাতে রাজি হলেন।

এরপর অর্জুন গন্ধর্বকে প্রশ্ন করলেন- আমরা বেদজ্ঞ ও শত্রদমনে সমর্থ জেনেও রাতে আমাদের উপরে আক্রমণ করলে কেনো?,
গন্ধর্ব বললেন- তােমাদের অগ্নিহােত্র নেই, ব্রাহ্মণ অগ্রবতী করে চল না, সেজন্য আমি তােমাদের উপরে আক্রমণ করেছি। হে তাপত্য, শ্রেয়ােলাভের জন্য পুরােহিত নিয়ােগ করা কর্তব্য। পুরােহিত না থাকলে কোনও রাজা শুধু বীরত্ব বা আভিজাত্যের প্রভাবে রাজ্য জয় করতে পারেন না। ব্রাহ্মণকে সামনে রাখলে চিরকাল রাজ্রপালন করা যায়।

====================================================================

বিশেষ ঘোষণা : হিন্দুদের ধর্মীয় সাহিত্যের মহাকাব্য মহাভারতের কথা আমরা সকলেই জানি। আমি এটিকে পড়ছি একটি কল্পকাহিনীর সাহিত্য হিসেবে, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নয়। আমি মনে করি "যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে। অন্যের বিশ্বাস বা ধর্মানুভূতিতে খোঁচা দেয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।" এই গ্রন্থে প্রচুর কল্পকাহিনী রয়েছে। সেগুলিই আমি এই সিরিজে পেশ করবো। যারা মহাভারত পড়েননি তারা এখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেগুলি জেনে যাবেন। মনে রাখতে হবে আমার এই পোস্ট কোনো ভাবেই ধর্মীয় পোস্ট নয়।

লেখার সূত্র : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত : অনুবাদক - রাজশেখর বসু।
ছবির সূত্র : এই সিরিজে ব্যবহৃত সকল ছবি বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।



=================================================================

মহাভারতের গপ্পো : এক নজরে সকল পর্ব

=================================================================

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: দশ কোটি গরু দান করবে??!!!!
দশ কোটি!!!!!!!!!!!!!!!!!
খাইছে আমারে।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:০০

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: রূপকথায় সবই সম্ভব ভাইজান।

২| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:২৪

প্রতিদিন বাংলা বলেছেন: এই মেয়েটিই তােমাদের পাঁচ ভাইয়ের পত্নী হবে।
দারুন(৫ জনের কারো কোনো দায় নেই/ভোগে ছাড় নেই )

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:৩২

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: কল্পকাহিনীর মজাই এই, মজাই মজা। ধর্মীয় হিসাবটা আলাদা।

৩| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:০০

বিটপি বলেছেন: সব সাহিত্যে দ্রৌপদীকে শ্যামবর্ণা হিসেবে উল্লেখ করা আছে, কিন্তু একটা সিনেমাতেও এই চরিত্রে কোন শ্যামবর্ণের নায়িকাকে অভিনয় করতে দেখলাম না। কারণটা খুব স্পষ্ট। কালো মেয়ে ভূ ভারতে সর্বদা ঘৃণার শিকার হয়েছে। তাই এই চরিত্রে কেউ কোন কালো মেয়ে নিতে আগ্রহ দেখায় নি।

শ্রীকৃষ্ণের সাথে দ্রৌপদীর একটা প্লেটোনিক প্রেম ছিল কেবল তাদের গায়ের কৃষ্ণ বর্ণের জন্যেই। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলো মিডিয়ায় এলে তাদের গায়ের রঙ্ হয়ে যায় ফর্সা রেসিস্ট ইন্ডিয়ান ব্লাডিদের জন্য।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:১৮

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: দ্রৌপদীকে নিয়ে তৈরি কোনো নাটক সিনেমা সিরিয়াল আমি দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। তবে এটা সত্যি তার গায়ের রং কালো ছিলো তা মহাভারতেই পাওয়া যায়।

আপনি চমৎকার একটি মন্তব্য করেছেন।
গায়ের রং নিয়ে এই দৈনতা সেই আদি থেকেই চলে আসছে। নিকট আগামীতেও এই দৈনতা শেষ হবে বলে মনে হয়না।

৪| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:৩৯

সোনাগাজী বলেছেন:



আপনার সেক্রেটারীর পরিবারের চুক্তি ঠিক আছে তো?

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:৫২

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: অন্যকারো মন্তব্য ভুলে এখানে করে ফেলেছেন মনে হচ্ছে!!

৫| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:৫৮

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: " দশ কোটি গরু " - এইজন্যই এখন মোদী রাজ্যে এত গরু ।

আমাদের রাজ্যের হলেত এই গরু বেইচেই বহুত মানুষ কুটি ;) পতি হয়ে যেত।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২০

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: রূপকথায় সবই সম্ভব ভাইজান।

৬| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৩৭

বিটপি বলেছেন: আপনি ঠিক বলেননি। গায়ের রঙ্গ নিয়ে এই দীনতা আগে ছিলনা। সেজন্যই কৃষ্ণ, কালী এবং দ্রৌপদী চরিত্রগুলোকে কালো বর্ণের বলতে কারো বাধেনি। দ্রৌপদী চরিত্রের মাধ্যমে কৃষ্ণবর্ণকে বরং আকর্ষণীয় করা হয়েছে। গায়ের রং নিয়ে ভারতীয় মেয়েরা যে হীনমন্যতায় ভোগে, তার বিপক্ষে চমৎকার ব্রান্ডিং করা যেত মহাভারতের এই চরিত্রকে। ভাবা যায়, কালো বর্ণের একটি মেয়েকে পাত্রস্থ করার জন্য স্বয়ংবর সভার আয়োজন করতে হয়েছিল। সেখানে বড় বড় ক্যান্ডিডেটকে পরাজিত করে অর্জুন তাকে জিতে নেয়। তারপরেও এই মেয়ের প্রতি যুগে যুগে অনেক পুরুষ আকৃষ্ট হয়েছিল। যেমন সিন্ধুরাজ জয়দ্রথ, দেবর দুঃশাসন, রাজ বিরাটের শ্যালক কীচক প্রভৃতি।

কিন্তু দুঃখের বিষয় ভারতীয় ঝলমলে মিডিয়া একজন কৃষ্ণবর্ণের তরুণীকে এতটা সম্মান দিতে রাজী নয়। তাই দক্ষিণের সিনেমায় (যেখানে ৯০ ভাগ লোকের গায়ের রং কালো) সেখানেও আমরা ফরসা চামড়া ছাড়া নায়িকা দেখিনা।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:২২

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আপনার বক্তব্যে যুক্তি আছে। মেনে নিচ্ছি আমি আপনার বক্তব্য। তবে আদি বলতে আমি মহাভারতের যুগকে বুঝাইনি। আমাদের মোটামুটি পরিচিত সময় কে বুঝিয়েছি।
অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর এই মন্তব্যের জন্য।

৭| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: রূপকথায় সবই সম্ভব ভাইজান।

রুপকথায় কি সামান্য সত্যও থাকে না?
যাই হোক, চাঁদগাজীর পর মনে হয় আমাকেই সবচেয়ে বেশি বার ''জেনারেল'' করা হয়েছে। এবার তো প্রায় একমাস হলে চলল।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:০৩

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: রূপকথায় সত্যা খোঁজার দরকার কি ভাইজান? যেমন আগডুম-বাগডুমে সত্য থাকে না।

আপনাকে কেনো জেনারেলের টুপি পড়ানো তলে?
যেই কারণে জেনারেলের টুপি পান সেই কারণ গুলি একটু যত্নে এরিয়ে চলুন দাদা।
আপনার লেখা সামনের পাতায় না আসায় দেখা হয়ে উঠে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.