নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কুন্তী ও যুধিষ্ঠিররা যেখানে ঘুমাচ্ছিলেন তার কাছেই একটি শালগাছের উপর ভয়ংকর আকারের হিড়িম্ব নামে এক রাক্ষস ছিল। পাণ্ডবদের দেখে এই রাক্ষসের মনুষের মাংস খাবার ইচ্ছা হল, সে তার বোন হিড়িম্বাকে বললো মানুষ গুলিকে ধরি নিয়ে আসতে।
ভাইয়ের কথা শুনে হিড়িম্বা পাণ্ডবদের কাছে এসে দেখলো একজন ছাড়া সকলেই ঘুমাচ্ছে। ভীমকে দেখে হিড়িম্বার খুর পছন্দ হয়ে গেলো। ভীমকে সে তার স্বামী হবার যােগ্য মনে করলো। ভ্রাতৃস্নেহের চেয়ে পতিপ্রেমই বড়। হিড়িম্বা তখন সুন্দরী রূপসী সালংকারা নারীর রূপ ধারণ করে ভীমকে বললো- আপনি কে, কোথা থেকে এসেছেন? এই ঘুমন্ত দেবতুল্য পুরুষরা এবং এই রমণী এরা কারা? এই বনে আমার রাক্ষস ভাই হিড়িম্ব থাকে, সে আপনাদের মাংস খেতে চায়। আপনাকে দেখে আমি মােহিত হয়েছি, আপনি আমার স্বামী হন। আমি আকাশচারিণী, আপনাকে সঙ্গে নিয়ে এখানে থেকে পালিয়ে যেতে পারবো।
ভীম বললেন- ঘুমন্ত এরা আমার ভাই ও মা। এদের রাক্ষসের কবলে ফেলে আমি পালাবো না।
হিড়িম্বা বললো- এদের জাগান, আমি সকলকে রক্ষা করবো।
ভীম বলেন- এরা সুখে নিদ্রা যাচ্ছেন, আমি এখন জাগাতে পারব না। রাক্ষস বা গন্ধর্ব সকলকেই আমি পরাস্ত করতে পারি। তুমি যাও বা থাকো বা তােমার ভাইকে এখানে পাঠিয়ে দাও।
হিড়িম্বার ফিরতে দেড়ি হচ্ছে দেখে হিড়িম্ব দ্রুত পাণ্ডবদের কাছে আসলো। হিড়িম্ব এসে দেখলে, তার বোন সুন্দরী নারীর রূপ ধরে ভীমের সঙ্গে কথা বলছে। সে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে বোনকে গালি-গালাজ করতে লাগলো। তখন ভীম রাক্ষসকে বললো তােমার বোনের দোষ নেই, শরীরের ভিতরে যে কামদেব আছেন তাঁর কারণে ও আমার প্রতি আসক্ত হয়েছে। তারপর ভীম আর হিড়িম্বের মধ্যে বাহুযুদ্ধ আরম্ভ হল। যুদ্ধের শব্দে সকলেই জেগে উঠলেন। শেষে ভীম রাক্ষসকে তুলে ধরে ঘোরাতে লাগলেন এবং তারপর মাটিতে ফেলে নিষ্পিষ্ট করে হত্যা করলেন।
হিড়িম্বা কুন্তীকে নিজের পরিচয় দিয়ে জানালো যে সে ভীমকে পছন্দ করে ফেলেছে। কিন্তু ভীম তখন হিড়িম্বাকে হত্যঅ করতে উদ্ধত হলে, তখন যুধিষ্ঠির ভীমকে থামালেন। হিড়িম্বা কুন্তীর কাছে কাকুতি করে বললো যে সে তার স্বজনদের ছেড়ে এসেছে ভীমকে প্রতি রূপে বরন করতে বলে। ভীম প্রত্যাখ্যান করলে সে বাঁচবে না। ভীমের সাথে মিলিতো করে দিলে সে ভীমকে নিয়ে ইচ্ছামতো বিচরণ করা শেষে আবার তাকে এখানে ফিরিয়ে দিবে। এবং পরবর্তীতে কোনো দরকার পরলে তাকে মনে মনে ভাবলেই সে উপস্থিত হবে।
যুধিষ্ঠির বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের মিলনে মত দিলেন। তবে শর্ত হচ্ছে ভীম স্নান আহ্নিক করে হিড়িম্বা সঙ্গে মিলিত হবেন এবং সূর্যাস্ত হলেই ভাইদের কাছে ফিরে আসবেন। ভীম হিড়িম্বাকে বললেন, যত দিন হিড়িম্বার পুত্র না হয় ততো দিন ভীম হিড়িম্বার সঙ্গে থাকবেন! হিড়িম্বা সম্মত হয়ে ভীমকে নিয়ে আকাশপথে চলে গেল।
কিছুকাল পরে হিড়িম্বার একটি ভীষণাকার বলবান পুত্র হল। রাক্ষসীরা গর্ভবতী হয়েই সাথে সাথে প্রসব করে। হিড়িম্বার পুত্র জন্মাবার পরেই যৌবনলাভ করে সর্বপ্রকার অস্ত্রপ্রয়ােগে দক্ষ হল। তার মাথা ঘটের মত এবং চুল খাড়া সেজন্য হিড়িম্বা পুত্রের নাম রাখলে ঘটোৎকচ।
কুন্তী ও পাণ্ডবদের প্রণাম করে ঘটোৎকচ বললো- আমাকে কি করতে হবে আজ্ঞা করুন।
কুন্তী বললেন- তুমি কুরকুলে জন্মেছো, তুমি সাক্ষাৎ ভীমের তুল্য এবং পঞ্চপাণ্ডবের জ্যেষ্ঠ পুত্র। তুমি আমাদের সাহায্য করাে। ঘটোৎকচ বললো- প্রয়ােজনে আমাকে মনে করলেই আমি উপস্থিত হব। এই বলে সে উত্তর দিকে চলে গেল।
পাণ্ডবরা তপস্বীর ছদ্মবেশে নানান দেশের ভিতর দিয়ে চললেন। যেতে যেতে পিতামহ ব্যাসের সঙ্গে তাঁদের দেখা হল। ব্যাস বললেন, আমি তােমাদের সমস্ত খবরই জানি। যত দিন আমার সঙ্গে আবার দেখা না হয় তত দিন তােমরা নিকটস্থ ঐ নগরে ছদ্মবেশে বাস কর। এই বলে ব্যাস পাণ্ডবদের একচক্রা নগরে এক ব্রাহ্মণের ঘরে রেখে এলেন।
====================================================================
বিশেষ ঘোষণা : হিন্দুদের ধর্মীয় সাহিত্যের মহাকাব্য মহাভারতের কথা আমরা সকলেই জানি। আমি এটিকে পড়ছি একটি কল্পকাহিনীর সাহিত্য হিসেবে, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নয়। আমি মনে করি "যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে। অন্যের বিশ্বাস বা ধর্মানুভূতিতে খোঁচা দেয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।" এই গ্রন্থে প্রচুর কল্পকাহিনী রয়েছে। সেগুলিই আমি এই সিরিজে পেশ করবো। যারা মহাভারত পড়েননি তারা এখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেগুলি জেনে যাবেন। মনে রাখতে হবে আমার এই পোস্ট কোনো ভাবেই ধর্মীয় পোস্ট নয়।
লেখার সূত্র : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত : অনুবাদক - রাজশেখর বসু।
ছবির সূত্র : এই সিরিজে ব্যবহৃত সকল ছবি বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।
=================================================================
সিরিজের পুরনো পর্বগুলি দেখতে -
মহাভারতের গপ্পো - ০০১, মহাভারতের গপ্পো - ০০২, মহাভারতের গপ্পো - ০০৩, মহাভারতের গপ্পো - ০০৪
মহাভারতের গপ্পো - ০০৫, মহাভারতের গপ্পো - ০০৬, মহাভারতের গপ্পো - ০০৭, মহাভারতের গপ্পো - ০০৮
মহাভারতের গপ্পো - ০০৯, মহাভারতের গপ্পো - ০১০, মহাভারতের গপ্পো - ০১১, মহাভারতের গপ্পো - ০১২
মহাভারতের গপ্পো - ০১৩, মহাভারতের গপ্পো - ০১৪, মহাভারতের গপ্পো - ০১৫, মহাভারতের গপ্পো - ০১৬
মহাভারতের গপ্পো - ০১৭, মহাভারতের গপ্পো - ০১৮, মহাভারতের গপ্পো - ০১৯, মহাভারতের গপ্পো - ০২০
মহাভারতের গপ্পো - ০২১, মহাভারতের গপ্পো - ০২২, মহাভারতের গপ্পো - ০২৩, মহাভারতের গপ্পো - ০২৪
মহাভারতের গপ্পো - ০২৫, মহাভারতের গপ্পো - ০২৬
=================================================================
১৩ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:২৯
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ভীম স্নান আহ্নিক করে হিড়িম্বা সঙ্গে মিলিত হবেন এবং সূর্যাস্ত হলেই ভাইদের কাছে ফিরে আসবেন।
এটা থেকে মনে হয় সমস্ত ঘটনা একদিনেই ঘটেছে। তাছাড়া আরো বলা হয়েছে যে- "রাক্ষসীরা গর্ভবতী হয়েই সাথে সাথে প্রসব করে। হিড়িম্বার পুত্র জন্মাবার পরেই যৌবনলাভ করে সর্বপ্রকার অস্ত্রপ্রয়ােগে দক্ষ হল।" অর্থাৎ ঘটোৎকচের জন্ম-যৌবনলাভ-সর্বপ্রকার অস্ত্রপ্রয়ােগ শিক্ষা এক সাথেই হয়েছিলো।
আবার-
ভীম হিড়িম্বাকে বলেছিলো যত দিন হিড়িম্বার পুত্র না হয় ততো দিন ভীম হিড়িম্বার সঙ্গে থাকবেন!
এখানে মনে হয় সবটাই এক দিনের ঘটনা নয়।
সঠিক সময় সম্পর্কে আমার ধারনা নেই।
অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
২| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৮:২২
জুল ভার্ন বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন।
১৪ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:৩২
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:১৭
সোবুজ বলেছেন: রাক্ষস কারা?তারা কি মানুষ খেতো।তারা কখন বিলুপ্ত হয়।
১৪ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:৩৩
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: জটিল সব প্রশ্ন, উত্তর আমার জানা নাই।
৪| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১:৩৬
সোবুজ বলেছেন: আমার ধারনা ,রাক্ষস বলে কোন প্রানী কখনো ছিল না।আর্যরা দ্রাবিড়দের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য রাক্ষস বলতো।
মানুষ খায় এমন মানুষ আগেও ছিল বর্তমানেও আছে,অন্দামানের বিচ্ছিন্ন দ্বীপে,আমাজানের গভীর জংঙ্গলে।
১৪ ই জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:৪১
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: হতে পারে আপনার বক্তব্যই সঠিক। আমার আসলেই কোনো ধারনা নেই।
৫| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৩২
মনিরা সুলতানা বলেছেন: আমি মনে হয় কোন পর্ব মিস করেছি
যাইহোক জন্মপর্ব জানা হল।
১৪ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৪৮
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: দেখে নেন কোনটা বাদ গেলো -
মহাভারতের গপ্পো - ০০১ : শৌনকের আশ্রমে সৌতি; জনমেজয়ের শাপ; উপমন্যু, আরুণি ও বেদ এর কাহিনী
মহাভারতের গপ্পো - ০০২ : উতঙ্ক, পৌষ্য ও তক্ষকের কাহিনী
মহাভারতের গপ্পো - ০০৩ : অগ্নির শাপমােচন
মহাভারতের গপ্পো - ০০৪ : রুরু; প্রমদ্বারা; ডুন্ডুভ
মহাভারতের গপ্পো - ০০৫ : জরৎকারু মুনি; কদ্রু ও বিনতা; সমুদ্রমন্থন
মহাভারতের গপ্পো - ০০৬ : কদ্রু-বিনতার পণ; গড়ুর-গজকচ্ছপ-অমৃতহরণ
মহাভারতের গপ্পো - ০০৭ : আস্তিকের জন্ম
মহাভারতের গপ্পো - ০০৮ : পরীক্ষিতের মৃত্যু বিবরণ
মহাভারতের গপ্পো - ০০৯ : জনমেজয়ের সর্পসত্র যজ্ঞ
মহাভারতের গপ্পো - ০১০ : উপরিচর বসু - পরাশর - সত্যবতী - কৃষ্ণদ্বৈপায়ন
মহাভারতের গপ্পো - ০১১ : কচ ও দেবযানীর প্রেম
মহাভারতের গপ্পো - ০১২ : দেবযানী, শর্মিষ্ঠা ও রাজা যযাতির ত্রিমুখী প্রেম
মহাভারতের গপ্পো - ০১৩ : যযাতির জরা
মহাভারতের গপ্পো - ০১৪ : রাজা দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার কাহিনী
মহাভারতের গপ্পো - ০১৫ : গঙ্গা দেবী ও শান্তনু রাজার প্রেম কাহিনী
মহাভারতের গপ্পো - ০১৬ : রাজা শান্তনু ও সত্যবতীর কাহিনী
মহাভারতের গপ্পো - ০১৭ : চিত্রাঙ্গদ ও বিচিত্রবীর্য এবং কাশীরাজের তিন রাজকন্যা
মহাভারতের গপ্পো - ০১৮ : দীর্ঘতমা - ধৃতরাষ্ট্র ,পান্ডু ও বিদুরের জন্ম - অণীমান্ডব্য
মহাভারতের গপ্পো - ০১৯ : গান্ধারী, কুন্তী ও মাদ্রীর কাহিনী
মহাভারতের গপ্পো - ০২০ : যুধিষ্ঠিরাদির জন্ম - পাণ্ডু ও মাদ্রীর মৃত্যু
মহাভারতের গপ্পো - ০২১ : হস্তিনাপুরে পঞ্চপাণ্ডবের আগমন ও ভীমের নাগলােক দর্শন
মহাভারতের গপ্পো - ০২২ : মহর্ষি দ্রোণের কাহিনী
মহাভারতের গপ্পো - ০২৩ : একলব্যের কাহিনী
মহাভারতের গপ্পো - ০২৪ : অস্ত্রশিক্ষা প্রদর্শন
মহাভারতের গপ্পো - ০২৫ : দ্রোণের প্রতিশােধ
মহাভারতের গপ্পো - ০২৬ : জতুগৃহ
মহাভারতের গপ্পো - ০২৭ : ঘটোৎকচের জন্ম কথা
৬| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৫৫
মনিরা সুলতানা বলেছেন: ধন্যবাদ ধন্যবাদ !
১৪ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৫৬
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: স্বাগতম আপনাকে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:০৯
বিটপি বলেছেন: ওহ! চমৎকার এক পর্ব খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে গেলাম। ধন্যবাদ আপনাকে। ঘটোৎকচ নিয়ে একটা প্রশ্ন ছিলঃ
১। হিড়িম্বার সাথে ভীমের বিয়ে
২। তাদের মিলন
৩। হিড়িম্বার গর্ভ ধারণ
৪। ঘটোৎকচের জন্ম
৫। তার বয়োঃপ্রাপ্তি এবং যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী হওয়া
এগুলো সব কি এক দিনেই ঘটে গেল?
এই ঘটোৎকচ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয় একাই। কৌরবদের মুহুর্মুহু আক্রমণে পাণ্ডবরা যখন দিশেহারা তখন ঘটোৎকচ এসে একাই এক অক্ষৌহিনি মানে প্রায় দশ লক্ষ সৈন্যকে একাই হত্যা করে। পরে মহাবীর কর্ণের ছোঁড়া ব্রহ্মাস্ত্রের আঘাতে তার জীবনের সমাপ্তি ঘটে।