নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দ্রোণের কাছে পঞ্চপাণ্ডব আর দুষমন্তরাজপুত্রগণ অস্ত্রশিক্ষা নিতে লাগলেন। সেই সাথে অন্যান্য দেশের রাজপুত্রগণও তাঁর কাছে অস্ত্র শিক্ষার জন্য এলেন। সুতপুত্র কর্ণও তার কাছে অস্ত্র শিক্ষা নিতেন। সকলের মধ্যে অর্জুন ছিলেন দ্রোণের সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র।
নিষাদরাজ হিরণ্যধনুর পুত্র একলব্য দ্রোণের কাছে অস্ত্র শিক্ষার জন্য এলেন, কিন্তু নীচজাতি বলে দ্রোণ তাঁকে নিলেন না। একলব্য দ্রোণের পায়ে মাথা রেখে প্রণাম করে বনে চলে গেলেন এবং দ্রোণের একটি মাটির তৈরী মূর্তিকে সামনে রেখে নিজের চেষ্টায় অস্ত্রবিদ্যা অভ্যাস করতে লাগলেন।
একদিন রাজকুমাররা বনে গেলো হরিণ শিকার করতে। তখন তাদের একটি কুকুর ঘুরতে ঘুরতে একলব্যের কাছে চলে গেলো। একলব্যের জটাধারী শরীর দেখে চিৎকার করতে লাগল। একলব্য একসঙ্গে সাতটি তীর কুকুরটির মুখের মধ্যে পুরে দিলেন। কুকুরটি তাই নিয়ে রাজকুমারদের কাছে ফিরে গেল। তাই দেখে রাজকুমাররা বিস্মিত হয়ে রাজধানীতে ফিরে দ্রোণাচার্যকে একলব্যেরকথা জানাল।
দ্রোণাচার্য অর্জুনকে বলেছিলেন তার শিষ্যদের মধ্যে অর্জুনই হবে সর্বশ্রেষ্ঠ। এবার অর্জুন দ্রোণাচার্যকে গিয়ে বললো একলব্য কি করে অর্জুনের চেয়েও শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠলো? তাই শুনে দ্রোণাচার্য অর্জুনকে সঙ্গে নিয়ে একলব্যের কাছে গেলেন, একলব্য ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করলো।
দ্রোণ বললেন - তুমি যদি আমার শিষ্যই হও তবে গুরুদক্ষিণা দাও।
একলব্য বললেন - কি দেব আজ্ঞা করুন, গুরুকে অদেয় আমার কিছুই নেই।
দ্রোণ বললেন - তােমার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি আমাকে দাও।
এই কথা শোনার সাথে সাথে একলব্য হাসি মুখে তার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে গুরুকে দিয়ে দিলেন। অঙ্গুষ্ঠ ছেদন ক'রে দ্রোণকে দিলেন। তারপর একলব্য আবার তার বিনা বৃদ্ধাঙ্গুলিতে তীর চালনা করলেন। দেখা গেলো তার আর আগের মতো দ্রুতগতীতে নির্দিষ্ট যায়গায় লখ্যভেদ করতে পারছে না। তাই দেখে অর্জন সন্তুষ্ট হয়ে গুরুর সাথে ফিরে গেল।
দ্রোণের শিক্ষার ফলে ভীম ও দুর্যোধন গদাযুদ্ধে, অশ্বত্থামা গুপ্ত অস্ত্রে, নকুল-সহদেব অসিযুদ্ধে, যুধিষ্ঠির রথচালনায়, এবং অর্জুন বুদ্ধি বল উৎসাহ ও সর্বাস্ত্রের প্রয়ােগে শ্রেষ্ঠ হলেন।
একদিন দ্রোণাচার্য একটি কৃত্রিম বাজ পাখি গাছের উপর রেখে রাজকুমারদের বললেন, তােমরা ঐ পাখিটিকে লক্ষ্য করে স্থির হয়ে থাক, যাকে বলব সে তির ছুড়ে পাখিটির মুণ্ডচ্ছেদ করবে। সকলেই পাখিটির দিকে লক্ষ্য স্থির করলো। এবার দ্রোণ যুধিষ্ঠিরকে বললেন, তুমি গাছের উপর ঐ পাখিটি দেখছ? ঐ গাছ, আমাকে আর তােমার ভাইদের দেখছ? যুধিষ্ঠির বললেন তিনি সবই দেখতে পাচ্ছেন। দ্রোণ বিরক্ত হয়ে বললেন, সরে যাও, তুমি এই লক্ষ্য বেধ করতে পারবে না। দুর্যোধন, ভীম সহ সকলেই বললেন, আমরা সবই দেখছি। দ্রোণ তাঁদেরও সরিয়ে দিলেন। তারপর অর্জুনকে একই প্রশ্ন করলেন। অর্জুন বললেন, আমি কেবল পাখিটি দেখছি। দ্রোণ বললেন, আবার বলো। অর্জুন বললেন, কেবল পাখির মাথাটি দেখছি। খুশী হয়ে দ্রোণ বললেন, এইবার তির নিক্ষেপ করো। তৎক্ষণাৎ অর্জুন তির নিক্ষেপ করলেন এবং পাখিটির মাথা মাটিতে পরে গেলো।
একদিন শিষ্যদের নিয়ে দ্রোণাচার্য গঙ্গায় স্নান করতে নামলেন। একটা কুমির তখন দ্রোণাচার্যের পায়ে কামড়ে ধরল। দ্রোণ চিৎকার করে উঠলেন। তখন অর্জুন এক সাথে পাঁচটি তির (শর) নিক্ষেপ করে কুমিরটিকে হত্যা করে গুরুকে বাঁচালো। অন্য শিষ্যরা তখন মোহাচ্ছন্ন হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। দ্রোণাচার্য খুশী হয়ে অর্জুনকে ব্রহ্মশির নামক অস্ত্র দান করলেন। তিনি অর্জুনকে বলে দিলেন এই অস্ত্র শুধু আক্রমণ করতে আশা শত্রুর উপর প্রয়োগ করতে পারবে।
====================================================================
বিশেষ ঘোষণা : হিন্দুদের ধর্মীয় সাহিত্যের মহাকাব্য মহাভারতের কথা আমরা সকলেই জানি। আমি এটিকে পড়ছি একটি কল্পকাহিনীর সাহিত্য হিসেবে, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নয়। আমি মনে করি "যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে। অন্যের বিশ্বাস বা ধর্মানুভূতিতে খোঁচা দেয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।" এই গ্রন্থে প্রচুর কল্পকাহিনী রয়েছে। সেগুলিই আমি এই সিরিজে পেশ করবো। যারা মহাভারত পড়েননি তারা এখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেগুলি জেনে যাবেন। মনে রাখতে হবে আমার এই পোস্ট কোনো ভাবেই ধর্মীয় পোস্ট নয়।
লেখার সূত্র : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত : অনুবাদক - রাজশেখর বসু।
ছবির সূত্র : এই সিরিজে ব্যবহৃত সকল ছবি বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।
=================================================================
সিরিজের পুরনো পর্বগুলি দেখতে -
মহাভারতের গপ্পো - ০০১, মহাভারতের গপ্পো - ০০২, মহাভারতের গপ্পো - ০০৩, মহাভারতের গপ্পো - ০০৪
মহাভারতের গপ্পো - ০০৫, মহাভারতের গপ্পো - ০০৬, মহাভারতের গপ্পো - ০০৭, মহাভারতের গপ্পো - ০০৮
মহাভারতের গপ্পো - ০০৯, মহাভারতের গপ্পো - ০১০, মহাভারতের গপ্পো - ০১১, মহাভারতের গপ্পো - ০১২
মহাভারতের গপ্পো - ০১৩, মহাভারতের গপ্পো - ০১৪, মহাভারতের গপ্পো - ০১৫, মহাভারতের গপ্পো - ০১৬
মহাভারতের গপ্পো - ০১৭, মহাভারতের গপ্পো - ০১৮, মহাভারতের গপ্পো - ০১৯, মহাভারতের গপ্পো - ০২০
মহাভারতের গপ্পো - ০২১, মহাভারতের গপ্পো - ০২২
২২ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৪৭
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: পক্ষপাতদুষ্ট
২| ২২ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৩২
বিটপি বলেছেন: দ্রোণাচার্জ এই কাজটি করেছিলেন যাতে অস্ত্রশিক্ষায় একলব্য তার প্রিয় শিষ্য অর্জুনকে ছাড়িয়ে যেতে না পারে। এই একলব্য পরবর্তীতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৌরবপক্ষে যোগ দেয় এবং এই যুদ্ধের অল্প কিছু সারভাইভারের মধ্যে সে একজন। এই পরাক্রমশালী বীরের মৃত্যু ঘটে দ্বারকা আক্রমণ করতে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণের হাতে। স্বাভাবিক যুদ্ধে জেতা অসম্ভব দেখে কৃষ্ণ তার ঐশ্বরিক অস্ত্র প্রয়োগ করে একলব্যকে হত্যা করেন।
২২ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৪৮
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর এই মন্তব্যের জন্য।
অশ্বত্থামা মৃত্যু হয় সম্ভবতো অর্জুনের ব্রহ্মশির অস্ত্রে।
৩| ২২ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৫২
চাঁদগাজী বলেছেন:
গ্রীক, রোমান ও হিন্দুধর্ম পুরোপুরিই রূপকথা, পাঠক ধরে রাখার মতো রূপকথা; এদের মাঝে হিন্দুধর্ম টিকে আছে।
২২ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:২০
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: সঠিক বলেছেন।
জ্বী প্রায় সকল ধর্মেই রূপকথা আছে।
ইসলামেও কিছু অলৌকিক ঘটনার উল্লেখ আছে কোরআন এবং হাদীসে। সেই সব অলৌকিক ঘটনার দুটি আমি শেয়ার করেছি। আরো করবো।
আবারও বলছি বিশ্বা অবিশ্বাসের এখতিয়ার পাঠকের নিজের। আমি কোনোটাই করতে বলছি না।
৪| ২২ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৩৭
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: হিন্দু ধর্মে বর্ণপ্রথা প্রাচীন কাল থেকে ছিল।বর্তমানেও আছে।
২২ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৫৫
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: হে এখনো আছে, তবে তার তীব্রতা মনে হয় কিছুটা কমেছে।
৫| ২৩ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:২৩
রাজীব নুর বলেছেন: মহাভারত আমার মাথায় ঢুকে না। হুমায়ূন আহমেদের মতো সহজ করে লিখলে আমার জন্য ভালো হতো।
২৩ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৪৯
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: সহজ অনুবাদকে আমি আরো সহজ করে দিচ্ছি।
মহাভারতে চরিত্র অনেক এবং একটি সাথে অন্যটির কাহিনী জড়িয়ে আছে। ফলে এটি সহজ ভাষ্যে লিখলেও বুঝে উঠা কঠিন।
৬| ২৩ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১:০৬
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: পশ্চিম বাংলায় অনেক দিন বামপন্থিরা ক্ষমতায় থাকায় কম।কিন্তু অন্য যায়গায় আছে।কেরালাতেও কম,কারন একই।
২৩ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৩৮
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আমার মনে হয় লোকজন আগের মতো গোয়ার নেই, সেই সাধে শিক্ষাও ও আধুনিকতার কারণেই কমেছে বর্ণপ্রথার প্রভাব।
৭| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৫৬
বিটপি বলেছেন: @চাঁদগাজী, মহাভারত হিন্দুদের কোন ধর্মীয় গ্রন্থ নয় যে এর জন্য হিন্দু ধর্ম টিকে থাকবে - এটি একটি পৌরাণিক কাহিনী, যার সাথে হিন্দু দেব দেবীর কিছুটা যোগ আছে।
অশ্বত্থামার মৃত্যু হয়নি। সত্যদেবের পুত্র যুধিষ্ঠির অশ্বত্থামার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছিল দ্রোণাচার্যকে হীনবল করার জন্য। শক্তিমত্তায় পাণ্ডবেরা দ্রোণের রণকৌশলের কাছে পেরে উঠছিলনা বলে কৃষ্ণের প্ররোচনায় যুধিষ্ঠির অশ্বত্থামার মৃত্যু নিয়ে গুজব ছড়ায় যাতে দ্রোণ তার অস্ত্র ত্যাগ করে। অশ্বত্থামার মৃত্যুর সংবাদে দ্রোণ নিজের বেঁচে থাকা অর্থহীন বিবেচনা করে অস্ত্র ত্যাগ করে এবং এর সুযোগ নিয়ে ধ্রুপদকন্যা শিখন্ডি তাকে হত্যা করে।
২৪ শে নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৯
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আচ্ছা এই কাহিনী!!
এখনো পড়ি নাই।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৩৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
দুষ্ট শিক্ষক দ্রোণাচার্য