নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পাণ্ডু ও মাদ্রীর মৃত্যুর পরে পাণ্ডুর আশ্রমের কাছেই যে ঋষিরা বাস করতেন তারা পাণ্ডু ও মাদ্রীর মৃতদেহ এবং কুন্তী ও পাঁচ রাজপুত্রদের হস্তিনাপুরে পৌছে দিলেন। তখন পঞ্চপাণ্ডব যুধিষ্ঠিরের বয়স ছিল ষােল, ভীমের পনের, অর্জনের চৌদ্দ এবং নকুল-সহদেবের তের বছর।
ধৃতরাষ্ট্রের আদেশে বিদুর পাণ্ডু ও মাদ্রীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করলেন। তখন ব্যাস তাঁর মা সত্যবতীকে জানালেন সুখের দিন শেষ হয়েছে, পৃথিবী এখন গতযৌবনা, ক্রমশ পাপ বৃদ্ধি পাবে, কৌরবদের দূনীতির ফলে ধর্মকর্ম লােপ পাবে। ব্যাস তাঁর মা সত্যবতী এবং দুই ভাতৃবধূ অবিকা ও অম্বালিকাকে সঙ্গে নিয়ে বনে গিয়ে ঘাের তপস্যা করতে রইলেন। সেখানেই সত্যবতী এবং অবিকা ও অম্বালিকা শেষ নিশ্বাষ ত্যাগ করেন।
পঞ্চপাণ্ডব হস্তিনাপুরে তাদের পিতৃগৃহে সুখে বাস করতে লাগলো। তবে সবার মধ্যে ভীম ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। সে ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদের সাথে খেলার ছলে নানান ভাবে তাঁদের নিগ্রহ করত। সকল খেলাধুলা ও প্রতিযোগীতায় ধৃতরাষ্ট্রের পুত্ররা ভীমে কাছে হেরে গিয়ে ভীম তাঁদের কাছে অপ্রিয় হয়ে পরলো।
দুর্যোধন গঙ্গাতীরে উদকক্রীন নামের একটি বিহারগৃহ (বাগান বাড়ি) তৈরি করে সেখানে পঞ্চপাণ্ডবকে নিমন্ত্রণ করলো। পঞ্চপাণ্ডব নিমন্ত্রণে উপস্থিথ হলে দুর্যোধন কালকূট নামের ভয়ানক বিষ খাবারে মিশিয়ে ভীমকে খায়িয়ে দিল। তাপর সকলে গঙ্গার জলে স্নান শেষে বিহারগৃহে বিশ্রাম করতে গেল। কিন্তু তার আগে ভীম বিষের প্রভাবে অচেতন হয়ে গঙ্গাতীরে পড়ে রইলেন। দুর্যোধন ভীমকে লতা দিয়ে বেধে গঙ্গার জলে ফেলে দিল।
সংজ্ঞাহীন ভীম জলর নিচে নাগলােকে পৌছালে মহাবিষধর সপেরা তাঁকে দংশন করতে লাগল। সাপেদের বিষে কালকূট বিষ নষ্ট হয়ে গেল এবং ভীম জ্ঞান ফিরে পেয়ে তাঁর বাধন ছিড়ে সপদের মারতে শুরু করলো। নাগরাজ বাসুকী বিষয়টি জানতে পেরে ভীমের কাছে গিয়ে তাঁকে নিজের দৌহিত্রের দৌহিত্র বলে চিনতে পেরে গাঢ় আলিঙ্গন করলেন। বাসুকি ভীমকে আপ্যায়নের জন্য রাসায়ণকুণ্ডের রসায়ন পান করতে দিলেন। ভীম এক-এক চুমুকে একটি করে মোট আটটি রসায়নকুণ্ড পান করে নিয়ে এক ঘুম দিলেন।
অন্যদিকে জলবিহার শেষ করে প্রাসাদে ফেরার সময় অন্যেরা ভীমকে খুঁজে পেলো না। তখন সকলে ভাবলো ভীম আগেই চলে গেছে। কিন্তু সকলে হস্তিনাপুরে ফিরে দেখলো ভীম সেখানে ফিরে আসে নি। সকলে চিন্তিতো হয়ে চারদিকে খুঁজতে শুরু করলো। কিন্তু ভীমকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলো না।
অন্যদিকে রসায়ন পান করে ভীম যে ঘুম দিয়েছে সেই ঘুম ভাঙ্গলো অষ্টম দিনে। তখন বাসুকী ভীমকে জানালো রাসায়ন পান করে ভীম হাজার হাতীর সমান শক্তীশালী হয়ে উঠেছে। নাগগনের আর্শীবাদ নিয়ে ভীম এবার নাগলোক ছেড়ে নিগ গৃহে ফিরে গেলেন এবং বড় ভাই যুধিষ্ঠিরকে সব কিছু খুলে বললেন। সব শুনে যুধিষ্ঠির ভীমকে এই সব কথা গোপন রাখতে বললেন এবং তারপর থেকে সবাই খুব সতর্ক থাকলেন।
====================================================================
বিশেষ ঘোষণা : হিন্দুদের ধর্মীয় সাহিত্যের মহাকাব্য মহাভারতের কথা আমরা সকলেই জানি। আমি এটিকে পড়ছি একটি কল্পকাহিনীর সাহিত্য হিসেবে, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নয়। আমি মনে করি "যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে। অন্যের বিশ্বাস বা ধর্মানুভূতিতে খোঁচা দেয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।" এই গ্রন্থে প্রচুর কল্পকাহিনী রয়েছে। সেগুলিই আমি এই সিরিজে পেশ করবো। যারা মহাভারত পড়েননি তারা এখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেগুলি জেনে যাবেন। মনে রাখতে হবে আমার এই পোস্ট কোনো ভাবেই ধর্মীয় পোস্ট নয়।
লেখার সূত্র : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত : অনুবাদক - রাজশেখর বসু।
ছবির সূত্র : এই সিরিজে ব্যবহৃত সকল ছবি বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।
=================================================================
সিরিজের পুরনো পর্বগুলি দেখতে -
মহাভারতের গপ্পো - ০০১, মহাভারতের গপ্পো - ০০২, মহাভারতের গপ্পো - ০০৩, মহাভারতের গপ্পো - ০০৪
মহাভারতের গপ্পো - ০০৫, মহাভারতের গপ্পো - ০০৬, মহাভারতের গপ্পো - ০০৭, মহাভারতের গপ্পো - ০০৮
মহাভারতের গপ্পো - ০০৯, মহাভারতের গপ্পো - ০১০, মহাভারতের গপ্পো - ০১১, মহাভারতের গপ্পো - ০১২
মহাভারতের গপ্পো - ০১৩, মহাভারতের গপ্পো - ০১৪, মহাভারতের গপ্পো - ০১৫, মহাভারতের গপ্পো - ০১৬
মহাভারতের গপ্পো - ০১৭, মহাভারতের গপ্পো - ০১৮, মহাভারতের গপ্পো - ০১৯, মহাভারতের গপ্পো - ০২০
২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৬
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: হে, বেশ কিছুদিন পরে।
২| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:০৫
মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: ভীমের শক্তি সম্পর্কে নানা কিংবদন্তী প্রচলিত। ভীম অত্যাচারী ছিলো। কৌরবদের ধরে ধরে মারতো অকারণে।যার ফলে এই বিষ মিশিয়ে মারার পরিকল্পনার সূত্রপাত হয়। যদিও এই বিষ মেশানোর ঘটনাকে হাইলাইট করে কৌরবদের দোষী আর ভীমকে নির্দোষ হিসেবে দেখানো হয় বেশির ভাগ সময়ে।
২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৮
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: যতটুকু পড়েছি তাতে অল্প করে এটাই বুঝা যাচ্ছে যে ভীম কৌরবদের উপরে নিজের শক্তি প্রদর্শন করতো, যা কিনা অত্যাচারের পর্যায়েই পরে।
আপনার মন্তব্যের সাথে আমি একমত।
৩| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:০৫
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: বর্তমান বিশ্বে এই সব গল্প অচল,তার পরও পড়তে খারাপ লাগে না।ঝালিয়ে নেয়া হয় আপনার বদৌলতে।
২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:১৩
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: কথা সত্য বলছেন। এগুলি রূপকথার সামিল, সেই হিসেবেই পড়ছি আমি।
৪| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:৫২
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: আজকের পর্বটি ইন্টারেস্টিং হয়েছে।
২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:১৪
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আমার কাছে এই পর্বটা মোটেও ইন্টারেস্টিং মনে হয়নি।
৫| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:২৪
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: ভীমকে বেঁধে জলে ফেলে দেওয়ার পরেও তার ফিরে আসার কাহিনীকে আমি ইন্টারেস্টিং মিন করেছি।
২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:২৯
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: হুম, ধন্যবাদ আপনাকে আপনার মতামত আর মন্তব্যের জন্য।
৬| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:২৫
রাজীব নুর বলেছেন: দেবী দেবীর মতোন যদি আমার অলৌকিক ক্ষমতা থাকতো তাহলে খুব ভালো হতো।
২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:২৯
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: হুম, ইহা শুধু কল্পনাতেই সম্ভব।
৭| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:৪০
*কালজয়ী* বলেছেন: মহাভারতের উপাখ্যানে যুধিষ্ঠির ছিলেন পঞ্চপাণ্ডবদের পাণ্ডব। তুমুল নেশা ছিল তার জুয়া খেলার প্রতি। মহাভারতীয় যুগে জুয়াকে অবশ্য পাশা খেলা নামে অভিহিত করা হতো। পাশা খেলার আহ্বান পেলে তিনি কোনো ভাই-বেরাদর বা অন্যান্য ঘনিষ্ঠজনের নিষেধ শুনতেন না। জুয়াখেলায় বসে যেতেন। কূটচালে সেরা জুয়াড়ি দুর্যোধনের মামা শকুনির কূটচালের কাছে বারবার হারতে হয়েছে যুধিষ্ঠিরকে। মানুষ ঠেকে শেখে। যুধিষ্ঠির কিন্তু ঠেকে শেখেননি। মানে, এক-দু'বার হারার পরও তার চৈতন্য ফেরেনি। ধর্মরাজ্য, হাতি-ঘোড়া, জমি-জিরেত, সোনা-দানা, সবকিছু হারিয়েও তিনি ক্ষান্ত হননি। শেষ পর্যন্ত বাজি রেখেছেন স্ত্রী দৌপদীকে। মানুষ যতই কানা-খোঁড়া হোক, স্ত্রীকে অন্তত সজ্ঞানে অন্যের হাতে তুলে দেয় না। যুধিষ্ঠির পাশা খেলায় দ্রৌপদীকে দুর্যোধনের কাছে হারিয়েছিলেন। লম্পট দুর্যোধন প্রকাশ্যে রাজদরবারে দ্রোপদীর বস্ত্রহরণ শুরু করলে ঈশ্বর শ্রী-কৃষ্ণ এসে দ্রোপদীকে রক্ষা করেন।
এই ছোট্ট কাহিনী-সংক্ষেপ থেকে যে প্রশ্নগুলো ধরা পড়ে তা হচ্ছে,
১। ধর্মরাজ্যের প্রধান যুধিষ্ঠির কি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বিচক্ষণ, দূরদর্শী ছিলেন??
২। নারীর (স্ত্রীর) সম্মান নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেছিলেন কি??
৩। শত্রুপক্ষ কৌরবদের কুটবুদ্ধিদাতা শকুনিকেও ব্রেন খাটিয়ে (মগজ) দিয়ে ধরতে পেরেছিলেন কি???
৪। ঈশ্বর শ্রী-কৃষ্ণের সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়া যুধিষ্ঠির কেন দ্রোপদির সম্মান রক্ষা করতে পারলেন না??
৫। যুধিষ্ঠির কি ধর্মরাজ্যের রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার ক্ষেত্রে প্রকৃত যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন??
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ মহাভারতের কাহিনী/উপাখ্যান পড়তে গিয়ে অনেক পাঠকের কৌতূহলী মন মজা-আনন্দ পায়। আমিও পেয়েছি। তবে আমার বাস্তববাদী অনুভূতি এই প্রশ্নগুলোও খুঁজে পেয়েছে।
ধন্যবাদ। নিরন্তর শুভকামনা পাঠ-পরিক্রমায়।
২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৩৪
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে চমৎকার এই মন্তব্যের জন্য।
৮| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৩৯
বিটপি বলেছেন: কালজয়ী অনেকগুলো ব্যাপার তুলে ধরেছেন, সেগুলো থেকে কিছু ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে যায়ঃ
- মহাভারতের কাহিনীতে ট্র্যাজিক নায়ক আসলে কৌরবরাই, পান্ডবেরা এখানে ভিলেন।
- পাণ্ডবেরা নানা ধরণের অন্যায় করেও পার পেয়ে যায়, কিন্তু কৌরবরা যখনই অন্যায় করে, তার শাস্তি পায়।
- কেবলমাত্র শ্রীকৃষ্ণের পান্ডব পক্ষে যোগদানের কারণে আমরা তাদেরকে সত্যপক্ষে ধরি, তা না হলে পাণ্ডবদের আরো অনেক অপকর্ম প্রকাশ পেত।
- যুথিষ্ঠিরকে সত্যবাদিতার আইকন ধরা হলেও সে ছিল চরম মিথ্যাবাদী, যে কারণে তার সত্যাবাদীতার মুখোশ পড়ে প্রতারণা করতেও দ্বিধা করেনি।
- কুরুক্ষেত্রের যুগে সাত আটটি রাজ্য ছাড়া ভারতবর্ষের বাকী সব রাজ্যই (এমনকি কৃষ্ণের দ্বারকাও) কৌরবপক্ষে যোগ দিয়েছিল। বেশিরভাগই কি তাহলে অন্যায়পক্ষে জেনে বুঝে যোগ দিয়েছে?
- কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৌরবদের শক্তিমত্তা অনেক বেশি ছিল। কিন্তু পান্ডবদের লাগামহীন শঠতা ও চুক্তির নিয়ম ভঙ্গের কারণে যুদ্ধের ফলাফল পান্ডবদের পক্ষে আসতে বাধ্য হয়।
২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৩৫
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও চমৎকার এই মন্তব্যের জন্য।
৯| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৩০
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: এ পর্বটা মজার ছিল।
২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৩৬
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: পুরো মহাভারতই মজার।
১০| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:১৩
জুল ভার্ন বলেছেন: চমতকার লিখেছেন।
২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:১৯
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৪:৫১
শেরজা তপন বলেছেন: বহুদিন বাদে-ভাল লাগল