নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যু

মরুভূমির জলদস্যুর বাগানে নিমন্ত্রণ আপনাকে।

মরুভূমির জলদস্যু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহাভারতের গপ্পো - ০২০ : যুধিষ্ঠিরাদির জন্ম - পাণ্ডু ও মাদ্রীর মৃত্যু

০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৪২




মহাভারতের গপ্পো - ০১৯ পর্বে আমরা দেখেছি পাণ্ডু তার দুই পত্নিকে সঙ্গে নিয়ে বনবিহারে গিয়েছেন। একদিন পাণ্ডু বনে হরিণ শিকার করতে বেরিয়ে দেখেলে এক জোড়া হরিণ-হরিণী সঙ্গমে লিপ্ত আছে। ঠিক তখন পাণ্ডু তীর ছুড়ে হরিণটিকে বিদ্ধ করলেন। তীরবিদ্ধ হরিণটি মাটিতে লুটিয়ে পরলো। মহারাজ পাণ্ডু হরিণটির কাছে গিয়ে দেখলেন সেটি আসলে হরিণ নয়! কিমিন্দম মুনি পুত্রলাভের জন্য হরিণের রূপ ধরে সঙ্গোম করছিলেন। মহারাজ পাণ্ডু না বুঝে সঙ্গোমরত হরিণটিকে তীর মেরেছেন। তাই কিমিন্দম মুনি মহারাজ পাণ্ডুকে অভিশাপ দিলেন স্ত্রীসঙ্গম করলেই তাঁর মৃত্যু হবে।








কিমিন্দম মুনি অভিশাপের ভয়ে মহারাজ পাণ্ডু সংসার ত্যাগ করে ভিক্ষু হয়ে কঠোর তপস্যা করবেন ঠিক করলেন। যেহেতু তখন পর্যন্ত মহারাজার পাণ্ডুর কোনো সন্তান হয়নি এবং স্ত্রীসঙ্গম করলেইতার মৃত্য হবে তাই তাঁর সন্তানের পিতা হওয়ার সুযোগ নাই, তাই তিনি একাই গৃহত্যাগী হতে চাইলেন। তখন কুন্তী ও মাদ্রীও মহারাজা পাণ্ডুর সঙ্গেই ইন্দ্রিয়দমন করে তপস্যা করবো বলে তার সাথেই অরণ্যবাসী হলেন। তখন মহারাজ পাণ্ডু নিজের এবং দুই পত্নীর সমস্ত অলংকার ব্রাহ্মণদের দান করে হস্তিনাপুরে সংবাদ পাঠালেন যে তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করে অরণ্যবাসী হয়েছেন।




পাণ্ডু তাঁর দুই পত্নীর সঙ্গে শতশৃঙ্গ পর্বতে এসে তপস্যা করতে লাগলেন। বহু ঋষির সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হল। একদিন ব্রহ্মলােকের মহাসভায় ব্রহ্মাকে দেখতে ঋষিরা যাচ্ছিলেন। তখন পাণ্ডুও সস্ত্রীক তাঁদের সাথে সেই সভায় যেতে চাইলেন। কিন্তু দূর্গম সেই পথে রাণীরা যেতে পারবেন না বলে ঋষিরা পাণ্ডুদের নিয়ে যেতে রাজী হলেন না। তবে তখন ঋষিরা পাণ্ডুকে জানালেন তাঁরা দিব্য চক্ষুতে দেখতে পাচ্ছেন পাণ্ডুর দেবতুল্য পুত্র হবে।


ঋষিদের কথা শুনে পাণ্ডু তাঁর স্ত্রী কুন্তীকে বললেন- আপৎকালে স্ত্রীলােক উত্তম বর্ণের পুরুষ অথবা দেবর থেকে পুত্রলাভ করতে পারে। তুমিও পুত্র লাভের চেষ্টা করো।

স্বামীর কথা শুনে কুন্তী বললেন - রাজা ব্যুষিতাশ্ব যক্ষা রােগে মারা যাওয়ার পরে তাঁর স্ত্রী মৃত স্বামীর সঙ্গে সঙ্গম করে গর্ভবতী
হয়েছিলেন। তুমিও তপস্যা করে আমাকে গর্ভবতী করো।


পাণ্ডু বললেন- রাজা ব্যুষিতাশ্ব দেবতুল্য শক্তিমান ছিলেন, আমার তেমন শক্তি নেই। আমার পক্ষে তাপস্য বলে তোমাকে গর্ভবতী করা সম্ভব নয়। পুরাকালে নারীরা স্বাধীন ছিল, তারা স্বামীকে ছেড়ে অন্য পুরুষের সঙ্গে সঙ্গম করাতে দোষ হতো না। উদ্দালক নামে এক মহর্ষি ছিলেন, তাঁর পুত্রের নাম শ্বেতকেতু। একদিন শ্বেতকেতু দেখলেন, তাঁর পিতার সমনেই এক ব্রাহ্মণ তাঁর মাতার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন। উদ্দালক শ্বেতকেতুকে বললেন "পৃথিবীতে সকল স্ত্রীলােকই গরুর তুল্য স্বাধীন"। কিন্তু শ্বেতকেতু বিষয়টা মেনে নিতে পারলেন না। তিনি বললেন আজ থেকে যে নারী পরপুরুষগামিনী হবে, যে পুরুষ পতিব্রতা পত্নীকে ত্যাগ করে অন্য নারীর সঙ্গম করবে, এবং যে নারী পতির নির্দেশ পেয়েও ক্ষেত্রজ পত্র উৎপাদনে আপত্তি করবে, তাদের সকলেরই ভ্রুণহত্যার পাপ হবে। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন থেকে আমাদের যেভাবে জন্ম হয়েছে তেমনি ভাবে তুমিও কোনও তপস্বী ব্রাহ্মণের সঙ্গে মিলনে গুণবান পুত্র জন্ম দাও। এটাই আমার নির্দেশ।


কুন্তী তখন ঋষি দূর্বাসার শিখানো সেই মন্ত্রের কথা পাণ্ডুকে জানালো। তখন পাণ্ডু মন্ত্রবলে ধর্মরাজকে ডাকতে বললো। কুন্তী মন্ত্রবলে ধর্মরাজকে আহবান করলেন এবং শতশৃঙ্গ পর্বতের উপর ধর্মরাজের সঙ্গে সঙ্গমের ফলে কুন্তী গর্ভবতী হলেন। প্রসবকালে দৈববাণী হল এই ছেলের নাম যুধিষ্ঠির হবে। এরপর পাণ্ডর অনুরোধে বায়ুইন্দ্রকে আহবান করে তাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে ভীম ও অর্জুন নামে আরো দুই পুত্র লাভ করে কুন্তী।




অন্যদিকে মাদ্রী পুত্রের আশায় পাণ্ডুর কাছে এসে আবদার করে, কুন্তীকে বলে কোনো দেবতাকে তাঁর কাছে পেতে চায়। মহারাজ পাণ্ডুর অনুরোধে কুন্তী রাজি হলো এবং মাদ্রীকে উপদেশে দিলো কোনো একজন দেবতাকে ডাকতে। কিন্তু মাদ্রী অশ্বিনীকুমার দুজনকে একসাথে ডাকলেন এবং নকুলসহদেব নামে যমজ পুত্র লাভ করলেন। এতে কুন্তী কিছুটা মনক্ষুন্ন হলো। এই ভাবে দেবতাদের কল্যাণে পাণ্ডুর এই পাঁচ পুত্র জন্ম হয়।




একদিন পাণ্ডু নির্জনে মাদ্রীকে দেখে নিজের সংযম হারালেন এবং মাদ্রীর নিষেধ না মনে জোড় করে সঙ্গমে লিপ্ত হলেন। কিমিন্দম মুনির অভিশাপের ফলে সঙ্গমকালেই পাণ্ডুর মৃত্যু হলো। পাণ্ডুর মৃত্যুতে মাদ্রী আর্তনাদ করে উঠলে সেই আর্তনাদ শুনে কুন্তী ছুটে আসে। পাণ্ডুকে মৃত্যু জন্য মাদ্রীকে দোষ দেয় এবং নিজে স্বামীর সাথে সহমরনে যেতে চায়। পাণ্ডুর পাঁচ পুত্রকে লালন পালন করতে বললেন মাদ্রীকে। কিন্তু মাত্রী তখন জানায় এখনো তার কামভোগ তৃপ্ত হয়নি। তাই সে যাবে স্বামীর সাথে সহমরনে। তাছাড়া সে কুন্তীর তিন ছেলেকে নিজের ছেলের মতো দেখতে পারবে না। তাই নিজের দুই ছেলের ভার কুন্তীর হাতে দিয়ে মাদ্রীই শেষ পর্যন্ত স্বামীর সাথে সহমরনে যায়।



====================================================================

বিশেষ ঘোষণা : হিন্দুদের ধর্মীয় সাহিত্যের মহাকাব্য মহাভারতের কথা আমরা সকলেই জানি। আমি এটিকে পড়ছি একটি কল্পকাহিনীর সাহিত্য হিসেবে, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নয়। আমি মনে করি "যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে। অন্যের বিশ্বাস বা ধর্মানুভূতিতে খোঁচা দেয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।" এই গ্রন্থে প্রচুর কল্পকাহিনী রয়েছে। সেগুলিই আমি এই সিরিজে পেশ করবো। যারা মহাভারত পড়েননি তারা এখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেগুলি জেনে যাবেন। মনে রাখতে হবে আমার এই পোস্ট কোনো ভাবেই ধর্মীয় পোস্ট নয়।

লেখার সূত্র : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত : অনুবাদক - রাজশেখর বসু।
ছবির সূত্র : এই সিরিজে ব্যবহৃত সকল ছবি বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।



=================================================================
সিরিজের পুরনো পর্বগুলি দেখতে -
মহাভারতের গপ্পো - ০০১, মহাভারতের গপ্পো - ০০২, মহাভারতের গপ্পো - ০০৩, মহাভারতের গপ্পো - ০০৪
মহাভারতের গপ্পো - ০০৫, মহাভারতের গপ্পো - ০০৬, মহাভারতের গপ্পো - ০০৭, মহাভারতের গপ্পো - ০০৮
মহাভারতের গপ্পো - ০০৯, মহাভারতের গপ্পো - ০১০, মহাভারতের গপ্পো - ০১১, মহাভারতের গপ্পো - ০১২
মহাভারতের গপ্পো - ০১৩, মহাভারতের গপ্পো - ০১৪, মহাভারতের গপ্পো - ০১৫, মহাভারতের গপ্পো - ০১৬
মহাভারতের গপ্পো - ০১৭, মহাভারতের গপ্পো - ০১৮, মহাভারতের গপ্পো - ০১৯

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৫৯

জুল ভার্ন বলেছেন: মহা ভারত হচ্ছে আমার কাছে সব চাইতে ভালো রহস্য উপন্যাস।
আপনি অত্যন্ত যত্নের সাথে লিখেন!
ধন্যবাদ।

০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:১৪

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: মহাভারত আমার কাছে রূপকথা।
আমি চেষ্টা করছি অতিসংক্ষেপে এবং সরল করে উপস্থাপন করতে।
ছবি দিচ্ছি আকর্ষণের জন্যে।

২| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:২৩

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: আগেরকার দিনের ব্রাহ্মণ -ঋষিগণ বেশ বিন্দাস জীবন-যাপন করে গেছেন। কিছু হলেই অভিশাপ। সেগুলোতে আবার কাজও হতো। আবার বিধান করে অন্যের স্ত্রী-ভোগের অধিকার নিজদের কাছেই রেখে দিয়েছে। ক্ষেত্রজ পুত্র উৎপাদনের বেলায় ব্রাহ্মণ অথবা নিজের চেয়ে উচ্চবর্ণ লাগতো।নিজের বর্ণ হলেও হবে না। এতে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষত্রিয়রা ব্রাহ্মণের কাছে যেত। মহাভারতে প্রতিটা কাজের পেছনে পূর্ববর্তী মানুষের কাজের রেফারেন্স সহ কাহিনি থাকে। এতে অনেক বেশি শাখা-প্রশাখা যুক্ত হয়েছে।

০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:৩১

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: চমৎকার মন্ত্যের জন্য মন্তব্যে +
কাহিনীতে রেফারেন্সের কারণে প্রচুর শাখা-প্রশাখা যুক্ত হয়েছে মহাভারতে। ফলে পড়ার সময় খেই হারিয়ে ফেললে খাপছাড়া মনে হয়।

৩| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৩:৩৪

বংগল কক বলেছেন: আরেকটু রগরগে বর্ণনা দিলে গপ্পোটা "চটি-গপ্পো" লেভেল উন্নত হইত।

০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৪:৩১

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: হুম

৪| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৪:২১

চাঁদগাজী বলেছেন:



হিন্দু ধর্মের লোকেরা তপস্যা করতে পছন্দ করেন।

০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৪:৩২

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: তাই তো মনে হচ্ছে

৫| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:৪৮

কামাল১৮ বলেছেন: আপনার প্রচেষ্টা মহত।আগে যারা পড়েনাই,তাদের পড়া হলো।আমারও কিছুটা সময় কাটছে।অনেক কিছুই ভুলে গিয়ে ছিলাম।

০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:০৪

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আমিও একটি একটু করে পড়ে লিখছি, আমারও সময় ভালো কাটছে।

৬| ০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: ছবি গুলো রঙ্গিন হলে দারুন হতো।

০৫ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:০৫

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: কিছু ছবি রঙ্গিন আছে, কিছু সাদাকালো

৭| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:০৯

বিটপি বলেছেন: একটা প্রশ্ন ছিল, উত্তর দিয়ে ক্রিতার্থ করবেন আশা করি।

আগেকার দিনে কি পিতামাতা বা রাজ্যের নামে ব্যক্তির নাম রাখার প্রচলন ছিল?

- রাজা কুন্তভোজের কন্যা, নাম তার কুন্তি। রাজা ধ্রুপদের কন্যা, নাম তার দ্রৌপদী।
- পাঞ্চাল রাজ্যের রাজকন্যা, নাম তার পাঞ্চালী। মদ্র রাজ্যের রাজকন্যা, নাম তার মদ্রী। গান্ধার রাজ্যের রাজকন্যা, নাম গান্ধারী।
- রাজকন্যা পৃথার পুত্র, নাম তার পার্থ (অর্জুনের আরেক নাম)। কর্ণের পালক মায়ের নাম ছিল রাধা, তাই কর্ণের পূর্ব নাম ছিল রাধেয়।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৩০

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর এই মন্তব্যের জন্য।
নামে এই বিষয়ে আমি আসলে তেমন কিছু জানি না। আমি সাধারন পাঠক মাত্র।
তবে নামের এই বিষয়টি আমিও লক্ষ্য করেছিলাম।
আবারও অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে।

৮| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:৫৫

নীল আকাশ বলেছেন: আপনার এই সিরিজ খুব ইন্টারস্টিং। আমি সময় পেলেই পড়ে যাই।
আপনি কি এই সিরিজ অন্য কোথাও পোস্ট দিচ্ছেন? এই সিরিজ আমি একটা সাহিত্য গ্রুপে শেয়ার করতে চাচ্ছি, যদি আপনার কোন আপত্তি না থাকে।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৩২

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য।
আপনি চাইলে অন্য গ্রুপে এটি শেয়ার করতে পারেন। আমার কোনো আপত্তি নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.