নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কচ ও দেবযানী
ব্রহ্মার পুত্র দক্ষ প্রজাপতি তাঁর পঞ্চাশটি কন্যাকে পুত্র হিসেবেই দেখতেন।
বড় মেয়ে অদিতি থেকে বংশানুক্রমে বিবস্বান (সূর্য), মনু, ইলা, পুরুরবা, আয়ু, নহুষ ও যযাতির জন্ম হয়। যযাতি দেবযানী ও শর্মিষ্ঠাকে বিয়ে করে।
ত্রিলোকের ঐশ্বর্যের জন্য যখন দেবতা ও অসুরদের যুদ্ধ হয় তখন দেবতারা বৃহস্পতিকে এবং অসুরেরা শুক্রাচার্যকে পুরহিত হিসেবে বরণ করে নেয়।
দেবতারা যুদ্ধে যে সব অসুরদের হত্যা করতে শুক্র বিদ্যাবলে তাদের পুনর্জীবিত করে দিতো। বৃহস্পতির এই বিদ্যা জানা ছিলো না বলে দেবতাদের মৃত সৈন্য বাঁচাতে পারতো না। তাই দেবতারা বৃহস্পতির পুত্র কচকে বললো শুক্রের প্রিয়কন্যা দেবযানীকে সন্তুষ্ট করে মৃতসঞ্জীবনী বিদ্যা অর্জন করতে।
কচ শুক্রের কাছে গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে একহাজার বছরের জন্য শুক্রের শিষ্যত্ব গ্রহণ করলো। গুরু ও গুরুকন্যার সেবা করে কচ ব্রহ্মচার্য পালন করতে লাগলো। সুযোগ পেলেই কচ গান বাজনা করে, নেচে, নানার ধরনের ফুল উপহার দিয়ে প্রাপ্তযৌবনা দেবযানীকে তুষ্ট করতে লাগলো। সুগায়ক রূপবান কচকে দেবযানীও পছন্দ করতো, তাই নির্জন স্থানে কচের কাছে গান গাইতেন এবং তাঁর পরিচর্যা করতো।
পাঁচশো বছর পার হয়ে যাওয়ার পরে দানবরা কচের আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পারলো। তাই একদিন কচ যখন বনে গরু চরাচ্ছিলো তখন অসুরেরা কচকে হত্যা করে তাঁর দেহ টুকর টুকর করে কুকুরকে খায়িয়ে দিলো। সন্ধ্যায় কচ ফিরে এলো না দেখে দেবযানীর সন্দেহ হলো অসুরেরা নিশ্চই কচকে হত্যা করেছে। দেবযানী তার বাবা শুক্রের কাছে গিয়ে জানালো কচকে সে ভালোবাসে, কাচকে ছাড়া সে বাঁচবে না।
শুক্র তখন সঞ্জীবনী বিদ্যা প্রয়োগ করে কচকে আহ্বান করলেন। কচ তখনই কুকুরদের শরীর ভেদ করে বেরিয়ে এলো। তারপর আবার একদিন দানবরা কচকে হত্যা করলো। এবারও শুক্র সঞ্জীবনী বিদ্যা প্রয়োগ করে কচকে বাঁচিয়ে দিলো।
তৃতীয় বারে দানবরা কচকে হত্যা করে আগুনে পুরিয়ে তাঁর দেহাবশেষ সুরার (মদ) সঙ্গে মিশিয়ে শুক্রকে খায়িয়ে দিলো। কচকে না দেখে দেবযানী আবার বাবার কাছে গিয়ে কান্না করতে শুরু করলো। তখন শুক্র মেয়ের ভালোবাসার খাতিরে করচে জীবিত করার জন্য সঞ্জীবনী বিদ্যা প্রয়োগ করে কচকে ডাকলো।
গুরুর পেটের ভিতর থেকে কচা জানালো অসুররা তাকে আগুনে পুরিয়ে তাঁর দেহাবশেষ সুরার (মদ) সাথে মিশিয়ে শুক্রকে খাইয়েছে।
তখন শুক্র দেবযানীকে বললো- আমার পেট ছিন্নভিন্ন না করে কচ বের হতে পারবে না। আমি না মরলে কচ বাঁচবে না। এবার বলো তুমি কাকে বেশী ভালোবাসো? কাকে তুমি চাও?
দেবযানী বললো- আপনার মৃত্যু হলে আমি বাঁচব না।
তখন শুক্র বললো- বৃহস্পতির পুত্র কচ, দেবযানী তোমাকে ভালোবাসে। যদি তুমি আমার সঞ্জীবনী বিদ্যা লাভ করো। তুমি পুত্ররূপে আমার উদর থেকে বের হয়ে সঞ্জীবনী বিদ্যা বলে আমাকে বাঁচিয়ে দিও।
এবার শুক্রের পেট ফুরে কচ বেরিয়ে এলো এবং সঞ্জীবনী বিদ্যার দ্বারা শুক্রকে পুনর্জীবিত করলো।
দেখতে দেখতে হাজার বছর পার হেলে কচ ফিরে যাবার জন্য প্রস্তুত হলো।
দেবযানী কচকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে কচকে বিয়ে করতে চাইলো।
কচ দেবযানীকে গুরুর মেয়ে বলে পূজনীয় মনে করে। তাই দেবযানীকে বিয়ে করার প্রস্তাব সে ফিরিয়ে দিলো। কচ আরো বললো যেহেতু দেবযানীর পিতা শুক্রের পেটে কচ নিজেও ছিলেন সেই হিসেবে দেবযানী কচের বোন হয়।
এবার দেবযানী রেগে গিয়ে কচ কে অভিশাপ দিলো দেবযানীকে বিয়ে না করলে কচের সঞ্জীবনী বিদ্যা ফলবতী হবে না।
কচ দেবযানীকে বললো- "তুমি আমার গুরুর মেয়ে, গুরুও বিয়ের সম্মতি দেন নি, সেজন্য আমি তোমার বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছি। তুমি কামের বশবতী হয়ে আমাকে অভিশাপ দিলে। তুমি বলেছ, আমার বিদ্যা নিস্ফল হবে; তাই হক। আমি যাকে শেখাব তার বিদ্যা ফলবতী হবে। "
এই কথা বলে কচ ইন্দ্রলোকে চলে গেলো।
====================================================================
বিশেষ ঘোষণা : হিন্দুদের ধর্মীয় সাহিত্যের মহাকাব্য মহাভারতের কথা আমরা সকলেই জানি। আমি এটিকে পড়ছি একটি কল্পকাহিনীর সাহিত্য হিসেবে, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নয়। আমি মনে করি "যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে। অন্যের বিশ্বাস বা ধর্মানুভূতিতে খোঁচা দেয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।" এই গ্রন্থে প্রচুর কল্পকাহিনী রয়েছে। সেগুলিই আমি এই সিরিজে পেশ করবো। যারা মহাভারত পড়েননি তারা এখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেগুলি জেনে যাবেন। মনে রাখতে হবে আমার এই পোস্ট কোনো ভাবেই ধর্মীয় পোস্ট নয়।
লেখার সূত্র : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত : অনুবাদক - রাজশেখর বসু।
ছবির সূত্র : এই সিরিজে ব্যবহৃত সকল ছবি বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।
====================================================================
সিরিজের পুরনো পর্বগুলি দেখতে -
মহাভারতের গপ্পো - ০০১, মহাভারতের গপ্পো - ০০২, মহাভারতের গপ্পো - ০০৩, মহাভারতের গপ্পো - ০০৪
মহাভারতের গপ্পো - ০০৫, মহাভারতের গপ্পো - ০০৬, মহাভারতের গপ্পো - ০০৭, মহাভারতের গপ্পো - ০০৮
মহাভারতের গপ্পো - ০০৯, মহাভারতের গপ্পো - ০১০
====================================================================
১১ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:২১
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে চমৎকার এই সংযুক্তির জন্য।
২| ১১ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ৩:২৯
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: কচ আর দেবযানির প্রেম বেশ উপজীব্য
১১ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:২১
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: মূল মহাভার শুরু হয়েছে মাত্র।
এরপরে কাহিনী আরো জমবে।
৩| ১১ ই আগস্ট, ২০২১ ভোর ৪:২৪
কবিতা ক্থ্য বলেছেন: উপস্হাপনের জন্য ধন্যবাদ।
১১ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:২২
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: স্বাগতম আপনাকে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ রইলো।
৪| ১১ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ৭:১৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
এসবের লেখকেরা মোটামুটি তেমন বুদ্ধিমান ছিলেন না।
১১ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:২৩
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: এই রকম একটি মহাকাব্য ও কল্পকাহিনী তৈরির জন্য বুদ্ধিমান হতে হয়না যারা মনে করে তাদের বুদ্ধি সম্পর্কে লোকের সংন্দেহ জাগতে পারে।
৫| ১১ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ৯:০৬
হাবিব বলেছেন: ছবিগুলোও কি বইতে আছে নাকি?
১১ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:২৪
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: না, বইতে নাই। লেখারে শেষে বলা আছে -
ছবির সূত্র : এই সিরিজে ব্যবহৃত সকল ছবি বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।
৬| ১১ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ১০:৫১
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ৩ নং ছবিতে কচের কানে দুল নাই কেন? ঐ যুগে পুরুষরা কি কানে দুল পড়তো? এই পর্বে পোশাকের অবস্থা বেশী খারাপ না। রাজীব নুরের দৃষ্টি নত না করলেও চলবে।
১১ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:৩০
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: সম্ভবতো ঐযুগের প্রায় সকল পুরুষেরাই কানে রিং পরতো। আমি সঠিক ইতিহাস জানি না। তাছাড়া ঐগুলি কল্পকাহিনী। ঐসময় দেখেন চোখের নিমিশেই হাজার বছর পার হয়ে যাচ্ছে।
৩ এবং ৫ নং ছবিতে কচের কানে দুল নেই। ঐটা শিল্পীর ইচ্ছেয় হয়েছে নিশ্চয়।
আগামী পর্বে স্বল্পবসনা নারীর চিত্র সংযোগের তীব্র ইচ্ছা রহিলো।
এই পর্ব এখনো নূর ভাইয়ের চোখে পরে নাই।
৭| ১১ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:১৮
রানার ব্লগ বলেছেন: **অফটপিক
ধর্ম গ্রন্থ বলেন আর পৌরাণিক গ্রন্থ বলেন এর বিশাল একটা অংশ জুড়ে যৌনতা থাকে, কেনো?
১১ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:৪৮
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আমার ধারনা যৌনতা থাকতো বিনোদনের জন্য।
যে সময়ে এই কাহিনী গুলি লেখা হয়েছে সেই সময় বিনদোনের উপকরণ, সুযোগ এবং সামর্থ ছিলো কম।
তাই যৌনতাই বিনোদনের শেষ্ঠ উপকরণ ছিলো।
আমাদের গ্রামগুলিতে কিছুদিন আগেও তাই ছিলো।
৮| ১১ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: দেবযানী নামটা সুন্দর।
১১ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:৫০
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: হে, দেবযানী নামটা আসলেই সুন্দর। তবে টপাটপ প্রেমে পড়ে যাচ্ছে যে!!!
শর্মিষ্ঠা নামটা কেমন?
৯| ১১ ই আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০২
চাঁদগাজী বলেছেন:
কতদিনে বছর হলে, মানুষ ৫০০ বছর, ১০০০ বছর বাঁচতে পারেন?
লেখায় যেহেতু লজিক ছিলো না, ইহা বুদ্ধিমান মানুষের ভাবনা ছিলো না।
১১ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ৮:০২
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: আপনি আর আগেও প্রমান করেছেন যে আপনি রূপকথা গল্প পড়েননি কখনো।
রূপকথা গরু গাছে উঠে নাচে বস।
১০| ১১ ই আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৮
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: কচতো পিতার পেটে ছিল মায়ের পেটে না।
সুতরাং বোন তত্ত্ব খাটে না
আহা বেচারী অত ভালবেসেও পেলোনা তারে!
শায়মাপুর কাব্যে মুগ্ধতা
১১ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ৮:০৪
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: হিসাবটা অন্য ভাবে হবে -
দেবযানী শুক্রের ঔরসজাত কন্যা আর কচ তার দেহজাত পুত্র।
১১| ১৩ ই আগস্ট, ২০২১ ভোর ৫:২১
সোহানী বলেছেন: আপনার এ লিখাগুলো পড়বো একটু সময় নিয়ে মনোযোগ দিয়ে কারন আমার খুব প্রিয় বিষয়। তাড়াহুড়া করে পড়তে চাচ্ছি না।
১৩ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:৪৪
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যে পড়ার আগ্রহের কথা জানানোর জন্য।
আমিও খুব ধিরে লিখছি, খুব একটা আকর্ষনিয় ভাবে লিখতে পারছিনা যদিও।
সমস্ত বাহুল্য বাদ দিয়ে শুধু কাহিনিটুকু তুলে ধারার চেষ্টা করছি।
১২| ১৩ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১১:৪৩
পরিবেশবাদী ঈগলপাখি বলেছেন: এই সিরিজটা খুবই আগ্রহ নিয়ে পড়ি, বলা চলে ব্লগে ঢু মারিই এইটাইপের লেখার জন্য।
তবে সম্ভব হলে ফেসবুকে ডেডিকেটেড লেখার পেজ বানিয়ে ফেলতে পারেন, এই লেখার টার্গেট অডিয়েন্স ব্লগে পাবেন না, বরং ফেসবুকে লেখার আউটরিচ বেশি হবে.. পোস্টে সামজ্ঞস্যহীন কমেন্ট দেখে তাই মনে হচ্ছে।
১৪ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১২:০৫
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্য ও পরামর্শের জন্য।
আপনার মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণ সঠিক।
ফেসবুকে পেজ বানিয়ে সেইটার লিংক সবার কাছে পাঠানো মেলা ঝামেলার। আমাকে দিয়ে হবেনা।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ৩:২৩
শায়মা বলেছেন: রবিঠাকুরের বিদায় অভিশাপে জেনেছিলাম কচ আর দেবযানীর কথা-
বিদায়-অভিশাপ
দেবযানী যখন রাগ করে বললো,
সে মালা নিলে না গলে, পরম হেলায়
সেই সূক্ষ্ম সূত্রখানি দুই ভাগ করে
ছিঁড়ে দিয়ে গেলে। লুটাইল ধূলি-’পরে
এ প্রাণের সমস্ত মহিমা। তোমা-’পরে
এই মোর অভিশাপ— যে বিদ্যার তরে
মোরে কর অবহেলা, সে বিদ্যা তোমার
সম্পূর্ণ হবে না বশ— তুমি শুধু তার
ভারবাহী হয়ে রবে, করিবে না ভোগ;
শিখাইবে, পারিবে না করিতে প্রয়োগ।
কচ। আমি বর দিনু, দেবী, তুমি সুখী হবে।
ভুলে যাবে সর্বগ্লানি বিপুল গৌরবে।
আহা এই কবিতা যেদিন পড়েছিলাম আমি ........
আর এই পোস্টও মনে পড়ে গেলো